চতুর্থ পর্ব: ঈশ্বর বিভিন্ন মানবপ্রজাতির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করেন

চতুর্থত, ঈশ্বর বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সীমারেখা চিহ্নিত করেছিলেন। পৃথিবীর বুকে শ্বেতাঙ্গ মানুষ, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ, পিঙ্গলবর্ণ মানুষ, ও পীতাভ বর্ণের মানুষ রয়েছে। এগুলি হল মানুষের বিভিন্ন প্রকার। ঈশ্বর এই বিভিন্ন প্রকারের মানুষের জীবনের পরিসরও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার অধীনে মানুষ, নিজেদের অজান্তেই, তাদের বেঁচে থাকার পক্ষে উপযুক্ত পরিবেশে বসবাস করে। কেউ এর বাইরে পা রাখতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, শ্বেতাঙ্গ মানুষদের কথা ধরা যাক। কোন ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে তাদের অধিকাংশ বসবাস করে? অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গ মানুষ বসবাস করে ইউরোপ ও আমেরিকায়। মুখ্যত যে ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা বসবাস করে, তা হল আফ্রিকা। পিঙ্গলাভ মানুষরা মূলত বাস করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার থাইল্যাণ্ড, ভারত, মায়ানমার, ভিয়েৎনাম, ও লাওস প্রভৃতি দেশে। পীতবর্ণের মানুষরা বাস করে প্রধানত এশিয়ার চিন, জাপান, ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে। ঈশ্বর এইসকল বিভিন্ন জনজাতিগুলিকে যথাযথভাবে বণ্টিত করেছেন, যাতে এই বিভিন্ন জনজাতির মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিন্যস্ত হতে পারে। পৃথিবীর এই বিভিন্ন অংশগুলিতে বহুপূর্বেই ঈশ্বর প্রত্যেক ভিন্ন ভিন্ন মনুষ্যজাতির জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। জীবনধারণের সেই পরিবেশগুলিতে ঈশ্বর তাদের জন্য ভিন্ন বর্ণ ও ভিন্ন উপাদান-সমন্বিত মৃত্তিকা সৃজন করেছেন। বাক্যান্তরে, যে উপাদানগুলি শ্বেতাঙ্গ মানুষদের শরীর গঠন করে তা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের দেহগঠনকারী উপাদানসমুদয়ের সাথে অভিন্ন নয়, এবং এই উপাদানসমূহ আবার অন্যান্য জনজাতির মানুষদের দেহগঠনকারী উপাদানগুলির থেকে পৃথক। ঈশ্বর যখন সকলকিছু সৃষ্টি করেন, তখনই তিনি সেই জনজাতির উদ্বর্তন-উপযোগী এক পরিবেশ রচনা করেছিলেন। তিনি এমন করেছিলেন যাতে, সেই জনজাতির মানুষগুলি যখন বংশবিস্তার শুরু করে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। মনুষ্য সৃজনের পূর্বেই ঈশ্বর এই সকলকিছু ভেবে রেখেছিলেন—ইউরোপ ও আমেরিকা তিনি শ্বেতাঙ্গ মানুষদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখবেন যাতে তারা উন্নতিসাধন ও জীবনধারণ করতে পারে। তাহলে, ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করছিলেন, তাঁর তখনই একটি পরিকল্পনা ছিল, স্থলভূমির যেখানে তিনি যা স্থাপন করেছিলেন, এবং সেই স্থানে তিনি যা প্রতিপালন করেছিলেন, তার পিছনে তাঁর একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সেই ভূখণ্ডটিতে কোন কোন পর্বত, কতসংখ্যক সমতলভূমি, জলের কতসংখ্যক উৎস, কী কী ধরনের পশুপাখি ও মাছ, এবং কী কী উদ্ভিদ থাকবে ঈশ্বর অনেক আগেই তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। কোনো এক বিশেষ প্রকারের মানুষের, কোনো বিশেষ জনজাতির জন্য জীবনধারণের পরিবেশ প্রস্তুত করার সময়, ঈশ্বরের নানান বিষয়বস্তুকে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়েছিল: যেমন, ভৌগোলিক পরিবেশ, মৃত্তিকার গঠনতন্ত্র, বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যসমূহের আয়তন, মাছগুলির শরীর-গঠনের উপাদান, জলের গুণগত মানের পার্থক্য, এবং সকল বিবিধ প্রকার উদ্ভিদ…। ঈশ্বর বহুপূর্বেই এই সকলকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। এহেন পরিবেশ হল জীবনধারণের এক পরিমণ্ডল, শ্বেতাঙ্গ মানুষদের উদ্বর্তনের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর যা সৃজন ও প্রস্তুত করেছিলেন, এবং সহজাতভাবেই, যা তাদের অধিকারভুক্ত ছিল। তোমরা কি উপলব্ধি করেছো যে সকলকিছু সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বর সেই বিষয়ে প্রভূত চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করেছিলেন, এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য করেছিলেন। (হ্যাঁ, বিভিন্ন প্রকারের মানুষের জন্য ঈশ্বরের বিবেচনা যে অত্যন্ত সুচিন্তিত ছিল তা আমরা উপলব্ধি করেছি। কারণ বিভিন্ন মনুষ্যগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশ তিনি সৃজন করেছিলেন, সেখানে কী কী প্রকারের পশুপাখি ও মাছ থাকবে, কতগুলি পর্বত ও কতগুলি সমভূমি তিনি প্রস্তুত করবেন, এই সবকিছুই তিনি অত্যন্ত সুচিন্তিত ও নির্ভুলভাবে বিবেচনা করেছিলেন।) শ্বেতাঙ্গ মানুষদের দৃষ্টান্ত ধরা যাক। শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিগণ প্রধানত কী আহার্যসমূহ ভক্ষণ করে? শ্বেতাঙ্গ মানুষজন যে খাদ্য গ্রহণ করে তা এশিয়াবাসী মানুষদের খাদ্যদ্রব্যের থেকে প্রভূতভাবে ভিন্নতর। মাংস, ডিম, দুধ, ও হাঁসমুরগি শ্বেতাঙ্গ মানুষদের প্রত্যহিক খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। রুটি ও ভাতের মতো খাদ্যশস্যকে সাধারণত সম্পূরক খাদ্য হিসাবে তাদের থালার একপাশে রাখা হয়। এমনকি শাকসবজির স্যালাড খাওয়ার সময়েও তার মধ্যে তারা দু-এক টুকরো গরু বা মুরগির ঝলসানো মাংস যোগ করার প্রবণতা দেখায়, এবং এমনকি গম থেকে প্রস্তুত খাদ্য গ্রহণের সময়েও তাদের প্রবণতা থাকে তার সাথে চীজ, ডিম বা মাংস যোগ করার দিকে। অর্থাৎ, গম থেকে প্রস্তুত খাদ্য বা অন্ন মুখ্যত তাদের প্রধান খাদ্যদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়; তারা প্রচুর পরিমাণে মাংস ও চীজ খায়। যে খাবার তারা খায় তাতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব বেশি বলে প্রায়শই তারা হিমশীতল জল পান করে। এই কারণেই শ্বেতাঙ্গ মানুষজন ব্যতিক্রমী রকমের স্বাস্থ্যবান। তাদের জন্য ঈশ্বরের দ্বারা প্রস্তুত জীবিকার উৎস ও জীবনধারণের পরিবেশ এমনই, যা তাদের এহেন জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়, যা অন্যান্য জনজাতির মানুষদের জীবনশৈলীর থেকে স্বতন্ত্র। জীবনযাপনের এমনতর পদ্ধতির মধ্যে ভালো-মন্দের কোনো বিষয় নেই—তা সহজাত, ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত, এবং ঈশ্বরের নির্দেশনা ও বন্দোবস্ত থেকে উদ্ভূত। এই জনজাতির জীবনযাপনের প্রণালী যে এই প্রকার, এবং তাদের জীবিকানির্বাহের উৎস যে এবম্বিধ, তা তাদের জাতিগোষ্ঠীগত কারণেই, এবং তা তাদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর কর্তৃক নির্মিত জীবনধারণের পরিবেশের কারণেও বটে। এমন বলা চলে যে, শ্বেতাঙ্গ মানুষদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর উদ্বর্তনের যে প্রতিবেশ রচনা করেছিলেন, এবং সেই প্রতিবেশ থেকে তারা যে প্রত্যহিক পুষ্টিউপাদান আহরণ করে, তা সমৃদ্ধ মানের ও প্রাচুর্যপূর্ণ।

অন্যান্য জনজাতির জীবনধারণের উদ্দেশ্যেও ঈশ্বর প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃজন করেছিলেন। যেমন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরদের ক্ষেত্রে আছে—কৃষ্ণাঙ্গ মানুষরা কোথায় অবস্থান করে? মূলত তারা মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অধিষ্ঠিত। জীবননির্বাহের সেই প্রকার পরিবেশে, ঈশ্বর তাদের জন্য কী প্রস্তুত করেছিলেন? ক্রান্তীয় বৃষ্টিঅরণ্য, বিবিধ প্রজাতির পশুপাখি, আবার মরুভূমিও রয়েছে, এবং রয়েছে মানুষের পাশাপাশি বসবাসকারী বিবিধ উদ্ভিদসকল। তাদের জলের উৎস আছে, রয়েছে জীবিকা, ও খাদ্যের সংস্থান। তাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কোনো পক্ষপাত ছিল না। তারা যা-ই করে থাকুক না কেন, তাদের জীবনধারণ কখনো প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি হয়নি। তারাও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং পৃথিবীর একাংশে একটি নির্দিষ্ট পরিসর নিজেদের অধিকারে রাখে।

এবার পীতবর্ণের মানুষদের সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক। পীতাভ মানুষরা মূলত পৃথিবীর পূর্বদিকে অধিষ্ঠান করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য কী? পূর্বদিকের অধিকাংশ জমি উর্বর, এবং নানান উপাদান ও খনিজভাণ্ডারে সমৃদ্ধ। অর্থাৎ, ভূমির উপরস্থ ও ভূগর্ভস্থ যাবতীয় সম্পদ অঢেল পরিমাণে রয়েছে। এবং এই গোষ্ঠীর মানুষদের উদ্দেশ্যেও, এই জনজাতির জন্যও ঈশ্বর তাদের উপযোগী অনুরূপ মৃত্তিকা, জলবায়ু, ও বিবিধ ভৌগোলিক পরিবেশ প্রস্তুত করেছিলেন। যদিও এই ভৌগোলিক পরিবেশ ও পাশ্চাত্যের ভৌগোলিক পরিবেশের মধ্যে প্রভূত পার্থক্য বিদ্যমান, তবু ঈশ্বর মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য, জীবিকা ও জীবনধারণের উৎসসমূহও প্রস্তুত করেছিলেন। কেবল, তা প্রতীচ্যের শ্বেতাঙ্গ মানুষদের থেকে স্বতন্ত্র এক জীবনধারণের পরিবেশ। কিন্ত কোন একটি বিষয় নিয়ে তোমাদেরকে আমার বলার প্রয়োজন রয়েছে? প্রাচ্য জনজাতির মানুষের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত অধিক, সেহেতু ঈশ্বর পৃথিবীর এই অংশে অধিকতর পরিমাণে উপাদান সংযোজন করেছিলেন, যেগুলি প্রতীচ্যের তুলনায় ভিন্নতর। এখানে তিনি প্রভূত ও বিচিত্র ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী এবং নানান প্রকার সামগ্রী সুপ্রতুল পরিমাণে সংযুক্ত করেছিলেন। প্রাকৃতিক সম্পদ এখানে সুপ্রচুর; ভূপ্রকৃতিও নানাবিধ ও বৈচিত্র্যময়, প্রাচ্য জনজাতির বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রতিপালন করার পক্ষে পর্যাপ্ত। প্রাচ্যকে যে বিষয়টি প্রতীচ্য থেকে পৃথক করে, তা হল প্রাচ্যের সর্বত্র—দক্ষিণ থেকে উত্তরে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে—জলবায়ু প্রতীচ্য অপেক্ষা উত্তমতর। চারটি ঋতু সুস্পষ্টরূপে স্বতন্ত্র, তাপমাত্রা যথাযথ, প্রকৃতিক সম্পদ প্রাচুর্যপূর্ণ, এবং প্রকৃতিক দৃশ্যাবলী ও ভূমিরূপের প্রকারভেদ প্রতীচ্যের তুলনায় অনেক ভালো। ঈশ্বর এমন কেন করলেন? শ্বেতাঙ্গ মানুষ ও পীতবর্ণের মানুষের মধ্যে ঈশ্বর খুব যুক্তিযুক্ত একটা ভারসাম্য সৃজন করেছিলেন। এই বাক্যের অর্থ কী? এর অর্থ হল, শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিগণের আহারাদি, তাদের ব্যবহার্য উপদানসামগ্রী, এবং তাদের উপভোগের জন্য সরবরাহকৃত দ্রব্যাদি সকল দিক থেকেই পীতবর্ণের মানুষদের উপভোগ্য সামগ্রীগুলির তুলনায় প্রভূত পরিমাণে ভালো। কিন্তু, ঈশ্বর কোনো জনজাতির বিরুদ্ধেই পক্ষপাতদুষ্ট নন। ঈশ্বর পীতবর্ণ মানুষদের জীবনধারণের উদ্দেশ্যে এক সুন্দরতর ও উত্তমতর পরিমণ্ডল প্রদান করেছিলেন। এ-ই হল সেই ভারসাম্য।

কোন ধরনের মানুষের পৃথিবীর কোন অংশে বসবাস করা উচিৎ, তা ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত; মানুষ কি সেই সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে? (না, তারা তা পারে না।) কী বিস্ময়কর ব্যাপার! বিভিন্ন যুগে বা বিশিষ্ট সময়কালে, এমনকি যদি যুদ্ধবিগ্রহ বা বলপূর্বক সীমানালঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে থাকে, সেসকল ঘটনা ঈশ্বর প্রত্যেক মানবগোষ্ঠীর জন্য জীবনধারণের যে পরিবেশ পূর্বনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা কোনোভাবেই বিনষ্ট করতে পারে না। অর্থাৎ, ঈশ্বর এক নির্দিষ্ট প্রকারের মানুষের জন্য পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং তারা ওই সীমানাগুলি অতিক্রম করে যেতে পারে না। এমনকি মানুষের যদি তাদের জন্য নির্ধারিত ভূখণ্ড পরিবর্তন বা প্রসারিত করার কোনো প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেও থাকে, ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া তা অর্জন করা অত্যন্ত দুষ্কর হবে। তাদের পক্ষে সফল হওয়া খুবই কষ্টকর হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, শ্বেতাঙ্গ মানুষেরা তাদের অধিকৃত অঞ্চলের পরিসর প্রসারিত করতে চেয়ে অন্য কিছু রাষ্ট্রকে উপনিবেশে পরিণত করেছিলো। জার্মানরা কিছু দেশে হানা দিয়েছিল, এবং ব্রিটেন একসময় ভারত দখল করেছিল। ফল কী হয়েছিল? অন্তিমে তারা ব্যর্থই হয়েছিল। তাদের এই ব্যর্থতা থেকে আমরা কী বুঝি? ঈশ্বর যা পূর্বনির্ধারিত করেছেন তা ধ্বংসাতীত। তাই, ব্রিটেন যত প্রবল গতিবেগই বিস্তারলাভ করে থাকুক না কেন, পরিশেষে, তা সত্ত্বেও, তাদের ভারতের দ্বারা যে ভূখণ্ড অদ্যবধি অধিকৃত, তা ত্যাগ করে সরে আসতে হয়েছিল। ওই ভূখণ্ডে যারা বসবাস করে তারা এখনো ভারতীয়ই, ব্রিটিশ নয়, কারণ ঈশ্বর তা হতে দিতেন না। ইতিহাস বা রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গবেষকবৃন্দ এই বিষয়ে তত্ত্ব পেশ করেছে। ব্রিটেনের ব্যর্থতার কারণ প্রদান করে তারা বলে, একটি বিশেষ নৃতাত্বিক গোষ্ঠীকে পরাভূত করা যায়নি বলে এমন হতে পারে, বা অন্য কোনো মনুষ্যোচিত কারণেও হয়ে থাকতে পারে…। এসকল প্রকৃত হেতু নয়। প্রকৃত হেতুটি হল ঈশ্বরের কারণে—তিনি এমন হতে দিতেন না! একটি বিশেষ নৃতাত্বিক গোষ্ঠীকে ঈশ্বর একটি বিশেষ ভূখণ্ডে বসবাস করতে দেন এবং তাদের সেখানে প্রতিষ্ঠিত করেন, এবং ঈশ্বর যদি তাদের সেই ভূখণ্ড থেকে অন্যত্র গমনের অনুমোদন না করেন, তাহলে তারা কখনোই অন্যত্র যেতে পারবে না। ঈশ্বর যদি তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করে থাকেন, তাহলে তারা সেই অঞ্চলের ভিতরেই বসবাস করবে। এই নির্ধারিত এলাকাগুলি ছেড়ে মানুষ অন্যত্র পলায়ন করতে বা নিজেদের মুক্ত করতে পারে না। এমনটি নিশ্চিত। সীমানালঙ্ঘনকারীদের শক্তি যতই প্রবল হোক, বা যাদের সীমানা লঙ্ঘন করা হচ্ছে তারা যতই দুর্বল হোক, হানাদারদের সাফল্য পরিশেষে সেই ঈশ্বরই সাব্যস্ত করবেন। তাঁর দ্বারা তা ইতিমধ্যেই পূর্বনির্ধারিত হয়ে রয়েছে, এবং কেউই তা পরিবর্তিত করতে পারে না।

ঈশ্বর বিভিন্ন জনজাতিকে কেমন ভাবে বণ্টিত করেছেন, উপরে তার বিবরণ দেওয়া হল। এই জনজাতিগুলিকে বণ্টিত করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বর কী কার্য সম্পাদন করেছেন? প্রথমত, তিনি বৃহদায়তন ভৌগোলিক পরিবেশ নির্মাণ করেছেন, বিভিন্ন অঞ্চলকে মানুষের জন্য আবণ্টিন করেছেন, পরবর্তীকালে যে অঞ্চলসমূহে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জীবনধারণ করেছে। এমন অবধারিত—তাদের জীবনধারণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট অঞ্চল স্থিরীকৃত। এবং তাদের জীবন, তাদের খাদ্য ও পাণীয়, তাদের জীবিকা—এসমস্তই ঈশ্বর বহুকাল আগে স্থির করে দিয়েছিলেন। আর ঈশ্বর যখন সকলকিছু সৃষ্টি করছিলেন, বিভিন্ন প্রকারের মানুষের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন: রয়েছে মৃত্তিকার বিভিন্ন গঠন, বিভিন্ন জলবায়ু, বিবিধ উদ্ভিদ ও বিবিধ ভৌগোলিক পরিমণ্ডল। বিভিন্ন স্থানে এমনকি ভিন্ন ভিন্ন পশুপাখিও রয়েছে, বিভিন্ন প্রকারের জলরাশিতে রয়েছে সেগুলির নিজস্ব বিশেষ প্রজাতির মৎস্য ও জলজ সামগ্রী। এমনকি পতঙ্গদের প্রকারভেদও ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকা মহাদেশে যে বস্তুগুলি জন্মায় সেগুলি সকলই সুবিশাল, সুউচ্চ এবং অত্যন্ত সুপুষ্ট। পার্বত্য অরণ্যে সকল বনস্পতির শিকড় অতীব অগভীর হওয়া সত্ত্বেও, সেসকল স্থানে বৃক্ষরাজি সুউচ্চ হয়ে মাথা তোলে। একশো মিটার অথবা তার বেশি উচ্চতা অবধিও বেড়ে উঠতে পারে, এশিয়ার জঙ্গলের অধিকাংশ গাছপালা তত লম্বা নয়। উদাহরণস্বরূপ ঘৃতকুমারী গাছটির কথা ধরা যাক। জাপানে এই গাছটি খুব সরু আর খুব পাতলা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সেই ঘৃতকুমারী গাছই আকারে খুব বড়ো। এখানে একটি পার্থক্য রয়েছে। এটি একই নামের একই প্রজাতির গাছ, কিন্তু আমেরিকা মহাদেশে তা সবিশেষরূপে সুবৃহৎ আকৃতি ধারণ করে বেড়ে ওঠে। এই সব বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্যসমূহ মানুষ লক্ষ্য বা উপলব্ধি নাও করে থাকতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর যখন সকলকিছু সৃষ্টি করছিলেন, এই বিষয়গুলিকে তিনি অনুপুঙ্খভাবে চিত্রিত করেছিলেন এবং বিভিন্ন জনজাতির জন্য বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিমণ্ডল, বিভিন্ন ভূমিরূপ, ও বিভিন্ন সজীব বস্তু প্রস্তুত করেছিলেন। এর কারণ হল ঈশ্বর নানান ধরনের মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, এবং তাদের প্রত্যেকের কী প্রয়োজন ও তাদের জীবনশৈলী কেমন, তা তিনি জানেন।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৯

পূর্ববর্তী: তৃতীয় পর্ব: ঈশ্বর মানবজাতিকে লালনের জন্য পরিবেশ ও প্রাণীজগতের সংরক্ষণ করেন

পরবর্তী: ঈশ্বর সকলের উপর শাসন করেন এবং সকলের প্রয়োজন পূরণ করেন, তিনি সকল বস্তুরই ঈশ্বর

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন