প্রথম দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বদান্যতায় মানবজাতির দিন এবং রাতের সূচনা হয় এবং অবিচল থাকে
প্রথম অনুচ্ছেদটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাকঃ: “ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে তিনি দীপ্তিকে পৃথক করলেন এবং দীপ্তির নাম দিন ও অন্ধকারের নাম রাখলেন রাত্রি। রাত্রি ও দিনের অবসানে সমাপ্ত হল প্রথম দিবস” (আদিপুস্তক ১:৩-৫)। এই অনুচ্ছেদে সৃষ্টির সূচনালগ্নে ঈশ্বরের প্রথম কার্যের বর্ণনা করা হয়েছে, এবং ঈশ্বর প্রথম যে দিবস অতিবাহিত করেছিলেন সেখানে ছিল এক সন্ধ্যা ও এক সকাল। তবে সেটি ছিল এক অনন্যসাধারণ দিবস: ঈশ্বর সকল বস্তুর জন্য আলোক প্রস্তুত করেছিলেন, উপরন্তু, তিনি আলোকে অন্ধকার থেকে পৃথক করেছিলেন। ঐ দিন, ঈশ্বর কথা বলতে শুরু করেন, এবং তাঁর বাক্যসমূহ ও কর্তৃত্ব একযোগে অস্তিত্বধারণ করে। সকল বস্তুর মধ্যে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতীয়মান হতে শুরু করে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণে সকল বস্তুর মধ্যে তাঁর শক্তি প্রসারিত হয়। এই দিন থেকেই, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, আর ঈশ্বরের শক্তির কারণে সকল বস্তু গঠিত হয় ও অবিচল থাকে, এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, ও ঈশ্বরের শক্তির কারণে সেগুলি ক্রিয়াশীল হয়। যখন ঈশ্বর এই বাক্যগুলি বলেন “দীপ্তি হোক”, তখন সেখানে আলোক প্রতীয়মান হল। ঈশ্বর যে কোনো কর্মসূচী আরম্ভ করেছিলেন, এমন নয়; আলোকের আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর বাক্যসমূহের ফল হিসাবে। এই ছিল সেই আলোক ঈশ্বর যাকে দিবস বলেছিলেন, নিজ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ আজও যার উপরে নির্ভর করে থাকে। ঈশ্বরের আদেশে, এর সারসত্য এবং মূল্য কখনোই বদলায়নি, আর তা কখনোই অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এর অস্তিত্ব ঈশ্বরের কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, এবং সৃষ্টিকর্তার ঘোষিত করে। এটি বারে বারে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও অবস্থান সুনিশ্চিত করে। এটি ইন্দ্রিয়াতীত কিংবা অলীক নয়, বরং এটি একটি বাস্তব আলোক যা মানুষ চাক্ষুষ করতে পারে। সেই সময় থেকেই, এই শূন্য বিশ্বচরাচরে, যেখানে “পৃথিবী ছিল বিশৃঙ্খল। সেখানে প্রাণের চিহ্নমাত্র ছিল না।”—সেই প্রথম কোনো বস্তুগত পদার্থের উৎপত্তি হয়। সেই পদার্থ উদ্ভূত হয় ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাক্যসমূহ থেকে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও উচ্চারণসমূহের কারণে সকল বস্তুর সৃষ্টিকার্যের প্রথম অঙ্ক হিসাবে তা আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই, ঈশ্বর আলোক এবং অন্ধকারকে পৃথক হয়ে যাওয়ার আদেশ দেন…। ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণ সবকিছু বদলে যায় ও সম্পূর্ণ হয়…। ঈশ্বর এই আলোকে বললেন “দিবস”, এবং অন্ধকারকে বললেন “রাত্রি”। এই সময়ে, ঈশ্বর যে পৃথিবী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সেখানে প্রথম প্রভাত ও প্রথম সন্ধ্যার উৎপত্তি হয়। এই দিবসটি ছিল সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রথম দিবস, এবং তা ছিল সকল বস্তুর সৃষ্টির সূচনা, আর ঠিক সেই দিবস থেকেই তাঁর সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রথমবার সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছিল।
এই বাক্যগুলির মধ্য দিয়ে, মানুষ ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ সহ ঈশ্বরের ক্ষমতা চাক্ষুষ করতে সক্ষম হয়। যেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরই এহেন ক্ষমতার অধিকারী, সেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই এহেন কর্তৃত্ব রয়েছে; যেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরই এইরকম কর্তৃত্বের অধিকারী, সেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই এইরকম ক্ষমতা রয়েছে। কোনো মানুষ কিংবা কোনো বস্তুর কি এমন কর্তৃত্ব অথবা ক্ষমতা থাকতে পারে? তোমাদের অন্তরে কি এর কোনো উত্তর আছে? ঈশ্বর ছাড়া, কোনো সৃষ্ট কিংবা অ-সৃষ্ট সত্তার কি এহেন কর্তৃত্ব রয়েছে? তোমরা কি কোনো গ্রন্থ কিংবা প্রকাশনায় এমন কোনো পদার্থের উদাহরণ পেয়েছ? এমন কোনো প্রমাণ কি রয়েছে যে কেউ এই আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছে? এটি অন্য কোনো গ্রন্থ অথবা নথিতে দেখতে পাওয়া যায় না; এগুলি অবশ্যই ঈশ্বরের এই পৃথিবীর চোখ-ধাঁধানো সৃষ্টি সম্পর্কে একমাত্র কর্তৃত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাশালী বাক্যসমূহ, যা বাইবেলে লিপিবদ্ধ হয়েছে; এই বাক্যগুলি ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব আর পরিচয়ের কথা বলে। এই ধরনের কর্তৃত্ব আর পরিচয়কে কি ঈশ্বরের অনন্য পরিচয়ের প্রতীক বলে বলা যেতে পারে? এগুলিকে কি ঈশ্বরের এবং একমাত্র ঈশ্বরেরই অধিকৃত বলে বলা যেতে পারে? নিঃসন্দেহে, এই প্রকার কর্তৃত্ব এবং শক্তি শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরেরই অধিকৃত হতে পারে! এই কর্তৃত্ব আর শক্তি কোনো সৃষ্ট কিংবা অ-সৃষ্ট সত্তার অধিকৃত অথবা প্রতিস্থাপিত হতে পারে না! এটি কি স্বয়ং অনন্য ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যগুলিরই একটি? তোমরা কি এটিকে প্রত্যক্ষ করেছ? এই বাক্যসমূহ খুব শীঘ্র এবং স্পষ্টভাবে মানুষকে এই বিষয়ে উপলব্ধি করিয়ে দেয় যে, ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব, এবং তাঁর অনন্য শক্তি রয়েছে, রয়েছে সর্বোচ্চ পরিচয় ও অবস্থান। উপরের আলোচনা থেকে, তোমরা কি বলতে পারো যে, তোমরা যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো তিনিই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর?
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১