নিশ্চিন্ত চাকরি কী করে ছাড়লাম

31-03-2023

আমার জন্ম এক গরিব, পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ পরিবারে। ছোটবেলায় বাবা আমায় ভালো করে পড়াশোনা করতে বলত, যাতে ভবিষ্যতে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারি আর সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারি। কিন্তু যেমন আশা করেছিলাম তেমন হয়নি। পরপর তিন বছর হাই স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল করি। ফলে ভবিষ্যত নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। সেই সময় অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম, খুব কষ্ট হত। অবশেষে চতুর্থ বছরে রেলওয়ে এঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হই, আর স্নাতক হওয়ার পর, রেলওয়ে বিউরো অফিসে একটা নিশ্চিন্ত চাকরি পাই।

১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে, আমার স্ত্রী আর আমি অন্তিম সময়ের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাজ গ্রহণ করি। পরে, সক্রিয়ভাবে আমার দায়িত্ব পালন আর গির্জার জীবনে অংশগ্রহণ করতে থাকি, ছয় মাস পরে, আমাকে গির্জার নেতৃত্বের দেওয়ার ভার দেওয়া হয়। কিন্তু নেতা হওয়ার পর, সমাবেশে আর আমার দায়িত্ব পালনে বেশি সময় দেওয়ার ফলে কাজের সাথে কর্তব্যের দ্বন্দ্ব বাধে। সমাবেশ যোগ দেওয়া যাতে বাদ না যায় তার জন্য মাসে কয়েকবার ছুটি নিতে হয়। ফলে বেতন কাটার পাশাপাশি, মাসের শেষে আমার বোনাসও হারাই। একদিন বস অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, “তুমি সবেমাত্র এই কাজ শুরু করেছ, ভালো করে কাজ করো, সব সময় ছুটি চাইলে তোমার বেশিরভাগ বেতন কাটা যাবে আর বোনাসও পাবে না, এটা কি বোকামো নয়? তোমার জন্য যথেষ্ট করেছি, কিন্তু সব সময় ছুটি চাইলে তোমার পদোন্নতি করা কঠিন হয়ে যাবে।” পরে, আবার ছুটি চাওয়ার সময় খুব দ্বিধা বোধ করলাম। ভাবলাম, “এখানে বস আমাকে সুনজরে দেখে। সব সময় ছুটি নিলে তার মনে আমার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মাতে পারে, তাহলে পদোন্নতি পাওয়া কঠিন হবে। আর ছুটি নিলে চলবে না, নিলে বস আমার উপর খুশি হবে না।” কিন্তু তখন ভাবলাম, গির্জার নেতা হিসেবে আমি সমাবেশে না গেলে, গির্জার কাজ আর আমার ভ্রাতা-ভগিনীদের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারব না, আর গির্জার কাজও ভালোভাবে করতে পারব না। তাই খুব দ্বন্দ্বে ছিলাম। এরপর, বেশ কয়েকবার কাজে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও, এই নিয়ে গভীর অপরাধবোধ হত।

একবার, আমার এক ঊর্ধ্বতন নেতা আমাকে সহকর্মীদের সভা সম্পর্কে জানায়, তখন আবার দ্বন্দ্বে পড়ি, তাই ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। তারপর, ঈশ্বরের বাণীর একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। “ঈশ্বর মানুষের মধ্যে যে কাজ করেন, তার প্রতিটি ধাপে, বাহ্যিকভাবে মনে হয় তা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ যেন তা মানুষের আয়োজন এবং মানুষের হস্তক্ষেপেই হচ্ছে। কিন্তু অন্তরালে, কাজের প্রতিটি ধাপে, এবং যা কিছু ঘটছে সেই প্রতিটি ঘটনাই ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের বাজি এবং এ জন্য প্রয়োজন ঈশ্বরের প্রতি নিজ সাক্ষ্যে মানুষের অটল থাকা। উদাহরণ হিসাবে ধরা যায়, ইয়োবের যখন বিচার চলছিলো: নেপথ্যে শয়তান বাজি ধরেছিলো ঈশ্বরের সঙ্গে এবং ইয়োবের যে পরিণতি তা হয়েছিলো মানুষের কাজে এবং হস্তক্ষেপে। ঈশ্বর তোমাদের ভিতরে যে কাজ করেন তার নেপথ্যের প্রতিটি ধাপেই চলে শয়তানের সঙ্গে ঈশ্বরের লড়াই—সব কিছুর অন্তরালেই চলে এই যুদ্ধ। … প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে তার প্রয়াসের জন্য মূল্য দিতে হয়। প্রকৃত কষ্টভোগ ছাড়া মানুষ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে না; এমন কি তারা ঈশ্বরের সন্তুষ্টির কাছাকাছিও আসে না, শুধুই ফাঁকা বুলি আওড়ায়! এইসব নিষ্ফলা বাক্যে কি ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন? আধ্যাত্মিক জগতে যখন শয়তান এবং ঈশ্বরের দ্বন্দ্ব চলে, তখন কী ভাবে তুমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবে এবং তাঁর প্রতি সাক্ষ্যে অবিচল থাকবে? তোমার জানা উচিত, যা কিছুই ঘটে তার প্রতিটিই এক মহান বিচার এবং প্রতিটি সময়েই ঈশ্বরের প্রয়োজন তোমার সাক্ষ্যের। যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হয় এগুলি গুরুত্বহীন, কিন্তু যখন এগুলি ঘটে তখনই সেগুলি দেখায় যে ঈশ্বরকে তুমি ভালোবাসো কি না। যদি তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসো, তা হলে তাঁর প্রতি সাক্ষ্যে তুমি অবিচল থাকবে এবং তাঁর প্রতি তোমার ভালোবাসা যদি বাস্তবে প্রয়োগ না করো, তা হলে তা প্রমাণ করে যে তুমি সেই মানুষ নও যে সত্যকে বাস্তবায়িত করে, তোমার মধ্যে সত্য নেই, তোমার মধ্যে প্রাণ নেই, তুমি আবর্জনা মাত্র!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরকে ভালোবাসাই প্রকৃত ঈশ্বর-বিশ্বাস)। ঈশ্বরের বাণী পড়ে বুঝলাম যে উপরে উপরে, আমরা প্রতিদিন কত মানুষের সংস্পর্শে আসি, কিন্তু এর পিছনে আছে ঈশ্বরের সঙ্গে শয়তানের বাজি, আমাদের সাক্ষ্যে অটল থাকতে হবে। যখন ইয়োবেপরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল, তখন সে রাতারাতি তার সমস্ত সম্পদ হারিয়েছিল, যদিও আপাতভাবে ডাকাতরা তার সম্পত্তি চুরি করেছিল, কিন্তু এর পিছনে ছিল শয়তানের প্রলোভন, কিন্তু ইয়োবেকে তার সাক্ষ্যে অটল থাকতে দেখে শয়তান লজ্জায় চলে গিয়েছিল। আমার সভার সাথে কাজের সময়ের সংঘাত আসলে ছিল আধ্যাত্মিক লড়াই। আপাতদৃষ্টিতে আমার বস আমার পরোয়া করত আর আমার পদোন্নতি চাইত, কিন্তু আসলে এর পিছনে ছিল শয়তানের কারসাজি। শয়তান খ্যাতি আর সৌভাগ্যের লোভ দেখিয়ে আমাকে শুধু কাজ আর অর্থ উপার্জনের দিকে ছোটাতে চেয়েছিল। ঈশ্বরের সাথে আমার স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করে, আমাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, যাতে সভায় যোগদান আর নিজের দায়িত্ব পালন, কোনোটারই সময় না পাই। এতে শয়তানের খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। এই ভেবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, “শয়তানের ফাঁদে পড়ব না, সভায় যোগ দেব, আপনার বাণী নিয়ে আলোচনা করব, আপনার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখব, আর শয়তানের ষড়যন্ত্র কখনই সফল হতে দেব না।” পরে, আমার বসের কাছে সাহস করে ছুটি চেয়ে সহকর্মীদের সভায় যোগদান করি।

কিন্তু গির্জার কাজ যত বাড়তে থাকল, ততই অনেক কিছু তৎক্ষণাৎ সাজিয়ে-গুছিয়ে বাস্তবায়িত করতে হত, আর আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে গেলেই ছুটি নিতে হত। সেই সময় খুব অন্তর্দ্বন্দ্ব অনুভব করেছি, অনেকবার সেটা কাটিয়ে উঠতেও পারিনি, ফলে গির্জার কাজে প্রভাব পড়ত। মাঝে মাঝে ভাবতাম কাজটা ছেড়ে দেওয়া উচিত, যাতে আমার জন্য গির্জার কাজে দেরি না হয়, কিন্তু এই চিন্তাও হত যে সেটা করলে আমার ভবিষ্যত ভালো হবে না। কাজটা এত ভালো ছিল যে ছাড়তে মন চায়নি, মনে হচ্ছিল যেন একটানা আমার ভিতর সংগ্রাম চলছে। বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বললাম যে চাকরি ছেড়ে দিতে চাই, আর কী করতে চাই তা-ও জানালাম। বললাম, “কাজটা ছেড়ে দিতে মন চাইছে না। এই চাকরি পেতে অনেক বছর ধরে কঠোর পড়াশোনা করেছি, আর বেতনও অনেক বেশি। ছেড়ে দিলে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে কী ভাববে? মা-বাবা জানতে পারলে রাগ করবে। তাছাড়া কাজটা ছেড়ে দিলে, আমরা ভবিষ্যতে বাড়ি কিনতে পারব না, বাকি জীবনটা হয়তো গরিব থেকে যাব। কিন্তু এখন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অনেক বাণী পড়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পেরেছি। ভ্রাতা-ভগিনীরা আমাকে গির্জার নেতা হিসেবে বেছেছে। আমার কাজের কারণে গির্জার কাজে দেরি করা মানে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করা নয় কি?” আমার কথা শুনে স্ত্রী আমাকে ঈশ্বরের কাছে আরও প্রার্থনা করতে আর নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে বলল। সেই রাতে এপাশ-ওপাশ করছিলাম, ঘুমতে পারিনি, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে আমাকে পথ দেখাতে বললাম। একদিন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই বাণী পড়লাম, “কারা প্রকৃতপক্ষে এবং সম্পূর্ণভাবে নিজেদের আমার জন্য ব্যয় করে পারে, এবং আমার জন্য নিজেদের সকল কিছু উৎসর্গ করতে পারে? তোমরা সকলেই উদ্যমহীন; তোমাদের চিন্তা বহুধা-বিক্ষিপ্ত, গৃহ, বহির্বিশ্ব, খাদ্য ও পোশাক-আশাক নিয়েই তোমাদের যত চিন্তা। তুমি এখানে আমার সম্মুখে রয়েছ, আমার জন্য কর্ম করছ, এই সত্যিটা সত্ত্বেও, মনের গভীরে এখনো তুমি বাড়িতে থাকা স্ত্রী, সন্তান ও পিতা-মাতার কথা চিন্তা করছ। এই সকল বস্তু কি তোমার সম্পত্তি? তুমি কেন এগুলির দায়িত্ব আমার হস্তে অর্পন করছ না? তোমার কি আমার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস নেই? নাকি তুমি এই ভেবে ভীত যে আমি তোমার অনুপযোগী আয়োজন করব? তুমি কেন সবসময় তোমার দেহরূপ পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগো? তুমি সর্বদা প্রিয়জনদের জন্য আকুল কামনা করো! তোমার হৃদয়ে কি আমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আসন আদৌ রয়েছে? তুমি এখনো আমাকে তোমার অন্তরে রাজত্ব করার এবং তোমার সামগ্রিক সত্তাকে অধিকার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বল—এ সকল কিছুই বিভ্রান্তিকর মিথ্যা! তোমাদের মধ্যে কতজন গির্জার প্রতি সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ? এবং তোমাদের মধ্যে কে নিজের কথা না ভেবে আজকের রাজ্যের স্বার্থে ক্রিয়াকলাপ করে চলেছ? এই বিষয়ে খুব সযত্নে চিন্তাভাবনা কোরো(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৫৯)। ঈশ্বরের বাণী প্রকাশ করে যে লোকেদের ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস না থাকলে, তারা নিজেদের ভবিষ্যত আর নিয়তি ঈশ্বরের হাতে তুলে দেওয়ার সাহস পায় না। তারা সব সময় দুশ্চিন্তা করে আর তাদের নিজেদের দৈহিক সুখের পরিকল্পনা করে, এই ভয়ে যে ঈশ্বর তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা করবেন না। এই ধরনের লোকেদের মনে ঈশ্বরের কোনো স্থান নেই। আমারও ঈশ্বরে বিশ্বাস ছিল না, তাই না? সব সময় চিন্তা করতাম যে চাকরি ছেড়ে দিলে আমি আর্থিক সংকটে পড়ে কুল কিনারা পাব না। ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল না। সবকিছুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র উপলব্ধি ছিল না। প্রভু যীশুর এই বাণীর কথা ভেবে দেখলাম, “আকাশের পাখিদের দিকে তাকাও, তারা বোনেও না, কাটেও না, গোলায় ফসলও তোলে না তবুও তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তাদের আহার যোগান। তাদের চেয়ে তোমাদের গুরুত্ব কি বেশী নয়?(মথি ৬:২৬)। “সর্বাগ্রে তাঁর রাজ্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হও। তাহলে এ সবই তিনি তোমাদের জুগিয়ে দেবেন(মথি ৬:৩৩)। প্রায়ই এই স্তোত্রগুলো আওড়াতাম, আর অন্যদের উপদেশ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতাম, কিন্তু যখন আমার সাথে কিছু ঘটল, তখন ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস রাখিনি। ঈশ্বরের বাণী নিয়ে ভাবার পরে, বুঝতে পারলাম যে প্রত্যেকের ভবিষ্যত আর নিয়তি ঈশ্বরের হাতে, আর ঈশ্বর সব সময় উপযুক্ত ব্যবস্থা করেন। ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যারা আন্তরিকভাবে তাঁর শরণে আসে তিনি তাদের সদ্গতি করেন। ঈশ্বরের উপর সেই আস্থা কেন আমার ছিল না? তখনই আমার চাকরি ছেড়ে সঠিকভাবে আমার দায়িত্ব পালন করতে চাইলাম। কিন্তু অফিসে এসে, আমার সহকর্মীদের তাদের বেতন বাড়ানো আর বোনাস সম্পর্কে কথা বলতে দেখে, ইতস্তত করতে লাগলাম, চাকরি ছাড়তে চাইলাম না। জানতাম সত্য পথে চলতে হলে মূল্য দিতেই হবে, তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, আমি যেন কেই সুখের আকাঙ্ক্ষা আর চাকরি ছেড়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারি।

কিছুদিন পরে, একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা আমাকে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় ফেলল। একদিন রাতে, কন্ডাক্টর, ইয়ার্ডমাস্টার আর অন্যদের সাথে ট্রেন কার সংযুক্ত করার কাজ করছিলাম। চলন্ত ট্রেনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, ওয়াকি-টকিতে কন্ডাক্টরকে কার সংযোগের নির্দেশ দিচ্ছিলাম। ট্রেন খুব তাড়াতাড়ি চলছিল। কাজের পদ্ধতি মেনে, যে ট্রেন কারে আমরা সংযোগ করতে যাচ্ছিলাম সেটা থেকে দশটা কার দূরে থাকাকালে গতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু কন্ডাক্টর গতি কমায়নি, তখন অসহায়ভাবে দেখছিলাম যে ট্রেনটা ট্র্যাকে দাঁড়ানো কারে ধাক্কা মারতে চলেছে। গতি এত বেশি ছিল যে কার থেকে লাফ দিতে পারিনি। শুধু সিঁড়ি থেকে যে কারে ছিলাম তাতে ঝাঁপ দিতে পেরেছিলাম। চোখ বন্ধ করে, কারের পাশটা আঁকড়ে ধরলাম যাতে ছিটকে না পড়ি, আর মনে মনে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বারবার ডাকতে লাগলাম। বিকট শব্দে ট্রেনের আর ঐ কারের সংঘর্ষ হল। ঘটনায় কো-কন্ডাক্টরের হাত ভেঙে যায় আর তাকে সেই রাতেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ভয় পেলেও অক্ষত ছিলাম। যতই ভাবছিলাম ততই সেই রাতকে বিভীষিকা মনে হচ্ছিল। রেলওয়ে শান্টিঙের পেশায় অনেক লোকের দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানতাম। কারোর হাত পিষে গেছে, কারো পা পিষে গেছে…। দেখেছি বিপদের মুখে, নিশ্চিন্ত চাকরি আমাকে নিরাপদ রাখতে বা আমার জীবন রক্ষা করতে পারেনি। এই দুর্ঘটনার পর বুঝলাম যে অর্থের পিছনে ছুটলে শুধু সাময়িক দৈহিক আনন্দ পাওয়া যায়, ঈশ্বরের যত্ন আর সুরক্ষা হারানো, তারপর নিজের জীবন হারানোর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না। অর্থ রোজগার করতে গিয়ে আমার জীবনটাই চলে গেলে ভালো চাকরি করে কী লাভ? আমার কাজকে আর আমার দায়িত্বের পথে বাধা হতে দিইনি। ঈশ্বরের বাণী পাথেয় করে জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার যা কিছু সবই ঈশ্বরের কাছে অর্পণ করে, তাঁর সার্বভৌমত্ব আর ব্যবস্থার কাছে নিজেকে সঁপে দিলাম। ঈশ্বরের এই বাণী মনে পড়ল: “এমন একজন হিসাবে যে স্বাভাবিক, এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার অন্বেষী, রাজ্যে প্রবেশ করে ঈশ্বরের লোক হয়ে ওঠাই তোমার প্রকৃত ভবিষ্যৎ, এবং সেই জীবনই পরম মূল্যবান এবং তাৎপর্যপূর্ণ; তোমাদের চেয়ে বেশি আশীর্বাদধন্য আর কেউ নয়। কেন একথা বলছি? কারণ, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তারা শুধু দৈহিক ইচ্ছা তৃপ্ত করার জন্যই বেঁচে থাকে এবং তারা শয়তানের জন্য বাঁচে, কিন্তু এখন তোমরা ঈশ্বরের জন্যই বেঁচে রয়েছ এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উদ্দেশ্যেই জীবনধারণ করছ। সেই কারণেই আমি বলি, তোমাদের জীবন পরম তাৎপর্যপূর্ণ। একমাত্র এই গোষ্ঠীর লোকেরা, যারা ঈশ্বরের দ্বারা নির্বাচিত, তারাই পরম তাৎপর্যপূর্ণপূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম: পৃথিবীর অন্য কেউ এত মূল্যবান ও অর্থবহ জীবন যাপনে সক্ষম নয়(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের নবতম কর্মকে জানো এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করো)। ঈশ্বরের বাণী আমার মনকে নাড়া দিল। সত্যিই তাই। যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে ভালোবাসে, খ্যাতি, সৌভাগ্য বা দৈহিক সুখের পিছনে ছোটে না, তারাই ঈশ্বরের নিমিত্ত জীবনযাপন করে। শুধুমাত্র ঈশ্বরের নিমিত্ত বাঁচলে তবেই সেটা অর্থপূর্ণ জীবনযাপন। ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারণ আর নির্বাচনের সৌজন্যে, ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে কিছু সত্য বোঝার মতো যথেষ্ট ভাগ্যবান আমি ছিলাম, আর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছিলাম। সত্যিই চমৎকার। তখন নিজের ছোট্ট জগতে থেকে অর্থ আর বস্তুগত উপভোগের কামনা ছাড়তে চাইলাম। আমাকে ঈশ্বরের সুসমন্বয়সাধন আর সুব্যবস্থা মেনে, সৃষ্টিশীল সত্ত্বা হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এরপর, ঈশ্বরের বাণীর আরও একটা অনুচ্ছেদ পড়লাম। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “তুমি যা দেখেছ, যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, তা তুমি কীভাবে ছড়িয়ে দেবে সেইসব দীন, দরিদ্র, ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসী মানুষদের মধ্যে যারা ন্যায়পরায়ণতার জন্য ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে আর অপেক্ষা করছে তুমি তাদের পরিচালনা করবে বলে? কোন ধরনের মানুষ তোমার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে? কল্পনা করতে পারো তুমি? তুমি কি তোমার কাঁধের ভার, তোমার উপর অর্পিত কাজ, ও তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? ঐতিহাসিক লক্ষ্য সম্পর্কে তোমার উপলব্ধি কোথায়? পরবর্তী যুগে কীভাবে তুমি মালিক হিসাবে ভালোভাবে কাজ করবে? মালিক হওয়া কী, সে সম্পর্কে কি তোমার প্রগাঢ় অনুভূতি রয়েছে? সকল বিষয়ের মালিককে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে তুমি? তা কি সত্যিই জগতের সকল জীব, সমস্ত জাগতিক বস্তুর মালিক? কাজের পরবর্তী পর্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী পরিকল্পনা আছে তোমার? কতজন মানুষ তোমাকে তাদের পালক রূপে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? তোমার কাজের ভার কি বেশি? ওরা গরিব, অভাগা, অন্ধ, বিভ্রান্ত, অন্ধকারে বিলাপ করছে—পথ কোথায়? আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছে আলোর জন্য, যেন এক উল্কার মতো তা সহসা নেমে এসে দূর করে দেবে অন্ধকারের শক্তিকে যা এত বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার করে এসেছে! কে-ই বা সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে কতটা উদ্বিগ্নভাবে তারা আশা করছে, এবং কীভাবে আকুল হয়ে দিনরাত এর জন্য অপেক্ষা করছে? এমনকি যেদিন সেই আলো চকিতে ছুটে যায়, সেদিনও গভীর যন্ত্রণাক্লিষ্ট এই মানুষগুলো মুক্তি পাওয়ার আশা হারিয়ে বন্দি হয়ে থেকে যায় অন্ধকার কারাকুঠুরিতে। কখন চোখের জল আর ফেলতে হবে না তাদের? এই দুর্বল আত্মাদের দুর্ভাগ্য অপরিসীম যাদের কখনো বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়নি, সুদীর্ঘকাল ধরে তারা এই অবস্থাতেই আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নিষ্ঠুর বন্ধন ও হিমায়িত ইতিহাসের দ্বারা। কে-ই বা শুনেছে তাদের বিলাপের শব্দ? কে প্রত্যক্ষ করেছে তাদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা? কখনও কি তোমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের হৃদয় কতটা দুঃখিত, কতটা উদ্বিগ্ন? যে নিষ্পাপ মানবজাতিকে তিনি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন তাদের এত কষ্ট ভোগ করতে দেখে তিনি কীভাবে সহ্য করবেন? সর্বোপরি, মানুষ হল সেই শিকার যাদের বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এবং যদিও মানুষ আজ পর্যন্ত অস্তিত্বরক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু কে জানতে পারতো যে মানবজাতি দীর্ঘদিন ধরে সেই মন্দ একজনের বিষপ্রয়োগের শিকার হয়ে চলেছে? তুমি কি ভুলে গেছ যে তুমিও সেই শিকারদের মধ্যে একজন? যারা বেঁচে থাকতে পেরেছে, ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসা থেকে তুমি কি তাদের উদ্ধারের জন্য গভীর প্রচেষ্টা করতে চাও না? মানবজাতিকে যিনি আপন রক্ত-মাংসের মতো ভালোবাসেন, সেই ঈশ্বরকে তা পরিশোধ করার জন্য তুমি কি নিজের সমস্ত শক্তি সমর্পন করতে ইচ্ছুক নও? সবকিছু বিবেচনা করার পর, তোমার অসাধারণ জীবন যাপনের জন্য ঈশ্বর তোমাকে ব্যবহার করছেন, এই ব্যাপারটা তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে? একজন ধর্মনিষ্ঠ, ঈশ্বর-সেবক মানুষের অর্থপূর্ণ জীবন যাপনের সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস কি সত্যিই আছে তোমার?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতি তোমার কীভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?)। ঈশ্বরের বাণী পড়ে ঈশ্বর মানুষকে নিয়ে কত ভাবেন, কতটা ভালোবাসেন, সেই সঙ্গে মানুষকে উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর কত ব্যগ্র তা বুঝতে পারলাম। এখন, আমরা অন্তিম সময়ে আছি আর বিপর্যয় বেড়েই চলেছে। ঈশ্বর সত্য প্রকাশ করেন, বিচার করেন আর শাস্তি দেন, যাতে শয়তানের হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার করা যায়। আমার ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে তাঁর পরিত্রাণ গ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছে, এটা ঈশ্বরেরই অনুগ্রহ। কিন্তু অনেকেই ঈশ্বরের আবির্ভাবের জন্য আকুল থাকলেও প্রভুকে স্বাগত জানায়নি, তারা এখনও প্রতারিত, ধর্মজগতের খ্রীষ্টবিরোধী যাজক আর প্রবীণদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাদের ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনে প্রভুকে স্বাগত জানানোর কোনো উপায় নেই। সবাই আমার মতো স্বার্থপর হলে, শুধু দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করলে, সুসমাচার প্রচার না করলে আর ঈশ্বরের কাছে সাক্ষ্য না দিলে, বিপর্যয় এলে উদ্ধার পাবে না আর শাস্তিও পাবে। ঈশ্বরের ইচ্ছার কথা ভেবে বুঝতে পেরেছি, আমার কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বা কোন পথে চলা উচিত। তাই আমার কাজ ছেড়ে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার আর ঈশ্বরের কাজে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক যখন পদত্যাগ করতে চাইছিলাম, তখনই সহকারী স্টেশন ডিরেক্টর হঠাৎ আমাকে দেখতে আসে, কীভাবে উপহার দিতে হয় আর কে আমাকে পদোন্নতি পেতে সাহায্য করতে পারে তা জানায়। সে আমাকে সবকিছু খুব ভালোভাবে বোঝায়। প্রত্যেকে পদোন্নতির সুযোগ পায় না, আর আমার বেতনও অনেক বেড়ে যেত। কিছুক্ষণ আলোচনার পর, আমার কাজ ছেড়ে দেওয়ার সংকল্পের ভিত আবার নড়ে গেল। তার কিছুদিন পরেই আরেকটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আমার চিন্তাভাবনাকে পুরোপুরি বদলে দিল। একদিন, দিনের শিফ্টে, একটা মালবাহী ট্রেন স্টেশনে ঢোকার পরে, সেটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার জুড়তে হত। সেটা করার পর, ব্রেক শুগুলো চাকার নিচে রাখার দায়িত্ব আমারই ছিল। দুপুরের খাবারের বিরতির পরে, ট্রেন ছাড়ার আগে, ব্রেক শু খুলতে ভুলে গেলাম। কন্ডাক্টর চালাতে শুরু করল, আর ব্রেক শু চাকার সাথে যেতে লাগল। সেটা দেখে সে ট্রেনটা সুইচ পেরিয়ে যাওয়ার আগেই থামিয়ে দিল, ফলে ট্রেনটা লাইনচ্যুত হয়নি বা উল্টে যায়নি। সেদিন ঈশ্বর না বাঁচালে ট্রেনটা যদি লাইনচ্যুত হত বা উল্টে যেত, তবে তার পরিণতি কল্পনাও করা যায় না। তখন ভয় পেয়েছিলাম, নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, কেন এমন হল। বুঝতে পারলাম, গির্জার নেতা হিসাবে জানতাম যে আমার চাকরি আমার দায়িত্ব পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা গির্জার কাজকে বেশ প্রভাবিত করেছে, কিন্তু অর্থ আর দৈহিক সুখের লোভে সেসব ছেড়ে দিতে রাজি ছিলাম না, প্রায়ই ঈশ্বরের কাছে শপথ করার পর তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে প্রতারিত করেছি। তখন ঈশ্বরের এই বাণী মনে পড়ল, “তোমরা আমার কাছ থেকে অফুরন্ত অনুগ্রহ লাভ করেছ, এবং তোমরা স্বর্গ থেকে অন্তহীন রহস্য দেখেছ; আমি এমনকি তোমাদের স্বর্গের শিখাও দর্শন করিয়েছি, কিন্তু তোমাদের জ্বালানোর মত হৃদয় আমার ছিল না। তবুও, বিনিময়ে তোমরা আমাকে কতটা দিয়েছ? তোমরা আমাকে কতটা দিতে ইচ্ছুক?(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, তোমরা সকলে চরিত্রের দিক থেকে অত্যন্ত অভব্য!)। বাহ্যিকভাবে যা ঘটেছে তা ভালো নয়, তবে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে এটা আমার জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসা, স্মরণিকা আর সতর্কতা। ঈশ্বর অনেক সত্য প্রকাশ করেছেন, মানুষের পরিণতি আর গন্তব্য দিনের মতো পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি কেবল চান যে আমরা তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা বুঝতে পারি, সঠিকভাবে সত্য পথে চলে সৃষ্ট সত্তার দায়িত্ব পালন করে তাঁর দেওয়া পরিত্রাণ লাভ করি। কিন্তু আমি একরোখা ছিলাম। সব সময় ভাবতাম যে আমার চাকরির উপর নির্ভর করে ভালো থাকতে আর ভালো জীবনযাপন করতে পারি, তাই এটা ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বরের শরণে এসে নিজের কর্তব্য পালন করতে অনিচ্ছুক ছিলাম। এই দুই ভয়ঙ্কর ঘটনা আমাকে পুরোপুরি জাগিয়ে দিয়েছিল। বিপর্যয়ের মুখ থেকে অর্থ কোনোদিন আমার জীবন বাঁচাতে পারে না। স্মরণ করলাম যে প্রভু যীশু বলেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে যে সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারবে না, সে আমার শিষ্য হতে পারবে না(লুক ১৪:৩৩)। এতদিনে প্রভু যীশুর কথার অর্থ সত্যিই বুঝতে পারলাম। যখন আমরা অর্থ আর বস্তুগত ভোগের পিছনে ছুটি, তখন এসবেই মেতে থাকি, আর ঈশ্বরকে সত্যিই ভালোবেসে অনুসরণ করা, ঈশ্বরের হাতে নিজেকে সঁপে, সৃষ্ট সত্তা হিসাবে কর্তব্য পালন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই ধরনের লোকেরা তখনও কায়িক সুখ আর বস্তুজগত কামনা করে বলে তারা ঈশ্বরের অনুগামী হওয়ার অযোগ্য। আমি আর ঈশ্বরের অবাধ্য হতে বা তাঁকে নিরাশ করতে চাইনি। আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব আর ব্যবস্থার কাছে নতজানু হয়ে, সর্বান্তকরণে ঈশ্বরকে অনুসরণ করে, তাঁর জন্য নিজেকে ব্যয় করে, তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলাম। তাই বসকে বললাম যে পদত্যাগ করতে চাই আর শ্রমচুক্তি বাতিল করতে যা কিছু করতে নয় সব করলাম। সেই মুহূর্তে, খুব স্বস্তি হল। মনে হচ্ছিল যেন একটা পাখি খাঁচা থেকে উড়ে গেছে। আমাকে আর ছুটি চাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি, আমার কাজের কারণে গির্জার কাজ প্রভাবিত হচ্ছে সেই চিন্তাও আমার আর ছিল না। এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম।

ছেড়ে দিয়েছি শুনে আমার বাবা খুব রেগে গেল। আমাকে দেখতে এসে বলল, “তোমাকে বড় করার জন্য কত পরিশ্রম করেছি। তোমাকে স্কুলে পড়ানোর জন্য দেনা করেছি। শেষকালে একটা ভালো চাকরি পেয়েও এখন সেটা চাইছ না? ভেবেছ কী? রেলওয়ে বিউরোতে চাকরি পাওয়া দারুণ ব্যাপার। ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে চাইলে করো, কিন্তু তাই বলে চাকরি ছাড়বে কেন? চাকরি না থাকলে তোমার ভবিষ্যতের কী হবে?” বাবার রাগ দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে আছে কীভাবে মা-বাবা আমার পড়াশুনার জন্য টাকা জমিয়েছিল, এই আশায় যে একটা ভালো চাকরি পাব, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে অসামান্য জীবনযাপন করব। আমিও মা-বাবাকে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে গগনচুম্বী ইমারতে নিয়ে আসতে আর ভালো বস্তুগত জীবন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের পথ বেছে নিয়েছিলাম, আর অর্থ কিম্বা বস্তুগত ভোগের পিছনে ছুটিনি, তাই তাদের কাছে ঋণী বোধ করছিলাম। বাবার কথা শুনে কী বলব ভেবে পেলাম না। চোখে জল এসে গেল, তার দিকে তাকাতে সাহস পেলাম না। কিন্তু মনে মনে জানতাম যে আমার সিদ্ধান্তই সঠিক, কারণ অন্তিম সময়ের ত্রাতা আবির্ভূত হয়ে তাঁর কাজ করছেন। তিনি আমাদের এই অন্ধকার আর কদর্য পৃথিবী থেকে উদ্ধার করতে সত্য প্রকাশ করছেন, আর উদ্ধার লাভ করে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের এটাই একমাত্র উপায়। জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে। দৈহিক স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে এই সুযোগ হারাই কীভাবে? কাজের বাঁধনে আটকে, সত্যের অন্বেষণ করা এবং সৃষ্ট সত্তার দায়িত্ব পালন করা থেকে সরে আসব কীভাবে? মনকষ্টে নীরবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম, তিনি যেন আমাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে না দেন। ঈশ্বরের এই বাণী মনে পড়ল। “ঈশ্বর এই জগত সৃষ্টি করেছেন, সেখানে এনেছেন মানুষ নামক এক জীব, যাদের মধ্যে তিনি প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তারপর, মানুষ পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজন লাভ করল, যার ফলে সে আর একা রইল না। যখন থেকে মানুষ এই বস্তুজগতের দিকে চোখ মেলেছে, তার নিয়তি ছিল ঈশ্বরের আদেশের অধীনে অস্তিত্ব বজায় রাখা। ঈশ্বর প্রত্যেক জীবিত সত্তার মধ্যে যে প্রাণ সঞ্চার করেন সেটা তাদের ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সহযোগিতা করে। এই প্রক্রিয়ায়, কেউ বুঝতে পারেনা যে মানুষ ঈশ্বরের পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে; বরং তারা বিশ্বাস করে যে তারা পিতামাতার পরিচর্যাতেই বড় হচ্ছে, আর তাদের বড় হওয়াটা তাদের বেঁচে থাকার সহজাত প্রবৃত্তির কারণে সম্ভব হচ্ছে। এর কারণ হল, মানুষ জানে না যে কার আশীর্বাদে সে জীবন পেয়েছে, তার প্রাণ কোথা থেকে এসেছে, আর এটাতো সে আরোই কম বোঝে যে কীভাবে জীবনের প্রবৃত্তি বিভিন্ন অলৌকিক সৃজন ঘটাতে পারে। সে কেবল এটুকুই জানে যে খাদ্যই তার জীবনধারণের ভিত্তি, তার অস্তিত্বের উৎস তার অধ্যবসায়, আর তার মনে যে সমস্ত বিশ্বাস সঞ্চিত আছে সেই পুঁজির উপরেই তার বেঁচে থাকা নির্ভরশীল। ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও সংস্থানের বিষয়ে মানুষ চূড়ান্তভাবে অচেতন, এবং এভাবেই ঈশ্বর আশীর্বাদস্বরূপ তাকে যে জীবন দিয়েছেন, সেটাকে সে নষ্ট করে ফেলছে…। এই যে মানবজাতিকে ঈশ্বর দিবারাত্র পরিচর্যা করে চলেছেন তার একজন সদস্যও নিজের অন্তর থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা করে না। ঈশ্বর নিজের পরিকল্পনা অনুসারে কেবল মানুষের জন্য কাজই করে চলেন; তাদের থেকে তাঁর কোনো রকমের প্রত্যাশা নেই। তিনি এটা এই আশায় করেন যে, একদিন মানুষ নিজের ঘুমের ঘোর থেকে জেগে উঠবে আর হঠাৎই অনুভব করবে জীবনের মূল্য ও তার অর্থ, ঈশ্বর তাকে যা কিছু দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে কী মূল্য দিতে হয়েছে, আর এটাও বুঝতে পারবে যে ঈশ্বর কী ব্যাকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন মানুষ তাঁর দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করবে(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর হলেন মানুষের জীবনের উৎস)। “সত্যের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে, তোমাকে সত্যের প্রতি নিজেকে প্রদান করতে হবে, তোমাকে সত্যের জন্য অপমান সহ্য করতে হবে, এবং আরও বেশি করে সত্যকে অর্জন করতে তোমাকে আরও বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার করা উচিত। একটি শান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনের স্বার্থে তুমি সত্যকে ছুঁড়ে ফেলে দিও না, এবং ক্ষণিকের আনন্দের জন্য নিজের জীবনের মর্যাদা এবং সততা হারিয়ে ফেলো না। যা কিছু সুন্দর এবং যা কিছু ভালো, সে সব তোমার অন্বেষণ করা উচিত, এবং তোমার জীবনে আরো অর্থবহ পথ অনুসরণ করা উচিত। তুমি যদি এমন অমার্জিত জীবন যাপন করো, এবং কোনো উদ্দেশ্যের অনুসরণ না করো, তাহলে কি তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছ না? এমন জীবন থেকে তুমি কী লাভ করতে পারো? একটি সত্যের জন্য তোমার যাবতীয় দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত, সামান্য ভোগ-বিলাসের জন্য যাবতীয় সত্যকে ত্যাগ করা উচিত নয়। এই ধরনের মানুষের কোন সততা বা মর্যাদা নেই; তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন!(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, পিটারের অভিজ্ঞতাঃ তার শাস্তি ও বিচারের জ্ঞান)। ঈশ্বরের বাণী আমাকে আলোকিত করল। এতদিন ভাবতাম যে মা-বাবা আমাকে বড় করেছে, অনেক কষ্ট করে সঞ্চয় করেছে যাতে আমি পড়াশোনা শেষ করতে পারি, তাই তাদের কথা না শুনে আমার কর্তব্যের জন্য চাকরি ছেড়ে দেওয়া সঠিক প্রতিদান হবে না, কিন্তু আমার এই মত হাস্যকর আর অযৌক্তিক। একমাত্র ঈশ্বরই মানুষের জীবনের উৎস, আমাদের সমস্ত জীবন ঈশ্বরের থেকেই উদ্ভূত। আমাদের যা আছে তা ঈশ্বরের সংস্থান ও আশীর্বাদ। ঈশ্বর ছাড়া আমাদের কিছু নেই। মা-বাবা আমাকে যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মানুষ করেছেন তাও ছিল ঈশ্বরের সার্বভৌম ব্যবস্থা। আমার ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া উচিত। সৃষ্ট সত্তা হিসাবে আমার ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার দায়িত্ব পালন করতে না পারলে, যতই ভালো চাকরি করি আর পরিবারের সাথে ভাল বস্তুগত জীবন উপভোগ করি, তার কোনো মূল্য বা অর্থ থাকবে না। এসব সাময়িক আনন্দ আমাকে সত্য বুঝতে আর সত্য জীবন লাভ করতে দেবে না। তাছাড়া সেটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সামিল, এভাবে তাঁর অনুমোদন পাব না। সত্য লাভের জন্য আমাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। শুধুমাত্র এভাবেই সুচরিত্র আর মর্যাদার সাথে বাঁচতে পারব আর তবেই ঈশ্বরের অনুমোদন পাব। তখন এটা সম্পর্কে যত বেশি ভেবেছি, তত বেশি বুঝেছি। তাই, আবার বাবার কাছে ঈশ্বরের আবির্ভাব আর কাজের সাক্ষ্য দিলাম, তাকে বললাম, ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলে সব সাধনাই বৃথা, সেসবের কোনো মূল্য বা অর্থ নেই। এখন, ত্রাতা মানুষকে উদ্ধার করতে সত্য প্রকাশ করতে এসেছেন, আর শুধুমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, সত্য অন্বেষণ করা, পাপ ত্যাগ করে, আর ঈশ্বরের কাছে প্রকৃত অনুতাপ করলে তবেই মানুষ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে আর ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। যারা ইহজগতের পিছনে ছোটে, তাদের বস্তুগত জীবন যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা বিপর্যয়ে ধ্বংস হবে আর শাস্তি পাবে। কিন্তু যাই বলি না কেন, বাবা তখনও আমার পদত্যাগ মানতে পারেনি, আর শেষ পর্যন্ত রেগে বেরিয়ে যায়।

পরে, বাবা আত্মীয়দের বলেছিল তারা যেন আমায় রাজি করায়। তারা সবাই বলেছিল রেলওয়ে বিউরোর কোনো পদে চাকরি পাওয়া বিশাল ব্যাপার আর পিছনের দরজা দিয়ে টাকা দিয়ে এই কাজ পাওয়া যায় না, আর বলেছিল যে আমি নাকি কুলাঙ্গার। পরিবারের অভিযোগ শুনে বুঝলাম যে শয়তান আমার আত্মীয়দের ব্যবহার করে আমাকে আক্রমণ করছিল আর আমাকে ত্যাগ স্বীকার করে ঈশ্বরের শরণে যেতে বাধা দিচ্ছিল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এই বাণী স্মরণ করলাম, “নিজের ভেতরে তোমাকে আমার সাহসের অধিকারী হতে হবে, এবং যে আত্মীয়পরিজনেরা বিশ্বাসী নয় তাদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তোমাকে নীতিসমূহ মেনে চলতে হবে। তবে যাইহোক, আমার জন্যই, অন্ধকারের কোনো শক্তির কাছে তোমার নতিস্বীকার করলে একেবারেই চলবে না। নিখুঁত পথে চলার জন্য আমার প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করো; শয়তানের কোনো চক্রান্তকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিয়ো না। আমার সম্মুখে হৃদয় নিবেদনের জন্য তোমার সকল প্রচেষ্টা উজাড় করে দাও, এবং আমি তোমায় স্বাচ্ছন্দ্য দেব এবং তোমায় সুখ ও শান্তি এনে দেব(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ১০)। ঈশ্বরের বাণী নিয়ে চিন্তা করার পর আত্মবিশ্বাসী বোধ করলাম, আর সাহস করে আমার পরিবারকে বললাম, “আজ মানুষ কার্যত অর্থ-যশ, মর্যাদার উপাসনা করে। এসবের জন্যই লোকেরা কষ্ট করে, ষড়যন্ত্র করে, একে অপরের সাথে লড়াই করে, এমনকি স্বামী-স্ত্রীরা পরস্পরের সাথে প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতা করে। সবাই এভাবে জীবনযাপন করে, তাই আমরা ভালো আর নিশ্চিন্ত চাকরি পেলেও, আর ভালো বস্তুগত জীবনযাপন করলেও, সত্যিই কি সুখী হওয়া সম্ভব?” সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেছেন, “একের পর এক সমস্ত রকমের বিপর্যয় ঘটবে; সকল রাষ্ট্র এবং স্থান বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে: মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা এবং ভূমিকম্প সর্বত্র ঘটে চলেছে। এসব বিপর্যয় শুধু দু-এক জায়গায় ঘটছে না, দু-একদিনের মধ্যে শেষও হবে না; বরং, পরিবর্তে সেগুলি এক বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে প্রসারিত হতে থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে গুরুতর হয়ে উঠবে। এই সময়ে, একের পর এক সমস্ত ধরণের কীটপতঙ্গজাত মহামারী দেখা দেবে এবং সর্বত্র স্বজাতিভক্ষণের ঘটনা ঘটবে। এটাই হল সকল দেশ ও জাতির প্রতি আমার বিচার(বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, সূচনাকালে খ্রীষ্টের বাক্য, অধ্যায় ৬৫)। ঈশ্বরের বাণী ব্যবহার করে, আমার আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলাম, “এখন, বিপর্যয় বাড়ছে। একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলে তবেই আমরা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাব। ঈশ্বরে আমার বিশ্বাস, সুসমাচার প্রচার আর নিজের দায়িত্ব পালন করা, আমার কাজের চেয়ে হাজার, এমনকি দশ হাজার গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরে আমার বিশ্বাস কোনো বোকামি নয়, যেমনটা তোমরা মনে কর। নোহ যখন সুসমাচার প্রচার করেছিল, তখন লোকেরা বলেছিল, সে পাগল, কিন্তু যখন বন্যা এল, সমস্ত মানবজাতির মধ্যে শুধু নোহের আট সদস্যের পরিবার বেঁচে ছিল। নোহ পাগল বা বোকা ছিল না। সে ছিল সবচেয়ে জ্ঞানী আর ঈশ্বরের সবচেয়ে আশীর্বাদধন্য। আজ মানবজাতির ভ্রষ্টতা আর দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঈশ্বর এই খারাপ আর দুর্নীতিপরায়ণ জাতিকে ধ্বংস করে দেবেন, আর আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপাসনা করলে তবেই উদ্ধার পাব। আজ এই চমৎকার খবর তোমাকে বলছি, এই আশায় যে তুমিও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে। আমাকে বোঝানোর চেষ্টা কোরো না, কারণ ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। সারা জীবন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করব।” একথা বলার পর আমার প্রভুতে বিশ্বাসী আন্ট বলল, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! ভালো যে তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, আর ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করলে ঈশ্বর খুশি হন।” সে অন্যদের বলল, “সে আজ যে পথ বেছে নিয়েছে সেটাই সঠিক পথ। জীবনই গুরুত্বপূর্ণ, অর্থ নয়। আমাদের তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত।” এরপর বাকিরা কিছু বলেনি। দেখে খুব খুশি হলাম। যখন আমি অবিচল থেকে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমার পরিবার লজ্জিত হয়ে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করা ছেড়ে দিল। তখন থেকে, চারপাশের মানুষ আর অবস্থা, আর আমার চিন্তাভাবনা সীমিত করে না আর নিজের দায়িত্বও সব সময় পালন করতে পারি।

পরবর্তীকালে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কাজ এত লোক গ্রহণ করছে দেখে, আমার অনির্বচনীয় আনন্দ হল। যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে চায় তাদের তাঁর ঘরে ফেরানো খুবই অর্থপূর্ণ, আর ঈশ্বরের কাছেও সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক। আমার চাকরি ছেড়ে ঈশ্বরে বিশ্বাসের পথ বেছে নেওয়া, আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত, আমার সুসমাচার প্রচার আর ঈশ্বরকে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে নিজের জীবন ব্যয় আর উৎসর্গ করার থেকে বেশি মূল্যবান আর অর্থবহ আর কিছুই নেই।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

এক চিকিৎসকের অনুতাপ

ডাক্তারি শুরুর পর, আমি সবসময় সদয় এবং পেশাদার হওয়ার জন্য কঠোর প্রয়াস করেছি। আমি মানুষের সাথে ভালো আচরণ এবং সঠিক রোগ নির্ণয় করতাম।...

একজন অর্থের দাসের জাগরণ

আমি যখন ছোটো ছিলাম, আমার পরিবার ছিল দরিদ্র, এবং আমার বাবা-মা আমার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারেননি। তাই আমি স্কুলের খরচ যোগাতে বেড়া তৈরি...

একজন ডাক্তারের পছন্দ

যখন ছোট ছিলাম, আমার পরিবার খুব গরিব ছিল। আমার মা পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী ছিল, সারা বছর ওষুধ খেত, বাবা বহু বছর ধরে গ্রামের বাইরে কাজ করত।...

Leave a Reply

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন