আমি কীভাবে বাবার হস্তক্ষেপ থেকে বেরিয়ে এলাম

31-03-2023

নভেম্বর ১৮, ২০২১ সালে ইন্টারনেটে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার কয়েকজন ভাই ও বোনের সঙ্গে পরিচয় হলো। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী পড়ে এবং তাদের আলোচনা শুনে, আমার নিশ্চিত প্রত্যয় জন্মালো যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু। আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম, এবং আমি সানন্দে অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ মেনে নিলাম। আমার পরিবারকে এই সুখের সংবাদটি আমি খুব দ্রুত জানাতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে আমার বাবাকে। তিনি তার ত্রিশ বছর বয়স থেকেই একজন খ্রীষ্টান ছিলেন। এখন তাঁর বয়স ষাট, এবং পুরো সময় ধরেই তিনি প্রভুর প্রত্যাবর্তন কামনা করেছেন। তিনি যদি জানতেন প্রভু যীশু প্রত্যাবর্তন করেছেন, আমি নিশ্চিত তিনি এটা আনন্দের সাথে মেনে নিতেন যেমনটা আমি মেনে নিয়েছি। অপ্রত্যাশিতভাবে, আমি বাবাকে প্রভুর প্রত্যাবর্তনের সংবাদটি বলার পর, তিনি প্রকৃতপক্ষে আমাকে যা বললেন তা হলো আমি যেন এটা বিশ্বাস না করি। “বাইবেল বলেনি যে ঈশ্বর দেহ ধারণ করে প্রত্যাবর্তন করবেন,” তিনি বললেন। “বাইবেল বলেছে ঈশ্বর একটি মেঘে অবতরণ করে বিশ্বাসীদের স্বর্গরাজ্যে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন।” আমি তাকে বলেছিলাম, “বাবা, প্রকৃতপক্ষে, প্রভূ যীশু অনেকবার বলেছেন যে অন্তিম সময়ে, তিনি মনুষ্য পুত্র হিসেবে প্রত্যাবর্তন করবেন। যেমন, ‘বিদ্যুতের ঝলক যেমন হঠাৎ পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিক পর্যন্ত সমগ্র আকাশকে আলোকিত করে, ঠিক সেইভাবে মানবপুত্রের আগমন হবে(মথি ২৪:২৭)। ‘নোহের সময়ে যা ঘটেছিল, মানবপুত্রের আবির্ভাবের সময়েও ঠিক তাই ঘটবে(মথি ২৪:৩৭)। ‘কাজেই তোমরা প্রস্তুত হয়ে থাকবে, কারণ মানবপুত্র এমন সময়ে আসবেন যে সময়ে তাঁর আগমন প্রত্যাশা করবে না(মথি ২৪:৪৪)। বাইবেলের এই সবগুলো শ্লোকেই উল্লেখ আছে যে প্রভু মনুষ্যপুত্র হিসেবে আসবেন। এর অর্থই হলো ঈশ্বর মনুষ্যপুত্র রূপে আগমন করবেন—” আমি শেষ করার আগেই বাবা আমাকে বাধা দিলেন এবং বললেন, “প্রভু যীশু হলেন মনুষ্যপুত্র। মনুষ্যপুত্র রূপে তাঁর প্রত্যাবর্তন অসম্ভব। প্রভু শুধু একটি মেঘের ওপর আসবেন আমাদের স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যেতে।” আমি বললাম, “মেঘের ওপর আসাই প্রভুর প্রত্যাবর্তনের একমাত্র উপায় নয়। বাইবেলে তাঁর প্রত্যাবর্তনের দুটি উপায় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে। তিনি গোপনে দেহ ধারণ করে আসবেন, এবং তারপর প্রকাশ্যে মেঘের ওপর আসবেন। প্রকাশিত বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে, ‘দেখ, আমি চোরের মত আসব(প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫)। ‘তুমি যদি জেগে না থাক, তাহলে আমি চোরের মত তোমার কাছে যাব(প্রকাশিত বাক্য ৩:৩)। এবং মথি ২৫:৬ এ বলা আছে, ‘মাঝরাতে সাড়া পড়ে গেল, “বর আসছে, বর আসছে, তাকে বরণ করতে এগিয়ে যাও।”’ এই সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা আছে প্রভু যীশু চোরের মত আসবেন। এর অর্থ হলো তিনি চুপিসারে আসবেন, সবার অজান্তে। যদি প্রভু যীশু প্রকাশ্যে আসেন, আকাশের সাদা মেঘে সওয়ার হয়ে, তাহলে প্রত্যেকেই তাঁকে দেখতে পাবে। তাহলে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কিভাবে পরিপূর্ণতা পাবে? অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর প্রথমে দেহধারণ করে মনুষ্যপুত্র হিসেবে গোপনে আসবেন সত্য প্রকাশের জন্য এবং বিচার কাজের জন্য। জ্ঞানী কুমারীগণ ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনবেন এবং প্রভুকে স্বাগত জানাবেন, তাঁরা ঈশ্বরের বাণী দ্বারা মূল্যায়িত এবং বিশোধিত, এবং ঈশ্বর তাদের বিজয়ী করেছেন। এরপর, মহা দুর্যোগ নেমে আসতে শুরু করবে, এবং ঈশ্বরের দেহ ধারণ করে গোপনে কাজ করার পর্যায় সমাপ্ত হবে। মহা দুর্যোগের পর, ঈশ্বর একটি মেঘে অবতরণ করবেন এবং প্রকাশ্যে সবার সামনে হাজির হবেন। প্রকাশিত বাক্যের এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হবে, ‘দেখ, মেঘবাহনে তিনি আসিতেছেন! প্রতিটি নয়ন তাঁকে দেখবে, দেখবে তারাও যারা তাঁকে বিদ্ধ করেছিল। পৃথিবীর সমস্ত মানবগোষ্ঠী তাঁর জন্য বিলাপ করবে(প্রকাশিত বাক্য ১:৭)।” আমি আমার বাবাকে বললাম, “বাবা, চিন্তা করে দেখো। এটা যুক্তিযুক্ত যে প্রভু যীশু যখন একটি মেঘে ওপর প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন ত্রাণকর্তার আগমনে প্রত্যেকেই খুশি হবে। তাহলে একথা কেন বলে, ‘পৃথিবীর সমস্ত মানবগোষ্ঠী তাঁর জন্য বিলাপ করবে’? কারণ ঈশ্বর যখন দেহ ধারণ করে মনুষ্য সন্তান হিসেবে কাজ করবেন, তখন তিনি বিচারের এবং শুদ্ধিকরণের কাজ সম্পূর্ণ করবেন। যারা শুধু প্রভুর মেঘে চড়ে আসার জন্য অপেক্ষা করবে এবং যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে প্রতিহত ও নিন্দিত করবে তারা অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচার এবং শুদ্ধিকরণ মেনে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে, এবং যখন প্রভু মেঘের উপর আসবেন ভালকে পুরস্কৃত করতে এবং মন্দকে শাস্তি দিতে, তখন তারা দুর্যোগে পতিত হবে এবং অঝোরে কাঁদবে।” আমি বলা শেষ করে, তাঁকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য এবং সুসমাচারের একটি সাক্ষ্যমূলক ভিডিও দেখালাম, কিন্তু তখনও তিনি তার ভাবনাকেই আঁকড়ে ধরেছেন। আমার প্রতি তার মনোভাব ছিল খুবই উদ্ধত এবং রাগান্বিত এবং আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে নিষেধ করলেন।

পরে, তিনি দেখলেন যে আমি প্রায়ই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশে যোগ দিতাম, তাই আমাকে থামানোর অজুহাত হিসেবে তিনি বললেন, “তুমি ফোনে ওইসব সমাবেশে যোগ দিয়ে তোমার দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছো। সংসারের খরচ চালানোর জন্য তোমাকে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হবে, এখন থেকে তোমাকে আমি আর একটা পয়সাও দেবোনা! তুমি যদি চাকরি খুঁজে না পাও তাহলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও!” বাবার এই কথা আমাকে ভীষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছিল। যদি আমাকে কাজ করতে হতো, আমি সমাবেশে যোগ দেয়ার এবং ঈশ্বরের বাক্য পড়ার সময় পেতাম না। কিন্তু আমি যদি চাকরি না পাই, বাবা আমাকে লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন, এবং আমার যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। আমি খুবই ভয়ের মধ্যে ছিলাম, সুতরাং আমি একটা চাকরি নিয়ে নিলাম এবং সকাল ৬টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কাজ করতাম। যত দিন যেতে থাকলো আমি আমার দায়িত্ব অবহেলা করতে শুরু করলাম। কারণ কাজের সময় আমি আমার ফোন ব্যবহার করতে পারতাম না, প্রতিদিন আমি কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পর এতই ক্লান্ত থাকতাম যে সমাবেশে যোগ দিতে একেবারে হাফিয়ে উঠতাম। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তাঁকে বললাম আমার দায়িত্ব পালনের একটা উপায় বাতলে দিন। কয়েকদিন পর আমি ওই চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। আমি ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজ নিলাম যেখানে আমাকে দিনে শুধু চার ঘণ্টা কাজ করতে হতো। যদিও আমার খুব বেশি আয় হতোনা, তারপরেও আমি সমাবেশে যোগ দিতে পারতাম এবং আমার দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। আমার বাবা যখন দেখলেন আমি আবারও নিয়মিত সমাবেশে যাচ্ছি তখন তিনি পুনরায় হস্তক্ষেপ শুরু করলেন। সমাবেশে যোগ দেয়ার আগে প্রায়ই তিনি আমাকে তার জন্য কিছু একটা করতে বলতেন, এবং কখনও কখনও, যখন তিনি দেখতেন আমি অনলাইনে সমাবেশে যোগ দিয়েছি, তিনি আমাকে তার সঙ্গে বাইরে যেতে বলতেন। প্রথম প্রথম আমি ঠিকমত বুঝতে পারতাম না যে কি হচ্ছে। আমি শুধু ভাবতাম যেহেতু উনি আমার বাবা তাকে তো মান্য করতেই হবে, কিন্তু এটা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, কারণ আমি সমাবেশ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না। একবার তিনি আমাকে আবারও তার সাথে বাইরে যেতে বললেন, এবং আমি বললাম যে আমার সমাবেশ আছে, কথাটা শুনে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। প্রথম প্রথম আমি জানতাম না এইসব ব্যাপার কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়।

পরে, একটা সমাবেশে, ভাই ও বোনেরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কিছু বাণী পড়ে শোনালো ফলে কোনো বিষয়কে আমি আরেকটু স্পষ্টভাবে বুঝতে শিখলাম। “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের আয়োজন এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা। উদাহরণ হিসাবে ধরা যায়, ইয়োবের যখন বিচার চলছিলো: নেপথ্যে শয়তান বাজি ধরেছিলো ঈশ্বরের সঙ্গে এবং ইয়োবের যে পরিণতি তা হয়েছিলো মানুষের কাজে এবং হস্তক্ষেপে। ঈশ্বর তোমাদের ভিতরে যে কাজ করেন তার নেপথ্যের প্রতিটি ধাপেই চলে শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের লড়াই—সব কিছুর অন্তরালেই চলে এই যুদ্ধ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। “ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নানাবিধ কূটচক্রান্তের মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কর্মকে প্রলোভন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তথা ব্যহত ও বিঘ্নিত করে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়?(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৪)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, শয়তানের চালাকি আমি একটু একটু বুঝতে শিখলাম। ঈশ্বর যখন কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা করতে চান, সকল পন্থা, ব্যক্তি ও বস্তুর ব্যবহার করে শয়তান তাদের ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হওয়া থেকে বিরত করার চেষ্টা করে। আমার সঙ্গে তাই ঘটছিলো। বাবা যখন জানতে পারেন আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আমাকে থামাতে এবং বিরক্ত করতে। আমাকে কাজ করতে হবে এই অজুহাত তিনি তৈরি করেছিলেন, প্রত্যেকবার সমাবেশে যাওয়ার আগে তিনি আমাকে কিছু না কিছু করতে বলতেন, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেন এবং তার সাথে কাজ করতে বলতেন। আর এই সবই ছিল শয়তানের কারসাজি যে আমাকে বিরক্ত করার জন্য আমার বাবাকে ব্যবহার করতো আমার স্বাভাবিকভাবে সমাবেশে যাওয়াকে অথবা ঈশ্বরের বাক্য পড়াকে অসম্ভব করে তুলতো। শয়তানের কৌশল সম্পর্কে আমার কোনো সূক্ষ্ম বিচারশক্তি ছিল না। সুতরাং বাবা যখন আমাকে হুমকি দিতেন, আমি শুনতাম কারণ আমার ভয় ছিল যে তিনি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবেন। আমি শয়তানের প্রলোভনে পড়েছিলাম, যার কারণে আমি নিয়মিত সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারতাম না, এবং আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারতাম না। এখন আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে ঈশ্বরের থেকে দূরে রাখতে এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারাতে শয়তান আমার বাবার এই উপদ্রবকে ব্যবহার করছিলো। শয়তান খুবই খারাপ। কিন্তু ঈশ্বরের প্রজ্ঞা শয়তানের কৌশলের উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা লাভ করে, আমি সত্য অন্বেষণ করতে, শিক্ষা নিতে, শয়তানের কৌশল বুঝতে, আমার সাক্ষ্যে অটল থাকতে এবং শয়তানকে অপমানিত করতে সমর্থ হয়েছিলাম। শুধুমাত্র ঈশ্বরের আলোকপ্রাপ্তি ও নির্দেশনা দিয়েই আমি কিছু বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করার বিচক্ষণতা অর্জন করতে পেরেছিলাম। আমাকে আমার সাক্ষ্যের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এবং শয়তানের ফাঁদে আর পড়িনি।

এরপর আমি সমাবেশে অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিলাম। বাবা আমাকে বাধাগ্রস্ত এবং বিরক্ত করা অব্যাহত রাখলেন, এবং বেশ কয়েকবার আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তিনি আমার প্রতি এতই রাগান্বিত হয়েছিলেন যে তিনি আমার সঙ্গে একেবারেই কথা বলতে চাইতেন না। তিনি আমার সাথে যাই করুন না কেন, আমি জানতাম যে আমাকে তার সাথে কথা বলতে হবে। একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাবা, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাওনা কেন? তুমি কেন আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাও?” তিনি বললেন, “তুমি শুধু ওই সমাবেশ নিয়েই থাকো, আর তুমি খুবই অবাধ্য।” আমি বললাম, “ঈশ্বর আমাদের পিতামাতাকে সম্মান করতে বলেছেন, সুতরাং আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবোনা, কিন্তু আমি সমাবেশে অংশ নেয়াও বন্ধ করবো না।” তিনি চুপ করে থাকলেন এবং এরপর আমার সাথে আর কোনো কথা বললেন না। পরে, আমি আমার সৎ মায়ের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছি। উনি ভাবলেন এটা ভালই, এবং একমাস তিনি সমাবেশে অংগ্রহন করলেন। কিন্তু বাবা যখন জানতে পারলেন তখন তিনি আমার সৎ মাকে যেতে নিষেধ করলেন এবং আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইলেন। আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাবার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হোক আমি তা চাইছিলাম না। একদিন সকালে আমি আমার ফোনে ঈশ্বরের বাণী পড়ছিলাম। এটা দেখে বাবা আমাকে বকলেন। “তুমি যদি ফোনে এখনও সমাবেশে যোগ দাও আমি তোমার ফোন কেড়ে নেবো!” তারপর তিনি আমার হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেবার চেষ্টা করলেন। আমি এটা বাদ দেবো না, তো তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “তুমি যদি আমাকে মান্য না করো, তাহলে তুমি তোমার জিনিসপত্র নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও!” ব্যাপারটি ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। আমার বাবার সাথে আমার সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। আমি কখনই তাকে কিংবা তার বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইনা, কিন্তু আমার প্রতি বাবার আচরণ এবং তার এইসব রূঢ় কথাবার্তা আমার জন্য এতই বেদনাদায়ক ছিল যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। আমাকে যদি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমার কাছে কোনো টাকাও নেই। কি করা উচিৎ আমি কিছুই জানিনা। আমি কাঁদতে শুরু করলাম, এবং বুকে ব্যাথা অনুভব করলাম। আমার বাবার বাধা এবং ঝামেলার কারণে আমি খুব বেশি উদ্বেগ সহ্য করেছিলাম, এবং আমি ভীষণ দুর্বল এবং যন্ত্রণা অনুভব করেছিলাম। এইসব জটিলতা আর দ্বিধা দ্বন্দ্ব আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা, সুতরাং আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

আমি জানি আমার ভাবনাটা ভুল ছিল, সুতরাং আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম পথ দেখাতে, এবং আমার ভাই ও বোনদের কাছে আমার অবস্থা খুলে বললাম। তারা আমাকে ঈশ্বরের বাণী শোনালো। “যদি তোমার কাছে অনেক বিষয় আসে যা তোমার ধারণার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, কিন্তু তুমি সেগুলিকে একপাশে সরিয়ে দিতে সক্ষম হও এবং এগুলি থেকে ঈশ্বরের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারো, এবং যদি পরিমার্জনার মধ্যে তুমি ঈশ্বরের প্রতি তোমার প্রেমপূর্ণ হৃদয় প্রকাশ করতে পারো, তাহলে তা-ই হল সাক্ষী হিসাবে দাঁড়ানোর অর্থ। যদি তোমার গৃহ শান্তিপূর্ণ হয়, তুমি দৈহিক আরাম উপভোগ করো, কেউ তোমাকে পীড়ন না-করে, এবং গির্জায় তোমার ভাই ও বোনেরা তোমাকে মান্য করে, তাহলে কি তুমি ঈশ্বরের প্রতি প্রেমপূর্ণ হৃদয় প্রদর্শন করতে পারো? এই পরিস্থিতি কি তোমাকে পরিমার্জিত করতে পারে? শুধুমাত্র পরিমার্জনার মাধ্যমেই ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রদর্শিত হয় এবং শুধুমাত্র তোমার ধারণার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ জিনিস ঘটার মাধ্যমেই তোমাকে নিখুঁত করা যেতে পারে। বহুল পরিমাণে বিপরীতধর্মী এবং নেতিবাচক বিষয়ের পরিষেবা অবলম্বন করে, এবং শয়তানের সমস্ত রকম প্রকাশ কাজে লাগিয়ে—তার কাজ, অভিযোগ, ঝঞ্ঝাট এবং প্রতারণার দ্বারা ঈশ্বর তোমাকে স্পষ্টভাবে শয়তানের ঘৃণ্য চেহারা প্রদর্শন করান, এবং যাতে তুমি শয়তানকে ঘৃণা ও পরিত্যাগ করতে পারো, সেই উদ্দেশ্যেই এইভাবে তোমার শয়তানকে আলাদা করে চিনে নেওয়ার ক্ষমতাকে নিখুঁত করে তোলেন(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, যাদের নিখুঁত করা হবে তাদের অবশ্যই পরিমার্জনা ভোগ করতে হবে)। “নিরুৎসাহিত হয়ো না, দুর্বল হয়ো না, আমি তোমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট করে তুলব। রাজ্যের পথ অতটাও মসৃণ নয়, কোন কিছুই এত সহজ নয়! তোমরা চাও খুব সহজেই তোমাদের কাছে আশীর্বাদ আসুক, তাই নয় কি? আজ, সবাইকে তিক্ত পরীক্ষাসমূহের সম্মুখীন হতে হবে। এই পরীক্ষাসমূহ ব্যতীত, আমার জন্য তোমাদের প্রেমময় হৃদয় আরো শক্তিশালী হয়ে বিকশিত হবে না এবং আমার জন্য তোমাদের প্রকৃত ভালোবাসা থাকবে না। এমনকি, যদিও এই পরীক্ষাগুলি খুব সাধারণ ঘটনা সংক্রান্তও হয়ে থাকে তাহলেও, এগুলির মধ্যে দিয়েই সকলকে উত্তীর্ণ হতে হবে; তবে পরীক্ষাগুলি কতটা কঠিন হবে তা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করছে। পরীক্ষাগুলি আমাকৃত আশীর্বাদ, এবং তোমাদের মধ্যে কতজন আমার সম্মুক্ষে এসে নতজানু হয়ে আমার আশীর্বাদ ভিক্ষা করেছ?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৪১)। “আজ, অধিকাংশ লোকেরই সেই জ্ঞান নেই। তারা বিশ্বাস করে যে দুঃখকষ্টের কোনো মূল্য নেই, তারা পৃথিবী দ্বারা পরিত্যক্ত, তাদের গৃহ জীবন বিপর্যস্ত, তারা ঈশ্বরের প্রিয় নয়, এবং তাদের সম্ভাবনাও অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছু লোকের দুঃখকষ্ট চরমে পৌঁছায় এবং তাদের চিন্তাভাবনা মৃত্যুর দিকে মোড় নেয়। এটা ঈশ্বরের জন্য প্রকৃত ভালোবাসা নয়; এই ধরনের লোকেরা কাপুরুষ, তাদের কোনো অধ্যবসায় নেই, তারা দুর্বল এবং শক্তিহীন! … এইভাবে, অন্তিম সময়ে তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের নিকট সাক্ষ্য দিতে হবে। তোমার দুঃখকষ্ট যতই বিশাল হোক না কেন, তোমাকে একদম শেষ পর্যন্ত যেতে হবে, এবং এমনকি তোমার শেষ নিঃশ্বাসেও তোমায় অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনে সমর্পণ করতে হবে; শুধুমাত্র এটিই প্রকৃতপক্ষে প্রেমময় ঈশ্বর, এবং কেবল এটিই দৃঢ় ও শক্তিশালী সাক্ষ্য(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, শুধুমাত্র বেদনাদায়ক পরীক্ষার অভিজ্ঞতার দ্বারাই তুমি ঈশ্বরের মাধুর্য জানতে পারবে)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ অত সহজ নয়। এর জন্য আমাদের মূল্য দিতে হবে এবং সব ধরনের কঠিন পরিস্থিতির পরীক্ষা সহ্য করতে হবে ঈশ্বরের অনুমোদন এবং আশীর্বাদ পেতে হলে। ঈশ্বরকে বিশ্বাসের পথে, কষ্টভোগ এবং পরিমার্জনা ছাড়া আমরা ঈশ্বরের জন্য প্রকৃত ভালবাসা গড়ে তুলতে পারবো না। আমার বাবা আমার বিরোধিতা করতেন কারণ আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি। তিনি আমাকে বাধা দেবার চেষ্টা করেছেন এবং আমার সমাবেশে অংশগ্রহন ও দায়িত্ব পালনে বিরক্ত করেছেন। এবং এমনকি তিনি আমাকে অনেকবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছেন। এগুলো ছিল আমার জন্য খুবই বেদনাদায়ক। আমি বুঝতে পারতাম না কেন ঈশ্বর আমাকে এই কষ্ট সহ্য করতে দিলেন, কিন্তু আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা কী কিংবা এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয় তা অন্বেষণ করিনি। তার পরিবর্তে, আমি কেবল বেদনা অনুভব করেছি, ব্যাথিত এবং চিন্তিত হয়েছি, এবং বাড়ি থেকে বের করে দিলে আমার কতটা কষ্ট হবে এটা ভেবে আমি ভয় পেয়েছিলাম। আমি ভীষণ দুর্বল ছিলাম, এরকম মুহূর্তে এসে আমি ভেবেছিলাম মৃত্যুই আমার জন্য উত্তম পথ। আমার নেতিবাচক চিন্তা আমাকে সম্পূ্র্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল। এখন ঈশ্বরের বাণী থেকে আমি জেনেছি আমার ধারণা কতটা ভুল ছিল। আমি ছিলাম একজন কাপুরুষ। যে কোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমার উচিত ছিল সাহসী হওয়া এবং যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া, কারণ ঈশ্বর এই সমস্ত পরিস্থিতির মাধ্যমে আমার বিশ্বাসকে নিখুঁত করতে চেয়েছিলেন, যতই অসুবিধার সম্মুখীন হই না কেন আমি যেন মান্য করার ও মেনে নেয়ার সামর্থ্য অর্জন করি, এবং আমার সাক্ষ্যের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে এবং শয়তানকে অপমানিত করতে প্রার্থনা ও ঈশ্বরের প্রতি ভরসা করার সামর্থ্য অর্জন করি। ঈশ্বরের বাণী যখন গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম, আমার হৃদয় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। আমি ভীরু হতে পারিনি। আমাকে এগিয়ে যেতে হয়েছিল, কারণ ঈশ্বর আমার সাথে ছিলেন, ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং, সমাবেশে অংশগ্রহণ এবং দায়িত্ব পালন থেকে আমি বিরত ছিলাম না।

কয়েকদিন পর আমার বড়ভাই ফিরে এল। আমি তার কাছে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের সাক্ষ্য দিয়েছিলাম এবং তাকে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, এবং সে আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর, আমার বাবা বিষয়টা জেনে ফেললেন এবং আবারও বাধাগ্রস্ত এবং বিরক্ত করা শুরু করলেন, সুতরাং আমার বড় ভাই সমাবেশে অংশগ্রহণ করা বন্ধ করে দিল। আমার বাবাও আমাকে সতর্ক করে দিলেন আমি যেন পরিবারের কারো কাছে সুসমাচার প্রচার না করি। আমার মন কিছুটা খারাপ হলো, কিন্তু আমি জানতাম যে বাহ্যিকভাবে এই বাধাটা ছিল আমার বাবার কিন্তু আসলে এটা ছিল শয়তানের, সুতরাং, আমি নিজেকে শান্ত করলাম। পরে, ঈশ্বরের বাণীতে, আমি এটা পড়লাম, “নিজের ভেতরে তোমাকে আমার সাহসের অধিকারী হতে হবে, এবং যে আত্মীয়পরিজনেরা বিশ্বাসী নয় তাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তোমাকে নীতিসমূহ মেনে চলতে হবে। তবে যাইহোক, আমার জন্যই, অন্ধকারের কোনো শক্তির কাছে তোমার নতিস্বীকার করলে একেবারেই চলবে না। নিখুঁত পথে চলার জন্য আমার প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করো; শয়তানের কোনো চক্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিয়ো না। আমার সম্মুখে হৃদয় নিবেদনের জন্য তোমার সকল প্রচেষ্টা উজাড় করে দাও, এবং আমি তোমায় স্বাচ্ছন্দ্য দেব এবং তোমায় সুখ ও শান্তি এনে দেব। অন্য মানুষদের সামনে কোনও কিছু হয়ে ওঠার চেষ্টা কোরো না; আমাকে পরিতৃপ্ত করাটা কি তোমাদের কাছে বেশি মূল্য ও গুরুত্ব বহন করে না?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১০)। “ঈশ্বরের বাক্যের অনুসারে, মানুষে মানুষে আচরণের নীতি কেমন হওয়া উচিত? ঈশ্বর যা কিছু ভালোবাসেন, তা ভালোবাসো, তিনি যা কিছু ঘৃণা করেন, তা ঘৃণা করো: এই নীতিই মেনে চলা উচিত। যারা সত্য অনুসরণ করে, তাঁর ইচ্ছার অনুবর্তী হতে সক্ষম, তাদেরই ঈশ্বর ভালোবাসেন। এই ধরনের মানুষদেরই আমাদের ভালোবাসা উচিত। যারা ঈশ্বরের ইচ্ছার অনুসারী হতে পারে না, যারা ঈশ্বরকে ঘৃণা করে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে—তাদের ঈশ্বর ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন, আর আমাদেরও তাদের প্রতি ঘৃণার মনোভাবই পোষণ করা উচিত। ঈশ্বর মানুষের থেকে এটাই চান। যদি তোমার পিতামাতা ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে, ঈশ্বরের বিশ্বাস করাটাই সঠিক পথ, এটাই পরিত্রাণের অভিমুখে চালিত করে—তা ভালোভাবে জেনেও যদি তারা তা গ্রহণ না করে, তাহলে নিঃসন্দেহেই তারা সত্যের বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ, তারা সত্যকে ঘৃণা করে, এবং তারাই যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণকারী, তাঁকে ঘৃণাকারী ব্যক্তি, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না—আর স্বাভাবিকভাবেই ঈশ্বর তাদের অপছন্দ ও ঘৃণা করেন। তুমি এই ধরনের পিতামাতাকে ঘৃণা করতে পারবে কি? তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা ও নিন্দা করার জন্য দায়ী—এই ক্ষেত্রে, তারা অবশ্যই অপদেবতা এবং শয়তান। তুমি কি তাদের ঘৃণা করতে ও অভিশাপ দিতে পারবে? এগুলি সবই বাস্তব প্রশ্ন। যদি তোমার পিতামাতা তোমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তাহলে তাদের সাথে তুমি কেমন আচরণ করবে? ঈশ্বরের যেমনটি চান তা অনুসারে, তোমার উচিত ঈশ্বর যা কিছু ভালোবাসা, তা ভালোবাসো, তিনি যা কিছু ঘৃণা করেন, তা ঘৃণা করা। অনুগ্রহের যুগে, প্রভু যীশু বলেছিলেন, ‘আমার মা কে? আমার ভাইয়েরাই বা কারা?’ ‘যে কেউ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভাই, আমার বোন ও মা’ (মথি ১২:৪৮, ৫০)। এই প্রবাদ অনুগ্রহের যুগে বিদ্যমান ছিল, বর্তমানে ঈশ্বরের বাক্য আরও স্পষ্ট: ‘ঈশ্বর যা কিছু ভালোবাসেন, তা ভালোবাসো, তিনি যা কিছু ঘৃণা করেন, তা ঘৃণা করো।’ এই কথাগুলি সরাসরি মূল বিষয়ের কথা বলে, কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষেরা প্রায়ই সেগুলির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে না(বাক্য, খণ্ড ৩, অন্তিম সময়ের খ্রীষ্টের উপদেশ, কেবলমাত্র নিজের ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে পরিচিত হলে তবেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব হয়)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর, আমি আমার বাবার নানান কাজের কথা স্মরণ করলাম যেহেতু আমি অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ মেনে নিয়েছি। আমি তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য অনেকবার পড়ে শোনালাম এবং অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলাম। এমনকি বাবা আমার কথার যুক্তি খন্ডন করতে না পারলেও তিনি তার পূর্ব ধারণায় অটল থাকলেন এবং মোটেও অন্বেষণ করলেন না, তিনি অস্বীকার করলেন এবং ঈশ্বরের কাজকে তিরস্কার করলেন, এবং আমাকে ও অন্যদেরকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা থেকে বিরত রাখতে সকল প্রকার চেষ্টা করলেন। এখন, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে আমার বাবা আমাদের বিরোধিতা এবং নিপীড়ন করছিলেন কারণ হলো তিনি সত্যকে ভালোবাসেন না, তিনি সত্যকে ঘৃণা করেন। তিনি ছিলেন ঠিক সেই সব ফরীশীদের মতো যারা প্রভু যীশুকে প্রতিরোধ করেছিল। যখন তারা শুনেছিলো যে প্রভু যীশু নতুন কাজের জন্য আসবেন, বিষয়টা অন্বেষণ এবং তদন্ত না করেই, তারা বাধা দিয়েছিলো এবং তিরস্কার করেছিল। যেখানে তাদের সত্যকে ঘৃণা করার প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। আমার বাবা ৩০ বছর ধরে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে তিনি একগুঁয়েভাবে তার ধর্মীয় পূর্ব ধারণাকে আঁকড়ে থাকলেন, অন্বেষণ করার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। ঈশ্বরের বাণী শুনতে অপছন্দ করেন এবং আমাদের বাধা দেবার চেষ্টা করেন। তিনি আমাদের বিরোধিতা করছিলেন না, তিনি সত্যকে এবং ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করছিলেন। তিনি ঈশ্বরের মেষশাবক ছিলেন না, এবং ঈশ্বর তাঁকে অনুমোদন দেননি। আপনি কতদিন ধরে প্রভুতে বিশ্বাস করেছেন, আপনার মর্যাদা আছে কিনা, বা আপনি বাইবেল কতটা ভালো জানেন এসব কোনো কিছুকেই ঈশ্বর পাত্তা দেন না। ঈশ্বর দেখেন আপনি নম্র চিত্তে সত্য অন্বেষণ করছেন কিনা, আপনি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করেছেন কিনা এবং ঈশ্বরের আগমন ও কাজকে মেনে নিয়েছেন কিনা। আমার বাবা ছিলেন এমন একজন যিনি আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতেন না এবং সত্য অন্বেষণ করতেন না। কত বছর তিনি প্রভুতে বিশ্বাস করেছিলেন তা কোন ব্যাপার না, যদি তিনি অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ মেনে না নেন, এবং এভাবে প্রতিরোধ ও তিরস্কার করেন তিনি কখনোই ঈশ্বরের পরিত্রাণ লাভ করবেন না, এবং তিনি ঈশ্বর কর্তৃক তিরস্কৃত এবং অভিশপ্ত হবেন। এটা ছিল ঈশ্বরের বাণী যা আমাকে আলোকিত করেছিল ও পথ দেখিয়েছিল, সত্য উপলব্ধি করতে আমাকে সাহায্য করেছিল, এবং আমার বাবার প্রকৃতি ও সত্তা উপলব্ধির বিচক্ষণতা দান করেছিল। আমি আর আবেগ প্রবণ হয়ে কাজ করতে পারতাম না। আমাকে কাজ করতে হতো সত্যের নীতি ও ঈশ্বরের বাণী অনুসারে, আমার বিশ্বাস তুলে ধরতে আর ঈশ্বরের প্রতি নিজের সাক্ষ্য দৃঢ় হয়ে থাকতে হত।

এই পরিবেশের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমি আমার বাবা সম্পর্কে আরও সূক্ষ্ম বিচারবোধ অর্জন করেছি, এবং যখনই তিনি আমাকে বাধাগ্রস্ত করেন, আমি প্রার্থনা করি এবং ঈশ্বরের ওপর ভরসা করি। আমার ভাই ও বোনেরাও আমাকে সাহায্যের জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাণী আমাকে শোনাতো, যা আমাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে বিশ্বাস যোগায়। আমি ঈশ্বরের প্রেম অনুভব করতে পারি, যার কারণে আমি খুব সুখী ছিলাম, এবং আমি ঈশ্বরের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। এরপর বাবা আমাকে যখন বাধাগ্রস্ত এবং বিরক্ত করতেন আমি আর অস্বস্তি বোধ করতাম না। আমি তার কাছে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে পারতাম যা-ই ঘটুক না কেন, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেই যাবো এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করবো, কারণ আমি জানি আমার দায়িত্ব কি, কারণ আমার দায়িত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং আমাকে সুসমাচার প্রচার করতে হবে এবং আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

পরবর্তিতে আমি আরও ঈশ্বরের বাণী পাঠ করেছিলাম। “আজ, যারা আমার ইচ্ছা পালনকরতে পারে, যারা আমার ভারগুলির প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারে, এবং যারা সত্যনিষ্ঠ হৃদয় ও আন্তরিকতা নিয়ে আমার জন্য নিজেদের সবকিছু উৎসর্গ করতে পারে তাদের আমি ভালোবাসি। আমি নিরন্তরভাবে তাদের আলোকিত করব, এবং আমার আমার কাছ থেকে তাদের সরে যেতে দেব না। আমি প্রায়শই বলি, ‘আমার জন্য যারা নিজেদের আন্তরিক ভাবে ব্যয় করে, আমি তোমাকে অবশ্যই প্রচুর আশীর্বাদ করব’। ‘আশীর্বাদ’ বলতে কী বোঝায়? তুমি কি জানো? পবিত্র আত্মার বর্তমান কাজের পরিপ্রেক্ষিতে তা বোঝায়সেই দায়ভারগুলিকে, যা আমি তোমাকে অর্পণ করেছি। যারা গির্জার জন্য ভার বহনে সক্ষম, এবং আমার জন্য আন্তরিকভাবে নিজেদের উৎসর্গ করে, তাদের দায়ভার ও তাদের আন্তরিকতা উভয়েই আমার কাছ থেকে আগত আশীর্বাদ। সেইসঙ্গে, তাদের কাছে আমার উদ্ঘাটনগুলিও আমার আশীর্বাদ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৮২)। “উঠে দাঁড়াও এবং আমার সঙ্গে সহযোগিতা কর! যারা আন্তরিকভাবে আমার জন্য নিজেকে ব্যয় করে, আমি অবশ্যই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করব না। আমার জন্য আন্তরিকভাবে আত্মনিবেদন করলে, আমি তোমায় আমার সমস্ত আশীর্বাদ দেব। নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আমার কাছে নিবেদন কর! তুমি কী খাবে, কী পরবে এবং তোমার ভবিষ্যৎ সকলই আমার হাতে; আমি সবকিছু যথাযথভাবে আয়োজন করব, যাতে তুমি অবিরাম উপভোগ করে যেতে পার, যা তোমার জন্য কখনই নিঃশেষিত হবে না। এর কারণ হ’ল, যেমন আমি বলেছি, ‘যারা আমার জন্য আন্তরিকভাবে ব্যয় করে তাদের জন্য বলছি, আমি তোমাকে অবশ্যই অজস্র আশীর্বাদ করব।’ সকল আশীর্বাদই সেই প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আসবে যে আন্তরিকভাবে আমার জন্য নিজেকে ব্যয় করে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৭০)। ঈশ্বরের বাণী পড়ে, আমি বুঝতে পেরেছি আপনার দায়িত্বের বোঝা বহন করা এবং আন্তরিক হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেকেই জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কি সত্যিই স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রচারের জন্য নিবেদিত? আমি কি ঈশ্বরের শর্ত অনুযায়ী আমার দায়িত্ব পালন করেছি?” আমি জানতাম আমার বাবা আমাকে আমার সমাবেশে এবং বাড়ির দায়িত্ব পালনে বেশি সময় দিতে দেবেন না, কারণ তিনি সবসময় আমাকে বাধা দেওয়ার এবং বিরক্ত করার চেষ্টা করেন। আমি যদি সুসমাচারের কাজে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করতে চাইতাম, সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমাকে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হতো। ঈশ্বর চান যত দ্রুত সম্ভবস্বর্গরাজ্যের সুমাচার ছড়িয়ে পড়ুক যাতে আরও বেশি বেশি মানুষ অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। আমার দায়িত্ব আছে ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার যাতে আরও বেশি লোক ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পারে এবং প্রভুকে স্বাগত জানায়। তাই আমি আমার তল্পিতল্পা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে নতুন শহরে গেলাম, এবং অবশেষে স্বাধীনভাবে সুসমাচার প্রচার করার সুযোগ পেলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ আমি প্রায় হারাতে যাচ্ছিলাম

আমি আর আমার স্ত্রী 1995 সালে খ্রিস্টান হয়েছিলাম, তারপর থেকে আমরা সত্যিই আমাদের সাধনায় আগ্রহী ছিলাম, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সোলা ফাইড...

শয়তানের পরীক্ষায় বিজয়

আমার নাম ডেভিড এবং আমি এক খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মেছিলাম। আমি ছোটো থেকেই বাবা-মার মতোই প্রভুর প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। বড়ো হওয়ার পর, আমি যুব...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন