সৃষ্ট এবং অসৃষ্ট কোনো জীবই সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের প্রতিস্থাপন করতে পারে না
ঈশ্বরের শক্তি তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির লগ্ন থেকেই প্রতিভাত এবং প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল, কারণ ঈশ্বর সকল বস্তু সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বাক্যের ব্যবহার করেছিলেন। তিনি কী পন্থায় এবং কোন উদ্দেশ্যে সেসকল সৃষ্টি করেছিলেন তা নির্বিশেষে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণেই সকল বস্তু সৃষ্টি হয়েছে এবং অটল ও বিদ্যমান রয়েছে; এ হল সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্ব। পৃথিবীতে মানবজাতির আবির্ভাবের পূর্বে, মানবজাতির জন্য সমস্ত কিছু প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা তাঁর ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, এবং মানবজাতির জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ-সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর অনন্য পন্থাগুলি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যা কিছু করেছিলেন তা সবই ছিল প্রস্তুতিগ্রহণ সেই মানবজাতির উদ্দেশ্যে, যে মানবজাতি অচিরের তাঁর প্রদত্ত প্রাণবায়ু গ্রহণ করতে চলেছিল। অর্থাৎ, মানবজাতির সৃষ্টির পূর্ববর্তী সময়ে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব মানবজাতি ব্যতিরেকে অপর সকল জীবের মধ্যে, আকাশ, আলোক, জলরাশি এবং স্থলভূমির মত মহান বস্তুসকল এবং পশু, পাখি এমনকি সকল প্রকার কীটপতঙ্গ, অণুজীব আর খালি চোখে দৃশ্যমান নয় এমনতর নানাবিধ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেও প্রতিভাত হয়েছিল। প্রতিটির মধ্যে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার দ্বারা, প্রতিটির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল সৃষ্টিকর্তার বাক্যসমূহের কারণে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণেই প্রত্যেকে সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের অধীনে থেকেছিল। যদিও তারা সৃষ্টিকর্তার প্রাণবায়ু গ্রহণ করেনি, তবুও তারা তাদের ভিন্ন ভিন্ন আকার ও আকৃতির মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদেরকে প্রদত্ত জীবনীশক্তি প্রকাশ করেছিল; যদিও তারা সৃষ্টিকর্তার মানবজাতিকে দেওয়া বাচনক্ষমতা লাভ করেনি, তাদের প্রত্যেকে পেয়েছিল নিজেদের জীবন ব্যক্ত করার উপায় যা সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রদান করেছিলেন, এবং যা ছিল মানুষের ভাষা থেকে পৃথক। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব যে শুধুমাত্র আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চল বস্তুপদার্থসমূহে প্রাণশক্তির সঞ্চার ঘটিয়ে সেগুলির চিরস্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করে তা-ই নয়, বরং তিনি প্রতিটি জীবকে পুনরুৎপাদন ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবৃত্তিও দেন, যাতে তারা কখনোই অবলুপ্ত না হয়ে যায়, এবং যাতে তারা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদের প্রতি প্রদত্ত উদ্বর্তনের বিধান ও নীতিসমূহ একাদিক্রমে আগত প্রজন্মগুলিকে দিয়ে যেতে পারে। সৃষ্টিকর্তা যে পন্থায় তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন তা কোনো উদার অথবা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণকে কঠোরভাবে মেনে চলে না, এবং তা নির্দিষ্ট কোনো আকারে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কর্মকাণ্ডের আজ্ঞা করতে এবং সকল বস্তুর জীবন ও মৃত্যুর উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করতে সক্ষম, এবং, উপরন্তু তিনি এমন উপায়ে সকল বস্তুকে চালিত করতে সক্ষম যাতে সেগুলি তাঁর সেবা করে; তিনি পর্বত, নদী ও হ্রদের সকল ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করতে পারেন, এবং তাদের অভ্যন্তরীণ সকল বস্তুর শাসন করেন, এবং, এছাড়াও, সকলের প্রয়োজনীয় সকল বস্তুর সরবরাহ করতে তিনি সক্ষম। এ হল মানবজাতি ছাড়াও সকল বস্তুর মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের প্রকাশ। এহেন প্রকাশ শুধু এক জীবনকালের জন্যই নয়; এই প্রকাশ নিরবিচ্ছিন্ন, অবিরত, এবং কোনো মানুষ অথবা বস্তু এর পরিবর্তন কিংবা ক্ষতিসাধন করতে পারে না, কোনো ব্যক্তি বা বস্তু এর সাথে কোনো ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না—কারণ কেউই সৃষ্টিকর্তার পরিচয়কে বদলাতে পারে না, এবং সেহেতু, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব সৃষ্ট কোনো সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না; তা অ-সৃষ্ট কোনো সত্তার অর্জনেরও অতীত। উদাহরণ হিসাবে, ঈশ্বরের বার্তাবহ এবং দূতদের ধরা যাক। ঈশ্বরের শক্তি তাদের অধিকৃত নয়, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধিকার থাকা তো দূরের কথা, এবং ঈশ্বরের শক্তি ও কর্তৃত্ব তাদের অধিকৃত না থাকার কারণ হল সৃষ্টিকর্তার সারসত্য তাদের অধিকৃত নয়। ঈশ্বরের বার্তাবহ এবং দূতদের মত অ-সৃষ্ট সত্তারা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে কিছু কিছু কাজ করতে পারলেও, তারা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাদের কাছে হয়ত এমন কিছু শক্তি থাকে যা মানুষের অধিকৃত নয়, কিন্তু ঈশ্বরের কর্তৃত্ব তাদেরও অনধিকৃত, সকল বস্তুর সৃষ্টি করতে, সকল বস্তুকে আজ্ঞাবদ্ধ করতে, এবং সকল বস্তুর উপর সার্বভোমত্ব ধারণের যে কর্তৃত্ব ঈশ্বরের, তার অধিকারী তারা নয়। ঈশ্বরের অনন্যতা যেমন কোনো অ-সৃষ্ট সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না, অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং শক্তিও কোনো অ-সৃষ্ট সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না। বাইবেলে, তুমি কি ঈশ্বরের এমন কোনো বার্তাবহের বিষয়ে পড়েছ, যে সকল বস্তুর সৃষ্টি করেছে? ঈশ্বর কেন সকল বস্তু সৃষ্টি করতে তাঁর বার্তাবহ এবং দূতদের প্রেরণ করেননি? এর কারণ হল যে, তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধিকারী নয়, এবং সেহেতু তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করার ক্ষমতারও অধিকারী নয়। সকল জীবের মতই, তারা সকলেই সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের তথা কর্তৃত্বের অধীনস্থ রয়েছে, এবং অনুরূপভাবেই, সৃষ্টিকর্তাই হলেন তাদেরও ঈশ্বর এবং তাদেরও উপর সার্বভৌম। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে—অভিজাতই হোক অথবা অনভিজাত, বৃহৎ শক্তিধরই হোক অথবা নগণ্য ক্ষমতাসম্পন্ন—কেউই সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে অতিক্রম করে যেতে পারে না, এবং সেহেতু, তাদের মধ্যে কেউই সৃষ্টিকর্তার পরিচয় বদলাতে পারে না। তাদের কখনোই ঈশ্বর হিসাবে অভিহিত করা হবে না, এবং তারা কখনোই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারবে না। এগুলি হল অপরিবর্তনীয় সত্য এবং বাস্তবিক তথ্য!
উপরের আলোচনার মধ্য দিয়ে, আমরা কি নিচের কথাগুলি নিশ্চিত করে বলতে পারি: সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং অধীশ্বর, যিনি অনন্য কর্তৃত্ব এবং অনন্য শক্তির অধিকারী, শুধুমাত্র তাঁকেই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর বলা যায়? এই মুহূর্তে, তোমাদের সকলে অনুভব করতে পার যে এহেন প্রশ্নটি অত্যন্ত গভীর। তোমরা, এই মুহূর্তে, তা উপলব্ধিতে অক্ষম, এবং অন্তরস্থ সারসত্য হৃদয়াঙ্গমে অপারগ, এবং সেহেতু, আপাতত তোমরা অনুভব করছ যে এর উত্তর দেওয়াটা কঠিন। সেক্ষেত্রে, আমি আমার সহকারিতা অব্যাহত রাখব। এরপর, আমি কেবলমাত্র ঈশ্বরের অধিকৃত কর্তৃত্বের ও শক্তির বহুবিধ দিকের প্রকৃত কাজগুলি চাক্ষুষ করার অনুমতি দেবো, এবং এইভাবে আমি তোমাদের ঈশ্বরের অনন্যতা এবং ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্বের অর্থ কী তা উপলব্ধি করার, কদর করার, এবং জানার অনুমতি দেবো।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১