ন্যায়ের সকল বাহিনী ও সকল ইতিবাচক বিষয়ের কাছে ঈশ্বরের ক্রোধ হল এক রক্ষাকবচ
ঈশ্বরের বক্তব্য, চিন্তা ও কর্মের এই দৃষ্টান্তগুলি উপলব্ধি করার মাধ্যমে তুমি কি ঈশ্বরের সেই ধার্মিক স্বভাবকে অনুধাবন করতে সমর্থ, যা মানুষের দ্বারা লঙ্ঘিত হওয়া বরদাস্ত করবে না? সংক্ষেপে, মানুষ এর যতটুকুই উপলব্ধি করতে সক্ষম হোক, এটি স্বয়ং ঈশ্বরের প্রকৃতির একটা দিক, এবং তিনিই এর অনন্য অধিকারী। অপরাধের প্রতি ঈশ্বরের অসহিষ্ণুতা তাঁর অনন্য সারসত্য; ঈশ্বরের ক্রোধ তাঁর অনন্য প্রকৃতি; ঈশ্বরের মহিমা তাঁর অনন্য নির্যাস। ঈশ্বরের রোষের পিছনে নিহিত নীতি হল তাঁর স্বরূপ ও মর্যাদার প্রদর্শন, একমাত্র তিনিই যার অধিকারী। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই নীতিও স্বয়ং অনন্য ঈশ্বরের সারসত্যের একটি লক্ষণ। ঈশ্বরের প্রকৃতি হল তাঁর নিজস্ব সহজাত সারসত্য, সময়ের অগ্রগতির সাথে যার আদৌ কোনো পরিবর্তন হয় না, এবং ভৌগোলিক অবস্থান পাল্টে গেলেও যা অপরিবর্তিত থাকে। তাঁর সহজাত প্রকৃতি হল তাঁর অন্তর্নিহিত সারসত্য। যার উপরেই তিনি তাঁর কার্য সম্পাদন করুন না কেন, তাঁর সারসত্য পরিবর্তিত হয় না, এবং তাঁর ধার্মিক প্রকৃতিও অপরিবর্তিত থাকে। কেউ যখন ঈশ্বরকে রাগান্বিত করে, ঈশ্বর যা প্রেরণ করেন তা হল তাঁর অন্তর্নিহিত প্রকৃতি; এই সময় তাঁর রোষের পিছনে নিহিত নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না, তাঁর অনন্য স্বরূপ ও মর্যাদাও অপরিবর্তিত থাকে। তাঁর সারসত্যের পরিবর্তনের কারণে বা তাঁর প্রকৃতি থেকে ভিন্ন উপাদান উদ্ভূত হয় বলেই যে তিনি রেগে ওঠেন তা নয়, তিনি রেগে ওঠেন কারণ তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের বিরোধিতা তাঁর প্রকৃতিকে আহত করে। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের সুস্পষ্ট প্ররোচনা ঈশ্বরের নিজস্ব স্বরূপ ও মর্যাদার কাছে একটা স্পর্ধিত রণহুঙ্কার। মানুষ যখন স্পর্ধা ভরে ঈশ্বরকে দ্বন্দ্বে আহ্বান করে, ঈশ্বরের নজরে, মানুষ তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং তাঁর রোষকে পরখ করছে। মানুষ যখন ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, মানুষ যখন ঈশ্বরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, মানুষ যখন ক্রমাগত ঈশ্বরের রোষকে পরখ করে—এবং এরকমই একটা সময়ে পাপ অবাধে দাপিয়ে বেড়ায়—ঈশ্বরের ক্রোধ তখন স্বাভাবিকভাবেই আত্মপ্রকাশ করে ও নিজেকে পেশ করে। তাই, ঈশ্বরের ক্রোধের অভিব্যক্তি একটি ইঙ্গিত যে অচিরেই সকল অশুভ শক্তির অস্তিত্ব লোপ পাবে, এবং এটা একটা লক্ষণ যে সমস্ত বৈরী শক্তির বিনাশ ঘটবে। এটাই ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাবের ও ঈশ্বরের ক্রোধের অনন্যতা। যখন ঈশ্বরের আত্মমর্যাদা ও পবিত্রতার বিরুদ্ধে কেউ স্পর্ধিত প্রশ্ন করবে, যখন ন্যায়বিচারের শক্তিগুলি মানুষের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত ও উপেক্ষিত হবে, তখন ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ প্রেরণ করবেন। ঈশ্বরের সারসত্যের কারণে, পৃথিবীর সকল শক্তি যা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, তাঁর প্রতিরোধ করে, এবং তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে—তা দুষ্ট, ভ্রষ্ট ও অন্যায্য; এরা শয়তানের থেকে আসে ও শয়তানের অধিকারভুক্ত। যেহেতু ঈশ্বর ন্যায্য, আলোক-সম্ভূত এবং ত্রুটিহীনভাবে পবিত্র, তাই ঈশ্বরের ক্রোধ যখন অবারিত হবে, সকল দুষ্ট, ভ্রষ্ট ও শয়তান-অধিকৃত বস্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
যদিও ঈশ্বরের ক্রোধ-বর্ষণ তাঁর ধার্মিক প্রকৃতির অভিব্যক্তির একটি দিক, ঈশ্বরের রোষ কোনোভাবেই তার লক্ষ্যবস্তুর বিষয়ে বাছবিচারহীন নয়, এবং তা নৈতিকতাবিগর্হিতও নয়। বরং উল্টে, ঈশ্বর মোটেই তড়িঘড়ি রেগে ওঠেন না, এবং তাঁর ক্রোধ ও মহিমাকে লঘুভাবে প্রকাশও করেন না। উপরন্তু, ঈশ্বরের ক্রোধ অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত; মানুষ যেভাবে রাগে জ্বলে ঊঠতে বা তাদের রাগ উদ্গীরণ করতে অভ্যস্ত, ঈশ্বরের ক্রোধের সাথে তা আদৌ তুলনীয় নয়। বাইবেলে মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে অনেক কথোপকথন লিপিবদ্ধ আছে। এই কথোপকথনে জড়িত কিছু মানুষের কথাবার্তা অগভীর, জ্ঞানগম্যিহীন ও শিশুসুলভ, কিন্তু ঈশ্বর তাদের আঘাত করেননি বা দোষী সাব্যস্তও করেননি। বিশেষ করে ইয়োবের বিচারের সময়, ইয়োবেকে তারা যে-কথা বলেছিল তা শোনার পর, যিহোবা ঈশ্বর ইয়োবের তিন বন্ধু ও অন্যান্যদের প্রতি কীরকম আচরণ করেছিলেন? তিনি কি তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন? তিনি কি তাদের প্রতি রেগে উঠেছিলেন? এ-ধরনের কিছুই তিনি করেননি। পরিবর্তে তিনি ইয়োবেকে তাদের হয়ে সনির্বন্ধ অনুনয় ও তাদের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন, এবং ঈশ্বর স্বয়ং তাদের ত্রুটিকে গায়ে মাখেন নি। যে প্রাথমিক মনোভাব থেকে ঈশ্বর মানুষদের প্রতি আচরণ করেন, এই দৃষ্টান্তগুলি তার প্রতিনিধিত্ব করে, এবং মানুষ যথারীতি ভ্রষ্ট ও অজ্ঞান। তাই, ঈশ্বরের ক্রোধকে অর্গলমুক্ত করা কোনোভাবেই তাঁর মেজাজের একটি অভিব্যক্তি নয়, এটা তাঁর অনুভূতিসমূহ উদ্গীরণের একটি পন্থাও নয়। মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, বাস্তবটা তার ঠিক উল্টো: ঈশ্বরের ক্রোধ মোটেই তাঁর রোষের একটা পূর্ণাঙ্গ বিস্ফোরক বহিঃপ্রকাশ নয়। এমন নয় যে ঈশ্বর তাঁর নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না বলে তাঁর ক্রোধকে লাগামমুক্ত করেন; এমনও নয় যে তাঁর রোষ স্ফুটনাঙ্কে পৌঁছে গেছে এবং একটা নির্গমনপথ তার আশু প্রয়োজন। উল্টে সত্যিটা হল, ঈশ্বরের ক্রোধ তাঁর ধার্মিক প্রকৃতির একটি প্রদর্শন ও একটি অকৃত্রিম অভিব্যক্তি, এবং এটি তাঁর পবিত্র সারসত্যের একটা প্রতীকী উদ্ঘাটন। ঈশ্বরই ক্রোধ, এবং লঙ্ঘিত হওয়া তিনি বরদাস্ত করেন না—তার মানে এই নয় যে ঈশ্বরের রোষ কারণ অনুযায়ী ভেদাভেদ করে না বা তা নীতিজ্ঞানহীন; রাগের নীতিনৈতিকতাহীন এলোপাতাড়ি বিস্ফোরণ, যে ধরনের রাগ বিভিন্ন কারণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না, তার উপর একচ্ছত্র অধিকার তো ভ্রষ্ট মানুষের। কোনো মানুষ যখন পদমর্যাদা লাভ করে, তখন মেজাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাটা প্রায়শই তার পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠবে, আর তাই সে নিজের অসন্তোষ ও আবেগ নির্গমনের সুযোগ পেলে তা লুফে নেওয়াকে উপভোগ করে; আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই সে রেগে আগুন হয়ে উঠবে, এইভাবে সে তার সামর্থ্যকে দৃষ্টগোচর করে তুলবে এবং অন্যদের অবগত করবে যে পদমর্যাদা ও পরিচিতিতে সে সাধারণ মানুষদের থেকে স্বতন্ত্র। অবশ্য কোনো পদমর্যাদাহীন ভ্রষ্ট লোকেরাও মাঝেমাঝেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে। প্রায়শই তাদের রাগের কারণ হয় তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের হানি। তাদের আপন মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে তারা তাদের আবেগের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবে ও তাদের উদ্ধত প্রকৃতিকে প্রকাশ করবে। পাপের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে বা তাকে সমর্থন করতে মানুষ রাগে জ্বলে উঠবে ও তার আবেগ অবারিত করে দেবে, এবং এই ক্রিয়াকলাপগুলি মানুষের অসন্তুষ্টি প্রকাশের পদ্ধতি; তারা অশুচিতায় পরিপূর্ণ, অভিসন্ধি ও চক্রান্তে কানায় কানায় পরিপূর্ণ, মানুষের কলুষ ও পাপে ভরভরন্ত, এবং সর্বোপরি, মানুষের বন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাসনা তাদের মধ্যে উপচে পড়ছে। যখন ন্যায় ও দুষ্টতার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, তখন ন্যায়ের অস্তিত্ব রক্ষাকল্পে বা তাকে সমর্থন করতে মানুষের রাগ জ্বলে ওঠে না; এর বিপরীতক্রমে ন্যায়ের শক্তিগুলি যখন ভীতিপ্রদর্শিত, নিগৃহীত ও আক্রান্ত হয়, তখন মানুষ না-দেখার, এড়ানোর বা সিঁটিয়ে পিছিয়ে আসার মনোভাব গ্রহণ করে। সেখানে, যখন অসাধু শক্তিগুলির সম্মুখীন হয়, মানুষ তখন মেনে নেওয়ার, ভক্তিতে গদগদ হওয়ার মানসিকতা নেয়। তাই, মানুষের রাগের উদ্গিরণ হল দুষ্ট শক্তিগুলির নির্গমন পথ, লৌকিক মানুষের অবাধ ও অরোধ্য পাপাচারের এক অভিব্যক্তি। অন্যদিকে, ঈশ্বর যখন তাঁর ক্রোধকে বিমুক্ত করবেন, সকল অশুভ শক্তির গতি তখন রুদ্ধ হবে, মানুষের পক্ষে হানিকর সকল পাপ অবদমিত হবে, যেসব বৈরীভাবাপন্ন শক্তি ঈশ্বরের কার্যকে প্রতিহত করে তাদের প্রতীয়মান, বিচ্ছিন্ন ও শাপগ্রস্ত করা হবে, এবং শয়তানের সকল অনুচর যারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে—তাদের শাস্তি দেওয়া হবে ও নির্মূল করা হবে। তাদের শূন্যস্থলে ঈশ্বরের কার্য নির্বাধে এগিয়ে যাবে, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সময়সূচি অনুযায়ী ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত হতে থাকবে, ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিরা শয়তানের ব্যাঘাত ও প্রতারণা থেকে মুক্ত হবে, এবং ঈশ্বর-অনুসরণকারী ব্যক্তিরা প্রশান্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিমণ্ডলে ঈশ্বরের পথপ্রদর্শনা ও যোগান উপভোগ করবে। ঈশ্বরের ক্রোধ সকল অশুভ শক্তির সংখ্যাবৃদ্ধি ও অবাধ সঞ্চরণকে প্রতিহত করার জন্য একটি রক্ষাকবচ, এবং একই সঙ্গে এটা এমন একটা রক্ষাকবচ যা সকল ন্যায্য ও ইতিবাচক জিনিসের অস্তিত্ব ও বিস্তারকে সুরক্ষা দেয়, এবং তাদের অবদমিত ও উৎখাত হওয়া থেকে অনন্তকাল ধরে রক্ষা করে।
ঈশ্বর কর্তৃক সদোম বিনাশের মধ্যে তোমরা কি তাঁর ক্রোধের সারসত্য দেখতে পাও? তাঁর রোষের সাথে অন্যকিছু কি মিশে ছিল? ঈশ্বরের রোষ কি বিশুদ্ধ? মানুষের ভাষায় বললে, তাঁর ক্রোধ কি নির্ভেজাল? তাঁর ক্রোধের পিছনে কি কোনো কপটতা আছে? কোনো ষড়যন্ত্র আছে? অনুচ্চার্য কোনো গোপনীয়তা আছে? আমি তোমাদের কঠোর ও গম্ভীরভাবে বলতে পারি: ঈশ্বরের ক্রোধের মধ্যে এমন কোনো অংশ নেই যাতে কারো সন্দেহের উদ্রেগ হতে পারে। তাঁর ক্রোধ একটা বিশুদ্ধ, অবিমিশ্র রোষ যা অন্য কোনো অভিপ্রায় বা লক্ষ্য পোষণ করে না। তাঁর রোষের পিছনের কারণগুলি বিশুদ্ধ, নির্দোষ এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে। এটি তাঁর পবিত্র সারসত্যের একটি উদ্ঘাটন ও প্রদর্শন; এটি এমন একটা বিষয় সমগ্র সৃষ্টির আর কিছু যার অধিকারী নয়। এটি ঈশ্বরের অনন্য ধার্মিক প্রকৃতির একটা অংশ, এবং এটি সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর সৃষ্টির নিজ নিজ সারসত্যের মধ্যে একটা লক্ষণীয় পার্থক্যও বটে।
অন্যদের দেখা মাত্র হোক বা তাদের অনুপস্থিতিতেই, কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে ওঠে, প্রত্যেকের রাগের ভিন্ন ভিন্ন অভিপ্রায় ও উদ্দেশ্য থাকে। তারা হয়তো তাদের মর্যাদা গড়ে তুলছে, কিম্বা হয়তো তারা তাদের নিজের স্বার্থকে সুরক্ষিত করছে, তাদের ভাবমূর্তিকে বজায় রাখছে বা মুখরক্ষা করছে। কেউ-কেউ তাদের রাগের উপর সংযম প্রয়োগ করে, সেখানে অন্যেরা অপেক্ষাকৃত অপরিণামদর্শী এবং সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ না করে তারা তাদের রাগকে যখন খুশি জ্বলে উঠতে দেয়। সংক্ষেপে, মানুষের রাগ তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে উদ্ভূত হয়। এর উদ্দেশ্য যা-ই হোক, এটা দেহ-সম্ভূত ও প্রকৃতি-সম্ভূত; ন্যায় বা অন্যায়ের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই কারণ মানুষের প্রকৃতি ও সারসত্যের কিছুই সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই, ভ্রষ্ট মানুষের বদমেজাজ আর ঈশ্বরের ক্রোধকে এক নিঃশ্বাসে উল্লেখ করা উচিৎ নয়। ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে, শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট মানুষের ব্যবহার শুরু হয় ভ্রষ্টতাকে নিরাপত্তা দেওয়ার বাসনা থেকে, এবং বস্তুতই এটি ভ্রষ্টতার উপর প্রতিষ্ঠিত; এই কারণেই, তত্ত্বগতভাবে কোনো ব্যক্তির রাগ যতই যুক্তিযুক্ত মনে হোক না কেন, মানুষের রাগ ও ঈশ্বরের ক্রোধ এক নিঃশ্বাসে উল্লেখনীয় নয়। ঈশ্বর যখন তাঁর রোষ প্রেরণ করেন, দুষ্ট শক্তিগুলি সম্বৃত হয় ও দুষ্ট বিষয়গুলি বিনষ্ট হয়, অন্যদিকে ন্যায্য ও ইতিবাচক বিষয়গুলি ঈশ্বরের যত্ন ও সুরক্ষা উপভোগ করতে থাকে এবং তাদের অব্যাহত থাকতে দেওয়া হয়। ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ প্রেরণ করেন কারণ অন্যায্য, নেতিবাচক ও দুষ্ট বিষয়গুলি ন্যায্য ও ইতিবাচক বিষয়গুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম ও বিকাশকে প্রতিহত, বিঘ্নিত ও বিনষ্ট করে। নিজের মর্যাদা ও পরিচিতিকে সুরক্ষিত রাখা ঈশ্বরের রাগের লক্ষ্য নয়, তাঁর রাগের লক্ষ্য ন্যায্য, ইতিবাচক, সুন্দর ও শুভ বিষয়গুলির অস্তিত্বকে সুরক্ষিত করা, মানবতার স্বাভাবিক উদ্বর্তনের নিয়ম ও শৃঙ্খলাকে সুরক্ষিত করা। এটাই ঈশ্বরের ক্রোধের মূল কারণ। ঈশ্বরের রোষ তাঁর প্রকৃতির অত্যন্ত যথাযথ, স্বাভাবিক ও যথার্থ উদ্ঘাটন। ঈশ্বরের রোষের মধ্যে কোনো অলক্ষিত প্রণোদনা নেই, কোনো কপটতা বা ষড়যন্ত্রও নেই, আকাঙ্খা, চালাকি, বিদ্বেষ, হিংস্রতা, পাপাচার বা ভ্রষ্ট মানবতার অন্য কোনো সাধারণ বৈশিষ্টের তো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর রোষকে প্রেরণ করবার পূর্বে ঈশ্বর ইতিমধ্যেই প্রতিটি বিষয়ের নির্যাস খুব স্পষ্টভাবে ও সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে ফেলেছেন, ইতিমধ্যেই তিনি নির্ভুল ও স্বচ্ছ সংজ্ঞা ও সিদ্ধান্ত সূত্রবদ্ধ করে ফেলেছেন। এইভাবে, ঈশ্বরের সকল কাজকর্মে তাঁর উদ্দেশ্য স্ফটিকস্বচ্ছ হয়, ঠিক যেমন স্ফটিকস্বচ্ছ তাঁর মনোভঙ্গি। তিনি বিহ্বল-মস্তিষ্ক, অন্ধ, আবেগ-তাড়িত বা অসতর্ক নন, এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি নীতিজ্ঞানবিগর্হিত নন। ঈশ্বরের ক্রোধের এটি ব্যবহারিক দিক, এবং তাঁর ক্রোধের এই ব্যবহারিক দিকটির কারণেই মানবতা তার স্বাভাবিক অস্তিত্ব অর্জন করেছে। ঈশ্বরের ক্রোধ না থাকলে মানবতা এক অস্বাভাবিক যাপন-পরিবেশের মধ্যে অবতরণ করতো, এবং সকল ন্যায্য, সুকুমার ও শুভ জিনিসগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো ও অস্তিত্ব হারাতো। ঈশ্বরের ক্রোধ ব্যতিরেকে, সৃজিত সত্তাদের অস্তিত্বের নিয়ম-কানুনগুলি লঙ্ঘিত হতো বা এমনকি সম্পূর্ণ উৎখাত হয়ে যেত। মানব-সৃষ্টির পর থেকে, মানুষের স্বাভাবিক অস্তিত্বকে সুরক্ষিত ও অব্যাহত রাখতে ঈশ্বর অবিরত তাঁর ধার্মিক প্রকৃতিকে ব্যবহার করেছেন। তাঁর ধার্মিক প্রকৃতি ক্রোধ ও মহিমাকে ধারণ করে বলে তাঁর ক্রোধের ফলস্বরূপ সকল দুষ্ট মানুষ, বিষয় ও বস্তু, এবং মানুষের স্বাভাবিক অস্তিত্বকে বিঘ্নিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সবকিছু দণ্ডিত, নিয়ন্ত্রিত ও বিনষ্ট হয়। অতীতের বেশ কয়েকটি সহস্রাব্দ ধরে, ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত মানবতার পরিচালনার কার্যে, নানান ধরনের যেসব অশুচি ও দুষ্ট আত্মা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এবং শয়তানের অনুচর ও ভৃত্যের ভূমিকা পালন করে, তাদের আঘাত ও বিনাশ করতে ঈশ্বর ক্রমাগত তাঁর ধার্মিক প্রকৃতিকে ব্যবহার করেছেন। তাই, মানুষের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের কার্য সর্বদা তাঁর পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে চলেছে। অর্থাৎ বলা যায় যে, ঈশ্বরের ক্রোধের অস্তিত্ব রয়েছে বলেই মানুষের সবথেকে ধার্মিক উদ্দেশ্যগুলি কখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি।
ঈশ্বরের ক্রোধের সারসত্য বিষয়ে এখন যখন তোমাদের একটা উপলব্ধি হয়েছে, শয়তানের দুষ্টতাকে কীভাবে চিহ্নিত করতে হয় সে বিষয়ে তোমরা অবশ্যই আরো ভালো একটা উপলব্ধি অর্জন করবে!
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ২