ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন
আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে ভূচর সকল পশু ও খেচর সকল পাখি সৃষ্টি করলেন এবং সেই মানুষটি তাদের কি নাম রাখবেন, তা জানার জন্য তাদের তাঁর কাছে নিয়ে এলেন। তিনি যে প্রাণীর যে নাম রাখলেন, তার সেই নামই থাকল। তিনি প্রত্যেক গৃহপালিত পশু, পাখি ও বন্যপশুর নামকরণ করলেন কিন্তু মানুষের যোগ্য কোন সঙ্গিনী তাদের মধ্যে পাওয়া গেল না।
আদিপুস্তক ২:১২-২৩ প্রভু পরমেশ্বর আদমের দেহ থেকে খুলে নেওয়া পঞ্জরাস্থি দ্বারা এক নারী সৃষ্টি করলেন এবং তাকে আদমের কাছে নিয়ে এলেন। আদম তখন বললেন, এবার আমি পেলাম তাকে যে আমার একান্ত আপন, আমারই অস্থি থেকে যার উদ্ভব! সম্ভূতা সে নরের সত্তা থেকে নারী হবে তার নাম।
শাস্ত্রের এই অংশে একটি মূল বাক্য রয়েছে: “আদম যে প্রাণীর যে নাম রাখলেন, তার সেই নামই থাকল”। তাই সমস্ত জীবিত সত্তার নাম কে দিয়েছেন? তিনি আদম, ঈশ্বর নন। এই বাক্যটি মানবজাতিকে এক বাস্তবিকতা জানায়: ঈশ্বর যখন মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাকে বুদ্ধিমত্তা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, মানুষের বুদ্ধি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। এমনটা নিশ্চিত। কিন্তু কেন? ঈশ্বরকে আদমকে সৃষ্টি করার পর, আদম কি বিদ্যালয়ে গিয়েছিল? সে কি পড়তে জানত? ঈশ্বর নানাবিধ জীবিত সত্তা সৃষ্টি করার পর, আদম কি সেসকল জীবকে চিনতে পেরেছিল? ঈশ্বর কি তাকে তাদের নাম বলেছিলেন? এই জীবদের কী নামকরণ করা হবে, সে বিষয়ে ঈশ্বর অবশ্যই তাকে কোনো শিক্ষা দেননি। এমনটাই সত্য! তাহলে আদম কী করে জানল যে, কীভাবে এই জীবিত সত্তাদের নাম দিতে হবে, এবং তাদের কী ধরনের নাম দিতে হবে? এই বিষয়টি আদমকে সৃষ্টি করাকালীন ঈশ্বর তার সঙ্গে কী সংযুক্ত করেছিলেন, সেই প্রশ্নের সঙ্গেই জড়িত। এখানে আরো একটা মূল বিষয় রয়েছে, যা তোমাদের উপলব্ধি করা উচিত: আদম এই জীবিত সত্তাদের নাম দেওয়ার পরে সেই নামগুলি ঈশ্বরের শব্দভাণ্ডারে স্থান পায়। এই বিষয়ে কেন আমি উল্লেখ করছি? কারণ এর সঙ্গেও ইশ্বরের স্বভাব জড়িত, এবং এই বিষয়টির উপর আমাকে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করতেই হবে।
ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করলেন, তার মধ্যে নিজের প্রাণবায়ু সঞ্চার করলেন, তাঁর নিজের কিছুটা বুদ্ধি, দক্ষতা এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা প্রদানও করলেন তাকে। ঈশ্বর মানুষকে এই সকল বিষয় প্রদানের পর, মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ করতে ও নিজের মতো করে চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম হল। মানুষ যা ভাবনাচিন্তা করে এবং যে কার্যসাধন করে, তা যদি ঈশ্বরের চোখে শুভ হয়, তবে ঈশ্বর তা গ্রহণ করেন, এবং তার মধ্যে তিনি হস্তক্ষেপ করেন না। মানুষ যা করে তা যদি সঠিক হয় তবে ঈশ্বর তার মান্যতা দেন। তাই “আদম যে প্রাণীর যে নাম রাখলেন, তার সেই নামই থাকল”। এই বাক্যবন্ধটি কী ইঙ্গিত করছে? তা এমনটা ইঙ্গিত করছে, যে, বিভিন্ন জীবিত সত্তার যে নাম দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তনের প্রয়োজন বলে ঈশ্বর মনে করেন নি। যে জীবকে আদম যে নামে ডেকেছে, ঈশ্বর “তবে তাই হোক”, বলে সেই জীবের সেই নামটিকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এই বিষয়বস্তুটি নিয়ে ঈশ্বর কি কোনো মতামত ব্যক্ত করেছিলেন? না, অবশ্যই করেননি। এর থেকে তুমি কী অনুধাবন করো? ঈশ্বর মানুষকে বুদ্ধিমত্তা দিয়েছেন, এবং মানুষ কার্যসাধনের জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত এই বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করেছে। মানুষ যা করে তা যদি ঈশ্বরের চোখে ইতিবাচক হয়, তাহলে তা কোনোরকম বিচার বা সমালোচনা ছাড়াই ঈশ্বরের দ্বারা স্বীকৃত, অনুমোদিত এবং গৃহীত হয়। এই কাজ কোনো ব্যক্তি, কোনো দুষ্ট আত্মা, বা শয়তান করতে পারে না। তোমরা কি এখানে ঈশ্বরের স্বভাবের একটা উদ্ঘাটন দেখতে পাও? কোনো মানুষ, কোনো দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি, বা শয়তান কি কখনো তার চোখের সামনে তাদের নামে কোনো কাজ করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে অনুমতি দেবে? অবশ্যই না! তারা কি এই পদের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো শক্তির সঙ্গে লড়াই করবে, যা তাদের থেকে ভিন্ন? তারা অবশ্যই তা করবে! সেটা যদি হত কোনো দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা শয়তান, কিনা সেই সময় আদমের সঙ্গে ছিল, তাহলে সে অবশ্যই আদমের কাজকে অস্বীকার করত। তারও যে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে, তারও যে অনন্য অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য সে নিশ্চিতভাবেই আদম যা করেছে তার সবকিছুকেই নস্যাৎ করত: “তুমি এইটাকে এই নামে ডাকতে চাও? ঠিক আছে, আমি একে এই নামে ডাকব না, আমি একে ঐ নামে ডাকব; তুমি একে টম নাম দিয়েছে, কিন্তু আমি একে হ্যারি বলে ডাকব। আমি যে কতটা বুদ্ধিমান সেটা আমাকে দেখাতে হবে।” এটা কী ধরনের প্রকৃতি? এটা কি সাঙ্ঘাতিক রকমের ঔদ্ধত্য নয়? ঈশ্বরের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? তাঁর কি এই ধরনের স্বভাব রয়েছে? আদম যা করছিল তার প্রতি কি ঈশ্বরের কোনো অস্বাভাবিক আপত্তি ছিল? উত্তরটা হবে দ্বর্থ্যহীনভাবে না! ঈশ্বর যে স্বভাব প্রকাশ করেন তার মধ্যে তর্কপ্রিয়তা, অহংকার ও নিজের নৈতিকতার বিষয়ে ঔদ্ধত্যের লেশমাত্র ইঙ্গিত নেই। এখানে এটুকু স্পষ্ট। এটাকে একটা গৌণ বিষয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তুমি যদি ঈশ্বরের সারসত্য উপলব্ধি না করো, ঈশ্বর কীভাবে কাজ করেন এবং ঈশ্বরের মনোভাব কী, তা যদি তোমার অন্তঃকরণ বোঝার চেষ্টা না করে, তাহলে তুমি ঈশ্বরের স্বভাব জানবে না, বা ঈশ্বরের স্বভাবের প্রকাশ বা উদ্ঘাটন দেখবে না। তাই নয় কি? আমি তোমাদের কাছে এক্ষুনি যা ব্যাখ্যা করলাম, তার সঙ্গে কি তোমরা একমত? আদমের কর্মের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ঈশ্বর সাড়ম্বরে এমনটাও ঘোষণা করেননি যে “তুমি খুব ভালো কাজ করেছ, তুমি সঠিক কাজ করেছ, আমি তোমার সঙ্গে সহমত”! তবে আদম যা করেছিল, ঈশ্বর নিজের অন্তর থেকে তা অনুমোদন, স্বীকার ও প্রশংসা করেছিলেন। সৃষ্টিলগ্নে এটাই ছিল প্রথম সেই কাজ, যা ঈশ্বরের নির্দেশে তাঁরই জন্য মানুষ করেছিল। এ ছিল এমন এক কাজ, যা ঈশ্বরের পরিবর্তে ও ঈশ্বরের তরফ থেকে মানুষ করেছিল। ঈশ্বরের চোখে, তিনি মানুষকে যে বুদ্ধিমত্তা দিয়েছেন তা থেকে এই কাজ উদ্ভূত হয়েছে। তিনি সেটাকে একটা ভালো বিষয়, একটা ইতিবাচক বিষয় হিসাবে দেখেছিলেন। সেই সময় আদম যা করেছিল, তা ছিল মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের বুদ্ধিমত্তার প্রথম প্রকাশ। ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে, তা ছিল এক সুষ্ঠু বহিঃপ্রকাশ। আমি তোমাদের যা বলতে চাই তা হল এই, যে, ঈশ্বরের লক্ষ্য হল তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, তার এবং তার বুদ্ধিমত্তার কিছুটা মানুষের মধ্যে সঞ্চার করা, যাতে মানবজাতি হয়ে উঠতে পারে এমন এক জীবিত সত্তা, যা তাঁকে প্রতীয়মান করে তোলে। কোনো এক জীবিত সত্তা তাঁর হয়ে কাজ করবে, ঠিক এমনটা দেখার জন্যই ঈশ্বর আকুল হয়ে ছিলেন।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ১