হারানো মেষের উপাখ্যান

মথি ১৮:১২-১৪ কোন লোকের যদি একশোটি মেষ থাকে ও তার মধ্যে যদি একটি হারিয়ে যায় তবে সে কি সেই নিরাব্বইটি মেষ পাহাড়ে ফেলে রেখে সেই হারানো মেষটিকে খুঁজতে যাবে না? তোমরা কি মনে কর? আর সে যদি কোন প্রকারে ঐটিকে খুঁজে পায়, তবে আমি তোমাদের সত্যই বলছি, যে নিরানব্বইটি মেষ হারায়নি, তাদের চেয়ে সেই ফিরে পাওয়া মেষটির জন্যই সে বেশি আনন্দ করবে। তেমনি এই নগণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও বিনষ্ট হয়, এ আমার স্বর্গস্থ পিতার অভিপ্রেত নয়।

এই অনুচ্ছেদটি হল এক উপাখ্যান—মানুষকে এটি কী ধরনের অনুভূতি দান করে? অভিব্যক্তির যে রীতিটি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে—অর্থাৎ উপাখ্যানের রীতি—মানুষের ভাষায় তা এক ধরনের অলংকার, আর সেই হিসাবে তা মানবিক জ্ঞানের পরিসরের অন্তর্ভুক্ত। বিধানের যুগে যদি ঈশ্বর এই প্রকারের কিছু উচ্চারণ করতেন, তাহলে মানুষ মনে করতো যে এহেন বাক্যসকল যিনি ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে যথাযথভাবে সাযুজ্যপূর্ণ নয়, কিন্তু মনুষ্যপুত্র যখন অনুগ্রহের যুগে এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করেছিলেন, তখন তা মানুষের কাছে সান্ত্বনাদায়ক, আন্তরিক, ও অন্তরঙ্গ বলে বোধ হয়েছিল। ঈশ্বর যখন দেহরূপ ধারণ করেছিলেন, যখন তিনি মনুষ্যরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন তাঁর অন্তরের কণ্ঠস্বরকে ব্যক্ত করার জন্য তিনি স্বীয় মানবতা থেকে আগত এক অতি যথোপযুক্ত উপাখ্যান ব্যবহার করেছিলেন। এই কণ্ঠস্বর ঈশ্বরের নিজের কণ্ঠস্বরের, এবং সেই যুগে যে কার্য তিনি নির্বাহ করতে চেয়েছিলেন তা-র প্রতিনিধিত্ব করেছিল। একই সঙ্গে, তা অনুগ্রহের যুগে মানুষের প্রতি ঈশ্বর প্রদর্শিত মনোভাবকেও তুলে ধরেছিল। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে, প্রতিটি মানুষকে তিনি একটি মেষের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কোনো মেষ যদি হারিয়ে যেতো, তবে তা খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় সবকিছু করতেন। এটি দেহরূপধারণকালীন সময়ে মানবজাতির মাঝে ঈশ্বরের সে সময়কার কার্যের এক নীতির দ্যোতক ছিল। সেই কার্যে তাঁর সংকল্প ও মনোভাবকে বর্ণনা করার জন্য ঈশ্বর এই উপাখ্যানটি ব্যবহার করেছিলেন। ঈশ্বরের দেহধারণের এ-ই ছিল সুবিধা: তিনি মানবজাতির জ্ঞান থেকে সুবিধা নিতে পারতেন, এবং মানুষের ভাষা ব্যবহার করে তাদের সাথে প্রতি বক্তব্য রাখতে এবং তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারতেন। তিনি মানুষের কাছে তাঁর প্রগাঢ়, ঐশ্বরিক ভাষার, এমনভাবে ব্যখ্যা, অথবা “অনুবাদ” করেছিলেন, যা তার আগে অবধি মানুষকে মানুষের ভাষায় এবং মনুষ্যোচিত উপায়ে বুঝতে যারপরনাই ক্লেশ করতে হত। এর ফলে, মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করা, এবং তিনি কী করতে চাইছেন তা অনুধাবন করাটা অনেক সহজ হল। তিনি মানুষের সাথে মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষেরই ভাষা ব্যবহার করে, কথোপকথন করতে পারতেন, এবং এমন ভাবে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন, যা মানুষ বুঝতে পারত। এমনকি মানুষ যাতে ঈশ্বরের দয়া এবং নৈকট্য অনুভব করতে পারে, যাতে তারা তাঁর হৃদয় দর্শন করতে পারে, সেই অভিপ্রায়ে তিনি মানুষের ভাষা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে বক্তব্য রাখতে এবং কার্য সম্পাদন করতে পারতেন। এর থেকে তোমরা কী দেখতে পাচ্ছো? ঈশ্বরের বাক্য ও কার্যকলাপে কোনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি? মানুষের দৃষ্টিতে, স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর অভিপ্রেত বক্তব্য জ্ঞাপনে, কার্য সম্পাদনে, বা স্বীয় ইচ্ছা ব্যক্ত করার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে কোনোক্রমেই মনুষ্যসুলভ জ্ঞান, ভাষা, অথবা মনুষ্যোচিত বাচনভঙ্গি প্রয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু এই চিন্তা ভ্রান্ত। ঈশ্বর এই ধরনের উপাখ্যান ব্যবহার করেছিলেন যাতে মানুষ ঈশ্বরের বাস্তবতা ও আন্তরিকতাকে অনুভব, এবং সেই সময়কালে মানুষের প্রতি তাঁর মনোভাবকে প্রত্যক্ষ করতে পারে। এই উপাখ্যান দীর্ঘকালব্যাপী বিধানের অধীনে বসবাসরত মানুষকে এক স্বপ্ন থেকে জাগ্রত করেছিল, এবং অনুগ্রহের যুগে বসবাসরত মানুষের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে তা উদ্বুদ্ধও করেছিল। এই উপাখ্যানের অনুচ্ছেদটি পাঠ করে, মানুষ মানবজাতির উদ্ধার-মানসে ঈশ্বরের আন্তরিকতার বিষয়ে অবগত হয়, এবং ঈশ্বরের অন্তরে মানবজাতিকে যে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল, তা উপলব্ধি করে।

এই অনুচ্ছেদের সর্বশেষ বাক্যটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখা যাক: “তেমনি এই নগণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও বিনষ্ট হয়, এ আমার স্বর্গস্থ পিতার অভিপ্রেত নয়।” এটি কি প্রভু যীশুর নিজের বাক্য ছিল, নাকি স্বর্গস্থ পিতার বাক্য? বাহ্যিকভাবে মনে হয় প্রভু যীশুই যেন বক্তব্য রাখছেন, কিন্তু তাঁর ইচ্ছা স্বয়ং ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে, যে কারণে তিনি বলেছেন: “তেমনি এই নগণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও বিনষ্ট হয়, এ আমার স্বর্গস্থ পিতার অভিপ্রেত নয়।” তৎকালীন মানুষ স্বর্গস্থ পিতাকেই কেবল ঈশ্বর বলে স্বীকৃতি দিতো, এবং মনে করতো, তাদের চোখের সামনে যে মানুষটিকে তারা দেখতে পাচ্ছিলো, তিনি বুঝি তাঁর দ্বারা প্রেরিত হয়েছেন মাত্র, এবং স্বর্গস্থ পিতার প্রতিনিধিত্ব তিনি করতে পারেন না। এই কারণেই প্রভু যীশুকে উপাখ্যানের শেষে এই বাক্যটি যুক্ত করতে হয়েছিল, যাতে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছাকে মানুষ প্রকৃতই অনুভব করতে পারে, এবং তাঁর বক্তব্যের প্রামাণিকতা ও যথার্থতাকে উপলব্ধি করতে পারে। উচ্চারণ করার পক্ষে যদিও এটি এক সাধারণ বাক্য মাত্র, কিন্তু এটি সতর্কতা ও ভালোবাসা সহকারে উক্ত হয়েছিল, এবং প্রভু যীশুর বিনয় ও প্রচ্ছন্নতাকে উদ্ঘাটিত করেছিল। ঈশ্বর দেহরূপেই অবস্থান করুন বা তিনি আধ্যাত্মিক জগতেই কার্য সম্পন্ন করুন, মানুষের অন্তরকে তিনি সর্বাপেক্ষা উত্তমরূপে জানতেন, এবং মানুষের কী প্রয়োজন তা সবচেয়ে ভালো ভাবে বুঝতেন, জানতেন কী নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন, আর কী-ই বা তাদের বিভ্রান্ত করে, এবং সেই কারণেই তিনি এই বাক্যটি সংযুক্ত করেছিলেন। এই বাক্যটি মানবজাতির মধ্যে লুক্কায়িত এক সমস্যাকে লক্ষণীয় করে তোলে: মনুষ্যপুত্র যা বলেছিলেন, তা নিয়ে মানুষ সন্দিগ্ধ ছিল, যার অর্থ, বক্তব্য রাখার সময় তাঁকে যোগ করতে হয়েছিল: “তেমনি এই নগণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও বিনষ্ট হয়, এ আমার স্বর্গস্থ পিতার অভিপ্রেত নয়,” এবং, শুধুমাত্র এইরূপ উপস্থাপনের সূত্রেই, তাদের যথার্থতা বিষয়ে মানুষকে প্রতীত করতে, এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার উন্নতিসাধন করতে, তাঁর বাক্যগুলি ফলপ্রসু হতে পারতো। এটি প্রদর্শন করে যে, ঈশ্বর যখন এক স্বীকৃত মনুষ্যপুত্রে পরিণত হয়েছিলেন, তখন ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে এক অতি অস্বস্তিকর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, এবং মনুষ্যপুত্রের পরিস্থিতি ছিল খুবই বিব্রতকর। একই সঙ্গে, সেই সময়ে মানুষের মাঝে প্রভু যীশুর মর্যাদা যে কত অকিঞ্চিৎকর ছিল, এটি তা-ও প্রদর্শন করে। এই বাক্য উচ্চারণের প্রকৃত অভিপ্রায় ছিল মানুষকে অবগত করানো যে: তোমরা নিশ্চিত থাকতে পারো—এই বাক্যগুলি আমার অন্তরে যা আছে তার প্রতিনিধিত্ব করছে না, বরং তোমাদের অন্তরে যে ঈশ্বর রয়েছেন, এই বাক্যসমূহ তাঁরই ইচ্ছাস্বরূপ। মানবজাতির কাছে, এটি কি এক বিড়ম্বনার বিষয় ছিল না? যদিও ঈশ্বরের দেহরূপে কার্যসাধনের নানাবিধ সুবিধা ছিল, যা তাঁর দৈব সত্তার ছিল না, কিন্তু তাঁকে তাদের সন্দেহ ও প্রত্যাখ্যান, এবং তাদের অনুভূতিশূন্যতা ও বোধহীনতা সহ্য করতে হয়েছিল। বলা যেতে পারে যে, মনুষ্যপুত্রের কার্যের প্রক্রিয়া ছিল মানবজাতির প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিজ্ঞতা লাভের প্রক্রিয়া। তার থেকেও বড়ো ব্যাপার হল যে, তা ছিল ধারাবাহিকভাবে মানবজাতির আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যে, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা-র মাধ্যমে, তাঁর নিজস্ব সারসত্যের মাধ্যমে, মানবজাতিকে জয় করার উদ্দেশ্যে কার্য সম্পাদনের প্রক্রিয়া। বিষয়টা তেমন ততটা ছিল না যে, ঈশ্বরের অবতার একেবারে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন; বিষয়টা বরং আরো বেশি এমন ছিল যে, ঈশ্বর এক সাধারণ মানুষে পরিণত হয়ে তাঁর অনুসরণকারীদের সঙ্গে এক সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন, এবং এই সংগ্রামে মনুষ্যপুত্র তাঁর বিনয়, তাঁর যা আছে ও তিনি যা, আর তাঁর প্রেম ও প্রজ্ঞার সাহায্যে তাঁর কার্য সম্পূর্ণ করেছিলেন। যে মানুষদের তিনি চেয়েছিলেন, তাদের তিনি অর্জন করেছিলেন, যে পরিচিতি ও মর্যাদার তিনি যোগ্য, তা তিনি অর্জন করেছিলেন, এবং তাঁর সিংহাসনে “প্রত্যাবর্তন” করেছিলেন।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ৩

পূর্ববর্তী: মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু (পর্ব ২)

পরবর্তী: সত্তরগুণ সাতবার ক্ষমা করো এবং প্রভুর ভালোবাসা

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

দ্বিতীয় দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব জলরাশির আয়োজন করে, এবং তৈরি করে নভোমণ্ডল এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে মৌলিক একটি স্থান আবির্ভূত হয়

বাইবেলের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটি পাঠ করা যাক: “ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার...

আদমের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ

আদিপুস্তক ২:১৫-১৭ প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এদন উদ্যানে কৃষিকর্ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন,...

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন