পারিবারিক বন্দী

31-03-2023

আমি 2019 সালে অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করি। ঈশ্বরের বাণী পড়ে বুঝলাম, কীভাবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরের তিনটে পর্যায়ের কাজের অন্তর্নিহিত সত্য, ঈশ্বরের অবতারের রহস্য, বিচারকার্যের অর্থ, শয়তান কীভাবে মানুষকে কলুষিত করে, কীভাবে ঈশ্বর মানুষকে উদ্ধার করেন আর কীভাবে মানুষ পরিশুদ্ধ হয়ে সুন্দর গন্তব্যে যেতে পারে সেসব প্রকাশ করেছেন। এই কথাগুলোর মধ্যে একটা কর্তৃত্ব ছিল আর এসব আগে কখনও শুনিনি। শুনে নতুন আর বাস্তবিক লেগেছিল, মনে হয়েছিল জ্ঞানলাভ করলাম, আমার আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মিটল। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই ছিলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু, তাই খুব উত্তেজিত ছিলাম। কখনও ভাবিনি আমার জীবদ্দশায় প্রভু যীশুর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারব। তাই বুঝেছিলাম যে আমি ভাগ্যবান। এরপর, প্রায়ই সমাবেশে যোগ দিতাম, সুসমাচার প্রচার করতাম, প্রতি দিন মনটা ভরে থাকত আর আনন্দে কাটাতাম। তবে দু’মাস পর, আমার ছোট ভাই আর ভাজ আমার ঈশ্বরবিশ্বাস সম্পর্কে জানতে পারে। আমার ভাজ চিনা, আর একটা সরকারি বিভাগে কাজ করে, তাই আমার ভাই তার সাথে চিনে গিয়েছিল। ভাই আমাকে ফোনে ধমক দিয়ে বলল, “চিনা সরকার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের উপর নির্যাতন করে। প্রভু যীশুতে তোমার বিশ্বাস নিয়ে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে যেও না। সেটা তো মানুষকে বিশ্বাস করা, ঈশ্বরকে নয়।” এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, আমার ভাই শুধু যা গুজব শুনেছে তাই বলছে, কারণ খোঁজ নিয়ে আর অনুসন্ধান করতে গিয়ে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা থেকে বিশ্বাসীদের অনেক ভিডিওতে তাদের উপর CCP’র নির্যাতন দেখেছি, এও বুঝলাম যে সত্য পথে যারা চলে তারা প্রাচীনকাল থেকেই নির্যাতিত হয়ে আসছে। ঈশ্বর যখন কাজ করতে আসেন, তখন শয়তানী শক্তিরা তাকে নির্যাতন করবেই। ঠিক যেমন প্রভু যীশু যখন কাজ করতে এসেছিলেন, তখন ধর্মীয় নেতা আর রোমান শাসকরা উন্মত্তভাবে তাঁকে বাধা দেয় আর নির্যাতন করে। তাকে বললাম, “আমি ঈশ্বরেই বিশ্বাস করি, কোনো ব্যক্তিকে নয়। যখন ঈশ্বর পৃথিবীতে কাজ করতে আর মানবজাতিকে উদ্ধার করতে আসেন, তখন আমাদের তাঁর কাছে পৌঁছানোর আগে তাঁকে মনুষ্যপুত্ররূপে অবতার নিতেই হবে। ঈশ্বর মানুষ হন, তাই তাঁকে কোনো পরিবারে জন্ম নিয়ে সাধারণ মানুষ হিসাবে জীবনযাপন করতে হবে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে সাধারণ ব্যক্তি হিসাবে আবির্ভূত হন, কিন্তু তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা বিরাজমান, তাঁর সারসত্য ঈশ্বরের। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অনেক সত্য প্রকাশ করেছেন আর মানবজাতিকে পরিশুদ্ধ করে উদ্ধার করার কাজ করেছেন, যা অন্য কেউ করতে পারে না। প্রভু যীশুকে দেখে সাধারণ ব্যক্তির মতই লাগত, কিন্তু তাঁর সারসত্য ছিল ঈশ্বরের। আর তিনি সত্য প্রকাশ করে মানবজাতিকে মুক্তি দেন। এটা সাধারণ মানুষ করতে পারে না। প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করা মানে কোনো ব্যক্তির উপর বিশ্বাস করা বলা যায় কি? যা বোঝো না, সে সম্পর্কে নির্বোধের মত অনুমান কোরো না। পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে ঈশনিন্দার পাপ কখনোই ক্ষমা করা যায় না। ফরিশীরা প্রভু যীশুর নিন্দা করেছিল এই বলে যে বেলজেবাব তাকে অসুর তাড়াতে সাহায্য করেছিল। শেষ পর্যন্ত, তারা ঈশ্বরের দণ্ড আর অভিশাপ পেয়েছিল। আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করছি না, তাই তুমিও আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে বাধা দিও না!” সে কিছুতেই আমার কথা শুনবে না। যতই তাকে খণ্ডন করি, ততই আমাকে বকে। যখন বুঝলাম যে সে CCP’র গুজবে প্রতারিত হয়ে ঈশনিন্দা করছে, তখন তাকে নিয়ে হতাশ হয়েছিলাম। পরের দিন, আমার ভাজও আমাকে ফোন করে বিশ্বাস না করার কথা বলে, আর ভয় দেখানোর চেষ্টাও করে: “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে তোমার বিশ্বাস চিনে অবৈধ। এর জন্য তোমাকে গুলি করা হতে পারে। যদি চিনে থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে তাহলে তোমাকে অনেক আগেই গ্রেপ্তার করা হত। চিনা সরকার তোমার গির্জার কোনো বিশ্বাসীকে খুঁজে পেলেই গ্রেপ্তার করে। কেউ পালাতে পারে না।” ভাজের কথাগুলো CCP কীভাবে ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে আর খ্রিস্টানদের নির্যাতন করে সেসব সত্য ঘটনা দেখায়, ফলে যেসব চিনা ভ্রাতা আর ভগিনীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তাদের কঠিন পরিস্থিতি বুঝতে পারলাম। একই সময়ে অদ্ভুত মনে হল। আট বছর ধরে প্রভুতে বিশ্বাস রাখলেও আমার পরিবারের থেকে কখনও কোনো বাধা পাইনি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার সঙ্গে সঙ্গে কেন তারা সবাই আমাকে নির্যাতন করতে লাগল আর আমার প্রতি এতটা উদাসীন হয়ে গেল? তখনই মনে পড়ল যে আমার ভ্রাতা আর ভগিনীরা আলোচনা করেছিল যে প্রাচীনকাল থেকেই যারা সত্য পথে চলে তারা নির্যাতিত হয়ে এসেছে, আর যেখানেই ঈশ্বর কাজ করেন সেখানেই শয়তান বাধ সাধে। তখন বুঝলাম যে আমার উপর পরিবারের নির্যাতন আসলে শয়তানের কারসাজি ছিল, তাই যত বেশি নির্যাতিত হয়েছি, ততই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে আর শয়তানের কৌশল এড়াতে চেয়েছি।

পরে, আমার ভ্রাতা আর ভগিনীরা আমাকে ঈশ্বরের বাণী শোনাল, “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের আয়োজন এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা। উদাহরণ হিসাবে ধরা যায়, ইয়োবের যখন বিচার চলছিলো: নেপথ্যে শয়তান বাজি ধরেছিলো ঈশ্বরের সঙ্গে এবং ইয়োবের যে পরিণতি তা হয়েছিলো মানুষের কাজে এবং হস্তক্ষেপে। ঈশ্বর তোমাদের ভিতরে যে কাজ করেন তার নেপথ্যের প্রতিটি ধাপেই চলে শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের লড়াই—সব কিছুর অন্তরালেই চলে এই যুদ্ধ(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। ঈশ্বরের বাণী পড়ে বুঝলাম যে এটা আধ্যাত্মিক যুদ্ধ। ঈশ্বর যখন কাউকে উদ্ধার করেন, তখন শয়তান তাদের বিরক্ত করার আর বাধা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে আর এভাবেই তাদের নরকে নিয়ে যেতে চায়। সেদিন আসলে, বাহ্যিকভাবে, আমার ভাই আর ভাজ আমাকে বাধা দিচ্ছিল, কিন্তু আসলে কারসাজিটা ছিল শয়তানের। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক ভালই ছিল, আর ভাই সাধারণত আমার কথা শুনত, কিন্তু তারা CCP’র গুজব শোনার পর মনে হল যেন আলাদা মানুষ। ঈশ্বরত্যাগে আমাকে বাধ্য করতে ওরা সব রকমের কৌশল করে। ওদের কথা শুনে আমি আরো ভেঙে পড়ি। থাইল্যান্ডে থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতাম, তাও তারা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইত। চিনে থাকলে তো তারা আমাকে শ্রীঘরে পাঠাত। বুঝলাম যে শয়তান সত্যিই জঘন্য, আর তাদের আর আমার পথ একই নয়। উপরে উপরে তারা আমার আত্মীয় হলেও আমাদের আত্মার যোগ ছিল না। আমাদের ভাষা এক ছিল না, আমরা একই ধরনের মানুষও ছিলাম না, আর আমাদের মধ্যে সেই পুরানো স্নেহও আর ছিল না। সেই সন্ধ্যায়, ভিডিওতে একটা সাক্ষ্যে, CCP’র নির্যাতিত ভ্রাতা আর ভগিনীদের কথা শুনি। তাদের যতই শারীরিক কষ্ট হোক, তারা অটল থেকে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছিল। ঈশ্বরে প্রার্থনা আর তাঁর বাক্যের পথনির্দেশ মেনে, তারা শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল, এমনকি তাদের সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে নিজেদের জীবনও দিয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতা আমাকে অনুপ্রাণিত করল। এই ধরনের কষ্টকর পরিস্থিতিতেও তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে শয়তানের সাথে আপোষ করেনি। আমি যে নির্যাতন সহ্য করেছি সেটা তার তুলনায় কিছুই ছিল না। এটা আমাকে পরবর্তী যে কোনোকিছুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য আরও বিশ্বাস দিল।

তারা যখন আমাকে রাজি করাতে পারল না, তখন স্বামীকে আমাকে থামানোর জন্য উস্কানি দিয়ে বলে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে আমি সন্তান বা পরিবার বিমুখ হয়ে পড়ব। যাজক স্বামীর চোখে ধুলো দিতে নানা অপবাদ ছড়ায়, বলে যে আমি কোনো মানুষকে বিশ্বাস করি। স্বামী এসব শোনার পর তাদের অনুসরণ করে আমার বিরোধিতা করে। সে যখন আমাকে অনলাইন সমাবেশে যোগ দিতে বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে দেখত, তখন প্রায়ই বাড়ির নেটওয়ার্ক কেবল খুলে দিত, তারপর দরজা বন্ধ করে আমাকে ঐ ঘরে ঢুকতে দিত না। আমাকে বিরক্ত করার জন্য সবকিছু করত আর সমাবেশে যোগ দিতে বা ঈশ্বরের বাণী পড়তে বাধা দিত। জানতাম এটা শয়তানের কাজ, তাই আপোষ করতে পারিনি। স্বামী যখন দেখল, সে আমাকে আটকাতে পারল না, তখন বলল, “যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেই থাকো তবে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হবে! তোমায় এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। আজই সিদ্ধান্ত নাও!” আমি বললাম, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলে তোমাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। তোমার আগে একজন সঙ্গিনী ছিল, কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস করি বলেই সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করিনি। ভগবানে বিশ্বাস করে কোনো অন্যায় করছি না, তাহলে বাধা দিতে চাইছ কেন? যদি বিবাহবিচ্ছেদ চাও আর আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাও তবে আমার কোনো উপায় নেই। এই বাড়ি ছেড়ে যেতে হলেও ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখব!” তাই, আমার জামাকাপড় গুছিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে গেলাম। তখন এরপর কী করব জানতাম না। যখন আমার ছোট বাচ্চার কথা ভাবতাম, তখন চলে যেতে একদম মন চাইত না। তাই, ভ্রাতা আর ভগিনীদের সাথে যোগাযোগ করে আমার অবস্থার কথা জানাই, আর আমার ভগিনী আমাকে ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পাঠায়: “তাঁর কর্মপরিসরে, সূচনালগ্ন থেকেই, ঈশ্বর সকল মানুষের জন্য—অথবা, তুমি বলতে পারো যে, তাঁকে অনুসরণ করে চলা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য—পরীক্ষা নির্ধারিত করে রেখেছেন, এবং এই পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন মাত্রার হয়। কিছু মানুষ রয়েছে, যারা তাদের পরিবারের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, অনেকে প্রতিকূল পরিস্থিতি সংক্রান্ত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কোনো কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার ও অত্যাচারিত হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কিছু মানুষ আছে, যারা কঠিন বিকল্পের মুখোমুখি হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, এবং কিছু মানুষ অর্থ ও পদমর্যাদার পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, তোমরা প্রত্যেকেই সবরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছ। কেন ঈশ্বর এইভাবে কাজ করেন? কেন তিনি প্রত্যেকের সঙ্গে এহেন আচরণ করেন? কী ধরনের ফলাফলের তিনি সন্ধান করেন? ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই আমি তোমাদের সাথে আলোচনা করতে চাই: ঈশ্বর দেখতে চান যে, সেই ব্যক্তি মানুষ কি না, যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে। এর অর্থ হল, যখন ঈশ্বর তোমাকে কোনো পরীক্ষা র মধ্যে ফেলেন এবং কোনো না কোনো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন, তখন তাঁর অভিপ্রায় হল পরীক্ষা করে দেখা যে, তুমি এমন একজন মানুষ কি না যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর কাজের দ্বারা অর্জিত হতে চলা ফলাফল জানার উপায়)। ঈশ্বরের বাণী পড়ার পর বুঝলাম যে, পরিবারের থেকে যে নির্যাতন পেতাম, সেটাও আমি ঈশ্বরকে নাকি শয়তানকে সন্তুষ্ট করি তা দেখার পরীক্ষা ছিল। বুঝলাম যে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। কিন্তু তখনও ক্ষীণ আশার একটা আলো ছিল। তখনও চেয়েছিলাম স্বামী তার মন পরিবর্তন করুক। কিন্তু তারপর, স্বামী আর ছোট বোন আমায় খুঁজে পেল, এক এক করে বলল, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে হবে। দেখছ না? এমনকি তোমার সন্তান আর পরিবারকেও আর চাইছ না!” স্বামীকে রেগে বললাম, “কখনও বলিনি সন্তান বা পরিবারকে চাই না। তুমিই আমাকে নির্যাতন করো, আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে দাও না, এমনকি বিবাহবিচ্ছেদের হুমকিও দাও। একটু ধর্মের স্বাধীনতা চাওয়া কি খুব বেশি কিছু?” বাবাও আমায় ডেকে বলল, “এই ভগবান আছে কোথায়? এসবে বিশ্বাস কোরো না। তোমার স্বামীর সাথে বাড়ি ফিরে যাও আর জীবনটা ভাল করে কাটাও!” এটা শুনে রেগে তাদের সাথে তর্ক জুড়ে দিলাম, “ভগবানে বিশ্বাস করা ভুল নয়। তুমি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছ কেন?” বাবা দেখল যে আমি অবিচল, তখন ফোনে, স্বামীকে বলল আমাকে বেঁধে মারতে, আর মারা গেলে নিজেই তার দায় নেবে। সে আমাকে মারেনি, তবে আমার ব্যাঙ্ক কার্ড নিয়ে নেয়, তারপর আমার ফোন আর কম্পিউটার ভেঙে দেয়। এরপর স্বামী আর বোন আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে বাড়ি নিয়ে যায়। পথে তারা আমার পাশেই বসেছিল, দুজনেই আমার প্রতি হিংস্র ছিল। তখন বুঝলাম যে চিনা ভ্রাতা আর ভগিনীরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কেমন অনুভব করে। মনেই হয়নি ওরা আমার পরিবার, আর তাদের জন্য কোনো আশাই রাখিনি। জানতাম না যে এরপর তারা কীভাবে আমায় নির্যাতন করবে, তাই নিঃশব্দে মনে মনে প্রার্থনা করলাম, ঈশ্বর যেন আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ দেখান। সেই রাতে খুব খারাপ লাগছিল। সেই সময়ে বেশীরভাগ দিনই সুসমাচার প্রচার করতাম, কিন্তু এই সময় আর কিছুই করতে পারছিলাম না। যেহেতু পরিবার জানত যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তাই তারা আমাকে নির্যাতন করতে জোট বেঁধেছিল। যেহেতু আমার ভাজ চিনা সরকারের হয়ে কাজ করত আর তার টাকাও ছিল, তাই আমার পরিবার তার কথা মানত, আর সে তাদের আমাকে নির্যাতনের জন্য সব ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করতে প্ররোচিত করেছিল, এতটাই যে আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে দেওয়ার আগেই পিটিয়ে মেরে ফেলবে। সেই মুহূর্তে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধের আসল চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তারা শয়তান, ঈশ্বরের শত্রু। ভাবছিলাম কীভাবে ইয়োব ঐরকম কষ্টকর বিচারের মুখোমুখি হয়েছিল, তবুও সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। পরিবর্তে নীরবে ঈশ্বরে প্রার্থনা করে তাঁর ইচ্ছার অনুসন্ধান করেছিল, তাই অবিচল থাকার জন্য আমারও ঈশ্বরের উপর ভরসা করা উচিত, আর শয়তানের সাথে কখনই আপোষ করা উচিত না, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।

পরের দিন, স্বামী আর বাবা আমাকে মা-বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়। মা আর আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ভয় পেয়েছিল যে পালিয়ে না যাই, তাই আমার দেখা পাওয়ামাত্র আমার তল্লাশি করে আর আমার ID দিতে বলে। তারা আমাকে একা থাকার সুযোগই দেয়নি। যখন স্নান করতাম বা বাথরুমে যেতাম, তখন মা বাইরে পাহারা দিত। এমনকি তারা আমার ভাগ্নিকে আমার উপর নজর রাখতে আমার সাথে ঘুমাতে পাঠাত, আমি রাতে আলো জ্বাললে, কী করছি তা দেখার জন্য মা তখনই টোকা দিয়ে বলত যেন লাইট অফ করে ঘুমাতে যাই। আরও অসহ্য ব্যাপার হল ভোর তিন বা চারটের সময়, মা শব্দ করত, চিৎকার করত আর দরজায় ধাক্কা দিত। এই জন্য খুব বিরক্ত ছিলাম। দিনের বেলাও আমার উপর তারা আরো তীক্ষ্ণ নজর রাখত। আমাকে অন্যদের সাথে কথা বলতে দিত না, এমনকি পাশের বাড়ির মহিলার সাথেও নয়, আর প্রতিবেশীরা আমার দিকে এমনভাবে তাকাত যেন চেনেই না। প্রতি দিন, পরিবার যা ব্যবস্থা করত তা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। তারা আমার সাথে বন্দীর মত আচরণ করত আর প্রতিদিন আমার উপর নজর রাখত। মনে হচ্ছিল যেন জেলে আছি। আমারই পরিবার আমার সাথে এমন আচরণ করেছে কারণ তারা CCP’র গুজব আর আমার ভাজের কথা শুনছিল। তারা ভ্রাতা-ভগিনীদের সাথে আমার সম্পর্ক আর ধীরে ধীরে ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস ছাড়াতে চেয়েছিল। প্রতিদিন আমার খুব খারাপ লাগত। ভ্রাতা আর ভগিনীদের সাথে আমার সমাবেশে যাওয়া হচ্ছিল না। ঈশ্বরের কাজ শেষ হতে চলেছিল, কিন্তু সমাবেশে যেতে পারছিলাম না, ঈশ্বরের বাণী পড়তে বা আমার দায়িত্বও পালন করতে পারছিলাম না। আমি কি বহিষ্কৃত হতে যাচ্ছিলাম? ভেবেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম, শুধু এই পরিবেশ থেকে পালিয়ে স্বাধীনভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে চেয়েছি। বাথরুমে লুকিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, ঈশ্বর যেন আমার জন্য একটা পথ খুলে দেন। পরে, মা-বাবা আমার বড় ভাই আর ভাজের সাথে আমাকে কমলা বাগানে কাজ করতে বলে, সেখানে তারা আমার উপর নজর রাখতে পারবে। আমার বড় ভাজ আমার ঈশ্বরবিশ্বাসে বাধা দেয়নি, তাই দিনের বেলায় কাজ করার সময় অনলাইনে ঈশ্বরের বাণী শোনার জন্য তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম। আমার পথ খুলে দেওয়ার জন্য অন্তর থেকে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।

মনে আছে ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ আমাকে বিশেষভাবে নাড়িয়ে দেয়। “এই দুই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা ইয়োবের মধ্যে এক সমৃদ্ধতর অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছিল, এবং এই অভিজ্ঞতা তাকে আরো বেশী পরিণত ও পোক্ত করে তুলেছিল, তাকে আরো বেশী শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তুলেছিল, এবং যে সততার প্রতি সে অটল ছিল তার যথার্থতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে তাকে আরো প্রত্যয়ী করে তুলেছিল। যিহোবা ঈশ্বরের পরীক্ষাগুলো ইয়োবকে মানুষের সম্পর্কে ঈশ্বরের যত্নের এক গভীর উপলব্ধি ও বোধ প্রদান করেছিল, এবং তাকে ঈশ্বরের ভালোবাসার মূল্যবানতার ধারণা পেতে দিয়েছিল, যেখান থেকে তার ঈশ্বরে ভীতির সাথে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসাও যুক্ত হয়েছিল। যিহোবা ঈশ্বরের পরীক্ষাগুলো ইয়োবকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি, বরং তার হৃদয়কে ঈশ্বরের আরও নিকটে নিয়ে এসেছিল। ইয়োবের শারীরিক যন্ত্রণা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন তার জন্য যিহোবা ঈশ্বরের যে উদ্বেগ সে উপলব্ধি করতে পেরেছিল, তার ফলে তার কাছে নিজের জন্মদিবসকে অভিশাপ দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প অবশিষ্ট ছিল না। এই আচরণ দীর্ঘ-পরিকল্পিত ছিল না, বরং তা ছিল তার হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসার এক স্বাভাবিক প্রকাশ, তা ছিল এক স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ যা এসেছিল ঈশ্বরের প্রতি তার বিবেচনা ও ভালোবাসা থেকে। অর্থাৎ বলা যায় যে যেহেতু সে নিজেকে ঘৃণা করতো, এবং ঈশ্বরকে কষ্ট দিতে অনিচ্ছুক ও অরাজি ছিল, সেই কারণেই তার বিবেচনা ও ভালোবাসা নিঃস্বার্থপরতার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। এই সময়ে, ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি তার দীর্ঘস্থায়ী আরাধনা, আকুতি ও নিষ্ঠাকে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসার স্তরে উত্তোলিত করেছিল। সেই একই সাথে, সে ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ও আনুগত্যকে এবং তার ঈশ্বরে ভীতিকে, বিবেচনা ও ভালোবাসার স্তরে উন্নীত করেছিল। সে নিজেকে এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত রেখেছিল যা ঈশ্বরের ক্ষতিসাধন করতে পারে, এবং নিজেকে এমন কোনো আচরণের অনুমতি দেয়নি যা ঈশ্বরকে আহত করতে পারে, এবং তার নিজের কারণে ঈশ্বরের উপর কোনোপ্রকার দুঃখ, শোক, বা বিষণ্ণতা নিয়ে আসা থেকে বিরত থেকেছিল। ঈশ্বরের চোখে এই ইয়োব সেই আগের ইয়োব হলেও, তার বিশ্বাস, আনুগত্য ও ঈশ্বরভীতি ঈশ্বরকে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি ও আনন্দ প্রদান করেছিল। এই সময়ে ইয়োব সেই ত্রুটিহীনতা অর্জন করেছিল যা ঈশ্বর তার থেকে প্রত্যাশা করেছিলেন; ঈশ্বরের চোখে সে হয়ে উঠেছিল এমন এক মানুষ যে সত্যিই ‘নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ’ বলে অভিহিত করার যোগ্য(বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২)। ইয়োবে শয়তানের প্রলোভন আর আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিল, তার সমস্ত সন্তান-সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার পুরো শরীরে ফোঁড়া হয়েছিল আর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল, কিন্তু ঈশ্বরকে ভয় করার দরুন সে সাতপাঁচ না ভেবে কথা বলত না বা কাজ করত না। তার পরিবর্তে, সে প্রথমে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইত। সে বুঝেছিল যে ঈশ্বরের মন তার দুঃখকষ্টে তার সাথেই রয়েছে আর সে ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি মমতা অনুভব করেছিল। ইয়োবে ঈশ্বরকে কষ্ট ভোগ করতে দিতে পারেনি, তার মনে হত ঈশ্বরকে দোষারোপ করার চেয়ে তার জন্মকে ধিক্কার দেওয়াও ভাল। শেষ পর্যন্ত, সে অবিচল থেকে শয়তানকে বাক্যবাণে বিঁধেছিল: “যিহোবা দিয়েছিলেন, আবার যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন; যিহোবার নাম ধন্য হোক” (ইয়োবে ১:২১)। ইয়োবের স্ত্রী আর বন্ধুরা যেভাবেই তাকে উপহাস করুক না কেন, ইয়োবে ঈশ্বরের প্রতি তার সত্যিকারের বিশ্বাস রেখে, তার সাক্ষ্য দিয়ে শয়তানকে এমনভাবে অপমানিত করেছিল যে সে তাকে আর অভিযুক্ত করতে পারেনি। বুঝলাম যে এক্ষেত্রে, শয়তানের পরিকল্পনা বোঝার জন্য ঈশ্বরের উপর ভরসা করিনি অথবা এই পরিবেশে ঈশ্বরের দিকনির্দেশও চাইনি। তা না করে প্রতিরোধ করেছি, অভিযোগ করেছি আর শয়তানকে আমায় উপহাস করতে দিয়েছি। ঈশ্বরের বাণী মনে করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করলাম, আর আমার মধ্যে বিশ্বাস বেড়ে গেল, এরপর যে পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হই না কেন, ইয়োবেকে অনুকরণ করব, আমার ঈশ্বরের সাক্ষ্যে অবিচল থেকে শয়তানকে অপমান করব।

প্রতিদিন বড় ভাই আর ভাজের সাথে মাঠে কাজ করতে যেতাম। তাদের প্রেম, কীভাবে তারা একসাথে বেরত আর ফিরত, এসব দেখে তাদের ঈর্ষা না করে পারিনি। আমি কেন একটা স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন পেলাম না? এই ভেবে মনে হয়েছিল আপোষ করে ফেলি। বিশেষ করে যখন তারা রাতের খাবার বানাত, আর দেখতাম তাদের পরিবার একসাথে কি সুখেই না আছে, এদিকে আমি ছিলাম একা, আমার হৃদয় দুর্বল ছিল বলে চোখের জল সামলাতে পারতাম না। বুঝলাম যে শারীরিক সুখ নিয়ে ভাবছিলাম, আর ভাবছিলাম যে ঈশ্বর অন্তিম সময়ে দেহ ধারণ করে মানুষকে পরিশুদ্ধ করে উদ্ধার করার জন্য সত্য প্রকাশ করবেন। এটাই সত্য অনুসরণ করার যুগসন্ধিক্ষণ, কিন্তু স্বামী আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। আমাদের মধ্যে কোনও মিল ছিল না, এমনকি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবেই একসাথে ছিলাম, তখনও আমরা খুশি ছিলাম না। এটা ভাবার পরে তেমন মন খারাপ হয়নি। বৌদির থেকে ফোন ধার নিয়ে চুপচাপ স্তোত্র শুনলাম, শুরু হল “সত্যের জন্য তোমার সমস্ত ত্যাগ করা উচিত”:

সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না।

যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো, সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার জীবনে আরো অর্থবহ পথ অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি এমন অমার্জিত জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!

—মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এই মুহূর্তে আমাকে এই গান শুনতে দেওয়ার জন্য। জানতাম সামান্য রক্তমাংসের চাহিদার জন্য সত্যের সন্ধান ছেড়ে দিতে পারি না। এখন, ঈশ্বর এই যুগাবসানের জন্য অন্তিম সময়ে বিচারকার্য করছেন। আমরা সত্যের সন্ধান না পেলে উদ্ধার হওয়ার সুযোগ হারাব, আর শেষ পর্যন্ত, আমরা সবাই বিপর্যয়ের পড়ে ধ্বংস হয়ে যাব। আমাদের সুখী পারিবারিক জীবন থাকলে কী আসে যায়? এসব কি সাময়িক নয়? সত্য না পাওয়ার চেয়ে বড় কষ্ট আর ক্ষতি কিছু নেই। এসব ভাবতে ভাবতে, মনে মনে একটা স্বস্তি অনুভব করলাম, যেন ঈশ্বরের মুখোমুখি হলাম। মনে মনে নিরাপদ আর আনন্দ বোধ করলাম, নিজেকে আর একা মনে হল না।

তিন সপ্তাহ মা-বাবার বাড়িতে থাকার পর, একদিন, পরিবারের অমনোযোগের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে এসে একটা হোটেলে উঠলাম, কিন্তু আমার ভাগ্নে আর বড় ভাই তাড়াতাড়ি আমায় খুঁজে বের করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। তারপর, মা-বাবা সারা গ্রামকে আমাদের বাড়িতে রাতের খাবারে নেমন্তন্ন করল আর আমার উপর নজর রাখতে বলল, যাতে কেউ যদি জানতে পারে যে আমি পালিয়েছি, তাহলে যেন ধরে ফেলে। স্বামী আমাদের পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসে, আমাকে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে আর তার সাথে বাড়ি যেতে বলল। আমার ছেলে তো আমার কাছে আসার সাহসই করেনি, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন, সে বলল, “বাবা বলে তুমি পাগল আর আমাকে মেরে ফেলতে পারো।” কথাটা শুনে আমার খুব রাগ হল। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সে একটা ছোট বাচ্চাকে এমন কিছু শেখাবে। তারপর থেকে আমার ছেলের সাথে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি। যখন তাকে ক্যান্ডি কিনে দিতাম শুধু তখনই সে আমার সাথে কথা বলার সাহস করত। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, কামনা করেছিলাম যেন আমার পরিবার আমাকে জোর করা বন্ধ করে, কিন্তু বুঝলাম ধারণাটা ভুল ছিল। তারা সবাই ঈশ্বরকে ঘৃণা করত আর কখনই নিজেদের পরিবর্তন করবে না। স্বামী তখনও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল আর মা-বাবা আমাকে বিশ্বাস করতে বারণ করল। আমি বললাম, “ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ করতে পারব না।” স্বামী যখন দেখল যে আমি তখনও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তখন আমার ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেল।

এক সপ্তাহ পরে, একদিন সকালে, ভাই বাইরে থেকে শহরের ফিরে এল, তার হাতে আমার একটা পোশাক ছিল। সে বলল, “তোমাকে পবিত্র করতে আজ সকালেই একজন ওঝার কাছে গিয়েছিলাম।” তখন বাবাও ঘর থেকে বেরিয়ে এল আর আমাকে তাড়াতাড়ি পোশাকটা পরার নির্দেশ দিয়ে বলল, “এটা পরলেই সুস্থ হয়ে যাবে।” আমি বললাম, “পরব না। আমার উপর কেউ ভর করেনি আর রোগগ্রস্তও নই, আমি একমাত্র সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করি।” যখন বাবা দেখল যে তাদের “চিকিৎসা” নিচ্ছি না, তখন সে আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। সে আমার হাতের মত মোটা একটা লাঠি ধরে চিৎকার করে বলল, “যেহেতু তুমি এত অবাধ্য, আমরাও দেখব আজ তোমাকে একটা শিক্ষা দিতে পারি কিনা! তোমাকে আগে কখনও মারিনি, কিন্তু আজ তোমাকে দেখাব মারলে কী হয়। ততক্ষণ মারব যতক্ষণ না তুমি হয় মারা যাও নাহলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ কর!” বাবাকে কখনও এত রাগতে দেখিনি। মার খাওয়ার ভয় তো ছিলই, আর লাঠিটা এত মোটা ছিল যে সম্ভবত আমার হাড় ভেঙে ফেলবে। যখন বাবা আমাকে পোশাক পাল্টাতে বলল, তখন তড়িঘড়ি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বললাম, যাই ঘটুক না কেন, শয়তানের সাথে আপোষ করতে পারব না। ভাবছিলাম শয়তান কীভাবে বারবার ইয়োবেকে প্রলোভন দেখাত আর আক্রমণও করত, কিন্তু ইয়োবে তার সততা বজায় রেখেছিল, তার সাক্ষ্যে অবিচল ছিল, আর শেষ পর্যন্ত, শয়তান অপমানিত আর ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। যদিও ইয়োবের তুলনায় আমি নগণ্য, তবে জানতাম শয়তান আমাকেও ছাড়ছে না, ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসকে তিলে তিলে নষ্ট করার, আমাকে ঈশ্বরের প্রতি নিরুৎসাহিত আর হতাশ করার, আর অবশেষে আমাকে দিয়ে ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর চেষ্টা করছে। শয়তানের এই ফাঁদে পড়লে চলবে না। তাই, শপথ করার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “ঈশ্বর, আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও শয়তানের সাথে আপোষ করব না। আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস ত্যাগ করব না, আর আপনার পক্ষে আমার সাক্ষ্যে অবিচল থাকব।” প্রার্থনা করার পরে আর ভয় পাইনি, ভাবলাম যা হয় হবে। একটা স্তোত্রের লাইন আমার মনে পরিষ্কার ভেসে উঠল, “আমি আমার ইচ্ছা ও সংকল্প যেন ত্যাগ না করি, এগুলির পরিত্যাগ শয়তানের সাথে আপোষের সমতুল্য, আত্ম-বিনাশ আর ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতারই সমান(মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান, সত্য অন্বেষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংকল্প)। ঈশ্বরের বাণীর এই লাইনগুলো আমাকে আত্মবিশ্বাস আর শক্তি দিল। কখনো শয়তানের সাথে আপোষ করব না। বাবা হাতে লাঠি নিয়ে আমার কাছে এল, আমাকে মারতে যাচ্ছিল। তাকে দেখতে অসুরের মত লাগছিল, কিন্তু মোটেই ভয় পাইনি। সেই সময় স্বামী আর মা মাঠ থেকে ফিরছিল। বাবাকে বাধা দিতে মা আমার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তারপর আমাকে ঈশ্বরবিশ্বাস আর না করতে অনেক বোঝাল। আমি বললাম, “ঈশ্বরে বিশ্বাস করা চুরি বা ডাকাতি নয়, আমি তো অন্যের পরিবার ভাঙি না। শুধু সমাবেশে যাই। এমন কী ভুল করেছি যে আমাকে পিটিয়ে মারতে চাও? তোমরা কি এখনো আমার পরিবার?” আমার ভাগ্নে অবজ্ঞার সুরে বলল, “মাসি, যাদের গাড়ি আর টাকা আছে তাদের দিকে তাকাও। তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, কিন্তু তোমার ঈশ্বর তোমাকে কী দিয়েছেন?” বললাম, “ওসব কী কাজে লাগে? যখন বিপর্যয় আসে, তখন কি এগুলো মানুষকে উদ্ধার করে? একমাত্র ঈশ্বরই মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। যদি এগুলোর পিছনে ছুটতে চাও, তাহলে আটকাব না। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তুমি তাতে বাধা দিচ্ছ কেন?” ভাগ্নে রেগে বলল, “যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বন্ধ না করো, তাহলে নির্মম হওয়ার জন্য আমাদের দোষ দিতে পারো না। আমরা তোমাকে তিন দিন, তিন রাত ঝুলিয়ে রাখব, তারপর দেখব তখনও বিশ্বাস করো কিনা!” তারপর পুরো পরিবারই রাজি হল যে আমাকে ঝুলিয়ে রাখবে আর ঈশ্বরে বিশ্বাস করা ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত নামাবে না। আমি তো প্রচণ্ড রেগে গেলাম। এ কেমন পরিবার? তারা একেবারেই শয়তান ছিল। তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে আমাকে পথ দেখাতে বললাম। স্বামী আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, “প্রভু যীশুর প্রতি আমার বিশ্বাস এমনি একটা বিশ্বাসমাত্র। তুমি এই বিষয়ে এত সিরিয়াস কেন? বিশ্বাস করা বন্ধ করো।” আমি বললাম, “যদি তুমি স্বীকার না করো যে প্রভু যীশু তোমাকে উদ্ধার করতে ফিরে এসেছেন, তবে তোমাকে জোর করব না, তাই আমাকেও জোর করা বন্ধ করো। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে মানব!” পরিবারের কাছে এমন একটা অবিচল ঘোষণা করার পরে তারা চুপ করে গেল, তখন জানতাম, শয়তান হেরে গেছে। হৃদয়ে এমন একটা মাধুর্য অনুভব করলাম যা আগে কখনও করিনি, ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিনি!

এরপরেও পরিবার আমাকে ঘরে আটকে রাখত। কিন্তু আর মনমরা বোধ করিনি, এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে আর এর থেকে শিক্ষা নিতে ইচ্ছুক ছিলাম। সাধারণত, যখন তারা নজর দিত না, তখন আমার ভাজের ফোন নিয়ে অনলাইনে ডেইলি ওয়ার্ডস অফ গড শুনতাম। প্রায়ই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম আর ঈশ্বরের ব্যবস্থায় নিজেকে সঁপে দিতে ইচ্ছুক ছিলাম। কখন পালাতে পারব তা ঈশ্বরের উপর ছিল, তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ছিলাম। ধীরে ধীরে, পরিবার আমার উপর কম নজর রাখতে লাগল। একবার, গ্রামের এক পরিবার একটা বিবাহভোজের আয়োজন করেছিল আর পরিবারের সবাই গিয়েছিল। সেই সুযোগে পালালাম। এরপর, ভ্রাতা আর ভগিনীদের সাথে যোগাযোগ করে আমার শহর ছেড়ে চলে আসি। এখন, অবশেষে অবাধে ঈশ্বরে বিশ্বাস আর আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি। এই সময়ে, পরিবারের কাছ থেকে নির্যাতন পেয়েছি, যদিও একটু কষ্ট পেয়েছি, তবে অনেক কিছু অর্জন করেছি। এখন আরও স্পষ্টভাবে CCP’র খারাপ দিক আর ঈশ্বরের প্রতি পরিবারের প্রতিরোধের আসল রূপ দেখতে পাই, আর বাস্তবিক দিক থেকে বুঝেছি যে ঈশ্বর আমার পাশে ছিলেন আর আমাকে সমর্থনও করছিলেন। যখনই নেতিবাচক আর দুর্বল লাগত, তখনই ঈশ্বর আমাকে তাঁর বাণীর মাধ্যমে আলোকিত করতেন, পথ দেখাতেন, আমাকে সাহস আর জ্ঞান দিতেন, যাতে অবিচল থাকার আত্মবিশ্বাস পাই। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

প্রভুকে স্বাগত জানানোর সুযোগ আমি প্রায় হারাতে যাচ্ছিলাম

আমি আর আমার স্ত্রী 1995 সালে খ্রিস্টান হয়েছিলাম, তারপর থেকে আমরা সত্যিই আমাদের সাধনায় আগ্রহী ছিলাম, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা সোলা ফাইড...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন