ঈশ্বরের রাজ্যের পথ সর্বদা মসৃণ নয় (১)
আমার জন্ম এক খ্রীষ্টান পরিবারে, প্রভুর প্রতি বিশ্বাসে আমি আমার বাবা-মাকে অনুসরণ করেছি। মাঝে মাঝেই আমি গির্জায় গিয়ে গির্জার নানা সমাবেশ এবং কর্মকাণ্ডেও যোগ দিতাম। ২০২০-র মার্চ মাসের একটি দিনে, ফেসবুকে একজন ভগিনীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রভুর প্রতি বিশ্বাস নিয়ে কথা হয় আমাদের মধ্যে, আমার মনে হয়েছিল যে সেই ভগিনী সেদিন যা বলেছিল তা বেশ নতুন কথা। যেমন, সে জিজ্ঞেস করেছিল যে, স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের শর্তাবলি আমি জানি কি না, এবং এই আলোচনা মুহূর্তের মধ্যেই আমাকে কৌতূহলী করে তোলে। আমার মনে হয়েছিল, “প্রভুকে বিশ্বাস তো অনেক দিন থেকেই করছি, কিন্তু যাজকরা বা গুরুজনেরা কখনোই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের শর্তাবলি নিয়ে কিছু আলোচনা করে নি। যেভাবে আমরা বিশ্বাস করি সেভাবেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা সম্ভব কি না, তা কখনো ভেবেও দেখিনি।” সেই প্রথম এই বিষয়ে শুনলাম, এবং উত্তর জানার জন্য আগ্রহী হলাম। পরবর্তীকালে সমাবেশে যোগদান করে ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়ে আমি বুঝেছিলাম, শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার পর আমরা পাপী প্রকৃতির হয়ে গিয়েছি, এবং আমরা প্রায়শই পাপ করি। এই পাপী প্রকৃতি যদি ত্যাগ করতে না-পারি, তাহলে পাপ থেকে মুক্তি পাব না আমরা। যারা কলুষময় ও ভ্রষ্ট, তারা কখনোই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের যোগ্য হতে পারে না, কারণ ঈশ্বর ধার্মিক ও পবিত্র, আর মানুষও পবিত্র না হয়ে তাঁর দর্শন পেতে পারে না। সেই ভগিনী আমাকে এ-ও বলেছিল, “প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হয়ে, সত্য প্রচার করতে, আর মানুষকে বিচার ও পরিশুদ্ধ করার কাজ করতে। তা তিনি করবেন আমাদের পাপী প্রকৃতিকে পরিহার করে পাপ থেকে সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করতে। অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচারকার্য মেনে নেওয়া এবং দুর্নীতি থেকে পরিশুদ্ধ হলে তবেই একমাত্র আমরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশাধিকার পাব।” সেই ভগিনী সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য থেকে দুটো অনুচ্ছেদও আমাকে পড়ে শুনিয়েছিল। “তুমি কেবল জানো যে অন্তিম সময়ে যীশু অবতীর্ণ হবেন, কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি অবতীর্ণ হবেন? তোমাদের মতো একজন পাপী, যাকে সদ্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যাকে ঈশ্বর এখনও পরিবর্তিত অথবা ত্রুটিমুক্ত করেন নি, সে কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারবে? তোমার ক্ষেত্রে, যে কিনা এখনও তার পুরনো সত্তাতেই রয়েছ, একথা সত্যি, যে, যীশু তোমাকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণের কারণে তোমাকে পাপী হিসাবে গণ্য করা হয় না, কিন্তু তাই বলে এর থেকে এমন প্রমাণ হয় না যে তুমি পাপী নও, এবং অশুদ্ধ নও। তোমাকে যদি পরিবর্তিত না করা হয়, তাহলে তুমি কীভাবে সাধুচরিত্র হবে? তোমার অন্তরে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে অশুদ্ধতা, স্বার্থপরতা এবং সঙ্কীর্ণতা, তা সত্ত্বেও তুমি যীশুর সঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা রাখ—এমন সৌভাগ্য তোমার কীভাবে হবে? ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তুমি একটি ধাপ হারিয়ে ফেলেছ: তোমাকে কেবল মুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তোমাকে পরিবর্তিত করা হয় নি। তোমাকে যদি ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়, তাহলে স্বয়ং ঈশ্বরকেই ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে পরিবর্তিত এবং পরিশোধিত করতে হবে; তুমি যদি শুধুমাত্রই মুক্ত হও, তাহলে তুমি পবিত্রতা অর্জনে অক্ষম হবে। এইভাবে তুমি ঈশ্বরের শুভ আশিসের ভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবে, কারণ ঈশ্বরের মানুষকে পরিচালনার কার্যের একটি পর্যায়ক্রম থেকে তুমি বঞ্চিত হয়েছ, যা ছিল তোমায় নিখুঁত করে তোলার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই, সদ্য মুক্তি লাভ করা একজন পাপী হিসাবে, তুমি প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের উত্তরাধিকার লাভ করতে অক্ষম” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, অভিধা ও পরিচয় সংক্রান্ত)। “যদিও যীশু মানুষের মধ্যে অনেক কাজ করেছিলেন, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র সমস্ত মানবজাতির মুক্তি সম্পূর্ণ করেছিলেন এবং মানুষের পাপস্খালনের বলি হয়েছিলেন; তিনি মানুষকে তার সমস্ত ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে মুক্তি দেননি। শয়তানের প্রভাব থেকে মানুষকে পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য শুধু যীশুর পাপস্খালনের বলি হওয়া আর মানুষের পাপ বহন করার প্রয়োজন ছিল তাই নয়, বরং মানবজাতিকে সম্পূর্ণরূপে তার শয়তানোচিত ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরের আরো মহত্তর কর্মের প্রয়োজন ছিল। এবং তাই, এখন যখন মানুষ তার পাপের ক্ষমা পেয়েছে, ঈশ্বর মানুষকে নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেহরূপে ফিরে এসেছেন এবং শাস্তি ও বিচারের কাজ শুরু করেছেন। এই কাজ মানুষকে এক উচ্চতর জগতে নিয়ে এসেছে। যারা তাঁর রাজত্বের অধীনে আত্মসমর্পণ করে তারা উচ্চতর সত্য উপভোগ করবে এবং বৃহত্তর আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা প্রকৃতপক্ষেই আলোতে বাস করবে, এবং তারা সত্য, পথ ও জীবন লাভ করবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভূমিকা)। এই সময় বাক্যগুলো মন দিয়ে ভাবছিলাম, আর ভাবছিলাম নিজের ও আমার ভাইবোনদের কাজ নিয়ে। আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, প্রভুকে বিশ্বাস করতাম আমরা এবং ভালো কাজও করেছি কিছু, আমরা ছিলাম দয়াশীল, কখনো কারো সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করিনি, কিন্তু তবুও মাঝেমধ্যেই মিথ্যে কথা বলতাম এবং পাপকাজ করতাম, আমরা ছিলাম উদ্ধত, ঘৃণা করতাম অন্যদের, তখনও হিংসা ও ঘৃণা করতাম আমরা, খ্যাতি ও মুনাফার প্রতিযোগিতায় মাততাম আমরা। আমরা সবাই পাপ ও স্বীকারোক্তির চক্রে আবদ্ধ জীবন কাটাচ্ছিলাম, আর কেবলই পাপের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছিলাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পরেই আমি বুঝলাম যে এর কারণ হল আমাদের পাপী প্রকৃতিকে এখনও পরিহার করা হয়নি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়ে আমি পাপমুক্ত হওয়ার এবং ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার হওয়ার পথও খুঁজে পেলাম। সুতরাং অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিচারকার্যকে আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। কলুষ শুদ্ধ হলে তবেই আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশাধিকার পাব। আমি বুঝেছিলাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য খুবই চমৎকার ও বাস্তব। তাঁর বাক্য আমার অন্তঃকরণ উজ্জ্বল করে তুলেছিল এবং এমন কিছু সত্য উপলব্ধিতে সাহায্য করেছিল যা আগে কখনো শুনি নি। তার পর থেকে কায়মনোবাক্যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য পড়তাম আমি, সক্রিয়ভাবে অনলাইন সমাবেশে যোগ দিতাম, ঈশ্বরের কাজের জ্ঞান ও উপলব্ধি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতাম, যখনই কথা হত আমাদের মধ্যে, আমি খুবই উপকৃত ও আনন্দিত হতাম। কিছুদিন পর, প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের ফলে আমি এমন অনেক সত্য আর রহস্য বুঝতে পারলাম যা আমি আগে বুঝিনি, যেমন অবতারত্ব কী, কীভাবে প্রকৃত খ্রীষ্টকে আলাদা করা যাবে ভণ্ড খ্রীষ্টের চেয়ে, ঈশ্বরের নামের রহস্য, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা উদ্দেশ্য, কীভাবে শয়তান মানুষকে ভ্রষ্ট করে তোলে, কীভাবে ধাপে ধাপে ঈশ্বর মানবজাতিকে উদ্ধার করেন, কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীতে উপলব্ধি করা যাবে, ইত্যাদি। এছাড়াও, আগে যখন বাইবেল পড়েছিলাম তখন যেসব প্রশ্নের সমাধান আমি পাই নি, তা পেলাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যে। আমি বুঝলাম যে এসব রহস্য স্বয়ং ঈশ্বরই কেবল পারেন বোঝাতে। আমি তাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যই সত্য এবং তা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই হলেন প্রত্যাবর্তিত ফিরে এসেছেন প্রভু যীশু হয়ে। সেই সময় আমি বড়ই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম। প্রভুর ফিরে আসার সুসংবাদ আমার অনেক বন্ধুবান্ধবকে জানিয়েছিলাম, আর বলেছিলাম অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ অনুসন্ধান করে দেখতে।
তবে কয়েক দিনের মধ্যেই, আমার অঞ্চলের সবচেয়ে প্রতিপত্তিশালী খ্রীষ্টান গির্জা—উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্যাপ্টিস্ট গির্জা—বিশ্বাসীদের মধ্যে নানান প্রচারপত্র বিলি করা শুরু করল যেগুলো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার নিন্দা করার জন্য ধর্মীয় যাজকবৃন্দ মিথ্যা বানিয়েছিল। সেসব প্রচারপত্রে ছিল সিসিপির কুৎসা ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা, আর সেগুলোর মতে এই গির্জা প্রচার করে যে ঈশ্বর অবতার হয়ে ফিরে এসেছেন, এবং তিনি একজন নারী, যা কিনা বাইবেল-বিরোধী। সমস্ত বিশ্বাসীদের তারা বলেছিল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশে যোগ দেবার দরকার নেই। এই বিষয়টি ভারতের প্রধান টিভি চ্যানেলগুলিতে সম্প্রচারও করা হয়েছিল। যখনই আপনারা টিভি বা কম্পিউটার খুলবেন আর খবর দেখবেন, এই ধরনের নেতিবাচক প্রচার দেখতে পাবেন। শীঘ্রই তা দেশময় ছড়িয়ে যায়। যাজকরা ও নেতারা এমন খোলাখুলিভাবে তথ্য বিকৃত করছে, মিথ্যাচার করছে, আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিন্দা করছে দেখে আমি খুবই বিরক্ত ও বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ নিয়ে আমার সাথে অনুসন্ধানে যারা যোগ দিয়েছিল তাদের অনেকেই প্রবঞ্চিত হবার ফলে দল থেকে সরে গেছিল। কেউ কেউ আমাকে বোঝাতে চেয়েছিল যে, সিসিপি এই গির্জার নিন্দা করেছে, একে তাই বিশ্বাস করা ঠিক নয়। প্রকৃত পথ থেকে তারা সরে গেছে দেখে আমি খুবই হতাশ হয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, সিসিপি-র শাসন নাস্তিক। তারা ঈশ্বরে একেবারেই বিশ্বাসী নয়, এবং সবসময় ধর্মীয় বিশ্বাসকে নিপীড়ন করে তারা। কেন মানুষ সিসিপি নামক একটা নাস্তিক রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করতে চায়, ঈশ্বরের কাজ অনুসন্ধান বা ঈশ্বরের বাক্য না শুনে? ঠিক সেই সময়, আমার শহরের এক বন্ধু আমার হোয়াটসঅ্যাপ ফিডে দেখে “প্রভু ফিরে এসেছেন, খ্রীষ্টের রাজ্যর এখন আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে।” সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশে যোগ দিয়েছিলাম কি না। আমি বলেছিলাম, “হ্যাঁ।” সে বলেছিল আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা সম্বন্ধে নানান মিথ্যে ও কুৎসামূলক রটনাও পাঠিয়েছিল সে, এ-ও বলেছিল যে, “যাজক বলেছেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ না করতে। অন্তিম সময়ে প্রভুর দেহধারণ করে প্রত্যাবর্তন অসম্ভব, তাই আমাদের উচিত নয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশে যোগ দেওয়া।” কারণ সেই সময়, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ব্রাদার ও সিস্টাররা আমার সাথে অবতারত্বের সত্য নিয়ে আলোচনা করেছিল। তারা বলেছিল অন্তিম সময়ে প্রভু দেহরূপী অবতার হয়ে প্রত্যাবর্তন করবেন, ঈশ্বর যা আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, আর প্রভু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীতে তা প্রমাণিত হয়েছে। প্রভু যীশু বলেছেন, “বিদ্যুতের ঝলক যেমন হঠাৎ পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিক পর্যন্ত সমগ্র আকাশকে আলোকিত করে, ঠিক সেইভাবে মানবপুত্রের আগমন হবে” (মথি ২৪:২৭)। “বিদ্যুৎ ঝলকে যেমন আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি মানবপুত্রও তাঁর সেই দিনে উদ্ভাসিত হবেন। কিন্তু প্রথমে তাঁকে দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে এবং এ যুগের লোক তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে” (লুক ১৭:২৪-২৫)। “কাজেই তোমরা প্রস্তুত হয়ে থাকবে, কারণ মানবপুত্র এমন সময়ে আসবেন যে সময়ে তাঁর আগমন প্রত্যাশা করবে না” (মথি ২৪:৪৪)। প্রভু যীশু যখন অন্তিম সময়ে তাঁর প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তিনি বহুবার বলেন “মানবপুত্রের আগমন,” “মানবপুত্র আসবেন,” “মানবপুত্রও তাঁর সেই দিনে।” এখানে “মানবপুত্র” বলতে দেহরূপী অবতারের কথা বলা হয়েছে। অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এসেছেন ও প্রকাশ করেছেন বহু সত্য। এসেছেন মনুষ্যপুত্র হয়ে, আবির্ভূত হয়েছেন পরিত্রাতা রূপে, যা কিনা প্রভু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করে। ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাহচর্যে আমি এ-ও জেনেছিলাম যে কেবল ঈশ্বরই সত্য, পথ ও জীবন। কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরের বাক্য ও সত্য প্রকাশ করতে পারে, এবং অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের বিচারকার্য করতে পারেন তাহলে সেই মানুষই স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার। তাঁর চেহারা যতই সাধারণ মানুষের মতো হোক না কেন, বা তাঁর সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকুক বা না-থাকুক, তাঁর বাক্য ও কাজই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর পরিচয় ও সত্তা প্রমাণ করার এই হল শ্রেষ্ঠ উপায়। এইসব ভেবে আমি যা বুঝেছিলাম তা আমার বন্ধুকে বলেছিলাম এবং জানিয়েছিলাম, “ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর যা চান তা-ই করতে পারেন। আমরা মানুষেরা যা পারি তা হল, তাঁর অন্বেষণ, তাঁকে বিচার বা ব্যাখ্যা করা নয়। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশগুলি আমাকে বহু সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে, আমি তাই সমাবেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করব না। যখন আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তখন আমাদের উচিত ঈশ্বরের স্বর শোনা, অন্ধভাবে মানুষকে অনুসরণ করা উচিত নয়। বাইবেল বলে, ‘মানুষের আদেশ নয় কিন্তু ঈশ্বরের আদেশই আমাদের পালন করা উচিত’ (প্রেরিত ৫:২৯)।” এই কথা শুনে আমার বন্ধু তখন চিন্তিত মুখে বলে, “যদি তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস অটুট রাখো, তাহলে তুমি যখন তোমার নিজের শহরে ফিরে আসবে, তখন নগরপাল তোমাকে প্রশ্ন করবেন। যাজক তোমাকে বিশ্বাস করতে দেবেন-না, আর গ্রামবাসীরা তোমায় পরিত্যাগ করবে। তুমি কি এসব ভেবে দেখেছ?” আমি বলেছিলাম, “মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়ায় আমি ভয় পাই না। যেটা ভয়ের সেটা হল, ঈশ্বরের পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না-পারা, ঈশ্বরের দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়া। কখনো কি ভেবে দেখেছ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যদি ফিরে আসেন প্রভু যীশু হয়ে, আর তা যদি আমরা স্বীকার না-করি, তাহলে আমরা বিপর্যস্ত হয়ে কাঁদবো আর চরম আক্ষেপ হব? প্রভুর ফিরে আসা একটা বড় ব্যাপার, সুতরাং তুমি নিজে কেনো ব্যাপারটা অনুসন্ধান করে দেখছ না?” সেই সময় সে তখনও আমার উপদেশ মানতে নারাজ ছিল।
পরে আমার বন্ধু আমার মা-বাবাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আমার বিশ্বাসের ব্যাপারে বলে। তারপর এক সপ্তাহ পর্যন্ত আমার মা-বাবা প্রতিদিন আমাকে এই বলে তিরস্কার করে গিয়েছিল, যে, “যাজক আমাদের বলেছেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জায় যেন তোমাকে আমরা না যেতে দিই। এসব সমাবেশে তোমার আর যাওয়া চলবে না এবং গির্জায় যাওয়া তোমাকে বন্ধ করতে হবে!” আমি তাদের বলেছিলাম, “যাজক যেমন বলেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা তেমন নয়। সেইসব সমাবেশে এমন অনেক সত্য উপলব্ধি হয়েছে আমার যা আগে কখনো বুঝিনি আমি। এই হল সত্যের পথ, আমি পথভ্রষ্ট হইনি।” আমি তাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজের প্রমাণ দিতে চাইলাম, কিন্তু রটনায় তারা এতই প্রবঞ্চিত হয়েছিল যে, তারা আমাকে আর কিছুই বলতে দিল না। পরে মহামারী দেখা দেওয়ার ফলে আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এলাম। বাবা-মা যখন দেখল যে আমি মাঝেমধ্যেই অনলাইন সমাবেশে যোগ দিচ্ছি, তখন তারা আমাকে আটকানোর চেষ্টা করল। প্রতিবেশীরা আমাকে নিয়ে কথা বলতে লাগল যে, যাজকের কথা না শুনে আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করার ফলে উন্মাদ হয়ে গিয়েছি। এসব শুনে আমার বাবা-মা আরো রেগে গেল। বাড়ি ফিরলে ওরা আমাকে তিরস্কার করল, “জানো কি, গ্রামবাসীরা সবাই কী বলছে? আমাদের কথা উপেক্ষা করে তুমি কি ওই সমাবেশগুলোতে যাবেই?” আমি বলেছিলাম, “হ্যাঁ, কিন্তু আমি তবুও সমাবেশগুলোয় যাবই।” ভীষণ রেগে বাবা-মা আমাকে আবারও আটকাতে চাইল। সমাবেশগুলোর সময় ওরা মাঝেমধ্যেই বাধা দিত, তার ফলে সমাবেশগুলোয় শান্তিতে যোগ দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মনে পড়ে, একবার একটি সমাবেশের পরে আমি প্রার্থনা করছিলাম। চোখ খুলে হঠাৎ বাবাকে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি আমি ঘাবড়ে গেলাম। বাবা সক্রোধে চিৎকার করে উঠল, “ইন্টারনেট বন্ধ করো এবং তোমার এসব সমাবেশ এক্ষুনি বন্ধ করো!” আমি তাদের বলেছিলাম, “প্রভু যীশু সত্যিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হয়ে ফিরে এসেছেন, ঈশ্বরের গৃহ থেকে শুরু করে বিচারকার্য করতে। আমরা যদি ঈশ্বরের পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না-চলি, ঈশ্বরের বিচারকার্য গ্রহণ না-করি, এবং আমরা যদি পাপ থেকে মুক্ত না-হই, তাহলে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারব না, আর শেষে, আমরা বিপর্যয় ও দণ্ডের কোপে পড়ব।” কিন্তু আমি যা বলেছিলাম, তা আদৌ শুনল না আমার মা-বাবা এবং যাজক যা প্রচার করেছিল, শুধু তা-ই বার বার বলে গেল তারা। তারা বলল যে এমন হতেই পারে না যে ঈশ্বর নারীরূপে দেহধারণ করেছেন। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদের কথা ভাবলাম, যা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার ভ্রাতা-ভগিনীগণ আমাকে পড়ে শুনিয়েছিল। “ঈশ্বরের সম্পাদিত কাজের প্রতিটি পর্যায়েরই নিজস্ব ব্যবহারিক তাৎপর্য রয়েছে। অনেককাল আগে, যীশু যখন এসেছিলেন, তখন তিনি পুরুষ রূপে এসেছিলেন, আর এইবার যখন ঈশ্বর আসেন, তখন তাঁর রূপ নারী। এর থেকে তুমি দেখতে পাবে যে পুরুষ ও নারী, ঈশ্বরের এই উভয় সৃষ্টিই তাঁর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, এবং তাঁর কাছে কোনো লিঙ্গ ভেদ নেই। যখন তাঁর আত্মা আসেন, তিনি ইচ্ছামতো যে কোনো দেহ ধারণ করতে পারেন, এবং সেই দেহ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে; যতক্ষণ এটি তাঁর অবতাররূপ দেহ, ততক্ষণ তা পুরুষ হোক বা নারী, সে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। যীশু যখন এসেছিলেন, তখন তিনি যদি নারী হিসাবে আবির্ভূত হতেন, অর্থাৎ যদি পবিত্র আত্মা শিশুপুত্রর পরিবর্তে এক শিশুকন্যাকে ধারণ করতেন, সেক্ষেত্রেও সেই কাজের পর্যায়টি একইভাবেই সম্পন্ন হত। যদি তাই হতো, তাহলে কাজের বর্তমান পর্যায়টি তার পরিবর্তে একজন পুরুষের দ্বারা সম্পন্ন করতে হত, কিন্তু কাজটি একইভাবেই শেষ হত। কাজের প্রতিটি পর্যায়ে সম্পাদিত কাজেরই নিজস্ব তাৎপর্য আছে; কাজের কোনো পর্যায়েরই কখনো পুনরাবৃত্তি করা হয় না, বা অন্য কোনো পর্যায়ের সঙ্গে তা বিরোধও ঘটায় না” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, দু’টি অবতার অবতাররূপের তাৎপর্য সম্পূর্ণ করে)। আমার মনে আছে যে, তারা আলোচনা করেছিল, ঈশ্বরের অবতারত্ব ঘটে যখন ঈশ্বরের আত্মা দেহধারণ করে একজন সাধারণ মানুষে পরিণত হন, সুতরাং তিনি নারী না পুরুষ, তাতে কিছুই আসে-যায় না, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর, আর তিনি সত্য প্রকাশ ও ঈশ্বরের কাজ করতে সক্ষম। প্রভু যীশু ছিলেন পুরুষ। তিনি মানবজাতির জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন এবং বহন করেছিলেন মানুষের পাপসমূহ, তার ফলে মানবজাতির মুক্তির কাজ শেষ হয়েছিল। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর আসেন নারীর অবতার ধারণ করে, এবং প্রভু যীশুর কাজের ভিত্তিতে, প্রকাশ করেন সকল সত্য যা মানুষের উদ্ধারের কাজে প্রয়োজনীয়, এবং মানুষকে শুদ্ধ করার কাজ করেন। সুতরাং অবতার নারী হন বা পুরুষ, তিনি সত্য প্রকাশ করতে, এবং মানবজাতির পরিত্রাণ ও উদ্ধার করতে পারেন। ঈশ্বর যদি উভয় সময়কালেই পুরুষরূপে আবির্ভুত হতেন, মানুষ ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করতে, ভাবত যে তিনি কেবল পুরুষরূপেই দেহধারণ করতে পারেন, নারীরূপে নয়। তাহলে কি নারীরা আরও বৈষম্য এবং ভেদাভেদের শিকার হত না? ঈশ্বর ধার্মিক। তিনি পুরুষ ও নারী উভয়েরই সৃষ্টি করেছেন। প্রথমবার ঈশ্বর পুরুষরূপে অবতারধারণ করেছিলেন, এবং অন্তিম সময়ে, তিনি পুনরায় অবতীর্ণ হয়েছেন, নারীরূপে, অর্থাৎ, তিনি পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রতিই ন্যায্য। ঈশ্বর যদি দুইবারই পুরুষরূপে আবির্ভূত হতেন, তবে তা নারীদের প্রতি অন্যায্য হত, তাই অন্তিম সময়ে ঈশ্বর নারীরূপে দেহধারণ করেছেন। যা প্রতিভাত করে ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা, ঈশ্বর যে পুরুষ ও নারী উভয়েরই সৃষ্টি করেছেন সেই তথ্য, এবং তাঁর সামনে উভয়েরই সমতা। এটা সত্যিই ব্যঞ্জনাময়! এই ভেবে, আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, “ঈশ্বর নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজস্ব প্রতিমূর্তি অনুসারে, সুতরাং ঈশ্বরের অবতার স্বাভাবিকভাবেই নারীও অথবা পুরুষ হতে পারেন। তাঁর বাহ্যিক চেহারা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জরুরি ব্যাপারটা হল যে, যেহেতু তিনি সত্য প্রকাশ করে মানবজাতিকে উদ্ধার করতে পারেন, সেহেতু তিনিই ঈশ্বরের আত্মার অবতাররূপ, তিনিই হলেন স্বয়ং ঈশ্বর।” আমার মা-বাবা আমার কথা উড়িয়ে দিতে পারল না, তাই তারা বলল, “তুমি বলছ যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হলেন প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু, কিন্তু আমরা তা বিশ্বাস করি না। যাজকেরা ও গুরুজনেরা যখন এটা গ্রহণ করবেন তখনই আমরা গ্রহণ করব। যাজক বলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর একজন সাধারণ মানুষ যার জন্ম একটি সাধারণ পরিবারে, সুতরাং সে ঈশ্বরের অবতার হতে পারে না।” এর উত্তরে আমি তাদের বলেছিলাম, “প্রভু যীশু যখন কাজ করতে এসেছিলেন, ইহুদিধর্মের প্রধান যাজক, শাস্ত্রজ্ঞ, এবং ফরিশীরা সাধারণ ঘরে জন্ম ও সাধারণ চেহারার জন্যে তাঁকে ঈশ্বর বলে চিনতে পারে নি। তারা বলেছিলেন, ‘এ সেই ছুতারের ছেলে, না? এর মায়ের নাম মরিয়ম, তাই না?’ এই ফরিশীরা কেবল প্রভু যীশুর চেহারার দিকেই তাকিয়েছিল। তাঁর বাক্য ও কাজ ঈশ্বরপ্রেরিত কি না তা বোঝার চেষ্টা করে নি। নিজেদের উদ্ধত স্বভাববসত তারা তাঁর বিষয়ে রায় দিয়েছিল যে, তিনি ঈশ্বর নন, একজন সাধারণ মানুষ। তারা প্রভু যীশুকে অপবাদ দিয়েছিল ও দোষী সাব্যস্তও করেছিল। ইহুদিধর্মের বিশ্বাসীরা তাদের পুজো করত ও মেনে চলত, আর তাই তাদের অনুসরণ করে প্রভুকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। শেষে তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণ হারিয়েছিল ও দণ্ডিত হয়েছিল। আজও একই ব্যাপার। এই যাজকেরা ও গুরুজনেরা খতিয়ে দেখছে না, যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর দ্বারা প্রকাশিত বাক্যগুলো সত্য এবং তা ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর কিনা। তারা অন্ধভাবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিচার ও নিন্দা করছে, বলছে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর একজন সাধারণ মানুষ, এবং তাঁর উৎস ও বংশপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। ফরিশীরা যেমন প্রভু যীশুর নিন্দা করেছিল, ঠিক তেমনই নয় কি এটা?” এই মুহূর্তে, আমার মনে পড়েছিল ঈশ্বরের বাক্যের একটি অনুচ্ছেদ, যা ব্রাদার-সিস্টারগণ আমায় পড়ে শুনিয়েছিল। “যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের সারসত্যের অধিকারী হবেন, এবং যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের অভিব্যক্তির অধিকারী হবেন। যেহেতু ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন, সেহেতু তিনি সেই কাজ নিয়ে আসবেন যা তিনি করতে চান, এবং যেহেতু তিনি দেহরূপে এসেছেন, তিনি যা তা তিনি স্বরূপ প্রকাশ করবেন এবং সেই সত্যটি মানুষের সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ হবেন, তাকে জীবন দান করবেন এবং তার জন্য পথ চিহ্নিত করবেন। যে দেহরূপে ঈশ্বরের সারসত্য নেই তাকে ঈশ্বরের অবতার বলে গণ্য করা হয় না; এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা তা যদি মানুষ অনুসন্ধান করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই যে স্বভাব তিনি প্রকাশ করেন এবং যে সকল বাক্য তিনি বলেন, তার থেকেই তা জানতে হবে। অর্থাৎ, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা, এবং এটিই প্রকৃত পথ কিনা, তা সুনিশ্চিত করতে অবশ্যই তাঁর সারসত্যের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। এবং তাই, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কি না, তা নির্ণয় করার মূল বিষয়টি তাঁর বাহ্যিক চেহারার পরিবর্তে তাঁর সারসত্য (তাঁর কাজ, তাঁর কথন, তাঁর স্বভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের), উপর নির্ভরশীল। মানুষ যদি শুধু তাঁর বাইরের চেহারাটাই খুঁটিয়ে দেখে, এবং এর ফলে তাঁর সারসত্যকে উপেক্ষা করে, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় যে সেই মানুষটি অজ্ঞানতিমিরে আচ্ছন্ন এবং অজ্ঞ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভূমিকা)। তারপর আমি আমার বাবা-মাকে বলেছিলাম, “ইনি ঈশ্বরের অবতার কি না তা ঠিক করা উচিত তিনি সত্য প্রকাশ করতে এবং মানবজাতিকে পরিত্রাণ করতে সক্ষম কিনা, তা দিয়ে তাঁর চেহারা দিয়ে নয়। এইটা নিয়ে ভাবো, আমরা কি প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করি তাঁর দেহরূপধারী প্রতিমূর্তির জন্য? না। প্রভু যীশুকে আমরা গ্রহণ করেছিলাম কারণ তাঁর বাক্য বাইবেলে পড়েছিলাম, এবং দেখেছিলাম যে তাঁর বাক্য সত্য, এবং তিনি সমগ্র মানবজাতিকে মুক্ত করতে পারেন। আমি আজ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কারণ আমি দেখেছিলাম সর্বশক্তিমান ঈশ্বর দ্বারা অভিব্যক্ত বাক্যই সত্য। সেগুলিতে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রয়েছে, রয়েছে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর। একমাত্র তখনই আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে তিনিই ঈশ্বরের অবতার, প্রত্যাবর্তিত প্রভু যীশু।” এই বলে আমি তাদের উপদেশ দিয়েছিলাম, “তোমাদেরও পড়া উচিত সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্য। যাজকের কথা অন্ধভাবে শুনো না আর তিনি যা বলেন তা বিশ্বাস কোরো না, তাঁরা যদি ভুল পথে চলে, ঈশ্বরকে প্রতিরোধ ও নিন্দা করে, তোমরাও কি ঈশ্বরকে ত্যাগ ও নিন্দা করায় তাদের অনুসরণ করবে?” আমার বাবা-মা যখন আমার মুখ থেকে এই কথা শুনল, তখন খুবই রেগে গেল। তারা আমাকে তিরস্কার করে বলল, “তুমি যদি যাজকদের ও গুরুজনদের বিরুদ্ধে যাও, তাহলে গ্রামবাসীরা তোমাকে তাড়িয়ে দেবে। সেটা যদি হয়, কোথায় যাবে তুমি? তেমনটা যদি হয় আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না! এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো আর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সপক্ষে অন্যদের সাক্ষ্য দিয়ো না। যাজকেরা ও গুরুজনেরা যখন তা গ্রহণ করবেন, আমরাও গ্রহণ করব। আপাতত নিজে কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পোড়ো না।” আমি তাদের সাথে যা-ই আলোচনা করি না কেন, তারা আদৌ কিছুই শুনতে চাইল না, তারা আমাকে রুক্ষ স্বরে তিরস্কার করল। তারা বলল, “আমরা বহু টাকা খরচ করেছিলাম তোমাকে বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য, তোমার খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছদের জন্য, তুমি আমাদের কাছে একটি হতাশা।” সেই সময় আমার দুই ভাই বাবা-মায়ের পক্ষে ছিল। পরিবারের কেউ আমার উপদেশ শোনে নি। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বহু সত্য প্রকাশ করেছেন, আমি তাদের সঙ্গে আমার সংগৃহীত ফসল ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি যাই বলি না কেন, তারা তবুও কিছু শুনতে চাইল না। আমার বাবা-মা ও গ্রামবাসীরা অতীতে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছিল, কিন্তু এখন, যেহেতু আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছি, তাই আমার প্রতি তাদের মনোভাব বদলে গেল। আমি তাদের চোখে হয়ে গেলাম এক খলনায়ক ও সমাজচ্যুত। এমনকি বাড়িতেও, আমার মনে হত আমার পরিবার আমাকে নিয়ে ভাবিত নয়। আমার একাকী ও দুর্দশাগ্রস্ত বোধ করতাম। কিন্তু যাই হোক না কেন, আমি জানতাম আমি সমাবেশগুলোয় যোগ দেওয়া বন্ধ করতে পারব না, কারণ যদি আমি সমাবেশগুলোয় যোগ না দিতাম এবং নিজেকে সত্য দ্বারা সুসজ্জিত না করতাম, তাহলে সেইরকম পরিবেশকে প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে যেত। পরবর্তীকালে অবাঞ্ছিত কলহ এড়ানোর জন্য, আমি তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতাম ও লুকিয়ে সমাবেশগুলোয় যোগ দিতাম। আমি তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারতাম না। আমি শুধু লিখে-লিখেই আলোচনা করতে পারতাম।
আমার মনে পড়ে এক রাতে যাজক ও তার এক সহকারী হঠাৎ আমার বাড়ি এসেছিল। প্রতিবেশীরা ও কয়েকজন গ্রামবাসীও এসেছিল দেখতে। যাজক বলেছিল, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জার সমাবেশে তোমরা কী নিয়ে কথা বলেছিলে?” আমি বলেছিলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা ঘোষণা করেছেন যে প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন, এবং তিনি হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অবতার যিনি অন্তিম সময়ে বিচারকার্য করবেন। কেমন ধরনের মানুষ স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে, তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছিলাম। পরিত্রাণলাভের অনুসন্ধান কীভাবে করতে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়।” যাজক বলেছিল, “তাহলে বলো কোন ধরনের মানুষ স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।” তার কণ্ঠস্বর ছিল অবজ্ঞাপূর্ণ। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “বাইবেল বলেছে, ‘যারা আমাকে “প্রভু”, “প্রভু”, বলে ডাকে তারা সকলেই যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে তা নয়, কিন্তু যে আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করবে সে-ই শুধু স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে’ (মথি ৭:২১)। ‘অতএব তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র’ (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৫)। এই শ্লোকগুলো থেকে আমরা দেখি, আমরা যদি স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে চাই, তাহলে পাপ ও ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে আমাদের পরিশুদ্ধ হতে হবে, এবং হতে হবে এমন মানুষ যারা ঈশ্বরকে যথার্থই মান্য করে। আমরা এখনও পাপের সঙ্গে বসবাস করি। আমরা অনেক সময় মিথ্যে কথা বলি ও পাপ করি, এবং ঈশ্বরের বাক্যের নীতি মেনে চলি না, সুতরাং আমরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারব না।” আমি তাদের এ-ও বলেছিলাম, “আমি আগে বিভ্রান্ত হতাম এই ভেবে যে, কেন আমরা পাপ, স্বীকারোক্তি এবং আবার পাপের চক্রে আটকে থাকি। কেন আমরা পাপের বাঁধন ত্যাগ করতে পারি না? সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাক্যগুলো পড়ার পরেই আমি বুঝলাম, যখন আমরা প্রভুকে বিশ্বাস করি, আমাদের পাপ মার্জনা হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের পাপী প্রকৃতির, পাপের মূলের, মোচন হয় নি, তাই আমরা প্রায়শই মিথ্যে কথা বলি ও পাপ করি। বাইবেল বলেছে, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোন মানুষ প্রভুকে দেখতে পাবে না’ (হিব্রু ১২:১৪)। ঈশ্বর পবিত্র, সুতরাং, তবু যদি আমরা পাপ করি আর ঈশ্বরের প্রতিরোধ করি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারব না। এখন প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন অন্তিম সময়ে বিচারকার্য করবেন বলে। তিনি সমস্ত সত্য প্রকাশ করেছেন যা মানবজাতিকে পরিশোধন এবং উদ্ধার করবে। এটি প্রভু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যি প্রমাণ করে, ‘তোমাদের আরও অনেক কথা আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনিই তখন তোমাদের পূর্ণ সত্যের উপলব্ধি দান করবেন’ (যোহন ১৬:১২-১৩)। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বহু সত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি শুধু যে ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার রহস্য উদ্ঘাটন করেন, তা-ই নয়, মানুষের পাপের মূলকে প্রকাশও করেন, মানুষের পাপী প্রকৃতিকে বিচার ও অনাবৃত করেন, যেমন ঔদ্ধত্য, প্রতারণা, দুষ্টতা, এবং আরো অন্যান্য, এবং তুলে ধরেন আমাদের ঈশ্বরবিশ্বাসের মধ্যে থাকা ভেজালগুলিকে, আর নিছক স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিকে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জায় যারা ঈশ্বরের বাক্যের বিচারের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তারা ধীরে ধীরে তাদের কলুষ এবং তাদের প্রকৃতির নির্যাস সম্বন্ধে সত্য উপলব্ধি করতে পারে, তখন তাদের মধ্যে সত্যিকারের অনুতাপ জাগে, আর ভ্রষ্ট স্বভাবের শুদ্ধিকরণ ঘটে। এ-ই হল রাজ্যের যুগে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা অর্জিত প্রভাব। আমরা যদি স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে চাই, অন্তিম সময়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিচারকার্য আমাদের গ্রহণ করতেই হবে, এবং আমাদের কলুষ পরিশুদ্ধ হলে তবেই আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করব।” আমার বলা শেষ হলে যাজক বলেছিল, “জানি তুমি সত্যের সন্ধানে তৃষ্ণার্ত আছ, কিন্তু তুমি এখনও নাবালক। তুমি বাইবেল বোঝ না, আর তাই সহজেই প্রতারিত হও। তোমার পক্ষে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ বন্ধ করাই সবথেকে ভালো হবে, প্রভুর কাছে নিজের পাপের কথা স্বীকার করো, আর ওদের সমাবেশে যোগ দেওয়া বন্ধ করো।” পরে যাজক যখন দেখল যে আমি তাকে অগ্রাহ্য করেছি, তখন সে বলেছিল, “তুমি আমার মেষ। তোমার কী করে সাহস হয় আমাকে উপেক্ষা করার? তোমাকে অনুতপ্ত হতে হবে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের গির্জা থেকে সরে এসো, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করাও বন্ধ করো।” আমি তাকে বলেছিলাম, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা আমি কখনোই বন্ধ করব না।” সে খুবই রেগে গিয়েছিল, এবং আমাকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিল, “গির্জার সুপ্রিম কাউন্সিল আমাকে নিয়োগ করেছেন তোমার ‘দেখভাল করা’-র জন্য। তুমি যদি না-থামো, তাহলে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে যাওয়া হবে সুপ্রিম কাউন্সিলের কাছে। তুমি নিশ্চয়ই জানো, সেটা যদি একবার ঘটে, তোমার পড়াশুনোর ক্ষতি তো হবেই, গির্জাতেও তোমার দুর্নাম হবে। এমনকি তুমি হয়তো ভবিষ্যতে কোনো চাকরি জোটাতেও পারবে না। কেন ঝামেলার মধ্যে জড়াচ্ছ?” সেই সময়, যাজক যখন এই কথা বলল, আমি তখন খুব চাপ অনুভব করেছিলাম, কারণ আমি জানতাম যে একবার গির্জার সুপ্রিম কাউন্সিল আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই, তারা আমাকে একা ছেড়ে দেবে না। আমি যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করা বন্ধ না-করি, তাহলে ভবিষ্যতে যখন আমার কোনো শংসাপত্র বার করা দরকার হবে, গ্রামপ্রধান তখন তাতে সই করবেন না, আর তার ফলে আমি কোনো চাকরি না-ও পেতে পারি। আমার বাবা-মা আমাকে কলেজে পাঠিয়েছিল যাতে আমি স্নাতক হবার পর কোনো ভালো চাকরি পাই। আমি যদি কোনো চাকরি না পাই, তখন নিশ্চিতভাবেই আমার বাবা-মা আমাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার ব্যাপারে আরো বেশি বাধা দেবে। তাছাড়াও, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে আমি সদ্য বিশ্বাসী হয়েছিলাম, আর আমি তখনও সত্যকে খুব অল্পই বুঝেছি। আমাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়, আর যদি একদল লোকের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, আমি কি তা সহ্য করতে পারব? আমি যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে যেতে চাই, তারা কি তবে আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবে? তারা কি অন্য সকল বিশ্বাসীদের বলবে আমায় প্রত্যাখ্যান করতে? এসব ভেবে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, তাই আমি ঈশ্বরের কাছে নীরবে প্রার্থনা করেছিলাম এবং তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম আমায় পথ দেখাতে, আর বলেছিলাম যে আমি সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে ইচ্ছুক।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।