কাহিনী ২: এক প্রকাণ্ড পর্বত, একটি ছোট্ট নদী, এক তুমুল হাওয়া, এবং একটি দৈত্যাকার তরঙ্গ
ছোট্ট একটি নদী ছিল, ইতস্তত এঁকেবেঁকে সেই নদী অবশেষে এক অত্যুচ্চ পর্বতের পাদদেশে এসে পৌঁছলো। পর্বতটি এই ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীর গতিপথ রুদ্ধ করে দাঁড়িয়েছিল, তাই স্রোতস্বিনী তার দুর্বল, মৃদু গলায় পর্বতকে বললো, “দয়া করে আমায় যেতে দাও। তুমি আমার গতিপথের উপর দাঁড়িয়ে আমার এগিয়ে চলার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছো।” পর্বত জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কোথায় যাচ্ছো?” “আমি আমার ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছি”, নদীটি উত্তর দিলো। “ঠিক আছে, এগিয়ে যাও তাহলে, আর আমার উপর দিয়েই বয়ে যাও!” কিন্তু ক্ষুদ্র তটিনীটি ছিল নেহাতই ক্ষীণতনু ও খুবই নবীন, তাই এরকম এক সুবিশাল পর্বতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কোনো উপায় তার ছিল না। নদীটি কেবল সেখানে সেই পর্বতের পাদদেশের বিপরীতেই বয়ে চলল …
ধুলোবালি সাথে নিয়ে পর্বত যেদিকে ছিল সেদিকে ধেয়ে এলো এক প্রবল বাত্যাপ্রবাহ। পর্বতের উদ্দেশ্যে সেই বাতাস গর্জন করে বললো, “আমাকে যেতে দাও!” “কোথায় যাচ্ছো তুমি?” পর্বত জানতে চাইলো। জবাবে বাতাস হুঙ্কার করে জানালো, “আমি পর্বতের ওপাশে যেতে চাই।” “আচ্ছা বেশ, যদি তুমি আমার কটিদেশ ভেঙে ফেলতে সক্ষম হও, তবেই তুমি যেতে পারবে!” বায়ুপ্রবাহ হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে এদিকে গেলো, ওদিকে গেলো, কিন্তু যত তীব্র গতিতেই সে প্রবাহিত হোক না কেন, পর্বতের কোমর ভেঙে এগোতে সে সক্ষম হলো না। বাতাস অবসন্ন হয়ে বিশ্রাম নিতে থামলো—আর পর্বতের অপর দিকে, সেদিককার লোকদের প্রসন্ন করে এক মৃদুমন্দ হাওয়া বইতে শুরু করলো। তা ছিল ওই মানুষদের প্রতি পর্বতের প্রীতিসম্ভাষণ …
তটভূমির উপর দিয়ে, সামুদ্রিক তরঙ্গমালা শান্তভাবে গড়িয়ে গিয়ে প্রস্তরাকীর্ণ সৈকতে গিয়ে ধাক্কা দিলো। হঠাৎ করে, এক দৈত্যাকার ঢেউ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো এবং সারা পথ গর্জন করতে করতে ধাবিত হল সেই পর্বতের দিকে লক্ষ্য করে। “সরে দাঁড়াও!” প্রকাণ্ড জলোচ্ছ্বাসটি চিৎকার করে উঠলো। “তুমি কোথায় যাচ্ছো?” পর্বত প্রশ্ন করলো। নিজের সম্মুখগতি স্তিমিত করতে না পেরে, জলোচ্ছ্বাস গর্জন করে বললো, “আমি আমার এলাকা সম্প্রসারিত করছি! আমি আমার বাহু প্রসারিত করতে চাই!” “তাই হোক, যদি তুমি আমার শিখর অতিক্রম করে যেতে সমর্থ হও, তবেই আমি তোমায় যেতে দেবো।” সেই প্রকাণ্ড ঢেউ কিছু দূর পর্যন্ত পিছু হঠলো, তারপর আরেকবার পর্বতের দিকে ধেয়ে এলো। কিন্তু যত কঠোর প্রচেষ্টাই করুক না কেন, পর্বতের চূড়া টপকে যেতে সে পারলো না। ফলে জলোচ্ছ্বাসটিকে কেবল ধীর গতিতে গড়িয়ে গড়িয়ে আবার সেই সমুদ্রেই ফিরে আসতে হলো …
হাজার হাজার বছর ধরে, সেই কৃশাঙ্গী নদীটি ক্ষীণ ধারায় পর্বত-সানুদেশ ধরে ধীর গতিতে বয়ে চললো। পর্বতের পথনির্দেশ অনুসরণ করে চলতে চলতে, ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীটি তার নিজ আলয়ে ফিরে গেলো, যেখানে সে এক বড়ো নদীর সঙ্গে মিলিত হল, সেই বড়ো নদীটি আবার গিয়ে মিলিত হল সমুদ্রের সাথে। পর্বতের তত্ত্বাবধানের অধীনে, ক্ষীণকায়া তটিনীটি কখনো তার পথ হারিয়ে ফেলেনি। স্রোতস্বিনী ও পর্বত পরস্পরের শক্তিবৃদ্ধি করেছিল এবং একে অপরের উপর নির্ভর করেছিল; তারা পরস্পরকে সবলতর করে তুলেছিল, একে অন্যকে প্রতিহত করেছিল, এবং একত্রে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল।
হাজার হাজার বছর ধরে, সেই তুমুল হাওয়া, তার অভ্যেস মতো, আর্তনাদ করেছিল। এরপরও সে প্রায়শই, তার দমকার মাঝে বালুরাশির বিপুল ঘূর্ণাবর্তকে চক্রাকারে পাক দিতে দিতে, পর্বতের সঙ্গে “সাক্ষাৎ করতে” আসতো। পর্বতকে সে ভীতিপ্রদর্শন করতো, কিন্তু কখনো তার কটিদেশ চূর্ণ করে এগিয়ে যায়নি। বায়ুপ্রবাহ ও পর্বত পরস্পরকে আরো বলীয়ান করে তুলেছিল এবং একে অন্যের উপর নির্ভর করেছিল; একে অপরকে তারা বলশালী করে তুলেছিল, পরস্পরকে প্রতিরোধ করেছিল, এবং একসাথে বিদ্যমান রয়ে গিয়েছিল।
হাজার হাজার বছর ধরে, সেই অতিকায় তরঙ্গ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কখনো স্তব্ধ হয়নি, এবং সে নিরলসভাবে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছিল, ক্রমাগত তার এলাকা সম্প্রসারিত করেছিল। বারংবার সে সগর্জনে পর্বতের দিকে ধেয়ে গিয়েছিল, তবু পর্বত তার জায়গা ছেড়ে তিলমাত্র নড়েনি। পর্বত সমুদ্রের তদারক করেছিল, এবং এইভাবে, সামুদ্রিক জীবজন্তুরা বংশবৃদ্ধি করে সংখ্যায় দ্রুত বেড়ে উঠেছিল। সেই জলতরঙ্গ ও পর্বত একে অপরকে শক্তিশালী করেছিল এবং পরস্পরের উপর নির্ভর করেছিল; তারা একে অন্যকে বলশালী করে তুলেছিল, পরস্পরকে প্রতিহত করেছিল, এবং একত্রে তারা তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল।
এখানেই আমাদের কাহিনী সমাপ্ত। প্রথমে, আমাকে বলো, গল্পটি কী নিয়ে? শুরুতে, এক বিশাল পর্বত, এক ছোট্ট নদী, এক তীব্র বায়ুপ্রবাহ, এবং এক অতিকায় জলোচ্ছ্বাস ছিল। প্রথম অনুচ্ছেদে, ক্ষীণকায়া নদী ও সুবিশাল পর্বতটির ক্ষেত্রে কী ঘটলো? একটি নদী ও একটি পর্বতের বিষয়ে আলোচনাকে আমি বেছে নিয়েছি কেন? (পর্বতের তত্ত্বাবধানে, নদীটি কখনো তার পথ হারিয়ে ফেলেনি। তারা একে অপরের উপর ভরসা রেখেছিল।) তোমাদের কী মনে হয়, পর্বতটি ক্ষুদ্র নদীটিকে সুরক্ষা দিয়েছিল নাকি পথরোধ করেছিল? (সুরক্ষা যুগিয়েছিল।) কিন্তু তা কি নদীটির গতিকে ব্যাহত করেনি? পর্বত ও তটিনী পরস্পরের দেখাশোনা করেছিল; পর্বতটি তটিনীকে সুরক্ষিত রেখেছিল, আবার প্রতিহতও করেছিল। বড়ো নদীর সাথে মিলিত হওয়ার সময় পর্বত নদীটিকে সুরক্ষা যুগিয়েছিল, কিন্তু যে পথে প্রবাহিত হয়ে সে মানুষের জীবনে বন্যা ও বিপর্যয় ডেকে আনতো, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেই পথে তাকে বয়ে যেতে দেয়নি। অনুচ্ছেদটির বিষয়বস্তু কি এটাই নয়? নদীটিকে সুরক্ষা দিয়ে এবং তার পথরোধ করে, পর্বতটি মানুষের ঘরবাড়িকে নিরাপত্তা দিয়েছিল। ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীটি এরপর পর্বতের পাদদেশে বড়ো নদীটির সাথে মিলিত হয়েছিল এবং আরো প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে মিশেছিল। এই নিয়মই কি নদীর অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে না? কীসের দরুন তটিনীটি বড়ো নদীতে ও সমুদ্রে মিলিত হতে সক্ষম হয়েছিল? পর্বতের দরুন নয় কী? তটিনীটি পর্বতের সুরক্ষা ও তার প্রতিরোধের উপর ভরসা রেখেছিল। তাহলে, এটিই মূল বিষয় নয় কি? এর মধ্যে তোমরা কি জলধারার কাছে পর্বতের গুরুত্ব দেখতে পাও? বড়ো বা ছোটো, প্রতিটি পর্বত নির্মাণের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কি তাঁর নিজস্ব উদ্দেশ্য ছিল? (হ্যাঁ, ছিল।) এই সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদটি, যার মধ্যে এক ক্ষীণতনু স্রোতস্বিনী এবং এক প্রকাণ্ড পর্বত ভিন্ন আর কিছু নেই, আমাদের ঈশ্বরের ওই বস্তুদুটির সৃষ্টির মূল্য ও তাৎপর্য অনুধাবন করার সুযোগ দেয়; এটি ওই বস্তুদুটির উপর তাঁর আধিপত্যের মধ্যে নিহিত প্রজ্ঞা ও উদ্দেশ্যকেও আমাদের কাছে প্রদর্শন করে। তাই নয় কি?
কাহিনীর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটি কী নিয়ে? (এক উদ্দাম বায়ুপ্রবাহ এবং সুবিশাল পর্বতটি নিয়ে।) বায়ুপ্রবাহ কি ভালো জিনিস? (হ্যাঁ।) সবসময় নয়—কখনো কখনো বাতাস খুব বেশি প্রবল হয়ে উঠে বিপর্যয় ঘটায়। খুব জোরালো বাতাসের মাঝে তোমাকে যদি দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাহলে তোমার কেমন বোধ হবে? তা বাতাসের শক্তির উপর নির্ভর করবে। এটি তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ের বায়ুপ্রবাহ হলে তা সহনীয় হবে। বড়োজোর, মানুষটি তার চোখ খুলে রাখতে অসুবিধায় পড়বে। কিন্তু বাতাস যদি তীব্রতর হয়ে উঠে এক প্রবল ঝঞ্ঝাবাতে পরিণত হয়, তখন কি তুমি তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে? হবে না। তাই, মানুষের পক্ষে একথা বলা ভুল হবে যে বাতাস সর্বদাই ভালো, বা সবসময়ই খারাপ, কারণ তা বাতাসের শক্তির উপর নির্ভর করে। এখন, এখানে পর্বতের কাজটি কী? তার কাজ বায়ুপ্রবাহের গতিবেগকে পরিস্রুত করে কমিয়ে আনা নয় কি? প্রবল বায়ুপ্রবাহকে পর্বত কীসে নামিয়ে আনে? (এক মৃদুমন্দ হাওয়া।) এখন, যে পরিবেশে মানুষ বসবাস করে, সেখানে অধিকাংশ মানুষ কি প্রবল বায়ুপ্রবাহের মুখোমুখি হয়, নাকি মৃদুমন্দ হাওয়ার? (মৃদুমন্দ হাওয়া।) এটাই কি পর্বত সৃষ্টির পিছনে ঈশ্বরের অন্যতম উদ্দেশ্য, তাঁর অন্যতম অভিপ্রায় নয়? মানুষ যদি এমন একটা পরিবেশে বসবাস করতো যেখানকার বাতাসে বিশৃঙ্খল বালুকণা বাধাহীন ও অপরিশ্রুতভাবে উড়ে বেড়ায়, তাহলে কেমন হতো? উড়ন্ত বালুকণা ও শিলাচূর্ণ অধ্যুষিত এমন এক ভূভাগ কি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যেতো? প্রস্তরখণ্ড উড়ে এসে হয়তো মানুষকে আঘাত করতো, এবং বালুকণা হয়তো তাদের অন্ধ করে দিতো। প্রবল বায়ুপ্রবাহ হয়তো অকস্মাৎ মানুষকে মাটি থেকে শূন্যে তুলে বা বাতাসের মধ্যে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যেতো। হয়তো বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যেতো, এবং সমস্ত রকমের বিপর্যয় ঘটতে পারতো। তারপরেও প্রবল বায়ুপ্রবাহের অস্তিত্বের কি কোনো মূল্য আছে? আমি বলেছিলাম এটা খারাপ, তাই কারো হয়তো মনে হতে পারে যে এর কোনো মূল্য নেই, কিন্তু সত্যিই কি তাই? প্রবল বাতাস একবার মৃদুমন্দ হাওয়ায় পরিণত হয়ে গেলে তখন কি তার মূল্য থাকে না? আবহাওয়া যখন আর্দ্র বা শ্বাসরোধকারী, তখন মানুষের সবচেয়ে বেশি করে কীসের প্রয়োজন? তাদের গায়ের উপর আলতো করে বয়ে যেতে, তাদের তরতাজা ও তাদের মগজকে পরিষ্কার করে তুলতে, তাদের চিন্তনশক্তিকে ধারালো করতে, তাদের মানসিক অবস্থার সংস্কার ও উৎকর্ষসাধন করতে, তাদের প্রয়োজন হয় এক হালকা মৃদুমন্দ হাওয়ার। এখন, ধরো তোমরা সকলে এক ভিড়ে-ঠাসা ও গুমোট বাতাসে পূর্ণ একটা কক্ষে বসে আছো—কোন জিনিসটা তোমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার? (একটা আলতো মৃদুমন্দ হাওয়া।) বাতাস যেখানে ধোঁয়াটে ও অপরিষ্কার সেরকম কোনো জায়গায় গেলে, চিন্তাশক্তি মন্থর হয়ে যেতে পারে, রক্তসঞ্চালন হ্রাস পেতে পারে, এবং মানসিক স্বচ্ছতা কমে আসতে পারে। কিন্তু, একটু বায়ুচলাচল ও বায়ুসঞ্চালন বাতাসকে নির্মল করে তোলে, এবং টাটকা বাতাসে মানুষ অন্যরকম বোধ করে। ক্ষুদ্র নদীটি যদিও বিপর্যয় ঘটাতে সক্ষম ছিল, প্রবল বায়ুপ্রবাহটি যদিও দুর্যোগ ঘনিয়ে আনতে পারতো, কিন্তু পর্বতটি যতক্ষণ সেখানে রয়েছে, সেই বিপদকে সে মানুষের পক্ষে মঙ্গলকর এক শক্তিতে পরিণত করবে। তাই নয় কি?
কাহিনীর তৃতীয় অনুচ্ছেদটি কী নিয়ে? (সুবিশাল পর্বত ও অতিকায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে।) সুবিশাল পর্বত ও দৈত্যাকার জলোচ্ছ্বাস। এই অনুচ্ছেদটির দৃশ্যপট পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সমুদ্রসৈকতে বিন্যস্ত। এই দৃশ্যপটে পর্বত, সামুদ্রিক জলকণা, এবং এক অতিকায় তরঙ্গকে দেখা যাচ্ছে। এই দৃষ্টান্তটিতে তরঙ্গের সাপেক্ষে পর্বতের ভূমিকাটি কী? (এক রক্ষক ও এক প্রতিবন্ধকের।) এটি উভয়ত এক রক্ষক এবং এক প্রতিবন্ধক। এক রক্ষক হিসাবে, সে সমুদ্রটির বিলুপ্তি রোধ করে, যাতে এতে বসবাসকারী জীবজন্তুগুলি বংশবৃদ্ধি ও বিকাশলাভ করতে পারে। এক প্রতিবন্ধক হিসাবে, পর্বতটি সমুদ্রের জলকে প্লাবিত হয়ে বিপর্যয় ঘটাতে দেয় না, ক্ষয়ক্ষতি করা ও মানুষের ঘরবাড়ির ধ্বংসসাধন করা থেকে নিবৃত্ত করে। তাহলে, বলা যায় যে পর্বতটি একই সঙ্গে এক রক্ষক ও এক প্রতিবন্ধকও বটে।
সুবৃহৎ পর্বত এবং ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী, বৃহৎ পর্বত ও প্রবল বাত্যাপ্রবাহ, এবং সুবিশাল পর্বত ও অতিকায় সমুদ্রতরঙ্গের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের এটাই তাৎপর্য; তাদের পরস্পরকে শক্তিশালী ও প্রতিহত করার, এবং তাদের সহাবস্থানের এটাই মর্মার্থ। ঈশ্বরের সৃষ্ট এই বস্তুগুলি তাদের অস্তিত্ত্বে একটি নিয়ম ও একটি বিধানের দ্বারা পরিচালিত হয়। তাহলে, এই কাহিনীসূত্রে ঈশ্বরের কোন কার্যকলাপ তোমরা দেখতে পেলে? সৃষ্টি করার পর থেকে ঈশ্বর কি সকল বস্তুকে উপেক্ষা করে আসছেন? তিনি কি শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই নিয়মকানুন সৃষ্টি করেছিলেন ও সকলকিছুর কার্যরীতির নকশা তৈরি করে দিয়েছিলেন, যাতে তারপর থেকে তিনি সেগুলিকে উপেক্ষা করতে পারেন? এটাই কি ঘটেছিল? (না।) তাহলে সত্যিই কী ঘটেছিল? নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এখনো ঈশ্বরের হাতেই রয়েছে। তিনিই জল, বায়ুপ্রবাহ, এবং তরঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এদের তিনি অনিয়ন্ত্রিত আচরণ থেকে বিরত রাখেন, এবং তিনি এদের ক্ষতিসাধন করা ও মানুষের বসবাসের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা থেকেও নিবৃত্ত করেন। এই কারণেই, মানুষ এই ভূপৃষ্ঠের উপর জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে, বংশবিস্তার করতে, ও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠতে পারে। এর অর্থ, সকলকিছুর সৃজনের সময় ঈশ্বর ইতিপূর্বেই তাদের অস্তিত্বের নিয়মগুলির পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। ঈশ্বর যখন প্রতিটি বস্তু নির্মাণ করেছিলেন, তখনই তিনি এটা সুনিশ্চিত করেছিলেন যে বস্তুটি মানবজাতির উপকার সাধন করবে, এবং বস্তুটির নিয়ন্ত্রণ তিনি নিজের হাতে গ্রহণ করেছিলেন, যাতে তা মানবজাতিকে অসুবিধায় বা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলতে না পারে। ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা যদি না থাকতো, তাহলে জল কি অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত হতো না? বাতাস কি অবাধে বয়ে যেতো না? জল ও বাতাস কি নিয়মকানুন মেনে চলে? ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত না হলে, এদের শাসন করার মতো কোনো নিয়ম থাকতো না, এবং বাতাস সগর্জনে বয়ে যেতো এবং জল অসংযত হয়ে প্লাবন ঘটাতো। জলোচ্ছ্বাস যদি পর্বতের থেকেও উঁচু হতো, তাহলে সাগর কি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারতো? পারতো না। পর্বত যদি জলোচ্ছ্বাসের সমান উঁচু না হতো, তাহলে সমুদ্রের অস্তিত্ব থাকতো না, এবং পর্বতও তার মূল্য ও তাৎপর্য হারিয়ে ফেলতো।
এই কাহিনীদুটির মধ্যে তোমরা কি ঈশ্বরের প্রজ্ঞাকে দেখতে পাও? যাকিছু বিদ্যমান সবই ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন, এবং অস্তিত্ত্বশীল সকলকিছুর উপরেই ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব রয়েছে; এর সমস্তটাই তিনি পরিচালনা করেন এবং তিনি এর সকলকিছুর সংস্থানের যোগান দেন, এবং যাবতীয় কিছুর মধ্যে, অস্তিত্ত্বশীল সমস্তকিছুর প্রতিটি বাক্য ও ক্রিয়াকর্মকে তিনি লক্ষ্য করেন এবং আনুপুঙ্খিকভাবে অবেক্ষণ করেন। একইভাবে, সেইসাথে মানুষের জীবনের প্রতিটি কোণও ঈশ্বর অবলোকন ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এইভাবে, তাঁর সৃষ্টির অভ্যন্তরে বিদ্যমান সমস্তকিছুর প্রতিটি খুঁটিনাটি তথ্য ঈশ্বর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন, প্রতিটি বস্তুর কাজ, তার প্রকৃতি, এবং তার উদ্বর্তনের নিয়মাবলী থেকে শুরু করে তার জীবনের তাৎপর্য ও তার অস্তিত্বের মূল্য পর্যন্ত, এই সবকিছুর আদ্যোপান্তই ঈশ্বরের জানা। সমস্ত বস্তুর সৃষ্টিই করেছিলেন ঈশ্বর—তোমাদের কি মনে হয়, এই বস্তুগুলি যে নিয়মকানুনের দ্বারা পরিচালিত হয় ঈশ্বরের তা অধ্যয়ন করার প্রয়োজন আছে? মানুষের বিষয়ে জানা ও মানুষকে বোঝার জন্য ঈশ্বরের কি মানবীয় জ্ঞান বা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার দরকার আছে? (না।) ঈশ্বরের মতো করে সমস্ত কিছুকে উপলব্ধি করার মতো বিদ্যা ও পাণ্ডিত্যসম্পন্ন একজন ব্যক্তিও কি মানবজাতির মধ্যে রয়েছে? একজনও নেই, ঠিক তো? সমস্তকিছুর জীবনধারণ ও বিকাশের নিয়মগুলি প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করে এমন কোনো জ্যোতির্বিদ বা জীববিজ্ঞানী কি আছে? তারা কি প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ত্বের মূল্য সত্যিসত্যিই প্রণিধান করতে পারে? (না, পারে না।) এর কারণ সকলকিছুই ঈশ্বরের সৃষ্টি, এবং মানবজাতি এই জ্ঞানকে যত বেশি করে বা যত গভীরভাবেই অধ্যয়ন করুক না কেন, কিংবা যত দিন ধরেই তারা একে শেখার প্রচেষ্টা চালাক না কেন, কখনোই তারা ঈশ্বরের দ্বারা যাবতীয় কিছুর সৃষ্টির রহস্য বা উদ্দেশ্যের তল পেতে সক্ষম হবে না। তাই নয় কি? এখন, আমাদের এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে, তোমাদের কি মনে হয় যে তোমরা “ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস” বাক্যবন্ধটির প্রকৃত অর্থের একটি আংশিক উপলব্ধি লাভ করেছো? (হ্যাঁ।) আমি জানতাম যে যখনই আমি এই—ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস—প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করবো, তৎক্ষণাৎ অনেক মানুষ আরেকটি বাক্যবন্ধের কথা ভাববেন: “ঈশ্বরই সত্য, এবং আমাদের সংস্থানের যোগান দিতে ঈশ্বর তাঁর বাক্যকে ব্যবহার করেন”, এবং এই স্তরের ঊর্ধ্বে প্রসঙ্গটির অন্য কোনো অর্থ উপলব্ধি করতে পারবে না। কিছু মানুষ এমনকি এমনও ভাবতে পারে যে ঈশ্বরের দ্বারা মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন, অর্থাৎ প্রাত্যহিক খাদ্য ও পানীয় এবং প্রতিটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের রসদ প্রদান, মানুষের জন্য তাঁর সংস্থানের যোগান হিসাবে পরিগণিত হয় না। এভাবে চিন্তা করে এমন কিছু মানুষ কি নেই? তবু, তাঁর সৃষ্টির পিছনে নিহিত ঈশ্বরের অভিপ্রায়টি কি স্পষ্টই প্রতীয়মান নয়—মানবজাতিকে স্বাভাবিক ভাবে জীবনধারণ ও জীবনযাপনের সুযোগ দান? যে পরিমণ্ডলে মানুষ জীবনধারণ করে ঈশ্বর তার রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং মানবজাতির অস্তিত্ত্ব বজায় রাখার জন্য আবশ্যক সকল জিনিসের তিনি যোগান দেন। উপরন্তু, সকল বস্তুকে তিনি পরিচালিত করেন এবং সেগুলির উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করেন। এই সবকিছুই মানুষকে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার এবং সমৃদ্ধশালী হওয়ার এবং বংশবিস্তার করার সুযোগ দান করে; এই ভাবেই ঈশ্বর সমগ্র সৃষ্টির জন্য ও মানবজাতির জন্য সংস্থানের যোগান দেন। মানুষের যে এই বিষয়গুলি উপলব্ধি ও অনুধাবন করা দরকার তা কি সত্যি নয়? হয়তো কেউ কেউ বলতে পারে, “স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বর বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের থেকে এই প্রসঙ্গটি অনেক দূরবর্তী, এবং এ সম্পর্কে জানতে আমরা আগ্রহী নই কারণ শুধুমাত্র খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা জীবনধারণ করি না, বরং ঈশ্বরের বাক্যকে অবলম্বন করেই আমরা জীবনধারণ করি।” এই উপলব্ধিটি কি যথাযথ? (না।) এটি সঠিক নয় কেন? ঈশ্বর যে বাক্যগুলি উচ্চারণ করেছেন শুধুমাত্র সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই কি তোমরা ঈশ্বরের বিষয়ে এক সম্পূর্ণ উপলব্ধি লাভ করতে পারো? তোমরা যদি শুধুমাত্র ঈশ্বরের কার্য এবং ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তিকেই গ্রহণ করো, তাহলে কি তোমরা ঈশ্বরের সম্বন্ধে এক সম্পূর্ণ উপলব্ধি অর্জন করতে পারো? তোমরা যদি কেবল ঈশ্বরের স্বভাবের এক ক্ষুদ্র অংশ জানো, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এক ক্ষুদ্র অংশ বিষয়েই অবহিত হও, তাহলে কি তোমরা একে ঈশ্বরের বিষয়ে উপলব্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বলে বিবেচনা করবে? (না।) ঈশ্বরের কার্যকলাপ শুরু হয়েছিল তাঁর দ্বারা সকল বস্তুর সৃষ্টির মাধ্যমে, এবং তা আজও অব্যাহত রয়েছে—ঈশ্বরের কার্যকলাপ সর্বকালে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতীয়মান। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র মানুষের একটি গোষ্টীকে ঈশ্বর তাদের উপর কার্য সম্পাদন ও তাদের উদ্ধার করার মানসে মনোনীত করেছেন বলেই তিনি অস্তিমান, এবং এই মানুষগুলি ব্যতিরেকে আর কিছুর সাথেই ঈশ্বরের, তাঁর কর্তৃত্ব ও মর্যাদার, এবং তাঁর কার্যকলাপেরও কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে কি সেই ব্যক্তির ঈশ্বর বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞান আছে বলে গণ্য করা যায়? এই তথাকথিত “ঈশ্বর-জ্ঞানী” মানুষগুলির ঈশ্বরের বিষয়ে কেবল এক একদেশদর্শী উপলব্ধি রয়েছে, যে উপলব্ধি অনুসারে ঈশ্বরের কার্যকলাপকে তারা মানুষের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। এটা কি একটা সত্যিকারের ঈশ্বর-জ্ঞান? এই জাতীয় জ্ঞানসম্পন্ন মানুষগুলি কি ঈশ্বরের দ্বারা সকলকিছুর সৃষ্টি এবং সেগুলির উপর তাঁর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করছে না? কিছু মানুষ এই প্রসঙ্গটির আলোচনায় লিপ্ত হতে চায় না, পরিবর্তে নিজেদের মনেই ভাবে: “সকল বস্তুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব আমি প্রত্যক্ষ করিনি। ধারণাটি খুবই দূরবর্তী, এবং একে প্রণিধান করার কোনো অভিরুচি আমার নেই। ঈশ্বর যা চান তিনি তা-ই করেন, এবং আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি শুধু ঈশ্বরের নেতৃত্ব ও তাঁর বাক্যকে গ্রহণ করি ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার লাভের ও নিখুঁত হয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে। আর কিছুই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সকল বস্তুর সৃষ্টির সময় ঈশ্বর যে নিয়মকানুনের প্রবর্তন করেছিলেন এবং সকল বস্তুর ও মানবজাতির সংস্থান সরবরাহের জন্য যাকিছু তিনি করেন তার সাথে আমার কোনো সংস্রব নেই।” এটি কী ধরনের কথাবার্তা? এটি কি বিদ্রোহাত্মক কাজ নয়? তোমাদের মধ্যে কি এজাতীয় ধারণাসম্পন্ন কেউ রয়েছে? তোমরা না বললেও আমি জানি, তোমাদের মধ্যে অনেকেই এরকম মনোভাব পোষণ করে। এ ধরনের কঠোর নিয়মানুবর্তী লোকগুলি যাবতীয় কিছুকে তাদের নিজস্ব “আধ্যাত্মিক” দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে। ঈশ্বরকে তারা সীমাবদ্ধ রাখতে যায় শুধুমাত্র বাইবেলের মধ্যে, তাঁর উচ্চারিত বাক্যের মধ্যে, আক্ষরিক লিখিত বাক্য-সঞ্জাত বোধের মধ্যে। ঈশ্বরকে তারা আরো বেশি করে উপলব্ধি করতে চায় না এবং তারা চায় না যে অন্য বিষয়ে নিয়োজিত হয়ে ঈশ্বর তাঁর একাগ্রতাকে বহুধাবিভক্ত করে ফেলুন। এ ধরনের চিন্তাধারা শিশুসুলভ, এবং একই সঙ্গে তা অত্যধিক ধর্মনিষ্ঠও বটে। এমনতরো দৃষ্টিভঙ্গি যারা পোষণ করে সেইসব মানুষ কি ঈশ্বরকে জানতে পারে? ঈশ্বরকে জানা এদের পক্ষে খুবই দুষ্কর হবে। আজ তোমাদের আমি দুটি গল্প বলেছি, তারা প্রত্যেকে এক একটি পৃথক আঙ্গিককে উপস্থাপিত করে। সবেমাত্র তাদের সংস্পর্শে আসার পর এগুলিকে তোমাদের নিগূঢ় বা কিছুটা বিমূর্ত মনে হতে পারে, যা অনুধাবন বা উপলব্ধি করার পক্ষে দুরূহ। ঈশ্বরের কার্যাবলী বা স্বয়ং ঈশ্বরের সাথে এগুলির সম্বন্ধ স্থাপন করা কষ্টসাধ্য হতে পারে। তবে, প্রতিটি মানুষের, ঈশ্বরকে জানতে যারা আগ্রহী তাদের প্রত্যেকের, ঈশ্বরের সকল কার্যাবলী এবং সৃষ্টির অভ্যন্তরে ও মানবজাতির মাঝে যাকিছু তিনি করেছেন সেগুলির বিষয়ে সুস্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে অবহিত থাকা উচিত। এই জ্ঞান ঈশ্বরের প্রকৃত অস্তিত্ব বিষয়ে তোমাদের বিশ্বাসকে নিশ্চয়তা প্রদান করবে। একই সঙ্গে তা ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, তাঁর ক্ষমতা, এবং যেভাবে তিনি সকলকিছুর সংস্থানের যোগান দেন সেইসব বিষয়ে তোমদের এক যথাযথ জ্ঞান প্রদান করবে। এই অবগতি তোমায় ঈশ্বরের প্রকৃত অস্তিত্বকে সুস্পষ্টভাবে ধারণার মধ্যে আনার সুযোগদান করবে, এবং এর মাধ্যমে তুমি উপলব্ধি করবে যে তাঁর অস্তিত্ব কোনো কল্পকাহিনী নয়, কোনো কিংবদন্তি নয়, অস্পষ্ট কিছু নয়, কোনো তত্ত্বকথা নয়, এবং নিঃসন্দেহে কোনো প্রকারের আধ্যাত্মিক সান্ত্বনাবাক্য নয়, বরং তা এক বাস্তব অস্তিত্ব। তদুপরি, এর মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে যে সমুদয় সৃষ্টি ও মানবজাতির নিমিত্ত ঈশ্বর সর্বদাই সংস্থানের যোগান দিয়েছেন; এই কাজ ঈশ্বর তাঁর নিজের পদ্ধতিতে এবং তাঁর নিজস্ব ছন্দ অনুসারে নিষ্পন্ন করেন। তাই, ঈশ্বর সকল বস্তুকে সৃষ্টি করে তাদের জীবনধারণের নিয়মকানুন প্রদান করেছিলেন বলেই এই বস্তুগুলির প্রত্যেকেই, তাঁর পূর্বনির্ধারণের অধীনে, তাদের বরাদ্দ কাজকর্ম সম্পন্ন করতে, তাদের দায়িত্ব পূরণ করতে, এবং তাদের নিজস্ব ভূমিকা নির্বাহ করতে সক্ষম; তাঁর পূর্বনির্ধারণের অধীনে, মানবজাতি ও মানবজাতির বসবাসের পরিসর ও পরিমণ্ডলের পরিচর্যার কাজে প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব উপযোগিতা আছে। ঈশ্বর যদি এমন না করতেন এবং মানবজাতির বসবাসের জন্য এজাতীয় একটি পরিবেশ না থাকতো, তাহলে মানবজাতির পক্ষে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বা তাঁর অনুসরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়তো; এই সবকিছুই কেবল শূন্যগর্ভ বাকবাহুল্যে পর্যবসিত হতো। তাই নয় কি?
সুবিশাল পর্বত ও ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীর কাহিনীটির দিকে পুনরায় দৃষ্টিপাত করা যাক। পর্বতের কাজ কী? জীবিত বস্তুসকল পর্বতোপরি বিকশিত হয়, তাই এর অস্তিত্বের সহজাত মূল্য রয়েছে, এবং পর্বত একই সঙ্গে ক্ষুদ্র নদীটিকে প্রতিহতও করে, তার খুশী মতো বয়ে গিয়ে মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনা থেকে নিবৃত্ত করে। তাই নয় কি? পর্বত তার সত্তার নিজস্ব পন্থাতেই অস্তিত্ত্ব ধারণ করে, তার উপরে বিকশিত হতে দেয় বিপুল সংখ্যক জীবিত বস্তুকে—গাছপালা ও তৃণাদি এবং পর্বতগাত্রের অন্যান্য সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের। এছাড়াও সে ক্ষুদ্র জলধারাটির প্রবাহের সম্পূর্ণ গতিপথও নির্দেশ করে—সেই জলধারার জলকে একত্রে সঞ্চিত করে পর্বত সেই জলকে স্বাভাবিকভাবে তার পাদদেশ বরাবর পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে সেই জলধারা হয়তো বড়ো নদী এবং অবশেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এই নিয়মগুলি প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত হয়নি, বরং সৃষ্টির সময় ঈশ্বর বিশেষভাবে এগুলি যথাস্থানে স্থাপন করেছিলেন। প্রকাণ্ড পর্বত ও প্রবল বাত্যাপ্রবাহের ক্ষেত্রে, পর্বতেরও বাতাসের প্রয়োজন হয়। তার উপর বসবাসকারী জীবকুলকে স্নেহস্পর্শ প্রদানের জন্য পর্বতের বায়ুপ্রবাহকে দরকার পড়ে, সেই সাথে ওই প্রবল বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে সে গণ্ডির মধ্যে বেঁধেও রাখে যাতে ওই বায়ুপ্রবাহ স্বেচ্ছাধীনভাবে বয়ে না যায়। একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে ভাবলে, এই নিয়মের মধ্যেই সুবিশাল পর্বতের দায়িত্বটি অঙ্গীভূত হয়ে আছে; তাহলে, পর্বতের দায়িত্ব সংক্রান্ত এই নিয়মটি কি নিজে থেকেই আকারলাভ করেছিল? (না।) এই নিয়ম ঈশ্বরের দ্বারা প্রণীত হয়েছিল। সুবিশাল পর্বতটির নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে এবং প্রবল বায়ুপ্রবাহেরও নিজস্ব দায়িত্ব আছে। এবার, সুবিশাল পর্বত ও অতিকায় তরঙ্গের দিকে চোখ ফেরানো যাক। পর্বতের অস্তিত্ব না থাকলে, ওই জলোচ্ছ্বাস কি নিজে থেকে প্রবাহের একটা অভিমুখ খুঁজে পেতো? (না।) ওই জল প্লাবন ঘটাতো। পর্বত হিসাবে পর্বতের নিজস্ব অস্তিত্বগত মূল্য রয়েছে, এবং সমুদ্র হিসাবে সমুদ্রেরও স্বীয় অস্তিত্বগত উপযোগিতা রয়েছে; কিন্তু, যে পরিস্থিতিতে তারা স্বাভাবিকভাবে একত্রে অবস্থান করতে সক্ষম এবং একে অপরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, সেই পরিস্থিতিতেই তারা পরস্পরকে সীমায়িতও করে—সুবিশাল পর্বত সমুদ্রকে বেঁধে রাখে যাতে তা প্লাবন না ঘটায়, এইভাবে মানুষের বাড়িঘরকে সুরক্ষা দান করে, এবং সমুদ্রকে সীমাবদ্ধ রাখার ফলে সমুদ্র তার মধ্যে বসবাসকারী জীবকুলকে প্রতিপালন করতেও সক্ষম হয়। এই প্রাকৃতিক ভূমিরূপ কি নিজের থেকেই আকারলাভ করেছিল? (না।) এও ঈশ্বরের দ্বারাই সৃষ্ট হয়েছিল। এই চিত্ররূপ থেকে আমরা দেখতে পাই যে সকলকিছুর সৃজনের সময়েই ঈশ্বর পূর্বনির্ধারণ করে দিয়েছিলেন পর্বত কোথায় দাঁড়াবে, নদী কোন পথে প্রবাহিত হবে, প্রবল বাতাস কোন দিক থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করে কোথায় বয়ে যাবে, এবং অতিকায় তরঙ্গের কতখানি উঁচু হয়ে ওঠা সমীচীন। এই সকলকিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে—এগুলি ঈশ্বরের ক্রিয়াকলাপ। এখন কি তোমরা প্রত্যক্ষ করতে পারছ যে সকলকিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের কার্যকলাপ বিদ্যমান? (হ্যাঁ।)
এই বিষয়গুলি আলোচনা করার উদ্দেশ্যটি কী? যে নিয়মগুলির দ্বারা ঈশ্বর সকলকিছুর সৃজন করেছিলেন সেগুলি মানুষকে অধ্যয়ন করানোই কি এর উদ্দেশ্য? এর উদ্দেশ্য কি জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূগোলের প্রতি আগ্রহকে উৎসাহিত করা? (না।) তাহলে উদ্দেশ্যটি কী? উদ্দেশ্যটি হল মানুষকে ঈশ্বরের কার্যাদি বিষয়ে উপলব্ধি করানো। ঈশ্বরের কার্যকলাপের মধ্যে, মানুষ স্থিরনিশ্চিত হতে পারে এবং পরীক্ষা করে দেখতে পারে যে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস। তুমি যদি তা উপলব্ধি করতে পারো, তাহলে সত্যিই তুমি তোমার অন্তরে ঈশ্বরের অধিকৃত স্থানটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে, এবং তুমি প্রত্যয় সহকারে বলতে সক্ষম হবে যে ঈশ্বর হলেন স্বয়ং ঈশ্বর, সেই অদ্বিতীয়, আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তাহলে, সকল কিছুর নিয়মকানুনগুলি জানা এবং ঈশ্বরের কার্যাবলীর বিষয়ে অবগত হওয়া কি তোমার ঈশ্বর-উপলব্ধির পক্ষে উপযোগী? (হ্যাঁ।) কতটা উপযোগী? প্রথমত, একবার ঈশ্বরের কার্যাবলীর বিষয়ে উপলব্ধি অর্জন করে ফেলার পরেও কি তুমি জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ভূগোলের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারো? তখনো কি তুমি সন্দিগ্ধচিত্ত থেকে ঈশ্বর সকলকিছুর সৃষ্টিকর্তা কি না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করতে পারো? তখনো কি তুমি এক গবেষকের হৃদয় নিয়ে ঈশ্বর সকলকিছুর সৃষ্টিকর্তা কি না সে বিষয়ে সংশয়ান্বিত হতে পারো? (না।) যখন তুমি স্থিরপ্রত্যয় হয়েছো যে ঈশ্বর সকলকিছুর সৃষ্টিকর্তা, এবং ঈশ্বরের সৃষ্টির কিছু নিয়মকানুন উপলব্ধি করেছো, তখন তুমি কি তোমার অন্তরে প্রকৃতই বিশ্বাস করবে যে ঈশ্বর সকলকিছুর সংস্থানের যোগান দেন? (হ্যাঁ।) এখানে “সংস্থান” শব্দটির কি কোনো একটি নির্দিষ্ট তাৎপর্য রয়েছে, নাকি এর প্রয়োগ কোনো বিশেষ পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে? “ঈশ্বর সকলকিছুর সংস্থানের যোগান দেন” বাক্যবন্ধটির এক অত্যন্ত প্রশস্ত তাৎপর্য ও পরিসর আছে। ঈশ্বর মানুষকে শুধুমাত্র তাদের প্রাত্যহিক খাদ্য ও পানীয়ের রসদ সরবরাহ করেন না; মানবজাতিকে তিনি তাদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় কিছুর যোগান দেন, তার মধ্যে মানুষ যাকিছু দেখতে পায় সেই বিষয়গুলি যেমন রয়েছে, তেমনি দৃষ্টিগ্রাহ্য নয় এমন বিষয়সমূহও আছে। মানবজাতির কাছে অপরিহার্য এই প্রাণময় পরিমণ্ডলকে ঈশ্বর রক্ষণাবেক্ষণ করেন, পরিচালনা করেন, এবং এর উপর আধিপত্য করেন। অর্থাৎ, প্রতিটি ঋতুর জন্য মানবজাতির যেমন পরিবেশ দরকার, ঈশ্বর তা প্রস্তুত করে রেখেছেন। ঈশ্বর বায়ুর প্রকারভেদকে এবং তাপমাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণ করেন যাতে সেগুলি মানুষের জীবনধারণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এইসব বিষয়ের নিয়ন্ত্রক নিয়মগুলি আপনা থেকেই বা যদৃচ্ছভাবে উদ্ভূত হয় না; এগুলি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও তাঁর কার্যকলাপের ফলাফল। স্বয়ং ঈশ্বরই এইসব নিয়মকানুনের উৎস এবং সকল কিছুর জীবনের উৎস। তুমি তা বিশ্বাস করো বা না করো, তুমি একে প্রত্যক্ষ করো বা না করো, অথবা তুমি এটি উপলব্ধি করতে পারো বা না পারো, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ও অনাক্রমণীয় সত্যই রয়ে যায়।
এ বিষয়ে আমি অবহিত যে অধিকাংশ মানুষ বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরের বাক্যাবলী ও কার্যের উপরেই শুধু আস্থা রাখে। স্বল্প কিছু মানুষের কাছে, ঈশ্বর তাঁর কার্যসমূহ প্রকাশিত করেছেন এবং মানুষকে তাঁর অস্তিত্বের মূল্য অনুভব করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের তিনি তাঁর মর্যাদার বিষয়ে কিছুটা উপলব্ধিও অর্জন করতে দিয়েছেন এবং তাঁর অস্তিত্বের বাস্তব সত্যকে দৃঢ়ভাবে প্রতিপন্ন করেছেন। কিন্তু, আরো অনেক মানুষের কাছে, ঈশ্বর যে যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছিলেন এবং তিনি যে সকলকিছুকে পরিচালনা করেন ও তাদের সংস্থান যোগান—এই বাস্তব সত্যগুলি অস্পষ্ট বা অনির্দিষ্ট বলে মনে হয়; এধরনের মানুষগুলি এমনকি এক সংশয়ের মনোভাবও বজায় রাখতে পারে। এই মনোভাবের কারণে তারা এহেন বিশ্বাসে অটল থাকে যে প্রাকৃতিক জগতের নিয়মগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই গড়ে উঠেছিল, তারা মনে করে যে প্রকৃতির পরিবর্তন ও রূপান্তরসমূহ, প্রাকৃতিক ঘটনাবলী, এবং প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণকারী বিধানগুলি খোদ প্রকৃতি থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল। ঈশ্বর কীভাবে সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং কীভাবেই বা তিনি এসবের উপর আধিপত্য করেন, মানুষ তাদের অন্তরে এটা ধারণায় আনতে পারে না; তারা বুঝে উঠতে পারে না কীভাবে ঈশ্বর সকল বস্তুকে পরিচালনা করেন ও যাবতীয় কিছুর সংস্থানের যোগান দেন। এই পূর্বানুমানের সীমাবদ্ধতার অধীনে, মানুষ বিশ্বাস করে উঠতে পারে না যে ঈশ্বর সকলকিছুর সৃজন ঘটিয়েছিলেন, সেগুলির উপর তিনি আধিপত্য করেন, এবং তিনি সেগুলির রসদের যোগান দেন; আর যারা বিশ্বাস করে তারাও তাদের বিশ্বাসে বিধানের যুগ, অনুগ্রহের যুগ এবং রাজ্যের যুগের ভিতরেই সীমাবদ্ধ: তারা মনে করে যে ঈশ্বরের কার্যাবলী ও মানবজাতির জন্য তাঁর সংস্থান একচেটিয়াভাবে শুধু তাঁর মনোনীত লোকদের জন্যই। এটা এমন একটা বিষয় যেটা দেখতে আমি সবচেয়ে নারাজ, এবং এমন একটা বিষয় যা খুবই বেদনাদায়ক, কারণ ঈশ্বরের নিয়ে আসা সকলকিছুকে উপভোগ করা সত্ত্বেও মানবজাতি তাঁর সকল কার্য ও তাদের নিমিত্ত তাঁর প্রদত্ত সকলকিছুকে অস্বীকার করে। মানুষ কেবল বিশ্বাস করে যে আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব ও প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর দ্বারা এবং অস্তিত্ত্বরক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব ও প্রাকৃতিক বিধানের দ্বারা, এবং মনে করে যে তাদের পরিচালনা করার জন্য কোনো শাসক নেই কিংবা তাদের সংস্থান প্রদান ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো সার্বভৌম শক্তি নেই। এমনকি ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেও তুমি হয়তো বিশ্বাস করো না যে এই সবকিছু তাঁর কীর্তি; বস্তুত, এটি প্রতিটি ঈশ্বর-বিশ্বাসী মানুষের, ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণকারী প্রত্যেকের, এবং ঈশ্বর-অনুগামী প্রতিটি মানুষের প্রায়শই অবহেলিত বিষয়গুলির অন্যতম। তাই যেইমাত্র আমি বাইবেল বা তথাকথিত আধ্যাত্মিক পরিভাষার সঙ্গে অসম্পর্কিত কোনোকিছু আলোচনা করতে শুরু করি, তখনই কিছু মানুষ একঘেয়েমি বা ক্লান্তি বা এমনকি অস্বচ্ছন্দও বোধ করে। তাদের অনুভবে আমার বাক্যগুলিকে যেন আধ্যাত্মিক মানুষজন ও আধ্যাত্মিক বস্তুসকলের থেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হয়। তা এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যখন ঈশ্বরের কার্যসকলকে জানার প্রসঙ্গ ওঠে, তখন যদিও আমরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের উল্লেখ করি না, এবং আমরা ভূগোল বা জীববিজ্ঞানের গবেষণাও করি না, তবু আমাদের অবশ্যই সকলকিছুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের অবশ্যই তাঁর দ্বারা সকলকিছুর সংস্থান বিধানের সম্পর্কে অবগত হতে হবে, এবং জানতে হবে যে তিনিই সকলকিছুর উৎস। এ এক অত্যাবশ্যক পাঠ এবং অবশ্যই এর অধ্যয়ন করতে হবে। আশা করি তোমরা আমার বাক্যসমূহ উপলব্ধি করেছো, তাই তো?
আমার সদ্য বর্ণিত কাহিনীদ্বয়, বিষয়বস্তু ও প্রকাশভঙ্গিমায় সামান্য প্রথাবহির্ভূত, এবং এক অর্থে কিছুটা বিশেষ রীতিতে কথিত হলেও, সেগুলি ছিল নিগূঢ়তর এক প্রসঙ্গকে অর্জন ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তোমাদের সহায়তা করার লক্ষ্যে আমার সহজবোধ্য ভাষা ও এক সরল প্রকরণ ব্যবহারের প্রয়াস। এই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। এই ছোট্ট গল্পদুটি ও তাদের অঙ্কিত চিত্রপটের সাহায্যে, আমি তোমাদের দেখাতে ও বিশ্বাস করাতে চেয়েছিলাম যে ঈশ্বর সমগ্র সৃষ্টির উপর সার্বভৌম ক্ষমতা ধারণ করেন। এই গল্পগুলি বলার লক্ষ্য হল একটি কাহিনীর সীমিত পরিসরের মধ্যে তোমাদের ঈশ্বরের অসীম কর্মকাণ্ড দর্শন করার ও অবগত হওয়ার সুযোগদান করা। যদি প্রশ্ন করো কবে তোমরা নিজেদের মধ্যে এই ফলাফল সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি ও অর্জন করবে তাহলে বলবো, তা নির্ভর করে তোমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও তোমাদের নিজস্ব সাধনার উপর। তুমি যদি সত্যের অনুসরণ করো ও ঈশ্বরকে জানতে চাও, তাহলে এগুলি উত্তরোত্তর প্রবলভাবে তোমাকে সেকথা মনে করাবে; এগুলি তোমায় এক গভীর সচেতনতাবোধ প্রদান করবে, তোমার উপলব্ধিতে এক স্বচ্ছতা দান করবে, যা ক্রমান্বয়ে ঈশ্বরের প্রকৃত কার্যাবলীর নিকটবর্তী হবে, এতটাই নিকটবর্তী হবে যে সেখানে কোনো ব্যবধান এবং কোনো ভ্রম থাকবে না। কিন্তু, তুমি যদি এমন কেউ না হও যে ঈশ্বরকে জানার সন্ধান করে, তাহলেও এই কাহিনীগুলি তোমাদের কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে এগুলিকে কেবল সত্যিকারের গল্প বলে বিবেচনা কোরো।
এই কাহিনীদুটি থেকে তোমরা কি কোনো উপলব্ধি অর্জন করেছো? প্রথমত, মানবজাতির নিমিত্ত ঈশ্বরের উদ্বেগ বিষয়ক আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে এই কাহিনীদ্বয় কি বিচ্ছিন্ন? একটি অন্তর্নিহিত যোগসূত্র রয়েছে কি? এটি কি সত্যি যে এই কাহিনীদ্বয়ের অভ্যন্তরে আমরা ঈশ্বরের কার্যাবলী এবং মানবজাতির জন্য তাঁর সকল পরিকল্পনার প্রতি তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা দেখতে পাই? এটি কি সত্যি যে ঈশ্বরের সকল কার্য ও সকল চিন্তাভাবনা মানবজাতির অস্তিত্বের স্বার্থে? (হ্যাঁ।) মানবজাতির নিমিত্ত ঈশ্বরের সতর্ক চিন্তাভাবনা ও বিবেচনা কি খুবই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান নয়? মানবজাতিকে কোনোকিছুই করতে হবে না। মানুষের জন্য ঈশ্বর বাতাস তৈরি করে রেখেছেন—তাদের শুধু সেই বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অপেক্ষা। যে শাকসব্জি ও ফলমূল তারা আহার করে তা অনায়াসে লভ্য। উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে, প্রতিটি এলাকার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বিবিধ আঞ্চলিক শস্যাদি, ফলমূল ও শাকসব্জির সবকিছুই ঈশ্বর প্রস্তুত করেছেন। বৃহত্তর পরিমণ্ডলে, যাবতীয় কিছুকে ঈশ্বর পারস্পরিক শক্তিদায়ক, পরস্পর নির্ভরশীল, একে অপরকে মদতদানকারী, একে অপরের প্রতিরোধক, এবং যুগপৎ সহাবস্থানকারী করে গড়ে তুলেছেন। সকল বস্তুর বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে এটিই তাঁর পদ্ধতি ও বিধি; এইভাবে, মানবজাতি এই প্রাণময় পরিবেশের মধ্যিখানে সুরক্ষিত ও শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে উঠতে, এমনকি আজকের দিন অবধি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বংশবৃদ্ধি করে যেতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায়, ঈশ্বর প্রাকৃতিক পরিবেশে ভারসাম্য নিয়ে আসেন। ঈশ্বর যদি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ও নিয়ন্ত্রক না হতেন, সেক্ষেত্রে এই পরিবেশ যদি ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্টও হতো, তবু তার রক্ষণাবেক্ষণ করা ও তার ভারসাম্য বজায় রাখা যে কারো পক্ষে সাধ্যাতীত হতো। কোনো কোনো স্থানে বায়ু নেই, এবং এই সকল জায়গায় মানবজাতি বেঁচে থাকতে পারে না। ঈশ্বর তোমায় ওই সকল স্থানে যেতে অনুমতি দেবেন না। তাই, সঙ্গত সীমারেখা অতিক্রম করে যেয়ো না। এটি মানবজাতির সুরক্ষার স্বার্থেই—এর অভ্যন্তরে রহস্য রয়েছে। এই পরিমণ্ডলের প্রতিটি বিষয়, পৃথিবীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, ধরণীবক্ষের প্রত্যেক প্রাণী—জীবিত ও মৃত উভয়ই—ঈশ্বরের ধারণায় আগে থেকেই কল্পিত ও সৃজিত হয়েছিল। এই জিনিসটি কেন দরকারী? ওই বস্তুটি কেন অপ্রয়োজনীয়? এই জিনিসটিকে এখানে রাখার উদ্দেশ্যটি কী এবং ওই জিনিসটির ওখানে যাওয়া বিধেয় কেন? ঈশ্বর ইতিপূর্বেই এইসব যাবতীয় প্রশ্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে ফেলেছেন, এবং মানুষের এগুলির বিষয়ে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। কিছু নির্বোধ মানুষ আছে যারা সর্বদাই পর্বতকে অপসারিত করার কথা ভাবে, কিন্তু তা না করে পরিবর্তে, তারা নিজেরাই সমতলভূমির দিকে সরে আসে না কেন? পর্বত যদি তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে তুমি পর্বতের কাছাকাছি বসবাস করছো কেন? এটি কি নির্বুদ্ধিতা নয়? তুমি যদি ওই পর্বতকে সরিয়ে দিতে তাহলে কী ঘটতে পারতো? ঘূর্ণিঝড় ও বিপুল সমুদ্রতরঙ্গ এসে মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ফেলতো। তা কি এক নির্বোধসুলভ কাজ হতো না? মানুষ কেবল ধ্বংস করতেই সক্ষম। তাদের বসবাসের জন্য একমাত্র যে জায়গাটি রয়েছে তারা এমনকি তার-ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে অপারগ, তবু তারপরেও তারা সকল বস্তুর জন্য সংস্থান করতে চায়। তা অসম্ভব।
মানবজাতিকে ঈশ্বর সকল বস্তুকে পরিচালনা করার এবং সেগুলির উপর আধিপত্য করার অনুমতি প্রদান করেন, কিন্তু মানুষ কি সেই কাজ সুচারুভাবে পালন করে? মানুষ যা পারে তাই ধ্বংস করে ছাড়ে। মানুষের জন্য ঈশ্বর যাকিছু প্রস্তুত করেছিলেন মানুষ যে শুধু সেগুলির আদি অবস্থা বজায় রাখতে অক্ষম তা-ই নয়—উপরন্তু সে বিপরীত কাজ করেছে এবং ঈশ্বরের সৃষ্টিকে বিনষ্ট করেছে। মানবজাতি পর্বতের অপসারণ ঘটিয়েছে, সমুদ্রগর্ভ থেকে জমি পুনরুদ্ধার করেছে, এবং সমতলভূমিকে মনুষ্য-বসবাসের অনুপযুক্ত মরুভূমিতে রূপান্তরিত করেছে। তবু এই মরুভূমিতেই মানুষ শিল্পকেন্দ্র গড়ে তুলেছে এবং নিউক্লীয় ঘাঁটি নির্মাণ করেছে, এইভাবে সর্বত্র বিনাশের বীজ বপন করেছে। বর্তমানে নদনদী আর সেই নদী নেই, সমুদ্র আর সেই সমুদ্র নেই…। মানবজাতি একবার যখন প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলের ভারসাম্য ও তার নিয়মকানুনগুলি বিঘ্নিত করে ফেলেছে, তখন তার বিপর্যয় ও মৃত্যুর দিন আর দূরে নেই; এটা অবশ্যম্ভাবী। যখন বিপর্যয় এসে উপস্থিত হবে, মানবজাতি তখন তার নিমিত্ত ঈশ্বরের সৃষ্ট সকলকিছুর মহার্ঘতার বিষয়ে অবহিত হবে এবং মানবজাতির জন্য সেগুলি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করবে। মানুষের কাছে, যেখানে বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত তাদের সঠিক সময় মতো এসে হাজির হয় এমন এক পরিবেশের মধ্যে বসবাস করা স্বর্গে বসবাস করার শামিল। মানুষ একে আশীর্বাদ বলে উপলব্ধি করে না, কিন্তু যে মুহূর্তে তারা এর সবকিছু হারিয়ে ফেলবে, তখন তারা অনুভব করবে এটি কতখানি দুর্লভ ও মহামূল্যবান। আর একবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে, কীভাবে আবার তা ফিরে পাওয়া যাবে? ঈশ্বর যদি আবার তা সৃষ্টি করতে অনিচ্ছুক হন, তখন মানুষের কী করণীয় থাকবে? তোমাদের কি কিছু করার থাকবে? বস্তুত, সত্যিই তোমাদের করণীয় কিছু রয়েছে। তা খুব সহজ কাজ—যখন আমি তোমাদের বলবো সে কাজটি কী, তোমরা তক্ষুনি উপলব্ধি করবে যে তা সম্ভবপর। কীভাবে মানুষ নিজেকে তার অস্তিত্বের বর্তমান স্থিতির মধ্যে টেনে এনেছে? এই পরিস্থিতি কি তার লোভ ও ধ্বংসের দরুন উদ্ভূত হয়েছে? মানুষ যদি এই ধ্বংসলীলায় দাঁড়ি টানে, তাহলে তার বসবাসের পরিবেশ কি ক্রমশ নিজেকে পুনরুদ্ধার করবে না? ঈশ্বর যদি কিছুই না করেন, ঈশ্বর যদি মানবজাতির জন্য আর কিছু করতে ইচ্ছুক না হন—অর্থাৎ, এই বিষয়ে তিনি যদি হস্তক্ষেপ না করেন—সেক্ষেত্রে মানবজাতির পক্ষে সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান হবে যাবতীয় ধ্বংসক্রিয়ায় ক্ষান্তি দিয়ে তাদের বসবাসের পরিবেশকে তার স্বাভাবিক স্থিতিতে প্রত্যাবর্তন করতে দেওয়া। এই সমস্ত ধ্বংসলীলা বন্ধ করার অর্থ ঈশ্বরের সৃষ্ট বস্তুসমূহের লুণ্ঠন ও বিনাশের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা। এমন করা হলে মানুষের বসবাসের পরিমণ্ডলকে ক্রমশ নিজেকে পুনরুদ্ধার করার সুযোগ দেওয়া হবে, আর তা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিণতি হবে জীবনধারণের জন্য আরো কদর্য এক পরিবেশ যার বিনাশ সময়ের সাথে উত্তরোত্তর দ্রুততর হবে। আমার এই সমাধানটি সহজ তো? এটি সহজ ও বাস্তবায়নযোগ্য, তাই না? সত্যিই সহজ, এবং কিছু মানুষের পক্ষে সম্ভবপর—কিন্তু পৃথিবীর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে তা কি সম্ভবপর? (সম্ভবপর নয়।) অন্ততপক্ষে তোমাদের কাছে কি এটি সম্ভবপর? (হ্যাঁ।) কোন জিনিসটি তোমাদের “হ্যাঁ” বলতে প্রণোদিত করছে? এমন কি বলা যায় যে এই প্রণোদনা এসেছে ঈশ্বরের কার্যাবলী বিষয়ে উপলব্ধির এক ভিত্তিভূমি থেকে? এমন কি বলা যায় যে এর শর্ত হল ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও পরিকল্পনার প্রতি আনুগত্য? (হ্যাঁ।) বস্তুসকলের পরিবর্তনের একটা পন্থা আছে, কিন্তু সেই প্রসঙ্গে বর্তমানে আমরা আলোচনা করছি না। প্রতিটি মনুষ্যজীবনের প্রতি ঈশ্বর দায়বদ্ধ, এবং চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি পর্যন্ত তিনি দায়বদ্ধ। তোমার জন্য ঈশ্বর সংস্থানের যোগান দেন, এবং যদিও শয়তানের দ্বারা বিধ্বস্ত এই পরিমণ্ডলে তুমি পীড়িত বা দূষিত বা অবমানিত হয়েছো, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না—ঈশ্বর তোমার সংস্থান যুগিয়ে যাবেন, এবং ঈশ্বর তোমার জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে দেবেন। এ ব্যাপারে তোমাদের আস্থা থাকা উচিত। এক মনুষ্য সত্তাকে ঈশ্বর নির্বিকারচিত্তে মরতে দেবেন না।
“ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস” কথাটি উপলব্ধি করার গুরুত্ব সম্পর্কে এখন কি তোমরা কিছুটা অনুভব করতে পেরেছো? (হ্যাঁ, পেরেছি।) কী অনুভূতি তোমরা লাভ করেছো? আমাকে বলো। (অতীতে, পর্বত, সমুদ্র, ও হ্রদসমূহকে আমরা কখনো ঈশ্বরের কার্যকলাপের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করার কথা চিন্তা করিনি। ঈশ্বরের আজকের আলোচনা শ্রবণ করার আগে পর্যন্ত আমরা উপলব্ধি করিনি যে এই বস্তুগুলির মধ্যে ঈশ্বরের কর্ম ও প্রজ্ঞা নিহিত রয়েছে; আমরা দেখতে পেলাম যে এমনকি ঈশ্বর যখন সকল বস্তুর সৃজন শুরু করেছিলেন, তখনই প্রতিটি বস্তুকে তিনি একটি নিয়তি ও তাঁর মঙ্গলময় শুভেচ্ছা দ্বারা সম্পৃক্ত করেছিলেন। সকল বস্তুই একে অপরকে শক্তিশালী করে ও পরস্পর নির্ভরশীল, এবং তার চূড়ান্ত উপকারভোগী হল মানবজাতি। আজকে আমরা যা শ্রবণ করলাম তা খুবই নতুন ও অভিনব বলে মনে হয়েছে—ঈশ্বরের ক্রিয়াকর্ম যে কতটা বাস্তব তা আমরা অনুভব করেছি। বাস্তব জগতে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, এবং সমস্তকিছুর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতে, আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি।) তোমরা বস্তুতই প্রত্যক্ষ করেছো, তাই নয় কি? একটি সুদৃঢ় বুনিয়াদ ব্যতিরেকে ঈশ্বর মানবজাতির সংস্থান সরবরাহ করেন না; তাঁর সংস্থান কেবল কতিপয় সংক্ষিপ্ত বাক্য নয়। ঈশ্বর এতকিছু করেছেন, এবং এমনকি যে বিষয়গুলি তোমার দৃষ্টিগোচর নয় সেসবও তোমার মঙ্গলের নিমিত্তই। মানুষ এই পরিমণ্ডলে, তার নিমিত্ত ঈশ্বরের সৃষ্টি করা সকল বস্তুর মাঝে, বাস করে, যেখানে মানুষ ও সকল বস্তু পরস্পরের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, নিঃশ্বাসের সময় যে বায়বীয় পদার্থ উদ্ভিদ বিমুক্ত করে তা বায়ুকে নির্মল করে, আর সেই বিশুদ্ধিকৃত বায়ু মানুষ শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং তা থেকে উপকৃত হয়; আবার কিছু উদ্ভিদ মানুষের কাছে বিষাক্ত, সেখানে অন্য উদ্ভিদরা ওই বিষাক্ত উদ্ভিদগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে। ঈশ্বরের সৃষ্টির এ এক বিস্ময়! কিন্তু আপাতত এই প্রসঙ্গটি ত্যাগ করা যাক; আজ, আমাদের আলোচনাটি ছিল মূলত মানুষ ও সৃষ্টির বাকি সমস্ত কিছুর সহাবস্থান বিষয়ে, যে সহাবস্থান ব্যতিরেকে মানুষের জীবনধারণ সম্ভব নয়। ঈশ্বরের দ্বারা সকল বস্তুর সৃষ্টির গুরুত্বটি কী? বাকি সমস্তকিছু ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না, ঠিক যেমন বেঁচে থাকার জন্য মানুষের বায়ুর প্রয়োজন—তোমাকে যদি একটি বায়ুশূন্য স্থানে রাখা হতো, তবে তুমি অচিরেই মারা যেতে। এটি একটি অতি সরল নীতি যা প্রদর্শন করে যে সৃষ্টির বাকি সমস্তকিছু থেকে বিযুক্ত হয়ে মানুষ অস্তিত্ব ধারণ করতে পারে না। তাহলে, সকল বস্তুর প্রতি মানুষের কীরকম মনোভাব থাকা উচিত? এমন এক মনোভাব যা ওই বস্তুগুলিকে মূল্যবান জ্ঞান করে, সেগুলিকে সুরক্ষাপ্রদান করে, সেগুলিকে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে, সেগুলির ধ্বংসসাধন থেকে বিরত থাকে, সেগুলির অপচয় না করে, এবং খেয়ালখুশি মতো সেগুলির পরিবর্তনসাধন না করে, কারণ সকল বস্তুই ঈশ্বরসম্ভূত, সকল বস্তুই মানবজাতির নিমিত্ত তাঁর প্রদত্ত সংস্থান, এবং মানবজাতির অবশ্যই সেগুলির প্রতি বিবেকনিষ্ঠ আচরণ করা উচিত।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৭