মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু (পর্ব ২)

এবার, এই অনুচ্ছেদটির শেষ বাক্যের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করা যাক: “মানবপুত্রই সাব্বাথ দিনের অধিপতি।” এই বাক্যটির কি কোনো ব্যবহারিক দিক আছে? তোমরা কি এই ব্যবহারিক দিকটি দেখতে পাচ্ছো? ঈশ্বরের প্রত্যেকটি বাক্য তাঁর হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়, তাহলে এমনটা তিনি কেন বলেছিলেন? বিষয়টি তোমরা কীভাবে প্রণিধান করছো? এখন হয়তো তোমরা এই বাক্যটির অর্থ উপলব্ধি করতে পারছো, কিন্তু যে সময় এটি উক্ত হয়েছিল তখন খুব বেশি মানুষ এর অর্থোদ্ধার করতে পারেনি, কারণ মানবজাতি তখন সবেমাত্র বিধানের যুগ থেকে বিনির্গত হয়েছিল। তাদের কাছে, বিশ্রামবার থেকে বিচ্যুত হওয়াটাই ছিল এক ভীষণ দুরূহ কর্ম, প্রকৃত বিশ্রামবার কী, তা উপলব্ধি করার বিষয়টা তো উল্লেখ না করাই শ্রেয়।

“মানবপুত্রই সাব্বাথ দিনের অধিপতি” বাক্যটি মানুষকে জানায় যে ঈশ্বরের সকলকিছুই এক বস্তুগত ভৌত প্রকৃতির নয়, যদিও ঈশ্বর তোমার সকল পার্থিব প্রয়োজনের যোগান দিতে পারেন, কিন্তু তোমার সকল স্থূল প্রয়োজন একবার মিটে গেলে, এই সব বস্তুগত পরিতৃপ্তি কি তোমার সত্যান্বেষণকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে? স্পষ্টতই তা সম্ভব নয়! ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, যে বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি, উভয়ই সত্য। কোনো ভৌত বস্তুর নিরিখে এর মূল্য পরিমাপ করা যায় না, সে বস্তুটি যতই মহার্ঘ হোক, অথবা অর্থের ভিত্তিতেও এর মূল্য নির্ধারণ করা যায় না, কারণ তা কোনো পার্থিব সামগ্রী নয়, এবং তা প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়ের প্রয়োজনীয় সংস্থানসাধন করে। প্রতিটি মানুষের কাছে, এই স্পর্শাতীত সত্যগুলির মূল্য তুমি কদর করো এমন যেকোনো ভৌত বস্তুর মূল্য অপেক্ষা বেশি হওয়া উচিত, তা-ই নয় কি? এটি এমন এক উক্তি যার বিষয়ে তোমাদের সময় নিয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন। আমার বক্তব্যের মূল কথাটি হল, প্রতিটি মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা এবং ঈশ্বর সংক্রান্ত সকলকিছু, এবং কোনো পার্থিব সামগ্রীর দ্বারা এগুলিকে প্রতিস্থাপন করা যায় না। তোমাকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি: খিদে পেলে তোমার খাদ্য প্রয়োজন। এই খাবার মোটের উপর ভালো বা অসন্তোষজনক দুই-ই হতে পারে, কিন্তু তুমি যদি যথেষ্ট পরিমাণে খেয়ে থাকো, তাহলে ক্ষুধার্ত হওয়ার ঐ অপ্রীতিকর অনুভূতিটি আর থাকবে না—চলে যাবে। তুমি শান্তিতে বসতে পারবে, এবং তোমার শরীর বিক্ষোভমুক্ত হবে। মানুষের ক্ষুধা খাদ্যের সাহায্যে মেটানো যায়, কিন্তু ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে গিয়ে তুমি যদি অনুভব করো যে তাঁর সম্বন্ধে তোমার কোনো উপলব্ধি নেই, তাহলে তুমি তোমার অন্তরের শূন্যতাকে কীভাবে মেটাতে পারো? খাদ্য দিয়ে কি তা মেটানো যাবে? কিংবা ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে গিয়ে তুমি যদি তাঁর ইচ্ছাকে উপলব্ধি না করো, তোমার হৃদয়ের সেই শূন্যতা নিবারণে তুমি কীসের সাহায্য নিতে পারো? ঈশ্বরের মাধ্যমে তোমার পরিত্রাণ লাভের অভিজ্ঞতা চলাকালীন, যখন তুমি তোমার স্বভাবের এক পরিবর্তন অন্বেষণ করছো, তখন যদি তুমি তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি না করো, বা সত্য কী, তা না জানো, তুমি যদি ঈশ্বরের স্বভাবকে উপলব্ধি করতে না পারো, তাহলে কি তুমি খুব অস্বচ্ছন্দ বোধ করবে না? তোমার অন্তরে তুমি কি এক প্রবল ক্ষুধা ও তৃষ্ণা অনুভব করবে না? এই অনুভূতিগুলি কি তোমাকে অস্থিরচিত্ত করে তুলবে না? তাহলে তুমি তোমার অন্তরের ওই ক্ষুধা কীভাবে নিবারণ করতে পারো—তা নিরসনের কি কোনো উপায় রয়েছে? কিছু মানুষ কেনাকাটা করতে বের হয়, মনের কথা বিশ্বাস করে বলার জন্য কিছু মানুষ তাদের বন্ধুদের খুঁজে নেয়, কেউ কেউ আবার লম্বা একটা ঘুম দেয়, অন্যেরা আরো বেশি করে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে, কিম্বা তারা আরো পরিশ্রম করে এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করার জন্য আরো প্রচেষ্টা ব্যয় করে। এই কাজগুলি কি তোমার প্রকৃত সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে? তোমাদের সকলেরই এই ধরনের অনুশীলনগুলির বিষয়ে সম্পূর্ণ উপলব্ধি রয়েছে। তুমি যখন অসহায় বোধ করো, যখন তুমি সত্যের বাস্তবতা ও তাঁর ইচ্ছার বিষয়ে অবগত হওয়ার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের থেকে আলোকপ্রাপ্তিলাভের জন্য এক তীব্র আকুতি অনুভব করো, তখন তোমার সবথেকে বেশি কীসের প্রয়োজন? তখন তোমার একপ্রস্থ ভরপেট আহার সেরে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, এবং কিছু সহানুভূতিপূর্ণ বাক্যও কোনো কাজে আসবে না, দৈহিক কামনাবাসনার ক্ষণস্থায়ী আরাম ও পরিতৃপ্তির কথা তো ছেড়েই দাও—তোমার যা প্রয়োজন তা হল ঈশ্বর যেন তোমায় প্রত্যক্ষ ও সুস্পষ্টভাবে জানান যে, তোমার কী করা উচিত, এবং কীভাবেই বা তা করা উচিত, যেন তিনি তোমায় পরিষ্কারভাবে জানান যে, সত্য কী। বিষয়টি তুমি উপলব্ধি করার পর, এমনকি যদি তুমি কেবল সামান্য একটু উপলব্ধি লাভ করো তবুও, তা থেকে তুমি কি তোমার অন্তরে একপ্রস্থ উত্তম ভোজনের অপেক্ষা অধিকতর পরিতৃপ্তি অনুভব করবে না? তোমার অন্তর তৃপ্ত হলে কি তোমার চিত্ত ও তোমার সমগ্র সত্তাও প্রকৃত বিশ্রাম লাভ করে না? এই উপমা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে, তোমরা কি এখন উপলব্ধি করেছো কেন তোমাদের সাথে আমি “মানবপুত্রই সাব্বাথ দিনের অধিপতি” বাক্যটি ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম? এর অর্থ হল, ঈশ্বরের থেকে যা আসে, তাঁর যা আছে ও তিনি যা, এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত সকলকিছু, অন্য যেকোনো বস্তুর থেকে মহত্তর, যে বস্তু বা ব্যক্তিকে সবচেয়ে মূল্যবান জ্ঞান করো বলে একসময় তোমার বিশ্বাস ছিল, তাদের সমেত। অর্থাৎ, কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাক্য লাভ করতে না পারে, বা সে যদি তাঁর ইচ্ছা উপলব্ধি না করে, তাহলে সে মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারে না। তোমাদের ভবিষ্যৎ অভিজ্ঞতায়, তোমরা উপলব্ধি করবে আজ কেন আমি এই অনুচ্ছেদটি তোমাদের দেখাতে চেয়েছিলাম—এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর যাকিছু করেন তা সকলই সত্য ও জীবন। সত্য হল এমন এক বিষয়, মানুষের জীবনে যার ঘাটতি থাকলে চলে না, এবং তা হল এমনকিছু, যা না হলে তাদের কখনোই চলবে না; তুমি এমনটাও বলতে পারো যে, সত্যই হল মহত্তম বিষয়। যদিও তুমি সেটিকে চাক্ষুষ বা স্পর্শ করতে পারো না, তবু তোমার কাছে এর গুরুত্ব উপেক্ষণীয় নয়; সত্যই হল একমাত্র বস্তু যা তোমার অন্তরে স্থিরতা আনতে পারে।

সত্য সম্পর্কে তোমাদের উপলব্ধি কি তোমাদের নিজেদের অবস্থার সঙ্গে সমন্বিত? বাস্তব জীবনে, তোমাকে প্রথমে চিন্তা করতে হবে যে, কোন সত্যগুলি যেসকল মানুষ, ঘটনাবলী, ও বস্তুসমূহের তুমি সম্মুখীন হয়েছো, সেসকলের সঙ্গে সম্পর্কিত; এই সত্যগুলির মধ্যেই তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে খুঁজে পেতে পারো, এবং তুমি যা-র সম্মুখীন হয়েছো তা-র সাথে তাঁর ইচ্ছাকে সংযুক্ত করতে পারো। তোমারা যে বিষয়সকলের সম্মুখীন হয়েছো, তা সত্যের কোন দিকগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত, তা যদি তোমার জানা না থাকে, তার বদলে যদি তুমি সরাসরি ইশ্বরের ইচ্ছার সন্ধান করো, তাহলে তা হবে এক অন্ধ অভিগমন, যা ফললাভ করতে পারে না। তুমি যদি সত্যের সন্ধান ও ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে চাও, প্রথমে তোমার দেখা দরকার তোমার সাথে কী জাতীয় ঘটনা ঘটেছে, সত্যের কোন দিকগুলির সাথে তা সম্পর্কিত, এবং ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে তোমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট সত্যটিকে খুঁজে দেখো। এরপর তোমাকে ওই সত্যের মধ্যে তোমার জন্য যথাযথ অনুশীলনের পথটি খুঁজতে হবে; এইভাবে, ঈশ্বরের ইচ্ছার বিষয়ে তুমি এক পরোক্ষ উপলব্ধি লাভ করতে পারো। সত্যের অনুসন্ধান ও অনুশীলন যান্ত্রিকভাবে কোনো মতবাদের প্রয়োগ বা কোনো সূত্রের অনুসরণ করা নয়। সত্য কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নয়, কোনো সূত্রও নয়। সত্য নিষ্প্রাণ বস্তু নয়—তা স্বয়ং প্রাণস্বরূপ, তা হল এক জীবন্ত বস্তু, এবং সত্য হল প্রতিটি সৃজিত সত্তার জীবনে অবশ্যপালনীয় এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনে অবশ্যপ্রাপণীয় বিধি। তা হল এমনকিছু যা তুমি অবশ্যই, যত বেশি করে সম্ভব, তোমার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করবে। তোমার অভিজ্ঞতার যে পর্যায়েই তুমি উপনীত হয়ে থাকো না কেন, ঈশ্বরের বাক্য বা সত্যের থেকে তুমি অবিচ্ছেদ্য, ঈশ্বরের স্বভাব বিষয়ে তুমি যা উপলব্ধি করো, এবং ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা, সেই বিষয়ে যেটুকু তুমি জানো, তা-র সবই ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে ব্যক্ত হয়; সত্যের সঙ্গে এগুলি অচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত। ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, এই সকলকিছুই স্বয়ংরূপে সত্য; সত্য হল ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা-র এক অকৃত্রিম উদ্ভাস। তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা-ই মূর্ত করে তোলে সত্য, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সত্য তা-র এক স্পষ্ট বিবৃতি দেয়; ঈশ্বর কী পছন্দ করেন, কী তিনি পছন্দ করেন না, তোমার কোন কাজগুলি তাঁর কাঙ্ক্ষিত এবং কোন কাজগুলির তিনি অনুমোদন করেন না, কোন মানুষকে তিনি ঘৃণা করেন এবং কোন মানুষ তাঁকে তৃপ্তি দেয়—সত্য আরো সহজবোধ্য করে তোমাকে এসব জ্ঞাপন করে। ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত সত্যের মধ্যে মানুষ তাঁর পরিতোষ, ক্রোধ, বিষাদ, ও হর্ষ, সেই সঙ্গে তাঁর সারসত্য নিহিত দেখতে পায়—অর্থাৎ, দেখতে পায় তাঁর স্বভাবের উদ্ঘাটন। ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা, তা জানা, এবং তাঁর বাক্য থেকে তাঁর স্বভাবকে উপলব্ধি করা ছাড়াও, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হল ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই উপলব্ধিতে উপনীত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। ঈশ্বরকে জানতে গিয়ে কোনো মানুষ যদি নিজেকে বাস্তব জীবন থেকে সরিয়ে নেয়, তাহলে সে ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম হবে না। এমনকি ঈশ্বরের বাক্য থেকে কিছু উপলব্ধি অর্জনে সক্ষম এমন মানুষ যদি থাকেও, তাদের উপলব্ধি তত্ত্ব ও বাক্যের মধ্যেই সীমিত, এবং স্বয়ং ঈশ্বর বস্তুতই যেরূপ, তা-র সাথে সেই উপলব্ধির এক তারতম্য সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে আমরা যে বিষয়ে আলাপচারিতা করছি তার সবটাই বাইবেলে লিপিবদ্ধ কাহিনীগুলির পরিসরের মধ্যে সীমায়িত। এই আখ্যানগুলির মাধ্যমে, এবং সেখানে যা ঘটেছিল তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে, তাঁর স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সেই বিষয়ে তিনি যা প্রকাশিত করেছেন, তা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, এইভাবে তারা ঈশ্বরের প্রতিটি দিক সম্বন্ধে আরো বিশদভাবে, আরো গভীরভাবে, আরো ব্যাপকভাবে, এবং আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পারে। তাহলে কি একমাত্র এই আখ্যানগুলির মাধ্যমেই ঈশ্বরের প্রতিটি দিকের বিষয়ে জানা সম্ভব? না, এটাই একমাত্র পন্থা নয়! কারণ রাজ্যের যুগে ঈশ্বর যা বলেন ও যে কার্য তিনি সম্পন্ন করেন, তা মানুষকে তাঁর স্বভাবের বিষয়ে জানতে আরো উত্তমরূপে, ও আরো সম্পূর্ণরূপে, জানতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, কিছু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বা বাইবেলে লিপিবদ্ধ মানুষের জানাশোনা আখ্যানগুলির মাধ্যমে ঈশ্বরের স্বভাবকে জানা, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা উপলব্ধি করা কিছুটা বেশি সহজসাধ্য। আমি যদি বিচার ও শাস্তি সংক্রান্ত বাক্যগুলি এবং সাম্প্রতিককালে ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্ত সত্যগুলি এইভাবে অক্ষরে অক্ষরে ধরে তাঁর বিষয়ে তোমায় অবগত করানোর চেষ্টা করি, তাহলে তোমার তা খুবই নীরস ও ক্লান্তিকর বোধ হবে, এবং কিছু মানুষের এমনও মনে হতে পারে যে, ঈশ্বরের বাক্যগুলি বুঝি কিছু ছকে বাঁধা সূত্র। কিন্তু আমি যদি বাইবেলের এই আখ্যানগুলিকে দৃষ্টান্ত হিসাবে নিয়ে মানুষকে ঈশ্বরের স্বভাবের বিষয়ে জানতে সহায়তা করি, তাহলে তাদের কাছে তা ক্লান্তিকর মনে হবে না। বলা যায় যে, এই দৃষ্টান্তগুলি ব্যাখ্যাকালীন, সেসময় ঈশ্বরের অন্তরে যা ছিল—তাঁর মেজাজ বা ভাবানুভূতি, অথবা তাঁর চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা—তা মানবীয় ভাষায়মানুষের প্রতি উক্ত হয়েছে, এবং এই সকলকিছুর লক্ষ্য হল তাদেরকে উপলব্ধি করানো, অনুভব করানো, যে, ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা, তা নিছকই সূত্রবদ্ধ নয়। তা কোনো লোকগাথা নয়, বা এমনকিছু নয় যা মানুষ চাক্ষুষ বা স্পর্শ করতে পারে না। এটি এমনকিছু যার বাস্তবিক অস্তিত্ব রয়েছে, যা মানুষ অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারে। এটিই হল চূড়ান্ত লক্ষ্য। বলা যেতে পারে, এই যুগে বেঁচে থাকা মানুষরা আশীর্বাদধন্য। বাইবেলের উপাখ্যানগুলিকে কাজে লাগিয়ে তারা ঈশ্বরের পূর্ববর্তী কার্য বিষয়ক বিস্তৃততর উপলব্ধি লাভ করতে পারে; তাঁর সম্পাদিত কার্যের মাধ্যমে তারা তাঁর স্বভাবকে প্রত্যক্ষ করতে পারে; তাঁর দ্বারা অভিব্যক্ত এই স্বভাবগুলির মাধ্যমে তারা মানবজাতির নিমিত্ত ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারে, এবং তাঁর পবিত্রতা ও মানুষের প্রতি তাঁর যত্নশীলতার মূর্ত উদ্ভাসনের মর্মগ্রহণ করতে পারে, এবং এই ভাবে, ঈশ্বরের স্বভাবের বিষয়ে তারা আরো অনুপুঙ্খ ও গভীরতর এক জ্ঞানে উপনীত হতে পারে। আমার বিশ্বাস যে তোমাদের সকলেই এখন তা অনুভব করতে পারছো!

অনুগ্রহের যুগে প্রভু যীশু যে কার্য সম্পূর্ণ করেছিলেন তার পরিসরের মধ্যে, তুমি ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা, তা-র আরেকটি দিক প্রত্যক্ষ করতে পারো। এই দিকটি তাঁর দেহরূপের মাধ্যমে অভিব্যক্ত হয়েছিল, এবং তাঁর মানবতার কারণে মানুষ তা চাক্ষুষ ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। মনুষ্যপুত্রের মধ্যে, মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল কীভাবে দেহরূপী ঈশ্বর তাঁর মানবতা যাপন করেছিলেন, এবং তারা দেখেছিল ঈশ্বরের দেবত্বকে দেহের মাধ্যমে ব্যক্ত হতে। এই দুই ধরনের অভিব্যক্তি মানুষকে এক অত্যন্ত বাস্তব ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করতে দিয়েছিল, এবং এগুলি মানুষকে ঈশ্বরের বিষয়ে এক ভিন্নতর ধারণা গঠনের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু, বিশ্বসৃষ্টি ও বিধানের যুগের সমাপ্তির মধ্যবর্তী সময়কালে, অর্থাৎ, অনুগ্রহের যুগের পূর্বে, ঈশ্বরের একমাত্র যে দিকটি মানুষ দেখেছিল, শ্রবণ করেছিল, এবং অনুভব করেছিল তা ছিল ঈশ্বরের দেবত্ব, এক অপার্থিব জগতে ঈশ্বর যাকিছু সম্পাদন ও উচ্চারণ করেছিলেন, তা, এবং তাঁর বাস্তব সত্তার মাধ্যমে যে দর্শনাতীত ও স্পর্শাতীত বিষয়গুলি তিনি ব্যক্ত করেছিলেন, সেগুলি। প্রায়শই, এই বিষয়গুলি মানুষকে অনুভব করিয়েছিল যে ঈশ্বর তাঁর মাহাত্ম্যে এতটাই অত্যুচ্চ যে তারা তাঁর কাছাকাছি যেতে পারে না। সচরাচর ঈশ্বর মানুষের মনে যে ধারণাটি সৃষ্টি করেছিলেন তা হল মানুষের তাঁকে অনুভব করার ক্ষমতার মাঝে তিনি ক্ষণে ক্ষণে উদ্ভাসিত ও নির্বাপিত হন, এবং মানুষ এমনকি এমনও অনুভব করেছিল যে তাঁর প্রতিটি চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা এতই রহস্যময় ও এতই অগম্য যে, সেগুলির নাগাল পাওয়ার কোনো উপায় নেই, সেগুলি উপলব্ধি বা অনুধাবনের চেষ্টামাত্রও আরোই দুষ্কর। মানুষের কাছে, ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সকলকিছুই ছিল অতি দূরবর্তী বিষয়, এত দূরবর্তী যে মানুষ তা প্রত্যক্ষ বা স্পর্শ করতে অসমর্থ ছিল। মনে হতো যেন তিনি আকাশের অতি ঊর্ধ্বে রয়েছেন, মনে হতো যেন তাঁর যেন আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই। তাই ঈশ্বরের হৃদয় ও মন বা তাঁর কোনো চিন্তাকে উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষে অসাধ্য, এমনকি তাদের নাগালের বাইরে ছিল। যদিও বিধানের যুগে ঈশ্বর কিছু বাস্তব কার্য সম্পাদন করেছিলেন, এবং নির্দিষ্ট কিছু বাক্যও তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, এবং তাঁর বিষয়ে মানুষকে কিছু প্রকৃত জ্ঞানের উপলব্ধি ও অনুভব করতে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু স্বভাবও তিনি ব্যক্ত করেছিলেন, কিন্তু তবু, অন্তিমে, ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা, সেই বিষয়ক এই অভিব্যক্তিগুলি এসেছিল এক অপার্থিব জগত থেকে, এবং মানুষ যা উপলব্ধি করেছিল, তারা যা জেনেছিল, তা তবু ছিল তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সেই বিষয়টির ঐশ্বরিক দিক সংক্রান্ত। তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সেই বিষয়ক এই অভিব্যক্তি থেকে মানবজাতি কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা লাভ করতে পারেনি, এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের বোধ তখনো আবদ্ধ ছিল নিম্নোক্ত পরিসরের ভিতর—“এক আধ্যাত্মিক সত্তা যার নিকটে যাওয়া দুষ্কর, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার মধ্যে যিনি যাওয়া-আসা করেন”। যেহেতু ঈশ্বর মানুষের সম্মুখে আবির্ভূত হওয়ার জন্য পার্থিব জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো নির্দিষ্ট বস্তু বা কোনো প্রতিমূর্তি ব্যবহার করেননি, সেহেতু মানবীয় ভাষার সাহায্যে তাঁকে সংজ্ঞায়িত করতে মানুষ অসমর্থ রয়ে গিয়েছিল। মানুষ, স্বীয় হৃদয়ে ও মনে সর্বদা নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করতে চেয়েছিল ঈশ্বরের পরিমাপের জন্য এক মানদণ্ড স্থাপন করতে, তাঁকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে তুলতে, এবং তাঁর উপর আরোপ করতে মনুষ্যসুলভ চরিত্র, যেমন তিনি কতখানি দীর্ঘকায়, তিনি কতটা বৃহৎ, তিনি দেখতে কেমন, তিনি ঠিক কী পছন্দ করেন, এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব কেমন। বস্তুত, মানুষ যে এহেন চিন্তা করছিল, তা ঈশ্বর মনে মনে জানতেন। মানুষের প্রয়োজনগুলির বিষয়ে তাঁর খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল, এবং বলা বাহুল্য, তাঁর কী করণীয়, তা-ও তিনি জানতেন, তাই অনুগ্রহের যুগে তিনি তাঁর কার্য এক ভিন্নতর পন্থায় নিষ্পন্ন করেছিলেন। এই নতুন পদ্ধতিটি ছিল যুগপৎ ঐশ্বরিক ও মনুষ্যগুণসমন্বিত। যে সময়কালে প্রভু যীশু তাঁর কর্ম করেছিলেন, তখন মানুষ দেখতে পেয়েছিল যে, ঈশ্বরের অজস্র মানবিক অভিব্যক্তি রয়েছে। উদাহারণস্বরূপ, তিনি নাচতে পারতেন, তিনি বিবাহযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন, তিনি মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারতেন, তাদের প্রতি বক্তব্য রাখতে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। এছাড়াও প্রভু যীশু এমনও অনেক কর্ম সম্পাদন করেন যার মাধ্যমে তাঁর দেবত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং এই সকল কর্মই ছিল ঈশ্বরের এক অভিব্যক্তিস্বরূপ ও তাঁর স্বভাবের উদ্‌ঘাটন। এই সময়কালে, সাধারণ মানবদেহে ঈশ্বরের দেবত্ব এমনভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল যে, মানুষ তা দেখতে এবং স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছিল, তাদের আর এমন অনুভব হয়নি যে তিনি এক ঝলক দেখা দিয়েই আবার দৃষ্টিপথের বাইরে অপসৃত হচ্ছেন, বা, তারা তাঁর নিকটে পৌঁছাতে পারছে না। বরং, তারা মনুষ্যপুত্রের প্রতিটি সঞ্চালনে, এবং তাঁর বাক্যের ও কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা অথবা তাঁর দেবত্ব উপলব্ধির চেষ্টা করতে পারতেন। মনুষ্যপুত্রের অবতার তাঁর মানবতার মাধ্যমে ঈশ্বরের দেবত্বকে প্রকাশ করেছিলেন, এবং মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের ইচ্ছা জ্ঞাপন করেছিলেন। এবং একই সঙ্গে, ঈশ্বরের দ্বারা স্বীয় ইচ্ছা ও স্বভাবের এই অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে তিনি ধরা-ছোঁয়ার অতীত সেই ঈশ্বরকে মানুষের কাছে প্রকাশিত করেছিলেন যিনি আধ্যাত্মিক জগতে অবস্থান করেন। স্বয়ং ঈশ্বরকে মানুষ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপে, রক্ত-মাংসে নির্মিত রূপে, চাক্ষুষ করেছিল। তাই মনুষ্যপুত্রের অবতার স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচিতি, ঈশ্বরের মর্যাদা, প্রতিমূর্তি, স্বভাব, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, প্রমূখ বিষয়কে মূর্ত ও মানবিকগুণসম্পন্ন করে তুলেছিলেন। যদিও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির বিষয়ে মনুষ্যপুত্রের বাহ্যিক রূপের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু তাঁর সারসত্য এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচিতি ও মর্যাদার প্রতিনিধিত্ব করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম ছিল—কেবল অভিব্যক্তির ধরনের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য ছিল। একথা অনস্বীকার্য যে মনুষ্যপুত্র স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচিতি ও মর্যাদার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, যুগপৎ তাঁর মানবিক রূপে ও তাঁর দেবত্বের মাঝে। অবশ্য এই সময়ে, ঈশ্বর দেহরূপের মাধ্যমে কার্য নির্বাহ করেছিলেন, দেহরূপের পরিপ্রেক্ষিত থেকে বক্তব্য রেখেছিলেন, এবং মনুষ্যপুত্রের পরিচিতি ও মর্যাদা সহযোগে মানবজাতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, এবং তা মানুষকে মানবজাতির মাঝে ঈশ্বরের প্রকৃত বাক্য ও কার্যের মুখোমুখি হওয়ার ও অভিজ্ঞতালাভের সুযোগ দান করেছিল। একই সঙ্গে মানুষকে তা বিনয়ের মাঝে তাঁর দেবত্ব ও মাহাত্ম্যের বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি দান করেছিল, এবং ঈশ্বরের প্রামাণিকতা ও বাস্তবতার বিষয়ে এক প্রাথমিক উপলব্ধি ও সংজ্ঞা লাভের সুযোগ দিয়েছিল। যদিও প্রভুর যীশুর দ্বারা নিষ্পন্ন কার্য, তাঁর কার্যসম্পাদনের পদ্ধতি, এবং যে পরিপ্রেক্ষিত থেকে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন, তা আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বরের প্রকৃত সত্তার থেকে স্বতন্ত্র ছিল, তবু তাঁর সংক্রান্ত সকলকিছুই যে সম্যকভাবে মানুষের অদৃষ্টপূর্ব স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেছিল—তা অনস্বীকার্য! অর্থাৎ, যে রূপেই ঈশ্বর আবির্ভূত হন না কেন, যে পরিপ্রেক্ষিত থেকেই তিনি বক্তব্য রাখুন না কেন, বা যে প্রতিমূর্তিতেই তিনি মানুষের মুখোমুখি হন না কেন, ঈশ্বর স্বয়ং নিজের ছাড়া অন্য কোনোকিছুর প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি নির্দিষ্ট কোনো একজন মানুষের বা ভ্রষ্ট মানবজাতির মধ্যে কারো প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। ঈশ্বর কেবল স্বয়ং ঈশ্বরই, এবং তা-ও অনস্বীকার্য।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ৩

পূর্ববর্তী: মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু (পর্ব ১)

পরবর্তী: হারানো মেষের উপাখ্যান

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত...

প্রথম দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বদান্যতায় মানবজাতির দিন এবং রাতের সূচনা হয় এবং অবিচল থাকে

প্রথম অনুচ্ছেদটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাকঃ: “ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন