ইয়োবকে শয়তানের প্রথম প্রলোভন (তার গবাদিপশু চুরি হয়ে যায় এবং সন্তানদের উপরেও বিপর্যয় নেমে আসে)
১. ঈশ্বরের কথিত বাক্যসমূহ
ইয়োবে ১:৮ এবং যিহোবা শয়তানকে বললেন, তুমি কি আমার সেবক ইয়োবের কথা বিবেচনা করেছ, তার মত লোক পৃথিবীতে কেউ নেই, যে নিখুঁত এবং ন্যায়পরায়ণ, যে ঈশ্বরে ভয় পায় ও মন্দ পথ পরিত্যাগ করে?
ইয়োবে ১:১২ এবং যিহোবা শয়তানকে বললেন, দেখো, ওর যা কিছু আছে সব আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তুমি শুধু ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। তাই শয়তান যিহোবার সামনে থেকে চলে গেল।
২. শয়তানের জবাব
ইয়োবে ১:৯-১১ শয়তান বলল, ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরের উপাসনা করে? আপনি তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে সর্বদা রক্ষা করছেন, আপনার আশীর্বাদে সে সকল কাজে সাফল্য লাভ করছে। তার ধনসম্পত্তি ও পশুপাল বেড়েই চলেছে। কিন্তু আপনি যদি এখন তার ধনসম্পদ ও সর্বস্ব কেড়ে নেন তাহলে সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে অভিসম্পাত দেবে।
ইয়োবের বিশ্বাসকে ত্রুটিমুক্ত করার লক্ষ্যে, ঈশ্বর ইয়োবকে প্রলোভন দেখানোর জন্য শয়তানকে অনুমতি দেন
বাইবেলে ইয়োব ১:৮-ই হল প্রথম লিপিবদ্ধ নথি, যেখানে আমরা যিহোবা ঈশ্বর ও শয়তানের কথোপকথন দেখতে পাই। তাহলে, ঈশ্বর কী বলেছিলেন? মূল পাঠ্যে এই নিম্নলিখিত বিবরণ রয়েছে: “এবং যিহোবা শয়তানকে বললেন, তুমি কি আমার সেবক ইয়োবের কথা বিবেচনা করেছ, তার মত লোক পৃথিবীতে কেউ নেই, যে নিখুঁত এবং ন্যায়পরায়ণ, যে ঈশ্বরে ভয় পায় ও মন্দ পথ পরিত্যাগ করে?” শয়তানের সামনে এটাই ছিল ইয়োবের সম্পর্কে ঈশ্বরের মূল্যায়ন; ঈশ্বর বলেছিলেন সে একজন নিখুঁত ও ধার্মিক মানুষ, এমন একজন যে ঈশ্বরে ভীত, এবং মন্দকর্ম পরিত্যাগ করেছে। শয়তান ও ঈশ্বরের এইসমস্ত কথোপকথনের আগেই ঈশ্বর সংকল্প নিয়েছিলেন যে তিনি ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার জন্য শয়তানকে ব্যবহার করবেন—তিনি ইয়োবকে শয়তানের হাতে তুলে দেবেন। এক দিক থেকে, এটা প্রমাণ করবে যে ইয়োবের সম্পর্কে ঈশ্বরের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কত সঠিক ও নির্ভুল ছিল, আর ইয়োবের সাক্ষ্যের দ্বারা শয়তান অপমানিত হবে, আবার অপরদিকে এটা ইয়োবের ঈশ্বর বিশ্বাস ও ঈশ্বর ভীতিকে নিখুঁত করে তুলবে। এইভাবে, যখন শয়তান ঈশ্বরের সামনে এসেছিল, তিনি তার সাথে কোনো অস্পষ্ট কথা বলেননি। তিনি সোজাসুজি মূল বিষয়ে এসে শয়তানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তুমি কি আমার সেবক ইয়োবের কথা বিবেচনা করেছ, তার মত লোক পৃথিবীতে কেউ নেই, যে নিখুঁত এবং ন্যায়পরায়ণ, যে ঈশ্বরে ভয় পায় ও মন্দ পথ পরিত্যাগ করে?” ঈশ্বরের প্রশ্নে নিম্নলিখিত অর্থ নিহিত রয়েছে: ঈশ্বর জানতেন যে শয়তান সমস্ত স্থান পরিভ্রমণ করেছে এবং ইয়োবের উপরেও প্রায়শই নজরদারী করেছে, যে ইয়োব ছিল ঈশ্বরের সেবক। সে প্রায়শই ইয়োবকে প্রলুব্ধ ও আক্রমণ করেছে, তার ঈশ্বর বিশ্বাস ও তার ঈশ্বর ভীতি যে যথেষ্ট দৃঢ় নয়, সেটা প্রমাণের জন্য তার উপর সর্বনাশ নিয়ে আসার উপায় বার করার চেষ্টা করে গেছে। শয়তানও তৎপর হয়ে ইয়োবকে ধ্বংস করার সুযোগ খুঁজছিল, যাতে ইয়োব ঈশ্বরকে ত্যাগ করে এবং সে তাকে ঈশ্বরের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে। যদিও, ঈশ্বর ইয়োবের হৃদয়ে দৃষ্টিপাত করে প্রত্যক্ষ করেছিলেন যে ইয়োব নিখুঁত এবং ন্যায়পরায়ণ, সে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দকর্ম পরিত্যাগ করে চলে। ইয়োব একজন নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, সে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলে, ইয়োব কখনোই ঈশ্বরকে ত্যাগ করে শয়তানকে অনুসরণ করবে না, এ কথা শয়তানকে বলার জন্য ঈশ্বর একটা প্রশ্ন ব্যবহার করেছিলেন। ইয়োবের বিষয়ে ঈশ্বরের এই মূল্যায়ন শুনে শয়তানের মধ্যে জন্ম নিল ক্রোধ, অবমাননা থেকে যে ক্রোধের সৃষ্টি, এবং শয়তান ইয়োবকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আরও ক্রুদ্ধ ও অধৈর্য হয়ে উঠেছিল, কারণ শয়তান কখনও বিশ্বাস করেনি যে কেউ নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে পারে, বা ঈশ্বরকে ভয় করতে পারে ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে পারে। এর পাশাপাশি, শয়তান মানুষের ত্রুটিহীনতা এবং ন্যায়নিষ্ঠতাকেও ঘৃণা করত, এবং যারা ঈশ্বরে ভীত ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলত, তাদেরও ঘৃণা করত। ইয়োব ১:৯-এ লেখা রয়েছে, “শয়তান বলল, ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরের উপাসনা করে? আপনি তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে সর্বদা রক্ষা করছেন, আপনার আশীর্বাদে সে সকল কাজে সাফল্য লাভ করছে। তার ধনসম্পত্তি ও পশুপাল বেড়েই চলেছে। কিন্তু আপনি যদি এখন তার ধনসম্পদ ও সর্বস্ব কেড়ে নেন তাহলে সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে অভিসম্পাত দেবে।” ঈশ্বর শয়তানের এই কলুষিত প্রকৃতির বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন, আর এটাও ভালোভাবে জানতেন যে শয়তান বহুদিন থেকেই ইয়োবের অনিষ্ট করার পরিকল্পনা করে রেখেছে, আর এই কারণেই, ইয়োব যে নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ এবং সে ঈশ্বরে ভয় পায় ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলে, এই কথা আরো একবার বলার মাধ্যমে ঈশ্বর শয়তানকে তার পথে আনতে চেয়েছিলেন, যাতে শয়তান তার প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করে এবং ইয়োবকে আক্রমণ ও প্রলুব্ধ করে। অন্য ভাষায়, ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ইয়োব নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ, সে ঈশ্বরকে ভয় পায় ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে, আর এইভাবে, ইয়োবের নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ হওয়ার প্রতি, ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দকে পরিত্যাগের প্রতি শয়তানের ঘৃণা ও ক্রোধ ব্যবহার করেই ঈশ্বর শয়তানকে প্ররোচিত করেছিলেন ইয়োবকে আক্রমণ করার জন্য। এর ফলস্বরূপ, ইয়োব যে একজন নিখুঁত এবং ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি, যে ঈশ্বরকে ভয় করে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে—ঈশ্বর এই সত্যের মাধ্যমে শয়তানকে লজ্জিত করবেন, এবং শয়তান এইভাবেই সম্পূর্ণরূপে অপমানিত ও পরাজিত হবে। এর পরে, শয়তান আর ইয়োবের ত্রুটিহীনতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, ঈশ্বরে ভীতি, বা মন্দ কর্ম পরিত্যাগের বিষয়ে সন্দেহ করবে না বা অভিযোগ আনতে পারবে না। এইভাবে, ঈশ্বরের পরীক্ষা এবং শয়তানের প্রলোভন প্রায় অনিবার্য ছিল। ঈশ্বরের পরীক্ষা এবং শয়তানের প্রলোভন সহ্য করে নিতে সক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিল ইয়োব। এই বাক্যবিনিময়ের পরে, ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার অনুমতি শয়তানকে দেওয়া হয়েছিল। এইভাবেই শয়তানের প্রথম দফার আক্রমণ শুরু হয়েছিল। এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ইয়োবের সম্পত্তি, কারণ শয়তান ইয়োবের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত অভিযোগ এনেছিল: “ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরের উপাসনা করে? … আপনার আশীর্বাদে সে সকল কাজে সাফল্য লাভ করছে। তার ধনসম্পত্তি ও পশুপাল বেড়েই চলেছে।” এর ফলস্বরূপ, ঈশ্বর শয়তানকে বলেছিলেন ইয়োবের যা ছিল সেই সমস্ত কিছু কেড়ে নিতে—এটাই ছিল শয়তানের সাথে ঈশ্বরের কথা বলার মূল উদ্দেশ্য। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর শয়তানের কাছে একটা দাবি করেছিলেন: “এবং যিহোবা শয়তানকে বললেন, দেখো, ওর যা কিছু আছে সব আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তুমি শুধু ওকে স্পর্শ করতে পারবে না” (ইয়োবে ১:১২)। শয়তান ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার অনুমতি দেওয়ার আগে এবং তাকে শয়তানের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ঈশ্বর শয়তানের ওপর এই শর্তই আরোপ করেছিলেন, আর তিনি শয়তানের ওপর এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিলেন: তিনি শয়তানকে আদেশ দিয়েছিলেন যাতে ইয়োবের কোনো ক্ষতি সে না করে। কারণ ঈশ্বর জানতেন যে ইয়োব একজন নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ লোক, এবং যেহেতু ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন যে ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি নিঃসন্দেহে নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ এবং যে সেই পরীক্ষা সহ্য করে নিতে পারবে, তাই ঈশ্বর ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার জন্য শয়তানকে অনুমোদন দিয়েছিলেন, কিন্তু শয়তানের উপর একটা সীমাবদ্ধতাও আরোপ করেছিলেন: শয়তান ইয়োবের সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিতে পারলেও সে তার গায়ে একটা আঁচড়ও ফেলতে পারবে না। এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, সেই মুহূর্তে ঈশ্বর ইয়োবকে সম্পূর্ণভাবে শয়তানের হাতে তুলে দেননি। শয়তান যেকোনো উপায়ে ইয়োবকে প্রলুব্ধ করতে পারত, কিন্তু ইয়োবকে কোনোভাবেই আঘাত করতে পারত না—এমনকি কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারত না—কারণ মানুষের সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, আর মানুষের জন্ম-মৃত্যুর নিয়ন্তাও তিনিই। এই অনুমতি শয়তানের নেই। ঈশ্বরের থেকে এই বাক্যগুলো শোনার পর, শয়তান তার কাজ শুরু করার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারেনি। সে ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার জন্য সমস্ত রকমের উপায় ব্যবহার করেছিল, আর অনতিবিলম্বেই ইয়োব তার এক পর্বত সম মূল্যের ভেড়া ও বলদ এবং ঈশ্বর প্রদত্ত সমস্ত সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেছিল…। ঈশ্বরের পরীক্ষা এভাবেই তার সামনে এসেছিল।
যদিও বাইবেল অনুসারে আমরা ইয়োবের এই প্রলোভনের উৎস সম্পর্কে জানতে পারি, কিন্তু ইয়োব নিজে, যে এই প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছিল, সে কি জানত কী ঘটে চলেছে? ইয়োব ছিল নিছকই এক নশ্বর মানুষ; তার চারপাশে যা ঘটে চলেছিল সে সম্পর্কে সে নিশ্চিতভাবেই অজ্ঞ ছিল। তবুও, তার ঈশ্বরে ভীতি এবং তার ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়নিষ্ঠতাই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে ঈশ্বরের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে কী ঘটেছে সে বিষয়ে সে কিছুই জানত না, আবার এই পরীক্ষার পিছনে ঈশ্বরের কী উদ্দেশ্য রয়েছে তাও ছিল তার অজানা। কিন্তু সে জানত যে তার সাথে যাই ঘটুক না কেন, তার উচিত নিজের ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার প্রতি সৎ থাকা, এবং ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথে অবিচল থাকা। এই বিষয়গুলোর প্রতি ইয়োবের মনোভাব এবং প্রতিক্রিয়া ঈশ্বর স্পষ্টভাবে দেখেছিলেন। ঈশ্বর কি দেখেছিলেন? তিনি ইয়োবের ঈশ্বরে ভীত হৃদয় দেখেছিলেন, কারণ শুরু থেকে ইয়োবের পরীক্ষা পর্যন্ত ইয়োবের হৃদয় ঈশ্বরের সামনে উন্মুক্ত ছিল, ঈশ্বরের সামনে মেলে ধরা ছিল, এবং ইয়োব তার ত্রুটিহীনতা বা ন্যায়নিষ্ঠতা পরিত্যাগ করেনি, অথবা সে ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথ পরিহার করেনি বা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি—ঈশ্বরের কাছে এর চেয়ে সন্তোষের বিষয় আর কিছুই ছিল না। এর পরে, আমরা দেখব ইয়োব কোন প্রলোভনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল, এবং কীভাবে সে এই পরীক্ষাগুলোর মোকাবিলা করেছিল। শাস্ত্র থেকে পাঠ করা যাক।
৩. ইয়োবের প্রতিক্রিয়া
ইয়োবে ১:২০-২১ ইয়োব তখন উঠে দাঁড়ালেন, পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন, মাথা কামিয়ে ফেললেন, এবং মাটিতে লুটিয়ে পরে প্রার্থনা করলেন, এবং বললেন, মায়ের গর্ভ থেকে নগ্ন অবস্থায় আমি এসেছি, নগ্ন অবস্থাতেই আবার ফিরে যাব: যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবা ই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক।
ইয়োব তার অধিকৃত সমস্তকিছু প্রত্যর্পণের উদ্যোগ নিয়েছিল তার ঈশ্বর ভীতির কারণে
“ওর যা কিছু আছে সব আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তুমি শুধু ওকে স্পর্শ করতে পারবে না,” ঈশ্বর শয়তানকে এ কথা বলার পরে, শয়তান প্রস্থান করেছিল, আর ঠিক তার পরেই ইয়োব শয়তানের আকস্মিক এবং ভয়ঙ্কর আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল: প্রথমে, তার বলদ ও গাধা লুণ্ঠিত হয়েছিল এবং তার কয়েকজন ভৃত্যকে হত্যা করা হয়েছিল, এরপর তার ভেড়া এবং আরো কয়েকজন ভৃত্য আগুনে দগ্ধ হয়েছিল, তারপরে তার উটগুলোও দখল করা হয়েছিল এবং আরো কিছু ভৃত্য খুন হয়েছিল; পরিশেষে তার পুত্র ও কন্যাদের জীবনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ইয়োবের প্রথম প্রলোভনের সময় সে এইরকম বারংবার আক্রমণের অভিঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করেছিল। ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে, এই সমস্ত আক্রমণের সময় শয়তান শুধুমাত্র ইয়োবের সম্পত্তি ও সন্তানদেরই লক্ষ্যবস্তু করেছিল, স্বয়ং ইয়োবের ক্ষতি করেনি। তা সত্ত্বেও, ইয়োব প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী একজন ধনী মানুষ থেকে অবিলম্বেই একজন কপর্দকশূন্য মানুষে রূপান্তরিত হয়েছিল। কেউই এই আকস্মিক বিস্ময়কর বিপর্যয় সহ্য করে নিতে বা এতে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতো না, তবুও ইয়োব এতে তার একটা অসাধারণ দিক প্রদর্শন করেছিল। শাস্ত্রে নিম্নলিখিত বিবরণ দেওয়া রয়েছে: “ইয়োব তখন উঠে দাঁড়ালেন, পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন, মাথা কামিয়ে ফেললেন, এবং মাটিতে লুটিয়ে পরে প্রার্থনা করলেন।” সে তার সন্তান ও সমস্ত সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেছে, এ কথা শোনার পরে এই ছিল ইয়োবের প্রথম প্রতিক্রিয়া। সর্বোপরি, তাকে বিস্মিত বা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে দেখা যায়নি, রাগ বা ঘৃণা প্রদর্শন তো আরোই দূরের কথা। তাহলে তোমরা দেখতেই পাচ্ছ যে নিজের অন্তরে সে ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করে ফেলেছিল যে এই বিপর্যয়গুলো কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, বা মানুষের সম্পাদিতও ছিল না, আর শাস্তি বা প্রতিফল তো আরোই নয়। বরং সে যিহোবার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, এবং যিহোবাই তার সম্পত্তি ও সন্তানদের কেড়ে নিতে চেয়েছেন। সেই সময় ইয়োব খুব শান্ত ও স্বচ্ছ মস্তিষ্কে ছিল। যে বিপর্যয় তার উপর নেমে এসেছিল, সেখানে তার নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ মানবিকতাই তাকে যুক্তিপূর্ণ ও সঠিক বিচার করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করেছিল, আর ফলস্বরূপ, সে অস্বাভাবিক শান্ত আচরণ করেছিল “ইয়োব তখন উঠে দাঁড়ালেন, পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন, মাথা কামিয়ে ফেললেন, এবং মাটিতে লুটিয়ে পরে প্রার্থনা করলেন।” “পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন” অর্থাৎ সে ছিল বিবস্ত্র ও কপর্দকশূন্য; “মাথা কামিয়ে ফেললেন” যার অর্থ হল সে ঈশ্বরের কাছে নবজাতক শিশুর মতোই প্রত্যাবর্তন করেছিল; “মাটিতে লুটিয়ে পরে প্রার্থনা করলেন”—এর অর্থ হল সে এই পৃথিবীতে বিবস্ত্র অবস্থাতেই এসেছিল, আজও তার কাছে কিছুই নেই, সে ঈশ্বরের কাছে নবজাতক শিশুর মতোই প্রত্যাবর্তন করেছিল। ইয়োবের উপর যা নেমে এসেছিল সেগুলোর প্রতি ইয়োবের যে আচরণ, তা ঈশ্বরের কোনো জীবের পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব ছিল না। যিহোবার প্রতি তার বিশ্বাসের মাত্রা বিশ্বাসের সমস্ত স্তরের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল; এটাই ছিল তার ঈশ্বর ভীতি ও ঈশ্বরের প্রতি তার আনুগত্য; শুধু তাকে দেওয়ার জন্যই নয়, তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্যও সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও, সে তার অধিকারে থাকা সমস্ত কিছু, এমনকি নিজের জীবনও ঈশ্বরকে নিজে থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়েছিল।
ইয়োবের ঈশ্বরে ভীতি ও ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য মানবজাতির কাছে একটা উদাহরণ, আর তার ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়নিষ্ঠতাই ছিল মানবিকতার সেই চূড়া, যা মানুষের অর্জন করা উচিত। সে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ না করলেও, তিনি যে সত্যিই আছেন, তা উপলব্ধি করেছিল, এবং এই উপলব্ধিই ছিল তার ঈশ্বর ভীতির কারণ, আর এই ঈশ্বর ভীতির কারণেই সে ঈশ্বরকে মান্য করতে পেরেছিল। সে ঈশ্বরকে তার সমস্ত কিছু নিয়ে নেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল, তবুও তার কোনো অভিযোগ ছিল না, এবং সে ঈশ্বরের সামনে লুটিয়ে পড়ে তাঁকে বলেছিল যে এই মুহূর্তেই যদি ঈশ্বর তার পার্থিব দেহও নিয়ে নেন, সে সানন্দে, কোনো অভিযোগ না করেই তাঁকে তা করতে দেবে। তার সম্পূর্ণ আচরণই ছিল তার নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ মানবিকতার ফলাফল। অর্থাৎ বলা যায়, তার সরলতা, সততা এবং দয়ালু মনোভাবের ফলেই ইয়োব ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিজস্ব উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতায় অবিচল থাকতে পেরেছিল। এই ভিত্তির উপর নির্ভর করে সে নিজের প্রতি চাহিদা তৈরী করেছিল এবং তার প্রতি ঈশ্বরের পথনির্দেশ ও সমস্তকিছুর মধ্যে ঈশ্বরের যে কর্ম সে দেখেছে, তার সাথে সঙ্গতভাবে ঈশ্বরের সম্মুখে তার চিন্তা, ব্যবহার, আচরণ ও তার কাজের নীতিকে সমন্বিত করে নিয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে, তার অভিজ্ঞতা তার মধ্যে বাস্তবিক ও প্রকৃত ঈশ্বর ভীতি তৈরী করেছিল এবং মন্দকে পরিত্যাগ করতে তাকে সক্ষম করে তুলেছিল। যে সততার প্রতি ইয়োব অবিচল ছিল, এটাই ছিল সেই সততার উৎস। ইয়োব সৎ, সরল ও দয়ালু মানবতার অধিকারী ছিল, এবং ঈশ্বরে ভীতি, ঈশ্বরকে মান্য করা, ও মন্দকে পরিত্যাগ করার প্রকৃত অভিজ্ঞতা তার ছিল, সেই সাথে এই জ্ঞানও তার ছিল যে “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন।” শুধুমাত্র এই বিষয়গুলোর কারণেই সে শয়তানের এইরকম প্রচণ্ড আক্রমণের মধ্যেও নিজের সাক্ষ্যে অটল থাকতে সক্ষম হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের পরীক্ষা তার উপর নেমে আসার সময় শুধু এইগুলোর কারণেই সে ঈশ্বরকে নিরাশ করেনি এবং তাঁকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও প্রথম প্রলোভনের সময় ইয়োবের আচরণ খুব অকপট ছিল, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মগুলো আজীবনের প্রচেষ্টার পরেও হয়ত নিশ্চিতভাবে এমনতর সহজতা অর্জন করতে পারবে না, অথবা তারা ইয়োবের মতো আচরণের অধিকারী হতে পারবে না যেমন উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। আজ, ইয়োবের সহজসরল আচরণ প্রত্যক্ষ করে, এবং যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ঈশ্বরকে অনুসরণ করার দাবি করে তাদের “আমৃত্যু শর্তহীন আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা”-র চিৎকার ও সংকল্পকে এর সাথে তুলনা করে, তোমরা কি গভীরভাবে লজ্জিত বোধ করছ, নাকি করছ না?
ইয়োব এবং তার পরিবার যে সমস্ত কষ্টভোগ করেছিল, শাস্ত্রে সেগুলো পড়ার পর তোমার প্রতিক্রিয়া কী? তুমি কি নিজের ভাবনায় হারিয়ে গেছ? তুমি কি বিস্মিত? ইয়োবের উপর যে পরীক্ষাগুলো নেমে এসেছিল, সেগুলোকে কি “ভয়ঙ্কর” বলে আখ্যা দেওয়া যায়? অন্য ভাষায়, শাস্ত্রে বর্ণিত ইয়োবের পরীক্ষার পড়ার পক্ষেই যথেষ্ট ভয়ঙ্কর, বাস্তব জীবনে সেগুলো কেমন হতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে, তুমি দেখতে পাচ্ছ, ইয়োবের উপর যা নেমে এসেছিল তা কোনো “কৃত্রিম কসরত” ছিল না, বরং ছিল প্রকৃত “বন্দুক” এবং “গুলি” সমন্বিত একটা প্রকৃত “যুদ্ধ”। কিন্তু কার হাতে সে এইসব পরীক্ষার শিকার হয়েছিল? অবশ্যই এগুলো ছিল শয়তানের কাজ, এবং শয়তান নিজের হাতেই এসব করেছিল। কিন্তু তা হলেও, এগুলো ঈশ্বর অনুমোদন করেছিলেন। কি উপায়ে ইয়োবকে প্রলুব্ধ করতে হবে সেটা কি ঈশ্বর শয়তানকে বলে দিয়েছিলেন? না দেন নি। ঈশ্বর শুধুমাত্র একটা শর্ত আরোপ করেছিলেন যা শয়তানকে অবশ্যই মেনে চলতে হতো, এবং তারপরে ইয়োবের উপর প্রলোভন নেমে এসেছিল। যখন ইয়োবের উপর প্রলোভন নেমে এসেছিল, তা মানুষকে শয়তানের মন্দত্ব ও কদর্যতা, মানুষের প্রতি তার বিদ্বেষ ও ঘৃণা, এবং ঈশ্বরের প্রতি তার শত্রুতা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল। এতে আমরা দেখতে পাই যে এই প্রলোভনের নিষ্ঠুরতা শব্দে বর্ণনা করা যায় না। বলা যেতে পারে, শয়তান যে বিদ্বেষপূর্ণ উপায়ে মানুষকে নিপীড়ন করেছিল, এবং তার যে কদর্য চেহারা, তা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়েছিল। ঈশ্বরের অনুমতি তাকে যে সুযোগ এনে দিয়েছিল, শয়তান সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিল ইয়োবের উপর এমন প্রচণ্ড ও নির্দয় নিপীড়ন করার জন্য, যার নৃশংসতার মাত্রা ও পদ্ধতি আজকের মানুষের পক্ষে অকল্পনীয় ও অসহনীয়। ইয়োব শয়তানের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েছিল এবং এই প্রলোভনের সময় সে নিজের সাক্ষ্যে অটল ছিল, এমনটা বলার পরিবর্তে এটা বলাই ভালো যে ঈশ্বর তার জন্য যে পরীক্ষা নির্ধারিত করেছিলেন, তাতে নিজের ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়নিষ্ঠতা রক্ষা করার জন্য এবং ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে, ইয়োব শয়তানের সাথে এক প্রতিযোগিতার সূত্রপাত করেছিল। এই প্রতিযোগিতায় ইয়োব নিজের পর্বতসমান মূল্যের ভেড়া ও গবাদি পশু হারিয়েছিল, সমস্ত সম্পত্তি হারিয়েছিল, এমনকি নিজের পুত্রকন্যাদেরও হারিয়েছিল। তবুও, সে নিজের ত্রুটিহীনতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, বা ঈশ্বরে ভীতি পরিত্যাগ করেনি। অন্য ভাষায়, শয়তানের সাথে এই প্রতিযোগিতায় ইয়োব নিজের ত্রুটিহীনতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, বা ঈশ্বরে ভীতি পরিত্যাগ করার পরিবর্তে সমস্ত সম্পত্তি ও সন্তানদের হারিয়ে ফেলাকেই শ্রেয় মনে করেছিল। মানুষ হওয়া বলতে কী বোঝায়, সে সেটারই ভিত্তিমূলে অটল থাকাকে বেছে নিয়েছিল। ইয়োব কীভাবে তার সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেছিল, তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ শাস্ত্রে উল্লেখ করা রয়েছে, পাশাপাশি তার আচরণ ও মনোভাবের উল্লেখও রয়েছে। এই বাহুল্যবর্জিত, সংক্ষিপ্ত বিবরণগুলো থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে ইয়োব এই প্রলোভনের মুখোমুখি হয়েও প্রায় শান্তই ছিল, কিন্তু আসলে যা ঘটেছিল তার যদি পুনরাবৃত্তি করা হতো—শয়তানের বিদ্বেষপূর্ণ প্রকৃতিকেও হিসাবে রেখে—তাহলে বিষয়গুলো যেমনভাবে এইসব বাক্যের মধ্যে বর্ণনা করা আছে সেরকম সহজ বা সরল হতো না। বাস্তব আরো অনেক বেশি নিষ্ঠুর ছিল। মানবজাতির প্রতি এবং ঈশ্বর যাদের অনুমোদন করেন তাদের প্রতি শয়তানের আচরণ এমনই বিধ্বংসী ও ঘৃণ্য। ঈশ্বর যদি না বলতেন যে শয়তান ইয়োবের ক্ষতি করবে না, তাহলে শয়তান নিঃসন্দেহেই ইয়োবকে নিঃসঙ্কোচে হত্যা করত। কেউ ঈশ্বরের উপাসনা করুক তা শয়তান চায় না, অথবা যারা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক এবং যারা নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ, তারা ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ অব্যাহত রাখুক এমনটাও সে চায় না। মানুষের ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের অর্থ হল শয়তানকে এড়িয়ে চলা ও তাকে পরিত্যাগ করা, এবং তাই শয়তান ঈশ্বরের অনুমতির সুযোগ নিয়ে নির্দয়ভাবে সমস্ত ক্রোধ এবং ঘৃণা ইয়োবের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। তাহলে দেখো, ইয়োব মন থেকে দেহ পর্যন্ত, বাইরে থেকে অন্তর পর্যন্ত, কত যন্ত্রণাই না ভোগ করেছিল। আজ, আমরা সেই সময়ের ঘটনা কেমন ছিল তা প্রত্যক্ষ করতে পারি না, বাইবেলের বিবরণ থেকে আমরা শুধুমাত্র ইয়োবের যন্ত্রণার শিকার হওয়ার সময় তার অনুভূতির সংক্ষিপ্ত আভাস পেতে পারি।
ইয়োবের অটল সততা শয়তানকে লজ্জিত করে এবং সে আতঙ্কে পলায়ন করতে বাধ্য হয়
ইয়োব যখন এমন যন্ত্রণার সম্মুখীন হচ্ছিল, তখন ঈশ্বর কী করেছিলেন? ঈশ্বর পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, নিরীক্ষণ করেছিলেন, এবং পরিণামের অপেক্ষা করেছিলেন। পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের সময় ঈশ্বর কেমন অনুভব করেছিলেন? অবশ্যই তিনি শোকাহত হয়েছিলেন। কিন্তু এটা কি সম্ভব যে শুধু শোক অনুভব করেছিলেন বলে, ইয়োবকে প্রলোভিত করতে শয়তানকে অনুমতি দেওয়ার জন্য ঈশ্বর অনুতপ্ত হয়েছিলেন? উত্তর হচ্ছে, না, তিনি এরকম অনুশোচনা অনুভব করে থাকতে পারেন না। কারণ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ইয়োব একজন নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি, সে ঈশ্বরকে ভয় পেত ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলত। ঈশ্বর শুধু তাঁর সম্মুখে ইয়োবের ন্যায়পরায়ণতা যাচাইয়ের সুযোগ শয়তানকে করে দিয়েছিলেন, আর শয়তানের নিজের মন্দত্ব ও ঘৃণ্যতাকে প্রকাশিত করতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও, এটা ছিল ইয়োবের কাছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ, শয়তান, এবং ঈশ্বরের সকল অনুগামীদের সামনে নিজের ন্যায়পরায়ণতা এবং ঈশ্বর-ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের সাক্ষ্য দেওয়ার একটা সুযোগ। চূড়ান্ত পরিণতি কি এটা প্রমাণ করেছিল যে ইয়োবের বিষয়ে ঈশ্বরের মূল্যায়ন সঠিক ও নির্ভুল ছিল? ইয়োব কি প্রকৃতপক্ষেই শয়তানকে পরাস্ত করতে পেরেছিল? ইয়োব যে কথাগুলো বলেছিল, যার মধ্যে দিয়ে তার পরিচয় পাওয়া যায়, আমরা এখানে তা পড়ছি, যা থেকে প্রমাণ হয় যে সে শয়তানকে পরাস্ত করতে পেরেছিল। সে বলেছিল: “মায়ের গর্ভ থেকে নগ্ন অবস্থায় আমি এসেছি, নগ্ন অবস্থাতেই আবার ফিরে যাব।” এমনই ছিল ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের আনুগত্যের মনোভাব। এরপর সে বলেছিল: “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক।” ইয়োবের এই কথাগুলোই প্রমাণ করে যে ঈশ্বর মানুষের অন্তরের গভীর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন, তিনি মানুষের মস্তিষ্কের ভিতর পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করতে পারেন, আর এগুলোই প্রমাণ করে যে ইয়োবের প্রতি তাঁর অনুমোদন অভ্রান্ত ছিল, ঈশ্বরের অনুমোদিত এই ব্যক্তি যথার্থই ধার্মিক ছিল। “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক।” এই কথাগুলো ছিল ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের সাক্ষ্য। এই সাধারণ কথাগুলোই শয়তানকে ভীত করেছিল, তাকে লজ্জিত করেছিল এবং এর ফলে সে আতঙ্কিত হয়ে পলায়ন করেছিল, এছাড়াও, কথাগুলো শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল এবং তার কাছে আর কোনো সংস্থান ছাড়েনি। একইভাবে, এই কথাগুলো শয়তানকে যিহোবা ঈশ্বরের কাজের বিস্ময়করতা এবং শক্তিও অনুভব করিয়েছিল, এবং উপলব্ধি করিয়েছিল এমন একজন মানুষের অসাধারণ মহিমা, যার হৃদয় ঈশ্বরের পথের দ্বারা শাসিত। এছাড়াও, এগুলো ঈশ্বরে ভীত ও মন্দকর্ম পরিত্যাগের পথে চলা এক ক্ষুদ্র, নগণ্য মানুষের শক্তিশালী জীবনীশক্তি শয়তানকে প্রদর্শন করেছিল। এইভাবে শয়তান প্রথম প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়েছিল। “এ থেকে শিক্ষালাভের” পরেও, ইয়োবকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় শয়তানের ছিল না, আবার এ থেকে তার কলুষিত স্বভাবের কোনো পরিবর্তনও হয়নি। শয়তান ইয়োবের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচেষ্ট ছিল, আর তাই সে আরো একবার ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হল …
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২