মানবজাতির জন্য ঈশ্বর যে দৈনন্দিন খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুত করেন (পর্ব ১)
এইমাত্র, আমরা পরিবেশের একটি অংশ নিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে আলোচনা করেছি, বিশেষ করে, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির বিষয়ে, যা ঈশ্বর এই পৃথিবী সৃষ্টির সময় প্রস্তুত করেছিলেন। আমরা আলোচনা করেছি পাঁচটি বস্তুর বিষয়ে, পরিবেশের পাঁচটি উপাদান। আমাদের পরিবর্তী বিষয়টি মানুষের কায়িক জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত, এবং তা সেই জীবনের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, ও জীবনের প্রয়োজনীয় শর্তগুলির মধ্যে পূর্বে আলোচিত পাঁচটি বস্তুর চেয়ে অধিকতর পরিপূর্ণ। অর্থাৎ, তা হলো সেই খাদ্য যা মানুষ ভোজন করে। ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে জীবনের জন্য উপযুক্ত একটি পরিবেশে স্থাপন করলেন; তারপর, মানুষের প্রয়োজন হয়ে পড়ল খাদ্য ও জলের। মানুষের এই প্রয়োজন ছিল, তাই ঈশ্বর তার জন্য অনুরূপ প্রস্তুতি করলেন। সুতরাং, ঈশ্বরের কার্যের প্রতিটি পদক্ষেপ ও তাঁর প্রতিটি কাজ শুধু কিছু শূন্যগর্ভ শব্দ নয় যা উচ্চারণ করা হচ্ছে, বরং তা প্রকৃত ও ব্যবহারিক কর্ম যা সম্পাদন করা হচ্ছে। খাদ্য কি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়? খাদ্য কি বায়ুর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তারা উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষা এবং মানব জীবনের অব্যাহত যাত্রাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য উভয়েই হচ্ছে আবশ্যক শর্ত ও উপাদান। কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ—বায়ু, না কি জল? তাপমাত্রা, নাকি খাদ্য? এগুলি সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ এগুলির মধ্যে থেকে কোনো একটিকে বেছে নিতে পারে না, কারণ তারা এগুলির মধ্যে যেকোনো একটি ছাড়াও থাকতে পারে না। এটি একটি প্রকৃত ও বাস্তবিক সমস্যা, বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে থেকে তোমার কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার মতো বিষয় এটি নয়। তুমি জানো না, কিন্তু ঈশ্বর জানেন। তুমি যখন খাদ্য দেখো, তুমি ভাবো, “আমি খাদ্য ছাড়া থাকতে পারব না!” কিন্তু তোমাকে যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার অব্যবহিত পরেই কি তুমি জানতে যে তোমার খাদ্যের প্রয়োজন? তুমি জানতে না, কিন্তু ঈশ্বর জানতেন। ক্ষুধার্ত বোধ করার পর এবং তোমার গ্রহণের জন্য গাছে ফল ও মাটিতে শস্যকণা দেখার পরেই তুমি অনুভব করেছিলে যে তোমার খাদ্যের প্রয়োজন। শুধুমাত্র যখন তুমি তৃষ্ণার্ত হলে আর ঝরনার জল দেখতে পেলে, শুধুমাত্র যখন তুমি পান করলে, তারপরেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলে যে তোমার জল প্রয়োজন। ঈশ্বর আগে থেকেই মানুষের জন্য জল তৈরী করে রেখেছিলেন। খাদ্য, তা কেউ তিনবেলাই ভোজন করুন কিংবা দুইবেলা, বা তারও বেশি, সংক্ষেপে বলা যায়, তা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য অপরিহার্য। তা মানব শরীরের স্বাভাবিক, অবিরাম বেঁচে থাকাকে অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগুলির একটি। তাহলে, অধিকাংশ খাদ্যই কোথা থেকে আসে? প্রথমত, খাদ্য আসে মাটি থেকে। ঈশ্বর মানুষের জন্য আগে থেকেই মাটি প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, আর শুধু বৃক্ষ বা তৃণই নয়, নানান রকমের উদ্ভিজ্জের বেঁচে থাকার পক্ষেই তা উপযুক্ত। ঈশ্বর মানুষের জন্য সবরকমের শস্যের ও অন্যান্য নানান খাদ্যের বীজ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, এবং তিনি মানবজাতিকে বীজ বপনের উপযুক্ত মাটি ও জমি দিয়েছিলেন, এবং এই সমস্তকিছু থেকেই মানবজাতি খাদ্য লাভ করে। নানান প্রকারের খাদ্য কোনগুলি? তোমরা হয়ত তা ইতিমধ্যেই জানো। প্রথমেই, নানান রকমের দানাশস্য। নানান প্রকারের দানাশস্য কোনগুলি? গম, বিভিন্নরকম জোয়ার ও বাজরা, এবং অন্যান্য ভুসি জাতীয় দানাশস্য। খাদ্যশস্যও দক্ষিণ থেকে উত্তর জুড়ে নানান রকমের হয়: বার্লি, গম, ওট, বাজরা এবং আরও অনেক। এই বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন অঞ্চলে চাষের জন্য উপযুক্ত। ধানও আছে নানান প্রকারের। দক্ষিণে রয়েছে নিজস্ব প্রকার, সেগুলির শস্যদানাগুলি লম্বা আর সেগুলি দক্ষিণের মানুষের জন্য উপযুক্ত কারণ সেখানকার জলবায়ু উষ্ণতর, অর্থাৎ স্থানীয় মানুষকে খেতে হবে ইন্ডিকা চালের মত জাতের ভাত যা খুব বেশি আঠালো নয়। তাদের চাল খুব বেশি আঠালো হলে চলবে না, অন্যথায় তাদের ক্ষুধামান্দ্য হবে আর তারা তা হজম করতে পারবে না। উত্তরাঞ্চলের মানুষ তুলনায় আঠালো চালের ভাত খায়, যেহেতু উত্তর সর্বদাই শীতল, তাই সেখানকার মানুষকে বেশি আঠালো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এরপর, রয়েছে নানান প্রকারের বীনও, যা মাটির উপরে বেড়ে ওঠে, আর রয়েছে মূলজাতীয় সব্জি, যা মাটির নিচে বৃদ্ধি পায়, যেমন আলু, মিষ্টি আলু, কচু সহ আরো অনেক। আলুর ফলন হয় উত্তরে, যেখানে সেগুলির গুণমান অত্যন্ত উচ্চ। মানুষের যখন খাওয়ার মত কোনো শস্যদানা থাকে না, তখন প্রধান খাদ্য হিসাবে আলু দিনে তিনবেলা মানুষকে খাবারের যোগান দিতে পারে। সঞ্চিত খাদ্য ভান্ডার হিসাবেও আলু ব্যবহৃত হতে পারে। মিষ্টি আলুর গুণমান যদিও সাধারণ আলুর চেয়ে কিছুটা খারাপ, কিন্তু তাহলেও এগুলিকে দৈনিক তিনবেলার আহারের প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। যখন খাদ্যশস্যের অভাব হয়, মানুষ মিষ্টি আলু দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। কচু, যা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রায়শই ভক্ষণ করে, সেটিও একইভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, এবং প্রধান খাদ্য হিসাবেও এটিকে পরিবেশন করা যায়। এরকমই এত বৈচিত্র্যময় ফসলাদি, যা মানুষের দৈনিক খাদ্য ও পানীয়র জন্য প্রয়োজনীয়। পাঁউরুটি, বাও বান, নুডল, ভাত, চালের নুডল ও অন্যান্য নানান জিনিস বানাতে মানুষ ব্যবহার করে নানাবিধ শস্যদানা। ঈশ্বর মানুষকে প্রচুর পরিমাণে এই বিবিধ শস্যদানা প্রদান করেছেন। এত প্রকারভেদ কেন রয়েছে তা ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের বিষয়: এগুলি উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমের ভিন্ন ভিন্ন মাটি ও জলবায়ুতে বেড়ে ওঠার পক্ষে উপযুক্ত; যেখানে তাদের বিভিন্ন উপাদান ও উপকরণ মানবদেহের বিভিন্ন উপাদান ও উপকরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। শুধুমাত্র এই শস্যদানাগুলি ভক্ষণ করেই মানুষ তাদের শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপকরণ ও উপাদান বজায় রাখতে পারে। উত্তরাঞ্চলীয় খাদ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় খাদ্য আলাদা, তবে সেগুলির মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি। উভয় প্রকার খাদ্যই মানব শরীরের নিয়মিত প্রয়োজন মেটাতে পারে ও তার স্বাভাবিক অস্তিত্বরক্ষার সহায়ক হতে পারে। তাই, প্রতিটি অঞ্চলেই প্রচুর প্রজাতি উৎপন্ন হয় কারণ মানুষের শরীরের সেগুলিই প্রয়োজন যা এই ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য সরবরাহ করে—তাদের প্রয়োজন মাটিতে জন্মানো এই বিভিন্ন খাদ্যের সরবরাহ যাতে দেহের স্বাভাবিক অস্তিত্ব অব্যাহত থাকে, যাতে তারা একটা স্বাভাবিক মানব জীবন যাপন করতে পারে। সংক্ষেপে, ঈশ্বর মানুষের প্রতি বরাবরই অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ঈশ্বরের মানুষকে প্রদত্ত বিভিন্ন প্রকার খাদ্য বৈচিত্র্যহীন নয়—বরং, যথেষ্টই বৈচিত্র্যময়। মানুষ যদি খাদ্যশস্য ভক্ষণ করতে চায়, তারা তা ভক্ষণ করতে পারে। কেউ কেউ ভাতের চেয়ে গম বেশি পছন্দ করে, আর গম পছন্দ না করলে, তারা ভাত খেতে পারে। লম্বা দানা, ছোট দানা সহ সব রকমের চাল রয়েছে—এবং সেগুলির প্রতিটিই মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। সুতরাং, মানুষ যদি এই দানাশস্যগুলি ভক্ষণ করে—তারা নিজের খাদ্যের ব্যাপারে অত্যধিক খুঁতখুঁতে না হলে—তাদের পুষ্টির অভাব হবে না এবং তারা আমৃত্যু নিশ্চিতরূপে সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে। ঈশ্বর যখন মানবজাতিকে খাদ্য প্রদান করেছিলেন তখন তাঁর মনে এই ধারণাটিই ছিল। মানবদেহ এই বস্তুগুলি ছাড়া থাকতে পারে না—এটিই কি বাস্তব নয়? এই বাস্তব সমস্যাগুলি মানুষ নিজেরা সমাধান করতে পারবে না, কিন্তু ঈশ্বর এগুলির জন্য প্রস্তুত ছিলেন: তিনি আগে থেকেই এগুলির বিষয়ে ভেবে রেখেছিলেন এবং মানবজাতির জন্য প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন।
ঈশ্বর মানবজাতিকে শুধু এইগুলিই দেননি—তিনি মানবজাতিকে সব্জিও দিয়েছেন! তুমি যদি আর কিছু না খেয়ে শুধু ভাতই খাও, তাহলে তা থেকে তুমি যথেষ্ট পুষ্টি উপকরণ নাও পেতে পারো। অন্যদিকে, তুমি যদি কয়েকটি সব্জি ভেজে নাও কিংবা মূল খাবারের সঙ্গে কিছুটা স্যালাড মিশিয়ে নাও, তাহলে সব্জিতে থাকা ভিটামিন এবং সব্জিগুলির নানাবিধ খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান তোমার শরীরের প্রয়োজনগুলি স্বাভাবিকভাবে মেটাতে সক্ষম হবে। তাছাড়া মানুষ তাদের প্রধান খাবারের মাঝে একটু-আধটু ফলও খেতে পারে। কখনও কখনও, মানুষের আরও বেশি তরলের কিংবা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বা ভিন্ন স্বাদের প্রয়োজন হয়, আর সেই প্রয়োজনগুলি মেটানোর জন্য আছে ফল ও সব্জি। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমের মাটি আর জলবায়ু যেহেতু ভিন্ন, তাই প্রতিটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের সব্জি ও ফল উৎপন্ন হয়। দক্ষিণের জলবায়ু অত্যধিক উষ্ণ হওয়ার ফলে সেখানকার অধিকাংশ ফল ও সব্জিই শরীর শীতল করতে পারে, যা ভক্ষণ করলে মানব শরীরে শীতলতা ও উষ্ণতার ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এর বিপরীতে, উত্তরাঞ্চলে সব্জি ও ফলের প্রকার তুলনায় কম, তবুও স্থানীয় মানুষের উপভোগ করার পক্ষে তা যথেষ্ট। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সমাজে উন্নয়ন এবং তথাকথিত সামাজিক অগ্রগতির কারণে, ও সেইসাথে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমকে সংযোগকারী যোগাযোগ ও পরিবহনের উন্নতির কারণে, উত্তরাঞ্চলের মানুষও দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু ফল ও সব্জি ভক্ষণ করতে কিংবা দক্ষিণের আঞ্চলিক পণ্যসমাগ্রী উপভোগ করতে সক্ষম হয়, এবং তারা বছরের সবকটি মরশুমেই তা করতে পারে। যদিও তা মানুষের ক্ষুধা আর পার্থিব কামনা-বাসনাগুলি পূরণ করতে সক্ষম, তবে তাদের শরীর অনিচ্ছাকৃতভাবেই নানাবিধ ক্ষতির শিকার হয়। এর কারণ হল, ঈশ্বরের মানবজাতির জন্য প্রস্তুত করা খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে এমন কিছু কিছু খাদ্য এবং সব্জি ও ফলমূল রয়েছে যা দক্ষিণের মানুষের জন্য, আবার এমন খাদ্য, সব্জি আর ফলমূলও রয়েছে যা উত্তরের মানুষের জন্য। অর্থাৎ, তুমি যদি দক্ষিণে জন্মগ্রহণ করতে, তাহলে দক্ষিণের খাদ্যগুলি গ্রহণ করাই তোমার জন্য উপযুক্ত হতো। ঈশ্বর বিশেষভাবে এই খাদ্য, ফলমূল ও সব্জি তৈরী করেছেন কারণ দক্ষিণের জলবায়ু একটি নির্দিষ্ট প্রকারের। উত্তরের খাদ্য উত্তরাঞ্চলের মানুষের শরীরের জন্যই প্রয়োজনীয়। অথচ মানুষের অতিভোজনের প্রবৃত্তি থাকার ফলে, তারা অজান্তেই নিজেদের নতুন নতুন সামাজিক প্রবণতার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে, এবং তারা অচেতনভাবে এই বিধানগুলি লঙ্ঘন করছে। যদিও মানুষ মনে করে যে তাদের জীবন অতীতের জীবনের চেয়ে বেশি ভালো, কিন্তু এই ধরনের সামাজিক অগ্রগতি গোপনেই ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষের শারীরিক ক্ষতি সাধন করে। ঈশ্বর তা দেখতে চান না, এবং মানুষকে এইসমস্ত খাদ্য, ফলমূল ও সব্জি সরবরাহ করার সময় তিনি এরকম চাননি। ঈশ্বরের বিধান লঙ্ঘন করে মানুষ নিজেই এই বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এমনকি এই সমস্তকিছু ছাড়াও, ঈশ্বর মানবজাতিকে যে আনুকূল্য প্রদান করেছেন তা সত্যিই প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ, এবং প্রতিটি স্থানের নিজস্ব স্থানীয় উৎপাদিত সামগ্রী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কিছু স্থান লাল রঙের খেজুর জাতীয় ফলে সমৃদ্ধ (যা জুজুব নামেও পরিচিত), অন্যান্য স্থান সমৃদ্ধ আখরোটে, আবার আরও কিছু স্থান চীনাবাদাম কিংবা অন্যান্য বিভিন্ন বাদামে সমৃদ্ধ। এই পার্থিব বস্তুগুলির সবই মানব শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তবে ঈশ্বর মানবজাতিকে সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে, বছরের ঋতু ও সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি সরবরাহ করেন। মানবজাতি শারীরিক উপভোগের প্রতি লালায়িত এবং তারা উদরসর্বস্ব, তাই মানবজাতিকে সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বর মানুষের বৃদ্ধির যে প্রাকৃতিক বিধানগুলির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেগুলি লঙ্ঘন করা তাদের পক্ষে সহজ। উদাহরণস্বরূপ চেরি ফলকে নেওয়া যাক। জুন মাসের কাছাকাছি সময়ে এগুলি পাকে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, আগস্ট মাসে চেরি আর থাকে না। এগুলি মাত্র দুই মাসের জন্য তাজা রাখা যেতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত কৌশল ব্যবহার করে, মানুষ এখন এই সময়কাল বারোমাসে বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে, এমনকি পরের বছরের চেরির মরশুম পর্যন্তও। এর অর্থ হল সারা বছর জুড়েই চেরি পাওয়া যায়। এই ঘটনাটি কি স্বাভাবিক? (না।) তাহলে চেরি খাওয়ার সেরা মরশুম কোনটি? জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে। এই সময়ের পর, তা তুমি যত তাজাই রাখো না কেন, এগুলির স্বাদ আর একই রকম থাকে না, মানব শরীরের যা প্রয়োজন সেসব এগুলি সরবরাহও করে না। সময়কাল একবার গত হলেই, তুমি যে রাসায়নিকই ব্যবহার করো না কেন, এগুলির মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সময় যা ছিল সেসব দিয়ে তুমি আর একে পূর্ণ করতে পারবে না। এছাড়াও, রাসায়নিক পদার্থ মানুষের যে ক্ষতি সাধন করে তা কেউই সমাধান বা পরিবর্তন করতে পারবে না, সে তারা যত চেষ্টাই করুক না কেন। তাহলে, বর্তমান বাজার অর্থনীতি মানুষের জন্য কী নিয়ে আসে? মানুষের জীবন বেশি ভালো বলে মনে হয়, বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পরিবহন অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে, আর মানুষ চারটি মরশুমের যেকোনো সময়েই সবরকম ফল ভক্ষণ করতে পারে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ এখন কলা, ও সেইসাথে দক্ষিণের যেকোনো আঞ্চলিক উপাদেয় খাদ্য, ফল কিংবা অন্যান্য খাবার নিয়মিত ভক্ষণ করতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর মানবজাতিকে এই জীবন প্রদান করতে চান না। এইরকম বাজার অর্থনীতি হয়তো মানুষের জীবনে কিছুটা সুবিধা নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু তা অনিষ্ট সাধনও করতে পারে। বাজারে প্রাচুর্যের ফলে, অনেকেই নিজেদের মুখে কী তুলে দিচ্ছে তা চিন্তা না করেই খাদ্য গ্রহণ করে। এই স্বভাব হল প্রকৃতির বিধানগুলির লঙ্ঘন, আর এটি মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকারক। তাই, বাজার অর্থনীতি মানুষের জীবনে প্রকৃত আনন্দ নিয়ে আসতে পারে না। তোমরা নিজেরাই দেখে নাও। সারা বছর জুড়েই কি আঙুর বিক্রি হয় না? সত্যি বলতে কি, আঙুর তোলার পর খুব স্বল্প সময়ের জন্যই তাজা থাকে। তুমি যদি পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত এগুলি রেখে দাও, তারপরেও সেগুলিকে কি আর আঙুর বলা যায়? নাকি সেগুলিকে “আবর্জনা” নাম দেওয়াই শ্রেয় হবে? এগুলির মধ্যে শুধু যে তাজা আঙুরের উপাদানের অভাব তা-ই নয়—এগুলিতে থাকে অনেক বেশি পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ। এক বছর পরে এগুলি আর তাজা থাকে না, এবং এগুলির মধ্যে যে পুষ্টি উপকরণ ছিল তা-ও অনেক আগেই চলে গেছে। মানুষ যখন আঙুর খায়, তাদের মনে হয়: “আমাদের কি সৌভাগ্য! তিরিশ বছর আগে কি আমরা এই মরশুমে আঙুর খেতে পারতাম? তুমি চাইলেও তা পারতে না! জীবন এখন কতই না ভালো!” এটাই কি প্রকৃত সুখ? তুমি যদি আগ্রহী হও, তাহলে রাসায়নিক উপায়ে সংরক্ষিত আঙুর সম্পর্কে তুমি নিজেই গবেষণা করে দেখে নিতে পারো সেগুলি কী দিয়ে তৈরী আর মানুষের পক্ষে এই উপাদানগুলি উপকারী কি না। বিধানের যুগে, যখন ইস্রায়েলীরা মিশর ত্যাগ করেছিল এবং ভ্রমণ করছিল, ঈশ্বর তাদের তিতির আর মান্না জাতীয় বাজরা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর কি মানুষকে এই খাবারগুলি সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছিলেন? তাদের অনেকেই ছিল অদূরদর্শী ও তাদের আশঙ্কা ছিল যে পরের দিন হয়ত আর খাবার থাকবে না, তাই তারা সেসবের কিছু অংশ পরে ব্যবহারের জন্য সরিয়ে রেখেছিল। তারপর কী হলো? পরের দিন, তা পচে গেল। ঈশ্বর তোমাকে ঐ খাদ্যের কিছুটা সরিয়ে রাখতে দেন না, কারণ তুমি যাতে অনাহারে না থাকো ঈশ্বর সেই প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন। কিন্তু মানবজাতির সেই প্রত্যয় ছিল না, তাদের ঈশ্বরে প্রকৃত বিশ্বাসও ছিল না। তারা সর্বদাই নিজেদের কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করে চলে, এবং মানবজাতির প্রতি প্রস্তুতির নেপথ্যে ঈশ্বরের যত্ন ও ভাবনাগুলি দেখতে পায় না। তারা এই বিষয়টি অনুভব করতে পারে না, আর তাই তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের সম্পূর্ণ আস্থাও রাখতে পারে না, তারা সর্বদাই ভাবছে: “ঈশ্বরের কর্মসমূহ বিশ্বাসযোগ্য নয়! কে জানে আমাদের যা প্রয়োজন ঈশ্বর তা দেবেন কি না বা কখন দেবেন! আমি যদি ক্ষুধার্ত হই এবং ঈশ্বর যদি না খাদ্য সরবরাহ করেন, তাহলে আমি কি অনাহারে থাকব না? আমার কি পুষ্টির অভাব ঘটবে না?” দেখো, মানুষের প্রত্যয় কত দুর্বল!
শস্যদানা, ফলফলাদি ও সব্জি এবং সব ধরণের বাদাম—এইগুলি হল নিরামিষ খাদ্য। এগুলির মধ্যে সেই সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মানবদেহের প্রয়োজনগুলি মেটানোর জন্য যথেষ্ট, যদিও এগুলি নিরামিষ খাদ্য। তবে, ঈশ্বর বলেননি: “আমি মানবজাতিকে শুধু এই খাদ্যগুলিই প্রদান করব। ওরা শুধুমাত্র এগুলিই ভক্ষণ করুক!” ঈশ্বর এখানেই থেমে থাকেননি, বরং মানবজাতির জন্য প্রস্তুত করেছেন আরও নানাবিধ খাদ্যসম্ভার, যা কিনা আরও বেশি সুস্বাদু। কী সেই খাদ্যসম্ভার? এগুলি হল নানাবিধ মাংস ও মাছ যা তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই দেখতে ও খেতে পারো। তিনি মানুষের জন্য অনেক, অনেক ধরনের মাংস ও মাছ তৈরী করেছেন। মাছ বাস করে জলে, আর সেই জলের মাছের দেহ স্থলে বসবাসকারী পশুদের দেহের চেয়ে ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী, এবং তা মানুষকে ভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের যোগান দিতে পারে। মাছের এমন বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা মানবদেহে শীতলতা এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু সুস্বাদু খাদ্য অত্যধিক পরিমাণে ভক্ষণ করা উচিত নয়। আমি আগেই যেমন বলেছি, ঈশ্বর মানুষকে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ সংস্থান প্রদান করেন, যাতে মানুষ স্বাভাবিকভাবে এবং ঋতু ও সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তাঁর সেই দান যথাযথভাবে উপভোগ করতে পারে। এখন, পক্ষীজাতীয় খাদ্যের মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে? মুরগী, তিতির, ঘুঘু সহ আরো অনেক কিছুই। অনেকেই আবার হাঁস ও রাজহাঁসের মাংসও খায়। যদিও ঈশ্বর এই সমস্ত প্রকার মাংসের সংস্থান করেছেন, তিনি তাঁর মনোনীত লোকেদের কাছে কতকগুলি দাবী জানিয়েছিলেন এবং বিধানের যুগে তিনি তাদের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ কিছু সীমা আরোপ করেছিলেন। বর্তমানে, এই সীমা নিজ নিজ স্বাদ ও ব্যক্তিগত ব্যাখার উপর নির্ভরশীল। এই নানাবিধ মাংস মানবদেহে নানান রকম পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, শরীরে প্রোটিন ও লৌহের শূন্যস্থান পূর্ণ করে, রক্তকে সমৃদ্ধ করে, পেশী ও অস্থিকে মজবুত করে, এবং শারীরিক শক্তি তৈরি করে। মানুষ সেসব যেভাবেই রান্না করুক বা খাক না কেন, এইসব মাংস মানুষকে তাদের খাদ্যের স্বাদ বাড়াতে ও তাদের ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, একইসাথে তাদের উদরও পরিতৃপ্ত হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই খাদ্যগুলি মানবদেহের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে। ঈশ্বর যখন মানবজাতির জন্য খাদ্য প্রস্তুত করেছিলেন তখন তিনি এটি বিবেচনা করেছিলেন। সবজি রয়েছে, মাংস রয়েছে, এ কি প্রাচুর্য নয়? কিন্তু মানুষের উপলব্ধি করা উচিত যে ঈশ্বর যখন মানবজাতির জন্য সকল খাদ্যবস্তু প্রস্তুত করেছিলেন তখন তাঁর অভিপ্রায় কী ছিল। তিনি কি চেয়েছিলেন যে মানুষ এই খাদ্যগুলি অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করুক? মানুষ যখন এই স্থূল বাসনাগুলি চরিতার্থ করার চেষ্টায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে তখন কী হয়? সে কি অত্যধিক পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে না? অত্যধিক পুষ্টি কি বিভিন্নভাবে মানবদেহের ক্ষতি করে না? (হ্যাঁ।) এই কারণেই ঈশ্বর সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে সবকিছু ভাগ করে দেন, এবং মানুষকে বিভিন্ন সময় ও ঋতুর সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বিভিন্ন খাবার উপভোগ করে। যেমন ধরো, অত্যধিক উষ্ণ গ্রীষ্ণ ঋতুর পর, মানুষ তাদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে উত্তাপ এবং একইসাথে প্যাথোজেনিক শুষ্কতা ও আর্দ্রতা একত্রিত করে। শরতের আগমন হলেই অনেক রকমের ফল পাকে, এবং মানুষ যখন এই ফলগুলি ভক্ষণ করে, তাদের শরীরে স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর হয়ে যায়। এই সময়ে, গবাদি পশু ও মেষও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাই ঠিক এই সময়েই পুষ্টির জন্য মানুষের আরও বেশি পরিমাণে মাংস ভক্ষণ করা উচিত। নানান ধরনের মাংস ভক্ষণ করার ফলে, মানুষের শরীর শক্তি ও উষ্ণতা লাভ করে যা তাদের শীতকালের ঠাণ্ডা সহ্য করতে সাহায্য করে, এবং তারা নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে শীতের মরশুম অতিবাহিত করে। মানবজাতিকে কী এবং কখন প্রদান করতে হবে, এবং বিভিন্ন বস্তুকে তিনি কখন বৃদ্ধি পাওয়াবেন, ফল ধরাবেন, ও পরিপক্ক করে তুলবেন, ঈশ্বর পরম যত্ন ও নির্ভুলতার সাথে তা নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় করেন। এটি “মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে খাবারের প্রয়োজন তা ঈশ্বর কীভাবে প্রস্তুত করেন”-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক ধরনের খাদ্যের পাশাপাশি, ঈশ্বর মানবজাতিকে জলের উৎসও প্রদান করেন। ভোজনের পর, মানুষকে জল পানও করতে হয়। শুধুমাত্র ফলও কি যথেষ্ট? মানুষ শুধুমাত্র ফলের উপর নির্ভর করে বাঁচতে পারে না, তাছাড়া কোনো কোনো মরশুমে তো কোন ফলই ধরে না। তাহলে, মানবজাতির জলের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে? হ্রদ, নদী ও ঝর্ণা সহ, মাটির উপরে এবং নীচে নানাবিধ জলের উত্স প্রস্তুত করে ঈশ্বর এই সমস্যার সমাধান করেছেন। জলের এই উত্সগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত না দূষিত হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এগুলির অপব্যবহার বা ক্ষতি না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা পানযোগ্য। অন্য কথায়, মানবজাতির ভৌত দেহের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্যের উৎসের ক্ষেত্রে, ঈশ্বর অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট, অত্যন্ত নির্ভুল এবং অত্যন্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যাতে মানুষের জীবন সমৃদ্ধ ও প্রাচুর্যপূর্ণ হয় এবং তার কোন কিছুর অভাব না থাকে। মানুষ তা অনুভব করতে ও দেখতে পারে।
উপরন্তু, সমস্তকিছুর মধ্যে ঈশ্বর কিছু গাছপালা, জীবজন্তু এবং বিভিন্ন ভেষজ সৃষ্টি করেছেন বিশেষভাবে মানুষের শরীরের আঘাত সারিয়ে তুলতে বা অসুস্থতার চিকিৎসা করার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ পুড়ে যায়, বা দুর্ঘটনাক্রমে ছ্যাঁকা খায় তাহলে তার কী করা উচিত? তুমি কি পোড়া জায়গাটি শুধু জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারো? তুমি কি সেই অংশটি যেকোনো একটি কাপড় দিয়ে মুড়ে দিতে পারো? যদি তুমি তা করো, তাহলে ক্ষতস্থান পুঁজে ভরে যেতে পারে বা সংক্রমিত হতে পারে। অথবা ধরো, যদি কারো জ্বর হয় বা সর্দি লাগে, কাজ করার সময় আঘাত পায়, ভুল জিনিস খেয়ে ফেলে পেটের রোগ হয়, অথবা জীবনশৈলীর কারণে বা আবেগজনিত সমস্যা দ্বারা সৃষ্ট কোন অসুখ হয়, যার মধ্যে রয়েছে রক্তনালী সংক্রান্ত রোগ, মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সংক্রান্ত রোগব্যাধি, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কিছু গাছপালা রয়েছে যেগুলি তাদের সেইসব ব্যাধি নিরাময় করে। এমন গাছপালা রয়েছে যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও স্থবিরতা দূর করে, ব্যথা উপশম করে, রক্তপাত বন্ধ করে, প্রয়োজনে শরীরকে অসাড় করে, ত্বক নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে, জমে থাকা রক্তকে ছড়িয়ে দেয় ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে—সংক্ষেপে, দৈনন্দিন জীবনে এই উদ্ভিদগুলির ব্যবহার রয়েছে। মানুষ তাদের ব্যবহার করতে পারে, এবং এগুলি মানব শরীরের জন্যই ঈশ্বর প্রস্তুত করেছেন যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। ঈশ্বর মানুষকে এগুলির মধ্যে কয়েকটিকে ঘটনাক্রমে আবিষ্কার করার অনুমতি দিয়েছিলেন, সেখানে অন্যগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল এমন মানুষদের দ্বারা যাদের ঈশ্বর সেই কাজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন, অথবা আবিষ্কৃত হয়েছিল তাঁরই সমন্বিত বিশেষ ঘটনার ফল হিসাবে। এই গাছপালা আবিষ্কারের পর, মানবজাতি সেগুলি হস্তান্তর করে দিয়ে যাবে এবং অনেক মানুষ সেগুলি সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই ঈশ্বরের এইসব উদ্ভিদ সৃষ্টি যথেষ্ট মূল্যবান এবং অর্থবহ। সংক্ষেপে, এই সমস্ত জিনিসই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, তিনি যখন মানবজাতির জীবনযাপনের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, তখন তাঁর দ্বারা প্রস্তুত এবং রোপণ করা হয়েছিল। এগুলি অপরিহার্য। ঈশ্বরের চিন্তাধারা কি মানবজাতির চেয়ে বেশি পুঙ্খানুপুঙ্খ? ঈশ্বর যা করেছেন সেই সমস্তকিছু তুমি যখন দেখো, ঈশ্বরের ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে তোমার কি কোন বোধ তৈরী হয়? ঈশ্বর গোপনে কাজ করেন। ঈশ্বর তখন এই সব সৃষ্টি করেছেন যখন মানুষের এই পৃথিবীতে আসা বাকি, যখন মানবজাতির সাথে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। মানবজাতিকে মাথায় রেখেই সবকিছু করা হয়েছিল, মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে এবং তাদের বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করে, যাতে মানবজাতি এই সমৃদ্ধ ও প্রাচুর্যময় বস্তুগত জগতে সুখে বসবাস করতে পারে যা ঈশ্বর তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, খাদ্য বা বস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে, যেখানে কোন কিছুর অভাব নেই। এই ধরনের পরিবেশে, মানবজাতি বংশবৃদ্ধি করতে এবং অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে।
ঈশ্বরের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সকল কার্যের মধ্যে, এমন কিছু কি আছে যা মূল্যহীন কিংবা অর্থহীন? তিনি যা-ই করেন তার সবই মূল্যবান এবং অর্থবহ। একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা শুরু করা যাক। মানুষ প্রায়শই প্রশ্ন করে: কে প্রথম এসেছিল, মুরগী না ডিম? (মুরগী।) মুরগীই প্রথম এসেছিল, এতে কোনো সন্দেহই নেই! মুরগী কেন প্রথমে এসেছিল? কেনই বা ডিমের আগমন আগে ঘটেনি? মুরগী কি ডিম ফুটেই বেরোয় না? একুশ দিন পরে, মুরগীর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, তারপর সেই মুরগী আরও ডিম পাড়ে, সেই ডিমগুলি ফুটে আরও মুরগী বের হয়। তাহলে কে আগে এসেছিল, মুরগী না ডিম? তোমরা চূড়ান্ত নিশ্চয়তার সঙ্গে উত্তর দেবে “মুরগী”। কিন্তু তোমাদের উত্তর এটিই কেন? (বাইবেলে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর পক্ষী ও পশুকুল সৃষ্টি করেছেন।) তাহলে, তোমাদের উত্তর বাইবেল ভিত্তিক। কিন্তু আমি চাই তোমরা তোমাদের নিজস্ব উপলব্ধি সম্পর্কে কথা বল, যাতে আমি বুঝতে পারি ঈশ্বরের কর্ম সম্পাদনের বিষয়ে তোমাদের ব্যবহারিক জ্ঞান আছে কি না। এখন, তোমরা কি নিজেদের উত্তর সম্পর্কে নিশ্চিত, না কি নও? (ঈশ্বর মুরগী সৃষ্টি করেছেন, তারপর তাকে পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা প্রদান করেছেন, অর্থাৎ ডিম পাড়ার ক্ষমতা।) এই ব্যাখাটি কম-বেশি সঠিক। মুরগী আগে এসেছিল, তারপর এসেছিল ডিম। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ কোনো এক বিশেষ সুগভীর রহস্য নয়, কিন্তু পৃথিবীর মানুষ তবুও একে রহস্যই মনে করে এবং দার্শনিক তত্ত্বের দ্বারা এর সমাধানের চেষ্টা করে, কখনও কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না। বিষয়টি ঠিক সেরকম, যখন মানুষ জানে না যে ঈশ্বর তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা এই মৌলিক নীতিটি জানে না, এবং ডিম না মুরগী কার আগমন আগে ঘটা উচিত ছিল সে সম্পর্কে তাদের কোনো স্পষ্ট ধারণাও নেই। তারা জানে না কোনটির প্রথমে আসা উচিত ছিল, তাই তারা কখনোই উত্তর খুঁজে পায় না। খুবই স্বাভাবিক যে মুরগীই আগে এসেছিল। মুরগীর আগে যদি কোনো ডিম থাকত, তা হতো অস্বাভাবিক! এটি খুবই সহজ একটি বিষয়—অবশ্যই মুরগীই প্রথমে এসেছিল। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বিশাল উন্নত কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন, এই উদ্দেশ্য নিয়ে যাতে মানুষ তা উপভোগ করতে পারে। মুরগির অস্তিত্ত্ব থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই ডিমও আসবে। এটি কি একটি প্রস্তুত সমাধান নয়? যদি ডিমের সৃষ্টিই আগে হতো, তাহলেও কি তাকে ফোটানোর জন্য মুরগীর প্রয়োজন হতো না? সরাসরি মুরগী সৃষ্টি করাটা অনেক বেশি কুশলী সমাধান। এইভাবে, মুরগী ডিম পাড়তে আর ডিমে তা দিয়ে ফোটাতে পারলো, আর মানুষও খাওয়ার জন্য মুরগীর মাংস পেল। কতই সুবিধাজনক! ঈশ্বর যে পথে কার্য সম্পাদন করেন তা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন, একেবারেই জটিল নয়। কোথা থেকে এই ডিমগুলি আসে? এগুলি আসে মুরগী থেকে। মুরগী ছাড়া কোনো ডিম হতে পারে না। ঈশ্বর যা সৃষ্টি করেছিলেন তা ছিল এক জীবন্ত বস্তু। মানবজাতি যেমন উদ্ভট, তেমনই হাস্যকর, তারা সর্বদাই সহজ-সরল বিষয়গুলির মধ্যে জড়িয়ে পড়ে এবং অদ্ভুত কিছু ভ্রান্তিতে উপনীত হয়। মানুষ কতই শিশুসুলভ! ডিম ও মুরগীর মধ্যে সম্পর্কটি স্পষ্ট: মুরগী আগে এসেছিল। এটিই সবচেয়ে নির্ভুল ব্যাখ্যা, বিষয়টিকে উপলব্ধি করার সবচেয়ে নির্ভুল উপায়, এবং নির্ভুলতম উত্তর। এটিই সঠিক।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৮