অব্রাহামের দ্বারা ইস্হাকের উৎসর্গ
আদিপুস্তক ২২:২-৩ ঈশ্বর বললেন, তোমার একমাত্র পুত্র ইস্হাক, যাকে তুমি ভালবাসো, তাকে নিয়ে তুমি মোরিয়া দেশে যাও এবং সেখানে যে পর্বতের কথা আমি বলব, সেই পর্বতের উপর তাকে বলিদান করে হোমানলে উৎসর্গ কর। অব্রাহাম ভোরে উঠে হোমের জন্য কাঠ কেটে গাধার পিঠে চাপালেন, দুই জন দাস এবং পুত্র ইস্হাককে সঙ্গে নিলেন এবং হোমের জন্য কাঠ চেরাই করলেন। তারপর ঈশ্বর যে স্থানের কথা তাঁকে বলেছিলেন সেই স্থান অভিমুখে যাত্রা করলেন।
আদিপুস্তক ২২:৯-১০ ঈশ্বর কর্তৃক নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে অব্রাহাম সেখানে একটি বেদী নির্মাণ করে তার উপরে কাঠ সাজালেন, তারপর তাঁর পুত্র ইস্হাককে বেঁধে বেদীর কাঠের উপর শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি তাকে বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাতে খড়্গ তুলে নিলেন।
অব্রাহামের দ্বারা ইসহাকের বলিপ্রদানই ঈশ্বরের দ্বারা মানবজাতির ব্যবস্থাপনা ও পরিত্রাণের কাজের সূচনা করেছিল
অব্রাহামকে পুত্রসন্তান দেওয়ার ফলে অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের বাক্য পূরণ হয়েছিল। এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বরের পরিকল্পনা এখানেই থেমে গিয়েছিল; বরং ঠিক তার বিপরীতভাবে, মানবজাতির ব্যবস্থাপনা ও পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের অভূতপূর্ব পরিকল্পনা সবেমাত্র শুরু হয়েছিল, এবং অব্রাহামকে পুত্রসন্তানের আশীর্বাদ ছিল তাঁর সামগ্রিক পরিচালনামূলক পরিকল্পনার ভূমিকা মাত্র। সেই মুহূর্তে, কে-ই বা জানত যে শয়তানের সাথে ঈশ্বরের যুদ্ধ তখনই নিঃশব্দে শুরু হয়ে গেছে যখন অব্রাহাম ইস্হাককে উৎসর্গ করেছিল?
মানুষ নির্বোধ হলেও ঈশ্বর পরোয়া করেন না—তিনি শুধু মানুষকে প্রকৃত হতে বলেন
এরপরে চলো দেখা যাক ঈশ্বর অব্রাহামের সাথে কী করেছিলেন। আদিপুস্তক ২২:২-এ ঈশ্বর অব্রাহামকে নিম্নলিখিত আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমার একমাত্র পুত্র ইস্হাক, যাকে তুমি ভালবাসো, তাকে নিয়ে তুমি মোরিয়া দেশে যাও এবং সেখানে যে পর্বতের কথা আমি বলব, সেই পর্বতের উপর তাকে বলিদান করে হোমানলে উৎসর্গ কর।” ঈশ্বরের বাক্যের অর্থ ছিল সুস্পষ্ট: ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেছিলেন তার একমাত্র পুত্র, যাকে সে ভালোবাসতো, সেই ইস্হাককে অগ্নিদগ্ধ বলি হিসাবে উৎসর্গ করতে। আজ এটার দিকে তাকালে, ঈশ্বরের আদেশ কি এখনও মানুষের পূর্বধারণার থেকে ভিন্ন? হ্যাঁ! সেই সময়ে ঈশ্বর যা করেছিলেন তা মানুষের পূর্বধারণার একেবারে বিপরীত; তা মানুষের বোধের অতীত। মানুষ তাদের পূর্বধারণা থেকে এরকম বিশ্বাস করে: যখন একজন বিশ্বাস করতে পারেনি, অসম্ভব বলে মনে করেছিল, তখন ঈশ্বর তাকে একটা পুত্রসন্তান দিয়েছিলেন, এবং সে পুত্র লাভ করার পর ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন তার পুত্রকে বলি দিতে। এটা কি একেবারেই অবিশ্বাস্য নয়! ঈশ্বর আসলে কী করতে চেয়েছিলেন? ঈশ্বরের প্রকৃত অভিপ্রায় কী ছিল? তিনি নিঃশর্তে অব্রাহামকে একটা পুত্রসন্তান দিয়েছিলেন, আবার তিনি চেয়েছিলেন অব্রাহাম একটা নিঃশর্ত বলিদান করুক। এই চাহিদা কি অত্যধিক ছিল? তৃতীয় পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটা শুধুমাত্র অত্যধিকই নয়, বরং “অকারণে সমস্যা সৃষ্টি করার” মতো একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু অব্রাহামের নিজের মনে হয়নি যে ঈশ্বর খুব বেশি দাবি করছেন। যদিও এ বিষয়ে তার নিজস্ব কিছু ছোটখাট মতামত ছিল, এবং যদিও সে ঈশ্বরের প্রতি সন্দিহান ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বলিদান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। এইখানে, তুমি এমন কী দেখতে পাচ্ছ যা থেকে প্রমাণিত হয় যে অব্রাহাম তার পুত্রকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক ছিল? এই বাক্যগুলোয় কী বলা হচ্ছে? মূল পাঠ্যে এই বর্ণনা পাওয়া যায়: “অব্রাহাম ভোরে উঠে হোমের জন্য কাঠ কেটে গাধার পিঠে চাপালেন, দুই জন দাস এবং পুত্র ইস্হাককে সঙ্গে নিলেন এবং হোমের জন্য কাঠ চেরাই করলেন। তারপর ঈশ্বর যে স্থানের কথা তাঁকে বলেছিলেন সেই স্থান অভিমুখে যাত্রা করলেন।” (আদিপুস্তক ২২:৩)। “ঈশ্বর কর্তৃক নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে অব্রাহাম সেখানে একটি বেদী নির্মাণ করে তার উপরে কাঠ সাজালেন, তারপর তাঁর পুত্র ইস্হাককে বেঁধে বেদীর কাঠের উপর শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি তাকে বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাতে খড়্গ তুলে নিলেন।” (আদিপুস্তক ২২:৯-১০)। যখন অব্রাহাম তার হাত বাড়িয়ে নিজের সন্তানের বলিদানের জন্য ছুরি হাতে নিয়েছিল, সেই কাজ কি ঈশ্বর প্রত্যক্ষ করেছিলেন? হ্যাঁ, করেছিলেন। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া—শুরু থেকে, যখন ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেছিলেন ইস্হাকের বলি দিতে, তখন থেকে যখন অব্রাহাম তার পুত্রকে বলি দেওয়ার জন্য সত্যিই ছুরি তুলে ধরেছিল—এই সম্পূর্ণ ঘটনা ঈশ্বরকে অব্রাহামের হৃদয়কে প্রদর্শিত করেছিল, আর ঈশ্বরের বিষয়ে তার আগের মূর্খতা, অজ্ঞতা ও ভুল বোঝাবুঝি নির্বিশেষে, সেই মুহূর্তে ঈশ্বরের প্রতি অব্রাহামের হৃদয় ছিল প্রকৃত ও সৎ, আর সে সত্যিই ইস্হাককে ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, যে পুত্র ঈশ্বর তাকে দিয়েছেন, তাকে আবার ঈশ্বরের কাছেই প্রত্যর্পণ করতে উদ্যত হয়েছিল। অব্রাহামের মধ্যে ঈশ্বর আনুগত্য দেখতে পেয়েছিলেন, ঠিক সেই আনুগত্য যা তিনি কামনা করেছিলেন।
ঈশ্বর এমন অনেক কিছুই করেন যা মানুষের কাছে বোধগম্য নয়, এমনকি বিশ্বাসযোগ্যও নয়। ঈশ্বর যখন কারোর সমন্বয়সাধন করতে চান, সেই সমন্বয়সাধন প্রায়ই মানুষের ধারণার বিপরীত এবং তা মানুষের বোধগম্যও নয়, তবুও নির্দিষ্টভাবে এই অসঙ্গতি এবং দুর্বোধ্যতাই মানুষের জন্য ঈশ্বরের বিচার ও পরীক্ষা। ইতিমধ্যে, অব্রাহাম নিজের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিল, যেটা ছিল ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা পূরণে তার সক্ষম হওয়ার সবচেয়ে প্রাথমিক শর্ত। শুধুমাত্র যখন অব্রাহাম ঈশ্বরের চাহিদা মান্য করতে সক্ষম হয়েছিল, যখন সে ইস্হাককে উৎসর্গ করতে উদ্যত হয়েছিল, তখনই ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে আশ্বাস ও অনুমোদন অনুভব করেছিলেন মানবজাতির প্রতি—অব্রাহামের প্রতি, যাকে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বর নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর নির্বাচিত এই ব্যক্তিই তাঁর প্রতিশ্রুতি ও তাঁর পরবর্তীকালের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পাদনের উপযোগী এক অপরিহার্য নেতা। এটা শুধু একটা বিচার ও পরীক্ষা হলেও ঈশ্বর এতে তৃপ্তি বোধ করেছিলেন, তিনি তাঁর জন্য মানুষের ভালোবাসা অনুভব করেছিলেন, এবং এর আগে কখনোই তিনি মানুষের কাছ থেকে এত স্বাচ্ছন্দ্য পাননি। যে মুহূর্তে অব্রাহাম ইস্হাককে হত্যা করার জন্য ছুরি হাতে নিয়েছিল, ঈশ্বর কি তাকে থামিয়েছিলেন? ঈশ্বর অব্রাহামকে ইস্হাকের বলি দিতে দেননি, কারণ ইস্হাকের প্রাণ নেওয়ার কোনো অভিপ্রায়ই তাঁর ছিল না। তাই ঈশ্বর একেবারে সঠিক সময়েই অব্রাহামকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের কাছে অব্রাহামের আনুগত্য ইতিমধ্যেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, সে যেটুকু করেছিল সেটাই যথেষ্ট ছিল, সে যা করতে চেয়েছিল তার পরিণাম ঈশ্বর আগেই দেখে নিয়েছিলেন। এই পরিণাম কি ঈশ্বরের কাছে সন্তোষজনক ছিল? বলা যেতে পারে যে এই পরিণাম ঈশ্বরের কাছে সন্তোষজনক ছিল, ঈশ্বর এটাই চেয়েছিলেন, এটাই ঈশ্বর দেখার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। একথা কি সত্যি? যদিও ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরীক্ষার জন্য ভিন্ন উপায় ব্যবহার করেন, কিন্তু অব্রাহামের মধ্যে ঈশ্বর যা চেয়েছিলেন তা দেখতে পেয়েছিলেন, তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন যে অব্রাহামের হৃদয় প্রকৃত, তার আনুগত্য নিঃশর্ত। ঠিক এই “নিঃশর্ত” বিষয়টাই ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষিত। মানুষ প্রায়শই বলে, “আমি ইতিমধ্যে এটা উৎসর্গ করেছি, ইতিমধ্যেই ওটা ত্যাগ করেছি—ঈশ্বর তা সত্ত্বেও এখনও আমার প্রতি সন্তুষ্ট নন কেন? তিনি কেন বারবার আমার বিচার করে চলেছেন? তিনি কেন আমার পরীক্ষা নিয়ে চলেছেন?” এ থেকে একটা জিনিস বোঝা যায়: ঈশ্বর তোমার হৃদয় প্রত্যক্ষ করেননি এবং তোমার হৃদয় অর্জন করেননি। অর্থাৎ বলা হচ্ছে যে, অব্রাহাম যেমন নিজের হাতে তার পুত্রকে হত্যা করার জন্য এবং তাকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার জন্য ছুরি তুলে নিয়েছিল, সেই রকম আন্তরিকতা ঈশ্বর তোমার মধ্যে প্রত্যক্ষ করেননি। তিনি তোমার নিঃশর্ত আনুগত্য দেখেন নি, এবং তোমার কাছ থেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। তাহলে এটাই স্বাভাবিক যে ঈশ্বর তোমার পরীক্ষা নিতেই থাকবেন। তাই নয় কি?
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২