ত্রয়ীর ধাঁধার সমাধান

18-02-2023

আমি ২০ বছর আগে এক বয়োজ্যেষ্ঠের দ্বারা খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হই। তিনি আমাকে বলেন যে ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর মধ্যে প্রকৃত ঈশ্বর একজনই আছেন, যিনি মানবজাতি, আকাশ পৃথিবী এবং অন্য সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এ ছিল আমার কাছে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। পরে তিনি আমাকে বলেন যে প্রভু যীশু ঈশ্বরের পুত্র এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা রক্ষা পেতে পারি। এই সময়, আমি একটু বিভ্রান্ত বোধ করি। ঈশ্বর কি একজনই নন? তাঁর পুত্র থাকে কী করে? আমি বুঝতে পারছিলাম না প্রকৃতপক্ষে কতজন ঈশ্বর আছেন। তারপর যখনই আমি যাজককে কাউকে দীক্ষিত করতে দেখেছি, আমি লক্ষ করি তিনি বলেন, “তুমি দীক্ষিত হচ্ছ পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে।” বিভ্রান্ত হয়ে আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, “আর কতজন ঈশ্বরআছেন? কেন আপনি সবসময় মানুষকে ঈশ্বরের এতগুলি নামে দীক্ষা দেন?” তাঁর উত্তর ছিল, “ঈশ্বর একজন কিন্তু আর এক ত্রয়ী আছে, যার অঙ্গ পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা। তাঁরা ভিন্ন ব্যক্তি কিন্তু একত্রে এক সত্তারূপে বিরাজমান।” আমি তাও বুঝিনি দেখে তিনি আরো বলেন, “এটা বুঝতে হলে তোমাকে আসলে আরো গভীরে প্রবেশ করতে হবে। এখন তুমি এটা না বুঝলেও চলবে। এঁদের সবাইকে ঈশ্বর হিসেবে মান্য করে চলো। পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা সবাই একত্রে কাজ করেন।” তাঁর ব্যাখ্যার পরেও আমি কিছুই বুঝিনি। তিনি একই ঈশ্বর হলে তিন ব্যক্তি হন কী করে? কিন্তু আমি বুঝলাম এটা ভুল হতে পারে না কারণ এটি খ্রিস্টধর্মের গোড়ার কথা, সুতরাং এ হয়ত ঈশ্বরের কোনো গভীর রহস্য।

আমি পরে দৈবচর্চার বিদ্যালয়ে যাই যাতে আমি ঈশ্বরকে আরো উৎকৃষ্টরূপে সেবা করতে পারি। সেখানে থাকার সময়েও আমি ত্রয়ীর অর্থ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করি। আমার বিভ্রান্তি দূর করতে আমি বহু পাঠ্যবস্তু ও শাস্ত্র পড়ি এবং যাজকদের প্রশ্ন করি, কিন্তু কোনো উত্তর পাই না। লেখাপড়া শেষ করে আমি গির্জার সানডে স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিই। কিছু ব্রাদার ও সিস্টার আমাকে ত্রয়ীকে ব্যাখ্যা করতে বলে। আমি জানতাম না কী করা উচিত,তাই আমি যাজক যা বলেছিল তা-ই বলে তাদের নিরস্ত করতাম। তাদের তবুও কিছু না বুঝতে দেখে, আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগত। আমি জানতাম আমার প্রভুর সেবা করার কথা, তাই আমি সত্যিই লজ্জিত বোধ করলাম যে আমি এমন কিছু ব্যাখ্যা করতে পারছি না যা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের গোড়ার বিষয়।

২০০৭ সালে, আমি বৈশ্বিক চিনা যাজক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রশিক্ষণ সমাবেশে অংশ নিই। সারা বিশ্বের বিখ্যাত যাজক ও প্রচারকরা একত্রিত হয়েছেন দেখে আমি অত্যন্ত উত্তেজিত হই। আমি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সন্ধান ও আমার মনের বিভ্রান্তি দূর করতে চেয়েছিলাম। সমাবেশের পরে এ বিষয়ে জানতে আমি এক খ্যাতনামা যাজকের কাছে যাই। আমি তাঁকে ত্রয়ী সম্পর্কে তাঁর ধারণার বিষয়ে প্রশ্ন করি এবং তিনি আমাকে বললেন, “পিতাই সব নির্ধারণ করেন, পুত্র পিতার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করেন, এবং পবিত্র আত্মা এই পরিকল্পনার প্রতিপালন করেন।” আমি তাঁকে আরও বিস্তারে বোঝাতে বলি, কিন্তু তিনি দক্ষতার সাথে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। আমি আরেকজন যাজককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি এবং তিনি বলেন, “যিহোবা হলেন ঈশ্ব, প্রভু যীশু হলেন ঈশ্বর, ও পবিত্র আত্মাও ঈশ্বর। এঁরা সবাই ঈশ্বর। তুমি তোমার খুশিমতো যে কোনো একজনের কাছে প্রার্থনা করতে পারো। তবে, আমার পরামর্শ হল প্রভু যীশুর কাছে প্রার্থনা করো কারণ তিনি মনুষ্যপুত্র, তাঁর স্বাভাবিক মানবিক আবেগ আছে এবং তিনি মানবহৃদয়ের অন্তঃস্থল দেখতে পান। তিনি বহু অলৌকিকতাও প্রদর্শন করেছেন। যিহোবা হলেন এক আত্মা এবং পবিত্র আত্মাও তাই। তাঁদের দেখা বা ছোঁয়া যায় না। সেই জন্য পার্থিব ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনই শ্রেয়।” আমি এতে আরো বিভ্রান্ত হয়ে ভাবলাম, “যখন তিন ব্যক্তির কেউই অন্যের চেয়ে উত্তম বা অধম নন, কী করে কোনো একজনের কাছে প্রার্থনা করা শ্রেয়তর হতে পারে? যিহোবা ঈশ্বরও কি আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল দেখতে পান না ও সবরকম অলৌকিকতা প্রদর্শন করতে পারেন না?” আমার বিভ্রান্তি দেখে তিনি যোগ করলেন, “ঈশ্বর এক আত্মা এবং তিনি বোধের অতীত। বহু যাজক দশকের পর দশকব্যাপী শাস্ত্রপাঠের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এর পুরো ব্যাখ্যা দিতে পারেন না এবং আমিও এখনো তা বোঝার চেষ্টা করছি।” আমার এর পর আর জিজ্ঞাসা করার মতো কিছু ছিল না। যেভাবে সেই যাজক প্রার্থনার গুরুত্বের কথা বলছিলেন তা ভেবে আমি সত্যিই বিচলিত হয়ে পড়লাম। আমার মনে হল এ ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার পরিচয় নয়, কিন্তু আমি জানতাম না কী করে আমি এটা বুঝতে পারি। আমি ত্রয়ীকে আমার বিভ্রান্তি সত্ত্বেও বিশ্বাস করলাম। সানডে স্কুলের শ্রেণিতে যখনই ত্রয়ীর প্রসঙ্গ আসত, আমি তা এড়িয়ে যেতাম, ভুল কিছু বলে ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করার ভয়ে, কিন্তু আমি কখনোই বিষয়টা স্পষ্ট করে হৃদয়ঙ্গম করিনি।

চকিতে এক দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। ২০১৭ সালে আমার সিস্টার সু-এর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর বাইবেল বিষয়ক আলাপচারিতা সত্যিই প্রদীপ্তিময় ছিল এবং তাঁর বোধ অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ছিল। আমি তার থেকে অনেক কিছু অর্জন করি। তিনি পরে আমাকে ছোটো ছোটো দলে অনলাইন সভায় আমন্ত্রণ জানান। তারই মধ্যে একটিতে, ব্রাদার লি ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রকৃত স্বরূপ ও বাইবেলের পিছনের কাহিনি বিষয়ে আলাপচারিতা করেন। এটি চোখ খুলে দেওয়ার মতো ছিল। তিনি প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণীরও উল্লেখ করেন এবং বলেন, “ঈশ্বরের মানবজাতিকে রক্ষা করার কাজ তিনটি যুগে হয়। পুরাতন নিয়ম ছিল আইনের যুগ, নূতন নিয়ম ছিল অনুগ্রহের যুগ, এবং প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণী হল অন্তিম সময়ের কাজ বিষয়ক। প্রতি যুগে ঈশ্বর এক নতুন নাম গ্রহণ করে ভিন্ন কাজ করেন। আইনের যুগে পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরের নাম ছিল যিহোবা, এবং তিনি মানুষকে মোশির মাধ্যমে আইন ও আদেশনামাকরে মানুষকে পাপ বিষয়ক শিক্ষা দেন, আদি যুগের মানুষকে পার্থিব জীবনের পথ প্রদর্শন করেন। পরে আইনের যুগে, কেউ আইন মানছিল না, বরং আরো আরো বেশি পাপ করছিল। প্রত্যেকে আইন অনুযায়ী ভৎর্সনা ও মৃত্যুকবলিত হয়। মানুষকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন প্রভু যীশু রূপে। আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্রুশবিদ্ধ হন। যতক্ষণ আমরা প্রভু যীশুকে স্বীকার করছি ও তাঁর কাছে স্বীকারোক্তি ও পরিতাপ করছি, আমাদের পাপ ক্ষমা করা হতে পারে। কিন্তু তবু আমাদের প্রকৃতি পাপময় থেকে গেছে, তাই আমরা পাপ ও স্বীকারোক্তি করতেই থাকি। আমরা পাপের বন্ধন থেকে মুক্ত বা পরিশুদ্ধ হই না। এভাবে আমরা স্বর্গরাজ্যের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারি না। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর মানবজাতির প্রয়োজন অনুযায়ী সত্য প্রকাশ করেন। তিনি মানবজাতির বিচার ও পরিশোধনের জন্য, আমাদের পাপী প্রকৃতি মোচনের জন্য, এবং শয়তানের প্রভাব থেকে আমাদের সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করার জন্য কাজ করেন। এই হল মানবজাতিকে বাঁচাতে ঈশ্বরের করা কাজের তিনটি পর্যায়। তাঁর কাজের প্রতিটি পর্যায়ই মানবজাতির কী প্রয়োজন তার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের পাপমুক্ত করার ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজকে স্বীকার করা সম্পূর্ণ রক্ষা পাওয়ার ও ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের একমাত্র পথ।”

ব্রাদার লি আলাপচারিতায় বলেন যে ঈশ্বরের কাজের তিনটি পর্যায় ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত, এবং একে বাইবেলের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। এতে আমি সত্যিই আকৃষ্ট হই। আমি এতবার বাইবেল পট়তাম আর এত ধর্মোপদেশ শুনতাম, কিন্তু আমি কখনো কাউকে ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে এত স্পষ্টভাবে আলাপচারিতা করতে শুনিনি। ব্রাদার লি একটি অংশ পাঠিয়েও দেন যা আমি এখন পড়ব। “যিহোবার কাজ থেকে যীশুর কাজ পর্যন্ত, এবং যীশুর কাজ থেকে বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত, এই তিনটি পর্যায় এক নিরবচ্ছিন্ন যোগসূত্রে ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার ব্যাপ্তিকে বিধৃত করে, এবং তা সবই এক আত্মার কাজ। পৃথিবীর সৃষ্টির পর থেকে ঈশ্বর সর্বদাই মানুষকে পরিচালনার কাজ করে চলেছেন। তিনিই আদি এবং অন্ত, তিনিই প্রথম এবং অন্তিম, এবং তিনিই সেই একক যে একটি যুগের সূচনা করেন এবং তিনিই সে যে সেই যুগকে সমাপ্ত করেন। বিভিন্ন যুগে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে তিনটি পর্যায়ের কাজ, অভ্রান্তভাবে এক আত্মার কাজ। যারা এই তিনটি পর্যায়কে পৃথক করে, তারা সকলেই ঈশ্বরের বিপক্ষে অবস্থান করে। এবার তোমার এই কথা বোঝা উচিত যে প্রথম পর্যায় থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত কাজ একক ঈশ্বরের কাজ, একক আত্মার কাজ। এই বিষয়ে কোনও দ্বিধা থাকতে পারে না(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের কাজের দর্শন (৩))। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পর, ব্রাদার লি আলাপচারিতা করেন, “একজনই মাত্র ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন এবং ঈশ্বর স্বয়ং মানুষকে পরিচালনা ও রক্ষা করছেন। বিশ্বের সৃষ্টি থেকে আজ অবধি, তিনি মানবজাতিকে রক্ষা করতে কাজ করছেন, এবং যদিও কাজের প্রতিটি পর্যায়ে তাঁর নাম আলাদা এবং কাজ, সময় ও স্থান ভিন্ন, এ সবই একই ঈশ্বর করেন। কাজের প্রতিটি পর্যায়ই আগের পর্যায়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, প্রতি পর্যাযেই উচ্চতর ও গভীরতর হয়।” আমি এ কথা শুনে সত্যিই চমৎকৃত হলাম এবং ভাবলাম, “ইনি বলছেন প্রতিটি পর্যায়ের কাজই একই আত্মা করেন, সুতরাং যিহোবা এবং প্রভু যীশু একই আত্মা। তাহলে একই ঈশ্বর আছেন, তিনটি আত্মা নয়! ব্রাদার লির আলাপচারিতা স্পষ্ট ও অর্থপূর্ণ এবং আমি সন্দেহ বা বর্জন করার মতো কিছু পেলাম না। কিন্তু তাঁর কথার ভিত্তিতে, আমরা যে ত্রয়ীকে বিশ্বাস করেছি তা কি অর্থহীন হয়ে যায় না? যদিও ধর্মীয় দুনিয়ায় ঈশ্বরের বহুত্ব ও একত্ব বিষয়ে বিতর্ক হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষ ত্রয়ীকে বিশ্বাস করে। তারা সবাই ভুল হতে পারে না। আমি ইতিপূর্বে কখনো এমন আলাপচারিতা শুনিনি। ধর্মীয় জগতে কি কোনো নতুন বোধ জন্ম নিয়েছে?” আমার অনুভূতিকে থিতু করতে না পেরে, আমি আগেই বেরিয়ে আসি যাতে আমি এ নিয়ে খানিক ভাবতে পারি।

স্পষ্ট করে বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে আমি আবার বাইবেলের পাতা ওল্টাতে থাকি এবং বহু প্রচারের উৎসে চোখবোলাতে থাকি। আমি দিনের পর দিন খুঁজেও এর থেকে কিছু পেলাম না। এই সময় আমি উদ্বিগ্ন বোধ করতে থাকি এবং মনে মনে ভাবি, “ব্রাদার লির আলাপচারিতা ধর্মীয় বিশ্ব যা বলে তার থেকে আলাদা, কিন্তু তা নতুন এবং বাইবেলসম্মত। আমার কি পরের সমাবেশে যোগ দেওয়া উচিত? যদি আমি যাওয়া জারি রাখি এবং ত্রয়ীর ধারণা নাকচ করি, আমি নিশ্চিতরূপেই ধর্মীয় বিশ্বের দ্বারা বিতাড়িত হব। কিন্তু আবার, এই আলাপচারিতা থেকে আমি যে প্রদীপ্তি লাভ করি তা গির্জা থেকে পাই না। আমার এটা ছেড়ে যেতে খুবই খারাপ লাগবে।” আমি মনস্থির করতে না পেরে ব্রাদার লি যে ঈশ্বরের বাক্য পাঠিয়েছিলেন সেই অংশটি বার করি। আমি পড়তে পড়তে ভাবনা-চিন্তা করলাম এবং যত ভাবলাম ততই মনে হল যে কোনো সাধারণ মানুষ এটা ভেবে উঠতে পারে না। এবং কোনো আধ্যাত্মিক মানুষ ঈশ্বরের পরিচালনার কাজের বিষয়ে ওই স্বরে কথা বলার সাহস করবে না। এ কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য হতে পারে? বহু চিন্তা করার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে ধর্মীয় জগৎ যা-ই ভাবুক, আমাকে ব্রাদার লির আলাপচারিতা শুনতেই হবে এবং দেখতে হবে আমি আমার বিভ্রান্তি দূর করতে পারি কিনা।

পরের সমাবেশে আমি ত্রয়ীর বিষয়ে আমার অনিশ্চয়তা ভাগ করে নিই এবং এই ছিল তাঁর আলাপচারিতা: “বহু ধর্মীয় ব্যক্তি ত্রয়ীর ধারণায় অটল থাকেন। তাঁরা মনে করেন ঈশ্বর এক কিন্তু ব্যক্তি তিনজন, পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা, যাঁরা ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার নানান ভাগের কাজ করেন। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে তেখেছি এই ধারণা কোথা থেকে আসে? ঈশ্বর কি কখনো ত্রয়ীর বিষয়ে কিছু বলেছেন? পবিত্র আত্মা এর সাক্ষ্য বহন করেছেন? নবীরা কি এ বিষয়ে কথা বলেছেন? মোটেই না! বস্তুত ত্রয়ীর ধারণা নাইকিয়ার সভায় প্রথমবার উল্লিখিত হয় প্রভুর মৃত্যুর তিনশো বৎসরাধিক পরে, এবং ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদের পর তা গৃহীত হয়। সেই সময় থেকে বেশিরভাগ ধর্মীয় মানুষ এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে আমাদের এক ঈশ্বর যিনি সব সৃষ্টি করেছেন, তিনি ত্রয়ী। তারা মনে করে যে প্রভু যীশু ছাড়া, স্বর্গে পিতা এবং পবিত্র আত্মাও আছেন, তিনজন ঈশ্বর আছেন, তিনটি আত্মা। যদি আমরা তাদের যুক্তিক্রম অনুসরণ করি, ঈশ্বর কি একই ঈশ্বর হতে পারেন? তারা চিৎকার করে প্রচার করে একেশ্বরের কথা কিন্তু তারা ত্রয়ীতে বিশ্বাস করে। এ কি স্ববিরোধিতা নয়? এ কি উদ্ভট নয়? পুরাতন নিয়মে কোনো ত্রয়ীর কথা কখনো ছিল না, এবং প্রভু যীশুর সাড়ে তিন বছরের পার্থিব কার্যকালে তিনি ত্রয়ীর অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই বলেননি। কেন প্রভু যীশু তাঁর কাজ শেষ করার পর এই ভাবনার উদয় হল? কারণ মানুষ অবতারত্বের মূলসত্তা বোঝেনি। পবিত্র আত্মা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে প্রভু যীশু ঈশ্বরের স্নেহধন্য পুত্র এবং তারা তাঁকে তাঁর স্বর্গের পিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে দেখেছিল তাই তারা ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে নেয়। তারা মনে করল তিনজন ঈশ্বর আছেন, পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা। তারা যা কল্পনা করেছিল তার পুর্বানুমানের ভিত্তিতে ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করার অলীক প্রয়াস করে। উদাহরণ হিসেবে, ফিলিপের কথাই ধরা যাক। সে জানত না যে প্রভু যীশুই দেহরূপী ঈশ্বর তাই সে প্রভুকে বলে পিতার দর্শন করাতে। প্রভু যীশু স্পষ্ট করে জবাব দেন, ‘ফিলিপ, এতদিন আমি তোমাদের সঙ্গে আছি তবু তোমরা আমায় চিনলে না? আমায় যে দর্শন করেছে সে আমার পিতারও দর্শনলাভ করেছে। তাহলে কি করে তুমি বলছ, “পিতাকে আমাদের দর্শন করান?” তুমি বিশ্বাস কর না যে আমি পিতার মাঝে এবং আমারই মাঝে পিতা বিরাজিত? তোমাদের কাছে আমি যা বলি, সে সব কথা নিজে থেকে বলি না। পিতা, যিনি আমার মধ্যে বিরাজ করেন, তিনিই নিজের কার্যসাধন করেছেন(যোহন ১৪:৯-১০)। প্রভু যীশু এ-ও বলেছিলেন, ‘আমার পিতা এবং আমি অভিন্ন(যোহন ১০:৩০)। প্রভু যীশু অত্যন্ত স্পষ্টরূপে জানতেন যে তাঁরা অভিন্ন যে তাঁরা একই ঈশ্বর, একই আত্মা।”

তারপর ব্রাদার লি ঈশ্বরের কিছু বাক্য পাঠের একটি ভিডিও চালান। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কেউ বলো যে, ত্রয়ী সত্যিই বিদ্যমান, তাহলে এই তিন ব্যক্তির মধ্যে এক ঈশ্বরের বিষয়টা ঠিক কী, সেটা একটু ব্যাখ্যা করো। পবিত্র পিতা কী? পুত্র কী? পবিত্র আত্মাই বা কী? যিহোবাই কি পবিত্র পিতা? যীশুই কি পুত্র? তাহলে পবিত্র আত্মা কী? পিতা কি এক আত্মা নন? পুত্রের সারসত্যও কি আত্মা নয়? যীশুর কাজ কি পবিত্র আত্মার কাজ ছিল না? সেই সময়ে যিহোবার কাজ কি যীশুর মতো আত্মার দ্বারাই সম্পাদিত হয় নি? ঈশ্বরের কতগুলি আত্মা থাকতে পারে? তোমার ব্যাখ্যা অনুসারে, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা—এই তিনজনই এক সত্তা; তেমনটা হলে তিনটি আত্মা রয়েছেন, কিন্তু এই তিনটি আত্মা থাকার অর্থ হল যে, তিনজন ঈশ্বর রয়েছেন। তার মানে কোনো অদ্বিতীয় সত্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই; তাহলে এই ধরনের ঈশ্বরের মধ্যে কীভাবে এখনও ঈশ্বরের অন্তর্নিহিত সারসত্য রয়েছে? তুমি যদি একমাত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নাও, তাহলে তাঁর পুত্র কীভাবে থাকতে পারেন, আর তিনি কীভাবেই বা পিতা হতে পারেন? এগুলো কি নিছকই তোমার ধারণা নয়? ঈশ্বর একজনই, তাঁর মধ্যে কেবল একজন ব্যক্তিই অবস্থান করেন এবং ঈশ্বরের আত্মাও একটিই, ঠিক যেমনটা বাইবেলে লিখিত রয়েছে, ‘শুধুমাত্র একটি পবিত্র আত্মা এবং একটিই ঈশ্বর রয়েছেন’। পিতা অথবা পুত্র, যাঁর অস্তিত্বের কথাই তুমি বল না কেন, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর অদ্বিতীয়, এবং তোমরা যে পিতা, পুত্র বা পবিত্র আত্মার সারসত্যে বিশ্বাস করো, তা আদতে পবিত্র আত্মারই সারসত্য। অন্যভাবে বললে, ঈশ্বর একটি আত্মা, কিন্তু উপরোক্ত সমস্ত কাজের পাশাপাশি তিনি দেহ ধারণ করতে, এবং মানুষের মাঝে বাস করতেও সক্ষম। তাঁর আত্মা একাধারে সর্বসমন্বিত এবং সর্বব্যাপী। তিনি একই সাথে দেহরূপে, এবং এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে ও তার ঊর্ধ্বেও অবস্থান করতে পারেন। যেহেতু সকল মানুষই বলে যে, ঈশ্বরই অদ্বিতীয় সত্য ঈশ্বর, সেহেতু ঈশ্বর একজনই, তাঁকে কেউই ইচ্ছামত বিভক্ত করতে পারে না! ঈশ্বর অদ্বিতীয় এক আত্মা এবং একজনই ব্যক্তি; এবং সেটাই হল ঈশ্বরের আত্মা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ত্রয়ী কি বিদ্যমান?)। “এখনও কেউ কেউ বলতে পারে: ‘পিতা হলেন পিতা; পুত্র হলেন পুত্র; পবিত্র আত্মা হল পবিত্র আত্মা, এবং শেষ পর্যন্ত, তাঁরা একীভূত হবেন।’ তাহলে, তোমার কীভাবে তাঁদের একীভূত করা উচিত? কীভাবে পিতা এবং পবিত্র আত্মাকে একীভূত করা যাবে? যদি তাঁরা সহজাতভাবে ভিন্ন দু’জন হন, তাহলে তাঁরা যেভাবেই মিলিত হোন না কেন, তাঁরা কি দুইটি পৃথক ভাগে বিভক্ত থাকবেন না? তুমি যখন তাঁদের একীভূত করার কথা বলো, তখন তা কি নিছকই দুটি আলাদা অংশকে যোগ করে সম্পূর্ণ করা নয়? কিন্তু সম্পূর্ণ হওয়ার আগে তাঁরা কি দুটি অংশ ছিলেন না? প্রতিটি আত্মার একটি স্বতন্ত্র সারসত্য রয়েছে, এবং দুটি আত্মাকে একীভূত করা যায় না। আত্মা কোনো বাস্তবিক বিষয় নয় এবং বস্তুজগতের সব কিছুর থেকে তা ভিন্ন। মানুষ যেভাবে তা দেখে, পিতা হলেন এক আত্মা, পুত্র হলেন অন্য এক আত্মা, এবং পবিত্র আত্মা হলেন ভিন্নতর এক আত্মা, তারপর তিনটি আত্মা তিন গ্লাস জলের মতো এক পূর্ণ পাত্রে মিশে যায়। তা হলে কি তিনজনকে এক করা হল না? এ হল সম্পূর্ণরূপে একটি ভ্রান্ত এবং অযৌক্তিক ব্যাখ্যা! তা কি ঈশ্বরকে বিভক্ত করা নয়? কীভাবে পিতা, পুত্র, এবং পবিত্র আত্মা সকলকে এক করা যায়? তাঁরা কি ভিন্ন প্রকৃতির তিনটি অংশ নয়?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ত্রয়ী কি বিদ্যমান?)। তারপর তিনি আলাপচারিতা করেন, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যগুলি সম্পূর্ণরূপে, স্পষ্টরূপে ত্রয়ীর হেত্বাভাসের খণ্ডন করে। আমরা দেখতে পাই যে ঈশ্বর একই সত্য ঈশ্বর, তিনিই পবিত্র আত্মা, এমন একজনই আছেন, তাঁর নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। ঈশ্বরের অবতার হলেন দেহরূপী পবিত্র আত্মা, এবং তাঁর দেহের মূলসত্তা হল পবিত্র আত্মা। তাঁকে আমরা প্রার্থনায় যে নামেই ডাকি না কেন, ঈশ্বর, পবিত্র আত্মা এবং ঈশ্বরের অবতার সবই এক, একই আত্মা। কেউ এই সত্য অস্বীকার করতে পারে না। ঈশ্বর বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর প্রভু। তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী আত্মা। তিনি সর্বত্র বিরাজমান ও সর্ব-ক্ষমতাসম্পন্ন। তিনি স্বর্গ, পৃথিবী ও সবকিছু সৃষ্টি করতে পারেন এবং তিনি পৃথিবীতে মানুষের জীবনের পথপ্রদর্শন করতে পারেন। তিনি মনুষ্যপুত্র রূপে দেহধারণও করতে পারেন যাতে মানুষের যা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী মানুষকে উদ্ধার ও রক্ষা করা যায়। ঈশ্বরের আত্মার ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণও আছে। আমরা যদি ধর্মীয় জগতের কথায় চলতাম, যে যিহোবা ঈশ্বর হলেন পিতা যিনি ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি স্বর্গে পরিচালনা ও পরিকল্পনার কাজ করছেন, আবার প্রভু যীশু হলেন পুত্র, পিতার দ্বারা মানুষের উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রেরিত, তাহলে প্রভু যীশুর পুনরুথ্থান ও স্বর্গারোহণের পরে আর কিছুই করার থাকত না। তাঁকে পবিত্র আত্মার ভরসায় থাকতে হত। ত্রয়ীর প্রতি ব্যক্তির নিজস্ব ভূমিকা আছে। স্বর্গ ও পৃথিবীর জন্য ভিন্ন দায়িত্ব আছে, এবং মানবজাতির জন্য করা কাজেরও দায়িত্ব আছে। এ কি ঈশ্বরকে তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা নয়? তাহলেও কি ঈশ্বর সেই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বক্ষমতাসম্পন্ন এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর থাকবেন? এ কি স্ববিরোধিতা নয়? ঈশ্বর এক এবং তিনি নিজেই মানবজাতির পরিচালনা ও রক্ষার কাজ করছেন। তাঁকে তিন ভাগে ভাগ করা আসলে তাঁকে খণ্ড করে ফেলা। এ হল ঈশ্বরকে প্রতিরোধ ও তাঁর অবমাননার সামিল।”

ঈশ্বরের বাক্য আমার কাছে সত্যিই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছিল। আমি দেখলাম যে আমি আমার হৃদয়ে বহুবছর ধরে যে ত্রয়ীকে ধরে রেখেছি, তার কোনো অস্তিত্ব নেই! আমরা বছরের পর বছর ধরে প্রভুকে বিশ্বাস করেছি, জোর দিয়ে বলেছি ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়, কিন্তু আমরা তাঁকে তিন ব্যক্তিতে ভাগ করে ফেলেছি, এবং তারপর বুঝিনি কী করে সেই তিন ঈশ্বরকে আবার এক করা যায়। এ কি মূর্খতা নয়? আমি সেই বিখ্যাত যাজকদের কথা ভাবলাম, তাঁদের স্ববিরোধপূর্ণ ত্রয়ীর ব্যাখ্যার কথা ভাবলাম। যখন তারা স্পষ্ট করে বলতে পারে না, তারা বলে ঈশ্বর বোধের অতীত ও রহস্যময়। তারা তোমাদের ধোঁকা দিচ্ছে। আমি দেখলাম যে ঈশ্বরকে না জেনে তাঁকে বিশ্বাস করা ও খণ্ডিত করে ফেলা আসলে ঈশ্বরকে প্রতিরোধ ও অসম্মান করা। এই ভেবে আমার মনে হল আমার ঈশ্বরের কাছে প্রকৃত অর্থেই ঋণ রয়ে গেছে। কিন্তু আমি তখনো বিভ্রান্ত ছিলাম, কারণ বাইবেল বলছে, “বাপ্তিষ্মের পর যীশু জল থেকে উঠে এলেন। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং তিনি দেখলেন ঈশ্বরের আত্মা কপোতের মত নেমে এসে তাঁর উপরে অধিষ্ঠিত হলেন। আর স্বর্গ থেকে এই বাণী ঘোষিত হল: ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, আমার পরম প্রীতির পাত্র’” (মথি ৩:১৬-১৭)। ঈশ্বর একই আত্মা, একই ঈশ্বর। প্রভু যীশুর বাপ্তিষ্ম হয় জর্দন নদীতে এবং পবিত্র আত্মা সাক্ষ্য দেন যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র, এবং প্রভু যীশু সময়ে সময়ে স্বর্গে অধিষ্ঠিত তাঁর পিতার প্রতি প্রার্থনাও করেছিলেন। কী করে আমরা এর কোনো অর্থ খুঁজে পাব? আমি এটা সত্যিই বুঝতে চাইছিলাম, তাই আমি ব্রাদার লি-কে প্রশ্ন করি।

তিনি বলেন, “হ্যাঁ প্রভু যীশু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন এবং তাঁকে তাঁর স্বর্গাধিষ্ঠিত পিতা বলে সম্বোধন করেন। এর মধ্যে একরকম রহস্য আছে। প্রভু যীশু তাঁর পার্থিব সেবাব্রত শুরু করার আগে, জানতেন না যে তিনি ঈশ্বরের দেহরূপ কারণ যখন আত্মা দেহরূপে কাজ করেন তিনি স্বাভাবিক, অতিপ্রাকৃত নন। তিনি সাধারণ মানুষেরই মতো। সুতরাং অবশ্যই তিনি স্বর্গে তাঁর পিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করবেন। এ ছিল মানুষ হিসেবে প্রভু যীশুর ঈশ্বরের আত্মার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা। এ একেবারেই স্বাভাবিক। যখন প্রভু যীশু পার্থিব সেবাব্রত শুরু করলেন, পবিত্র আত্মা কথা বললেন, সাক্ষ্য দিলেন যে তিনি দেহরূপী ঈশ্বর। কেবল তখনই তিনি নিজের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারলেন। কিন্তু তবু তিনি পিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন, যাতে বোঝা যায় যে খ্রিস্ট বিনয়ী এবং লুক্কায়িত, এবং তাঁর মূলসত্তা ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণ নিবেদিত।” সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পাঠের একটি ভিডিও দেখি যাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “প্রার্থনাকালে যীশু যখন স্বর্গস্থ ঈশ্বরকে পিতা বলে সম্বোধন করতেন, তা শুধুই সৃষ্ট মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে করতেন, তা একমাত্র এই কারণেই যে, তাঁর আত্মা এক সাধারণ ও স্বাভাবিক দেহরূপ ধারণ করেছিলেন, এবং তাঁর বাহ্যিক আবরণ এক সৃষ্ট সত্তার অনুরূপ হওয়ার কারণেই তিনি তা করতেন। তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা থাকলেও, তাঁর বাহ্যিক চেহারা ছিল একজন স্বাভাবিক মানুষেরই মতো; অন্য ভাবে বললে, তিনি সেই ‘মনুষ্যপুত্র’ হয়েছিলেন, যাঁর সম্বন্ধে সকল মানুষ, এবং স্বয়ং যীশুও, কথা বলেছেন। যেহেতু তাঁকে মনুষ্যপুত্র বলা হয়, সেহেতু তিনি সাধারণ মানুষের সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এক ব্যক্তি (পুরুষ বা মহিলা নির্বিশেষে, মানুষের বাহ্যিক চেহারায়)। অতএব, যেমন তোমরা প্রথমে ঈশ্বরকে পিতা বলে ডেকেছিলে; ঠিক তেমনই যীশু স্বর্গস্থ ঈশ্বরকে পিতা বলে ডেকেছিলেন; তিনি তা একজন সৃষ্ট মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকেই করেছিলেন। যীশু তোমাদের যে প্রভুর প্রার্থনা মুখস্থ করতে শিখিয়েছিলেন, তা কি এখনও তোমাদের মনে আছে? ‘হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা…।’ তিনি সমস্ত মানুষকে বলেছিলেন স্বর্গস্থ ঈশ্বরকে পিতা রূপে সম্বোধন করতে। আর যেহেতু তিনিও তাঁকে পিতা বলে ডেকেছিলেন, তাই তিনি তোমাদের সমান মর্যাদায় অবস্থিত একজনের দৃষ্টিকোণ থেকেই তা করেছিলেন। যেহেতু তোমরা স্বর্গস্থ ঈশ্বরকে পিতা রূপে সম্বোধন করেছিলে, যীশুও নিজেকে তোমাদের সমান হিসাবে এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের নির্বাচিত ব্যক্তি (অর্থাৎ, ঈশ্বরের পুত্র) হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তোমরা কি সৃষ্ট সত্তা হওয়ার কারণেই ঈশ্বরকে পিতা বলে সম্বোধন করো না? পৃথিবীতে যীশুর কর্তৃত্ব যতই মহান হোক না কেন, ক্রুশারোহণের আগে তিনি ছিলেন নিতান্তই মনুষ্যপুত্র, পবিত্র আত্মার (অর্থাৎ ঈশ্বরের) দ্বারা চালিত পৃথিবীর এক সৃষ্ট সত্তা, কারণ তাঁর কাজ সম্পন্ন করা তখনও বাকি ছিল। অতএব, স্বর্গস্থ পিতাকে সম্বোধনের বিষয়টা ছিল শুধুমাত্র তাঁর বিনয় ও আনুগত্য। ঈশ্বরকে (অর্থাৎ স্বর্গস্থ আত্মাকে) এমনভাবে সম্বোধন করাই এমন প্রতিপন্ন করে না যে, তিনি স্বর্গস্থ ঈশ্বরের আত্মার পুত্র। তিনি একজন ভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন, এমনটা কিন্তু নয়, বরং বলা যায় যে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তাদের অস্তিত্বের বিষয়টা একটা ভ্রান্তিমাত্র! ক্রুশারোহণের পূর্বে, যীশু ছিলেন দৈহিক সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ একজন মনুষ্যপুত্র, সম্পূর্ণরূপে আত্মার কর্তৃত্বের অধিকারী তিনি ছিলেন না। সেজন্য তিনি শুধুমাত্র সৃষ্ট সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসন্ধান করতে পারতেন। যেমন তিনি গেৎশিমানীতে তিনবার প্রার্থনা করেছিলেন: ‘আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক।’ ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে, তিনি গৌরবান্বিত কেউ ছিলেন না, ছিলেন ইহুদিদের রাজা; তিনি ছিলেন খ্রীষ্ট, মনুষ্যপুত্র, তাই, সৃষ্ট সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, তিনি ঈশ্বরকে পিতা বলে ডেকেছেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ত্রয়ী কি বিদ্যমান?)। “আবার কেউ আছে যারা বলে, ‘ঈশ্বর কি স্পষ্টভাবে বলেন নি যে যীশু তাঁর প্রিয় পুত্র ছিলেন?’ যীশু হলেন ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র, যাঁর প্রতি তিনি খুবই সন্তুষ্ট—এমন অবশ্যই ঈশ্বর স্বয়ং বলেছেন। তা ছিল ঈশ্বরের নিজের প্রতি সাক্ষ্যদান, কিন্তু শুধুমাত্র একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, অর্থাৎ স্বর্গের আত্মার দ্বারা তাঁর স্বীয় অবতারের প্রতি সাক্ষ্যদান। যীশু তাঁর অবতার, তাঁর স্বর্গস্থ পুত্র নন। তুমি কি উপলব্ধি করতে পেরেছ? যীশুর এই বাক্য, ‘আমি পিতার মাঝে এবং আমারই মাঝে পিতা বিরাজিত,’ এটা কি এমন ইঙ্গিত করে না যে তাঁরা অভিন্ন আত্মা? এবং অবতাররূপ ধারণের কারণেই কি তাঁরা স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না? বাস্তবে, তাঁরা এখনও অভিন্ন; যাই হোক না কেন, এ হল শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরের সপক্ষে সাক্ষ্যদান। যুগের পরিবর্তনের কারণে, কাজের প্রয়োজনীয়তা এবং তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনার বিভিন্ন স্তরের কারণে, মানুষ তাঁকে যে নামে ডাকে তা-ও আলাদা হয়ে যায়। যখন তিনি প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পাদন করতে এসেছিলেন, তখন তাঁকে কেবল যিহোবা বলা হত, যিনি হলেন ইসরায়েলীদের মেষপালক। দ্বিতীয় পর্যায়ে, অবতাররূপী ঈশ্বরকে কেবল প্রভু এবং খ্রীষ্ট বলা হত। কিন্তু সেই সময়ে, স্বর্গস্থ আত্মা কেবলমাত্র বলেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র, এবং ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হওয়ার কোনো কথা উল্লেখ করেন নি। তেমন কখনোই হয় নি। ঈশ্বরের কীভাবে একটিমাত্র সন্তান হতে পারে? তাহলে কি ঈশ্বর মানুষ হয়ে উঠতেন না? যেহেতু তিনি অবতার ছিলেন, তাই তাঁকে ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র বলা হত, এবং, তা থেকেই, পিতা ও পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তা কেবলমাত্র স্বর্গ এবং পৃথিবীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতার কারণে হয়েছিল। যীশু দেহরূপের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রার্থনা করেছিলেন। যেহেতু তিনি এমনই এক স্বাভাবিক মানবতার দেহরূপ ধারণ করেছিলেন, সেহেতু দেহরূপের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি বলেছিলেন: ‘আমার বাইরের খোলস এক সৃষ্ট সত্তার অনুরূপ। যেহেতু আমি এই পৃথিবীতে আবির্ভাবের উদ্দেশ্যে একটি দেহরূপ ধারণ করেছি, তাই আমি এখন স্বর্গ থেকে বহু দীর্ঘ, দীর্ঘতর পথ দূরে।’ এই কারণে, তিনি শুধুমাত্র দেহরূপের পরিপ্রেক্ষিত থেকেই পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পেরেছিলেন। এ ছিল তাঁর কর্তব্য, এবং যার দ্বারা ঈশ্বরের অবতাররূপী আত্মাকে সজ্জিত করা উচিত। এমন বলা যাবে না যে তিনি ঈশ্বর ছিলেন না, কারণ তিনি দেহরূপের দৃষ্টিকোণ থেকে পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। যদিও তাঁকে ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র বলা হত, তবুও তিনি স্বয়ং ঈশ্বরই ছিলেন, কারণ তিনিই ছিলেন আত্মার অবতার, এবং তাঁর সারমর্ম ছিল আত্মা(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ত্রয়ী কি বিদ্যমান?)

ব্রাদার লি আলাপচারিতায় আরো বললেন, “প্রভু যীশু ছিলেন দেহরূপী ঈশ্বর। তিনি ছিলেন মনুষ্যপুত্রের দেহে ঈশ্বরের আত্মা, যা স্বাভাবিক মানবতাসম্পন্ন। তাঁর চেহারায় কোনো অসাধারণত্ব ছিল না, কিন্তু তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের নিজস্ব মূলসত্তা ছিল। তাঁর বাপ্তিষ্মের পর তিনি সেবাব্রত শুরু করেন, ঈশ্বর সাক্ষ্য দেন যে প্রভু যীশু তাঁর স্নেহাস্পদ পুত্র। এ ছিল আত্মার প্রেক্ষিত থেকে ঈশ্বরের অবতারের প্রতি সাক্ষ্য যাতে মানুষ প্রভু যীশুকে অনুসরণ ও বিশ্বাস করতে পারে, এবং জানে যে তিনি ঈশ্বরের থেকে এসেছেন। যদি পবিত্র আত্মা সরাসরিভাবে সাক্ষ্য দিত যে প্রভু যীশু দেহরূপী ঈশ্বর, তাহলে তা মানুষের পক্ষে গ্রহণ করা কঠিন হত কারণ তারা ঈশ্বরের অবতারত্ব সম্পর্কে কিছুই জানত না। অবতারত্ব তাদের কাছে নতুন ব্যাপার ছিল এবং তারা এ বিষয়ে কিছুই জানত না। তারা কখনো কল্পনাও করতে পারত না যে মনুষ্যপুত্র, এই সাধারণ মানুষ, দেহরূপে ঈশ্বরের মূর্ত সত্তা। তাঁর কাজে প্রভু যীশু বহু বাক্য ব্যক্ত করেন, অনুশোচনার পথ নিয়ে আসেন, চিহ্ন ও চমৎকার প্রদর্শন করেন, এবং সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটান। কিন্তু মানুষ তাঁর কাজ ও বাক্য থেকে বুঝতে পারেনি যে প্রভু যীশু স্বয়ং ঈশ্বর, ঈশ্বরের প্রতিভূ। সেই সময়ের মানুষের আধ্যাত্মিক উচ্চতার ভিত্তিতে ঈশ্বর সাক্ষ্য প্রদান করেন যে প্রভু যীশু তাঁর স্নেহধন্য পুত্র এবং সাময়িকভাবে তিনি মাষকে প্রভু যীশুকে তাঁর সন্তানরূপে গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন। এটা মানুষের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল এবং তাদের তা স্বীকার করা সহজ হয়। প্রভু যীশু শুধুমাত্র উদ্ধারের কাজ করছিলেন, তাই মানুষ তাঁকে যে নামেই ডাকুক, তাদের শুধু তাঁকে পরিত্রাতারূপে গ্রহণ করা জরুরি ছিল, তাদের পাপের ক্ষমাপ্রাপ্তি জরুরি ছিল এবং প্রয়োজন ছিল ঈশ্বরের অনুগ্রহের যোগ্য হয়ে ওঠার। স্বর্গস্থ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পিতারূপে প্রার্থনা করে প্রভু যীশু ঈশ্বরকে সৃষ্ট ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিত থেকে ডাকছিলেন। এতে বোঝা যায় ঈশ্বর কত বিনয়ী ও প্রচারবিমুখ ছিলেন। প্রভু যীশুই ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর, কিন্তু তিনি নিজেকে ঈশ্বর রূপে প্রতীয়মান করেননি। পরিবর্তে, তিনি মানুষকে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন এবং ঈশ্বরকে জানার পথপ্রদর্শন করেছিলেন, সবই করেছিলেন সৃষ্ট সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে। এই পথে মানুষের কখনো মনে হবে না ঈশ্বর এত উচ্চাসনে আসীন ও নাগালের বাইরে, বরং এ আচরণ মানুষ ও ঈশ্বরকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে। এই ছিল ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞান। মানুষ হিসেবে তাঁর ও ঈশ্বরের পরিত্রাণের কাজের জন্য এর প্রয়োজন ছিল।”

এই বোধ আমার মধ্যে প্রদীপ্তির বিচ্ছুরণ ঘটায়। আমি বুঝি শাস্ত্রকে অতিক্রম করে ঈশ্বরের অভিজ্ঞান ও মানবতার জন্য ভালোবাসা প্রসারিত। কিন্তু বোধের অভাবেই আমরা বাইবেলে উল্লিখিত পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মাকে দেখে ঈশ্বরকে তিন ব্যক্তিতে বিভাজিত করি, আমাদের ধারণার ভিত্তিতে তিনজন ঈশ্বরের কথা বলি। এ সত্যই ঈশ্বরের অবমাননা! ঈশ্বর যে ত্রয়ী এই হেত্বাভাস আমার মধ্যে থেকে সেই মুহূর্তে অপসৃত হল। আমি মুক্ত হলাম। ঈশ্বরের কথায় বলতে গেলে, “যীশুর অন্তঃস্থিত আত্মা, স্বর্গস্থ আত্মা এবং যিহোবার আত্মা, সকলই অভিন্ন। তাঁকে বলা হয় পবিত্র আত্মা, ঈশ্বরের আত্মা, সপ্তগুণ তীব্র আত্মা, এবং সর্ব-সমন্বিত আত্মা। ঈশ্বরের আত্মা প্রভূত কার্য সম্পাদন করতে পারেন। তিনি বিশ্বসৃষ্টি করতে এবং পৃথিবীকে প্লাবিত করে বিশ্বকে ধ্বংস করতে সক্ষম; তিনি সকল মানবজাতিকে মুক্ত করতে পারেন, এবং উপরন্তু, তিনি সকল মানবজাতিকে জয় ও ধ্বংস করতে পারেন। এই সমস্ত কাজই স্বয়ং ঈশ্বর দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং তাঁর পরিবর্তে ঈশ্বরের কোনো ব্যক্তিত্ব দ্বারা করা সম্ভব নয়। তাঁর আত্মাকে যিহোবা এবং যীশু, সেইসাথে সর্বশক্তিমান নামেও ডাকা যেতে পারে। তিনিই প্রভু, এবং খ্রীষ্ট। তিনি মানবপুত্রও হয়ে উঠতে পারেন। তিনি রয়েছেন স্বর্গে এবং পৃথিবীতেও; তিনি একাধারে মহাবিশ্বের ঊর্ধ্বে এবং জনগণের মাঝে বিরাজমান। তিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর একমাত্র মালিক! সৃষ্টির সময় থেকে এখনও পর্যন্ত, এই কাজ স্বয়ং ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। স্বর্গের কাজ হোক বা দেহরূপের কাজ, সবই তাঁর নিজের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়। সমস্ত প্রাণী, স্বর্গে হোক বা পৃথিবীতে, তাঁর সর্বশক্তিমান করপুটে রয়েছে; এই সমস্তই স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ এবং তাঁর পরিবর্তে অন্য কেউ তা করতে পারে না। স্বর্গে, তিনি আত্মা কিন্তু আবার স্বয়ং ঈশ্বরও; মানুষের মধ্যে, তিনি দেহরূপে আসেন কিন্তু আবার স্বয়ং ঈশ্বর হয়েও থাকেন। যদিও তাঁকে শত সহস্র নামে ডাকা যেতে পারে, তবুও তিনি নিজেই, তাঁর আত্মার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তি। ক্রুশারোহণের মাধ্যমে তাঁর সমগ্র মানবজাতিকে মুক্তিদান ছিল তাঁর আত্মার প্রত্যক্ষ কাজ, এবং অন্তিম সময়ে সমস্ত জাতি এবং সমস্ত ভূমির কাছে করা ঘোষণাটিও তা-ই। সর্বাবস্থায়, ঈশ্বরকে কেবল সর্বশক্তিমান এবং অদ্বিতীয় সত্য ঈশ্বর বলা যেতে পারে, যিনি স্বয়ং সর্ব-সমন্বিত ঈশ্বর। স্বতন্ত্র ব্যক্তিরূপের কোনো অস্তিত্ব নেই, পিতা, পুত্র, এবং পবিত্র আত্মার এই ধারণাটির তো আরোই নেই। স্বর্গে এবং পৃথিবীতে একজনই মাত্র ঈশ্বর রয়েছেন!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ত্রয়ী কি বিদ্যমান?)। এটা পড়ার পর ব্রাদার লি আলাপচারিতা করলেন, “ঈশ্বর হলেন স্রষ্টা, যিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি সেই যিহোবা ঈশ্বর যিনি আইন ও আদেশনামা জারি করেছিলেন মানুষের স্বার্থে, তাদের পার্থিব জীবনকে দিকনির্দেশ দিতে। তিনিই আমাদের পরিত্রাতা প্রভু যীশু, যিনি আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন। আরো বড়ো কথা, তিনিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, অন্তিম সময়ে সমগ্র মানবজাতির বিচার করতে ফিরে এসেছেন। আমাদের আকাঙ্খিত প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন। তিনিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তিনি পৃথিবীতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন, সত্য ব্যক্ত করছেন এবং অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ করছেন। তিনি পুঁথি খুলেছেন। তিনি আমাদের পরিশোধন ও সম্পূর্ণ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব সত্যই দিয়েছেন। এ প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণীকেই পূরণ করে: ‘তোমাদের আরও অনেক কথা আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনিই তখন তোমাদের পূর্ণ সত্যের উপলব্ধি দান করবেন(যোহন ১৬:১২-১৩)। ‘কেউ যদি আমার কথা শুনে তা পালন করে, তার বিচার আমি করব না। কারণ আমি এই পৃথিবীতে বিচার করতে আসি নি, এসেছি পৃথিবীকে উদ্ধার করতে। যে আমার বাণী গ্রহণ না করে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তার বিচার হবে অন্যভাবে। শেষের দিনে আমার মুখনিঃসৃত সেই বাণীই হবে তার বিচারক(যোহন ১২:৪৭-৪৮)।”

এ কথা শোনা আমার কাছে অত্যন্ত উদ্দীপক ছিল। প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন এবং অন্তিম সময়ের বিচারের কাজ করতে সত্য প্রকাশ করছেন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে আমার সেই বাক্যগুলি অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ও কর্তৃত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল, যেন তা ঈশ্বরের কণ্ঠ। তারা সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য ছিল! আমি উত্তেজিতভাবে ব্রাদার লি-কে বললাম, “এখন আমি বুঝতে পারছি, যে ঈশ্বরের আত্মাই হোক বা তাঁর অবতার, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর। কোনো ত্রয়ী নেই। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সত্যগুলি ছাড়া, কেউ বিতর্কিত এই হেত্বাভাসের ব্যবচ্ছেদ ও বিরূদ্ধ যুক্তি পেশ করতে পারেনি প্রায় দু-হাজার বছর ধরে। একমাত্র ঈশ্বর স্বয়ং এই সত্য ব্যক্ত করতে পারেন। আমি নিশ্চিত যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যগুলি ঈশ্বরেরই কণ্ঠ এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু! এখন আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ স্বীকার করতে প্রস্তুত! আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে ২০ বছর ধরে যে বিভ্রান্তি কষ্ট দিয়েছে তার নিষ্পত্তির জন্য!”

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আমি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনেছি

দুই বছর আগে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ গ্রহণ করেছি। সত্যি বলতে কি, আমি অনেক বেশি অর্জন করেছি দশ বছর ধরে ধর্মীয়...

অবশেষে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনলাম

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার অনেক রকমের কাজ ছিল। ভেনিজুয়েলার সুক্রে রাজ্য সরকারের পে-রোল সুপারভাইজার ছিলাম। আমাকে প্রতিদিন বেতনের সমস্যা আর...

প্রকৃত খ্রীষ্ট এবং ভন্ড খ্রীষ্টর মধ্যে আমি পার্থক্য করতে পারি

“ঈশ্বরের অবতাররূপকেই খ্রীষ্ট বলা হয়, এবং তাই যে খ্রীষ্ট মানুষকে সত্যের সন্ধান দেন তাঁকেই ঈশ্বর বলা হয়। এটি অতিশয়োক্তি নয়, কারণ তিনিই...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন