সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব অপরিবর্তনীয় এবং অপ্রতিরোধ্য
ধর্মগ্রন্থের এই তিনটি অংশের মধ্যে তোমরা কী লক্ষ্য করেছো? ঈশ্বর কর্তৃক তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের যে একটি নীতি আছে তা কি তোমরা লক্ষ্য করেছো? উদাহরণস্বরূপ, মানুষের সঙ্গে এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করতে ঈশ্বর এক মেঘধনুকে ব্যবহার করেছিলেন—বিশ্বকে বিনাশ করতে তিনি যে আর কখনো কোনো প্লাবনকে কাজে লাগাবেন না মানুষকে এই বিষয়ে অবহিত করতে মেঘমালার মাঝে তিনি এক মেঘধনু স্থাপন করেন। মানুষ আজ যে মেঘধনু দেখে তা কি সেই ঈশ্বরের মুখে কথিত মেঘধনু? এর প্রকৃতি ও অর্থ কি পরিবর্তিত হয়েছে? নিঃসন্দেহে, তা হয় নি। এই কার্য নির্বাহ করতে ঈশ্বর তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ করেছিলেন, এবং মানুষের সঙ্গে যে সন্ধিচুক্তি তিনি স্থাপন করেছিলেন তা আজ অবধি কার্যকর রয়েছে, এবং কবে এই সন্ধিচুক্তির পরিবর্তন সাধন করা হবে, সেটিও, অতি অবশ্যই, ঈশ্বরেরই সিদ্ধান্ত হবে। “আকাশের গায়ে আমি আমার ধনু স্থাপন করব”, এ কথা বলার পর থেকে আজ অবধি, ঈশ্বর সততই এই সন্ধিচুক্তিকে মান্য করে চলেছেন। এর থেকে কী বোঝা যায়? বোঝা যায়, ঈশ্বর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হলেও, তাঁর ক্রিয়াকর্মে তিনি অত্যন্ত কঠোর ও নীতিনিষ্ঠ, এবং সর্বদাই তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেন। তাঁর এই কঠোর নিয়মনিষ্ঠতা, এবং তাঁর কার্যাদির নীতিসমূহ সৃষ্টিকর্তার অপ্রতিরোধ্যতা এবং তাঁর কর্তৃত্বের অনতিক্রম্যতাকে প্রতিপন্ন করে। যদিও তিনি সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী, এবং সমস্ত কিছুই তাঁর আধিপত্যের অধীন, এবং যদিও সকলকিছুকে শাসন করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে, তবু ঈশ্বর কখনো তাঁর নিজের পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যাহত করেননি, এবং যতবার তিনি তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ ঘটান, প্রত্যেকবার কঠোরভাবে তাঁর নিজস্ব নীতিসমূহ অনুসারেই তা করা হয়, এবং প্রতিবারই নির্ভুলভাবে তা তাঁর মুখ-নিঃসৃত বাক্যকে মেনে চলে এবং তাঁর পরিকল্পনার পদক্ষেপ ও উদ্দেশ্যসমূহের অনুসরণ করে। বলাই বাহুল্য, ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সকল বস্তুও ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহকে মেনে চলে, এবং কোনো মানুষ বা সামগ্রী তাঁর কর্তৃত্বের ব্যবস্থাপনার বাইরে নয়, এবং তারা তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহের কোনো পরিবর্তন সাধনেও সক্ষম নয়। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, যারা আশীর্বাদধন্য তারা তাঁর কর্তৃত্বের দ্বারা সাধিত সৌভাগ্যের অধিকারী হয়, এবং যারা অভিশপ্ত ঈশ্বরের কর্তৃত্বের দরুনই তারা তাদের শাস্তি লাভ করে। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সার্বভৌমত্বের অধীনে, কোনো মানুষ বা বস্তু তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের থেকে অব্যাহতি পায় না, এবং তারা তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহের কোনো রদবদল ঘটাতেও সক্ষম নয়। কোনো উপাদানের পরিবর্তনের হেতু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের কোনো পরিবর্তন হয় না, এবং একই ভাবে, তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহও কোনো কারণের হেতু পাল্টে যায় না। স্বর্গ ও পৃথিবী ব্যাপক কোনো উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের তাতে কোনো রূপান্তর ঘটবে না; সকল কিছুই বিলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব কখনো অন্তর্হিত হবে না। এই হল সৃষ্টিকর্তার অপরিবর্তনীয় ও অপ্রতিরোধ্য কর্তৃত্বের সারসত্য, এবং এই হল সৃষ্টিকর্তার সেই অনন্যতা!
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১