ঈশ্বর অব্রাহামকে একটি পুত্রসন্তান প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন

আদিপুস্তক ১৭:১৫-১৭ ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলে ডাকবে না। তার নাম হবে সারা। আমি তাকে আশীর্বাদ করব, সে হবে বহুজাতির আদিমাতা এবং তার থেকে উৎপন্ন হবে প্রজাকুলের নৃপতিবৃন্দ। অব্রাহাম তখন উপুড় হয়ে প্রণিপাত করলেন ও হাসলেন। তিনি মনে মনে বললেন, একশো বছর বয়স যার, সেই বৃদ্ধের কি সন্তান হবে? নব্বই বছরের বৃদ্ধা সারা কি সন্তান প্রসব করবে?

আদিপুস্তক ১৭:২১-২২ কিন্তু আগামী বছর এই সময়ে সারার যে পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, সেই ইস্‌হাকের সঙ্গেই আমি আবদ্ধ হব এই সন্ধি চুক্তিতে। কথা শেষ করে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছ থেকে অন্তর্হিত হলেন।

ঈশ্বর যে কাজের বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কেউই তাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না

তাহলে, তোমরা সকলে এইমাত্র অব্রাহামের কাহিনী শুনলে, তাই না? বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে ঈশ্বর তাকে নির্বাচন করেছিলেন, তার নাম ছিল অব্রাহাম, এবং যখন সে শতবর্ষীয় আর তার স্ত্রী সারা নব্বই বর্ষীয়, তখন সে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি লাভ করে। ঈশ্বর তাঁকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? ঈশ্বরের সেই প্রতিশ্রুতি এই শাস্ত্রবাক্যে উল্লেখ করা আছে: “আমি তাকে আশীর্বাদ করব, সে হবে বহুজাতির আদিমাতা এবং তার থেকে উৎপন্ন হবে প্রজাকুলের নৃপতিবৃন্দ।” ঈশ্বরের তাকে পুত্র সন্তানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পটভূমি কী ছিল? শাস্ত্রবাক্যে সে বিষয়ে এই বিবরণ পাওয়া যায়: “অব্রাহাম তখন উপুড় হয়ে প্রণিপাত করলেন ও হাসলেন। তিনি মনে মনে বললেন, একশো বছর বয়স যার, সেই বৃদ্ধের কি সন্তান হবে? নব্বই বছরের বৃদ্ধা সারা কি সন্তান প্রসব করবে?” অন্য ভাষায়, এই বয়স্ক দম্পতি সন্তানধারণের পক্ষে খুবই প্রবীণ ছিল। আর ঈশ্বর যখন তাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, তখন অব্রাহাম কী করেছিল? সে হেসে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে বলেছিল, “একশো বছর বয়স যার, সেই বৃদ্ধের কি সন্তান হবে?” অব্রাহাম মনে করেছিল এমনটা হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়—অর্থাৎ সে ভেবেছিল ঈশ্বরের এই প্রতিশ্রুতি একটা রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা এমন কিছু যা মানুষের পক্ষে অর্জন করা অসম্ভব, এবং একইভাবে তা ঈশ্বরের পক্ষেও অনৰ্জনীয় ও অসাধ্য। সম্ভবত, অব্রাহামের কাছে এটা হাস্যকর বিষয় ছিল: “ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তবুও তিনি মনে হয় কোনোভাবে জানেন না যে এত বয়স্ক কেউ সন্তান ধারণে অক্ষম; ঈশ্বর মনে করেন তিনি আমাকে সন্তান ধারণের অনুমতি দিতে পারেন, তিনি বলেছেন যে তিনি আমাকে একটা পুত্রসন্তান দেবেন—এটা নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব!” তাই অব্রাহাম হেসে লুটিয়ে পড়েছিল, মনে মনে ভেবেছিল: “অসম্ভব—ঈশ্বর আমার সাথে তামাশা করছেন, এটা সত্যি হতেই পারে না!” সে ঈশ্বরের বাক্যকে গুরুত্ব দেয়নি। তাহলে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অব্রাহাম কেমন মানুষ ছিল? (ধার্মিক।) সে একজন ধার্মিক মানুষ, এটা কোথায় বলা হয়েছিল? তোমরা ভাবো যে ঈশ্বর যাদের আহ্বান করেন তারা সকলেই ধার্মিক ও ত্রুটিমুক্ত, তারা সকলেই ঈশ্বরের সাথে চলার মতো মানুষ। তোমরা তত্ত্বকথা মেনে চলো! তোমাদের অবশ্যই স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে ঈশ্বর যখন কাউকে সংজ্ঞায়িত করেন, তিনি নির্বিচারে তা করেন না। এখানে ঈশ্বর বলেননি যে অব্রাহাম ধার্মিক ছিল। ঈশ্বরের অন্তরে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিমাপ করার মানদণ্ড রয়েছে। যদিও অব্রাহাম কী ধরনের মানুষ তা ঈশ্বর বলেননি, কিন্তু তার আচরণের উপর ভিত্তি করে, ঈশ্বরের উপর অব্রাহামের বিশ্বাস কেমন ছিল বলে মনে হয়? সামান্য বিমূর্ত ছিল? নাকি সে সুবিশাল বিশ্বাসী ছিল? না, তা নয়! তার হাসি ও চিন্তাভাবনাই তার স্বরূপ বুঝিয়ে দেয়, সুতরাং তাকে ধার্মিক বলে বিশ্বাস করাটা শুধুই তোমাদের কল্পনা, তত্ত্বকথার অন্ধ প্রয়োগ, এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মূল্যায়ন। ঈশ্বর কি অব্রাহামের হাসি ও ছোট ছোট অভিব্যক্তিগুলো দেখেছিলেন? তিনি কি সেগুলোর সম্পর্কে জানতেন? হ্যাঁ জানতেন। কিন্তু তাতে কী ঈশ্বর তাঁর সঙ্কল্পে পরিবর্তন করেছিলেন? না! ঈশ্বর যখন পরিকল্পনা ও সংকল্প করেছিলেন যে তিনি এই ব্যক্তিকেই মনোনীত করবেন, তখনই তা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। মানুষের চিন্তাভাবনা বা আচরণ কোনোটাই ঈশ্বরকে প্রভাবিত করতে পারে না বা তাঁর বিষয়ে বিন্দুমাত্রও হস্তক্ষেপ করতে পারে না; ঈশ্বর নির্বিচারে তাঁর পরিকল্পনা বদলাবেন না, আবার মানুষের আচরণ যদি অজ্ঞতাপূর্ণও হয়, তাতেও সাময়িক আবেগের বশে ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা বদলাবেন না বা বাতিল করবেন না। তাহলে আদিপুস্তক ১৭:২১-২২-এ কী লেখা আছে? “কিন্তু আগামী বছর এই সময়ে সারার যে পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, সেই ইস্‌হাকের সঙ্গেই আমি আবদ্ধ হব এই সন্ধি চুক্তিতে। কথা শেষ করে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছ থেকে অন্তর্হিত হলেন।” অব্রাহাম কী বলেছিল বা ভেবেছিল, সে বিষয়ে ঈশ্বর বিন্দুমাত্রও মনোযোগ দেননি। তাঁর এই উপেক্ষার কারণ কী? কারণ সেই সময়ে ঈশ্বর চাননি যে মানুষ সুবিশাল বিশ্বাসী হোক, বা ঈশ্বর সম্পর্কে তার সুবিশাল জ্ঞান থাকুক, অথবা ঈশ্বর কী করেছেন বা বলেছেন সে বিষয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হোক। অর্থাৎ, তিনি কী করার সংকল্প করেছেন, কাদের বেছে নিতে তিনি বদ্ধপরিকর, অথবা তাঁর কাজের নীতি, এসব সম্পর্কে মানুষ উপলব্ধি করুক তা তিনি মানুষের কাছে আকাঙ্ক্ষা করেন নি, কারণ তখন মানুষের আত্মিক উচ্চতা ছিল নিতান্তই অপর্যাপ্ত। সেই সময়ে, অব্রাহাম যা করেছিল, যেভাবে আচরণ করেছিল, সবই ঈশ্বর স্বাভাবিক হিসাবেই গণ্য করেছিলেন। তিনি নিন্দা বা তিরস্কার করেননি, বরং শুধু বলেছিলেন: “আগামী বছর এই সময়ে সারার পুত্র ইস্‌হাক জন্মগ্রহণ করবে।” এই বাক্য ঘোষণা করার পরে ঈশ্বরের কাছে এই বিষয়টা ধাপে ধাপে সত্য হয়েছিল; ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে যা সম্পন্ন হওয়ার ছিল, তা ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়ে গিয়েছিল। এই বিষয়ের আয়োজন সমাপ্ত করার পরে ঈশ্বর বিদায় নিয়েছিলেন। মানুষ যা করে বা ভাবে, যা বোঝে, মানুষের পরিকল্পনা—এগুলোর কোনোটারই ঈশ্বরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ঈশ্বরের নির্ধারিত সময় ও পর্যায়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, সবকিছুই ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারে চলে। ঈশ্বরের কাজের নীতি এমনই। মানুষ যা কিছু চিন্তা করে বা জানে তাতে ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন না, আবার শুধুমাত্র মানুষ বিশ্বাস করে না বা বোঝে না বলে তিনি নিজের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন না বা তাঁর কাজ থেকে বিরত থাকেন না। এইভাবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা এবং চিন্তা অনুযায়ীই যে কোনো ঘটনা সম্পন্ন হয়। বাইবেলেও আমরা নির্দিষ্টভাবে ঠিক এটাই দেখতে পাই: ঈশ্বর তাঁর নির্ধারিত সময়েই ইস্‌হাকের জন্মগ্রহণ করিয়েছিলেন। এই ঘটনা কি প্রমাণ করে যে মানুষের ব্যবহার ও আচরণ ঈশ্বরের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছিল? ঈশ্বরের কাজে এগুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি! ঈশ্বরের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের স্বল্পতা, এবং ঈশ্বর সম্পর্কিত তার ধারণা ও কল্পনা কি ঈশ্বরের কাজকে প্রভাবিত করেছিল? না, তা করেনি! বিন্দুমাত্রও না! ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা কোনো মানুষ, বস্তু বা পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তিনি যা সংকল্প করেন, তা নির্ধারিত সময়ে ও তাঁর পরিকল্পনা অনুসারেই সম্পন্ন হবে, আর তাঁর কাজে কোনো মানুষই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ঈশ্বর মানুষের মূর্খতা ও অজ্ঞতার কিছু নির্দিষ্ট বিষয় উপেক্ষা করেন, এমনকি তাঁর প্রতি মানুষের প্রতিরোধ ও পূর্বধারণার কিছু বিষয়ও উপেক্ষা করেন, এবং সেসব নির্বিশেষে তাঁর অবশ্য করণীয় কাজ সম্পাদন করেন। এটাই ঈশ্বরের স্বভাব, আর এটাই তাঁর সর্বশক্তিমানতার প্রতিফলন।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২

পূর্ববর্তী: ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে তাঁর সন্ধিচুক্তির প্রতীক হিসাবে রামধনু ব্যবহার করেন

পরবর্তী: অব্রাহামের দ্বারা ইস্‌হাকের উৎসর্গ

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন