অব্রাহামকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
আদিপুস্তক ২২:১৬-১৮ যিহোবা বললেন, তুমি যেহেতু এমন কাজ করেছ, তোমার একমাত্র পুত্রকে উৎসর্গ করতেও অস্বীকার করোনি, তাই আমি আমার নিজের নামে শপথ করেছি: আমি নিশ্চয়ই তোমাকে প্রচুর বর দান করব। আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমুদ্রতটের বালুকারাশির মত আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব। তোমার বংশধরেরা শত্রুদের পুরী অধিকার করবে। আর তোমার বংশজদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদলাভ করবে। আমি তোমার জন্য এসব করব কারণ তুমি আমার আদেশ মান্য করেছ।
এটা অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। সংক্ষিপ্ত হলেও এর বিষয়বস্তু বেশ সমৃদ্ধ: এর মধ্যে অব্রাহামকে ঈশ্বরের উপহার দেওয়ার কারণ, পটভূমি এবং তিনি অব্রাহামকে কী দিয়েছিলেন, তার উল্লেখ রয়েছে। ঈশ্বর যে আনন্দ ও উত্তেজনার সাথে এই বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছিলেন, ও সেইসাথে যারা তাঁর বাক্য শুনতে সক্ষম তাদের অর্জন করার জন্য ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষার তাগিদও এতে অনুভূত হয়। যারা ঈশ্বরের বাক্য মান্য করে চলে ও তাঁর আদেশ অনুসরণ করে, এমন মানুষের প্রতি ঈশ্বরের স্নেহ ও কোমলতা আমরা এর মধ্যে দেখতে পাই। একইভাবে, তিনি মানুষকে অর্জন করার জন্য যে মূল্য প্রদান করেন, এবং তাদের অর্জন করার জন্য তিনি যে যত্ন এবং চিন্তাভাবনা করেন, সেটাও আমরা এতে দেখতে পাই। এছাড়াও, “আমি আমার নিজের নামে শপথ করেছি,” এই বাক্যগুলো যে অনুচ্ছেদে আছে, তা আমাদের এ বিষয়েও জোরালো ধারণা দেয় যে ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার এই কাজের নেপথ্যে ঈশ্বর, এবং ঈশ্বর একাই, কী পরিমাণ তিক্ততা ও যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। এটা বেশ চিন্তাকে জাগিয়ে তোলার মতো অনুচ্ছেদ, এবং পরবর্তীকালে যারা এসেছিল তাদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, এবং তাদের উপরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।
মানুষ তার আন্তরিকতা ও আনুগত্যের কারণেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে
অব্রাহামকে দেওয়া ঈশ্বরের যে আশীর্বাদের কথা আমরা এখানে পড়লাম, তা কি সুবিশাল কোনো আশীর্বাদ ছিল? সেটা ঠিক কতটা বিশাল ছিল? এখানে একটা মূল বাক্য রয়েছে: “আর তোমার বংশজদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদলাভ করবে।” এই বাক্য থেকেই বোঝা যায়, অব্রাহাম যে আশীর্বাদ লাভ করেছিল তা অতীত বা ভবিষ্যতের কাউকেই কখনো দেওয়া হয়নি। যখন ঈশ্বরের আদেশে অব্রাহাম তার নিজের একমাত্র পুত্র—তার আদরের একমাত্র পুত্রসন্তানকে ঈশ্বরের কাছে প্রত্যর্পণ করেছিল (মনে রাখবে, আমরা “উৎসর্গ” শব্দটা ব্যবহার করব না, বরং বলব সে ঈশ্বরের কাছে তার পুত্রকে প্রত্যর্পণ করেছিল), তখন ঈশ্বর যে শুধু অব্রাহামকে ইসহাকের বলি দিতে দেননি তা নয়, তিনি তাকে আশীর্বাদও করেছিলেন। তিনি অব্রাহামকে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন? তিনি তার বংশধরের সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। এবং কোন হারে সেই বৃদ্ধি হবে? শাস্ত্রবাক্য অনুসারে নিম্নলিখিত বিবরণ পাওয়া যায়: “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব। তোমার বংশধরেরা শত্রুদের পুরী অধিকার করবে। আর তোমার বংশজদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদলাভ করবে।” কোন প্রসঙ্গে ঈশ্বর এই বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন? অর্থাৎ, অব্রাহাম কীভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করেছিল? এই শাস্ত্রবাক্যে ঈশ্বর ঠিক যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই সে এগুলো লাভ করেছিল: “কারণ তুমি আমার আদেশ মান্য করেছ।” অর্থাৎ, যেহেতু অব্রাহাম ঈশ্বরের আদেশ অনুসরণ করেছিল, যেহেতু ঈশ্বর যা বলেছিলেন ও আদেশ করেছিলেন সেই সমস্তকিছু সে সামান্যতম অভিযোগ না করেই পালন করেছিল, তাই ঈশ্বর তাঁকে এইরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতির একটা গুরুত্বপূর্ণ বাক্য সেই সময় ঈশ্বরের চিন্তাকে স্পর্শ করেছিল। তোমরা কি সেটা দেখতে পেয়েছ? “আমি আমার নিজের নামে শপথ করেছি,” ঈশ্বরের এই বাক্যের প্রতি তোমরা হয়ত খুব বেশি মনোযোগ দাওনি। এই বাক্যের অর্থ, এই বাক্য উচ্চারণের সময় ঈশ্বর নিজের নামে শপথ নিচ্ছিলেন। শপথ নেওয়ার সময় মানুষ কার নামে শপথ নেয়? তারা স্বর্গের নামে শপথ নেয়, অর্থাৎ বলা যায় যে তারা ঈশ্বরের কাছে ও ঈশ্বরের নামে শপথ নেয়। ঈশ্বর নিজের নামে শপথ নিচ্ছেন, এই ঘটনার খুব বেশি উপলব্ধি লোকজনের মধ্যে হয়ত নেই, কিন্তু আমি সঠিক ব্যাখ্যা দিলে তোমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারবে। ঈশ্বরের বাক্য শুধুমাত্র শুনতে পায় কিন্তু তাঁর হৃদয় উপলব্ধি করতে পারে না, এমন একজন ব্যক্তির সম্মুখীন হয়ে ঈশ্বর আরো একবার একাকী ও বিহ্বল অনুভব করেছিলেন। হতাশায়—এবং, বলা যেতে পারে, অবচেতনভাবে—ঈশ্বর খুব স্বাভাবিক কাজই করেছিলেন: অব্রাহামকে প্রতিশ্রুতি প্রদানের সময় ঈশ্বর নিজের হৃদয়ে হাত রেখে নিজেকে সম্বোধন করেছিলেন, এবং মানুষ তখন ঈশ্বরের কাছ থেকে এই বাক্য শুনতে পেয়েছিল, “আমি আমার নিজের নামে শপথ করেছি।” ঈশ্বরের কাজের মাধ্যমে তুমি নিজের কথা ভাবতে পারো। যখন তুমি নিজের হৃদয়ে হাত রেখে নিজের সাথে কথা বলো, তুমি কী বলছ সে বিষয়ে কি তোমার স্পষ্ট ধারণা থাকে? তোমার আচরণ কি আন্তরিক থাকে? তুমি কি অকপটে, মন থেকে, কথা বলো? এইভাবে, আমরা এখানে দেখতে পাই যে, অব্রাহামের সাথে কথা বলার সময় ঈশ্বর ছিলেন স্থিরসংকল্প এবং আন্তরিক। অব্রাহামের সাথে কথা বলার সময় এবং আশীর্বাদ প্রদানের সময়, ঈশ্বর নিজের সাথেও কথা বলছিলেন। তিনি নিজেকে বলছিলেন: আমি অব্রাহামকে আশীর্বাদ করব, এবং তার বংশধরদেরকে আকাশের তারার মতো অসংখ্য এবং সমুদ্রের তীরে বালির মতো প্রচুর করে তুলব, কারণ সে আমার কথা মান্য করেছে এবং সে-ই আমার নির্বাচিত ব্যক্তি। ঈশ্বর যখন বললেন “আমি আমার নিজের নামে শপথ করেছি,” তখন তিনি সংকল্প করেছিলেন যে অব্রাহামের মাধ্যমেই তিনি ইসরায়েলের নির্বাচিত ব্যক্তিদের তৈরি করবেন, যার পরে তিনি তাঁর কাজের গতির সাথে সাথে এই ব্যক্তিদের নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। অর্থাৎ, অব্রাহামের বংশধরদের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থাপনার কাজ নির্বাহ করাবেন, এবং ঈশ্বরের কাজ এবং যা তিনি অভিব্যক্ত করেছেন তার সূচনা হবে অব্রাহামের মধ্যে দিয়ে এবং তা চালিত হবে অব্রাহামের বংশধরদের মধ্যে, এইভাবেই মানুষকে উদ্ধারের ঈশ্বরের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবে। এটা আশীর্বাদ কি না, তোমাদের কী অভিমত? মানুষের কাছে এটার থেকে বড় আশীর্বাদ আর কিছু নেই; বলা যায় যে এটাই সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। অব্রাহামের অর্জিত আশীর্বাদটি তার বংশধরের সংখ্যাবৃদ্ধি নয়, বরং তা হচ্ছে ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা, ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব এবং অব্রাহামের বংশধরদের মধ্যে তাঁর কাজ—ঈশ্বরের এই সবকিছুর সম্পাদন। এর অর্থ হল, অব্রাহামের দ্বারা অর্জিত আশীর্বাদ ক্ষণস্থায়ী ছিল না, বরং তা ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথেই অগ্রসর হয়েছিল। যখন ঈশ্বর কথা বলেছিলেন, যখন নিজের নামে শপথ নিয়েছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই তিনি একটা সংকল্প তৈরি করে নিয়েছিলেন। এই সঙ্কল্পের প্রক্রিয়া কি প্রকৃত ছিল? তা কি বাস্তবিক ছিল? ঈশ্বর সংকল্প নিয়েছিলেন যে এর পর থেকে তাঁর প্রচেষ্টা, তাঁর প্রদত্ত মূল্য, তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তাঁর সমস্তকিছু, এমনকি তাঁর জীবন, অব্রাহাম ও তার বংশধরদের প্রদান করা হবে। একইভাবে ঈশ্বর এটাও সংকল্প নিয়েছিলেন যে এই একদল মানুষের মধ্যে দিয়ে শুরু করে, তিনি তাঁর কর্ম প্রকাশিত করবেন, তাঁর প্রজ্ঞা, কর্তৃত্ব, ও ক্ষমতা মানুষকে প্রত্যক্ষ করতে দেবেন।
যারা ঈশ্বরকে জানে ও তাঁর সাক্ষ্য দিতে পারে, তাদের অর্জন করাই ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় অভিপ্রায়
নিজের সাথে কথা বলার সময়ই ঈশ্বর অব্রাহামের সাথেও কথা বলেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত আশীর্বাদের কথা শোনা ছাড়াও, অব্রাহাম কি ঈশ্বরের সমস্ত বাক্যের মধ্যে নিহিত থাকা প্রকৃত ইচ্ছা সেই মুহূর্তে উপলব্ধি করতে পেরেছিল? না সে পারে নি! তাই সেই মুহূর্তে, ঈশ্বর যখন নিজের নামে শপথ নিচ্ছিলেন, ঈশ্বরের অন্তর তখনও ছিল একাকী ও দুঃখিত। তখনও তাঁর অভিপ্রায় ও পরিকল্পনা উপলব্ধি করতে বা বুঝতে পারার মতো একজন ব্যক্তিও ছিল না। সেই মুহূর্তে, অব্রাহাম সমেত একজনও তাঁর সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়নি, আর তাঁর অবশ্যকরণীয় কাজে তাঁর সহযোগিতা করতে পারে এমন ব্যক্তি তো একেবারেই ছিল না। আপাতভাবে, ঈশ্বর অব্রাহামকে অর্জন করেছিলেন, যে ছিল এমন একজন যে তাঁর বাক্য মান্য করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এই ব্যক্তির ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান ছিল প্রায় না থাকারই মতো। এমনকি যদিও ঈশ্বর অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও ঈশ্বরের হৃদয় সন্তুষ্ট ছিল না। ঈশ্বর সন্তুষ্ট ছিলেন না, একথার অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে যে ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা সবেমাত্র শুরু হয়েছিল, এর অর্থ হল, তিনি যে মানুষদের অর্জন করতে চেয়েছেন, যাদের দেখার আকাঙ্ক্ষা করেছেন, যাদের ভালোবেসেছেন, তারা তখনও তাঁর থেকে অনেক দূরে ছিল; তাঁর প্রয়োজন ছিল সময়ের, তাঁর প্রয়োজন ছিল অপেক্ষা করার, তাঁর প্রয়োজন ছিল ধৈর্য্যশীল হওয়ার। কারণ সেই সময়ে স্বয়ং ঈশ্বর ব্যতীত আর কেউই জানত না তাঁর কী প্রয়োজন ছিল, তিনি কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন, অথবা কীসের আকাঙ্ক্ষা করেছেন। সুতরাং, ঈশ্বর বেশ উত্তেজিত বোধ করার পাশাপাশি একইসাথে অন্তরে বেদনাহতও অনুভব করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর পদক্ষেপ থামাননি, তাঁর অবশ্য করণীয় কাজের পরবর্তী ধাপের পরিকল্পনা তিনি চালিয়ে গেছেন।
অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির মধ্যে তোমরা কী দেখতে পাও? ঈশ্বর অব্রাহামের উপর প্রভূত আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন শুধুমাত্র এই কারণে যে সে ঈশ্বরের বাক্য মান্য করেছিল। যদিও আপাতভাবে এটাকে স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়, কিন্তু এর মধ্যে আমরা ঈশ্বরের অন্তর দেখতে পাই: ঈশ্বর তাঁর প্রতি মানুষের আনুগত্যকে বিশেষভাবে মূল্য দেন, এবং তাঁর প্রতি মানুষের উপলব্ধি ও আন্তরিকতাকে লালন করেন। এই আন্তরিকতাকে ঈশ্বর কতটা লালন করেন? তিনি এটা কতখানি লালন করেন তা তোমরা হয়ত বুঝতে পারবে না, এবং হয়ত এমন কেউই নেই যে এটা উপলব্ধি করতে পারে। ঈশ্বর অব্রাহামকে একটা পুত্র সন্তান দিয়েছিলেন, এবং সেই পুত্র বড় হওয়ার পরে ঈশ্বর অব্রাহামকে সেই সন্তান ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অব্রাহাম ঈশ্বরের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করেছিল, সে ঈশ্বরের বাক্য মান্য করেছিল, এবং তাঁর আন্তরিকতা ঈশ্বরকে টলিয়ে দিয়েছিল আর এটাকে ঈশ্বর মূল্যবান হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ঈশ্বর এটাকে কতখানি মূল্যবান মনে করেছিলেন? আর কেনই বা এত মূল্যবান মনে করেছিলেন? এমন একটা সময়ে যখন কেউই ঈশ্বরের বাক্য অনুধাবন করতে পারে নি, তাঁর হৃদয় উপলব্ধি করতে পারে নি, সেই সময় অব্রাহাম এমন কিছু করেছিল যা স্বর্গকে টলিয়ে দিয়েছিল, পৃথিবীতে কম্পন সৃষ্টি করেছিল, আর এটা ঈশ্বরকে সন্তুষ্টির অভূতপূর্ব অনুভূতি দান করেছিল, এবং ঈশ্বরের বাক্য মান্য করতে সক্ষম এমন একজনকে অর্জন করার আনন্দ তাঁকে এনে দিয়েছিল। এই সন্তুষ্টি ও আনন্দ এসেছিল একজন প্রাণীর কাছ থেকে যে ঈশ্বরের নিজের হাতে সৃষ্ট, এবং এটাই ঈশ্বরের কাছে মানুষের অর্পিত প্রথম “বলিদান”, মানুষকে সৃষ্টি করার পর যা ছিল ঈশ্বরের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। ঈশ্বরের পক্ষে এই বলিদানের জন্য অপেক্ষা করা কঠিন ছিল, এবং যাকে তিনি নিজে সৃষ্টি করেছেন, সেই মানুষের কাছ থেকে প্রথম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপহার হিসাবে এই বলিদানকে তিনি বিবেচনা করেছিলেন। এটার মধ্যেই ঈশ্বর তাঁর প্রচেষ্টার ও তাঁর প্রদত্ত মূল্যের প্রথম ফল দেখতে পেয়েছিলেন, এবং এটার ফলেই তিনি মানবজাতির মধ্যে আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, এই ধরনের একদল মানুষের জন্য ঈশ্বর আরো বেশি আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন তাঁকে সঙ্গে দেওয়ার জন্য, তাঁর সাথে আন্তরিক আচরণ করার জন্য, এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর যত্ন করার জন্য। এমনকি ঈশ্বর এমন আশাও করেছিলেন যে অব্রাহাম যেন চিরকাল জীবিত থাকে, কারণ তিনি চেয়েছিলেন অব্রাহামের মতো একটা হৃদয় তাঁকে সঙ্গ দিক, এবং তাঁর ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সাথে থাকুক। ঈশ্বর যেমনই আকাঙ্ক্ষা করুন না কেন, এটা শুধু একটা ইচ্ছা, একটা ধারণাই ছিল—কারণ অব্রাহাম ছিল শুধুই এমন একজন মানুষ যে তাঁকে মান্য করতে সক্ষম, ঈশ্বর সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র উপলব্ধি বা জ্ঞান ছিল না। ঈশ্বর মানুষের থেকে যে মান আশা করেন, অর্থাৎ ঈশ্বরকে জানা, তাঁর সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হওয়া, এবং তাঁর সমমনস্ক হওয়া, সেই মানের থেকে অব্রাহাম ছিল সুদূরে। সুতরাং অব্রাহাম ঈশ্বরের সাথে চলতে পারে নি। অব্রাহাম কর্তৃক ইস্হাকের বলিদানের মধ্যে ঈশ্বর অব্রাহামের আন্তরিকতা ও আজ্ঞাকারিতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, আর দেখেছিলেন যে সে ঈশ্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যদিও ঈশ্বর তার আন্তরিকতা ও আনুগত্য গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু সে তবুও ঈশ্বরের সঙ্গী হওয়ার অনুপযুক্ত ছিল, অযোগ্য ছিল এমন একজন হয়ে উঠতে যে ঈশ্বরকে জানে ও বোঝে, এবং ঈশ্বরের প্রকৃতির বিষয়ে যার যথেষ্ট ধারণা আছে; ঈশ্বরের সাথে সমমনস্ক হয়ে ওঠা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার থেকে সে অনেক দূরে ছিল। সুতরাং অন্তর থেকে ঈশ্বর তখনও একাকী ও উদ্বিগ্ন ছিলেন। ঈশ্বর যত বেশি একাকী এবং উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন, ততই তাঁর প্রয়োজন ছিল তাঁর ব্যবস্থাপনাকে যত দ্রুত সম্ভব চালিয়ে নিয়ে যাওয়া, এবং যত শীঘ্র সম্ভব তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পন্ন করার জন্য ও তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য উপযুক্ত একদল মানুষকে নির্বাচন ও তাদের অর্জন করতে সক্ষম হওয়া। এটাই ছিল ছিল ঈশ্বরের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা, এবং সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে। সূচনালগ্নে মানুষকে সৃষ্টি করার সময় থেকেই, ঈশ্বর একদল বিজেতার আকাঙ্ক্ষা করেছেন, এমন এক দল যারা তাঁর সাথে চলবে এবং তাঁর স্বভাব বুঝতে, জানতে এবং উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। ঈশ্বরের এই ইচ্ছা কখনও পরিবর্তিত হয় নি। তাঁকে এখনও যতই অপেক্ষা করতে হোক, সামনের রাস্তা যতই কঠিন হোক, এবং তাঁর আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য যত দূরেই থাকুক, ঈশ্বর মানুষের প্রতি তাঁর প্রত্যাশা কখনও পরিবর্তন করেননি বা ত্যাগ করেননি। এখন আমি এটা বলার পরে, তোমরা কি ঈশ্বরের ইচ্ছার কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছ? সম্ভবত তোমাদের উপলব্ধি খুব একটা গভীর নয়—তবে তা ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে!
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২