আন্তরিক অনুশোচনার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের করুণা ও সহিষ্ণুতা লাভ করে (পর্ব ৪)

মানবজাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তার আন্তরিক অনুভূতি

মানুষ প্রায়শই বলে যে ঈশ্বরকে জানা মুখের কথা নয়। কিন্তু, আমি বলি ঈশ্বরকে জানা আদৌ কঠিন কাজ নয়, কারণ ঈশ্বর মানুষকে দেখানোর জন্য বারংবার তাঁর ক্রিয়াকর্ম প্রদর্শিত করেন। মানবজাতির সঙ্গে তাঁর সংলাপে ঈশ্বর কখনো ক্ষান্তি দেননি, মানুষের কাছ থেকে নিজেকে কখনো তিনি প্রচ্ছন্ন রাখেননি, এবং নিজেকে তিনি লুক্কায়িতও করেননি। তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর ধারণা, তাঁর বাক্য এবং তাঁর ক্রিয়াকর্ম, সকলই মানুষের কাছে প্রকাশিত। তাই, মানুষ ঈশ্বরকে জানতে চাইলে, নানা ধরনের উপায় ও পদ্ধতির মাধ্যমে তারা তাঁকে বুঝে ঊঠতে ও জেনে ঊঠতে পারে। যে কারণে মানুষ অন্ধের মতো ভাবে যে ঈশ্বর ইচ্ছে করেই তাদের এড়িয়ে গেছেন, ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের থেকে নিজেকে গোপন রেখেছেন, মানুষকে তাঁকে উপলব্ধি করতে বা জানতে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় ঈশ্বরের নেই, সেই কারণটা হল: ঈশ্বর কে তা মানুষ জানে না এবং ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে তারা ইচ্ছুকও নয়। এমনকি তার থেকেও বড়ো কারণ হলো, সৃষ্টিকর্তার চিন্তাভাবনা, বাক্য বা কর্মের সাথে মানুষ নিজেদের সংশ্লিষ্ট করে না…। সত্যি কথা বলতে কি, কোনো ব্যক্তি যদি শুধু তার অবসর সময়টুকু সৃষ্টিকর্তার বাক্য বা কাজের বিষয়ে মনোযোগী হতে এবং তা উপলব্ধি করতে ব্যবহার করে, এবং তারা যদি সৃষ্টিকর্তার চিন্তাভাবনা ও তাঁর হৃদয়ের কণ্ঠস্বরের প্রতি সামান্য একটু মনোযোগ দেয়, তাহলে সেই ব্যক্তির পক্ষে এটা উপলব্ধি করা কঠিন হবে না যে সৃষ্টিকর্তার চিন্তা, বাক্য ও কর্ম দৃষ্টিগ্রাহ্য ও স্বচ্ছ। একই ভাবে, এটা উপলব্ধি করতেও যৎসামান্য প্রচেষ্টা লাগবে যে সৃষ্টিকর্তা সর্বদা মানুষের মধ্যেই আছেন, তিনি সবসময় মানুষ ও সমগ্র সৃষ্টির সাথে কথোপকথনরত, এবং প্রত্যেকদিন তিনি নতুন নতুন কর্ম সম্পাদন করছেন। মানুষের সাথে তাঁর সংলাপের মধ্যে তাঁর সারসত্য ও প্রকৃতি অভিব্যক্ত হয়; তাঁর চিন্তা ও ধারণা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর কর্মের মধ্যে; তিনি প্রতিনিয়ত মানবজাতিকে সঙ্গ দেন ও পর্যবেক্ষণ করেন। মানবজাতি ও সমগ্র সৃষ্টির সাথে তিনি নিস্তব্ধভাবে তাঁর নিরুচ্চার বাক্যের মাধ্যমে বলেন: “আমি স্বর্গে রয়েছি, এবং আমি আমার সৃষ্টির মাঝখানে আছি। আমি লক্ষ্য রাখছি; আমি অপেক্ষা করছি; আমি তোমার পাশেই আছি…।” তাঁর করযুগল উষ্ণ ও বলিষ্ঠ; তাঁর পদক্ষেপ লঘু; তাঁর কণ্ঠস্বর কোমল ও মাধুর্যময়; তাঁর আকার সতত সঞ্চারমান, তা সমগ্র মানবজাতিকে আলিঙ্গন করে; তাঁর মুখের অভিব্যক্তি সুন্দর ও সৌম্য। তিনি কখনো ছেড়ে যাননি, কখনো উধাও হননি। তিনি মানবজাতির নিত্যসঙ্গী, তাদের পার্শ্ব কখনো ত্যাগ করেন না। তিনি যখন নীনবী নগরীকে রক্ষা করেন তখন মানুষের জন্য তাঁর নিয়োজিত প্রযত্ন ও সবিশেষ স্নেহ এবং প্রকৃত উদ্বেগ ও ভালোবাসা একটু একটু করে প্রদর্শিত হয়েছিল। বিশেষ করে যিহোবা ঈশ্বর ও যোনার মধ্যে কথাবার্তা তাঁর নিজের সৃষ্ট মানবজাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তার স্নেহপরায়ণতাকে পূর্ণভাবে প্রকাশ করে। ওই বাক্যগুলির মাধ্যমে তুমি মানুষের প্রতি ঈশ্বরের আন্তরিক অনুভূতির বিষয়ে এক গভীর উপলব্ধি লাভ করতে পারো …

নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদটি যোনা পুস্তিকার ৪:১০-১১ স্তবকে লিপিবদ্ধ আছে: “যিহোবা বললেন, তুমি এই লাউগাছটির জন্য কোন পরিশ্রম করনি, এর যত্নও করনি। রাতারাতি এটি বেড়ে উঠেছিল এবং পরের দিন শুকিয়ে গেছে। এর জন্য যদি তোমার এত দুঃখ হয় তাহলে ভেবে দেখো, এই মহানগরী নীনবী, যার মধ্যে রয়েছে এক লক্ষ কুড়ি হাজারেরও বেশী মানুষ—যারা নিজেদের দক্ষিণ হস্তের সাথে বাম হাতের তফাৎ ধরতে পারে না, আর আছে অসংখ্য পশু, তাদের জন্য কি আমার মমতা থাকবে না?” এগুলি ঈশ্বর ও যোনার মধ্যে কথোপকথন থেকে গৃহিত যিহোবা ঈশ্বরের প্রকৃত বাক্য। এই বাক্য বিনিময় যদিও সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তা মানবজাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তার দরদ এবং মানবজাতিকে পরিত্যাগ করতে তাঁর অনাগ্রহে কানায় কানায় পূর্ণ। এই বাক্যগুলি ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাঁর হৃদয়ে প্রকৃত যে মনোভাব ও অনুভূতি ধারণ করেন তাকে ব্যক্ত করে। মানুষের দ্বারা কদাচিৎ পূর্বশ্রুত এই পরিষ্কার ও সুব্যক্ত বাক্যসমূহ মাধ্যমে ঈশ্বর মানুষদের নিয়ে তাঁর প্রকৃত অভিপ্রায় বিবৃত করেছেন। এই বাক্য বিনিময় ঈশ্বর নীনবীর মানুষদের প্রতি যে মনোভাবটি পোষণ করেছিলেন তার ব্যাখ্যা করে—কিন্তু তা কেমন ধরনের মনোভাব? এ হল সেই মনোভাব, নীনবীবাসীদের অনুতাপের আগে ও পরে যা তিনি তাদের প্রতি পোষণ করেছিলেন, এবং যা নিয়ে তিনি মানবজাতির প্রতি আচরণ করেন। এই বাক্যগুলির মধ্যে তাঁর চিন্তাভাবনা ও তাঁর প্রকৃতি নিহিত আছে।

এই বাক্যগুলির মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কোন ভাবনা প্রকাশ পায়? পাঠ করার সময় তোমরা যদি খুঁটিনাটির প্রতি মনোযোগ দাও তাহলে এটা লক্ষ্য করা তোমাদের পক্ষে কঠিন হবে না যে তিনি “অনুকম্পা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন; এই শব্দটির ব্যবহার মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রকৃত মনোভাবটিকে প্রদর্শন করে।

আক্ষরিক অর্থের স্তরে মানুষ “অনুকম্পা” শব্দটিকে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে: প্রথমত, তা “ভালোবাসা ও সুরক্ষিত করা, কিছুর প্রতি দরদ অনুভব করা” বোঝায়; দ্বিতীয়ত, তা “প্রীতিপূর্ণভাবে ভালোবাসা” বোঝায়; এবং সব শেষে, তা “কোনোকিছুকে আহত করতে অনিচ্ছুক হওয়া এবং এরকম কোনো কাজ সহ্য করতে অসমর্থ হওয়া” বোঝায়। সংক্ষেপে, শব্দটি মমতাময় স্নেহ ও প্রেম, এবং সেই সঙ্গে কাউকে বা কোনোকিছুকে পরিত্যাগ করার অনিচ্ছাকে জ্ঞাপন করে; শব্দটি মানুষের প্রতি ঈশ্বরের করুণা ও সহিষ্ণুতাকে সূচিত করে। মানুষের দ্বারা সাধারণভাবে উচ্চারিত এই শব্দটিকে ঈশ্বর ব্যবহার করেছিলেন, এবং তা সত্ত্বেও শব্দটি ঈশ্বরের হৃদয়ের কণ্ঠস্বর ও মানবজাতির প্রতি তাঁর মনোভাবকে উন্মোচিত করে ধরতেও সমর্থ।

যদিও নীনবী নগরী সদোমের মতোই ভ্রষ্ট, দুষ্ট ও হিংস্র মানুষে পূর্ণ ছিল, কিন্তু তাদের অনুতাপ ঈশ্বরের হৃদয় পরিবর্তন ঘটিয়েছিল এবং তাদের ধ্বংস না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া করিয়েছিল। ঈশ্বরের বাক্য ও নির্দেশকে তারা যেভাবে গ্রহণ করেছিল তা সদোমের নাগরিকদের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এক মনোভাব প্রদর্শন করার কারণে, এবং ঈশ্বরের কাছে তাদের সততাপূর্ণ সমর্পণ ও তাদের পাপের জন্য অকৃত্রিম অনুতাপ, এবং সেই সাথে সকল বিষয়ে তাদের অকপট ও হৃদ্য আচরণের কারণে, ঈশ্বর আরেকবার তাঁর নিজের আন্তরিক অনুকম্পা অভিব্যক্ত করেছিলেন এবং তাদের তা অর্পণ করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষকে যা প্রদান করেন এবং মানুষের প্রতি তাঁর যে অনুকম্পা তার অনুকরণ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়, এবং কোনো মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের করুণা, তাঁর সহিষ্ণুতা, বা মানুষের প্রতি তাঁর আন্তরিক অনুভূতির অধিকারী হওয়া অসম্ভব। এমন কেউ কি আছে যাকে তুমি একজন মহান পুরুষ বা মহতী নারী বা এমনকি একজন অতিমানব মনে করো, যে একজন মহান মানব বা মহতী মানবী হিসাবে, এক উচ্চ স্থান থেকে, বা উচ্চতম স্থান থেকে, কথা বলার সময় মানবজাতি বা সৃষ্টির প্রতি এই ধরনের বক্তব্য রাখতে পারে? মানবজাতির মধ্যে কারা মানব জীবনের পরিস্থিতিকে তাদের হাতের তালুর মতো জানতে পারে? মানুষের অস্তিত্বের বোঝা ও দায়িত্বভার কে বহন করতে পারে? একটি নগরীর বিনাশ ঘোষণা করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন কে আছে? এবং একটি নগরীকে মার্জনা করার মতো যোগ্যতাই বা কার আছে? কে বলতে পারে নিজের সৃষ্টির প্রতি তার সমবেদনা রয়েছে? একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই তা পারেন! একমাত্র সৃষ্টিকর্তারই এই মানবজাতির প্রতি স্নেহার্দ্র মমতাবোধ রয়েছে। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই এই মানবজাতির প্রতি সহমর্মীতা ও স্নেহ প্রদর্শন করেন। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই এই মানবজাতির প্রতি একটা প্রকৃত অভঙ্গুর স্নেহ পোষণ করেন। একইভাবে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই এই মানবজাতির উপর করুণা সংস্থাপন করতে পারেন এবং তাঁর সমগ্র সৃষ্টির প্রতি সমবেদনাশীল হতে পারেন। মানুষের প্রত্যেকটি কার্যকলাপ দেখে তাঁর হৃদয় উল্লম্ফিত ও ব্যথাতুর হয়ে ওঠে: মানুষের পাপাচার ও ভ্রষ্টতা দেখে তিনি রুষ্ট, মর্মপীড়িত ও শোকাহত হন; মানুষের অনুতাপ ও বিশ্বাস দেখে তিনি তৃপ্ত, আনন্দিত, ক্ষমাশীল ও উল্লসিত হন; তাঁর প্রত্যেকটি চিন্তা ও ভাবনা মানবজাতির জন্য অস্তিমান এবং মানবজাতিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়; তিনি যা ও তাঁর যা আছে সম্পূর্ণরূপে তা মানবজাতির স্বার্থেই অভিব্যক্ত হয়; তাঁর যাবতীয় আবেগ মানবজাতির অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে বিজড়িত। মানবজাতির স্বার্থে, তিনি পরিভ্রমণ করেন ও দিগ্বিদিকে ধাবিত হন; নিঃশব্দে তিনি তাঁর জীবনের প্রত্যেকটি খণ্ড বিলিয়ে দেন; তাঁর জীবনের প্রতিটি পল-অণুপলকে উৎসর্গ করেন …। তাঁর নিজের জীবনকে কীভাবে সযত্নে লালন হয় তিনি কখনো জানেননি, তবুও যে মানবজাতিকে তিনি স্বয়ং সৃষ্টি করেছিলেন তার প্রতি তিনি সর্বদা সহানুভূতি দেখিয়েছেন…। তাঁর যাকিছু আছে তার সমস্তই তিনি এই মানবতাকে দান করেন…। বিনা শর্তসাপেক্ষে ও প্রতিদানের কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই তিনি তাঁর করুণা ও সহিষ্ণুতা প্রদান করেন। এটা তিনি করেন যাতে মানবজাতি তাঁর চক্ষুর সম্মুখে ও তাঁর প্রদত্ত জীবন-রসদ গ্রহণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। তিনি এমনটা করেন শুধুমাত্র যাতে মানবজাতি একদিন তাঁর কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে পারে এবং সনাক্ত করতে পারে যে তিনিই মানুষের অস্তিত্বকে পোষণ করেন এবং সকল সৃষ্টির জীবন সরবরাহ করেন।

সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রতি তাঁর প্রকৃত অনুভূতি ব্যক্ত করেন

যিহোবা ঈশ্বর ও যোনার মধ্যে এই কথোপকথন নিঃসন্দেহে মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার প্রকৃত অনুভূতির এক অভিব্যক্তি। একদিকে তা তাঁর সার্বভৌমত্বের অধীন সকল সৃষ্টির বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার উপলব্ধি মানুষকে অবহিত করে; যিহোবা ঈশ্বর যেমন বলেন, “এই মহানগরী নীনবী, যার মধ্যে রয়েছে এক লক্ষ কুড়ি হাজারেরও বেশী মানুষ—যারা নিজেদের দক্ষিণ হস্তের সাথে বাম হাতের তফাৎ ধরতে পারে না, আর আছে অসংখ্য পশু, তাদের জন্য কি আমার মমতা থাকবে না?” অন্যভাবে বললে, নীনবীর বিষয়ে ঈশ্বরের উপলব্ধি মোটেই দায়সারা গোছের ছিল না। শুধু যে তিনি নগরীর ভিতরের সজীব বস্তুর সংখ্যা (মানুষ ও পালিত পশুদের ধরে) জানতেন তা-ই নয়, কতজন ডান ও বাঁ হাতের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারতো না তিনি তা-ও জানতেন—অর্থাৎ, তিনি জানতেন নগরীতে কতজন শিশু ও যুবা বিদ্যমান ছিল। মানবজাতি সম্বন্ধে ঈশ্বরের সর্বাত্মক উপলব্ধির এটা একটা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ। অপর পক্ষে, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাবকে এই কথোপকথন মানুষদের জ্ঞাপন করে, অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার হৃদয়ে মানবতার ভারকে জ্ঞাপন করে। ঠিক যেমন যিহোবা ঈশ্বর বলেছিলেন: “তুমি এই লাউগাছটির জন্য কোন পরিশ্রম করনি, এর যত্নও করনি। রাতারাতি এটি বেড়ে উঠেছিল এবং পরের দিন শুকিয়ে গেছে। এর জন্য যদি তোমার এত দুঃখ হয় তাহলে ভেবে দেখো, এই মহানগরী নীনবী…, তাদের জন্য কি আমার মমতা থাকবে না?” এগুলি যোনার প্রতি যিহোবা ঈশ্বরের তিরস্কার বাক্য, কিন্তু এ সমস্তই সত্য।

যদিও যোনাকে নীনবীর মানুষদের কাছে যিহোবা ঈশ্বরের বাক্যগুলি ঘোষণা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু না সে যিহোবা ঈশ্বরের অভিপ্রায় উপলব্ধি করেছিল, না উপলব্ধি করেছিল নগরীর মানুষদের জন্য তাঁর উদ্বেগ ও প্রত্যাশা। এই তিরস্কারের মাধ্যমে ঈশ্বর বলতে চেয়েছেন যে, মানুষ হল ঈশ্বরের নিজের হাতে উৎপাদিত ফসল, এবং প্রত্যেকটি মানুষের উপর তিনি শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টা ব্যয়িত করেছেন, প্রতিটি মানুষ তাদের কাঁধে ঈশ্বরের প্রত্যাশা বহন করে, এবং প্রত্যেক মানুষ ঈশ্বরের জীবনের রসদ উপভোগ করে; প্রতিটি মানুষের জন্য ঈশ্বর কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টাস্বরূপ মূল্য চুকিয়েছেন। এই তিরস্কার যোনাকে এও জানিয়েছিল যে যোনা নিজে লতাগাছটির প্রতি যে পরিমাণ সহানুভূতিশীল, ঈশ্বর মানুষের প্রতিও ঠিক ততটাই সহানুভূতিশীল, যে মানুষ তাঁর নিজের হাতের সৃজন। ঈশ্বর কোনোভাবেই মানবজাতিকে লঘুভাবে, বা শেষ সম্ভাব্য মুহূর্ত অবধি না দেখে, পরিত্যাগ করতেন না, বিশেষ করে যেহেতু নগরীর ভিতর এতো শিশু ও নিরপরাধ পশু ছিল। ঈশ্বরের সৃষ্টির এই সকল নবোদ্ভিন্ন ও অবোধ ফসল, যারা এমনকি নিজেদের ডান হাত ও বাঁ হাতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতো না, তাদের ক্ষেত্রে তো আরো অকল্পনীয় যে ঈশ্বর এতো হঠকারী ভাবে তাদের জীবন কেড়ে নেবেন ও তাদের নিয়তি নির্ধারণ করবেন। ঈশ্বর দেখার আশা রাখতেন যে তারা বড়ো হয়ে ওঠবে; তিনি আশা করতেন তারা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মতো একই পথে হাঁটবে না, আবার তাদের যিহোবা ঈশ্বরের সাবধানবাণী শুনতে হবে না, এবং তারা নীনবীর অতীতের সাক্ষ্যদান করবে। তার থেকেও বড়ো কথা, ঈশ্বর অনুতপ্ত হওয়ার পর নীনবী নগরীকে দেখার, অনুতাপ-পরবর্তীকালে নীনবীর ভবিষ্যৎকে দেখার, এবং আরো গুরুত্ব দিয়ে, নীনবীকে আরেকবার ঈশ্বরের করুণা অধীনে বাস করতে দেখার আশা পোষণ করেছিলেন। তাই, ঈশ্বরের চোখে, সৃষ্টির ওই ফসলগুলি, যারা তাদের বাঁ হাত ও ডান হাতের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারতো না, তারাই ছিল নীনবীর ভবিষ্যৎ। তারা নীনবীর অবজ্ঞেয় অতীতকে বহন করবে, ঠিক যেমন যিহোবা ঈশ্বরের পথপ্রদর্শনার অধীনে তারা নীনবীর অতীত ও ভবিষ্যৎ উভয়ের সাক্ষ্যদানের গুরু দায়িত্ব বহন করবে। তাঁর প্রকৃত অনুভূতির এই বিঘোষণে যিহোবা ঈশ্বর মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার করুণার সামগ্রিকতাকে উপস্থাপিত করেছিলেন। এটি মানুষকে দেখায় যে “সৃষ্টিকর্তার করুণা” কোনো ফাঁকা বুলি নয়, এটি কোনো শূণ্যগর্ভ প্রতিশ্রুতিও নয়; এর সুনির্দিষ্ট নীতি, পদ্ধতি ও লক্ষ্য আছে। ঈশ্বর সত্য ও বাস্তব, এবং তিনি কোনো ছলনা বা ছদ্মবেশ ব্যবহার করেন না, এবং এই একই ভাবে, প্রত্যেক কালে ও যুগে তাঁর করুণা মানুষের উপর অনিঃশেষভাবে অর্পিত হয়। যাই হোক, এমনকি আজকের দিন অবধি, যোনার সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার কথোপকথন কেন তিনি মানুষকে করুণা প্রদর্শন করেন, কীভাবে তিনি মানুষের প্রতি করুণা প্রদর্শন করেন, মানুষের ক্ষেত্রে তিনি কতটা সহিষ্ণু এবং মানুষের প্রতি তাঁর প্রকৃত অনুভূতির বিষয়ে তাঁর একমাত্র, সামগ্রিক বাচনিক বিবৃতি। এই কথোপকথনের সময় যিহোবা ঈশ্বরের সংক্ষিপ্ত বাক্যগুলি মানুষের প্রতি তাঁর ভাবনাচিন্তাকে এক অখণ্ড সমগ্রতার আকারে প্রকাশ করে; এগুলি মানুষের প্রতি তাঁর অন্তরের মনোভাবের প্রকৃত অভিব্যক্তি, এবং এগুলি মানুষের উপর তাঁর অপর্যাপ্ত করুণা বর্ষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণও বটে। তাঁর করুণা শুধুমাত্র মানবতার বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্মের উপরেই ন্যস্ত হয় না, তা মানবতার স্বল্পবয়স্ক সদস্যদেরও মঞ্জুর করা হয়, এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে, যেমন সতত হয়ে চলেছে। ঈশ্বরের ক্রোধ যদিও মানবতার নির্দিষ্ট কোণে নির্দিষ্ট যুগে মাঝে-মাঝেই নেমে আসে, কিন্তু ঈশ্বরের করুণার প্রবাহ কখনো স্তিমিত হয়নি। তাঁর করুণার সাহায্যে তিনি তাঁর সৃষ্টির একের পর এক প্রজন্মকে পথপ্রদর্শিত ও চালিত করেন, এবং সৃষ্টির একের পর এক প্রজন্মকে রসদ যোগান ও পুষ্টিবিধান করেন, কারণ মানুষের প্রতি তাঁর প্রকৃত অনুভূতি কখনো পরিবর্তিত হবে না। যিহোবা ঈশ্বর ঠিক যেমনটি বলেছেন: “… কি আমার মমতা থাকবে না?” তিনি তাঁর নিজের সৃষ্টির প্রতি সর্বদা সহানুভূতিশীল থেকেছেন। এই হল সৃষ্টিকর্তার ধার্মিক প্রকৃতির করুণা, এবং এটি সৃষ্টিকর্তার সামগ্রিক অনন্যতাও বটে!

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ২

পূর্ববর্তী: আন্তরিক অনুশোচনার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের করুণা ও সহিষ্ণুতা লাভ করে (পর্ব ৩)

পরবর্তী: ঈশ্বরের দ্বারা, এবং বাইবেলে, ইয়োবের মূল্যায়ন

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন