মহামারী এসেছে: কীভাবে কোন খ্রিস্টান ঈশ্বরের সুরক্ষা পাওয়ার জন্য অনুতাপ করবে?
আজকাল পৃথিবী জুড়ে অভূতপূর্ব বিপর্যয় নেমে আসছে। ভূমিকম্প, অতিমারী, বন্যা, খরা, কীট-পতঙ্গের উপদ্রব ইত্যাদি খুবই ঘন ঘন হচ্ছে, এবং, বিশেষত কোভিড ১৯ ভাইরাস, ২০১৯-এ যার প্রাদুর্ভাব হয়েছে, তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। দলে দলে মানুষ সারা পৃথিবীতে মারা যাচ্ছে এবং আরো বেশিসংখ্যক মানুষ ক্রমাগত এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে, যে আমাদের উপরেও বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে। কেউ জানে না কতদিন এই বিপর্যয় চলবে এবং কত প্রাণ এর বলি হবে। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তারা মনে মনে জানে যে ঈশ্বরের অনুমতিতেই সব হয় এবং তা ব্যতীত কিছুই ঘটতে পারে না। তাহলে এই বিপর্যয় আমাদের উপর নেমে আসতে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের অভিপ্রায় কী?
পুরাতন নিয়মে গ্রন্থিত আছে যে সদোমের জনতা দুষ্ট, উচ্ছৃঙ্খল ও দুর্নীতিপরায়ণ ছিল এবং শহরটি শোণিততৃষ্ণা ও হত্যার লীলাক্ষেত্র ছিল, এতটাই যে সেখানকার মানুষ দেবদূতদেরও হত্যা করতে চাইত। অনুতাপের কথা তাদের মনেও আসেনি এবং সেইজন্যই ঈশ্বর আকাশ থেকে অগ্নিবর্ষণ করে তাদের ধ্বংস করেন। যাই হোক, যাঁরা বাইবেল ভালো করে পড়েছেন তাঁরা জানেন, ঈশ্বর সেই শহরের ওপর বিপর্যয় নামিয়ে আনার আগে সদোমের তরফে আব্রাহাম ঈশ্বরের কাছে মিনতি করেছিল। এই হল এ বিষয়ে বাইবেলের একটি উদ্ধৃতাংশ: “এবং যিহোবা বললেন, সম্পূর্ণ সদোম শহরে যদি আমি পঞ্চাশজন ধার্মিক ব্যক্তিকেও খুঁজে পাই, তবে তাদের স্বার্থে আমি সমস্ত শহরকে অব্যাহতি দেবো। … সে আবার বলল, … ধরুন যদি সেখানে মাত্র দশজন এমন লোক থাকে? এবং তিনি বললেন, আমি দশজনের স্বার্থেও তা ধ্বংস করবো না” (আদিপুস্তক ১৮:২৬-৩২)। এই পংক্তিগুলি শুধুই ঈশ্বরের সৎ অভিপ্রায়ের পরিচয় দেয় না, তাঁর করুণা ও ঔদার্যেরও পরিচয় দেয়। ঈশ্বর সদোমকে রেহাই দিতেন যদি মাত্র দশজনও সৎ লোক সেখানে পাওয়া যেত। তারা গভীরভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুষ্ট প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বর আশা করেছিলেন যে তারা পরিতাপ করবে। এ অত্যন্ত যন্ত্রণার কথা যে এত বড়ো শহরে দশজনও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি পাওয়া যায়নি, তাই তাকে ধ্বংস করা ছাড়া ঈশ্বরের আর কোনো উপায় ছিল না।
আজকের পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ প্রলোভনে পূর্ণ এবং অত বছর আগের সদোমের নাগরিকদের থেকেও আরো খারাপ। আজকের মানুষ শয়তানের দ্বারা এতটাই কলুষিত: তারা পাপের সমাদর করে ও অধর্মকে ভালোবাসে; পৃথিবী হিংসা ও ব্যাভিচারে পূর্ণ, এবং রাজপথে ও গলিতে সর্বত্রই কারাওকে বার, ফুট ম্যাসাজ পার্লর, হোটেল, এবং ডান্স ক্লাব দেখা যায়। এইসব স্থান দুর্বৃত্তি ও উচ্ছৃঙ্খলতায় পূর্ণ। প্রত্যেকেই পান-ভোজন, তামাসা ও দৈহিক সুখের জন্য বাঁচে। এরা চুড়ান্তভাবে দুর্নীতিপরায়ণ। মানুষে মানুষে কোনো ভালোবাসা নেই, কিন্তু প্রত্যেকেই শঠ, লড়াই করে এবং সামাজিক মর্যাদার জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। এরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ও একে অন্যকে ঠকায়, এমনকি অর্থ ও মুনাফার র জন্য মারামারি পর্যন্ত করে। সমস্ত মানবজাতি শয়তানের আওতায় বাস করে এবং কেউ কোনো সদর্থক কিছু ভালোবাসে না এবং আলো চায় না, বা ঈশ্বরের করুণা ও মুক্তি পাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে না।এমনকী বিশ্বাসীরাও পাপ করা ও পাপ স্বীকার করার আবর্তে ঘুরতে থাকে এবং প্রভুর শিক্ষার প্রতি সৎ থাকতে পারে না। তারা এমন কি জাগতিক ধারা অনুসরণ করে এবং দৈহিক সুখের পথ গ্রহণ করে। যদিও তারা জানে যে তারা পাপের মধ্যে বাস করছে তবু পাপের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে পারে না—তাদের হৃদয় ঈশ্বরের থেকে বহু দূরে বিক্ষিপ্ত। এই চরম পর্যায়ে কলুষিত হয়ে সমগ্র মানবজাতি কি বহু আগেই সেই মাত্রায় পৌঁছে যায়নি যাতে তাদের ধ্বংস হওয়া উচিত।
একের পর এক বিপর্যয় ঘটে চলেছে, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা যে আমরা তাঁর সমীপে এসে পরিতাপ করি। তিনি চান প্রত্যেকেই অনুতপ্ত হোক এবং তিনি কাউকেই ধ্বংস করতে চান না। দু’হাজার বছর আগে প্রভু যীশু বলেছিলেন, “অনুতাপ কর: কারণ স্বর্গরাজ্য সমাগত” (মথি ৪:১৭)। এই মুহূর্তে তোমরা কেউ কেউ বলতে পারো, “অবিশ্বাসীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না এবং সম্ভবত অনুতাপও করতে পারে না। তবে, প্রভুতে বিশ্বাস স্থাপন করার পরে আমরা অনেক সময়েই প্রার্থনা করার সময় তাঁর সামনে তীব্রভাবে কাঁদি। আমরা অতীতের পাপ স্বীকার করি এবং ভবিষ্যতে আর কোনো খারাপ কাজ করব না বলি। আমরা অন্যের প্রতি সহনশীল ও ধৈর্যশীল হতে পারি। আমরা সেবামূলক কাজে দান করতে পারি, অনুদান দিতে পারি এবং অন্যের সাহায্য করতে পারি, এমনকি সমস্ত সময় প্রভুর জন্য শ্রম দিতে ও কাজ করতে পারি, এবং যদি আমাদের গ্রেফতার ও কয়েদ করাও হয় তাহলেও আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। এ-ই কি সত্যিকারের অনুতাপ নয়? আমরা যদি দৃঢ়ভাবে এই অনুশীলন করি তাহলে প্রভু আমাদের রক্ষা করবেন ও বিপর্যয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে বাঁচাবেন।” কিন্তু সত্যিই কি তাই? প্রভু যীশু একসময় বলেছিলেন, “পাপ যে করবে সে-ই পাপের ক্রীতদাস। পরিবারে ক্রীতদাসের স্থান চিরস্থায়ী নয় কিন্তু পুত্রের স্থান চিরকালের” (যোহন ৮:৩৪-৩৫)। ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনের পর আমরা বিনয়ী এবং ধৈর্যশীল হতে পারি, অন্যের সাহায্য করতে পারি এবং ত্যাগ করতে পারি, নিজেকে উৎসর্গ এবং আত্মব্যয় করতে পারি, ধর্মবাণী প্রচার করতে পারি, প্রভুর সাক্ষ্য বহন করতে পারি, এবং বাহ্যিক আচরণ ভালো করতে পারি। তবে, যা আমরা অস্বীকার করতে পারি না তা হল, আমাদের সেই দূষিত প্রবণতাগুলি যা আমাদের অন্তরে থাকে, যেমন ঔদ্ধত্য, শঠতা, অনমনীয়তা, দুর্নীতি ও পাপাচার, তার পরিশুদ্ধি হয়নি এবং আমরা এখনো যে কোনো সময় পাপ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ভালো করেই জানি যে প্রভু চান যে আমরা সৎ থাকি, কিন্তু আমাদের প্রবঞ্চক প্রকৃতির বশবর্তী হয়ে যখনই আমাদের স্বার্থে কোনো আঘাত আসে আমরা মিথ্যা বলা ও শঠতা থেকে বিরত থাকতে পারি না; আমাদের প্রবঞ্চক প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে আমরা অন্যকে দিয়ে সেই কাজই করিয়ে নিতে চাই যা আমরা করতে বলি; তারা তা না করলে আমরা ক্রুদ্ধ হই এবং তাদের ভাষণ দিই, এবং যখন বিপর্যয় ও পরীক্ষার সময় আসে তখন নালিশ করি ও প্রভুকে দোষ দিই। এ হল সামান্য কয়েকটি উদাহরণ। আমাদের পাপ আগাছার মতো, কেটে ফেলার পরমুহূর্তে আবার গজিয়ে ওঠে। আমরা প্রতিদিন প্রার্থনার সময় তীব্র ক্রন্দন করলেও আমরা বদলাই না। এ কি আদৌ সত্যিকারের অনুতাপ? কেই বা নিশ্চিত বলতে পারে যে ঈশ্বর এ হেন ব্যক্তিকে বিপর্যয়ের সময় রক্ষা করবেন? সত্যিকারের অনুতাপ তখনই হয় যখন কারোর শয়তান কর্তৃক দূষিত স্বভাব সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধিকৃত ও পরিবর্তিত হয়। যখন তারা আর খারাপ কাজ, পাপাচার ও ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে না। এটা হয় যখন তারা সত্যিই ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও ঈশ্বরের উপাসনা করে। শুধুমাত্র এই ধরণের মানুষই ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ও আশীর্বাদের যোগ্য এবং স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। ঠিক যেমন বাইবেলে বলা হয়েছে, “অতএব তোমরা পবিত্র হও, কারণ আমি পবিত্র” (লেবীয় পুস্তক ১১:৪৫)। “জীবন-তরুর অধিকার লাভের জন্য এবং দ্বারপথে নগরে প্রবেশ করার জন্য যারা নিজেদের বসন ধৌত করে, তারাই ধন্য” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৪)।
তাহলে কীভাবে আমরা সত্যকারের অনুতাপ সাধন করব? প্রভু যীশু একদা বলেছিলেন, “আমার এখনও অনেককিছুই তোমাদের বলার আছে, কিন্তু এখন তোমরা সেগুলো বহন করতে পারবে না। সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনি তোমাদের সকল সত্যের পথে পরিচালিত করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছুই বলবেন না, যা তিনি শুনবেন শুধুমাত্র তা-ই বলবেন এবং সমস্ত ভাবী ঘটনার কথা তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন” (যোহন ১৬:১২-১৩)। “বিচারের কাল সমাগত, ঈশ্বরের আপনজনদের দিয়েই তা হবে শুরু” (১ পিতর ৪:১৭)। “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ, সেই সত্যের দ্বারা তুমি তাদের শুচিশুদ্ধ কর” (যোহন ১৭:১৭)। প্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে অন্তিম দিনগুলিতে তিনি ফিরে আসবেন, যে তিনি অনুগ্রহের যুগের থেকেও আরো অধিক ও উচ্চতর সত্য কথন করবেন এবং তিনি মানুষের বিচারের ও শুদ্ধিকরণের জন্য একটি মঞ্চ নির্মাণ করবেন। এসব করা হবে যাতে আমরা পাপের বাঁধন থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত হতে পারি এবং শুদ্ধ ও পরিবর্তিত হতে পারি। যে কাজ প্রভু যীশু অনুগ্রহের যুগে করেছিলেন তা হল পরিত্রাণের র কাজ, মানুষ তার ওপর আস্থা রেখে পাপমুক্ত হতে পারত। তবে মানুষ তাদের পাপী প্রকৃতি থেকে মুক্ত হয়নি। কেবলমাত্র অন্তিম দিনগুলিতে ঈশ্বরের বিচারের কাজকে স্বীকার করে, আমাদের দূষিত প্রবণতাগুলিকে শুদ্ধ ও পরিবর্তিত করার মাধ্যমে এবং কখনো পুনরায় পাপ না করে, গর্হিত কাজ না করে বা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ না করেই আমরা সত্যিকারের অনুতাপ করতে পারি। শুধুমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বরের সুরক্ষা লাভ করব ও বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাব।
প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন। তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতিভূ। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর—অন্তিম দিনগুলির খ্রীষ্ট—প্রভু যীশুর উদ্ধারের কাজের ভিত্তিতে বিচারের কাজ ঈশ্বরের গৃহ থেকে শুরু করেছেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেন, “অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে শেখানোর জন্য, মানুষের উপাদান প্রকাশ করার জন্য এবং মানুষের কথা ও কাজের বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন সত্য ব্যবহার করেন। এই বাক্যে বিভিন্ন সত্য অন্তর্ভুক্ত থাকে…। তাঁর বিচারকার্যের সময়, ঈশ্বর কেবলমাত্র কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে মানুষের প্রকৃতি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন না; তিনি দীর্ঘমেয়াদে তা অনাবৃত করেন, মোকাবিলা করেন এবং তাদের অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন করেন। অনাবৃতকরণ, মোকাবিলা এবং অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তনের এই সমস্ত ভিন্ন পদ্ধতি সাধারণ শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায় না, সেই সত্যের দ্বারাই প্রতিস্থাপিত করা যায় যার সম্পর্কে মানুষ একেবারেই অসচেতন। শুধুমাত্র এই ধরনের পদ্ধতিকেই বিচার বলা যেতে পারে; শুধুমাত্র এই ধরনের বিচারের মাধ্যমেই মানুষ ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হতে পারে, তাঁর সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হতে পারে, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই বিচারের কাজই প্রতিফলিত করে ঈশ্বরের আসল চেহারা সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি, এবং তার নিজের বিদ্রোহের সত্য। বিচারের কাজ মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা, তাঁর কাজের উদ্দেশ্য এবং দুর্বোধ্য রহস্য সম্পর্কে অনেক বেশি করে বোঝার সুযোগ দেয়। এটি মানুষকে নিজের ভ্রষ্ট সারসত্য এবং সেই ভ্রষ্টাচরণের মূল চিনতে ও জানতে শেখায়, এবং সেইসাথে মানুষের কদর্যতা আবিষ্কার করতে শেখায়। এই সমস্ত প্রভাব বিচারের কাজের মাধ্যমে প্রতিভাত হয়, কারণ এই কাজের সারমর্ম হল ঈশ্বরের সত্য, পথ এবং জীবনকে তাঁর অনুগামীদের কাছে উন্মুক্ত করার কাজ” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, খ্রীষ্ট সত্যের দ্বারাই বিচারের কাজ করেন)।
শয়তানি প্রবৃত্তির প্রতিবন্ধকতা থেকে আমাদের মুক্ত করার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সেই সব সত্য উদ্ঘাটন করবেন যা আমাদের পরিশুদ্ধ করবে ও সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করবে। তিনি ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের ব্যবস্থাপনার রহস্য মোচন করবেন; তিনি পৃথিবীর দুর্নীতির উৎস উদ্ঘাটন করবেন, এবং শয়তানের দ্বারা মানুষের কলুষিত হওয়ার মূলরূপ ও সত্য উদ্ঘাটন করবেন। ঈশ্বরের কথার বিচারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি আমরা কী গভীরভাবে শয়তানের দ্বারা কলুষিত। ঔদ্ধত্য, শঠতা, অনমনীয়তা, দুষ্টত্ব, অসচ্চরিত্রতা—আমাদের জীবনযাপনে কোথাও মানবিকতার আভাস মাত্র নেই, ফলে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের বিরক্তি ও ঘৃণার উদ্রেক হয়। একই সঙ্গে আমরা জানতে পারব ঈশ্বরের ন্যায়নিষ্ঠ স্বভাব এবং তিনি কোনো অপরাধ সহ্য করেন না। আমরা বুঝতে পারব যে আমরা সর্বদাই আমাদের শয়তান নিয়ন্ত্রিত দূষিত চরিত্র নিয়ে বাঁচি ও আমরা যদি সত্যের অনুশীলন না করি তাহলে ঈশ্বর অবশ্যই আমাদের ঘৃণা ও পরিত্যাগ করবেন। শুধুমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বরের সামনে প্রণত হব ও অনুতাপ করব। আমরা আমাদের পাপকে ঘৃণা করব ও ঈশ্বরের কথা মতো বাঁচতে চাইব। শরীরি চাহিদাকে ক্রমশঃ ত্যাগ করে ও সত্যের অনুশীলন করে আমাদের দূষিত চরিত্র কলুষমুক্ত ও পরিবর্তিত হবে। আমরা আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না এবং ঈশ্বরের কাছে সৎভাবে আত্মসমর্পণ করব ও তাঁকে শ্রদ্ধা করব। শুধুমাত্র এইরকম মানুষেরই সত্যিকারের অনুতাপ হয় এবং ঈশ্বরের দ্বারা তারা সুরক্ষিত হবে ও বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাবে।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আবির্ভাব হয়েছে এবং তিনি কাজ শুরু করেছেন ৩০ বছর আগে। ধর্মবাণীর কাজ বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিস্তৃত হয়েছে, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের লক্ষ লক্ষ কথা অনলাইনে বহুদিন ধরেই প্রকাশিত হয়েছে। এইসব কথা ২০টির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে; তারা সাক্ষ্য বহন করছে ও সমস্ত মানবজাতির কাছে উন্মুক্ত আছে। এই চরমতম অন্ধকার ও দুর্নীতিপরায়ন সময়ে খ্রীষ্টের উচ্চারিত সত্যগুলি সত্যিকারের আলোর মতো, যেন পূর্ব থেকে পশ্চিমে বজ্রের চমক প্রসারিত হচ্ছে। তারা সমস্ত মানবজাতির কাছে প্রত্যক্ষ: ঈশ্বর আবির্ভূত হয়েছেন এবং প্রভু যীশু ফিরে এসেছেন। তিনি সত্য প্রকাশ করেন মানুষকে পরিশুদ্ধ ও রক্ষা করতে, এবং মানুষের পূর্ণ মুক্তির একমাত্র উপায় ঈশ্বরকে স্বীকৃতি দেওয়া। তবে মানবজাতি শয়তানের দ্বারা গভীরভাবে দূষিত। সত্যকে কেউ ভালোবাসে না। মানুষ শুধুমাত্র পাপের সুখ আকাঙ্খা করে। তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিগত দিনের কাজ অনুসন্ধান করতে চায় না বা অন্তিম দিনে তাঁর বিচার ও ভৎর্সনা স্বীকার করতে চায় না। পরিবর্তে ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে মানুষের মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে রয়েছে এক ধারণা, এবং কেউ কেউ এমনকি খোলাখুলিভাবে অন্তিম দিনগুলিতে ঈশ্বরের কাজের প্রতিরোধ ও নিন্দা করে। অনুতাপের চিন্তা ছাড়াই প্রত্যেকে পাপে বাস করে। সামান্য সংখ্যক মানুষই সত্য ও আলোকের আকাঙ্খা করে। যে বিপর্যয় আজ আমরা দেখছি তা মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের শেষতম সতর্কতা, তাঁর অন্তিম সাবধান-বাণী। তদুপরি এগুলি ঈশ্বরের পরিত্রাণ। শুধুমাত্র ঈশ্বরের সামনে অনুতাপ করতে এসেই আমরা বিপর্যয় থেকে ঈশ্বরের সুরক্ষা অর্জন করতে পারি।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “একের পর এক সমস্ত রকমের বিপর্যয় ঘটবে; সকল রাষ্ট্র এবং স্থান বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে: মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা এবং ভূমিকম্প সর্বত্র ঘটে চলেছে। এসব বিপর্যয় শুধু দু-এক জায়গায় ঘটছে না, দু-একদিনের মধ্যে শেষও হবে না; বরং, পরিবর্তে সেগুলি এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে প্রসারিত হতে থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে গুরুতর হয়ে উঠবে। এই সময়ে, একের পর এক সমস্ত ধরণের কীটপতঙ্গজাত মহামারী দেখা দেবে এবং সর্বত্র স্বজাতিভক্ষণের ঘটনা ঘটবে। এটাই হল সকল দেশ ও জাতির প্রতি আমার বিচার” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৬৫)। “মানুষ যদি এক উজ্জ্বল আগামীর আশা করে, কোনও রাষ্ট্র যদি আলোকিত এক ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় থাকে, তাহলে মানুষকে ঈশ্বরের প্রার্থনায় নতজানু হতে হবে। স্বীকার করতে হবে নিজের সমস্ত পাপ-কর্ম এবং সে জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এর অন্যথায় মানুষের অদৃষ্ট এবং গন্তব্য অনিবার্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পরিশিষ্ট ২: ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারক)। “আমার অন্তিম কাজের উদ্দেশ্য শুধুই মানুষকে দণ্ড প্রদান নয়, মানুষের গন্তব্যেরও বন্দোবস্ত করা। উপরন্তু, এর উদ্দেশ্য হল সকল মানুষকে দিয়ে আমার কাজ ও আমার নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে স্বীকার করানো। আমি চাই প্রতিটি ব্যক্তি দেখুক যে আমি যা কিছু করেছি তা সঠিক এবং আমি যা কিছু করেছি তা আমার স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ। মানবজাতির সৃষ্টির পিছনে মানুষের কোনও হাত নেই, প্রকৃতির হাত তো আরোই নেই, বরং রয়েছে এই আমারই, সৃষ্টির প্রতিটি জীবকে লালন করি আমিই। আমার অস্তিত্ব বিহনে, মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বিপর্যয়ের অভিশাপ ভোগ করবে। কোনও মানুষই আর কখনও সুন্দর সূর্য ও চন্দ্র, অথবা আলোকময় জগতকে দেখতে পাবে না; মানবজাতি কেবলই হিমশীতল রাত্রি এবং মৃত্যুর ছায়াঘন অসহনীয় উপত্যকার মুখোমুখি হবে। আমিই মানবজাতির একমাত্র পরিত্রাণ। আমিই মানবজাতির একমাত্র আশা এবং, অধিকন্তু, আমারই উপর নির্ভর করে সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্ব। আমি না থাকলে মানবজাতি অচিরেই স্থবির হয়ে পড়বে। আমি ছাড়া, মানবজাতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এবং সমস্ত ধরনের অপদেবতা দ্বারা পদদলিত হবে, তবুও কেউ আমার কথা শোনে না। আমি এমন কাজ করেছি যা অন্য কারোর দ্বারা করা সম্ভব নয়, এবং কেবল আশা করি যে মানুষ কিছু সৎকর্ম করে আমায় প্রতিদান দিক” (বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তোমার নিয়তির জন্য যথাযথ সৎকার্যসমূহ প্রস্তুত করো)।
বিপর্যয়গুলি সারা পৃথিবীতে ক্রমশঃ ভয়ঙ্করতর হয়ে উঠছে, ক্রমশঃ বৃহত্তর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। যারা এতে পতিত হয়েছে তারা পালাতে পারে না, এবং মনে হয় যেন পৃথিবীর অন্তিম দিন শীঘ্রই আমাদের উপর এসে পড়বে। তবে, আমরা জানি ঈশ্বরই আমাদের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সমস্ত বিপর্যয় তাঁরই হাতে আছে। শুধুমাত্র আমরা যদি তাঁর সামনে এসে অনুতাপ করি এবং অন্তিম দিনে তাঁর বিচার ও তিরস্কারকে গ্রহণ করি তাহলেই বিপর্যয় থেকে ঈশ্বরের সুরক্ষা পাওয়ার ও বেঁচে থাকার সুযোগ আসবে। পৃথিবী যেভাবে চলছে তা আমাদের চোখের সামনেই অনাবৃত হচ্ছে। যাদের বাঁচাতে পারেন ঈশ্বর যখন তাদের সকলকে বাঁচিয়ে দেবেন, তিনি এই ভয়ানক বিপর্যয়কে ব্যবহার করবেন এই দুষ্ট প্রকৃতির অস্বচ্ছ পৃথিবীকে ধ্বংস করতে। যখন সেই সময় আসবে, তখন যারা ঈশ্বরের সামনে আসেনি তারা কাঁদতে কাঁদতে ও আর্তনাদ করতে করতে বিপর্যয়ের কবলে ধ্বংস হবে।
সম্পাদকের নোট: এই প্রবন্ধ পড়ার পর কি আপনি বুঝতে পারলেন বিপর্যয় আনার পেছনে ঈশ্বরের অভিপ্রায় কী? এবং এখন কি আপনি ঈশ্বরের দ্বারা বিপর্যয় থেকে সুরক্ষিত থাকার পথ খুঁজে পেলেন? যদি আপনার আর কোনো প্রশ্ন বা বোঝার সমস্যা থাকে তা হলে যে কোনো সময় আমাদের সাইটের চ্যাট ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে আপনাকে স্বাগত।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।