শয়তান আরো একবার ইয়োবকে প্রলুব্ধ করে (ইয়োবের সারা শরীর জুড়ে যন্ত্রণাময় ফোঁড়া দেখা দিল) (পর্ব ২)
ইয়োবের সম্পর্কে মানুষের বিভিন্ন ভুল ধারণা
ইয়োব যে দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল, তা ঈশ্বরের প্রেরিত দূতদের জন্য নয়, আবার তা ঈশ্বরের নিজের হাতেও সম্পাদিত হয়নি। বরং, শয়তান, ঈশ্বরের শত্রু, ব্যক্তিগতভাবে তা করেছিল। ফলে, ইয়োবকে যে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল তার মাত্রা ছিল অপরিসীম। তবুও এই মুহূর্তে ইয়োব নিজের হৃদয়ে ঈশ্বর সম্পর্কিত তার দৈনন্দিন জ্ঞান, তার দৈনন্দিন কাজের নীতি, এবং ঈশ্বরের প্রতি তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে দেখিয়েছিল—এটাই সত্য। ইয়োব যদি প্রলুব্ধ না হত, ঈশ্বর যদি তাকে পরীক্ষা না করতেন, তাহলে ইয়োব যখন বলেছিল “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক,” তখন তুমি হয়ত বলতে ইয়োব ভণ্ড, ঈশ্বর তাকে এত কিছু দিয়েছেন, নিশ্চয়ই সেইজন্যই সে যিহোবার নামের গুণকীর্তন করেছে। যদি পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার আগে ইয়োব বলত, “ঈশ্বরের হাত থেকে আমরা কি শুধু মঙ্গলই গ্রহণ করব? অমঙ্গল কিছুই গ্রহণ করব না?” তাহলে তুমি বলতে যে ইয়োব বাড়িয়ে বলেছে, আর যেহেতু সে প্রায়ই ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেত, তাই সে ঈশ্বরের নাম পরিত্যাগ করত না। তুমি বলতে যে ঈশ্বর যদি তার উপর বিপর্যয় নিয়ে আসতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সে ঈশ্বরের নাম পরিত্যাগ করত। তবুও ইয়োব যখন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হল, যে পরিস্থিতি কেউ প্রত্যাশা করে না বা দেখতেও চায় না, যে পরিস্থিতিতে কেউই পড়তে চায় না, যে পরিস্থিতি নিজের উপর এসে পড়ার বিষয়ে সকলে ভয় পায়, এমনকি যে পরিস্থিতি দেখে ঈশ্বরও সহ্য করতে পারেন না—তেমন পরিস্থিতিতেও ইয়োব তার এই সততা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল: “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক।” এবং “ঈশ্বরের হাত থেকে আমরা কি শুধু মঙ্গলই গ্রহণ করব? অমঙ্গল কিছুই গ্রহণ করব না?” ইয়োবের এই সময়ের আচরণ দেখার পরে, যারা বড় বড় কথা বলতে ভালোবাসে, যারা তত্ত্ব ও মতবাদের কথা বলতে ভালোবাসে, তারা সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। যারা শুধু মুখের কথায় ঈশ্বরের নামের গুণকীর্তন করে, অথচ কখনও ঈশ্বরের পরীক্ষা স্বীকার করেনি, তারা সেই সততার মাধ্যমে নিন্দিত হয় যে সততায় ইয়োব অটল থেকে গিয়েছিল, এবং যারা কখনও বিশ্বাস করেনি যে মানুষ ঈশ্বরের পথে দৃঢ় থাকতে সক্ষম, তাদের ইয়োবের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। এই পরীক্ষার সময় ইয়োবের আচরণ এবং তার কথিত শব্দের সম্মুখীন হয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্ত বোধ করবে, কেউ ঈর্ষা বোধ করবে, কেউ সন্দেহ বোধ করবে, এমনকি কেউ কেউ অনাগ্রহও বোধ করবে, ইয়োবের সাক্ষ্যকে তারা অবজ্ঞা করবে কারণ তারা যে শুধু পরীক্ষার সময় ইয়োবের ভোগ করা যন্ত্রণাগুলো দেখে ও তার কথিত শব্দগুলো পড়ে তা নয়, এর সাথে সাথে ইয়োবের উপর পরীক্ষা নেমে আসার সময় তার মানবিক “দুর্বলতা” গুলোও দেখে। এই “দুর্বলতা” কে তারা ইয়োবের ত্রুটিহীনতার মধ্যে অনুমান করে নেওয়া ত্রুটি বলে বিশ্বাস করে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিখুঁত একজন ব্যক্তির মধ্যের ত্রুটি বলে গণ্য করে। অর্থাৎ বলা যায়, বিশ্বাস করা হয় যে যারা নিখুঁত ও ত্রুটিহীন এবং যাদের কোনো দাগ বা কলঙ্ক নেই, তাদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা থাকে না, যন্ত্রণার কোনো জ্ঞান থাকে না, তারা কখনোই দুঃখিত বা বিষণ্ণ বোধ করে না, তারা ঘৃণা বা কোনো বাহ্যিক চরমপন্থী আচরণ থেকে মুক্ত; আর তার ফলস্বরূপ, বিশাল সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করে না যে ইয়োব প্রকৃতই নিখুঁত ছিল। পরীক্ষার সময় তার আচরণের বেশিরভাগই মানুষ অনুমোদন করে না। উদাহরণস্বরূপ, নিজের সম্পত্তি ও সন্তানদের হারানোর পরে, মানুষ যেমন কল্পনা করে, ইয়োব তেমনভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েনি। তার “শোভনতার অভাব”-এর জন্য মানুষ তাকে অনুভূতিহীন মনে করে, কারণ তার নিজের পরিবারের জন্যও তার চোখে জল ছিল না বা তার মমত্ববোধও ছিল না। ইয়োব সম্পর্কে মানুষের প্রাথমিক খারাপ ধারণা এটাই। এরপর সে যে আচরণ করেছিল সেটাকে তারা এমনকি আরও বিভ্রান্তিকর বলে মনে করে: “পোশাক ছিঁড়ে ফেলল”, এটাকে মানুষ ঈশ্বরের প্রতি তার অশ্রদ্ধা বলে ব্যাখ্যা করে, এবং “মাথা কামিয়ে ফেলল” বিষয়টা ভুলবশতঃ বিশ্বাস করে ইয়োবের ধর্মনিন্দা ও ঈশ্বরের বিরোধিতা বলে। ইয়োবের এই কথাটা ছাড়া, “যিহোবা দিয়েছিলেন, যিহোবাই ফিরিয়ে নিয়েছেন, যিহোবার নাম ধন্য হোক,” মানুষ ইয়োবের মধ্যে অন্য কোনো ন্যায়পরায়ণতাই নির্ণয় করতে পারে না যা ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল, এবং সেই কারণে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই ইয়োব সম্পর্কে মূল্যায়ন শুধুমাত্র উপলব্ধির অভাব, ভুল ধারণা, সন্দেহ, নিন্দা, ও তাত্ত্বিক অনুমোদনের চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাদের কেউই প্রকৃতপক্ষে যিহোবা ঈশ্বরের এই বাক্য বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম নয় যে ইয়োব একজন নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ ছিল, এমন একজন যে ঈশ্বরে ভয় পেত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলত।
ইয়োব সম্পর্কে তাদের উপরোক্ত মনোভাবের ভিত্তিতে তার ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে মানুষের আরো কিছু সন্দেহ রয়েছে, কারণ শাস্ত্রে ইয়োবের কাজের ও আচরণের যে বিবরণ রয়েছে তা মানুষের কল্পনামতো পৃথিবী কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো বিরাট কিছু ছিল না। সে যে শুধু কোনো মহৎ কৃতিত্ব করেনি তা-ই নয়, বরং ছাইয়ের মাঝে বসে নিজের গা চুলকানোর জন্য কলসির টুকরো তুলে নিয়েছিল। এই কাজও মানুষকে বিস্মিত করে এবং ইয়োবের ন্যায়পরায়ণতার প্রতি তাদের সন্দেহ—এমনকি অবিশ্বাস—জাগিয়ে তোলে, কারণ নিজের শরীর চুলকানোর সময় সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেনি বা ঈশ্বরের কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি করেনি; এছাড়াও, তাকে যন্ত্রণায় চোখের জল ফেলতেও দেখা যায়নি। সেই সময়, মানুষ শুধু ইয়োবের দুর্বলতাই দেখতে পায়, এবং তাই এমনকি যখন তারা ইয়োবকে এ কথা বলতে শোনে “ঈশ্বরের হাত থেকে আমরা কি শুধু মঙ্গলই গ্রহণ করব? অমঙ্গল কিছুই গ্রহণ করব না?” তখন তারাও একেবারেই উদাসীন থাকে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তখনও ইয়োবের কথিত শব্দগুলো থেকে তার ন্যায়পরায়ণতা নির্ধারণ করতে পারে না। তার পরীক্ষায় যন্ত্রনা ভোগ করার সময় ইয়োবের আচরণ মানুষের মধ্যে ইয়োব সম্পর্কে যে প্রাথমিক ধারণা তৈরী করে তা হচ্ছে, সে ভীরুও ছিল না, অথবা উদ্ধতও ছিল না। ইয়োবের আচরণের পিছনে যে কাহিনী ছিল, যা তার হৃদয়ের গভীরে অভিনীত হয়ে চলেছিল, তা মানুষ দেখতে পায় না, অথবা তার হৃদয়ের ঈশ্বর ভীতি বা মন্দকে পরিত্যাগের পথের নীতিতে তার অবিচল থাকাও তারা দেখতে পায় না। তার প্রশান্ত আচরণ মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে যে ইয়োবের ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়পরায়ণতা শুধু শূন্যগর্ভ শব্দ ছাড়া কিছু ছিল না, এবং তার ঈশ্বর ভীতি নিছকই শোনা কথা; ইতিমধ্যে, তার বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত “দুর্বলতা” মানুষের উপর গভীর ছাপ ফেলে, ইয়োবের প্রতি তাদের “নতুন দৃষ্টিভঙ্গি” প্রদান করে, এমনকি ঈশ্বর যে মানুষটাকে নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ বলে সংজ্ঞায়িত করেন, তার প্রতি “নতুন উপলব্ধি” প্রদান করে। যখন ইয়োব নিজের মুখে নিজের জন্মের দিনটাকে অভিসম্পাত করেছিল, তখনই এই ধরনের “নতুন দৃষ্টিভঙ্গি” এবং “নতুন উপলব্ধি” প্রমাণিত হয়।
যদিও ইয়োবের ভোগ করা যন্ত্রণার মাত্রা যে কোনো মানুষের কাছেই অকল্পনীয় ও অসহনীয়, তবুও সে কোনো ধর্মদ্রোহি কথা বলেনি, শুধু নিজের মতো করে শরীরের যন্ত্রণা কমাবার চেষ্টা করেছিল মাত্র। শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে, সে বলেছিল: “যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম অভিশপ্ত হোক সেই দিন, যে রাতে আমি এসেছিলাম মাতৃজঠরে, সেই রাতও হোক অভিশপ্ত” (ইয়োবে ৩:৩)। হয়ত কেউ কখনোই এই কথাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেনি, আবার হয়ত এমনও কিছু মানুষ আছে যারা এগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই কথাগুলো থেকে কি মনে হয় যে ইয়োব ঈশ্বরের বিরোধিতা করেছিল? এগুলো কি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ? আমি জানি তোমাদের মধ্যে অনেকেরই ইয়োবের রয়েছে, আর তোমাদের বিশ্বাস যে ইয়োব যদি নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ হয়, তাহলে তার কোনো দুর্বলতা বা শোক প্রকাশ করা উচিত ছিল না, পরিবর্তে ইতিবাচকভাবে শয়তানের যে কোনো আক্রমণের সম্মুখীন হওয়া উচিত ছিল, এমনকি শয়তানের প্রলোভনের সম্মুখে হাসা উচিত ছিল। শয়তান তাকে যে দৈহিক যন্ত্রণা দিয়েছিল, তার কোনোটার প্রতিই তার সামান্যতম প্রতিক্রিয়া থাকাও উচিত ছিল না, এবং তার হৃদয়ে কোনোরকম আবেগ প্রদর্শন করাও তার উচিত ছিল না। এমনকি তার বলা উচিত ছিল ঈশ্বর যেন এই পরীক্ষা আরও কঠোর করে দেন। একজন অটল এবং প্রকৃতই ঈশ্বরে ভীত ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগকারী মানুষের এটাই প্রদর্শন করা উচিত এবং তার এই সমস্ত কিছুর অধিকারী হওয়া উচিত। এই চরম যন্ত্রণার মধ্যে, ইয়োব শুধু তার জন্মের দিনটাকে অভিসম্পাত করেছিল। সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি, ঈশ্বরের বিরোধিতা করার অভিপ্রায়ও তার ছিল না। এটা করার চেয়ে বলা অনেক সহজ, কারণ প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত, কেউ কখনো এই ধরনের প্রলোভনের অভিজ্ঞতা লাভ করেনি বা ইয়োবের সাথে যা ঘটেছিল তা ভোগ করেনি। তাহলে আর কেউই কখনো ইয়োবের মতো একই রকমের প্রলোভনের সম্মুখীন হয়নি কেন? কারণ, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আর কেউই এই দায়ভার বা অর্পিত দায়িত্ব বহন করতে সমর্থ নয়, ইয়োব যা করেছিল তা আর কেউই করতে পারত না, এছাড়াও, এরকম যন্ত্রনা তাদের উপর এসে পড়া সত্ত্বেও, নিজেদের জন্ম দিবসকে অভিসম্পাত করা ছাড়াও, ঈশ্বরের নাম ত্যাগ না করে কেউই থাকতে পারত না, এবং ইয়োবের মতো ক্রমাগত যিহোবা ঈশ্বরের গুণকীর্তন চালিয়ে যেতে পারত না। আর কেউ কি এটা করতে পারত? ইয়োবের সম্পর্কে এ কথা বলার সময় আমরা কি তার আচরণের প্রশংসা করছি? সে ছিল একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ, এবং ঈশ্বরের এমন সাক্ষ্য বহনে সমর্থ, এবং সে শয়তানকে মাথা নিচু করে পালাতে বাধ্য করতে সক্ষম ছিল, যাতে সে আর কখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য ঈশ্বরের সামনে আসতে না পারে—তাহলে তাকে প্রশংসা করায় ভুল কী আছে? এমন কি হতে পারে যে তোমাদের গুণমান ঈশ্বরের চেয়ে উচ্চতর? এমন কি হতে পারে যে তোমাদের উপর পরীক্ষা এসে পড়লে তোমরা এমনকি ইয়োবের চেয়েও ভালোভাবে তার সম্মুখীন হতে পারবে? ইয়োব ছিল ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত—তোমাদের এতে কী আপত্তি থাকতে পারে?
ইয়োব নিজের জন্ম দিবসকে অভিসম্পাত করেছিল, কারণ সে তার জন্য ঈশ্বরকে কষ্ট পেতে দিতে চায়নি
আমি প্রায়ই বলি যে ঈশ্বর মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল প্রত্যক্ষ করেন, আর মানুষ শুধু মানুষের বাহ্যিক দিকটাই দেখে। যেহেতু ঈশ্বর মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল প্রত্যক্ষ করেন, তাই তিনি তাদের সারসত্য উপলব্ধি করতে পারেন, যেখানে মানুষ অন্যদের বহিরঙ্গের ভিত্তিতেই তাদের সারসত্য নির্ধারণ করে। যখন ইয়োব নিজের মুখে নিজের জন্মের দিনটাকে অভিসম্পাত করেছিল, তার এই কাজ তার তিনজন বন্ধুর পাশাপাশি সমস্ত আধ্যাত্মিক সত্তাদেরও বিস্মিত করেছিল। মানুষ ঈশ্বরের থেকে এসেছে, এবং ঈশ্বর তাকে যে জীবন ও দেহ প্রদান করেছেন, ও সেইসাথে তার জন্মের দিবস, সেজন্য তার ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, এগুলোকে অভিসম্পাত করা উচিত নয়। সাধারণ মানুষ যা উপলব্ধি ও ধারণা করতে পারে তা এটাই। ঈশ্বরের অনুগামী যে কারোর কাছেই এই ধারণা পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয়, এবং এটা এমন একটা সত্যি যা কখনো পরিবর্তিত হতে পারে না। অপরদিকে, ইয়োব নিয়ম ভঙ্গ করেছিল: সে নিজের জন্ম দিবসকে অভিসম্পাত করেছিল। এই কাজটা সাধারণ মানুষের কাছে নিষিদ্ধ এলাকা অতিক্রমের সমতুল্য ছিল। ইয়োবের যে শুধু মানুষের সহানুভূতি ও সমবেদনার অধিকার নেই তা-ই নয়, ঈশ্বরের ক্ষমা পাওয়ার অধিকারও তার নেই। একই সাথে, আরো অনেকেই ইয়োবের ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে ওঠে, কারণ এরকম মনে হয় যে ইয়োবের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাকে অসংযমী করে তুলেছিল; তা তাকে এতটাই সাহসী ও বেপরোয়া করে তুলেছিল যে তার জীবদ্দশায় ঈশ্বরের দেওয়া আশীর্বাদ ও যত্নের জন্য সে তাঁকে ধন্যবাদ তো জানায়ইনি, বরং তার জন্মের দিনটাকে ধ্বংসের জন্য অভিসম্পাতও করেছিল। এটা ঈশ্বরের বিরোধিতা ছাড়া আর কী? এরকম অগভীর বিষয়গুলোকে মানুষ ইয়োবের এই কাজের নিন্দা করার জন্য প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করে, কিন্তু কে বুঝতে পারে যে সেই সময় ইয়োব সত্যিই কী ভাবছিল? ইয়োব কেন এমন করেছিল, তার কারণ কেই বা জানে? এখানে শুধুমাত্র ঈশ্বর এবং ইয়োব নিজে অন্তর্নিহিত কাহিনী ও কারণগুলো জানে।
যখন শয়তান ইয়োবের অস্থিতে আঘাত করার জন্য নিজের হাত বাড়িয়েছিল, তখন ইয়োব তার কবলে পড়ে গিয়েছিল, তার কাছে পালাবার উপায় বা প্রতিরোধ করার কোনো শক্তিই ছিল না। তার শরীর ও আত্মা এক সাঙ্ঘাতিক যন্ত্রণা ভোগ করেছিল, এবং রক্তমাংসের মানুষ কতটা তুচ্ছ, ভঙ্গুর এবং ক্ষমতাহীন তা এই যন্ত্রণা থেকেই সে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল। একই সময়ে সে এটাও গভীরভাবে অনুভব ও উপলব্ধি করেছিল যে কী কারণে ঈশ্বর মানবজাতির দেখাশোনা ও যত্ন করার মনোভাব পোষণ করেন। শয়তানের থাবায় পড়ে ইয়োব বুঝতে পারে যে রক্ত মাংসের মানুষ আসলে কতটা দুর্বল ও শক্তিহীন। নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় তার মনে হয়েছিল ঈশ্বর যেন নিজের মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করছেন এবং লুকোতে চাইছেন, কারণ ঈশ্বর তাকে সম্পূর্ণ ভাবেই শয়তানের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। একই সময়ে, ঈশ্বরও তার জন্য কেঁদেছিলেন, এবং তার জন্য দুঃখিতও হয়েছিলেন; ঈশ্বর তার ব্যথায় ব্যথিত, তার আঘাতে আহত হয়েছিলেন…। ইয়োব ঈশ্বরের কষ্ট অনুভব করেছিল এবং ঈশ্বরের কাছে তা যে কতটা অসহনীয় তাও উপলব্ধি করতে পেরেছিল…। ইয়োব ঈশ্বরের উপর আর কোনো শোক নিয়ে আসতে চায়নি বা ঈশ্বর তার জন্য কাঁদুন তাও চায়নি, তার জন্যে ঈশ্বর কষ্ট পান তা তো একেবারেই চায়নি। এইরকম পরিস্থিতিতে, শরীরের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ইয়োব শুধু চাইছিল তার দেহ পরিত্যাগ করতে, কারণ তাতে ঈশ্বরও তার যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া থেকে মুক্তি পাবেন—কিন্তু তা সে পারেনি, এবং শুধুমাত্র এই শারীরিক যন্ত্রণাই নয়, সাথে সাথে ঈশ্বরকে উদ্বিগ্ন না করার ইচ্ছার যন্ত্রণাও তাকে ভোগ করতে হয়েছিল। এই দুই যন্ত্রণা—একটা শরীরের, অন্যটা আত্মার—ইয়োবের উপর এক হৃদয়বিদারক, মর্মস্পর্শী পীড়া সৃষ্টি করেছিল, এবং সে উপলব্ধি করেছিল যে রক্তমাংসের মানুষের সীমাবদ্ধতা তাকে কতটা হতাশ ও অসহায় করে তুলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, তার ঈশ্বরের প্রতি আকুতি আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছিল, এবং শয়তানের প্রতি ঘৃণাও আরও প্রগাঢ় হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ে, তার জন্য ঈশ্বরের এই যন্ত্রণা বা অশ্রু দেখার চেয়ে ইয়োব সম্ভব হলে বেছে নিত মানবজগতে কখনো জন্ম না নেওয়া বা আদৌ তার অস্তিত্বই না থাকা। সে তার শরীরকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল, নিজের প্রতি, নিজের জন্মের দিনটার প্রতি, এমনকি তার সাথে সংযুক্ত সমস্ত কিছুর প্রতি বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল। সে তার জন্মদিন বা সেই সম্পর্কিত কোনোকিছুর আর উচ্চারণ পর্যন্ত হোক তা আর চায়নি, তাই সে তার মুখ খুলে নিজের জন্মদিনের প্রতি অভিসম্পাত জানিয়েছিল: “যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম অভিশপ্ত হোক সেই দিন, যে রাতে আমি এসেছিলাম মাতৃজঠরে, সেই রাতও হোক অভিশপ্ত। সেই দিনটি হোক অন্ধকারে আচ্ছন্ন, ঈশ্বর যেন সেই দিনটি আর স্মরণ না করেন, আর যেন কখনও আলোকিত না হয় সেই দিন” (ইয়োবে ৩:৩-৪)। ইয়োবের এই কথাগুলো তার নিজের সম্পর্কেই ঘৃণা প্রদর্শন করে, “যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম অভিশপ্ত হোক সেই দিন, যে রাতে আমি এসেছিলাম মাতৃজঠরে, সেই রাতও হোক অভিশপ্ত,” একইভাবে নিজের প্রতি দোষারোপ ও ঈশ্বরকে পীড়া দেওয়ার জন্য ঋণের বোধ তার কথায় প্রতিফলিত হয়, “সেই দিনটি হোক অন্ধকারে আচ্ছন্ন, ঈশ্বর যেন সেই দিনটি আর স্মরণ না করেন, আর যেন কখনও আলোকিত না হয় সেই দিন।” এই দুই অনুচ্ছেদ ইয়োবের সেই সময়কার অনুভূতিকে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করে এবং তার ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়নিষ্ঠতাকে যথাযথভাবে বর্ণনা করে। একই সময়ে, ঠিক ইয়োব যেমন চেয়েছিল, তেমনভাবেই ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ও আনুগত্য, এবং সেইসাথে তার ঈশ্বর ভীতিও প্রকৃতই উন্নততর স্তরে পৌঁছেছিল। অবশ্যই, তার এই উন্নতি ছিল সুনির্দিষ্টভাবে সেই প্রভাব, যা ঈশ্বর প্রত্যাশা করেছিলেন।
ইয়োব শয়তানকে পরাজিত করে ঈশ্বরের চোখে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে
যখন ইয়োব প্রথম তার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেল, তখন তার কাছ থেকে সমস্ত সম্পত্তি ও তার সন্তানসন্ততিদের কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর ফলে তার পতন ঘটেনি বা সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোনো পাপবাক্য উচ্চারণ করেনি। সে শয়তানের প্রলোভন জয় করেছিল, এবং তার বস্তুগত সম্পদ, তার সন্তানসন্ততি, এবং এবং তার পার্থিব সম্পত্তি হারানোর পরীক্ষাও অতিক্রম করেছিল, অর্থাৎ বলা যায় যে ঈশ্বর তার থেকে সমস্ত কিছু কেড়ে নেওয়ার সময়েও সে ঈশ্বরকে মান্য করতে সক্ষম হয়েছিল এবং ঈশ্বর যা করেছেন তার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও স্তুতি নিবেদন করতেও সক্ষম হয়েছিল। শয়তানের প্রথমবারের প্রলোভনের সময় ইয়োবের আচরণ এমনই ছিল, এবং ঈশ্বরের প্রথম পরীক্ষার সময়ও তার সাক্ষ্য এমনই ছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষায় শয়তান ইয়োবকে যন্ত্রণা দেওয়ার লক্ষ্যে হস্ত প্রসারিত করেছিল, এবং ইয়োব এমন যন্ত্রণা অনুভব করেছিল যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি, তবুও তার সাক্ষ্য সবাইকে স্তম্ভিত করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। শয়তানকে আরও একবার পরাজিত করার জন্য সে তার মনোবল, দৃঢ়তা, ও ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের পাশাপাশি তার ঈশ্বরে ভীতিকে ব্যবহার করেছিল, এবং তার আচরণ ও তার সাক্ষ্য আরো একবার ঈশ্বরের অনুমোদন ও আনুকূল্য লাভ করেছিল। এই প্রলোভনের সময়, ইয়োব তার প্রকৃত আচরণের মাধ্যমে শয়তানের কাছে ঘোষণা করেছিল যে শারীরিক যন্ত্রণা ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ও আনুগত্যকে পরিবর্তন করতে বা ঈশ্বরের প্রতি তার সমর্পণ ও ঈশ্বরে ভীতিকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম নয়; সে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছে বলে কখনোই ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করবে না বা নিজের ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে ত্যাগ করবে না। ইয়োবের সংকল্প শয়তানকে কাপুরুষ করে দিয়েছিল, তার বিশ্বাস শয়তানকে ভীরু ও কম্পমান করে তুলেছিল, যে তীব্রতার সাথে সে জীবন-মরণের যুদ্ধে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল তা শয়তানের মধ্যে এক গভীর ঘৃণা ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল; তার ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়পরায়ণতা শয়তানের কাছে তার ক্ষতি করার কোনো উপায় অবশিষ্ট রাখেনি, এতটাই যে শয়তান ইয়োবের প্রতি তার আক্রমণ বন্ধ করেছিল এবং তার বিরুদ্ধে যিহোবা ঈশ্বরের সম্মুখে করা অভিযোগ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যার অর্থ ছিল যে ইয়োব পৃথিবীকে অতিক্রম করেছিল, দেহকে অতিক্রম করেছিল, শয়তানকে অতিক্রম করেছিল, এবং মৃত্যুকেও অতিক্রম করে গিয়েছিল। সে ছিল সমগ্র ও সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের একজন মানুষ। এই দুটো পরীক্ষার সময়, ইয়োব তার সাক্ষ্যে অটল ছিল, প্রকৃতপক্ষেই নিজের ত্রুটিহীনতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে জীবনে যাপন করেছিল, এবং ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দকে পরিত্যাগের জীবন-নীতির পরিধিকে প্রশস্ত করেছিল। এই দুই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করা ইয়োবের মধ্যে এক সমৃদ্ধতর অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছিল, এবং এই অভিজ্ঞতা তাকে আরো বেশী পরিণত ও পোক্ত করে তুলেছিল, তাকে আরো বেশী শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তুলেছিল, এবং যে সততার প্রতি সে অটল ছিল তার যথার্থতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে তাকে আরো প্রত্যয়ী করে তুলেছিল। যিহোবা ঈশ্বরের পরীক্ষাগুলো ইয়োবকে মানুষের সম্পর্কে ঈশ্বরের যত্নের এক গভীর উপলব্ধি ও বোধ প্রদান করেছিল, এবং তাকে ঈশ্বরের ভালোবাসার মূল্যবানতার ধারণা পেতে দিয়েছিল, যেখান থেকে তার ঈশ্বরে ভীতির সাথে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসাও যুক্ত হয়েছিল। যিহোবা ঈশ্বরের পরীক্ষাগুলো ইয়োবকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি, বরং তার হৃদয়কে ঈশ্বরের আরও নিকটে নিয়ে এসেছিল। ইয়োবের শারীরিক যন্ত্রণা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন তার জন্য যিহোবা ঈশ্বরের যে উদ্বেগ সে উপলব্ধি করতে পেরেছিল, তার ফলে তার কাছে নিজের জন্মদিবসকে অভিশাপ দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প অবশিষ্ট ছিল না। এই আচরণ দীর্ঘ-পরিকল্পিত ছিল না, বরং তা ছিল তার হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসার এক স্বাভাবিক প্রকাশ, তা ছিল এক স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ যা এসেছিল ঈশ্বরের প্রতি তার বিবেচনা ও ভালোবাসা থেকে। অর্থাৎ বলা যায় যে যেহেতু সে নিজেকে ঘৃণা করতো, এবং ঈশ্বরকে কষ্ট দিতে অনিচ্ছুক ও অরাজি ছিল, সেই কারণেই তার বিবেচনা ও ভালোবাসা নিঃস্বার্থপরতার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। এই সময়ে, ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি তার দীর্ঘস্থায়ী আরাধনা, আকুতি ও নিষ্ঠাকে ঈশ্বরের প্রতি বিবেচনা ও ভালোবাসার স্তরে উত্তোলিত করেছিল। সেই একই সাথে, সে ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ও আনুগত্যকে এবং তার ঈশ্বরে ভীতিকে, বিবেচনা ও ভালোবাসার স্তরে উন্নীত করেছিল। সে নিজেকে এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত রেখেছিল যা ঈশ্বরের ক্ষতিসাধন করতে পারে, এবং নিজেকে এমন কোনো আচরণের অনুমতি দেয়নি যা ঈশ্বরকে আহত করতে পারে, এবং তার নিজের কারণে ঈশ্বরের উপর কোনোপ্রকার দুঃখ, শোক, বা বিষণ্ণতা নিয়ে আসা থেকে বিরত থেকেছিল। ঈশ্বরের চোখে এই ইয়োব সেই আগের ইয়োব হলেও, তার বিশ্বাস, আনুগত্য ও ঈশ্বরভীতি ঈশ্বরকে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি ও আনন্দ প্রদান করেছিল। এই সময়ে ইয়োব সেই ত্রুটিহীনতা অর্জন করেছিল যা ঈশ্বর তার থেকে প্রত্যাশা করেছিলেন; ঈশ্বরের চোখে সে হয়ে উঠেছিল এমন এক মানুষ যে সত্যিই “নিখুঁত ও ন্যায়পরায়ণ” বলে অভিহিত করার যোগ্য। তার ধার্মিক ক্রিয়াকলাপ তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে জয়ী হতে ও ঈশ্বরের প্রতি নিজের সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে সাহায্য করেছিল। একইভাবে, তার ন্যায়পরায়ণ ক্রিয়াকলাপ তাকে নিখুঁত করে তুলেছিল, এবং তার জীবনের মূল্যকে বরাবরের চেয়ে উন্নীত ও সীমাহীন স্তরে নিয়ে গিয়েছিল, এবং সেগুলো সেইসাথে তাকে করে তুলেছিল এমন প্রথম ব্যক্তি যে আর কখনোই শয়তানের দ্বারা আক্রান্ত বা প্রলোভিত হবে না। যেহেতু ইয়োব ন্যায়পরায়ণ ছিল, তাই সে শয়তানের দ্বারা অভিযুক্ত ও আক্রান্ত হয়েছিল; যেহেতু ইয়োব ন্যায়পরায়ণ ছিল, তাই তাকে শয়তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল; এবং যেহেতু ইয়োব ন্যায়পরায়ণ ছিল, তাই সে শয়তানকে অতিক্রম ও পরাজিত করতে পেরেছিল, এবং নিজের সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে পেরেছিল। অতঃপর ইয়োব হয়ে উঠেছিল প্রথম ব্যক্তি যাকে আর কখনোই শয়তানের হাতে সমর্পণ করা হবে না, সে সত্যিই ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে এসেছিল এবং শয়তানের গুপ্তচরবৃত্তি বা অধঃপতনবিহীন অবস্থায় ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য হয়ে আলোতে বাস করেছিল…। সে ঈশ্বরের চোখে হয়ে উঠেছিল একজন প্রকৃত মানুষ; তাকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল …
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২