কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন: অবিশ্বাসীদের জীবন ও মৃত্যুর চক্র

জাগতিক পৃথিবীর ক্ষেত্রে, মানুষ যখন কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বা ঘটনাবলী বুঝতে পারে না, তখন তারা প্রাসঙ্গিক তথ্যের সন্ধান করতে পারে বা ঐ সকল বস্তুর উৎস এবং প্রেক্ষাপট খোঁজার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু যখন প্রসঙ্গ আসে সেই অন্য জগতের যার সম্বন্ধে আজ আমরা কথা বলছি—আধ্যাত্মিক জগত, যা জাগতিক বিশ্বের বাইরে অবস্থিত—তার সম্বন্ধে জানার জন্য মানুষে কাছে প্রকৃত অর্থেই কোনো উপায় বা মাধ্যম নেই। আমি কেন এমন বলছি? আমি যে এমন বলছি, তার কারণ হল, মানবদুনিয়ায়, জাগতিক বিশ্বের সমস্তকিছুই মানুষের দৈহিক অস্তিত্বের সাথে অবিচ্ছেদ্য, এবং, যেহেতু মানুষ মনে করে যে জাগতিক বিশ্বের সমস্তকিছুই তাদের দৈহিক যাপন ও দৈহিক জীবনের থেকে অবিচ্ছেদ্য, সেহেতু অধিকাংশ মানুষই শুধুমাত্র সেই জাগতিক বস্তুগুলি সন্বন্ধেই সচেতন বা সেগুলিকেই দেখতে পায়, যা তাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান। তবে যখন আধ্যাত্মিক জগতের,অর্থাৎ অন্য দুনিয়া সংক্রান্ত সবকিছুর প্রসঙ্গ আসে, তখন এমনটা বলা সমীচীন যে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না। যেহেতু মানুষ তা দেখতে পায় না, এবং বিশ্বাস করে যে তা উপলব্ধি করার বা তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই, এই আধ্যাত্মিক জগত কীভাবে জাগতিক পৃথিবীর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে তা মুক্ত সে সম্বন্ধে তো আরোই কিছু জানার প্রয়োজন নেই—যদিও মানুষের মানুষের কাছে এই জগত গোপন ও বন্ধ—সেহেতু এই জগতের বিভিন্ন দিক উপলব্ধির পথ খুঁজতে মানুষকে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন দিক যা সম্বন্ধে আমি আলোচনা করতে চলেছি তা শুধু ঈশ্বরের পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গেই সম্পর্কিত; আমি কোনো রহস্যের উন্মোচন করছি না, বা আমি তোমাদের এমন কোনো গোপন কথা বলছি না যা তোমরা জানতে ইচ্ছুক। যেহেতু এই বিষয়টি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব, ঈশ্বরের পরিচালনা এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত, অতএব আমি শুধুমাত্র সেই অংশ নিয়েই কথা বলব যা তোমাদের জানা প্রয়োজন।

প্রথমেই, তোমাদের একটা প্রশ্ন করি: তোমাদের মনে, আধ্যাত্মিক জগত আসলে কী? মোটামুটিভাবে বলতে গেলে, তা হল জাগতিক পৃথিবীর বাইরের একটা জগত, সেই জগত যা মানুষের কাছে একই সঙ্গে অদৃশ্য এবং অধরা। তবুও, তোমাদের কল্পনায়, এই আধ্যাত্মিক জগত ঠিক কেমন জগত হওয়া উচিত? সম্ভবত, তোমাদের তা দৃষ্টিগোচর না হওয়ার কারণ হিসাবে, এই বিষয়ে চিন্তা করতেও তোমরা অক্ষম। তবে, তোমরা যখন কোনো কিংবদন্তি শোনো, তখনও তোমরা সে বিষয়ে ভাবতে থাকো, এবং তোমরা সে বিষয়ে না ভেবে থাকতে পারো না। কেন আমি এমনটা বলি? বহু মানুষের ক্ষেত্রেই তাদের অল্প বয়সে একটা ঘটনা ঘটে থাকে: যখন কেউ তাদের কোনো ভয়ের গল্প বলে—ভূত-প্রেত বা আত্মাদের নিয়ে, তখন তারা সাঙ্ঘাতিক ভয় পেয়ে যায়। ঠিক কেন তারা ভয় পায়? কারণ তারা সেইসব জিনিসের কল্পনা করে; যদিও তারা সেগুলি দেখতে পায় না, তারা অনুভব করে যে সেগুলি তাদের ঘরেই কোনো গোপন বা অন্ধকার কোণে রয়েছে, এবং সেহেতু তারা এতই ভয় পায় যে তারা ঘুমোতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারে না। বিশেষ করে রাতে, তারা নিজেদের ঘরে একা থাকতে খুব ভয় পায়, বা উঠোনে বেরোতে ভয় পায়। এমনটাই তোমাদের কল্পিত আধ্যাত্মিক জগত, এবং তা এমন এক জগত যা মানুষ ভীতিপ্রদ বলে ভাবে। সত্যিটা হল, প্রত্যেকেই এবিষয়ে কিছুদূর অবধি কল্পনা করে, এবং সকলেই তা অল্পস্বল্প অনুভব করতে পারে।

এবার আধ্যাত্মিক জগত নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। সেটা আসলে কী? আমি একটা সংক্ষিপ্ত ও সরল ব্যাখ্যা দিচ্ছি: আধ্যাত্মিক জগত হল খুব গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান, এমন এক স্থান যা জাগতিক বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন। কেন আমি একে গুরুত্বপূর্ণ বলি? আমরা তা বিশদে ব্যাখ্যা করতে চলেছি। আধ্যাত্মিক জগতের অস্তিত্ব মানবজাতির জাগতিক বিশ্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। সকল বস্তুর উপর ঈশ্বরের রাজত্বে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর চক্রের উপর এটি এক বড় ভূমিকা পালন করে, এ-ই হল এর ভূমিকা, এবং যে সমস্ত কারণে এর অস্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ, এটি তার অন্যতম। কারণ এটি এমন এক স্থান যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অগম্য, কেউই নির্ভুল ভাবে বিচার করতে পারে না যে আধ্যাত্মিক জগতের অস্তিত্ব রয়েছে কি নেই। এর বিভিন্ন দিক মানব অস্তিত্বের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত, যার কারণে মানব জীবনক্রমও আধ্যাত্মিক জগত দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। এর সঙ্গে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব জড়িত আছে কি নেই? তা জড়িত আছে। আমি যখন এমনটা বলি, তোমরা উপলব্ধি করো কেন আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি: তার কারণ এই বিষয়টি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব এবং সেইসঙ্গে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ধরনের একটি জগতে—সেই জগত যা মানুষের কাছে অদৃশ্য—এর প্রতিটি স্বর্গীয় আদেশ, ফরমান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা জাগতিক বিশ্বের যে কোনো দেশের বিধান ও ব্যবস্থাপনার অনেক ঊর্ধ্বে, এবং এই জগতে যারা বাস করে তাদের কেউই সেগুলির বিরোধিতা বা সেগুলি লঙ্ঘনের সাহস করে না। এটা কি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত? আধ্যাত্মিক জগতে সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ফরমানসমূহ, সুস্পষ্ট স্বর্গীয় আদেশসমূহ, এবং সুস্পষ্ট বিধিমালা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহকারীরা কঠোরভাবে তাদের দায়িত্বগুলি পালন করে এবং নিয়ম ও প্রবিধানগুলি মেনে চলে, কারণ তারা জানে স্বর্গীয় অনুশাসনগুলি লঙ্ঘনের পরিণতি কী; তারা স্পষ্টভাবে অবহিত যে কীভাবে ঈশ্বর অন্যায়কারীদের শাস্তি দেন ও সজ্জনদের পুরস্কৃত করেন, এবং কীভাবে তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিচালনা ও সেগুলির উপর শাসন করেন। উপরন্তু, তারা স্পষ্টভাবে ভাবে দেখে যে কীভাবে তিনি তাঁর স্বর্গীয় আদেশ ও বিধিগুলি প্রয়োগ করেন। এগুলি কি মানব অধ্যুষিত জাগতিক বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন? এগুলি প্রকৃতই অতিশয় ভিন্ন। আধ্যাত্মিক জগত এমন এক দুনিয়া যা জাগতিক বিশ্বের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেহেতু সেখানে স্বর্গীয় অনুশাসনসমূহ ও বিধিসমূহ রয়েছে, যেহেতু তা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব, পরিচালনা, এবং সর্বোপরি তাঁর স্বভাব এবং, সেইসঙ্গে, তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, তা তুলে ধরে। এমনটা শোনার পর তোমরা কি মনে করো না যে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য রাখাটা খুবই প্রয়োজন? তোমরা এর অন্তর্নিহিত গোপন বিষয়গুলি জানতে ইচ্ছুক নও? (হ্যাঁ, আমরা ইচ্ছুক।) এ-ই হল আধ্যাত্মিক জগতের ধারণা। যদিও এটি জাগতিক বিশ্বের সঙ্গে সহাবস্থান করে, এবং একইসঙ্গে ঈশ্বরের পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের অধীন, তবু এই জগতের জন্য ঈশ্বরের প্রশাসন ও সার্বভৌমত্ব জাগতিক বিশ্বে তাঁর পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের তুলনায় অনেক কঠোর। বিশদ ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন কীভাবে এই আধ্যাত্মিক জগত মানবজাতির জীবন ও মৃত্যুর চক্রের জন্য দায়বদ্ধ, তা দিয়ে আমাদের শুরু করা উচিত, কারণ তা হল আধ্যাত্মিক জগতের সত্তাদের কাজের একটা বড় অংশ।

মানবজাতিকে আমি তিনটি শ্রেণিতে বিন্যাস করি। প্রথম হল অবিশ্বাসী, তারা হল সেইসব ব্যক্তি যাদের কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস নেই। তাদের বলা হয় অবিশ্বাসী। অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রকাণ্ড একটা অংশ শুধু অর্থে বিশ্বাস রাখে; তারা শুধু নিজের স্বার্থ বজায় রাখে, তারা ভোগবাদী, এবং শুধুমাত্র জাগতিক পৃথিবীতে বিশ্বাসী—তারা জীবন ও মৃত্যুর চক্র বা দেবদেবী ও ভূতপ্রেত সম্পর্কে যা যা বলা হয় তা বিশ্বাস করে না। আমি এই ধরনের ব্যক্তিদের অবিশ্বাসীদের শ্রেণিতে ফেলি, এবং তারা হল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ। মানবজাতির মধ্যে, এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের আমি কয়েকটি প্রধান গোষ্ঠীতে ভাগ করি: প্রথম হল ইহুদি, দ্বিতীয় হল ক্যাথোলিক, তৃতীয় হল খ্রীষ্টান, চতুর্থ হল মুসলিম এবং পঞ্চম হল বৌদ্ধ; এই পাঁচটি ধরন রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে তারা রয়েছে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, এবং এই শ্রেণিতে রয়েছ তোমরা। তারাই হল সেই বিশ্বাসী যারা আজ ঈশ্বরকে অনুসরণ করে। এই ধরনের মানুষরা আবার দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত: ঈশ্বরের নির্বাচিত লোক, এবং সেবা প্রদানকারী। প্রধান এই শ্রেণিগুলির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়েছে। এইভাবেই, তোমরা এবার নিজেদের মনে মানুষদের এই শ্রেণি ও পর্যায়ক্রমের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম, তাই নও কি? প্রথম শ্রেণিটি অবিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত, এবং তারা কীরকম তা আমি বলেছি। যারা আকাশের বৃদ্ধ মানুষে বিশ্বাসী তারা কি অবিশ্বাসী বলে গণ্য হবে? অনেক অবিশ্বাসী শুধুমাত্র আকাশের বৃদ্ধ মানুষে বিশ্বাসী; তারা বিশ্বাস করে যে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্র, প্রভৃতি এই সত্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার উপর তারা ফসল রোপণ ও ফসল কাটার জন্য নির্ভর করে—তা সত্ত্বেও যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়, তারা তাঁকে বিশ্বাস করতে অনিচ্ছুক। একে কি বিশ্বাস থাকা বলা চলে? এই ধরনের ব্যক্তিরা অবিশ্বাসীদের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা এটা উপলব্ধি করো, ঠিক তো? এই শ্রেণিগুলির মধ্যে কোনো ভুল কোরো না। দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে ধর্মবিশ্বাসী মানুষরা অন্তর্ভুক্ত, এবং তৃতীয় শ্রেণিতে রয়েছে তারা যারা বর্তমানে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছে। তাহলে কেন সমস্ত মানুষকে আমি এই শ্রেণিগুলিতে বিভক্ত করেছি? (কারণ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিদের পরিণাম ও গন্তব্যগুলি ভিন্ন।) এটা এর একটা দিক। যখন এই ভিন্ন ভিন্ন জাতির ও শ্রেণির ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের প্রত্যেকের যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা স্থান থাকবে, এবং তারা জীবন ও মৃত্যু চক্রের বিভিন্ন বিধানের অধীন হবে, এই কারণে আমি মানুষদের এই প্রধান শ্রেণিগুলিতে বিন্যস্ত করেছি।

অবিশ্বাসীদের জীবন ও মৃত্যুর চক্র

এবার অবিশ্বাসীদের জীবন ও মৃত্যুর চক্র দিয়ে শুরু করা যাক। মৃত্যুর পর, একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জগতের এক জন সহকারী দ্বারা বাহিত হয়। কিন্তু ব্যক্তির ঠিক কোন অংশটি বাহিত হয়? তার দেহ নয়, বরং তার আত্মা। যখন কোনো ব্যক্তির আত্মাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেই ব্যক্তি এমন এক স্থানে প্রবেশ করে যা হল আধ্যাত্মিক জগতের এক কার্যস্থল যেখানে বিশেষভাবে সদ্যমৃত ব্যক্তিদের আত্মাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেটাই হল প্রথম স্থান যেখানে মৃত্যুর পর কেউ যায়, যা আত্মার কাছে অপরিচিত। তাদের যখন এই স্থানে আনা হয়, তখন একজন ব্যক্তি প্রথম পরীক্ষাগুলো করেন, তাদের নাম, ধাম, বয়স ও তাদের অভিজ্ঞতা যাচাই করেন। জীবদ্দশায় তারা যা করেছে তার প্রতিটির বিষয়ে একটা বইতে নথিভুক্ত করা হয়, এবং তা সঠিক কিনা সেটা যাচাই করা হয়। সবকিছু পরীক্ষার পর, সেই ব্যক্তির সারা জীবনের আচরণ ও কাজের ভিত্তিতে এটা স্থির করা হয় যে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে নাকি সে মানব হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে, যেটা হল প্রথম ধাপ। এই প্রথম ধাপটি কি ভীতিপ্রদ? এটা খুব একটা ভীতিপ্রদ নয়, কারণ এখানে একমাত্র যেটা ঘটেছে সেটা হল সেই ব্যক্তি এক অন্ধকার ও অপরিচিত স্থানে এসে উপনীত হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে, যদি এই ব্যক্তি তার সারা জীবনে অনেক অন্যায় করে থাকে এবং বহু মন্দ কাজ করে থাকে, তাহলে মোকাবিলা করার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা হবে সেই স্থান যা মানুষের শাস্তির জন্য স্পষ্টভাবে ব্যবহৃত। তাদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া হবে তার খুঁটিনাটি নির্ভর করছে তারা কী পাপ করেছে, এবং সেইসঙ্গে মৃত্যুর পূর্বে কত মন্দ কাজ তারা করেছে তার উপর—এটা হল এই দ্বিতীয় ধাপে ঘটা প্রথম ঘটনা। মৃত্যুর পূর্বে তারা যে অন্যায় করেছে এবং মন্দ কাজ করেছে তার কারণে, শাস্তির পর যখন তাদের পুনর্জন্ম হয়—যখন তারা এই জাগতিক বিশ্বে আরো একবার জন্মগ্রহণ করে—তখন কেউ কেউ মানুষ হিসাবেই জন্ম নেবে, অন্যদিকে অন্যরা পশুজন্ম নেবে। অর্থাৎ, আধ্যাত্মিক জগতে একজন ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করার পর, তারা যে অন্যায় করেছে তার কারণে তারা শাস্তি পায়; উপরন্তু, তাদের মন্দ কাজ করার কারণে তারা সম্ভবত পরের জন্মে মানুষ হিসাবে ফিরে আসবে না, বরং আসবে পশু হয়ে। যে সকল পশুতে তারা পরিণত হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে গরু, ঘোড়া, শুয়োর ও কুকুর। কেউ কেউ আবার পাখি, পাতিহাঁস অথবা রাজহংস হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে… পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভের পর, আবার যখন তাদের মৃত্যু হবে, তখন তারা আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করবে। সেখানে, আবার সেই আগেকার মতোই, মৃত্যুর পূর্বে তাদের আচরণের ভিত্তিতে, আধ্যাত্মিক জগত স্থির করবে যে তারা মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে কিনা। অধিকাংশ মানুষই প্রচুর অন্যায় করে, এবং তাদের পাপ খুবই গুরুতর, এই কারণেই তাদের সাত থেকে বারো বার পর্যন্ত পশু হিসাবে জন্ম নিতে হয়। সাত থেকে বারো বার—এটা কি ভয়ংকর নয়? (এটা ভয়ংকর।) কী তোমাদের আতঙ্কিত করে? একজন ব্যক্তি পশুতে পরিণত হচ্ছে—এমনটা ভয়ংকর। একজন মানুষের ক্ষেত্রে, পশুতে পরিণত হওয়ার কষ্টগুলি কী কী? কোনো ভাষা নেই, শুধুমাত্র সাদামাটা কিছু ভাবনা, শুধুমাত্র সেই কাজগুলিই করতে পারা যা পশুরা করে এবং পশুরা যা খায় তা-ই খাওয়া, পশুদের মতো একটা সরল মানসিকতা ও শরীরী ভাষা নিয়ে চলা, সোজা হয়ে হাঁটতে না পারা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা, এবং মানুষের কোনো আচরণ ও কাজের সঙ্গে পশুদের কোনো সম্পর্ক না থাকার বাস্তবিকতা। অর্থাৎ, পশু হওয়াটা সকল জীবের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে হীন করে তোলে, এবং তোমাকে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণাভোগ করতে হয়। যারা অনেক অন্যায় করেছে এবং বড় বড় পাপ করেছে, তাদের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জগতের শাস্তির এটা হল একটা দিক। তাদের শাস্তির তীব্রতার প্রসঙ্গ যখন আসে তখন, কী ধরনের পশুতে তারা পরিণত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সেটা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, শূয়োর হওয়া কি কুকুর হওয়ার চেয়ে ভালো? একটা শূয়োর একটা কুকুরের চেয়ে ভালোভাবে বাঁচে না মন্দ ভাবে? মন্দ ভাবে, তাই না? মানুষ যদি গরু বা ঘোড়া হিসাবে জন্মায় তাহলে তারা শূয়োর হিসাবে যেভাবে বাঁচত তার চেয়ে ভালোভাবে বাঁচবে না মন্দভাবে? (ভালোভাবে।) একটি বেড়াল হিসাবে পুনর্জন্ম নিয়ে একজন ব্যক্তি কি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচবে? যাই হোক কেন তাকে তো পশুই হতে হবে, এবং গরু বা ঘোড়া হওয়ার চেয়ে বেড়াল হওয়াটা আরামদায়ক, কারণ বেড়াল বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই আলস্যের মধ্যে কাটিয়ে দেয়। গরু বা ঘোড়া হওয়া অনেক বেশি পরিশ্রমসাধ্য। তাই একজন ব্যক্তি যদি গরু বা ঘোড়া হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে তবে তাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে—যা কঠোর শাস্তির সমতুল। গরু বা ঘোড়ার চেয়ে কুকুর হওয়াটা কিছুটা ভালো, কারণ কুকুরের সঙ্গে তার মনিবের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। বেশ কয়েক বছর পোষ্য থাকার পর, কিছু কুকুর তাদের মনিব যা বলে তার অনেকটাই বুঝতে পারে। কখনো কখনো একটি কুকুর তার মনিবের মেজাজমর্জি ও চাহিদার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং মনিবও কুকুরের সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করে, এবং কুকুরটি অনেক ভালো খাদ্য ও পানীয় পায়, এবং সে যখন যন্ত্রণায় থাকে, তখন তার অনেক বেশি দেখভাল করা হয়। কুকুর কি একটা সুখী জীবন উপভোগ করে না? তাই, গরু বা ঘোড়া হওয়ার চেয়ে কুকুর হওয়া ভালো। এখানে, একজন ব্যক্তির শাস্তির তীব্রতা অনুসারে এমনটা নির্ধারণ করা হয় যে, তাকে কতবার এবং কী কী ধরনের পশু হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে হবে।

যেহেতু জীবদ্দশায় তারা প্রচুর পাপ করেছে, সেহেতু কোনো ব্যক্তিকে সাত থেকে বারো বার পর্যন্তও পশু হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণের শাস্তি দেওয়া দেয়। পর্যাপ্ত বার শাস্তি পাওয়ার পর, তারা যখন আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়—সেই স্থান যেখানে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন আত্মা যারা ইতিমধ্যেই শাস্তি পেয়েছে, এবং যারা মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই স্থানে, আত্মারা কী ধরনের পরিবারে জন্মগ্রহণ করবে, পুনর্জন্ম গ্রহণের পর কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে, এবং প্রভৃতির ভিত্তিতে প্রত্যেক আত্মাকে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ যখন এই পৃথিবীতে আসবে তখন তারা গায়ক হবে, তাই তাদের গায়কদের মাঝে স্থাপন করা হয়, কেউ কেউ যখন এই এই পৃথিবীতে সবে তখন তারা ব্যবসায়ী হবে, এবং তাই তাদের ব্যবসায়ীদের মাঝে স্থান দেওয়া হয়; মানুষ হওয়ার পর কারোর যদি বৈজ্ঞানিক গবেষক হওয়ার থাকে, তবে তাকে বৈজ্ঞানিক গবেষকদের মাঝেই স্থান দেওয়া হবে। শ্রেণীবিভাজনের পর, তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন সময় ও নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী প্রেরণ করা হয়, ঠিক আজ যেভাবে মানুষ ই-মেইল পাঠায়। এর মধ্যে দিয়ে জীবন ও মৃত্যুর একটি চক্র সম্পূর্ণ হবে। যেদিন মানুষ এই আধ্যাত্মিক জগতে পৌঁছায় সেদিন থেকে শুরু করে তাদের শাস্তি শেষ হয়ে গেলে, বা বহুবার পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করার পর মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভের প্রস্তুতি নেওয়া হলে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।

আর যাদের শুধু শাস্তি শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং পশু হিসাবে পুনর্জন্ম দেওয়া হয়নি, তাদের কি মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে শীঘ্রই জাগতিক বিশ্বে পাঠানো হবে? অথবা, মানুষের মধ্যে পৌঁছতে তাদের কতদিন সময় লাগবে? কত ঘন ঘন এমনটা ঘটতে পারে? এক্ষেত্রে কালগত বিধিনিষেধ রয়েছে। আধ্যাত্মিক জগতে যা কিছু ঘটে তা সুনির্দিষ্ট কালগত বিধিনিষেধ ও নিয়মের অধীন—আমি যদি সেটা তোমাদের সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করি তবে তোমরা তা উপলব্ধি করবে। যারা খুব অল্প সময়ের জন্য পুনর্জন্মপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের যখন মৃত্যু হয়, ততদিনে মানব হিসাবে তাদের পুনর্জন্মের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনা ন্যূনতম যে সময়ের মধ্যে ঘটতে পারে তা হল তিন দিন। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তিন মাস সময় লাগে, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তিরিশ বছর সময় লাগে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আবার তিনশো বছর সময় লেগে যায়, এবং এভাবে চলতেই থাকে। তাই, এই সমস্ত কালগত নিয়মের ক্ষেত্রে কী বলা যেতে পারে, এবং এগুলির বৈশিষ্ট্যই বা কী? একটি আত্মার কাছ থেকে জাগতিক বিশ্বের—মানবদুনিয়ার—কী কী চাহিদা, এবং এই বিশ্বে এই আত্মার পালনের জন্য কী ভূমিকা নির্দিষ্ট করা হয়, তার ভিত্তিতে এগুলি নির্ধারণ করা হয়। মানুষ যখন নিছকই সাধারণ মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে তখন তাদের অতি দ্রুত তাদের পুনর্জন্ম হয়, কারণ এই মানব জগতে এই ধরণের সাধারণ মানুষের ভীষণ চাহিদা, তাদের আবার একটি পরিবারের কাছে পাঠানো হয় যেটি তারা মৃত্যুর আগে যে পরিবারে ছিল তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে, এমন কেউ কেউ রয়েছেন যারা এই বিশ্বে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। “বিশেষ” অর্থাৎ মানবজগতে এই ধরনের মানুষের খুব একটা চাহিদা নেই; এই ধরনের ভূমিকা পালনের জন্য খুব একটা বেশি মানুষেরও প্রয়োজন নেই, তাই এক্ষেত্রে তিনশো বছর সময় লেগে যেতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই আত্মা প্রতি তিনশো বছর অন্তর একবার আসে, অথবা এমনকি প্রতি তিন হাজার বছরে মাত্র একবারই আসে। তা কেন? তার কারণ হল, তিনশো বছরই হোক বা তিন হাজার বছর, মানব জগতে এই ধরনের ভূমিকার প্রয়োজন নেই, তাই তাদের আধ্যাত্মিক জগতের কোনো একটা স্থানে রেখে দেওয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ কনফুসিয়াসের কথাই ধরুন: চিনের প্রথাগত সংস্কৃতিতে তাঁর একটা গভীর প্রভাব ছিল, এবং তার আগমন সেই সময়কার মানুষের সংস্কৃতি, জ্ঞান, প্রথা ও মতাদর্শের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তবে, সব যুগে এই ধরনের ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে না, তাই তাকে আধ্যাত্মিক জগতেই থাকতে হয়, পুনর্জন্ম গ্রহণের আগে তিনশো বছর বা তিন হাজার বছর সেখানে অপেক্ষা করতে হয়। কারণ মানব জগতে এই ধরনের ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে না, তাকে নিষ্ক্রিয় ভাবে অপেক্ষা করতে হয়, কারণ তার পালনের মতো খুব অল্প ভূমিকাই থাকে, এবং তার করার মতো খুব অল্পই কাজ থাকে। এই কারণেই, বেশিরভাগ সময় তাকে আধ্যাত্মিক জগতের কোনো একটা স্থানে নিষ্ক্রিয় ভাবে রেখে দিতে হয়, মানব জগতে যখন তার প্রয়োজন হয় তখন তাকে প্রেরণ করা হয়। এরকমই হল আধ্যাত্মিক জগতের কালগত নিয়মাবলী, যেগুলি নির্ধারণ করে অধিকাংশ মানুষ কত ঘন ঘন পুনর্জন্ম গ্রহণ করবে, তা। মানুষ সাধারণ হোক বা বিশেষ, তাদের পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া হিসাবে যথাযথ নীতি ও সঠিক নিয়ম আধ্যাত্মিক জগতের রয়েছে, এবং এই সমস্ত নিয়মাবলী ও প্রথা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রেরিত, তা আধ্যাত্মিক জগতের কোনো সহকারী বা কোনো সত্তা দ্বারা নির্ধারিত বা নিয়ন্ত্রিত নয়। তোমরা এবার এটা বুঝেছ, তাই তো?

যে কোনো আত্মার পুনর্জন্মের ক্ষেত্রে, এই জন্মে তার ভূমিকা কী হবে, কোন পরিবারে সে জন্ম নেবে, এবং তার জীবন কেমন হবে তা সেই আত্মার পূর্বজন্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই মানব জগতে সব ধরনের মানুষ আসে, এবং যে ভূমিকাগুলি তারা পালন করে তা ভিন্ন ভিন্ন হয়, যে কার্য তারা সাধন করে সেগুলিও ভিন্ন ভিন্ন। এগুলি কী ধরনের কাজ? কিছু কিছু মানুষ ঋণ পরিশোধের জন্য এসেছে: পূর্বজন্মে অন্যান্যদের কাছে যদি তাদের অনেক টাকার ঋণ থাকে, তাহলে এই জন্মে সেই ঋণ পরিশোধের জন্য তারা আসে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ ঋণ সংগ্রহ করার জন্য আসে: তাদের পূর্বজন্মে তারা প্রচুর জিনিসপত্র ও প্রচুর টাকাপয়সার নয়ছয় করেছে; ফলস্বরূপ, তারা যখন আধ্যাত্মিক জগতে পৌঁছায়, তখন এই জগত তাদের বিচার করে এবং এই জীবনে তাদের ঋণ সংগ্রহের অনুমোদন দেয়। কিছু মানুষ কৃতজ্ঞতার ঋণ পরিশোধ করতে এসেছে: আগের জীবদ্দশায়—অর্থাৎ তাদের পূর্বজন্মে—কোনো ব্যক্তি তাদের প্রতি অত্যন্ত সদাশয় ছিল, এবং পুনর্জন্ম গ্রহণের এই বিরাট সুযোগ পাওয়ার কারণে, কৃতজ্ঞতার এই ঋণ পরিশোধের জন্য তারা পুনর্জন্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অন্য অনেকে আবার, জীবন দাবি করার জন্য পুনর্জন্ম লাভ করেছে। কাদের জীবন তারা দাবি করে? তারা সেইসব মানুষের জীবন দাবি করে যারা পূর্ব জীবনে তাদের হত্যা করেছিল। মোদ্দাকথা হল, প্রত্যেক ব্যক্তির বর্তমান জীবন তাদের পূর্ব জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত সংযোগ বহন করে; এই সংযোগ অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির বর্তমান জীবন তার পূর্ব জীবনের দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মৃত্যুর পূর্বে ঝ্যাং, লি-এর সঙ্গে প্রচুর টাকার প্রতারণা করেছিল। তাহলে লি-এর এর কাছে ঝ্যাং-এর কি কোনো ঋণ ছিল? হ্যাঁ ছিল, তাই এটা কি খুব স্বাভাবিক নয় যে ঝ্যাং-এর কাছ থেকে লি-এর ঋণ সংগ্রহ করা উচিত? ফলস্বরূপ, মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে একটা ঋণ রয়ে যাবে, যার মীমাংসা করতে হবে। যখন তাদের পুনর্জন্ম হয়, এবং ঝ্যাং মানুষে পরিণত হয়, তখন লি তার কাছ থেকে কীভাবে ঋণ সংগ্রহ করবে? একটা উপায় হল ঝ্যাং-এর পুত্র হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণ করা; ঝ্যাং প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, যা লি অপব্যয় করে। ঝ্যাং যত অর্থই উপার্জন করুক না কেন, কখনওই সেটা পর্যাপ্ত হয় না, এবং ইতিমধ্যে, তার পুত্র, কোনো কারণে, বিভিন্ন উপায়ে নিজ পিতার অর্থ ব্যয় করে ফেলে। ঝ্যাং হতভম্ব হয়ে যায়, সে অবাক হয়ে ভাবে, “আমার এই ছেলে কেন সবসময় এই ধরনের দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। অন্যদের ছেলেরা কেন এত সুশীল? আমার ছেলের কেন কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, সে কেন এত অকর্মণ্য, এবং কোনো অর্থ উপার্জনে অক্ষম, এবং কেন আমাকে সবসময় তার ভরণপোষণ করতে হয়? আমাকে যেহেতু তার ভরণপোষণ করতে হয়—কিন্তু এমনটা কেন হয় যে যত টাকা তাকে দিই, তার তত বেশি টাকার প্রয়োজন হয়? সে কেন সৎ ভাবে কোনো কাজ করতে পারে না, বরং সে সারাক্ষণ আলস্যে সময় যাপন, পানভোজন, গণিকাগমন ও জুয়াখেলা করে বেড়ায়? এসব হচ্ছেটা কী?” ঝ্যাং তখন ক্ষণকালের জন্য ভাবে, “এমন হতে পারে যে পূর্ব জন্মে তার কাছে আমার কোনো ঋণ রয়েছে। তবে তাই হোক, আমি তা পরিশোধ করব! আমি পুরোটা পরিশোধ না করা পর্যন্ত এই পর্ব শেষ হবে না!” একদিন হয়তো আসবে যেদিন লি তার পুরো ঋণ উশুল করে দেবে, এবং তার বয়স যখন চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছিবে সেদিন হঠাৎ তার বোধোদয় হবে, সে অনুভব করবে, “আমি আমার জীবনের প্রথমার্ধের পুরোটা জুড়ে একটাও ভালো কাজ করিনি! বাবা যে অর্থ উপার্জন করেছেন আমি তা সব অপচয় করেছি, তাই আমাকে একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে হবে; আমি নিজেকে ইস্পাতের মতো দৃঢ় করব! আমি এমন একজন হয়ে উঠব যে সৎ ও যথাযথ ভাবে জীবনযাপন করে, এবং আমি আমার বাবাকে আর কোনোদিন দুঃখ দেবো না!” সে এরকম কেন ভাবল? হঠাৎ তার সুমতি কেন হল? এর পেছনে কি কোনো কারণ রয়েছে? কী সেই কারণ? (তার কারণ হল লি তার ঋণ সংগ্রহ করেছে এবং; ঝ্যাং তার ঋণ পরিশোধ করেছে।) এক্ষেত্রে, এখানে একটা কার্য ও কারণ রয়েছে। এই কাহিনী দীর্ঘ, দীর্ঘ কাল আগে শুরু হয়েছে, তাদের বর্তমানে জীবনকালের আগে; তাদের পূর্ব জীবনের এই কাহিনীকে বর্তমানে আনা হয়েছে; কেউই অন্যকে দোষারোপ করতে পারে না। ঝ্যাং তার পুত্রকে যাই শিক্ষা দিক না কেন, তার পুত্র কোনোদিন তাতে কর্ণপাত করেনি বা সে একদিনও সৎ ভাবে পরিশ্রম করেনি। অথচ যেদিন সেই ঋণ পরিশোধ হয়ে গেল, তার পুত্রকে শিক্ষা দেওয়ার আর প্রয়োজন থাকল না—সে স্বাভাবিক নিয়মেই উপলব্ধি করল। এটা একটা সহজ উদাহরণ। এ রকম উদাহরণ কি আরো অনেক রয়েছে? (হ্যাঁ, আছে।) এটা মানুষকে কী বলে? (এটা বলে যে তাদের ভালো হতে হবে এবং কোনো অন্যায় করা চলবে না।) এটা বলে যে তাদের কোনো মন্দ কর্ম করা চলবে না, এবং তারা তাদের অন্যায় কর্মের জন্য প্রতিফল পাবে! বেশিরভাগ অবিশ্বাসীই প্রচুর অন্যায় করে, এবং তাদের অন্যায়ের প্রতিফল আসে, ঠিক কিনা? তবে এই ধরনের প্রতিফল কি নিয়মবহির্ভূত? প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে একটা প্রেক্ষাপট এবং তার প্রতিফলের নেপথ্যে একটা কারণ থাকে। তুমি কি মনে করো অর্থ নিয়ে কারো সঙ্গে প্রতারণা করলে তোমার কিছুই হবে না? তুমি কি মনে করো যে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর তোমাকে কোনো পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে না? তা অসম্ভব, এখানে অবশ্যই পরিণাম থাকবে! তারা যে-ই হোক না কেন, বা ঈশ্বর আছে কিনা তাতে তারা বিশ্বাস করুক বা না করুক, প্রত্যেক ব্যক্তিমানুষকে তার আচরণের দায় নিতে হবে এবং কাজের পরিণাম ভোগ করতে হবে। এই সহজ উদাহরণের প্রসঙ্গে—ঝ্যাং-এর শাস্তি হল, এবং লি-এর ঋণের পরিশোধ হল—এটা কি ন্যায্য নয়? মানুষ যখন এই ধরনের কাজ করে তখন, তখন তার ফল এই রকমেরই হয়। আধ্যাত্মিক জগতের প্রশাসনের সঙ্গে এটা অবিচ্ছেদ্য। তারা অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বরে যারা বিশ্বাস করে না তাদের অস্তিত্বও এই ধরনের স্বর্গীয় অনুশাসন ও আজ্ঞার অধীন। কেউই এগুলি থেকে রেহাই পায় না, এবং কেউই এই বাস্তবকে উপেক্ষা করতে পারে না।

যাদের মধ্যে বিশ্বাস নেই, তারা প্রায়শই ভাবে যে, শুধু দৃশ্যমান জিনিসেরই অস্তিত্ব আছে, পক্ষান্তরে যা কিছু দেখা যায় না, বা মানুষের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, সেগুলির কোনো অস্তিত্বই নেই। তারা বিশ্বাস করতে পছন্দ করে যে, “জীবন-মৃত্যুর চক্র” বলে কিছু নেই, “শাস্তি” বলে কিছু হয় না; এই ভাবে, তারা কোনোরকম অনুশোচনা ছাড়াই পাপ ও কুকর্মে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে, তারা শাস্তি পায় অথবা পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে। অবিশ্বাসীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানুষের অধিকাংশই এই দুষ্ট চক্রের অন্তর্ভুক্ত। এর কারণ হল, আধ্যাত্মিক জগতে সমস্ত জীবের জন্যই যে কঠোর পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে, তা তারা জানে না। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, এই সত্যটি বিদ্যমান, কারণ একজনও ব্যক্তি বা একটিও বস্তু ঈশ্বর তাঁর দৃষ্টি দ্বারা যা নিরীক্ষণ করেন, তার পরিধি এড়িয়ে যেতে পারে না বা তাঁর স্বর্গীয় আদেশ ও ফরমানের নিয়ম ও পরিসীমা এড়িয়ে যেতে পারে না। অতএব, এই সাধারণ উদাহরণটিই বলে দেয়, যে তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো বা না করো, পাপ ও কুকর্মসাধন সর্বদাই অ-গ্রহণযোগ্য, আর সমস্ত কৃতকর্মেরই প্রতিফল রয়েছে। কেউ যদি কাউকে আর্থিক প্রতারণার জন্য শাস্তি পায়, সেটা ন্যায্য শাস্তি। এরকম আচরণ, যা প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়, এগুলোর শাস্তি দেওয়া হয় আধ্যাত্মিক জগতে, এবং এই ধরনের শাস্তি ঈশ্বরের ফরমান এবং স্বর্গীয় আদেশের দ্বারা প্রদান করা হয়। সুতরাং, গুরুতর অপরাধ এবং দুর্নীতিমূলক আচরণ, যেমন—ধর্ষণ ও লুঠতরাজ, প্রতারণা ও শঠতা, চুরি ও ডাকাতি, খুন ও অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির জন্য শাস্তির বিভিন্ন তীব্রতা রয়েছে। বিভিন্ন তীব্রতা বিশিষ্ট সেইসব শাস্তির মধ্যে কী কী রয়েছে? এগুলির মধ্যে কয়েকটির তীব্রতা শাস্তির সময়কালের উপর নির্ভর করে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সাধিত হয়; বাকি কিছুক্ষেত্রে পুনর্জন্মের পরে মানুষ কোথায় যাবে তা নির্ধারণের উপরে শাস্তির তীব্রতা নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ দুর্মুখ হয়। “দুর্মুখ” হওয়া বলতে কী বোঝায়? এর অর্থ হল প্রায়শই অন্যদের গালমন্দ করা, এবং অভিশাপ দেওয়ার মতো বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা। বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহার বলতে কী বোঝায়? তা সেই ব্যক্তির দূষিত হৃদয়কে চিহ্নিত করে। এই ধরনের মানুষের মুখ থেকে প্রায়শই অন্যদের প্রতি গালমন্দ বর্ষণকারী অশালীন ভাষা নিঃসৃত হয়, এবং এহেন বিদ্বেষপূর্ণ ভাষার পরিণতিও হয় গুরুতর। এই ধরনের মানুষ মৃত্যুর পরে উপযুক্ত শাস্তিস্বরূপ, মূক হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। কিছু মানুষ জীবিত থাকাকালীন খুবই হিসাবী হয়; তারা প্রায়শই অন্যান্যদের থেকে সুযোগসুবিধা নেয়, তাদের ছোট্ট প্রকল্প খুবই সুপরিকল্পিত হয় এবং তা মানুষের অনেক ক্ষতি করে। পুনর্জন্ম লাভের সময় তারা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন বা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। অনেকে অহরহ অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকিঝুঁকি মারে; নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরের জিনিসও তাদের নজর এড়ায় না; আর তাদের যতটুকু জানা উচিত, তার থেকে তারা বেশি জেনে ফেলে। ফলস্বরূপ, পুনর্জন্মকালে তারা দৃষ্টিহীন হয়ে জন্মাতে পারে। অনেকে জীবিত অবস্থায় বেশ চালাকচতুর হয়, তারা মাঝেমধ্যেই মারপিট ও কুকর্মে লিপ্ত হয়। এই কারণে, তারা হয়ত পরের জন্মে প্রতিবন্ধী, খোঁড়া বা কোনো অঙ্গহীন অবস্থায় জন্মায়; অন্যথায় তারা হয়ত কুঁজো বা ঘাড়বাঁকা হয়, খুঁড়িয়ে হাঁটে, এক পা অন্য পায়ের থেকে ছোট হয়, ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে, তারা তাদের জীবনকালে কৃত মন্দ কর্মের মাত্রার সাপেক্ষে বিভিন্ন শাস্তি লাভ করেছে। অনেকের দৃষ্টিশক্তি খুব ক্ষীণ হয়, তার কী কারণ রয়েছে বলে তোমার মনে হয়? এইরকম লোকের সংখ্যা কী অনেক? এখনকার দিনে এহেন লোকের সংখ্যা খুব কম নয়। অনেকের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়, কারণ গত জন্মে তারা তাদের চোখ খুব বেশি ব্যবহার করেছে এবং অনেক কুকর্ম করেছে, সেই কারণে এই জন্মে তারা ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জন্মেছে, এবং অনেক গুরুতর ক্ষেত্রে, তারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনও হতে পারে। এ হলো তাদের কৃতকর্মের শাস্তি। অনেকে জীবৎকালে অন্যান্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করে; তারা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, বা তাদের সাথে সম্পর্কিত লোকেদের সাথে সদাচরণ করে। তারা অন্যান্যদের দান করে বা পরিচর্যা করে, অথবা আর্থিকভাবে সহায়তা করে, এবং মানুষ তাদের বিষয়ে অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করে। এই ধরনের মানুষ আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করলে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয় না। একজন অবিশ্বাসীকে কোনোভাবেই শাস্তি না দেওয়ার অর্থ হল জীবিতাবস্থায় তারা খুবই ভালো মানুষ ছিল। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করার পরিবর্তে, তারা শুধুমাত্র আকাশে অবস্থিত প্রবীণ মানুষটির উপরে বিশ্বাস করে। এই ধরনের মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের ঊর্ধ্বে একজন আত্মা রয়েছেন, যিনি তাদের সমস্ত কর্মের উপর নজর রাখছেন—কেবলমাত্র এটাই হল তাদের বিশ্বাস। ফলে, এই ব্যক্তি অনেক বেশি সদাচারী হয়। এই ধরনের মানুষ সহৃদয় এবং দানশীল হয়, এবং তারা যখন শেষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের সাথে ভালো আচরণ করা হবে, এবং তারা শীঘ্রই পুনর্জন্ম লাভ করবে। যখন পুনর্জন্ম লাভ করবে, কী ধরনের পরিবারে তারা জন্ম নেবে? সেই পরিবার খুব ধনী না হলেও, সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকবে, তাদের সদস্যদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকবে; সেখানে, এই পুনর্জন্ম লাভ করা মানুষেরা নিরাপদে, সুখে দিন কাটাবে, আর সকলেই আনন্দময় ভাবে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করবে। এই মানুষেরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারা বৃহৎ, বিস্তৃত পরিবার অর্জন করবে, তাদের সন্তানেরা প্রতিভাবান এবং সফল হবে, এবং তাদের পরিবার সৌভাগ্যশালী হবে—এবং এইরকম পরিণতি সেই সমস্ত মানুষের গত জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। অর্থাৎ, মানুষ মৃত্যুর পরে কোথায় যায় এবং কোথায় পুনর্জন্ম লাভ করে, তারা ছেলে হয় না মেয়ে, তাদের লক্ষ্য কী হয়, তাদের জীবন কীভাবে কাটবে, কী কী কষ্ট তাদের সহ্য করতে হবে, তারা কী ধরনের আশীর্বাদ উপভোগ করবে, কাদের সাথে তাদের দেখা হবে, এবং তাদের কী হবে—এই সমস্ত বিষয় কেউই আগে থেকে বলতে পারে না, এড়াতে পারে না বা এসবের থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না। অর্থাৎ বলা যায় যে, তোমার জীবন একবার ঠিক করা হয়ে গেলে—তোমার ভবিতব্যকে তুমি যেভাবেই বা যে উপায়েই এড়াতে চেষ্টা করো না কেন—আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বর তোমার জন্য যে জীবনধারা নির্ধারণ করেছেন তা লঙ্ঘন করার কোনো উপায়ান্তরই নেই। কারণ যখন তোমার পুনর্জন্ম হয়, তোমার সারা জীবনের ভাগ্য তার আগেই নির্ধারিত করা হয়ে গেছে। ভালো বা মন্দ যেমনই হোক না কেন, প্রত্যেককেই তার সম্মুখীন হতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। জগতে কেউই এহেন সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারে না, এবং কোনো সমস্যাই এর থেকে বেশি বাস্তব নয়। তোমরা সকলে আমার সমস্ত কথা বুঝেছ, তাই তো?

এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করার পরে তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ যে অবিশ্বাসীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কত নিখুঁত ও কঠোর পরীক্ষা এবং পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে? প্রথমত, তিনি আধ্যাত্মিক জগতে বিভিন্ন স্বর্গীয় আদেশ, ফরমান এবং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং ঘোষিত হওয়ার পরে, সেগুলি ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত উপায়ে, আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন আধিকারিক পদের সত্তাদের মাধ্যমে, অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়, এবং কেউই সেগুলি লঙ্ঘন করার সাহস পায় না। অতএব, মনুষ্যজগতে, মানবজাতির জীবন-মৃত্যুর চক্রে, কেউ পশু অথবা মানুষ, যেভাবেই পুনর্জন্ম লাভ করুক না কেন, উভয়ের জন্যই বিধান রয়েছে। যেহেতু এই সকল বিধান ঈশ্বর প্রদত্ত, তাই কেউ সেগুলি লঙ্ঘনের সাহস করে না, বা কেউ সেগুলি লঙ্ঘনে সক্ষমও নয়। শুধুমাত্র ঈশ্বরের এই সার্বভৌমত্বের কারণে, এবং যেহেতু এই ধরনের বিধান বিদ্যমান, সেই কারণেই মানুষ যে বস্তুজগতকে দেখতে পায় তা নিয়মিত এবং সুশৃঙ্খল; শুধুমাত্র ঈশ্বরের এই সার্বভৌমত্বের কারণেই মানুষ তাদের কাছে সম্পূর্ণ অদৃশ্য অন্য জগতের সঙ্গেও শান্তিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান ও জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়—যার সবই ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব থেকে অবিচ্ছেদ্য। কোনো ব্যক্তির নশ্বর দেহের জীবন শেষ হওয়ার পরে, আত্মার তখনও প্রাণ থাকে, আর তাই, তা যদি ঈশ্বরের পরিচালনাধীন না থাকত তাহলে কী হত? আত্মা সব জায়গায় ঘুরে বেড়াত, সর্বত্র অনধিকার প্রবেশ করত, এমনকি এই মনুষ্য জগতে জীবিত সত্তাদেরও ক্ষতি করত। কেবলমাত্র মানবজাতিই নয়, বরং সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলেরও এই ক্ষতি হতে পারত—তবে সবার আগে মানুষেরই ক্ষতি হত। এমন যদি ঘটতো—যদি এই ধরনের আত্মা কারো পরিচালনাধীন না থেকে লোকের সত্যিকারের ক্ষতিসাধন করত, এবং প্রকৃতপক্ষেই অনিষ্টকর কর্ম করত—তাহলে এই আত্মাকেও আধ্যাত্মিক জগতে যথাযথভাবে পরিচালনা করা হত: যদি অবস্থা গুরুতর হত, তাহলে সেই আত্মা অচিরেই বিলীন হয়ে যেত, এবং সেটিকে ধ্বংস করা হত। সম্ভব হলে, সেটিকে অন্য কোথাও রেখে তারপরে পুনর্জন্ম ঘটাতে হত। অর্থাৎ বলা যায়, বিভিন্ন আত্মাদের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জগতের প্রশাসন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল, এবং তা বিভিন্ন পর্যায় ও নিয়ম অনুসারে সম্পাদিত হয়। শুধুমাত্র এহেন প্রশাসন ব্যবস্থার কারণেই বস্তুগত মনুষ্যজগত বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে নি, সেই কারণেই বস্তুজগতের মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক মানসিকতা, স্বাভাবিক যৌক্তিকতা এবং সুশৃঙ্খল দেহজ জীবন বজায় রয়েছে। মানবজাতির এহেন স্বাভাবিক জীবন থাকলে, তবেই পার্থিব সত্তারা বংশ পরম্পরায় উন্নতি ও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

এইমাত্র যে সমস্ত বাক্য শুনলে, সেই বিষয়ে তোমার কী মনে হয়? এগুলো কি তোমার কাছে নতুন? আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুসমূহ তোমাদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে? এগুলোর অভিনবত্ব ছাড়া, তোমরা কি অন্য কিছুও অনুভব করছ? (মানুষের সদাচারী হওয়া উচিত, আমরা দেখতে পাই যে ঈশ্বর মহান এবং তাঁকে সম্মান করা উচিত।) (ঈশ্বর বিভিন্ন ধরণের মানুষের পরিণামের ব্যবস্থা কীভাবে করেন, এইমাত্র সেই সব বিষয় শোনার পর, এক দিকে আমার মনে হয় যে, কোনো অপরাধের অনুমোদন তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ এবং, যে, আমার তাঁকে সম্মান করা উচিত; অপরদিকে, কী ধরণের মানুষ ঈশ্বরের পছন্দ, বা কাদের তিনি অপছন্দ করেন, সেই বিষয়ে আমি সচেতন হয়েছি, এবং তাই, আমি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের একজন হয়ে উঠতে চাই।) তোমরা কি দেখতে পাও, যে, ঈশ্বর এই বিষয়ে তাঁর কর্মনীতি অনুসরণ করেন? তিনি কোন কোন নীতি অনুসারে কাজ করেন? (তিনি মানুষের কর্মের ভিত্তিতে তাদের পরিণাম নির্ধারণ করেন।) আমরা এইমাত্র অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করলাম। অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের কাজ কি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের নীতি অনুসারে সাধিত হয়? এর কি কোনো ব্যতিক্রম আছে? (না।) তোমরা কি ঈশ্বরের কাজের পেছনে কোনো নীতি চাক্ষুষ করতে পারো? অবিশ্বাসীরা আসলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তাঁর সমন্বয়সাধনেও তারা নিজেদের সমর্পণ করে না। তদুপরি, তারা তাঁর সার্বভৌমত্বের বিষয়েই সচেতন নয়, তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া তো আরোই দূরের কথা। আরও গুরুতর বিষয় হল, তারা ঈশ্বরকে অবমাননা করে, তাঁকে অভিশাপ দেয়, আর যারা ঈশ্বরবিশ্বাসী, তাদের প্রতি বিরূপতা পোষণ করে। ঈশ্বরের প্রতি এমন আচরণ থাকা সত্ত্বেও, তাদের প্রতি ঈশ্বরের পরিচালনা কিন্তু তাঁর নীতিবিরুদ্ধ হয় না; তিনি তাদের সুশৃঙ্খলভাবে, নিজের নীতি ও স্বভাব অনুসারে পরিচালনা করেন। তিনি তাদের বিদ্বেষকে কীভাবে দেখেন? অজ্ঞতা হিসাবে! ফলস্বরূপ, তিনি এই লোকেদের—অর্থাৎ, অবিশ্বাসীদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে—অতীতে পশু হিসাবে পুনর্জন্ম দান করেছেন। তাহলে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, অবিশ্বাসীরা আসলে কী? তারা সকলেই পশু। ঈশ্বর মানবজাতির পাশাপাশি পশুদেরও পরিচালনা করেন, এবং এই ধরনের মানুষদের জন্যেও তাঁর নীতিসমূহ অভিন্ন। এমনকি এই লোকেদের পরিচালনার মধ্যেও তাঁর স্বভাব পরিলক্ষিত হয়, ঠিক যেমন ঈশ্বরের আয়ত্তাধীন সমস্ত কিছুর উপর তাঁর রাজত্বের পিছনে তাঁর বিধানসমূহ পরিলক্ষিত হয়। এবং সেহেতু, অবিশ্বাসীদের পরিচালনার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত যে নীতিগুলি আমি এইমাত্র উল্লেখ করেছি, সেগুলো কি তোমরা উপলব্ধি করো? তোমরা কি ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব প্রত্যক্ষ করো? (হ্যাঁ করি।) অন্য কথায়, ঈশ্বর যে বস্তুরই পরিচালনা করুন না কেন, তিনি তাঁর নিজের নীতি ও স্বভাব অনুযায়ীই কাজ করেন। এ-ই হল ঈশ্বরের সারসত্য; তিনি যে এই ধরনের মানুষকে পশু হিসাবে বিবেচনা করেন, নিছক এই কারণে তিনি কখনোই এই ফরমান বা স্বর্গীয় আদেশগুলি আকস্মিকভাবে ভঙ্গ করবেন না। ঈশ্বর নীতির ভিত্তিতে কাজ করেন, বেপরোয়াভাবে নয়, এবং তাঁর কাজগুলি কোনও হেতুর দ্বারাই প্রভাবিত হয় না। তাঁর প্রতিটি কাজ তাঁর নিজস্ব নীতিসমূহ অনুসারেই সংঘটিত হয়। এর কারণ হল, স্বয়ং ঈশ্বরই স্বীয় সারসত্যের অধিকারী; এটি তাঁর সারসত্যের একটি দিক যা কোনো সৃষ্ট সত্তার অধিকৃত নয়। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি বস্তু, ব্যক্তি এবং চেতন পদার্থের পরিচালনা, অভিগমন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং কর্তৃত্বের বিষয়ে বিবেকবান এবং দায়িত্বশীল থাকেন, কখনোই অসাবধান হন না। যারা ভালো, তাদের প্রতি তিনি সদয় এবং করুণাময়, আর যারা দুষ্ট তাদের তিনি নির্মম শাস্তি প্রদান করেন; এবং বিভিন্ন জীবের ক্ষেত্রে, তিনি সময়মতো ও নিয়মিতভাবে মনুষ্য জগতের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, এবং তা এমনভাবে করেন যাতে বিভিন্ন জীব সুশৃঙ্খলভাবে, নিজেদের ভূমিকা অনুসারে পুনর্জন্ম লাভ করে, এবং বস্তুজগত ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে নিয়মনিষ্ঠ ভাবে স্থানান্তরিত হয়।

কোনো জীবের মৃত্যুর—ভৌত প্রাণের সমাপ্তির—অর্থ হল যে, সেই জীব বস্তুগত জগত থেকে আধ্যাত্মিক জগতে স্থানান্তরিত হয়েছে, পক্ষান্তরে, কোনো নতুন ভৌত জীবনে জন্মলাভের অর্থ হল যে, সেই জীব আধ্যাত্মিক জগত থেকে বস্তুজগতে উপনীত হয়েছে এবং নিজের ভূমিকা পালন করা শুরু করেছে। আগমন বা প্রত্যাগমন যাই ঘটুক না কেন, উভয়ই আধ্যাত্মিক জগতের কার্যের থেকে অবিচ্ছেদ্য। যখন বস্তুজগতে কারোর আগমন হয়, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই আধ্যাত্মিক জগতে তাঁর উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং সংজ্ঞা প্রস্তুত করে রাখেন, যেমন সেই ব্যক্তি কোন পরিবারে যাবে, কোন যুগে, কোন প্রহরে তার আগমন ঘটবে, কোন ভূমিকা সে পালন করবে। সংক্ষেপে, সেই ব্যক্তির সম্পূর্ণ জীবন—তারা কী করে, কোন পথ গ্রহণ করে—সমস্তটাই আধ্যাত্মিক জগতে করা আয়োজন অনুসারে, সামান্যতম বিচ্যুতি ছাড়াই সম্পাদিত হয়। তদুপরি, যে সময়ে, যে স্থানে ও যে উপায়ে ভৌত জীবনের সমাপ্তি হয়, তা আধ্যাত্মিক জগতের কাছে সুস্পষ্ট এবং বোধগম্য থাকে। ঈশ্বর বস্তুজগতের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জগতও শাসন করেন, এবং তিনি যেমন কোনো আত্মার স্বাভাবিক জীবন-মৃত্যুর চক্রকে বিলম্বিত করবেন না, সেই চক্রের উদ্দেশ্যে আয়োজনের কখনও কোনো ত্রুটি রাখবেন না। আধ্যাত্মিক জগতের আনুষ্ঠানিক পদাধিকারী প্রত্যেক তত্ত্বাবধায়ক নিজেদের স্বতন্ত্র কাজ সম্পাদন করে, এবং ঈশ্বরের নির্দেশ ও নিয়ম অনুসারে নিজেদের করণীয় কাজ সম্পন্ন করে। সুতরাং, মনুষ্যজগতে মানুষের প্রত্যক্ষ করা প্রতিটি বস্তুগত ঘটনা সুশৃঙ্খল, তাতে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এর কারণ হল সমস্ত কিছুর উপরে ঈশ্বরের সুশৃঙ্খল শাসন বিদ্যমান এবং তাঁর কর্তৃত্বই সবকিছুর নিয়ন্তা। তাঁর রাজত্বের মধ্যে মানুষের বাস করা বস্তুগত জগতের পাশাপাশি, মানবজাতির অগোচর অদৃশ্য আধ্যাত্মিক জগতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব, মানুষ যদি সুন্দর জীবন পেতে চায় এবং সুন্দর পরিবেশে বাস করার আশা রাখে, তাহলে তাদের সমগ্র দৃশ্যমান বস্তুজগত প্রদানের পাশাপাশি, অবশ্যই প্রদান করতে হবে সেই আধ্যাত্মিক জগতকেও, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে, যা মানবজাতির পক্ষ থেকে প্রত্যেক জীবের পরিচালনা করে, এবং যা সুশৃঙ্খল। এইভাবে, সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর, এই কথা বলার মাধ্যমে আমরা কি “সকল বস্তু” সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা এবং উপলব্ধিকে উন্নততর করিনি? (হ্যাঁ।)

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১০

পূর্ববর্তী: ঈশ্বরকে তোমার অনন্য প্রভু হিসাবে গ্রহণ করাই হল পরিত্রাণ অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ

পরবর্তী: কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন: বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের জীবন-মৃত্যুর চক্র

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

দ্বিতীয় দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব জলরাশির আয়োজন করে, এবং তৈরি করে নভোমণ্ডল এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে মৌলিক একটি স্থান আবির্ভূত হয়

বাইবেলের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটি পাঠ করা যাক: “ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন