শয়তানকে দেখে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্গুনসম্পন্ন মনে হলেও, শয়তানের সারসত্য নিষ্ঠুর ও অশুভ
মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তার সুনাম নির্মাণ করে, এবং নিজেকে প্রায়শই ন্যায়পরায়ণতার একজন পুরোধা তথা আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। ন্যায়পরায়ণতাকে রক্ষা করার মিথ্যে ছলনা করে সে মানুষের ক্ষতি করে, তাদের আত্মাকে গ্রাস করে, এবং মানুষকে অনুভূতিশূন্য, প্রতারিত ও প্ররোচিত করতে সব ধরনের উপায় অবলম্বন করে। তার লক্ষ্য মানুষ যাতে তার দুষ্ট আচরণের অনুমোদন করে ও সঙ্গী হয়, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমতার বিরোধিতায় তারা যাতে তার সাথে যোগদান করে। কিন্তু কেউ যখন তার দুরভিসন্ধি ও চক্রান্তের স্বরূপ ধরে ফেলে এবং তার নীচ চারিত্রিক বৈশিষ্টকে বুঝে ফেলে, এবং কেউ যখন তার দ্বারা আর পদদলিত ও প্রতারিত হতে বা তার দাসত্ব করে যেতে চায় না, বা তার সঙ্গে একসাথে দণ্ডিত ও বিনষ্ট হতে চায় না, তখন শয়তান তার পূর্বের ঋষিপ্রতিম অবয়ব পাল্টে ফেলে এবং কৃত্রিম মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে আসল চেহারাকে প্রকাশ করে, যে চেহারা পাপপূর্ণ, বিদ্বেষপূর্ণ, কুৎসিত এবং নৃশংস। যারা তাকে অনুসরণ করতে অস্বীকৃত হয় এবং যারা তার অশুভ শক্তিগুলির বিরোধিতা করে, তাদের সকলকে সমূলে বিনাশ করার থেকে বেশি আনন্দ সে আর কিছুতে পায় না। এই রকম একটা পর্যায়ে এসে, শয়তান আর একটা বিশ্বাসযোগ্য, ভদ্রলোকসুলভ চেহারা ধারণ করতে পারে না; পরিবর্তে, নিরীহ মানুষের ছদ্মবেশের আড়ালে ঢাকা তার সত্যিকারের কুৎসিত ও শয়তানোচিত অবয়ব প্রকাশিত হয়ে পড়ে। শয়তানের অভিসন্ধি একবার প্রকাশ্যে এসে গেলে, এবং তার প্রকৃত চেহারা একবার আনাবৃত হয়ে গেলে, সে রাগে ফেটে পড়বে এবং তার বর্বরতাকে উন্মোচিত করবে। এরপর, মানুষের ক্ষতি করার ও মানুষকে গ্রাস করার তার যে বাসনা তা কেবল তীব্রতর হবে। এর কারণ হল, মানুষের সত্যজ্ঞান জাগ্রত হলে সে রুষ্ট হয়, এবং স্বাধীনতা ও আলোকের আকাঙ্খায় এবং তার কারাগার ভেঙে মুক্ত হওয়ার জন্য মানুষের আকুলতার কারণে শয়তানের মধ্যে এক প্রবল প্রতিহিংসাপরায়ণতা জন্ম নেয়। তার রাগের উদ্দেশ্য তার পাপাচারকে সুরক্ষিত ও অনুমোদিত করা, এবং এই রাগ তার বর্বর প্রকৃতির একটা যথার্থ উদ্ঘাটনও বটে।
প্রত্যেকটি বিষয়ে শয়তানের আচরণ তার দুষ্ট প্রকৃতিকে উন্মোচিত করে। মানুষের উপর শয়তানের সম্পাদিত সকল মন্দ কাজের মধ্যে—মানুষ যাতে তাকে অনুসরণ করে সেই উদ্দেশ্যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার তার প্রারম্ভিক প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে, মানুষকে তার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা পর্যন্ত, যেখানে সে মানুষকে তার ক্লীন্ন ক্রিয়াকলাপের মধ্যে টেনে আনে, তার আসল চেহারা উন্মুক্ত হয়ে গেলে এবং মানুষ তাকে চিনে ফেলে পরিত্যাগ করার পর মানুষের প্রতি তার প্রতিহিংসাপরায়ণতা পর্যন্ত—এই কাজগুলির একটিও শয়তানের পাপাকীর্ণ সারসত্যকে অনাবৃত করতে ব্যর্থ হয় না, এই সত্য প্রতিপাদনেও ব্যর্থ হয় না যে, ইতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে শয়তানের কোনো সম্পর্ক নেই এবং যে, সকল অশুভ জিনিসের উৎস শয়তান। তার প্রত্যেকটি কাজকর্ম তার পাপকে সুরক্ষিত করে, তার দুষ্ট কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, ন্যায্য ও ইতিবাচক বিষয়গুলির বিরোধিতা করে, এবং মানুষের স্বাভাবিক অস্তিত্বের নিয়ম-কানুনকে ধ্বংস করে। শয়তানের এই কাজগুলি ঈশ্বরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, এবং ঈশ্বরের ক্রোধের দ্বারা এগুলি বিনষ্ট হবে। যদিও শয়তানের নিজস্ব রোষ আছে, কিন্তু তার রাগ তার দুষ্ট প্রকৃতিকে উদ্গিরণ করার একটি উপায় মাত্র। শয়তান যে কারণে ধৈর্যচ্যুত ও ক্রোধোন্মত্ত তা হল: তার অকহতব্য অভিসন্ধি ফাঁস হয়ে গেছে; তার চক্রান্ত সহজে রেহাই পায়নি; ঈশ্বরকে প্রতিস্থাপিত করে নিজে ঈশ্বর সেজে বসার জন্য তার উন্মত্ত আকাঙ্খা ও বাসনাকে আঘাত করে গতিরুদ্ধ করা হয়েছে; এবং সমস্ত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার তার যে লক্ষ্য তা এখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে ও কোনোদিনও অর্জন করা যাবে না। শয়তানের চক্রান্তের সাফল্যলাভকে যা প্রতিহত করেছে এবং শয়তানের পাপের অবাধ সংঘটন ও প্রসারকে সংক্ষিপ্ত করেছে তা হল ঈশ্বর কর্তৃক পুনঃপুন তাঁর ক্রোধের আবাহন, বারংবার। এই কারণে শয়তান একই সাথে ঈশ্বরকে ঘৃণা করে ও ভয় পায়। যতবার ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসে, তা যে শুধুমাত্র শয়তানের প্রকৃত বীভৎস চেহারার মুখোশ উন্মোচিত করে তা-ই নয়, শয়তানের দুষ্ট বাসনাকেও প্রকাশ্যে অনাবৃত করে, এবং তা করতে গিয়ে, মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের রাগের কারণও উন্মোচিত হয়ে যায়। শয়তানের রাগের বিস্ফোরণ তার দুষ্ট প্রকৃতির এক যথার্থ উদ্ঘাটন এবং তার দুরভিসন্ধির অনাবৃতকরণ। নিশ্চিতভাবে, যতবার শয়তান রাগান্বিত হয়ে ওঠে, তা মন্দ বস্তুর বিনাশ এবং ইতিবাচক বস্তুর সুরক্ষা ও অবিরামতার ইঙ্গিত দেয়; তা এই সত্যের বার্তা দেয় যে ঈশ্বরের ক্রোধকে অবমাননা করা যায় না।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ২