তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!” ঈশ্বর শুধু এই বাক্য বলার পর কী কী বদল ঘটে, “আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি”? এবং এই স্থানে আলোক এবং নভোমণ্ডল ছাড়া আর কী ছিল? শাস্ত্রে লেখা আছে: “ঈশ্বর শুষ্ক ভূমির নাম স্থল ও সংহত জলরাশির নাম রাখলেন সমুদ্র। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” অর্থাৎ, এই স্থানে এখন ছিল স্থলভূমি ও সমুদ্র, এবং স্থলভাগ ও সমুদ্রকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছিল। এই নতুন বস্তুগুলির আবির্ভাব ঘটেছিল ঈশ্বরের মুখ নিঃসৃত আদেশ “ঠিক তেমনি ঘটল।”-এর পর। শাস্ত্রে কি বর্ণনা করা হয়েছে যে এটি করাকালীন ঈশ্বর ব্যতিব্যস্ত হয়েছিলেন? সেখানে কি ঈশ্বরকে কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হয়েছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে? তাহলে, ঈশ্বর কীভাবে তা করেছিলেন? ঈশ্বর কীভাবে এই নতুন বস্তুগুলির উৎপন্ন হওয়া সম্ভবপর করেছিলেন? এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, ঈশ্বর এইসমস্ত কিছু অর্জন করতে, এই সবকিছু সৃষ্টি করতে, বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন।

উপরের তিনটি অনুচ্ছেদে, আমরা তিনটি মহান ঘটনা সংঘটনের বিষয়ে জেনেছি। এই তিনটি মহান ঘটনা ঘটেছিল এবং এগুলির সৃষ্টি হয়েছিল ঈশ্বরের বাক্যসমূহের মাধ্যমে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণেই একের পর এক এক এই ঘটনাগুলি ঈশ্বরের চোখের সামনে আবির্ভূত হয়েছিল। এইভাবে দেখা যায় ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহ: “ঈশ্বর যা বলেন তা অর্জিত হবেই; তিনি আদেশ দিলে তা অবিচল থাকবেই”, শূন্যগর্ভ নয়। ঈশ্বরের এই সারসত্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে যে তাঁর চিন্তাগুলি তৈরী হয়েছে, এবং ঈশ্বর যখন বাচনের উদ্দেশ্যে তাঁর মুখমণ্ডল অবারিত করেন, তখন তাঁর সারসত্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়।

এই অনুচ্ছেদের চূড়ান্ত বাক্যটি পাঠ করা যাক: “তিনি বললেন স্থলভূমিতে উৎপন্ন হোক উদ্ভিদ। উৎপন্ন হোক বিভিন্ন শ্রেণীর শস্য এবং সকল শ্রেণীর সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ: ঠিক তেমনই ঘটল।” ঈশ্বর যখন কথন করছিলেন, ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার পরেই, এই সকল বস্তু সৃষ্ট হয়েছিল, এবং তৎক্ষণাৎ, একগুচ্ছ বিবিধ, ক্ষীণ ও ক্ষুদ্র প্রাণসত্ত্বা মৃত্তিকাগর্ভ থেকে স্খলিতভাবে মাথা তুলে বেরিয়ে আসতে এসেছিল, এবং নিজ-নিজ শরীর থেকে ধূলিকণা ঝেড়ে ফেলার আগেই তারা পরস্পরকে সাগ্রহে আভিবাদন জানাচ্ছিল, বিশ্বের প্রতি হাসিমুখে মাথা দোলাচ্ছিল। তারা সৃষ্টিকর্তাকে তাদের এই জীবনদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিল, এবং বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেছিল যে, তারাও সবকিছুর একটা অংশ, এবং যে, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করতে তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ জীবন উৎসর্গ করবে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ বলা হলে, স্থলভূমি শ্যামলিমায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল, মানুষের উপভোগ্য সকল প্রকার তৃণলতা মাটি ফুঁড়ে উঠে এল, এবং পার্বত ও সমতলভূমি আচ্ছাদিত হল গভীর অরণ্যানী দ্বারা…। এই ঊষর পৃথিবী, যেখানে প্রাণের চিহ্নমাত্র বিদ্যমান ছিল না, তা সত্বর পরিপূর্ণ হল তৃণ, লতাপাতা ও বৃক্ষরাজির দ্বারা, চতুর্দিক প্লাবিত হল শ্যামলিমায়…। তৃণের সৌরভ ও মৃত্তিকার সুবাস ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে, এবং বাতাস সঞ্চালনের সাথে সাথ প্রাণলাভ করল বিবিধ উদ্ভিদে, আরম্ভ হল তাদের বৃদ্ধিপ্রক্রিয়া। একইসাথে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণে, এবং ঈশ্বরের ভাবনা অনুসরণ করে, সকল উদ্ভিদরাশি অনন্ত জীবন চক্র শুরু করল, যেখানে তাদের বৃদ্ধি ঘটে, মুকুলিত ও ফলবান হয়, এবং তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। তারা কঠোরভাবে নিজ নিজ জীবনধারা পালন করতে শুরু করে, শুরু করে সমস্তকিছুর মধ্যে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে…। তাদের সকলের জন্ম নেওয়ার ও বেঁচে থাকার কারণ ছিল সৃষ্টিকর্তার বাক্যসমূহ। তারা সৃষ্টিকর্তার বিরামহীন সংস্থান ও পরিপোষণ পাবে এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করার লক্ষ্যে সর্বদা ভূ-ভাগের সর্বত্র দৃঢ়ভাবে উদ্বর্তিত হবে, এবং তারা সর্বদা সৃষ্টিকর্তার তাদেরকে দেওয়া জীবন-শক্তি প্রদর্শন করবে …

সৃষ্টিকর্তার জীবন অসাধারণ, তাঁর চিন্তা অসাধারন আর তাঁর কর্তৃত্ব অসাধারণ, আর তাই, যখন তাঁর বাক্যসমূহ উচ্চারিত হল, তাঁর চূড়ান্ত ফল ছিল “ঠিক তেমনই ঘটল।” স্পষ্টতই, ঈশ্বর যখন কার্য সম্পাদন করেন, তখন তাঁকে তা স্বহস্তে সাধিত করতে হয় না; তিনি নিছকই তাঁর চিন্তার দ্বারা আজ্ঞা করেন, তথা, তাঁর বাক্যের দ্বারা আদেশ করেন, এবং এইভাবেই বিষয়গুলি অর্জিত হয়। এই দিবসে, ঈশ্বর জলরাশিকে একটি স্থানে একত্রিত করেছিলেন, এরপর, ঈশ্বর স্থলভূমিকে তৃণে পরিপূর্ণ করার পর, সেখানে বেড়ে উঠল বীজধারী উদ্ভিজ্জ, ফল-ধারণকারী বৃক্ষ, এবং ঈশ্বর তাদের প্রত্যেককে প্রকার অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করলেন, এবং প্রতিটির মধ্যে বহন করালেন সেগুলির নিজ নিজ বীজ। এই সমস্তকিছুই ঈশ্বরের চিন্তা ও ঈশ্বরের বাক্যসমূহের আদেশ অনুযায়ী উপলব্ধ হয়েছিল, এবং একাদিক্রমে প্রতিটির আবির্ভাব ঘটেছিল এই নতুন জগতে।

যখন ঈশ্বর তাঁর কার্য আরম্ভ করেননি, তখনই তাঁর মনের মধ্যে তিনি কী অর্জন করতে চান তার একটা চিত্র ছিল, এবং যখন ঈশ্বর সেই বিষয়গুলি অর্জন করতে শুরু করেন, ঠিক তখনই আবার ঈশ্বর সেই চিত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কথন করতে তাঁর মুখ উন্মুক্ত করেছিলেন, তখন ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং শক্তির দৌলতে সমস্তকিছুর মধ্যে বদল ঘটতে শুরু করে। ঈশ্বর তা কীভাবে করেছিলেন, কিংবা কীভাবে তিনি তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন সেসব নির্বিশেষে, সবকিছুই ঈশ্বরের পরিকল্পনামাফিক পর্যায়ক্রমে অর্জিত হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ও কর্তৃত্বের কারণে তথা পর্যায়ক্রমে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই পরিবর্তন তথা সঙ্ঘটন সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব এবং সৃষ্টিকর্তার জীবনের ক্ষমতার অসাধারণত্ব ও মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। তাঁর চিন্তাগুলি কোনো সহজ ধারণা নয়, নয় কোনো শূন্য চিত্র, বরং জীবনিশক্তি ও অসাধারণ কর্মশক্তির অধিকারী এক কর্তৃত্ব, এবং এগুলি হল সবকিছুর পরিবর্তন, পুনরুজ্জীবন, পুনর্নবীকরণ ও ধ্বংসসাধনের ক্ষমতা। এই কারণে, সমস্তকিছু তাঁর চিন্তার দ্বারা ক্রিয়াশীল হয়, এবং, তদসহযোগে, তাঁর মুখনিঃসৃত বাক্যসমূহের দ্বারাই অর্জিত হয় …

সকল বস্তুর আবির্ভাবের পূর্বে, ঈশ্বরের চিন্তায় অনেক আগে থেকেই একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা গঠিত হয়ে গিয়েছিল, এবং বহু পূর্বেই এক নতুন বিশ্ব অর্জিত হয়ে গিয়েছিল। যদিও তৃতীয় দিবসে স্থলভূমিতে সকল প্রকার উদ্ভিজ্জ আবির্ভূত হয়েছিল, তা ঈশ্বরের এই পৃথিবী সৃষ্টির কার্যের পর্যায়গুলি থামাবার কোনো কারণ ছিল না; তিনি তাঁর বাক্যসমূহ বলে যাওয়া অব্যাহত রাখতে, প্রতিটি নতুন বস্তুর সৃষ্টি অর্জন করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি কথন করতেন, তাঁর আদেশ জারি করতেন, এবং তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতেন, এবং প্রকাশ করতেন তাঁর শক্তি, এবং তিনি সকল বস্তু তথা মানবজাতির উদ্দেশ্যে যাকিছু প্রস্তুত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, যাকিছু তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তা প্রস্তুত করেছিলেন …

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১

পূর্ববর্তী: দ্বিতীয় দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব জলরাশির আয়োজন করে, এবং তৈরি করে নভোমণ্ডল এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে মৌলিক একটি স্থান আবির্ভূত হয়

পরবর্তী: চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

আদমের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ

আদিপুস্তক ২:১৫-১৭ প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এদন উদ্যানে কৃষিকর্ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন,...

দ্বিতীয় দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব জলরাশির আয়োজন করে, এবং তৈরি করে নভোমণ্ডল এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে মৌলিক একটি স্থান আবির্ভূত হয়

বাইবেলের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটি পাঠ করা যাক: “ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার...

মানবজাতির জন্য ঈশ্বর যে দৈনন্দিন খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত করেন (পর্ব ২)

আমরা এখন কী কী বিষয়ে আলোচনা করলাম? আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম মানবজাতির বসবাসের পরিবেশ নিয়ে, এবং ঈশ্বর সেই পরিবেশের জন্য কী করেছিলেন ও তিনি...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন