জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: বায়ু

“ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস”, এই বাক্য সম্পর্কিত বহু বিষয় এবং অনেক বিষয়বস্তু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু তোমরা নিজেদের অন্তরে কি জানো যে তোমাদের তাঁর বাক্য প্রদান করা এবং তোমাদের উপর তাঁর শাস্তি ও বিচারের কার্য সম্পাদন করা ছাড়া ঈশ্বর মানবজাতিকে আর কী প্রদান করেছেন? কেউ কেউ হয়ত বলবে, “ঈশ্বর আমাকে অনুগ্রহ আর আশীর্বাদ প্রদান করেন; তিনি আমাকে অনুশাসন আর স্বাচ্ছন্দ্য দেন, এবং তিনি আমাকে সম্ভাব্য প্রতিটি উপায়ে যত্ন আর সুরক্ষা দেন”। অন্যেরা বলবে, “ঈশ্বর আমাকে প্রতিদিনের খাদ্য ও পানীয় প্রদান করেন,” আবার কেউ কেউ এমনটাও বলবে, “ঈশ্বর আমাকে সমস্তকিছু প্রদান করেছেন।” মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলির সম্মুখীন হয়, সেগুলির প্রতি তোমরা হয়তো এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করো যা তোমাদের নিজেদের পার্থিব জীবনের অভিজ্ঞতার পরিধির সাথে সম্পর্কিত। ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে অনেক কিছু প্রদান করেন, যদিও আমরা এখানে যা আলোচনা করছি তা শুধুই মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের পরিধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রকে বর্ধিত করে এবং তোমাদের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলিকে দেখায়। যেহেতু ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস, তিনি সমস্তকিছুর প্রাণ কীভাবে বজায় রাখেন? অন্য কথায় বললে, ঈশ্বর তাঁর যাবতীয় সৃষ্টিকে তাদের অস্তিত্ব এবং তার ভিত্তিস্বরূপ বিধানগুলি বজায় রাখতে কী প্রদান করেন, যাতে তারা তাদের অস্তিত্ব অব্যাহত রাখতে পারে? এটাই আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়। আমি যা বললাম তা কি তোমরা বুঝতে পেরেছ? বিষয়টি তোমাদের কাছে বেশ অপরিচিত বলে মনে হতে পারে, তবে আমি এমন কোনো মতবাদ সম্পর্কে কথা বলব না যা অত্যন্ত গভীর। আমি এটা নিশ্চিত করার প্রভূত প্রচেষ্টা করবো যাতে তোমরা আমার বাক্য শ্রবণ করতে পারো এবং তা থেকে উপলব্ধি লাভ করতে পারো। তোমাদের ভারগ্রস্ত বোধ করার প্রয়োজন নেই—তোমাদের শুধুই যত্নসহকারে শুনতে হবে। যাইহোক, এই মুহূর্তে, আমাকে আরও একবার জোর দিয়ে বলতে হবে: আমি কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছি? বলো। (ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস।) তাহলে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর জন্য কীভাবে যোগান দিয়ে থাকেন? তিনি সমস্ত কিছুকে কী প্রদান করেন যাতে বলা যায় যে “ঈশ্বর সমস্ত কিছুর প্রাণের উৎস”? তোমাদের কি এই বিষয়ে কোনো ধারণা বা চিন্তাভাবনা আছে? মনে হচ্ছে আমি এমন একটি বিষয়ে আলোচনা করছি যা তোমাদের কাছে প্রায় একেবারেই অপরিচিত, তোমাদের হৃদয়ে এবং মস্তিষ্কে। তবে আমি আশা করি, এই বিষয়টিকে এবং আমি যা বলব তাকে তোমরা সংযুক্ত করতে পারবে ঈশ্বরের কার্যের সাথে, কোনো জ্ঞান, মানব সংস্কৃতি, বা গবেষণার সাথে নয়। আমি কথা বলছি শুধুমাত্র ঈশ্বরের সম্পর্কে, স্বয়ং ঈশ্বরের সম্পর্কে। এটাই তোমাদের কাছে আমার পরামর্শ। নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পারছো, তাই নয় কি?

ঈশ্বর মানুষকে অনেক কিছুই প্রদান করেছেন। প্রথমে আমি বলবো মানুষ যা চাক্ষুষ করতে পারে, অর্থাৎ তারা যা অনুভব করতে পারে সে সম্পর্কে। এই জিনিসগুলি মানুষ তাদের অন্তরে গ্রহণ ও উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে, প্রথমে আমরা শুরু করি ঈশ্বর মানবজাতিকে কী প্রদান করেছেন সে বিষয়ে কথা বলতে, ও সেইসাথে বস্তু জগতের একটি আলোচনা করতে।

১. বায়ু

প্রথমে, ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন বায়ু, যাতে মানুষ শ্বাস গ্রহণ করতে পারে। বায়ু এমন একটি পদার্থ যার সংস্পর্শে মানুষ প্রতিদিন আসতে পারে এবং এটি এমন একটি বস্তু যার উপর মানুষ প্রতি মুহূর্তে নির্ভর করে, এমনকি নিদ্রিত অবস্থাতেও। ঈশ্বর যে বায়ু সৃষ্টি করেছেন তা মানুষের জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ: তা তাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য। এই পদার্থটি, যা শুধুই অনুভব করা যায়, দেখা যায় না, তা ছিল ঈশ্বরের সকল সৃষ্টির প্রতি তাঁর প্রথম উপহার। কিন্তু বায়ু সৃষ্টি করার পর, ঈশ্বর কি থেমে গিয়েছিলেন, তাঁর কার্য সমাপ্ত হয়েছে বিবেচনা করে? নাকি তিনি বায়ু কতটা ঘন হবে তা বিবেচনা করেছিলেন? বায়ুর উপাদান কী কী হবে তা কি তিনি বিবেচনা করেছিলেন? বায়ু তৈরী করার সময়ে ঈশ্বর কী ভাবছিলেন? ঈশ্বর কেন বায়ু সৃষ্টি করেছিলেন, আর কী ছিল তাঁর যুক্তি? মানুষের বায়ু প্রয়োজন—তাদের নিঃশ্বাস নিতে হবে। প্রথমত, বায়ুর ঘনত্ব মানুষের ফুসফুসের উপযুক্ত হতে হবে। বায়ুর ঘনত্ব কত তা কেউ জানো? আসলে, এই প্রশ্নের উত্তর সংখ্যা বা তথ্যসম্বলিত ভাবে মানুষের জানার নির্দিষ্ট কোনো প্রয়োজন নেই, প্রকৃতপক্ষে, এর উত্তর জানাটা একেবারেই অনাবশ্যক—সাধারণ একটা ধারণা থাকাই যথেষ্ট। ঈশ্বর বায়ুকে ততটাই ঘনত্ব সহ তৈরী করেছেন যা শ্বাস গ্রহণের জন্য মানুষের ফুসফুসের পক্ষে সর্বাধিক উপযুক্ত। অর্থাৎ, তিনি বায়ুকে এমনভাবে তৈরী করেছেন যাতে সেটি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানব শরীরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে, আর যাতে শ্বাস গ্রহণ করলে শরীরের কোনো ক্ষতি না হয়। বায়ু সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বর এইসব বিষয় বিবেচনা করেছিলেন। এরপর, আমরা কথা বলব বায়ুতে কী থাকে তা নিয়ে। এর উপকরণগুলি মানুষের পক্ষে বিষাক্ত নয় এবং সেগুলি ফুসফুস কিংবা শরীরের অন্যান্য কোনো অঙ্গের কোনো ক্ষতি করবে না। ঈশ্বরকে এই সবকিছুই বিবেচনা করতে হয়েছিল। ঈশ্বরকে বিবেচনা করতে হয়েছিল যাতে মানুষ প্রশ্বাস হিসাবে যে বায়ু গ্রহণ করে তা যেন সহজে শরীরে প্রবেশ করে ও শরীর থেকে নির্গত হয়, এবং শ্বাস গ্রহণ করার পর, বায়ুর মধ্যস্থ পদার্থগুলির প্রকৃতি ও পরিমাণ যেন এমন থাকে যাতে রক্ত, এবং সেইসাথে ফুসফুস-মধ্যস্থ বর্জ্য বায়ু, এবং সম্পূর্ণ শরীর যথাযথভাবে বিপাক লাভ করে। উপরন্তু, তাঁকে এও বিবেচনা করতে হয়েছিল যাতে বায়ুতে কোনো রকম বিষাক্ত পদার্থ না থাকে। বায়ুর এই বিশেষ দু’টি মান সম্পর্কে তোমাদের বলার উদ্দেশ্য তোমাদের বিশেষ কোনো জ্ঞান প্রদান করা নয়, বরং এটা দেখানো যে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি-মধ্যস্থ প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজের বিবেচনার সাথে সঙ্গতি রেখে, আর তাঁর সৃষ্ট সবকিছুই হল সেগুলির হিসাবে সর্বোত্তম। উপরন্তু, বায়ুর মধ্যে থাকা ধূলিকণার পরিমাণ; এবং পৃথিবীর বুকে ধূলিকণা, বালুকণা আর নোংরার পরিমাণ; আর সেই সাথে আকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসা ধুলো—ঈশ্বরের এই বিষয়গুলি পরিচালনা করারও নিজস্ব উপায় আছে, আছে সেগুলিকে পরিষ্কার করে সরিয়ে ফেলার কিংবা বিলীন করে ফেলার উপায়ও। বায়ুতে যদিও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ধুলো থাকে, কিন্তু ঈশ্বর তা এমনভাবে তৈরী করেছেন যাতে সেগুলো মানুষের শরীরের কোনো ক্ষতি করতে না পারে বা মানুষের শ্বাস গ্রহণকে বিপন্ন না করে, এবং তিনি ধূলিকণাগুলিকে এমন আকারে গড়েছেন যা শরীরের পক্ষের ক্ষতিকারক নয়। ঈশ্বরের দ্বারা বায়ুর সৃষ্টি কি একটি রহস্য নয়? তা কি তাঁর মুখ থেকে নিঃশ্বাসের সাথে এক ঝলক বায়ু নির্গমনের মতো একটি সহজ কাজ ছিল? (না।) এমনকি তাঁর সহজতম বস্তুগুলি সৃষ্টির মধ্যেও, ঈশ্বরের রহস্য, তাঁর মনের কার্য, তাঁর চিন্তা করার পদ্ধতি, এবং তাঁর প্রজ্ঞা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান। ঈশ্বর কি বাস্তববাদী নন? (হ্যাঁ, তিনি বাস্তববাদী।) এর অর্থ হল যে এমনকি সহজ বস্তুগুলি সৃষ্টি করার মধ্যেও, ঈশ্বর মনুষ্যজাতির কথাই ভাবছিলেন। প্রথমত, মানুষ যে বায়ু শ্বাস হিসাবে গ্রহণ করে তা পরিষ্কার, আর তার উপাদানগুলি মানুষের শ্বাস গ্রহণের পক্ষে উপযুক্ত, সেগুলি বিষাক্ত নয় অথবা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না; ঠিক একইভাবে, বায়ুর ঘনত্বও মানুষের শ্বাস গ্রহণের পক্ষে উপযুক্ত। এই বায়ু, যা মানুষ ক্রমাগত গ্রহণ ও নির্গমন করে, তা মানব শরীরের পক্ষে, মানুষের দেহের পক্ষে আবশ্যক। এই কারণেই মানুষ অবাধে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে, কোনো সীমাবদ্ধতা বা উদ্বেগ ছাড়াই। তারা তাই স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে। বায়ু এমন একটা বস্তু যা ঈশ্বর শুরুতেই সৃষ্টি করেছিলেন, এবং যা মানুষের শ্বাস গ্রহণের পক্ষে অপরিহার্য।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৮

পূর্ববর্তী: কাহিনী ২: এক প্রকাণ্ড পর্বত, একটি ছোট্ট নদী, এক তুমুল হাওয়া, এবং একটি দৈত্যাকার তরঙ্গ

পরবর্তী: জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: তাপমাত্রা

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

শয়তানকে দেখে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্গুনসম্পন্ন মনে হলেও, শয়তানের সারসত্য নিষ্ঠুর ও অশুভ

মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তার সুনাম নির্মাণ করে, এবং নিজেকে প্রায়শই ন্যায়পরায়ণতার একজন পুরোধা তথা আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।...

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন