আদম ও হবার জন্য ঈশ্বর পশুচর্মের পোশাক তৈরি করলেন
আদিপুস্তক ৩:২০-২১ পরে আদম তাঁর স্ত্রীর নাম রাখলেন হবা; কেননা তিনিই হলেন জীবিত সকল মানুষের মাতা। আদম ও তার স্ত্রীর জন্য যিহোবা ঈশ্বর পশুচর্মের পোশাক প্রস্তুত করলেন এবং তাদের পরালেন।
এই তৃতীয় অনুচ্ছেদে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক, যেখানে বলা হয়েছে যে আদম হবাকে যে নাম দিয়েছিল তার নেপথ্যে প্রকৃতপক্ষেই একটা অর্থ আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে সৃষ্ট হওয়ার পর আদমের নিজস্ব ভাবনা ছিল এবং সে অনেক বিষয় উপলব্ধি করত। কিন্তু এখনকার মতো, সে কী উপলব্ধি করেছিল বা কতটা উপলব্ধি করেছিল, আমরা তার বিশদ ব্যাখ্যা বা অনুসন্ধানে যাচ্ছি না, কারণ তৃতীয় অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে তা আমার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তাহলে, কোন মূল বিষয়টাতে আমি আলোকপাত করতে চাই? এই অংশটা দেখা যাক, “আদম ও তার স্ত্রীর জন্য যিহোবা ঈশ্বর পশুচর্মের পোশাক প্রস্তুত করলেন এবং তাদের পরালেন।” আমাদের আজকের আলোচনায় শাস্ত্রের এই অংশটার কথা যদি না বলি, তবে এই বাক্যের গভীর ব্যঞ্জনা তোমরা হয়তো কখনোই উপলব্ধি করবে না। প্রথমে আমি কিছু ইঙ্গিত দেব। যদি পারো তবে কল্পনা করো, এদনের উদ্যান, সেখানে আদম ও হবা বসবাস করছে। ঈশ্বর তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন, কিন্তু তারা লুকিয়ে পড়ল, কারণ তারা নগ্ন। ঈশ্বর তাদের দেখতে পেলেন না, এবং ঈশ্বর যখন তাদের ডাকলেন তখন তারা বলল, “আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করার সাহস পাচ্ছি না, কারণ আমাদের দেহ নগ্ন”। তারা ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা করার সাহস পাচ্ছে না, কারণ তারা নগ্ন। সুতরাং যিহোবা ইশ্বর তাদের জন্য কী করলেন? মূল পাঠে বলা হয়েছে: “আদম ও তার স্ত্রীর জন্য যিহোবা ঈশ্বর পশুচর্মের পোশাক প্রস্তুত করলেন এবং তাদের পরালেন।” এর থেকে তোমরা কি বুঝতে পেরেছ, কী দিয়ে ঈশ্বর তাদের বস্ত্র তৈরি করেছিলেন? ঈশ্বর পশুর চামড়া দিয়ে তাদের পোশাক তৈরি করেছিলেন। অর্থাৎ, ঈশ্বর মানুষের পরিধানের বস্ত্র হিসাবে পশুলোমের কোট তৈরি করেছিলেন। এগুলোই প্রথম পরিচ্ছদ যা ঈশ্বর মানুষের জন্য তৈরি করেছিলেন। আজকের মাপকাঠিতে পশুলোমের কোট একটা বিলাসবহুল সামগ্রী, এবং তা পরিধান করা সকলের সামর্থ্যের মধ্যে নয়। যদি তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে: “আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রথম পরিহিত পোশাক কী ছিল?” তুমি উত্তরে বলতে পারো: “পশুলোমের কোট।” “এই পশুলোমের কোট কে বানিয়েছিলেন?” তুমি তখন বলতে পারো: “ঈশ্বর বানিয়েছিলেন!” এটাই এখানে প্রধান বিষয়: এই পোশাক ঈশ্বর বানিয়েছিলেন। এটাই কি আলোচনার উপযুক্ত একটা বিষয় নয়? আমার বর্ণনা শোনার পর তোমাদের মনে কি একটা ছবি ভেসে উঠেছে? তোমাদের মনে অন্তত মোটামুটি একটা ছবি ভেসে ওঠা উচিত। আজ তোমাদের এ কথা বলার মূল বিষয় কিন্তু মানুষের প্রথম পোশাক কী ছিল তা তোমাদের জানানো নয়। তাহলে মূল বিষয়টা কী? পশুলোমের কোট এখানে মূল বিষয় নয়, বরং বিষয়টা হল, মানুষ কীভাবে জানতে পারে ঈশ্বরের স্বভাব, তাঁর যা আছে, এবং তিনি যা—যেমন এখানে তিনি যা করেছেন তার মধ্যেই এগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
“আদম ও তার স্ত্রীর জন্য যিহোবা ঈশ্বর পশুচর্মের পোশাক প্রস্তুত করলেন এবং তাদের পরালেন।” এই দৃশ্যে, ঈশ্বর যখন আদম ও হবার সঙ্গে রয়েছেন, তখন তাঁকে আমরা কোন ভূমিকায় দেখতে পাই? মাত্র দুজন মানুষ রয়েছে এমন এক বিশ্বে ঈশ্বর কোন পথে নিজেকে প্রতীয়মান করেন? তিনি কি নিজেকে ঈশ্বরের ভূমিকায় প্রতীয়মান করেন? হংকং থেকে আগত ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, অনুগ্রহ করে উত্তর দাও। (পিতা-মাতার ভূমিকায়।) দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, ঈশ্বর এখানে কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে তোমাদের মনে হয়? (পরিবারের প্রধান।) তাইওয়ান থেকে আগত ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, তোমাদের কী মনে হয়? (আদম ও হবার পরিবারের কোনো এক সদস্যের ভূমিকায়, কোনো পারিবারিক সদস্যের ভূমিকায়।) তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করো যে, ঈশ্বর আদম ও হবার পরিবারের সদস্যরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন, আবার কেউ বলছ যে ঈশ্বর পরিবার প্রধান হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং অন্যরা বলছ পিতামাতা রূপে। এগুলো সবই খুবই যথাযথ। কিন্তু আমি কী বলতে চাই, তা কি তোমরা বুঝতে পারছ? ঈশ্বর এই দুই মানবকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাদের নিজের সঙ্গী হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তাদের একমাত্র পরিবার হিসাবে ঈশ্বর তাদের জীবনের পরিচর্যা করেছেন, এবং তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান করেছেন। এখানে ঈশ্বর আদম ও হবার পিতামাতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ঈশ্বর যখন এমনটা করেন, অনেক মানুষ দেখতে পায় না যে, ঈশ্বরের অবস্থান কত সুউচ্চ; সে দেখতে পায় না ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব, তাঁর রহস্য, এবং বিশেষ করে, তাঁর ক্রোধ অথবা মহিমা। সে যাকিছু দেখে তা হল ঈশ্বরের বিনয়, তাঁর স্নেহ, মানুষের জন্য উদ্বেগ, এবং দায়িত্বশীলতা ও মানুষের প্রতি তাঁর যত্ন। নিজেদের সন্তানের প্রতি পিতামাতা যেভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে, ঠিক সেই মনোভাব নিয়েই ও সেই পথেই ঈশ্বর আদম ও হবার সঙ্গে আচরণ করেছিলেন। পিতামাতা যেভাবে নিজেদের পুত্রকন্যাকে ভালোবাসে, তাদের দেখাশোনা ও পরিচর্যা করে, এটা ঠিক সেই রকমও—বাস্তব, দৃশ্যমান, এবং মূর্ত। নিজেকে উচ্চ ও মহিমাময় অবস্থানে না রেখে ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে পশুচর্ম দিয়ে মানুষের জন্য পোশাক তৈরি করেছেন। পশুলোমের এই কোট তাদের শালীনতা রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয়েছিল নাকি শীত নিবারণের উদ্দেশ্যে, এখানে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল মানুষের দেহকে আবৃত করার এই পোশাক ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। মনের কল্পনা দ্বারা সেই পোশাককে বাস্তবায়িত না করে, বা মানুষের কল্পনা অনুযায়ী অন্য কোনো অলৌকিক কাণ্ড না ঘটিয়েই, ঈশ্বর যথার্থভাবেই এমন একটা কাজ করেছিলেন, যা মানুষের ভাবনা অনুযায়ী ঈশ্বর করবেন না, বা তাঁর করা উচিত নয়। একে এক তুচ্ছ বিষয় বলে মনে হতে পারে—কিছু মানুষ একে আদৌ উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় বলেই মনে না-ও করতে পারে—কিন্তুঈশ্বরের যে অনুগামীরা ঈশ্বরের সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা পোষণ করে, এর মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের অকৃত্রিমতা ও তাঁর মাধুর্য সম্পর্কে অন্তদৃষ্টি লাভ করতে পারে, এবং তাঁর বিশ্বস্ততা ও বিনয়কে প্রত্যক্ষ করতে পারে। অসহ্য রকমের উদ্ধত যে সমস্ত মানুষ নিজেদের অত্যন্ত উচ্চস্তরীয় ও ক্ষমতাবান বলে মনে করে, এটা তাদের ঈশ্বরের অকৃত্রিমতা ও বিনয়ের সম্মুখে লজ্জায় তাদের অহংপূর্ণ মস্তক অবনত করতে বাধ্য করে। এখানে ঈশ্বরের অকৃত্রিমতা ও বিনয় মানুষকে এটা দেখতেও সক্ষম করে যে তিনি কত মধুর। এর বিপরীতে, যে “অপরিমেয়” ঈশ্বর, “ভালোবাসার যোগ্য” ঈশ্বর এবং “সর্বশক্তিমত্ত” ঈশ্বরকে মানুষ হৃদয়ে ধারণ করে, তিনি অকিঞ্চিৎকর ও কুশ্রী হয়ে ওঠেন, এবং সামান্য স্পর্শেই ভেঙে পড়েন। তুমি যখন এই স্তবকটা দেখো এবং এই আখ্যান শোনো, তখন ঈশ্বর এমন একটা কাজ করেছেন বলে কি তুমি ঈশ্বরকে নীচু নজরে দেখো? কিছু কিছু মানুষ তা করতে পারে, কিন্তু বাকিদের প্রতিক্রিয়া হবে বিপরীত। তারা মনে করবে যে, ঈশ্বর অকৃত্রিম ও ভালোবাসার যোগ্য, এবং ঈশ্বরের এই অকৃত্রিমতা ও মাধুর্যই তাদের নাড়া দিয়ে যায়। ঈশ্বরের বাস্তব দিকটা তারা যত দেখে, ততই তারা আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে পারে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রকৃত উপস্থিতি, তাদের অন্তরে ঈশ্বরের গুরুত্ব, এবং প্রতিটি মুহূর্তে তিনি যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়ান।
এবার আমাদের আগের আলোচনাকে বর্তমানের সাথে যুক্ত করা যাক। আদিতম লগ্নে তিনি যে মানবগণকে সৃষ্টি করেছিলেন, তাদের জন্য ঈশ্বর যদি এই বিভিন্ন অকিঞ্চিৎকর কাজগুলো করতে পারতেন, এমনকি সেইসব কাজও, যা মানুষ চিন্তা অথবা প্রত্যাশামাত্র করতে সাহস করবে না, তবে কি বর্তমানে তেমন কাজ ঈশ্বর মানুষদের জন্য করতে পারতেন? কেউ কেউ বলে “হ্যাঁ”। কিন্তু কেন? কারণ ঈশ্বরের সারসত্যে কোনো ছলনা নেই, নেই কোনো ছলনা তাঁর মাধুর্যেও। ঈশ্বরের সারসত্য প্রকৃত অর্থেই বিদ্যমান, এবং তা অন্য কারও দ্বারা সংযুক্ত নয়, আর তা এমন কোনো বিষয় নয়, যা স্থান, কাল, এবং যুগ ভেদে পরিবর্তিত হয়। ঈশ্বরের অকৃত্রিমতা ও মাধুর্য প্রকৃত অর্থে প্রতীয়মান হতে পারে সেই সকল কার্যের মাধ্যমেই, মানুষ যেগুলোকে মনে করে অকিঞ্চিৎকর ও অতিসাধারণ—এতই অকিঞ্চিৎকর কোনোকিছু, যা মানুষ কখনো ভাবতেই পারে না যে ঈশ্বর সংঘটন করবেন। ঈশ্বর কোনো ভান করেন না। তাঁর স্বভাব ও সারসত্যে কোনো অতিরঞ্জন, প্রচ্ছন্নতা, দম্ভ ও ঔদ্ধত্য নেই। তিনি কখনোই অহংকার করেন না, বরং তাঁর সৃষ্ট মানবজাতিকে তিনি ভালোবাসেন, তাদের প্রতি তিনি উদ্বেগ দেখান, তাদের দেখাশোনা করেন, এবং বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন। ঈশ্বর যা করেন, তা মানুষ যতই অল্পমাত্রায় অনুধাবন করুক, উপলব্ধি ও প্রত্যক্ষ করুক না কেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই সেই কার্য সম্পন্ন করে চলেছেন। ঈশ্বরের যে এমন এক সারসত্য রয়েছে, তা জানলে কি মানুষের ঈশ্বরপ্রেম কোনোভাবে প্রভাবিত হবে? তা কি তাদের ঈশ্বরভীতিকে প্রভাবিত করবে? আমি আশা করি যে, যখন তোমরা ঈশ্বরের বাস্তব দিকটাকে উপলব্ধি করবে, তখন তোমরা তাঁর আরো নিকটবর্তী হবে, এবং তাঁর ভালোবাসাকে আরো যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, এবং সেইসঙ্গে, নিজেদের হৃদয়কে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে সক্ষম হবে, এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে নিজেদের সংশয় ও সন্দেহ থেকে মুক্ত হবে। ঈশ্বর নীরবে মানুষের জন্য সমস্তকিছু করছেন, তাঁর আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা, ও প্রেমের মাধ্যমে নীরবে সবকিছু করে চলেছেন। কিন্তু তিনি যা করেন তার জন্য তাঁর মনে কখনোই কোনো আশঙ্কা বা অনুতাপ নেই, বা তিনি কখনোই চান না কেউ কোনোভাবে তাঁকে পরিশোধ করুক, বা মানবজাতির কাছ থেকে কখনোই কিছু গ্রহণ করার অভিপ্রায় তাঁর নেই। তিনি যা কিছু করেছেন, তার একমাত্র লক্ষ্য হল মানবজাতির প্রকৃত বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা। এর সাথেই, প্রথম বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা এখানেই সমাপ্ত করলাম।
এই আলোচনাগুলো কি তোমাদের সাহায্য করেছে? এগুলো কতটা সহায়ক হয়েছে? (আমরা ঈশ্বরের ভালোবাসা সম্পর্কে আরো ভালো উপলব্ধি ও জ্ঞান অর্জন করেছি।)(আলোচনার এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে আমাদের সহায়ক হতে পারে ঈশ্বরের বাক্যকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে, তাঁর আবেগকে, এবং তিনি যে বিষয়গুলো যখন বলেছেন তখন সেগুলোর অর্থ কী ছিল তা অনুধাবন করতে, এবং তাঁর সেই সময়ের অনুভুতির বিষয়ে চেতনালাভ করতে।) এই বাক্যগুলো পাঠের পর, তোমাদের মধ্যে কেউ কি ঈশ্বরের প্রকৃত অস্তিত্ব সম্বন্ধে আরো সম্যকভাবে সচেতন হয়েছ? তোমরা কি অনুভব করছ যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আর শূন্যগর্ভ ও অস্পষ্ট নয়? একবার এই অনুভূতি লাভের পর, তোমরা কি উপলব্ধি করতে পারছ যে ঈশ্বর তোমাদের পাশেই রয়েছেন? হয়তো এই মুহূর্তে সেই অনুভূতি স্পষ্ট নয়, বা এক্ষুনি তা অনুভবে তোমরা সমর্থ না-ও হতে পারো। কিন্তু একদিন, যেদিন তুমি বস্তুতই ঈশ্বরের স্বভাব ও সারসত্যের বিষয়ে গভীর উপলব্ধি ও প্রকৃত জ্ঞান ধারণ করবে আপন হৃদয়ে, সেদিন তুমি উপলব্ধি করবে, যে ঈশ্বর তোমার পাশেই রয়েছেন—কিন্তু তুমিই কখনো অকৃত্রিমভাবে ঈশ্বরকে নিজের হৃদয়ে গ্রহণ করোনি। এবং এটাই সত্য!
আলোচনার এই ধরন সম্পর্কে তোমাদের কী মতামত? তোমরা কি এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছ? তোমরা কি মনে করো যে ঈশ্বরের কাজ ও ঈশ্বরের স্বভাব সম্পর্কে এই ধরনের আলোচনা খুব গুরুগম্ভীর হয়ে যাচ্ছে? তোমরা কেমন অনুভব করছ? (খুব ভালো, আমরা উত্তেজিত বোধ করছি।) কেন তোমাদের খুব ভালো মনে হচ্ছে? কেন তোমরা উত্তেজিত? (ঠিক যেন এদন উদ্যানে ঈশ্বরের পাশে ফিরে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছিল।) “ঈশ্বরের স্বভাব” আসলে মানুষের কাছ অপরিচিত বিষয়, কারণ তোমরা সচরাচর যা কল্পনা করো, এবং তোমরা বইতে যা পাঠ করো বা আলোচনায় যা শোনো, তা তোমাদের মনে যে অনুভূতি জাগিয়ে তোলে তা অন্ধের হস্তীদর্শনের শামিল—তুমি শুধু স্পর্শ দিয়ে অনুভব করছ, কিন্তু আসলে তোমার মনে কোনো ছবিই ফুটে উঠছে না। অন্ধের মতো চারদিকে হোঁচট খেলে তুমি ঈশ্বর সম্বন্ধে এমনকি একটা মোটামুটি ধারণাও পাবে না, তাঁর সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা অর্জন তো দূরস্থান; এটা শুধুমাত্র তোমার কল্পনায় ইন্ধন যোগাবে, এবং তোমাকে ঈশ্বরের স্বভাব ও সারসত্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে বাধা দেবে, এবং তোমার কল্পনা থেকে উদ্ভূত অনিশ্চয়তাগুলো তোমার হৃদয়কে অবশ্যম্ভাবীরূপে সংশয়পূর্ণ করবে। তুমি যখন কোনোকিছু সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারবে না, অথচ তা উপলব্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাবে, তখন সর্বদাই তোমার হৃদয়ে পরস্পরবিরোধিতা ও মতবিরোধ দেখা দেবে, এবং এমনকি একটা অশান্ত অনুভূতিও তৈরি হবে, যা তোমাকে বিভ্রান্ত ও দ্বিধাগ্রস্থ করে ফেলবে। ঈশ্বরের অন্বেষণ করতে চাওয়া, ঈশ্বরকে জানতে চাওয়া, এবং তাঁকে স্পষ্টভাবে দেখার বাসনা থাকা সত্ত্বেও কখনোই উত্তর খুঁজে পেতে সক্ষম না হওয়া, এ কি যন্ত্রণাদায়ক নয়? অবশ্যই, এইসকল বাক্য শুধু তাদের প্রতিই নির্দেশিত, যারা ঈশ্বরকে ভয়মিশ্রিত সম্মান ও পরিতুষ্ট করার অন্বেষণ করতে আকাঙ্খা করে। যে সকল মানুষ এই ধরনের বিষয়গুলোর প্রতি বিন্দুমাত্র মনোযোগ দেয় না, তাদের কাছে এর কোনো গুরুত্ব নেই, কারণ তারা সবচেয়ে বেশি যা আশা করে তা হল ঈশ্বরের বাস্তবতা এবং অস্তিত্ব শুধুমাত্র কিংবদন্তী বা কল্পনাতেই থাকুক, যাতে তারা যথেচ্ছাচার করতে পারে, যাতে তারা সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যাতে তারা পরিণামের কথা না ভেবে যদৃচ্ছ মন্দ কর্ম সংঘটন করতে পারে, যাতে তাদের কোনো শাস্তির সম্মুখীন হতে না হয় বা কোনো দায়িত্ব বহন করতে না হয়, এবং যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনকারীদের বিষয়ে ঈশ্বর যা বলেন, তা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়। এইসব মানুষ ঈশ্বরের স্বভাব অনুধাবন করতে ইচ্ছুক নয়। তারা ঈশ্বরকে ও তাঁর সম্বন্ধে সবকিছু জানার চেষ্টা করার বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ ও ক্লান্ত। ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকাই তারা শ্রেয় মনে করে। এইসব মানুষ ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, এবং তারা সেই সকল মানুষের অন্তর্ভুক্ত, যাদের পরিত্যাগ করা হবে।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ১