শয়তান কখনো সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করার স্পর্ধা করেনি, আর এই কারণেই, সমস্ত কিছু সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করে

ইয়োবে ২:৬ তখন যিহোবা শয়তানকে বললেন, দেখো, সে এখন তোমার হাতে, কিন্তু তার প্রাণ যেন রক্ষা পায়।

এই উদ্ধৃতিটি ইয়োবের পুস্তক থেকে গৃহীত, এবং এই বাক্যে “সে” কথাটি ইয়োবেকে নির্দেশ করে। সংক্ষিপ্ত হলেও, এই বাক্যটি অনেকগুলি বিষয়ের ব্যাখ্যা দেয়। এটি আধ্যাত্মিক জগতে সংঘটিত ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যে এক বিশেষ কথোপকথনের বিবরণ দেয়, এবং আমাদের জানায় যে ঈশ্বরের বাক্যের লক্ষ্য ছিল শয়তান। ঈশ্বর সুনির্দিষ্টভাবে যা বলেছিলেন এতে সেটিও লিপিবদ্ধ আছে। ঈশ্বরের বাক্যগুলি ছিল শয়তানের প্রতি এক নির্দেশ এবং আজ্ঞা। এই আদেশটির সুনির্দিষ্ট বিবরণ ইয়োবের প্রাণ রক্ষার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে ইয়োবের জন্য শয়তানের আচরণে ঈশ্বর একটি সীমারেখা টেনে দিয়েছিলেন—শয়তান ইয়োবকে প্রাণে মারতে পারবে না। এই বাক্য থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমরা অবগত হই তা হল এটি শয়তানের প্রতি ঈশ্বরের উচ্চারিত বাক্য। ইয়োবের পুস্তকের মূল পাঠ অনুযায়ী, এমন বাক্যের পটভূমি ছিল এইরকম: শয়তান ইয়োবকে অভিযুক্ত করতে চেয়েছিল, আর তাই ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার আগে শয়তানকে ঈশ্বরের সম্মতি নিতে হতো। ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার জন্য শয়তানের অনুরোধে সম্মতি জ্ঞাপনের সময়, ঈশ্বর শয়তানের উপর শর্ত আরোপ করেন: “ইয়োবেকে তোমার হাতে অর্পণ করা হল বটে; কিন্তু তুমি তাকে প্রাণে মেরো না।” এই বাক্যগুলির চরিত্রটি কী রকম? স্পষ্টতই বাক্যগুলি একটা নির্দেশ, একটি হুকুম। এই বাক্যগুলির প্রকৃতিটি প্রণিধান করার পর, তোমার অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত যে এই হুকুম যিনি জারি করেছিলেন তিনি ছিলেন ঈশ্বর, আর এই আজ্ঞা যে গ্রহণ ও মান্য করেছিল সে ছিল শয়তান। বলাই বাহুল্য, এই বাক্যগুলি পাঠ করেছে এমন যে কারো কাছে, এই নির্দেশে ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যের সম্পর্কটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। নিঃসন্দেহে, এটি আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও, এবং একই সঙ্গে ঈশ্বর ও শয়তানের কথোকথনের সূত্রে শাস্ত্র-বর্ণিত ঈশ্বর ও শয়তানের পরিচয় ও মর্যাদার মধ্যে পার্থক্যও বটে, এবং এটি ঈশ্বর ও শয়তানের পরিচয় ও মর্যাদার মধ্যে সেই সুস্পষ্ট ফারাক যার বিষয়ে মানুষ আজও এই সুনির্দিষ্ট দৃষ্টান্ত ও মূল প্রামাণিক নথি থেকে অবহিত হতে পারে। এই পর্যায়ে এসে, আমাকে বলতেই হবে যে ঈশ্বরের পরিচয় ও মর্যাদার বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই বাক্যগুলির লিখিত বিবরণ এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এবং এই বিবরণ মানবজাতির ঈশ্বর-জ্ঞানের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। আধ্যাত্মিক জগতে সৃষ্টিকর্তা ও শয়তানের মধ্যে এই কথোপকথনের মধ্য দিয়ে, মানুষ সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের আরেকটি সুনির্দিষ্ট আঙ্গিক উপলব্ধি করতে সক্ষম। এই বাক্যগুলি সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের আরেকটি সাক্ষ্য।

আপাতদৃষ্টিতে, যিহোবা ঈশ্বর শয়তানের সঙ্গে এক কথোপকথনে নিরত হচ্ছেন। নির্যাসের দিক থেকে, যে ভঙ্গিমায় যিহোবা ঈশ্বর কথা বলেন এবং যে উচ্চতায় তিনি অধিষ্ঠান করেন, তা শয়তানের থেকে উচ্চতর। অর্থাৎ যিহোবা ঈশ্বর কর্তৃত্বের সুরে শয়তানকে নির্দেশ দিচ্ছেন, এবং শয়তানের কী করবে ও করবে না তা তাকে বলে দিচ্ছেন, বলছেন ইয়োবে ইতিমধ্যেই শয়তানের হস্তগত, এবং ইয়োবের প্রতি শয়তান তার ইচ্ছা মতো আচরণ করতে পারে—কিন্তু সে ইয়োবকে প্রাণে মারতে পারবে না। এর অন্তর্নিহিত অর্থটি হল, ইয়োবকে শয়তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তার প্রাণের অধিকার শয়তানকে হস্তান্তর করা হয়নি; ঈশ্বর অনুমতি না দিলে কেউই ইয়োবের প্রাণ ঈশ্বরের হাত থেকে কেড়ে নিতে পারে না। শয়তানের প্রতি তাঁর এই আদেশে ঈশ্বরের মনোভঙ্গি সুস্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়, এবং কোন অবস্থান থেকে যিহোবা ঈশ্বর শয়তানের সাথে কথা বলেন তাও এই আদেশ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত ও উদ্ঘাটিত করে। এখানে, যিহোবা ঈশ্বর শুধু যে সেই ঈশ্বরের মর্যাদা ধারণ করেন যিনি আলো ও বাতাস এবং সকল বস্তু ও জীবিত সত্তার সৃজন ঘটিয়েছিলেন, যে ঈশ্বর যাবতীয় বস্তু ও জীবিত সত্তার উপর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তা-ই নয়, বরং একই সঙ্গে তিনি সেই ঈশ্বরের মর্যাদাও ধারণ করেন যিনি মানবজাতির উপর এবং মৃতস্থানের উপর আধিপত্য করেন, যে ঈশ্বর সকল জীবিত বস্তুর জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আধ্যাত্মিক জগতে, ঈশ্বর ভিন্ন আর কে শয়তানের প্রতি এহেন এক আদেশ জারির দুঃসাহস দেখাতো? আর ঈশ্বর কেন স্বয়ং ব্যক্তিগতভাবে শয়তানের প্রতি তাঁর এই আদেশ জারি করেছিলেন? কারণ ইয়োবে সহ সকল মানুষের জীবনই ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঈশ্বর শয়তানকে ইয়োবের ক্ষতি করার বা তার প্রাণহানি করার অনুমতি দেন নি, এমনকি শয়তানকে যখন ঈশ্বর ইয়োবেকে প্রলুব্ধ করার অনুমোদন দেন, তখনো তিনি নির্দিষ্টভাবে এরকম এক আদেশ জারি করতে ভোলেন নি, এবং আরেকবার তিনি শয়তানকে আদেশ দিয়েছিলেন যেন সে ইয়োবকে প্রাণে না মারে। শয়তান কখনোই ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করার স্পর্ধা করেনি, এবং তদুপরি, সতত সে অভিনিবেশ সহকারে ঈশ্বরের আদেশ ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশ শ্রবণ করেছে ও মান্য করেছে, কখনো সেগুলি অগ্রাহ্য করার সাহস করেনি, এবং নিশ্চিত ভাবেই, ঈশ্বরের কোনো আদেশকে স্বাধীনভাবে পরিবর্তিত করার সাহসও করেনি। শয়তানের জন্য ঈশ্বর অতখানি সীমারেখাই ধার্য করে দিয়েছেন, আর তাই শয়তান কখনো এই সীমারেখা অতিক্রম করার স্পর্ধা করেনি। এ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা নয়? এ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সাক্ষ্য নয়? ঈশ্বরের প্রতি কেমন আচরণ করতে হবে এবং ঈশ্বরকে কোন দৃষ্টিতে দেখতে হবে সে বিষয়ে মানুষের অপেক্ষা শয়তানের অনেক স্বচ্ছতর উপলব্ধি রয়েছে, আর তাই, আধ্যাত্মিক জগতে, ঈশ্বরের মর্যাদা ও কর্তৃত্বকে শয়তান খুব পরিষ্কার চোখে দেখে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা এবং তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নেপথ্যের নীতিসমূহের বিষয়ে তার এক গভীর উপলব্ধি আছে। এগুলিকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস সে আদৌ করে না, এবং কোনো ভাবে সেগুলিকে অমান্য করা, বা ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করার স্পর্ধাও সে করে না, এবং কোনোভাবে ঈশ্বরের ক্রোধের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দুঃসাহস দেখায় না। প্রকৃতির দিক দিয়ে মন্দ ও উদ্ধত হলেও, শয়তান কখনো ঈশ্বরের নির্ধারিত তার গণ্ডি ও সীমারেখা অতিক্রম করার স্পর্ধা করেনি। লক্ষলক্ষ বছর ধরে এই সীমারেখাগুলি সে কঠোরভাবে মেনে চলেছে, তার প্রতি ঈশ্বরের প্রতিটি নির্দেশ ও আদেশ মান্য করেছে, এবং কখনো গণ্ডি লঙ্ঘন করার সাহস করেনি। বিদ্বেষপরায়ণ হলেও, শয়তান ভ্রষ্ট মানবজাতি অপেক্ষা অনেক বেশি বিচক্ষণ; সৃষ্টিকর্তার পরিচয় সে জানে, এবং নিজের সীমারেখাও তার জানা। শয়তানের এই “অনুগত” কাজকর্ম থেকে প্রতিভাত হয় যে ঈশ্বরের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হল শয়তানের পক্ষে অলঙ্ঘনীয় এক স্বর্গীয় অধ্যাদেশ, এবং সুনির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের অনন্যতা ও কর্তৃত্বের কারণেই সমস্ত কিছু এক সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে, মানবজাতি ঈশ্বরের স্থাপিত গতিপথের মধ্যে জীবনধারণ ও সংখ্যাবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়, যেখানে কোনো মানুষ বা সামগ্রী এই শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করতে অপারগ, এবং কোনো মানুষ বা বস্তু এই বিধানের পরিবর্তনেও অক্ষম—কারণ তারা সকলেই সৃষ্টিকর্তার করতল থেকে এবং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ ও কর্তৃত্ব থেকে উদ্ভূত।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১

পূর্ববর্তী: সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব অপরিবর্তনীয় এবং অপ্রতিরোধ্য

পরবর্তী: যিনি সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের অধিকারী, একমাত্র সেই ঈশ্বরই অনন্য কর্তৃত্ব ধারণ করেন

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত...

মানবজাতির জন্য ঈশ্বর যে দৈনন্দিন খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত করেন (পর্ব ২)

আমরা এখন কী কী বিষয়ে আলোচনা করলাম? আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম মানবজাতির বসবাসের পরিবেশ নিয়ে, এবং ঈশ্বর সেই পরিবেশের জন্য কী করেছিলেন ও তিনি...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন