পুরো বাইবেল কি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণা দ্বারা প্রদত্ত?
১৯৯৮ সালে আমার জ্ঞাতিভাই ইয়াং, আমার সাথে এই সুসমাচার ভাগ করে নিয়েছিল নিল। সে আমাকে বাইবেলের একটা অনুলিপি দিয়েছিল, এবং আমাকে বলল যে পুরো বাইবেল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, ভিতরের সবকিছুই ঈশ্বরের বাণী, এবং এর মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বরের রাজ্যের এবং অনন্ত জীবনের পথ। অনন্ত জীবন পাওয়ার কথা শুনে আমার মধ্যে অবিলম্বে কৌতূহল জাগল, এবং পরে, সময় পেয়ে আমি বাইবেল পড়লাম। শীঘ্রই আমি বুঝতে পারলাম যে প্রভু যীশুই মানবতার মুক্তিদাতা, এবং তাঁকে গ্রহণ করলাম। যেহেতু আমি ঈশ্বরের সন্ধানে আগ্রহী ছিলাম, পরে আমি একজন সহকর্মী হয়ে গেলাম এবং গির্জায় গিয়ে ধর্মের প্রচার করতে থাকলাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম যে বাইবেল আমার বিশ্বাসের ভিত্তি ও পথপ্রদর্শক।
কয়েক বছরের মধ্যে, গির্জায় জনশূন্যতা দেখা দিল এবং পবিত্র আত্মার কাজ অনুভব করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠল। অধিকাংশ বিশ্বাসী নিষ্ক্রিয় এবং দুর্বল ছিল, তাদের বিশ্বাস ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল এবং এমনকি অনেকেই ধর্মনিরপেক্ষ জগতে ফিরে গিয়েছিল। এই সবের সম্মুখীন হয়ে আমি উদ্বিগ্ন ও অসহায় বোধ করতে লাগলাম এবং আমার হৃদয়ে দুর্বলতা দেখা দিল। প্রভু কি আমাদের পরিত্যাগ করতে পারেন? কিন্তু যতবারই ভাবতাম প্রভু কীভাবে বলেছেন, “যে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে পারবে, সে-ই পরিত্রাণ লাভ করবে” (মথি ১০:২২), আমি বিশ্বাস করতাম যে প্রভু তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না এবং আমি আমার বিশ্বাসে অব্যাহত রইলাম। আমি প্রায়ই মনে মনে প্রার্থনা করতাম এবং আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য প্রভুকে বলতাম। এই সময়ে পূর্বের বজ্রালোক নামে একটি গির্জার আবির্ভাব হল। তারা বলল যে প্রভু ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন, এবং অনেক সত্য ব্যক্ত করছেন। প্রভুর অনেক ভ্রাতা ও ভগিনী পূর্বের বজ্রালোক-এ যোগ দিলেন। আমি শুনলাম যে তারা আলোচনা করেছে যে বাইবেলে ঈশ্বর এবং মানুষ দুজনেরই কথা রয়েছে এবং আমি সেটা গ্রহণ করতে পারলাম না। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে “সমগ্র শাস্ত্রই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত” (২ তিমথির ৩:১৬)। বাইবেলের সবকিছুই ঈশ্বরের বাণী, যাজক এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা সব সময় এই কথা বলেন। তাই পূর্বের বজ্রালোক কি বাইবেলের বিরোধীতা এবং প্রভুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে না? এই কারণে, আমি সম্পূর্ণভাবে পূর্বের বজ্রালোকের বিরোধী ছিলাম। তারপর থেকে আমাদের বেশিরভাগ সমাবেশেই আমরা আলোচনা করতাম, পূর্বের বজ্রালোক থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং তাকে কীভাবে আটকান যায়, এবং কীভাবে গির্জাকে রক্ষা করা যায় তার লোক হারানোর থেকে। পূর্বের বজ্রালোকের লোকেদের আমাদের ভেড়া চুরি বন্ধ করার জন্য, আমি আমার গির্জার কর্মীদের বললাম: বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং ঈশ্বরের সমস্ত বাণী এতে রয়েছে। আমরা যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তবে আমরা বাইবেল থেকে সরে যেতে পারি না। সেটা করা ধর্মদ্রোহিতা হবে। এটা করার মাধ্যমে, আমি তাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে অনুসন্ধান করা থেকে বিরত রাখার আশা করলাম, কিন্তু তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে গ্রহণ করতে থাকে।
একবার, গির্জার জমায়েত শেষে বাড়ি ফেরার পর, আমি আমার স্ত্রীকে ময়দা মাখাতে দেখলাম, এবং তার পাশে বসেছিলেন বছর ষাটেকের একজন মহিলা, হাতে একটি বই নিয়ে তার সাথে আলোচনা করছেন। আমি অবিলম্বে অনুমান করলাম যে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, এবং আমি রেগে গিয়ে বললাম, “আপনি বাইবেলকে অস্বীকার করেন ও পরিত্যাগ করেছেন, এবং তারপরেও আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করার দাবি করছেন? এখান থেকে চলে যান!” বৃদ্ধ ভগিনী ধৈর্য ধরে আমাকে বললেন, “ভ্রাতা, মন খারাপ করবেন না। অন্ধভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌছবেন না। আমরাও বাইবেল পড়তাম এবং এই স্তবকটির ‘সমগ্র শাস্ত্রই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত’ (২ তিমথির ৩:১৬), মানে এটাই মনে করতাম যে পুরো বাইবেল হল ঈশ্বরের বাণী। পরে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এই ব্যাখ্যাটি ভুল।” “আপনার কাছে কী প্রমাণ আছে?” আমি অপমানজনকভাবে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। ভগিনী বললেন, “উদাহরণস্বরূপ, লুকের সুসমাচার বলে: ‘মহামান্য থিয়ফিল! আমাদের সময় যে সমস্ত ঘটনা ঘটে গেছে, অনেকেই করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং সুসমাচার প্রচারকেরা প্রথম থেকে যে ঐতিহ্য প্রবর্তন করে গেছেন, তারই অনুসরণে তাঁরা এইগুলি লিখেছেন’ (লুক ১:১-২)। এর মানে কি এই নয় যে লুকের সুসমাচার লুক তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছিলেন? লুক সেই সময়ে যা দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন, তার কিছু তথ্য লিখেছিলেন। এটা মানুষের লেখা বই, তাহলে আমরা কী করে বলতে পারি এই সবই ঈশ্বরের বাণী? যে জিনিসগুলি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় সেগুলি মানুষের দ্বারা অনুভূত হওয়ার দরকার নেই। দুটি স্পষ্টতই আলাদা।” ভগিনীর কথায় আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম: সত্যিই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত বাণী এবং মানুষে দেখে ও শুনে তার উপর ভিত্তি করে যা লেখে, তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি তার কথায় কোন দোষ খুঁজে পেলাম না। আমি একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে আমার চোখের কোণ থেকে ভগিনীকে দেখে নিলাম, এই ভেবে: “তিনি বৃদ্ধ এবং দেখে মনে হচ্ছে না খুব বেশি শিক্ষিত, তবুও তাঁর এইরকম অন্তর্দৃষ্টি আছে। অবিশ্বাস্য!” এক মুহুর্তের জন্য আমি ভাবতে পারলাম না যে তাঁর কথার কী জবাব দেব, আর আমার মুখ লাল হয়ে গেল। আমি চিন্তিত ছিলাম যে আমি যদি তাঁর কথা শুনতে থাকি তবে আমি বিভ্রান্ত হব, তাই আমি কেশে বললাম: “যথেষ্ট হয়েছে, আমাদের বিশ্বাস আলাদা। এখানে আর আসবেন না।” এই বলে আমি ভগিনী কে দরজার বাইরে ঠেলে দিলাম। শীতের বাতাসে তাঁর চোখের অকপট অভিব্যক্তি এবং দুর্বল চেহারা দেখে, আমি আমার হৃদয়ে একটি তীব্র কষ্ট অনুভব করলাম, এবং আমি জানতাম না এই অনুভূতি কী। কিন্তু আমার মনে ছিল যে বাইবেলের সমস্ত বাণী ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, এবং তার বাইরে অন্য কিছু ঈশ্বরে বিশ্বাস নয়। তারা যা প্রচার করে তা বাইবেলের বাইরে ছিল, তবুও তারা ভেড়া চুরি করতে আমাদের গির্জায় এসেছিল। আমি তাদের প্রচার শুনতে পারব না এবং আমাকে অবশ্যই আমার অবস্থানে অবিচল থাকতে হবে। এর পরে, আমি গোষ্ঠীকে “রক্ষা” করার জন্য কোনও প্রচেষ্টাই ছাড়লাম না, এবং তাও একটা শান্তি অনুভব করলাম। এসব করা সত্ত্বেও, আমি যখনই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা থেকে কাউকে দেখতাম, আমি ভীত অনুভব করতাম। তাদের আলোচনা অর্থপূর্ণ ছিল এবং খণ্ডন করা কঠিন ছিল। কট্টরপন্থা অবলম্বন করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না, এবং তাদের কথা না শোনা, তাদের বই না পড়া বা তাদের সাথে যোগাযোগ না করার একটা নীতি লাগু করতে হল।
এটা জানার আগে, সেটা ছিল ২০০৪ সালের শীতের আগে। আমার জ্ঞাতিভাই ইয়াং আমাকে ফোন করে বলল যে তার আমাকে জরুরি কিছুর জন্য দরকার। আমি ছুটে গেলাম, এবং আমার জ্ঞাতিভাই আমার সাথে ভ্রাতা ওয়াং-এর পরিচয় করিয়ে দিল। ও বলল যে ভ্রাতা ওয়াং একজন প্রচারক এবং সে আমাদের প্রভুর সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধির বিষয়ে আলোচনা করতে বলল। আমি সত্যিই খুশি হলাম, এবং হ্যালো বলার পর, আমার জ্ঞাতিভাই আমাকে একটি বাইবেল দিল এবং দুটি মোটা শক্ত মলাটের বাঁধান বই বের করল। আমি দেখলাম, বইয়ের প্রচ্ছদ বলছে: বাক্য দেহে আবির্ভূত হল এগুলি পূর্ব বজ্রালোকের বই ছিল! আমি এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “ইয়াং, তুমি কি পূর্বেরে বজ্রালোক কে গ্রহণ করেছ?” আমার জ্ঞাতিভাই হেসে বলল: “একদম ঠিক। আমি আজ তোমাকে এখানে ডেকেছিলাম কারণ আমি তোমার সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। আশা করি তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম দিনের কাজ সম্পর্কে পড়বে।” এই মুহুর্তে, আমার মনে পড়ে গেল যে যাজকরা এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা রা সর্বদা বলতেন যে বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং ঈশ্বরের সমস্ত বাণী এতে রয়েছে। পূর্বের বজ্রালোকের শিক্ষা বাইবেলের বাইরে ছিল, কোনো অবস্থাতেই আমাদের তাদের কথা শোনা উচিত নয়। আমাদের সেরা পাল্টা পদক্ষেপ ছিল তাদের এড়িয়ে যাওয়া। তাই আমি একটি অজুহাত তৈরি করলাম যে আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে কিছু কাজের জন্য। আমার জ্ঞাতিভাই ঠাণ্ডা গলায় বলল, “যখনই তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী এমন কাউকে দেখ, তুমি পালিয়ে যাও কেন? সত্য জানলে বিভ্রান্ত হওয়ার ভয় কেন? যেহেতু তুমি এখানে আছ, নিজের হৃদয়কে শান্ত করে একটু অনুসন্ধান করছ না কেন?” আমার আসনে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না, কিন্তু আমার মন অস্থির ছিল: আজ এই পরিস্থিতি আমার কীভাবে সামলানো উচিত? আমি প্রভুর কাছে আমার হৃদয়ে নীরবে প্রার্থনা করলাম: “ওহ, প্রভু! আমি এই পরিস্থিতি আপনার কাছে অর্পণ করছি। দয়া করে আমাকে রক্ষা করুন এবং পরিচালনা করুন।” তারপর, আমার জ্ঞাতিভাই তুলে নিল বাক্য দেহে আবির্ভূত হল এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর একটা অংশ পড়ল। “আমি তোমাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের পথে সযত্নে চলার উপদেশ দিই। প্রথমেই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ো না; এছাড়াও, ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসে উদ্দেশ্যহীন এবং ভাবনাহীন হয়ো না। তোমাদের ন্যূনতম এটা জানা উচিত যে, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তাদের অন্তত বিনয়ী এবং সম্ভ্রমপূর্ণ হওয়া উচিত। যারা সত্য শুনেও তা প্রত্যাখ্যান করে, তারা মূর্খ এবং অজ্ঞ। যারা সত্য শুনেও উদ্দেশ্যহীনভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় বা তাকে নিন্দা করে, তারা অহংকারে আচ্ছন্ন। যারা যীশুকে বিশ্বাস করে, তারা কেউই অন্যকে নিন্দা বা অভিসম্পাত করার যোগ্য নয়। তোমাদের সকলকে এমন হতে হবে, যারা বিচক্ষণ এবং যারা সত্যকে স্বীকার করে। হয়তো সত্যের পথের বিষয়ে শুনে বা জীবনের বাক্য পড়ে তুমি বিশ্বাস করো যে, এই বাক্যগুলির ১০,০০০-এর মধ্যে একটি হয়তো তোমরা ধারণা এবং বাইবেলের সঙ্গে সুসঙ্গত, আর তারপর তোমার ১০,০০০তম বাক্য অবধি অনুসন্ধান চালানো উচিত। আমি এখনো তোমায় বিনয়ী হতে, অতি আত্মবিশ্বাসী না হতে, এবং নিজেকে অতি উচ্চে উন্নীত না করতেই উপদেশ দিই। তোমার হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি সামান্য সম্মান থাকলেই তুমি মহত্তর আলোক অর্জন করবে। তুমি যদি এই বাক্যগুলিকে সযত্নে পরীক্ষা করো এবং বারংবার চিন্তা করো, তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে এগুলি সত্য কিনা, এগুলিই জীবন কিনা” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যতক্ষণে তুমি যীশুর আধ্যাত্মিক দেহ প্রত্যক্ষ করবে, ততক্ষণে ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করে ফেলবেন)। আপাতদৃষ্টিতে আমি সেখানে শান্ত হয়ে বসেছিলাম, কিন্তু বাস্তবে বইয়ের কথাগুলো আমার উপর একটা ছাপ ফেলেছিল। এই সমস্ত দাবি প্রভু যীশুর বাণীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। প্রভু বলেছিলেন, “অহংবোধ নেই তাদের তারাই ধন্য, ঐশ্যরাজ্য তাদেরই” (মথি ৫:৩)। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের নম্রতা এবং অনুসন্ধানের মনোভাব থাকা উচিৎ। আমি অনুসন্ধান বা তদন্ত ছাড়াই অন্ধভাবে পূর্বের বজ্রালোককে নিন্দা ও বিচার করেছিলাম। আমি সত্যিই অহংকারী এবং স্ব-ধার্মিক ছিলাম। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হল, এবং মনে মনে ভাবলাম: “এই বাণীগুলির মধ্যে বিশেষ কিছু আছে, এগুলি প্রভুর শিক্ষার অনুরূপ। এগুলি কি সত্যিই প্রত্যাবর্তিত প্রভুর দ্বারা উচ্চারিত বাণী?” সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার লোকেদের সাথে যে সমস্ত সময় আলাপ-আলোচনা করেছি আমি সেগুলোর কথাও ভাবলাম: তারা মর্যাদাপূর্ণ এবং ন্যায়পরায়ণ ছিল, তারা ভালোবাসার সাথে সুসমাচার প্রচার করত, ধৈর্যশীল ছিল, এবং প্রশ্নগুলির জন্য তাদের ব্যাখ্যাগুলি বিশেষভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ছিল। কীভাবে তারা পবিত্র আত্মার কাজ ছাড়া নিজেদের দ্বারা এটা সম্পন্ন করতে পারল? এটা দেখিয়েছিল যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পথ অবশ্যই বিশেষ ছিল। যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সত্যিই প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু হন, এবং আমি অনুসন্ধান বা নীরিক্ষণ না করি, তাহলে কি আমি প্রভুর আগমন গ্রহন করার সুযোগ হারাব না এবং তাঁর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হব না? আমি ভাবলাম: “আমার একগুঁয়ে হওয়া বন্ধ করা উচিত। আমি আজকেই সন্ধান করার চেষ্টা করব যে প্রভু সত্যি প্রত্যাবর্তন করেছেন কিনা। তাহলে আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম, তারপর দৃঢ়ভাবে বললাম, “আপনার পড়া বাণীগুলি সত্যি ভাল ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। বাইবেল হল খ্রীস্টধর্মের ধর্মশাস্ত্র। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এটা সর্বদা বিশ্বাস হয়েছে যে বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, ও বাইবেলে লিপিবদ্ধ সবকিছুই ঈশ্বরের বাণী, এবং তাই বাইবেল প্রভুর প্রতিনিধিত্ব করে। এত বছর ধরে আমি এটাকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন আপনি বলছেন যে বাইবেলে ঈশ্বর এবং মানুষ দুজনেরই কথা রয়েছে। এটা কি বাইবেলের বিরোধীতা নয়? এটা হল প্রভুকে অস্বীকার করা, তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এবং জঘন্য অধর্ম!” ভ্রাতা ওয়াং ধৈর্য ধরে বললেন: “বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত এই কথাটা কি বাস্তবের সাথে মেলে? প্রভুর কোন বাণী আছে আমাদের কাছে প্রমাণ হিসেবে?” এই প্রশ্ন আমাকে নির্বাক করে দিল। সেটা ঠিক। এই কথাগুলো পৌলের দ্বারা বলা হয়েছিল, প্রভু যীশুর দ্বারা নয়। ভ্রাতা ওয়াং তখন বললেন: “প্রভু যীশু কখনও বলেননি যে বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং পবিত্র আত্মাও এই সাক্ষ্য দেননি। পৌল যা বলেছেন তা কেবল বাইবেল সম্বন্ধে তাঁর নিজস্ব উপলব্ধির প্রতিনিধিত্ব করে, এবং একদমই ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে না।” আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। তিনি ঠিকই বলছেন। তারপর, ভ্রাতা ওয়াং জিজ্ঞাসা করলেন: “পৌল বলেছিলেন, ‘সমগ্র শাস্ত্রই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত’ (২ তিমথির ৩:১৬)। যখন তিনি ‘শাস্ত্র’ বলেন, তিনি কি আসলে পুরো বাইবেলের কথা বলছেন, নাকি তার একটি অংশের কথা বলছেন?” আমি মনে মনে ভাবলাম, “তিনি অবশ্যই পুরো বাইবেল বোঝাতে চেয়েছেন।” ভ্রাতা ওয়াং বলে গেলেন: “আসলে, প্রভু আসার ৬০ বছর পরে পৌল ২ তিমোথির লিখেছিলেন, এবং সেই সময়ে, নতুন নিয়ম তখনও সংকলিত হয়নি, শুধুমাত্র পুরাতন নিয়ম ছিল। প্রভু আসার ৯০ বছরেরও বেশি সময় পরে, যোহন প্যাটমোস দ্বীপে যে দর্শনগুলি দেখেছিলেন তা লিখেছিলেন, যা পরবর্তীতে প্রকাশিত গ্রন্থে পরিণত হয়। প্রভু আসার ৩০০ বছরেরও বেশি সময় পরে, নাইকিয়ায় একটি সভায়, বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতারা বেছে নিয়েছিলেন চারটি সুসমাচারকে এবং শিষ্যদের কাছ থেকে প্রচুর সংখ্যক পত্রের মধ্যে থেকে আরও কিছু পত্র, এবং, যোহনের প্রকাশিত বাক্যের বই, এবং একসঙ্গে সেগুলো কে সংকলিত করেছিলেন নতুন নিয়ম হিসেবে। এর পরে, তারা পুরাতন এবং নতুন নিয়মকে একত্রিত করেছিলেন একটি বইতে, যেটা একটা গোটা পুরাতন এবং নতুন নিয়ম হিসেবে আমরা আজ পড়ি। নতুন নিয়ম ৩০০ খ্রিস্টাব্দের পরে সংকলিত হয়েছিল, এবং পৌল ৬০ খ্রিস্টাব্দের পরে ২ তিমোথির লিখেছিলেন, যা নতুন নিয়ম সংকলিত হওয়ার ২০০ বছর আগের কথা। এর থেকে আমরা দেখতে পাই যে যখন পৌল বলেছিলেন, ‘সমগ্র শাস্ত্রই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত,’ তিনি যে শাস্ত্রের কথা বলেছিলেন তাতে নতুন নিয়ম অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” আমি এটা শোনার পর, মাথা নেড়ে বললাম: “পৌল যে শাস্ত্রের কথা বলছিলেন তাতে যদি নতুন নিয়ম অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে তিনি অবশ্যই পুরাতন নিয়মের কথা বলতে চেয়েছেন।” ভ্রাতা ওয়াং বললেন: “হ্যাঁ, কিন্তু পুরাতন নিয়মও সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়লেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে বাইবেলে কতগুলো অংশ রয়েছে; পুরাতন নিয়মে রয়েছে আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক…, এবং এছাড়া এতে নবীদের লেখা ভবিষ্যদ্বাণীর বইও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত, পুরাতন নিয়মের সমাপ্তি হয় মালাখির বই দ্বারা। … ভবিষ্যদ্বাণীর এই বইগুলি বাইবেলের অন্যান্য বইয়ের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল; সেগুলি ছিল তাদের কথিত বা লিখিত বাক্য যাদের ভবিষ্যদ্বাণীর আত্মা প্রদান করা হয়েছিল—যারা যিহোবার কাছ থেকে দৃষ্টিশক্তি বা ধ্বনি লাভ করেছিল। ভবিষ্যদ্বাণীর বইগুলি ছাড়া, পুরাতন নিয়মের অন্যান্য সব কিছু যিহোবার কাজ শেষ করার পরে লোকের বানানো নথি দিয়ে তৈরি। এই বইগুলি যিহোবার দ্বারা প্রতিপালিত নবীদের বলা ভবিষ্যদ্বাণীকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না, ঠিক যেমন আদিপুস্তক ও যাত্রাপুস্তককে যিশাইয়র বই ও দানিয়েলের বইয়ের সাথে তুলনা করা যায় না। কাজ সম্পাদিত হওয়ার আগেই সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি কথিত হয়েছিল; ইতিমধ্যে, অন্য বইগুলি, কাজ শেষ হওয়ার পরে লেখা হয়েছিল, যা করার যোগ্যতা মানুষের ছিল” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাইবেল সম্পর্কিত (১))। “বাইবেলের সবকিছুই ঈশ্বরের ব্যক্তিগতভাবে বলা বাক্যের দলিল নয়। বাইবেল কেবলমাত্র ঈশ্বরের কাজের পূর্ববর্তী দুটি পর্যায়কে নথিভুক্ত করে, যার একটি অংশ হল নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীর নথি, এবং একটি অংশ হল যুগে যুগে ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত মানুষের লিখিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান। মানুষের অভিজ্ঞতা তাদের মতামত ও জ্ঞান দ্বারা কলঙ্কিত, এবং একে এড়ানো সম্ভব নয়। বাইবেলের অনেক বইতে মানুষের পূর্বধারণা, পক্ষপাত এবং অযৌক্তিক উপলব্ধি রয়েছে। অবশ্যই এর অধিকাংশ বাক্যই পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তির ফলাফল, এবং এগুলি সঠিক উপলব্ধি—তবে তা সত্ত্বেও এটা বলা যায় না যে এগুলি সত্যের সম্পূর্ণ সঠিক অভিব্যক্তি। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত জ্ঞান অথবা পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের দ্বারাই নির্দেশিত হয়েছিল: যিশাইয়, দানিয়েল, ইষ্রা, যিরমিয় এবং যিহিষ্কেলের মতো ভবিষ্যদ্বাণীগুলি পবিত্র আত্মার সরাসরি নির্দেশে এসেছে; এরা সকলেই দ্রষ্টা ছিল, এরা ভবিষ্যদ্বাণীর আত্মাকে গ্রহণ করেছিল, এবং সকলেই পুরাতন নিয়মের ভাববাদী ছিল। বিধানের যুগে, এই মানুষেরা, যারা যিহোবার অনুপ্রেরণা পেয়েছিল, তারা অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, যেগুলো সরাসরি যিহোবার দ্বারা নির্দেশিত” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাইবেল সম্পর্কিত (৩))। এর পরে, ভ্রাতা ওয়াং আলোচনা করলেন: “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী খুব স্পষ্ট। যাজকদের ভবিষ্যদ্বাণী পবিত্র আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিল, এবং যাজকদের দ্বারা ঘোষিত হয়েছিল। এগুলো ঈশ্বরের বাণী, এবং ঈশ্বরের সঠিক অর্থ বহন করে। ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত বাণী সর্বদা বাইবেলে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকে; উদাহরণস্বরূপ, যিশাইয়ের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘আমোসের পুত্র যিশাইয়ের দিব্যদর্শন’ (যিশাইয় ১:১)। যিরমিয়র শুরুতে বলে, ‘যিহোবা যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন’ (যিরমিয় ১:২)। কোন বাণীগুলি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত তা নিশ্চিত করার জন্য লোকেদের কেবল মনোযোগ দেওয়া দরকার। ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বইগুলি ছাড়াও, বাকি বাইবেল হল ঈশ্বরের কাজ অনুভব করার পর মানুষের দ্বারা লিখিত সেই অভিজ্ঞতার বিবরণী। এগুলোর অধিকাংশই হল স্মৃতিচারণা, এবং এই অভিজ্ঞতাগুলো এবং বাণীগুলি সবই হল মানুষের, আমরা বলতে পারি না যে এগুলো ঈশ্বরের বাণী, তাই মানবিক অর্থের সাথে তাদের মিশে যাওয়া এড়ানো কঠিন। যেমন এটি ২ শমুয়েলে ২৪:১-এ বলে, ‘ইসরায়েলের উপর যিহোবার ক্রোধ পুনরায় প্রজ্জ্বলিত হল, এবং তিনি দাউদকে তাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে বললেন, যাও, ইসরায়েল এবং যিহুদীয়ার জনসংখ্যা গণনা কর।’ তবুও, ১ বংশাবলি ২১:১ বলে: ‘ইসরায়েলীদের বিপদে ফেলার জন্য দাউদকে শয়তান লোক গণনা করার করার প্ররোচনা দিল।’ এই দুটি স্তবকই বিবরণ দেয় যখন দাউদ ইজরায়েলকে গণনা করেছিল। এক জায়গায় বলা হয়েছে যে, যিহোবা ঈশ্বর দাউদকে ইজরায়েলের সংখ্যা গননা করার জন্য চালিত করেছিলেন, এবং অন্যটিতে বলা হয়েছে শয়তানই দাউদকে চালিত করেছিল। যদি এটি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় তবে এত বড় অসঙ্গতি কীভাবে থাকতে পারে? যদি পুরো পুরাতন নিয়ম ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হত, একই ঘটনার গল্প তৈরি করার সময় ঈশ্বর কি কোনো ভুল করতেন?” ভ্রাতা ওয়াং এর কথা শুনে আমার মন বেশ খুলে গেল, এবং আমার একগুঁয়ে মানসিক প্রতিরক্ষা বিকল হতে শুরু করল। আমি বললাম: “যদি পুরাতন নিয়ম সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত না হয়, তাহলে আমরা নতুন নিয়মকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাণী হিসেবে নিতে পারি না, কারণ এতে সবই প্রধান শিষ্যদের বিবরণী।” ভ্রাতা ওয়াং খুশি হয়ে বললেন: “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আপনার উপলব্ধি সঠিক। আসলে, নতুন নিয়মে, শুধুমাত্র প্রভু যীশুর বাণী এবং প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণী ঈশ্বরের বাণী। বাকিটা শিষ্যদের, ফরিশীদের, সাধারণ মানুষের, সৈন্যদের, এবং শয়তানের কথা। এটা কি অযৌক্তিক নয় যে বাইবেলের সবকিছুই ঈশ্বরের বাণী? এটা কি অধর্ম নয়?”
এর পরে, ভ্রাতা ওয়াং আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণীর আরেকটি অংশ পড়ে শোনা্লেন। “বর্তমানে, মানুষ বিশ্বাস করে যে বাইবেল হলো ঈশ্বর এবং ঈশ্বরই হলো বাইবেল। তাই, তারা এও বিশ্বাস করে যে বাইবেলের বাক্যগুলোই ঈশ্বরের বলা একমাত্র বাক্য, এবং সেগুলি সমস্তই ঈশ্বরই বলেছিলেন। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তারা এমনকি এও মনে করে যে, পুরাতন এবং নূতন নিয়মের ছেষট্টিটি বইয়ের সবকটি মানুষের লেখা হলেও, সেগুলি সবই ছিল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং পবিত্র আত্মার উচ্চারণের নথিবদ্ধকরণ। এটি মানুষের ভ্রান্ত উপলব্ধি এবং এটি সত্যের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভবিষ্যদ্বাণীর বইগুলি ছাড়া, পুরাতন নিয়মের বেশিরভাগই হচ্ছে ঐতিহাসিক নথি। নূতন নিয়মের কিছু পত্র এসেছে মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে, আর কিছু এসেছে পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি থেকে; উদাহরণস্বরূপ, পৌলের পত্রগুলি একজন মানুষের কাজের থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, এগুলি সমস্তই ছিল পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তির ফলাফল, এবং তা গির্জাগুলির জন্যই লেখা হয়েছিল, এবং গির্জার ভাই ও বোনদের কাছে উপদেশমূলক এবং উৎসাহব্যঞ্জক বাক্য ছিল। এগুলি পবিত্র আত্মার দ্বারা উচ্চারিত বাক্য ছিল না—পৌল পবিত্র আত্মার হয়ে কথা বলতে পারতো না, এবং সে একজন নবীও ছিল না, যোহন যে দর্শনগুলি দেখেছিল, সে তার থেকেও কম দেখেছিল। তাঁর পত্রগুলি ইফিসাস, ফিলাডেলফিয়া, গালাতীয়া এবং অন্যান্য গির্জাগুলির জন্য লেখা হয়েছিল। … যদি মানুষেরা পৌলের পত্র বা বাক্যগুলিকে পবিত্র আত্মার উচ্চারণ হিসাবে দেখে এবং সেগুলিকে ঈশ্বর হিসাবে উপাসনা করে, তবে কেবল এটিই বলা যেতে পারে যে খুবই বাছবিচারহীন। আরও কঠিন ভাবে বলতে গেলে, এটা কি নিছক ঈশ্বর নিন্দা নয়? কীভাবে একজন মানুষ ঈশ্বরের হয়ে কথা বলতে পারে? এবং তার পত্র ও বাক্যের নথির সামনে কীভাবে মানুষ নত হতে পারে, যেন সেগুলো এক পবিত্র গ্রন্থ, বা স্বর্গীয় গ্রন্থ? ঈশ্বরের বাক্য কি একজন মানুষের মুখে আকস্মিকভাবে উচ্চারিত হতে পারে? একজন মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের হয়ে কথা বলতে পারে?” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, বাইবেল সম্পর্কিত (৩))। যতই শুনলাম ততই বুঝলাম। আমি বিলাপ করলাম: “আগে, আমি বুঝতে পারিনি কোন প্রেক্ষাপটে পৌল এই কথাগুলো বলেছেন। আমি ভেবেছিলাম বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং এর সমস্ত বাণীই ঈশ্বরের, এবং বাইবেলকে বিশ্বাস করা মানেই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা। এই ব্যাখ্যা কত অযৌক্তিক ছিল! বাইবেলে মানুষের কথাগুলোকে ঈশ্বরের বলে গ্রহণ করার জন্য আমি জোর দিয়েছিলাম, এবং এগুলোকে আমার বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। এটা কি প্রভুর পথ থেকে বিচ্যূতি নয়?”
তারপর ভ্রাতা ওয়াং আলোচনা করলেন, যে বাইবেল ঈশ্বরের কাজের একটি প্রমাণ মাত্র, এবং এটি একটি ঐতিহাসিক গ্রন্হ। তিনি বললেন যে এটি বিধানের যুগে ও অনুগ্রহের যুগে ঈশ্বরের কাজের একটি নথি। কীভাবে একে ঈশ্বরের সাথে একই আসনে রাখা যায়? তাই প্রভু যীশু ফরিশীদের ধমক দিয়ে বললেন: “তোমরা অধ্যবসায় সহকারে শাস্ত্রপাঠ কর, মনে কর তার মধ্যেই পাবে অনন্ত জীবন। কিন্তু সেই শাস্ত্র আমারই সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ জীবন লাভের জন্য তোমরা আমার কাছে আসতে চাও না” (যোহন ৫:৩৯-৪০)। বাইবেল ঈশ্বরের একটি সাক্ষ্য মাত্র, এটি অনন্ত জীবন ধারণ করে না। শুধুমাত্র ঈশ্বর মানুষকে অনন্ত জীবন দিতে পারেন! আমার মনে আছে আমার জ্ঞাতিভাইও আলোচনা করেছিল যে বাইবেল পড়ার মাধ্যমে, আমরা বিধানের যুগে ও অনুগ্রহের যুগে ঈশ্বরের কাজ বুঝতে পারি, আমরা জানি মহাবিশ্বের সবকিছুই ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট, কীভাবে ঈশ্বর মানবজাতিকে দিকনির্দেশ দেওয়ার জন্য আইন জারি করেছিলেন, এবং কীভাবে আমাদের পৃথিবীতে বাস এবং ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত। আমরা জানি পাপ কাকে বলে, এবং কোন ধরনের মানুষদের ঈশ্বর আশীর্বাদ করেন এবং অভিশাপ দেন। আমরা এটাও জানি যে কীভাবে আমাদের পাপ স্বীকার করা উচিত এবং প্রভুর কাছে অনুতাপ করা উচিত, কীভাবে নম্র, ধৈর্যশীল, ক্ষমাশীল, হতে হবে এবং কীভাবে আমাদের দুর্বলতাগুলোকে মেনে নিয়ে প্রভুকে অনুসরণ করতে হবে। আমরা আমাদের জন্য প্রভু যীশুর সীমাহীন মমতা এবং ভালবাসা দেখতে পাই, এবং জানি যে শুধুমাত্র প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং সত্যের প্রাচুর্য উপভোগ করতে পারি। কিন্তু অন্তিম সময়ে ঈশ্বর কী সত্য প্রকাশ করেন, এবং কীভাবে ঈশ্বর বিচার এবং মানুষের দুর্নীতিকে পরিশুদ্ধ করবেন এবং আমাদের পাপের মূল সমাধান করবেন, আমাদের সামান্যতম ধারণা নেই কারণ এই সত্যগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। প্রভু যীশুর মুক্তির কাজের উপর ভিত্তি করে, অন্তিম সময়ের সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিচারের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন, মানবতাকে পরিশুদ্ধ করার বিষয়ে সমস্ত সত্য প্রকাশ করেছেন, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানবতার শয়তানী স্বভাব ও প্রকৃতি প্রকাশ করেছেন, যাতে আমাদের দুর্নীতি পরিশুদ্ধ হয় এবং আমরা এমন মানুষ হই যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে এবং মান্য করে, এবং ঈশ্বরের স্বভাবকে আমাদের পবিত্র এবং ধার্মিক হিসেবে চেনানো হয়েছে, যা অপরাধের অনুমতি দেয় না, এই বাণীগুলিই অনন্ত জীবনের আসল পথ এবং এগুলো প্রভু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ করে: “তোমাদের আরও অনেক কথা আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনিই তখন তোমাদের পূর্ণ সত্যের উপলব্ধি দান করবেন” (যোহন ১৬:১২-১৩)। এই বইটা, বাক্য দেহে আবির্ভূত হল হল সেই বাণী যা পবিত্র আত্মা সমস্ত গীর্জাকে বলে। এটা হল মেষশাবক দ্বারা খোলা পুঁথি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ার মাধ্যমে, ধর্মীয় জগৎ থেকে ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর চিনতে পেরেছে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দিকে ফিরেছে এবং মেষশাবকের পদচিহ্ন অনুসরণ করেছে।
তারপর, ভ্রাতা ওয়াং আরেকটি অংশ পড়ে শোনালেন। “অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট নিয়ে আসেন জীবন, এবং নিয়ে আসেন সত্যের চিরস্থায়ী ও শাশ্বত পথ। এই সত্যের পথেই মানুষ জীবন লাভ করে এবং এটিই একমাত্র পথ যার দ্বারা মানুষ ঈশ্বরকে জানতে পারে এবং ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত হয়। অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট যে জীবন যাপনের পথের সন্ধান দিয়েছেন তুমি যদি তার অনুসন্ধান না করো, তবে তুমি কখনই যীশুর অনুমোদন লাভ করতে পারবে না এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের যোগ্য কখনই হয়ে উঠতে পারবে না, কারণ তুমি কেবল ইতিহাসের হাতের পুতুল এবং তার বন্দী। যারা নিয়ম-কানুন, লিখিত মতবাদ এবং ইতিহাসের শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তারা কখনই জীবনকে অর্জন করতে পারে না বা জীবন যাপনের চিরস্থায়ী পথ অর্জন করতে পারে না। কারণ তাদের জীবন সিংহাসন থেকে প্রবাহিত প্রাণসঞ্চারী জলের পরিবর্তে হাজার হাজার বছর ধরে আবদ্ধ অস্বচ্ছ জলের মতো। যাদের জীবনে এই প্রাণসঞ্চারী জলের সরবরাহ থাকে না তারা চিরকালই মৃতদেহের অনুরূপ, শয়তানের খেলার সামগ্রী এবং নরকের সন্তান হয়েই থেকে যাবে। তাহলে তারা কীভাবে ঈশ্বরকে দেখতে পাবে? যদি তুমি শুধুমাত্র অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করো, সমস্তকিছুকে নিশ্চল করে রাখার চেষ্টা করো, স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চেষ্ট থাকো এবং ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করো, তাহলে তুমি কি সর্বদা ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারী নও? ঈশ্বরের কর্মকাণ্ডের পর্যায়গুলি বিশাল এবং শক্তিশালী, ঠিক উথালপাথাল ঢেউ এবং গর্জনকারী বজ্রের মতো—তবুও তুমি নিষ্ক্রিয়ভাবে ধ্বংসের অপেক্ষায় বসে আছো, নিজের অজ্ঞতা আঁকড়ে ধরে আছো এবং নিশ্চেষ্ট রয়েছ। এইভাবে, তুমি মেষশাবকের পদাঙ্ক অনুসরণকারীর মতো কীভাবে বিবেচিত হতে পারো? তুমি কীভাবে সেই ঈশ্বরকে প্রমাণ করবে যাকে তুমি ঈশ্বর বলে আঁকড়ে ধরে থাকো, যিনি সর্বদা নতুন এবং কখনও পুরানো হন না? হলুদ হয়ে যাওয়া জীর্ণ বইয়ের বাক্য কীভাবে তোমাকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে পারে? সেগুলি কীভাবে তোমাকে ঈশ্বরের কাজের পদক্ষেপগুলির সন্ধানে পরিচালিত করতে পারে? সেগুলি কীভাবে তোমার স্বর্গের পথ প্রশস্ত করতে পারে? তোমার হাতে ধরা বইগুলি শুধুই অক্ষরের সমাহার, যা কেবল অস্থায়ী শান্তি প্রদান করতে পারে, জীবনদায়ী সত্যের সন্ধান দিতে সক্ষম নয়। তোমার পড়া শাস্ত্রগুলি শুধুমাত্র তোমার জিহ্বাকে সমৃদ্ধ করতে পারে, মানব জীবনের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্যকারী জীবন দর্শনের সন্ধান দিতে তারা অক্ষম, নিখুঁত হওয়ার অভিমুখে চলার পথ হবার যোগ্যতা তো এগুলির আরোই কম। এই অমিলগুলি কি তোমাকে ভাবনার রসদ জোগাতে পারে না? এটা কি তোমাকে অন্তর্নিহিত রহস্য বুঝতে সাহায্য করে না? তুমি কি স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য এবং নিজের সামর্থ্যেই ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে সক্ষম? ঈশ্বরের আগমন ব্যতীত তুমি কি ঈশ্বরের সাথে পারিবারিক সুখ উপভোগ করতে স্বর্গে নিজেকে নিয়ে যেতে পারবে? তুমি কি এখনও দিবাস্বপ্ন দেখছো? আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে, তাহলে তুমি দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেখো যে এখন কে কাজ করছেন—দেখো কে এখন অন্তিম সময়ে মানুষকে উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো না পারলে তুমি কখনই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে না এবং কখনও জীবন লাভ করতে পারবে না” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন)। এই কথাগুলো শুনে আমি গভীরভাবে কেঁপে উঠলাম। আমি যদি আমার নিজস্ব ধর্মীয় মতামতকে আঁকড়ে থাকি, তাহলে শেষ পর্যন্ত আমিই হেরে যাব। আমি ভাবলাম একজন খ্রীস্টান হিসাবে এতগুলো বছর ধরে আমি বাইবেলের কত জ্ঞান সংগ্রহ করেছি, তবুও আমি সত্য বা ঈশ্বর সম্পর্কে প্রায় কিছুই বুঝতে পারিনি। উল্টে আমি ক্রমশ অহংকারী হয়ে উঠছিলাম। প্রভু প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, কিন্তু আমি সেটা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা/ নীরিক্ষণ করিনি, এমনকি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিন্দা করার জন্য আমি বাইবেল থেকে বাণী ব্যবহার করেছি। আমি ঠিক সেই ফরিশীদের মত ছিলাম যারা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করেছিল। আমি সত্যিই অন্ধ ছিলাম এবং ঈশ্বরকে চিনতাম না! আমি শুধু আমার ধারণাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম তা-ই নয, অন্যদের অনুসন্ধানে বাধা দেওয়ার জন্য আমি আমার মাথাও খাটিয়েছিলাম। এটা কি ঈশ্বরের কাজকে ব্যাহত করছিল না? অন্যরা যদি প্রভুকে স্বাগত জানাতে বা তাঁর নতুন কাজকে অনুসরণ করতে না পারত তাহলে তারা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের সুযোগ হারিয়ে ফেলত। আমি অন্যদের নরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম এবং ঈশ্বরের প্রতিরোধ করছিলাম! তবুও ঈশ্বর আমাকে করুণা ও অনুগ্রহ দেখিয়েছেন। ঈশ্বর আমাকে তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে এবং তাঁর আবির্ভাবের সাক্ষী থাকতে দিয়েছেন। ঈশ্বর সত্যই আমায় ভালোবাসতেন! এর পরে, আমরা বাইবেলের উপর আলোচনা চালিয়ে গেলাম। আমরা এই বিষয়েও কথা বললাম কেন অনুগ্রহের যুগে গির্জা জনশূন্য হয়ে পড়েছে, কীভাবে ঈশ্বর তিনটি পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে মানবতাকে রক্ষা করেন, এবং আরও অনেক কিছু।
পরবর্তী সময়ে, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রচুর বাণী পড়েছি, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে গ্রহণ করেছি। পরে আমার স্ত্রীও তা মেনে নেয়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।