কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন: ঈশ্বরের অনুগামীদের জীবন-মৃত্যুর চক্র

এবার ঈশ্বরের অনুগামীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের বিষয়ে বলা যাক। এটা তোমাদের পক্ষে জরুরি বিষয়, তাই মনোযোগ দিয়ে শোনো: প্রথমে, ঈশ্বরের অনুসারীদের কীভাবে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়েছিল সেই বিষয়ে ভাবো। (ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ, এবং সেবা প্রদানকারীগণ।) তাদের প্রকৃতপক্ষে দুইভাগে ভাগ করা যায়: ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ এবং সেবা প্রদানকারীগণ। প্রথমেই ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের বিষয়ে কথা বলা যাক, যাদের সংখ্যা একেবারেই কম। “ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি” বলতে কাদের বোঝানো হয়? ঈশ্বর সমস্ত কিছু এবং মানবজাতি সৃষ্টি করার পর, একদল মানুষকে নিজের অনুসারী হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন; এদেরকেই সাধারণভাবে “ঈশ্বরের মনোনীত” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই মানুষদের বেছে নেওয়ার পেছনে ঈশ্বরের বিশেষ সুযোগ এবং তাৎপর্য ছিল। এই সুযোগকে বিশেষ বলা হচ্ছে কারণ, তা শুধুমাত্র কয়েকজন নির্বাচিতদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল, ঈশ্বরের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় যাদের উপস্থিতি ছিল আবশ্যিক। আর তাৎপর্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? যেহেতু ঈশ্বরই এই গোষ্ঠীর মানুষদের নির্বাচিত করছেন, তাই এদের তাৎপর্য খুবই বেশি। অর্থাৎ, ঈশ্বর এই মানুষদের সম্পূর্ণ করতে চান, ত্রুটিমুক্ত করতে চান, এবং পরিচালনামূলক কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরে, তিনি এই মানুষদের অর্জন করবেন। এই তাৎপর্য কি মহান নয়? অর্থাৎ, এই মনোনীত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঈশ্বর এদেরই অর্জন করার ইচ্ছা রাখেন। আর সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে বলতে গেলে, ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয় থেকে একটু বিরতি নিয়ে আগে আমরা প্রথমে তাদের উৎপত্তির বিষয়ে আলোচনা করি। “সেবা-প্রদানকারী” বলতে এমন কাউকে বোঝায় যে সেবা করে। সেবাকারীরা ক্ষণস্থায়ী; তারা দীর্ঘমেয়াদে বা চিরতরে তা করে না, বরং তাদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ বা নিযুক্ত করা হয়। অবিশ্বাসীদের থেকে নির্বাচিত হয়েই তাদের অধিকাংশের উৎপত্তি হয়েছিল। তারা ঈশ্বরের কাজে সেবা-প্রদানকারীর ভূমিকা গ্রহণ করবে, এই মর্মে ফরমান জারি করার পরেই এই পৃথিবীতে তাদের আগমন হয়েছিল। তারা হয়ত গত জন্মে পশু হিসাবে ছিল, আবার তারা অবিশ্বাসীও হতে পারে। এমনটাই হল সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তি-স্থল।

ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণের বিষয়ে আরও আলোচনা করা যাক। মৃত্যুর পরে তারা যে স্থানে যায় অবিশ্বাসীগণ এবং বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীগণের গন্তব্যের থেকে তা ভিন্ন। সেই স্থানে তাদের সঙ্গী হয় পরি ও দেবদূতগণ; এটি এমন এক স্থান যেটিকে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করেন স্বয়ং ঈশ্বর। যদিও ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ এই স্থানে স্বচক্ষে ঈশ্বরকে দর্শন করতে পারে না, তবু, আধ্যাত্মিক জগতের অন্য কোথাও এই ধরণের অন্য কোনো স্থান নেই; এই স্থান ভিন্ন, যেখানে মানবজাতির এই অংশ মৃত্যুর পর গমন করে। মৃত্যুর পর তাদেরকেও দেবদূতগণের কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেখানে কী পরীক্ষা করা হয়? দেবদূতগণ পরীক্ষা করে দেখে নেন সেই ব্যক্তিগণ তাদের জীবনে ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কোন কোন পথে চলেছে, সেই সময়ে তারা কখনও ঈশ্বরের বিরোধিতা অথবা তাঁকে কোনো অভিসম্পাত করেছে কিনা, এবং তারা কখনও কোনো সাংঘাতিক পাপাচার অথবা মন্দ কাজ করেছে কি না। এই অনুসন্ধানের পর, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি থেকে যেতে পারবে নাকি তাকে অবশ্যই প্রস্থান করতে হবে—এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। এখানে “প্রস্থান” বলতে কী বোঝানো হয়? আর “থেকে যাওয়া” বলতেই বা কী বোঝায়? “প্রস্থান” বলতে বোঝায়, আচরণ অনুসারে তারা ঈশ্বরের নির্বাচিত লোকেদের মধ্যে নিজেদের পদে থেকে যেতে পারবে না তাদেরকে চলে যেতে হবে; আবার “থেকে যাওয়া”-র অনুমোদন পাওয়ার অর্থ হল, তারা অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের দ্বারা ত্রুটিমুক্ত হওয়ার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের একজন হয়ে রয়ে যেতে পারবে। যারা থেকে যাবে, তাদের জন্য ঈশ্বরের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কাজের প্রতিটি পর্বে, ঈশ্বর এই ধরনের মানুষদের প্রেরিত শিষ্য হিসাবে অথবা পুনরুজ্জীবিত করার কাজ বা গির্জার পরিচর্যার কাজ করতে পাঠাবেন। তবে, এই ধরনের কাজে সক্ষম ব্যক্তিরা অবিশ্বাসী লোকেদের মত অত ঘনঘন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে পুনর্জন্মলাভ করে না; বরং তারা পৃথিবীর প্রয়োজনীয়তা এবং ঈশ্বরের কাজের পর্যায় অনুসারে প্রত্যাবর্তন করে, বারংবার তাদের পুনর্জন্ম হয় না। সুতরাং, তাদের পুনর্জন্ম কখন হবে, সেই বিষয়ে কি কোনো নিয়ম রয়েছে? তারা কি কয়েক বছর পর পরই একবার করে আসে? তাদের আসার হার কি এইরকমই? না, তা নয়। এগুলির সবই ঈশ্বরের কাজ, কাজের ধাপ এবং তাঁর প্রয়োজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, এবং এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একমাত্র নিয়ম হল, ঈশ্বর অন্তিম সময়ে যখন তাঁর কাজের চূড়ান্ত পর্যায় সম্পন্ন করবেন, তখন সমস্ত নির্বাচিত ব্যক্তিদের আগমন ঘটবে, এবং এই আগমনই হবে তাদের অন্তিম পুনর্জন্ম। এবং কেন এমন হবে? তা ঈশ্বরের কাজের শেষ পর্যায়ে অর্জিত ফলাফলের ভিত্তিতে হবে—কারণ কাজের এই শেষ পর্যায়ে, ঈশ্বর এই মনোনীত ব্যক্তিদের পুরোপুরি সম্পূর্ণ করবেন। এর অর্থ কী? যদি, অন্তিম পর্যায়ে, এই লোকেদের সম্পূর্ণ এবং ত্রুটিমুক্ত করা হয়, তাহলে তাদের আর আগের মতো পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হবে না; তাদের মানুষ হওয়ার পাশাপাশি পুনর্জন্ম লাভের প্রক্রিয়াটিও সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়ে যাবে। যারা থেকে যাবে, এমনটা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যারা থেকে যেতে পারবে না, তারা কোথায় যাবে? যারা থেকে যাওয়ার অনুমোদন পায় না, তাদের নিজ নিজ উপযুক্ত গন্তব্য থাকে। প্রথমত, মন্দ কর্মের ফলস্বরূপ, অর্থাৎ তাদের করা ভুল এবং সমস্ত পাপাচারের কারণে, তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে। শাস্তি দেওয়ার পরে, ঈশ্বর হয় তাদেরকে পরিস্থিতি অনুসারে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন, অথবা বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের মানুষদের মাঝে প্রেরণ করবেন। অন্য ভাবে বললে, তাদের সম্ভাব্য দুই রকমের ফলাফল হতে পারে: প্রথমটা হল শাস্তি লাভ করা এবং হয়ত পুনর্জন্ম লাভের পরে নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের মাঝে বসবাস করা, এবং অপরটি হল অবিশ্বাসীতে পরিণত হওয়া। অবিশ্বাসীতে পরিণত হলে, তারা সমস্ত সুযোগ হারিয়ে ফেলবে; তবে, যদি তারা ধর্মবিশ্বাসী মানুষ হয়—উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা খ্রীষ্টান হয়—তাহলে ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের পদে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ তখনও তাদের থাকবে; এর মধ্যেকার সম্পর্কগুলি বেশ জটিল। সংক্ষেপে, যদি ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করার মতো কিছু করে, তাহলে সেও বাকিদের মতোই শাস্তি পাবে। উদাহরণ হিসাবে পৌলের কথাই ধরে নাও, যার বিষয়ে আমরা আগে আলোচনা করেছি। পৌল হল এমন এমন একজন ব্যক্তির উদাহরণস্বরূপ, যাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমি কী বলছি সেটা কি তোমরা ধারণা করতে পারছ? ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের সুযোগ কি অপরিবর্তনীয়? (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই।) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অপরিবর্তনীয়, কিন্তু এর অল্প অংশ অপরিবর্তনীয় নয়। তা কেন? এখানে আমি তার সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেছি: মন্দকর্ম করা। লোকে মন্দ কর্ম করলে, ঈশ্বর তাদের চান না, আর ঈশ্বর তাদের না চাইলে, তাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের মানুষের মাঝে নিক্ষিপ্ত করেন। এতে তাদের আর কোন আশা অবশিষ্ট থাকে না এবং তাদের পক্ষে প্রত্যাবর্তন হয়ে দাঁড়ায় কষ্টকর। এগুলির সমস্তই ঈশ্বরের মনোনীত মানুষদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের সাথে সম্পর্কিত।

পরবর্তী বিষয়টি সেবা-প্রদানকারীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের সাথে সম্পর্কিত। আমরা এইমাত্র সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তির কথা আলোচনা করেছি; অর্থাৎ, তারা পূর্বজন্মে অবিশ্বাসী ছিল, এবং পশু হয়ে জন্ম নেওয়ার পর তাদের পুনর্জন্ম হয়েছিল। কাজের শেষ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে এইরকম মানুষদের একটি গোষ্ঠীকে বেছে নিয়েছেন, এবং এটি হল এক বিশেষ গোষ্ঠী। এই ব্যক্তিদের বেছে নেওয়ার পিছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, তাঁর কাজের ক্ষেত্রে তাদের সেবা গ্রহণ করা। “সেবা” খুব একটা শ্রুতিমধুর শব্দ নয়, বা তা সকলের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণও নয়, তবুও এটা কাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তা আমাদের জানা উচিত। ঈশ্বরের সেবা-প্রদানকারীর অস্তিত্বের একটি সবিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। অন্য কেউ তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে না, কারণ তারা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত। এবং এইসব সেবা-প্রদানকারীদের ভূমিকা কী? তা হল ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের সেবা করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তাদের ভূমিকা হল ঈশ্বরের কাজে সেবা প্রদান করা, তাতে সহযোগিতা করা, এবং ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত ব্যক্তিদের স্বয়ং তিনিই যাতে সম্পূর্ণ করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা। তাদের করা পরিশ্রম, কাজের কিছু অংশের সম্পাদন, অথবা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা নির্বিশেষে, ঈশ্বরের এই সেবা-প্রদানকারীদের থেকে কী চাহিদা? তাদের প্রতি তাঁর চাহিদা কি প্রচুর? (না, তিনি তাদের থেকে শুধু আনুগত্য আশা করেন।) সেবা-প্রদানকারীদেরকেও অবশ্যই অনুগত হতে হবে। তোমার উৎস অথবা ঈশ্বরের তোমাকে বেছে নেওয়ার কারণ নির্বিশেষে, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি, ঈশ্বরের অর্পিত যেকোনো দায়িত্বের প্রতি অনুগত থাকতে হবে, এবং দায়িত্ব এবং পালনীয় কর্তব্যের প্রতি তোমায় বিশ্বস্ত থাকতে হবে। যে সেবা-প্রদানকারীরা বিশ্বস্ত থাকে এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাদের পরিণতি কী হবে? তারা থেকে থেকে পারবে। থেকে যাওয়া কি সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে আশীর্বাদস্বরূপ? এই আশীর্বাদের তাৎপর্য কী? মর্যাদাগত ভাবে, এমন মনে হয় যে তারা ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের থেকে ভিন্নতর; যেন, তারা আলাদা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তারা এই জীবনে কি ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের মতোই বিভিন্ন জিনিস উপভোগ করে না? অন্ততপক্ষে, এই জীবদ্দশার ক্ষেত্রে তা অভিন্ন। তোমরা এমনটা অস্বীকার করতে পারো না, পারো কি? ঈশ্বরের কথন, ঈশ্বরের অনুগ্রহ, ঈশ্বরের বিধান, ঈশ্বরের আশীর্বাদ—এইসব কে না উপভোগ করে? সকলেই প্রভূত পরিমাণে তা উপভোগ করে। একজন সেবা-প্রদানকারীর পরিচয় হল যে, সে এক সেবা দানকারী ব্যক্তি, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সে তাঁর সৃষ্ট সমস্ত সত্তার মধ্যে নিছকই এক সত্তা মাত্র; শুধু তার ভূমিকা হল সেবা-প্রদানকারীর। যেহেতু সেবা-প্রদানকারী এবং ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি উভয়ই ঈশ্বরের সৃষ্টি, তাই তাদের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? কার্যত, নেই। তবে নামমাত্র বললে, তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে; সারসত্য এবং ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের একটা পার্থক্য রয়েছে—কিন্তু ঈশ্বর এই গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করেন না। তাহলে কেন এই লোকেদের সেবা-প্রদানকারী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়? তোমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে কিছু উপলব্ধি থাকতে হবে! সেবা-প্রদানকারীরা অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে আসে। যেইমাত্র আমরা উল্লেখ করি অবিশ্বাসীদের মধ্যে থেকে তাদের আগমন, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের পটভূমি খারাপ: তারা সকলেই নাস্তিক, এবং অতীতেও তাই ছিল; তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না, এবং তাঁর প্রতি, সত্যের প্রতি, এবং ইতিবাচক সকলকিছুর প্রতি বিদ্বেষের মনোভাব পোষণ করত। তারা ঈশ্বর বা তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করত না। তাহলে, তারা কি ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করতে সক্ষম? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে তারা সক্ষম নয়, তা বলাই বাহুল্য। ঠিক যেমন পশুরা মানুষের কথা বুঝতে পারে না, তেমনই সেবা প্রদানকারীরাও বোঝে না ঈশ্বর কী বলছেন, তিনি কী চান অথবা তিনি এমন দাবি কেন করছেন। তারা এসব উপলব্ধি করে না; তাদের কাছে এই সমস্ত জিনিস দুর্বোধ্য, এবং তারা অনালোকিতই থেকে যায়। এই কারণে, তারা আমাদের আলোচিত জীবনের অধিকারী হয় না। এই জীবন ব্যতীত, মানুষ কি সত্য উপলব্ধি করতে পারে? তারা কি সত্য সহকারে সজ্জিত হতে পারে? তাদের কি ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকে? (না।) সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তি এমনই। তবে, যেহেতু ঈশ্বরই এই লোকেদের সেবা-প্রদানকারী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন, সেহেতু এখনও তাদের জন্য তাঁর প্রয়োজনীয়তা মানসম্পন্ন; তিনি তাদের অবজ্ঞা করেন না, তেমনই তাদের প্রতি উদাসীন নন। যদিও তারা তাঁর বাক্য উপলব্ধি করতে পারে না, এবং তারা জীবনের অধিকারী নয়, তবুও তিনি তাদের সাথে সদাচরণ করেন, এবং তাদের প্রতি তাঁর প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে এখনও মানদণ্ডসমূহ বজায় থাকে। তোমরা এইমাত্র মানদণ্ডগুলির বিষয়ে বললে: ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকা এবং তিনি যা বলেন তাই করা। সেবার ক্ষেত্রে, তোমাকে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই সেবা করতে হবে, এবং অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সেবা করতে হবে। তুমি যদি একজন অনুগত সেবা-প্রদানকারী হতে পারো, একেবারে শেষ পর্যন্ত সেবা করতে সক্ষম হও, এবং ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারো, তাহলে তুমি মূল্যবান জীবন যাপন করতে পারবে। এমনটা করতে পারলে, তুমি থেকে যেতে পারবে৷ যদি তুমি একটু বেশি পরিশ্রম করো, একটু বেশি সচেষ্ট হও, ঈশ্বরকে উপলব্ধির প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে পারো, ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে কিছু কথা বলতে পারো, তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারো, এবং সর্বোপরি, যদি তুমি তাঁর ইচ্ছার কিছুমাত্র উপলব্ধি করতে পারো, ঈশ্বরের কাজে সহযোগিতা করতে পারো, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতন হতে পারো, তাহলে একজন সেবা-প্রদানকারী হিসাবে তুমি তোমার ভাগ্য পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করবে। আর ভাগ্যের এই পরিবর্তন কেমন হবে? তুমি আর নিছকই থেকে যাওয়া লোকেদের মধ্যে থাকবে না। তোমার আচরণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এবং সাধনার ভিত্তিতে, ঈশ্বর তোমাকে তাঁর নির্বাচিতদের লোকেদের একজন করে দেবেন৷ এটাই হবে তোমার ভাগ্যের পরিবর্তন। সেবা-প্রদানকারীদের পক্ষে এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার কোনটা? সেটা হল যে, তারা ঈশ্বরের মনোনীত হয়ে উঠতে পারে। এমনটা হতে পারার অর্থ হল, তাদের আর অবিশ্বাসীদের মতো পশু হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে হবে না। এমনটা কী ভালো? হ্যাঁ, এটা ভালো। আর এটা এক রকমের সুখবরও বটে: এর অর্থ হল, সেবা-প্রদানকারীদের গড়েপিটে নেওয়া যায়। ঈশ্বর তাদের সেবা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত করে নিলে, তারা যে অনন্তকাল যাবৎ তাই করে যাবে, তা কিন্তু নয়। ঈশ্বর তাদের ব্যক্তিগত আচরণের সাথে সাযুজ্য রেখে পরিচালনা করবেন এবং প্রতিক্রিয়া দেবেন।

তবে, এমনও সেবা-প্রদানকারী রয়েছে যারা অন্তিম অবধি সেবা প্রদানে অক্ষম রয়ে যায়; তাদের মধ্যে এমনও লোকজন রয়েছে যারা সেবা প্রদানকালে মাঝপথেই হাল ছেড়ে দেয় এবং ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে, আবার এমন মানুষও রয়েছে যারা একাধিক মন্দ কর্ম সংঘটন করে। এমনকি অনেকে থাকে যারা প্রবল অনিষ্ট করে এবং ঈশ্বরের কাজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, আবার এমনও সেবা-প্রদানকারী রয়েছে যারা ঈশ্বরকে অভিসম্পাত সহ অনেক কিছু করে। এইসব কোন অপরিবর্তনীয় পরিণামের দিকে ইঙ্গিত করে? এই ধরনের যেকোনো কাজের তাৎপর্য হল তাদের সেবা প্রদানের পরিসমাপ্তি। যেহেতু সেবা প্রদানকালে তোমার আচরণ অত্যন্ত নিকৃষ্ট রয়েছে, এবং যেহেতু তুমি সীমা অতিক্রম করে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছ, সেহেতু, যখন ঈশ্বর দেখবেন যে তোমার সেবা মানসম্মত নয়, তিনি তোমার সেবা করার যোগ্যতা হরণ করবেন। তিনি তোমাকে আর সেবা করার অনুমতি দেবেন না; তিনি তাঁর চোখের সামনে থেকে এবং ঈশ্বরের গৃহ থেকে তোমাকে সরিয়ে দেবেন। এই কারণেই কি তুমি সেবা করতে চাও না? তুমি কি ক্রমাগত মন্দ কর্ম করতে চাইছ না? ক্রমাগত অবিশ্বাসী হয়ে থাকছ না? তাহলে, এর একটা সহজ সমাধান আছে: তোমার সেবা করার যোগ্যতা কেড়ে নেওয়া হবে। ঈশ্বরের কাছে কোনো সেবা-প্রদানকারীর সেবা করার যোগ্যতা হরণ করার অর্থ হল সেই সেবা-প্রদানকারীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে, এবং সে আর ঈশ্বরের সেবা করার যোগ্য থাকবে না। ঈশ্বরের এই ব্যক্তির থেকে আর সেবা পাওয়ার প্রয়োজন হয় না, তারা তখন যত সুমধুর কথাই বলুক না কেন, সবই নিষ্ফল হবে। এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সেটার আর সুরাহা করা যাবে না; এহেন সেবা-প্রদানকারীদের আর ফেরার রাস্তা থাকে না। আর ঈশ্বর এইরকম সেবা-প্রদানকারীদের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করেন? তিনি কি শুধু তাদের সেবা করা থেকে বিরত করেন? না। তিনি কি তাদের থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা প্রতিরোধ করেন? অথবা, তিনি কি তাদের একপাশে সরিয়ে রেখে তাদের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করেন? না, তিনি তা করেন না। সত্যি বলতে, সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর এত প্রেমপূর্ণ মনোভাব রাখেন না। ঈশ্বরের সেবার ক্ষেত্রে কারোর এই ধরনের মনোভাব থাকলে, সেই কারণের জন্য ঈশ্বর তাদের সেবা করার যোগ্যতা ছিনিয়ে নেবেন, এবং তাদেরকে আবার অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত করবেন। এবং, কোনো সেবা-প্রদানকারীকে অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলে, তার ভাগ্য কী হয়? তা অবিশ্বাসীদের মতোই হয়: তারা পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে এবং আধ্যাত্মিক জগতে অবিশ্বাসী হিসাবে একই শাস্তি পাবে। তদুপরি, ঈশ্বর এই ব্যক্তির শাস্তির বিষয়ে কোনও ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাবেন না, কারণ ঈশ্বরের কাজের সাথে এহেন ব্যক্তির আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তা তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসপূর্ণ জীবনের পরিসমাপ্তির পাশাপাশি, তাদের নিজেদের ভাগ্যেরও পরিসমাপ্তি, তাদের ভাগ্যের ঘোষণাও বটে। এইভাবে, সেবা-প্রদানকারীদের সেবা যদি অযথার্থ হয়, তবে তাদের নিজেদেরকেই ফল ভোগ করতে হবে। যদি কোনো সেবা-প্রদানকারী শেষ পর্যন্ত সেবা করতে অক্ষম হয়, অথবা মাঝপথে তার সেবা করার যোগ্যতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে তাকে অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে—এবং তেমনটা ঘটলে, এমনতর ব্যক্তির সাথে পশুদের মতো আচরণ করা হয়, তাদের যুক্তিবুদ্ধিহীন মানুষের মতো করে দেখা হয়। আমি এইভাবে বললে, তবেই তোমরা বুঝতে পারো, তাই নয় কি?

ঈশ্বর কীভাবে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের জীবন-মৃত্যুর চক্র পরিচালনা করেন তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এসব শোনার পর তোমরা কেমন অনুভব করছ? আমি কি আগে এই বিষয়ে আলোচনা করেছি? আমি কি আগে ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের বিষয়ে কথা বলছি? আসলে, বলেছি, কিন্তু তোমাদের মনে নেই। ঈশ্বর তাঁর মনোনীত লোক এবং সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ। সব ক্ষেত্রেই তিনি ধার্মিক। তুমি কি এর মধ্যে কোনো ভুল দেখেছ? “ঈশ্বর কেন তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের প্রতি এত সহিষ্ণু? কেনই বা সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি তিনি এত সামান্য সহনশীল”, এমনটা বলার মত লোক কি নেই? কেউ কি সেবা-প্রদানকারী হতে রাজী আছো? “ঈশ্বর কি সেবা-প্রদানকারীদের আরও একটু সময় দিতে পারেন, এবং আর একটু সহিষ্ণু এবং ধৈর্যশীল হতে পারেন?” এই ধরনের প্রশ্ন করা কি ঠিক? (না, ঠিক নয়।) আর কেন নয়? (কারণ তাদের সেবা-প্রদানকারী পদ প্রদান করার মাধ্যমে আসলে তাদের প্রতি ইতিমধ্যে আনুকূল্য দেখানো হয়েছে।) সেবা-প্রদানের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমেই সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি আনুকূল্য দেখানো হয়েছে! “সেবা-প্রদানকারী” উপাধি ব্যতীত, তাদের করা কাজ ব্যতীত, এই লোকেরা কোথায়ই বা যাবে? তারা অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, পশুপালের সাথেই বাঁচবে এবং মারা যাবে। ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে পেরে এবং ঈশ্বরের গৃহে আসার অনুমতি পেয়ে তারা বর্তমানে কত মহান অনুগ্রহই না উপভোগ করছে! এটা সত্যিই অসাধারণ একটা অনুগ্রহ! যদি ঈশ্বর তোমাকে সেবা করার সুযোগ না দিতেন, তবে তুমি কখনই তাঁর সামনে আসার সুযোগ পেতে না। অন্তত বলা যায়, তুমি যদি একজন ফলাফল অর্জন করা বৌদ্ধ হও, তবে আধ্যাত্মিক জগতে বড়জোর একজন ছোটাছুটি করার কর্মীই হতে পারো; তুমি কখনই ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে পারবে না, তাঁর কণ্ঠস্বর বা তাঁর বাক্য শুনতে পাবে না, অথবা তাঁর ভালবাসা ও আশীর্বাদ অনুভব করতে পারবে না, কখনও তাঁর মুখোমুখি হতে পারবে না। বৌদ্ধরা বড়জোর সহজ কিছু কর্মভার অর্জন করতে পারে। তাদের পক্ষে ঈশ্বরকে চেনার সম্ভাবনা কম, এবং তারা নিছক আদেশ মেনে চলে এবং মান্য করে, পক্ষান্তরে সেবা-প্রদানকারীরা কাজের এই পর্যায়ে কত কিছুই না লাভ করে! প্রথমত, তারা ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে, তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে, তাঁর বাক্য শুনতে, এবং মানুষের উপর তিনি যে অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ প্রদান করেন তা অনুভব করতে সক্ষম। তদুপরি, তারা ঈশ্বরের বর্ষিত বাক্য ও সত্য উপভোগ করতে সক্ষম। সেবা-প্রদানকারীরা প্রকৃতপক্ষেই কত অর্জন করে! এইভাবে, একজন সেবা-প্রদানকারী হিসাবে, তুমি যদি যথাযথ সচেষ্ট না হতে পারো, তাহলে ঈশ্বর কি এখনও তোমাদের রেখে দেবেন? তিনি তোমায় রাখতে পারেন না। তিনি তোমার থেকে বেশি কিছু চান না, তবুও তুমি তাঁর কাঙ্ক্ষিত কাজ যথাযথভাবে করো না; তুমি তোমার কাজ ঠিক করে পালন করো না। এইভাবে, নিঃসন্দেহে ঈশ্বর তোমাদের রাখতে পারেন না। ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণ স্বভাব এমনই। ঈশ্বর তোমার ওপর অতিরিক্ত অধিকার ফলান না, আবার তোমার প্রতি বৈষম্যও করেন না৷ এই সকল নীতির মাধ্যমেই ঈশ্বর কাজ করেন৷ ঈশ্বর এই পদ্ধতিতেই সমস্ত মানুষ এবং জীবের সাথে আচরণ করেন।

আধ্যাত্মিক জগতের ক্ষেত্রে, সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন সত্তা যদি কিছু ভুল করে অথবা নিজের কাজ ঠিক করে পালন না করে, তখনও ঈশ্বর তাদের সাথে বোঝাপড়া করে নেওয়ার জন্য যথোপযুক্ত স্বর্গীয় আদেশ এবং ফরমানসমূহ জারি করেন; এটা পরম সত্য। অতএব, ঈশ্বরের হাজার হাজার বছর ধরে চলা পরিচালনামূলক কার্যের সময়ে, মন্দ কাজ করা কোনও কোনও দায়িত্ব-পালনকারীদের নির্মূল করা হয়, আবার কাউকে—এই সময়েও—আটক করা ও দণ্ড প্রদান করা হয়। আধ্যাত্মিক জগতে প্রতিটি সত্তার জন্যই এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। তারা যদি মন্দ বা ভুল কাজ করে, তাহলে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়—আর ঈশ্বর তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের প্রতিও ঠিক এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেন। এইভাবে, বস্তুজগত এবং আধ্যাত্মিক জগত, উভয়ের ক্ষেত্রেই, ঈশ্বরের কাজের নীতি অপরিবর্তিত থাকে। তুমি ঈশ্বরের কাজ প্রত্যক্ষ করো বা না করো, সেগুলির নীতিসমূহ অপরিবর্তনীয়। তাঁর সকল বিষয়ে অভিগম্যতার এবং সমস্ত বস্তু পরিচালনার ক্ষেত্রেই, ঈশ্বর অভিন্ন নীতিসমূহ অনুসরণ করেন। এমনটা অপরিবর্তনীয়। যে সমস্ত অবিশ্বাসীরা তুলনামূলকভাবে যথার্থ জীবনযাপন করে, ঈশ্বর তাদের প্রতি সদয় থাকেন, এবং প্রত্যেক ধর্মের মধ্যেই যারা সদাচরণ করে, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে, ঈশ্বর তাদের জন্য সুযোগের ব্যবস্থা করে রাখেন, তিনি তাঁর পরিচালিত সমস্ত কাজে তাদের ভূমিকা পালনের অনুমতি দেন এবং তাদের করণীয় কাজ করতে দেন। অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের অনুগামী এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে, কারোর প্রতিই ঈশ্বর কোনোরকম বৈষম্য করেন না, তিনি তাঁর নীতিগুলির অনুবর্তী থাকেন। যারা তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করতে পারে, তাদের প্রত্যেকের প্রতি তিনি সদয়, এবং যারা তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করে, তাদের প্রত্যেককে তিনি ভালোবাসেন। তবে, বিষয়টা হল এমন, যে, এই বিভিন্ন ধরণের মানুষদের জন্য—অবিশ্বাসী, বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের লোক এবং ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের জন্য—তিনি যা প্রদান করেন, তা সকলের ক্ষেত্রে এক হয় না। উদাহরণস্বরূপ, অবিশ্বাসীদের কথাই ধরো: যদিও তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, ঈশ্বর তাদের পশু হিসাবেই দেখেন, সমস্ত কিছুর মধ্যে তাদের প্রত্যেকের ভোজনের নিমিত্ত আহার, নিজস্ব বাসস্থান রয়েছে, রয়েছে জীবন ও মৃত্যুর স্বাভাবিক চক্র। যারা মন্দ কাজ করে তারা দণ্ড ভোগ করে, এবং যারা সৎকর্ম করে তারা আশীর্বাদধন্য হয় ও ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করে। বিষয়টা কি এমনতরই নয়? ধর্মবিশ্বাসী লোকদের ক্ষেত্রে, যদি তারা বারংবার পুনর্জন্ম লাভের মাধ্যমে নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলতে সক্ষম হয়, তবে সেই সমস্ত পুনর্জন্মের পরে, ঈশ্বর শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর কর্তৃত্ব ঘোষণা করবেন। একইভাবে, বর্তমানে তোমাদের ক্ষেত্রেও, তুমি ঈশ্বরের মনোনীত লোক বা সেবা-প্রদানকারী যেই হও না কেন, ঈশ্বর তোমাকেও একইভাবে সুসঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবেন, এবং তাঁর নির্ধারিত বিধান ও প্রশাসনিক ফরমানসমূহ অনুসারে তোমার ফলাফল নির্ধারণ করবেন। এই বিভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে, যারা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী হয়—তাদের বসবাসের জন্য কি ঈশ্বর স্থান প্রদান করেন? ইহুদিরা কোথায়? ঈশ্বর কি তাদের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করেছেন? না, তিনি করেন নি। আর খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে কী বলবে? তাদের উপরও তিনি কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন নি। তিনি তাদের স্ব-স্ব পদ্ধতি মেনে চলার অনুমতি দেন, তিনি তাদেরকে কিছু বলেন না বা তাদের কোনোভাবে আলোকিত করেন না, এবং তদুপরি, তিনি তাদের কাছে কিছু প্রকাশও করেন না। তুমি যদি এটাকে ঠিক বলে মনে করো, তাহলে এইভাবে বিশ্বাস করতে পারো। ক্যাথলিকরা মরিয়মের ওপর বিশ্বাস করে, আর তার মাধ্যমেই যীশুর কাছে তারা খবর পাঠায়; তাদের বিশ্বাসের ধরন এমনই। ঈশ্বর কি তাদের বিশ্বাস কখনো সংশোধন করেছেন? তিনি তাদের স্বতন্ত্র পরিসর প্রদান করেন; তাদের প্রতি কোনোরকম মনোযোগ নি দিয়ে তাদের বসবাসের উদ্দেশ্যে একটা নির্দিষ্ট স্থান প্রদান করেছেন। মুসলিম ও বৌদ্ধদের ক্ষেত্রেও কি তিনি তাই করেন না? তাদের সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করেই তিনি তাদের জন্যও সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাদের জন্যও বসবাসের স্থান অনুমোদন করেছেন। এই সবই যথাযথ ক্রমে রয়েছে। আর তোমরা এই সব কিছুর মধ্যে কী প্রত্যক্ষ করলে? দেখলে যে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধিকার রয়েছে, কিন্তু তিনি তা অসদ্ব্যবহার করেন না। ঈশ্বর সব কিছুই নিখুঁত ক্রমে সাজিয়ে রাখেন এবং সুসংবদ্ধভাবে তা সম্পন্ন করেন, আর এর মধ্যেই তাঁর প্রজ্ঞা এবং সর্বশক্তিমত্তা লুকিয়ে রয়েছে।

আজ আমরা একটা নতুন ও বিশেষ বিষয় স্পর্শ করেছি, যা আধ্যাত্মিক জগতের বিষয় আশয়ের সাথে জড়িত, যা সেই জগতে ঈশ্বরের পরিচালনা এবং রাজত্বের একটা দিক তুলে ধরছে। এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করার আগে, তোমরা হয়ত বলে থাকবে “এর সাথে যুক্ত সমস্ত জিনিসই রহস্যময় এবং তা আমাদের জীবনে প্রবেশের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়; এই সমস্ত বিষয় মানুষের প্রকৃত বসবাসের উপায়ান্তরের থেকে বিচ্ছিন্ন, এবং সেগুলি আমাদের বোঝারও দরকার নেই, এমনকি আমরা সেগুলি শোনারও ইচ্ছা রাখি না। ঈশ্বরকে জানার সঙ্গে এগুলির একেবারেই কোনো সংযোগ নেই।” এখন, তোমরা কি ভাবো যে এইরকম চিন্তাভাবনায় কোনো ত্রুটি রয়েছে? তা কি ঠিক? (না।) এই ধরনের চিন্তা সঠিক নয় এবং এতে গুরুতর সমস্যা আছে। এর কারণ হল, কীভাবে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর ওপর কর্তৃত্ব করেন তা তুমি বুঝতে চাইলেও তা তুমি একেবারেই বুঝতে পারবে না, তুমি শুধু যা কিছু দেখ এবং তোমার চিন্তাভাবনার মাধ্যমে যা কিছু উপলব্ধি করতে পারে, সেটুকুই অনুধাবনে সক্ষম; তোমাকে অবশ্যই অন্য জগতের বিষয়ে কিছুটা উপলব্ধি করতে হবে, যে জগত আপাতদৃষ্টিতে অদৃশ্য হলেও, দৃশ্যমান ইহলোকের সাথে তা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। এটা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়, এবং এটা "সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর", এই বিষয়ের সাথে যুক্ত। সেবিষয়ে এটাই হল তথ্য। এই তথ্যের অভাবে, কীভাবে সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর তা নিয়ে মানুষের জ্ঞানের ত্রুটি এবং ঘাটতি থেকে যাবে। এইভাবে, আমরা আজকে যা বলেছি, বলা যেতে পারে যে তা আমাদের পূর্ববর্তী বিষয়গুলির সংক্ষিপ্তসার, সেইসাথে, তা "সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর" বিষয়বস্তুটিরও উপসংহার প্রদান করে। এমনটা উপলব্ধি করার পর, তোমরা কি এখন এই বিষয়বস্তুর মাধ্যমে ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম? আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, আজ আমি তোমাদের সেবা-প্রদানকারীদের সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছি। আমি জানি যে তোমরা এই ধরনের বিষয় সম্পর্কিত আলোচনা সত্যিই উপভোগ করো, এবং এই বিষয়গুলির প্রতি তোমরা সত্যিই মনযোগী৷ তাহলে আজকে আমি যা বলেছি তাতে কি তোমরা কি সন্তুষ্ট? (হ্যাঁ, সন্তুষ্ট।) অন্যান্য কিছু বিষয় তোমাদের উপর হয়ত খুব একটা শক্তিশালী প্রভাব ফেলেনি, কিন্তু সেবা-প্রদানকারীদের সম্পর্কে আমি যা কিছু বলেছি, তার সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ প্রভাব রয়েছে, করণ এই বিষয়টা তোমাদের প্রত্যেকের আত্মাকে স্পর্শ করে।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১০

পূর্ববর্তী: কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন: বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের জীবন-মৃত্যুর চক্র

পরবর্তী: মানুষের সঙ্গে এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করতে ঈশ্বর তাঁর বাক্যরাজির ব্যবহার করলেন

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

শয়তানকে দেখে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্গুনসম্পন্ন মনে হলেও, শয়তানের সারসত্য নিষ্ঠুর ও অশুভ

মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তার সুনাম নির্মাণ করে, এবং নিজেকে প্রায়শই ন্যায়পরায়ণতার একজন পুরোধা তথা আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন