ঈশ্বর সকলের উপর শাসন করেন এবং সকলের প্রয়োজন পূরণ করেন, তিনি সকল বস্তুরই ঈশ্বর

এই বিষয়গুলির মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করার পর, তোমাদের কি বোধ হচ্ছে যে আমাদের সদ্য-আলোচিত মুখ্য প্রসঙ্গটির বিষয়ে তোমরা কিছু জ্ঞানলাভ করেছো? তোমাদের কি মনে হচ্ছে, যে তোমরা এটিকে উপলব্ধি করতে শুরু করেছো? আমার মনে হয়, আমি কেন বিস্তৃততর প্রসঙ্গটির অভ্যন্তরে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে মনস্থ করলাম, সেই বিষয়ে এতক্ষণে তোমাদের মোটামুটি একটা ধারণা লাভ করা উচিৎ। বিষয়টা এমনই তো? এর কতটা তোমরা উপলব্ধি করেছিলে সে বিষয়ে হয়তো অল্প কিছু তোমরা বলতে পারো। (সকলকিছুর জন্য ঈশ্বর-নির্ধারিত বিধান দ্বারা সমগ্র মানবজাতি প্রতিপালিত হয়েছে। ঈশ্বর যখন এই নিয়মগুলি নির্ধারণ করছিলেন, বিভিন্ন জনজাতিকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন জীবনশৈলী, ভিন্ন আহার্য বস্তু, এবং ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু ও তাপমাত্রা প্রদান করেছিলেন। এমন করা হয়েছিল যাতে সমগ্র মানবজাতি পৃথিবীর বুকে স্থায়ী বসতি নির্মাণ করে জীবনধারণ করতে পারে। এর থেকে আমি দেখতে পাই, মানবজাতির উদ্বর্তনের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের পরিকল্পনাগুলি খুবই যথাযথ, এবং তাঁর প্রজ্ঞা ও ত্রুটিহীনতা, এবং মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসাও পরিলক্ষিত হয়।) (ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত বিধান ও পরিসরসমূহ কোনো মানুষ, ঘটনাবলী বা বস্তুসমূহ দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না। এই সকলকিছুই তাঁর নিয়মের অধীন।) সকলকিছুর বিকাশের জন্য ঈশ্বর-নির্ধারিত বিধানের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে, তার সমস্ত বৈচিত্র সমেত সমগ্র মানবজাতি কি ঈশ্বরের দ্বারা রসদপ্রাপ্ত ও প্রতিপালিত নয়? এই বিধানসমূহ যদি বিনষ্ট হতো, বা ঈশ্বর যদি মানবজাতির জন্য এই বিধানসমূহ প্রবর্তন না করতেন, তাহলে মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী দাঁড়াতো? তাদের জীবনধারণের প্রাথমিক পরিবেশকে হারিয়ে ফেললে, মানুষের খাদ্যের কোনো উৎস থাকতো কি? খাদ্যের উৎস এক সমস্যা হয়ে দেখা দিতেই পারে। মানুষ যদি তাদের খাদ্যের উৎস খুইয়ে ফেলে, অর্থাৎ তারা যদি আহার্য না পায়, তাহলে তারা কতো দিন চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে? সম্ভবত তারা এমনকি এক মাসও টিকবে না, এবং তাদের বেঁচে থাকাটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই, মানুষের উদ্বর্তন, তাদের অস্তিত্ব, বংশবিস্তার ও জীবিকার অনুবর্তনের জন্য ঈশ্বরের সম্পাদিত প্রতিটি কার্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সৃজিত বস্তুসকলের মধ্যে ঈশ্বরের সম্পাদিত প্রতিটি কার্য মানবজাতির জীবনধারণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং তা থেকে অবিচ্ছেদ্য। মানুষের জীবনধারণ যদি সমস্যার সম্মুখীন হয়, তাহলে কি ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকতে পারে? তখনো কি ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কোনো অস্তিত্ব থাকবে? ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা তাঁর দ্বারা প্রতিপালিত মানবজাতির উদ্বর্তনের সাথে সহাবস্থান করে, তাই তাঁর সৃষ্ট সকলকিছুর জন্য ঈশ্বর যে প্রস্তুতিই গ্রহণ করুন না কেন এবং মানুষের জন্য তিনি যা-ই করুন না কেন, এই সকলকিছুই তাঁর কাছে প্রয়োজনীয়, এবং মানবজাতির জীবনধারণের জন্য তা অত্যাবশ্যক। সকল বস্তুর জন্য ঈশ্বর-নির্ধারিত এই বিধানসমূহ থেকে যদি বিচ্যুতি ঘটতো, এই বিধানসমূহ যদি লঙ্ঘিত বা ব্যাহত হতো, সকলকিছু আর অস্তিত্ব অব্যাহত রাখতে পারতো না, মানবজাতির জীবনধারণের পরিবেশ, বা তাদের দৈনন্দিন জীবিকা, বা মানবজাতি স্বীয় উদ্বর্তনও আর বজায় রাখতে পারতো না। এই কারণেই, মানবজাতির পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনাও তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতো।

যাকিছু আমরা আলোচনা করেছি, তার প্রত্যেকটি বিষয়বস্তু, প্রতিটি আধেয়, প্রত্যেক মানুষের জীবনধারণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তোমরা বলতে পারো, “আপনি যা বলছেন তা খুব বড়ো বিষয়, আমরা দেখতে পাই এমন কোনো বিষয় নয়,” এবং হয়তো এমন কথা বলার মতো মানুষও আছে যে, “আপনি যে বিষয়ে কথা বলছেন তার সাথে আমার কোনো যোগ নেই”। কিন্তু, এ কথা ভুলো না যে তুমি কেবল সকলকিছুর একটা অংশ হিসাবেই জীবনধারণ করছো; ঈশ্বরের নিয়মের অধীন সৃষ্টির সকল বস্তুর মধ্যে তুমি অন্যতম মাত্র। ঈশ্বর-সৃষ্ট বস্তুগুলিকে তাঁর নিয়ম থেকে বিযুক্ত করা যায় না, এবং কোনো মানুষই তাঁর নিয়ম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। তাঁর নিয়ম ও তাঁর সংস্থানকে খুইয়ে ফেলার অর্থ হল মানুষের জীবন, মানুষের দেহজ প্রাণসত্তা, অন্তর্হিত হয়ে যাবে। এ-ই হল ঈশ্বর দ্বারা মানবজাতির জন্য উদ্বর্তনের উপযোগী পরিবেশ স্থাপনের গুরুত্ব। তুমি যে জনজাতিরই অন্তর্ভুক্ত হও বা যে ভূখণ্ডেই তুমি বাস করো না কেন, তা প্রাচ্যেই হোক কি প্রতীচ্যে—মানবজাতির উদ্দেশ্যে ঈশ্বর যে জীবনধারণের পরিবেশ স্থাপন করেছেন তুমি তার থেকে নিজেকে বিযুক্ত করতে পারো না, এবং সেই পরিবেশের প্রতিপালন ও সংস্থান থেকেও তুমি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারো না। তোমার জীবিকা যা-ই হোক, বেঁচে থাকার জন্য যার উপরেই তুমি নির্ভর করো, এবং তোমার লৌকিক জীবনকে অব্যাহত রাখার জন্য যার উপরেই তুমি ভরসা করো না কেন, নিজেকে তুমি ঈশ্বরের নিয়ম ও ব্যবস্থাপনা থেকে পৃথক করতে পারবে না। কিছু লোক বলে: “আমি কৃষক নই; জীবিকার জন্য আমি ফসল বপন করি না। আমার খাদ্যের জন্য আমি স্বর্গের উপর নির্ভর করি না, তাই আমার উব্দর্তন ঈশ্বরের দ্বারা স্থাপিত জীবনধারণের পরিবেশের মধ্যে সংঘটিত হচ্ছে না। ঐ ধরনের পরিবেশ থেকে আমাকে কিছুই প্রদান করা হয়নি”। কথাটি কি সঠিক? তুমি বলছো, তোমার জীবিকার জন্য তুমি ফসল রোপন করো না, কিন্তু তুমি কি খাদ্যশস্য আহার করো না? তুমি কি মাংস আর ডিম খাও না? আর তুমি কি শাকসবজি ও ফল ভক্ষণ করো না? তুমি যা ভোজন করো, যা তোমার প্রয়োজন—সেই সকলকিছুই মানবজাতির জীবনধারণের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর-স্থাপিত পরিবেশের থেকে অবিচ্ছেদ্য। এবং মানুষের প্রয়োজনীয় সকলকিছুর উৎসকেও ঈশ্বর-সৃষ্ট যাবতীয় কিছু, যেগুলি সামগ্রিকভাবে তোমাদের জীবনধারণের পরিবেশসমূহ গঠন করে, সেগুলির থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। যে জল তুমি পান করো, যে পোশাক তুমি পরিধান করো, এবং যে সকল সামগ্রী তুমি ব্যবহার করো—এই সকলকিছুর মধ্যে কোনটিই বা ঈশ্বর-সৃষ্ট বস্তুসকলের মধ্য থেকে প্রাপ্ত নয়? কিছু মানুষ বলে: “কিছু জিনিস আছে যেগুলো ঈশ্বর-সৃষ্ট বস্তুসকল থেকে পাওয়া যায় না। প্লাস্টিক এই ধরনের একটা সামগ্রী। এটি এক রাসায়নিক পদার্থ, মনুষ্য-নির্মিত বস্তু”। কথাটা কি ঠিক? প্লাস্টিক সত্যিই মনুষ্য-নির্মিত, এবং রাসায়নিক বস্তুও বটে, কিন্তু প্লাস্টিকের আদি উপাদানগুলি কোথা থেকে এসেছিল? আদি উপাদানগুলি পাওয়া গিয়েছিল ঈশ্বর-সৃষ্ট পদার্থ থেকে। যে বস্তুসকল তোমরা দেখো ও উপভোগ করো, তোমাদের ব্যবহৃত প্রতিটি সামগ্রী, এই সকলই ঈশ্বর-সৃষ্ট দ্রবাদি থেকে লভ্য। অর্থাৎ, একজন মানুষ যে জনজাতিরই অন্তর্ভুক্ত হোক, তার জীবিকা যা-ই হোক, অথবা জীবনধারণের যে ধরনের পরিবেশেই সে বসবাস করুক না কেন, ঈশ্বর যা সংস্থান করেছেন তার থেকে সে নিজেকে বিযুক্ত করতে পারে না। তাহলে আমাদের আজকের আলোচিত বিষয়গুলি কি “সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর” প্রসঙ্গটির সঙ্গে সম্পর্কিত? আমাদের আজকের আলোচিত বিষয়গুলি কি এই বৃহত্তর প্রসঙ্গটির মধ্যে পড়ে? (হ্যাঁ, পড়ে।) আমি আজ যে সকল বিষয়ে বাক্যালাপ করেছি, তার মধ্যে কিছু কিছু প্রসঙ্গ হয়তো কিছুটা বিমূর্ত এবং আলোচনার পক্ষে দুরূহ। যাই হোক, আমার মনে হয়, এখন সম্ভবত তোমাদের এই বিষয়ে স্পষ্টতর উপলব্ধি হয়েছে।

শেষ কয়েকবারের সহকারিতায় আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তুর পরিসর বেশ বিস্তৃত ছিল, তাই সমগ্র আলোচনাটা অন্তরঙ্গম করতে তোমাদের কিছু প্রচেষ্টা প্রয়োগ করতে হয়েছে। এর কারণ হল, মানুষের ঈশ্বর-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এই প্রসঙ্গগুলি আগে কখনো আলোচনা করা হয়নি। কিছু মানুষ এই বিষয়গুলিকে একটা রহস্য হিসাবে শ্রবণ করে, এবং কিছু মানুষ তা শ্রবণ করে এক আখ্যান-কাহিনী হিসাবে—কোন পরিপ্রেক্ষিতটি যথার্থ? কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তোমরা এইসব বিষয়কে শ্রবণ করো? (তাঁর সৃষ্টির সকলকিছুকে ঈশ্বর কতটা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বিন্যস্ত করেছেন তা আমরা দেখেছি, দেখেছি সকলকিছুর সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, এবং এই বাক্যগুলির মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের ক্রিয়াকর্ম ও মানবজাতির পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে তাঁর সুনিপুণ বন্দোবস্ত আরো বেশি করে উপলব্ধি করতে পারি।) ঈশ্বর কর্তৃক সকলকিছুর ব্যবস্থাপনার পরিসর যে কতদূর প্রসারিত এইসকল আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তা কি তোমরা লক্ষ্য করেছো? (সমগ্র মানবজাতির উপর, সকল বস্তুর উপর প্রসারিত।) ঈশ্বর কি কেবল একটি জনজাতির ঈশ্বর? তিনি কি কোনো এক প্রকারের মানুষের ঈশ্বর? তিনি কি কেবল মানবজাতির একটি ক্ষুদ্র অংশের ঈশ্বর? (না, তিনি তা নন।) যেহেতু বিষয়টি বাস্তবে তা নয়, তাই তোমার ঈশ্বর-জ্ঞান অনুসারে তিনি যদি মানবজাতির কেবল একটা ক্ষুদ্র অংশের ঈশ্বর হন, বা তিনি যদি শুধু তোমাদের একার ঈশ্বর হন, তাহলে কি সেই দৃষ্টিকোণকে যথাযথ বলা যায়? ঈশ্বর যেহেতু সকলকিছু পরিচালিত করেন এবং সকলকিছুর উপর কর্তৃত্ব করেন, তাই সকলকিছুর উপর তাঁর এই আধিপত্যের মধ্য দিয়ে তাঁর যে কার্যকলাপ, প্রজ্ঞা ও সর্বশক্তিমানতা প্রকাশিত হয়, মানুষের তা প্রত্যক্ষ করা উচিৎ। এটি হল এমন এক বিষয়, যা মানুষকে জানতেই হবে। তুমি যদি বলো যে ঈশ্বর সকলকিছু পরিচালনা করেন, সকলকিছুর উপর কর্তৃত্ব করেন, এবং সমগ্র মানবজাতির উপর আধিপত্য করেন, কিন্তু তোমার যদি মানবজাতির উপর তাঁর এই আধিপত্যের বিষয়ে কোনো উপলব্ধি বা কোনো অন্তর্দৃষ্টিই না থাকে, তাহলে তুমি কি সত্যিই মেনে নিতে পারো যে সকলকিছুর উপর তিনি কর্তৃত্ব করেন? মনে মনে তুমি হয়তো ভাবতে পারো, “আমি মেনে নিতে পারি, কারণ আমি প্রত্যক্ষ করি যে আমার জীবন সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত”। কিন্তু ঈশ্বর কি সত্যি এতটাই ক্ষুদ্র? না, তিনি তা নন! ঈশ্বরের পরিত্রাণকে তুমি শুধু তোমার নিজের জন্যে আর তাঁর কার্যকে কেবল তোমার নিজেরই মধ্যে প্রত্যক্ষ করো, এবং কেবলমাত্র এই বিষয়গুলি থেকেই তুমি তাঁর শাসন উপলব্ধি করো। এ হল অতীব ক্ষুদ্র এক পরিসর, এবং তোমার যথার্থ ঈশ্বর-জ্ঞানের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে এর এক ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এছাড়াও তা সকলকিছুর উপর ঈশ্বরের আধিপত্যের বিষয়ে তোমার প্রকৃত জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে তোলে। তোমার জন্য ঈশ্বর যা সংস্থান করেন, এবং তোমার জন্য তাঁর পরিত্রাণের ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যেই তুমি যদি তোমার ঈশ্বর-জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে ফেলো, তাহলে তুমি কখনোই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে না যে তিনি সকলকিছুর উপর কর্তৃত্ব করেন, সকল বস্তুর উপর আধিপত্য বিস্তার করেন, এবং সমগ্র মানবজাতির উপর প্রভুত্ব করেন। এবং এই সমস্তকিছুই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে, তুমি কি প্রকৃতই এই সত্য অনুধাবন করতে পারো, যে, তোমার নিয়তির অধিপতি হলেন ঈশ্বর? না, পারো না। তোমার অন্তরে তুমি কখনো এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে না—তুমি কখনোই উপলব্ধির এই উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারবে না। আমি যা বলছি তোমরা তা বুঝতে পারছো তো? বস্তুত, আমার আলোচিত এই প্রসঙ্গগুলি ঠিক কতটা উপলব্ধি করতে তোমরা সক্ষম, তা আমি জানি, তাহলে আমি এই বিষয়ে বক্তব্য রেখে চলেছি কেন? এর কারণ হল, এগুলি এমনই প্রসঙ্গ যে, প্রত্যেক ঈশ্বর-অনুসরণকারীর, ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার হতে চায় এমন প্রতিটি ব্যক্তির, এগুলির মর্মগ্রহণ করা আবশ্যক—এই প্রসঙ্গগুলি অনুধাবন করা অবশ্যকর্তব্য। এই মুহূর্তে তুমি এই বিষয়গুলি না বুঝলেও, একদিন, যখন তোমার জীবন ও তোমার সত্যানুভব নির্দিষ্ট এক স্তরে উপনীত হবে, যখন তোমার জীবন-চরিত্রের পরিবর্তন একটা বিশেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে এবং তুমি একটা নির্দিষ্ট মানের আত্মিক উচ্চতা অর্জন করবে, একমাত্র তখনই সহকারিতার-সূত্রে এই যে প্রসঙ্গগুলি আমি তোমাদের জ্ঞাপন করছি সেগুলি প্রকৃতই তোমাকে রসদ যোগাবে এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের জন্য তোমার অন্বেষণকে চরিতার্থ করবে। তাই, এই বাক্যগুলির উদ্দেশ্য হল সকলকিছুর উপর ঈশ্বরের আধিপত্য বিষয়ক তোমাদের ভবিষ্যৎ উপলব্ধির উদ্দেশ্যে একটি ভিত্তি পত্তন করা, এবং স্বয়ং ঈশ্বর সম্বন্ধে উপলব্ধির জন্য তোমাদের প্রস্তুত করা।

মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বর বিষয়ক উপলব্ধি যত বেশি হয়, তাদের হৃদয়ের তত অধিক অংশ জুড়ে তিনি অধিষ্ঠান করেন। তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর-জ্ঞানের মাত্রা যত বেশি হয়, তাদের অন্তরে ঈশ্বরকে তারা তত অধিকমাত্রায় মহান বলে অনুভব করে। যে ঈশ্বরকে তুমি জানো সে যদি শূন্যগর্ভ ও অনিশ্চিত হয়, তাহলে যে ঈশ্বরে তুমি বিশ্বাস করো সে-ও শূন্যগর্ভ ও অনিশ্চিত। তোমার পরিচিত সেই ঈশ্বর তোমার নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরের দ্বারা সীমাবদ্ধ, এবং তার সাথে স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, ঈশ্বরের বাস্তববাদী কার্যকলাপকে জানা, ঈশ্বরের বাস্তবতা ও তাঁর সর্বশক্তিমানতাকে জানা, স্বয়ং ঈশ্বরের প্রকৃত পরিচয়কে জানা, তাঁর যা আছে ও তিনি যা তা জানা, তাঁর সৃষ্টির সকলকিছুর মধ্যে যে ক্রিয়াকলাপ তিনি প্রকাশিত করেছেন তা জানা—ঈশ্বর-জ্ঞানের অন্বেষণকারী প্রতিটি মানুষের কাছে এই বিষয়গুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সত্যের বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে কিনা তার সাথে এগুলির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। তোমার ঈশ্বর-উপলব্ধিকে তুমি যদি কেবল বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলো, তুমি যদি তা তোমার নিজের যৎসামান্য অভিজ্ঞতার মধ্যে, যাকে তুমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বলে অনুমান করো তার মধ্যে, বা ঈশ্বরের প্রতি তোমার ছোটোখাটো সাক্ষ্যের মধ্যে সীমায়িত করে ফেলো, তাহলে আমি বলছি, যে ঈশ্বরে তুমি বিশ্বাস করো কোনোক্রমেই তা স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বর নন। শুধু তাই-ই নয়, উপরন্তু একথাও বলা যায় যে, তুমি যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো তা এক কাল্পনিক ঈশ্বর, প্রকৃত ঈশ্বর নন। এর কারণ, প্রকৃত ঈশ্বর হলেন তিনি যিনি সকলকিছুর উপর কর্তৃত্ব করেন, যিনি সকলকিছুর মধ্যে সঞ্চারিত হন, যিনি সকলকিছু পরিচালনা করেন। তিনিই সমগ্র মানবজাতির ও সকলকিছুর নিয়তিকে তাঁর করপুটে ধারণ করেন। যে ঈশ্বরের বিষয়ে আমি বলছি তাঁর কার্যকলাপ কেবল মনুষ্যজাতির এক ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে সীমায়িত নয়। অর্থাৎ, তা শুধুমাত্র সেই মানুষগুলির মধ্যেই সীমিত নয় যারা বর্তমানে তাঁর অনুসরণ করছে। তাঁর কাজকর্ম সকল বস্তুর মধ্যে, সকল বস্তুর উদ্বর্তনের মধ্যে, এবং সকল বস্তুর পরিবর্তনের বিধানসমূহের মধ্যে প্রতিভাত হয়। তাঁর সৃষ্টির সকলকিছুর মধ্যে যদি তুমি ঈশ্বরের কোনো কর্ম প্রত্যক্ষ বা শনাক্ত করতে না পারো, তাহলে তুমি তাঁর কোনো কর্মের সাক্ষ্য দিতে পারবে না। তুমি যদি ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে না পারো, তুমি যদি তোমার জানা সেই ক্ষুদ্র তথাকথিত “ঈশ্বর”-এর কথা বলে চলো, যে ঈশ্বর তোমার নিজের ধারণার দ্বারা সীমায়িত এবং কেবল তোমার মনের সংকীর্ণ পরিসরের মধ্যেই বিদ্যমান, তুমি যদি সেই প্রকার ঈশ্বরের কথাই বলতে থাকো, তাহলে ঈশ্বর কখনোই তোমার বিশ্বাসের প্রশংসা করবেন না। যখন তুমি ঈশ্বরের সাক্ষ্য দাও, তখন যদি তোমার সেই সাক্ষ্য কেবলমাত্র যেভাবে তুমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ উপভোগ করো, যেভাবে তুমি ঈশ্বরের অনুশাসন ও তাঁর শোধন স্বীকার করো, এবং তাঁর প্রতি তোমার সাক্ষ্যে যেভাবে তুমি তাঁর আশীর্বাদ উপভোগ করো—এই সকলের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রদত্ত হয়, তাহলে তা মোটেই যথেষ্ট হবে না, এবং তাঁর সামান্যতমও সন্তুষ্টিবিধান করতে পারবে না। ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক উপায়ে তুমি যদি তাঁর সাক্ষ্য দিতে চাও, স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে চাও, তাহলে তাঁর কার্যাবলী থেকেই অতিঅবশ্যই তোমাকে জানতে হবে ঈশ্বরের যা আছে এবং ঈশ্বর যা। সকলকিছুর উপর ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণ থেকে তাঁর কর্তৃত্বকে তোমায় অনুধাবন করতে হবে, এবং কীভাবে তিনি সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে সংস্থান করেন, সেই সত্য উপলব্ধি করতে হবে। তুমি যদি কেবল এটুকুই স্বীকার করো যে তোমার প্রাত্যহিক বেঁচে থাকার উপাদান ও তোমার জীবনে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে, কিন্তু এই সত্যকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হও যে সমগ্র মানবজাতির সংস্থানের জন্যই ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির সকল বস্তুকে গ্রহণ করেছেন, এবং সকলকিছুর উপর প্রভুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে তিনি পরিচালিত করছেন, তাহলে কখনোই তুমি ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে না। আমার এইসব বলার উদ্দেশ্যটি কী? আমি এইসব বলছি যাতে তোমরা বিষয়টি লঘুভাবে না নাও, যাতে তোমরা ভ্রান্তিবশত ভেবে না বসো যে আমার আলোচিত বিষয়গুলি তোমাদের ব্যক্তিগত জীবন-প্রবেশের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক, এবং যাতে এই বিষয়গুলিকে তোমরা নিছক এক ধরনের জ্ঞান বা মতবাদ হিসাবে গ্রহণ না করো। যদি এহেন মানসিকতা নিয়ে তোমরা আমার বাক্য শ্রবণ করো, তাহলে তোমাদের কোনোই লাভ হবে না। ঈশ্বরকে জানার এই মোক্ষম সুযোগ তোমরা হারাবে।

এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার পিছনে আমার লক্ষ্যটি কী? আমার লক্ষ্য হল মানুষকে ঈশ্বর বিষয়ে অবগত করা, ঈশ্বরের ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপ মানুষের উপলব্ধিতে আনা। একমাত্র ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা ও তাঁর ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে জ্ঞান আহরণের পরেই তুমি তাঁকে জানার সুযোগ বা সম্ভাবনা লাভ করো। উদাহরণস্বরূপ, যদি তুমি একজন মানুষকে উপলব্ধি করতে চাও, কীভাবে তা করে উঠবে? তার বাহ্যিক অবয়ব দেখার মাধ্যমে তা করা যাবে কি? সে কী পোশাক পরে এবং কীভাবে সাজসজ্জা করে তা লক্ষ্য করে তা করা যাবে কি? তার হাঁটার ধরন লক্ষ্য করার মাধ্যমে তা করা যাবে কি? তার জ্ঞানের পরিধি পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে কি তা করা যাবে? (না।) তাহলে একজন মানুষকে তুমি কীভাবে উপলব্ধি করো? একজন মানুষের কথাবার্তা ও আচার-আচরণ, তার চিন্তাভাবনা, এবং সে যা অভিব্যক্ত করে ও নিজের সম্পর্কে যা প্রকাশ করে—এই সকলকিছুর উপর ভিত্তি করেই তুমি সিদ্ধান্তে উপনীত হও। এভাবেই তুমি একজন মানুষকে জানতে পারো, তাকে উপলব্ধি করো। একইভাবে, যদি তুমি ঈশ্বরকে জানতে চাও, যদি তুমি তাঁর বাস্তববাদী দিকটি, তাঁর যথার্থ দিকটি উপলব্ধি করতে চাও, তাহলে অবশ্যই তুমি তাঁকে তাঁর কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে এবং তাঁর প্রতিটি ব্যবহারিক কর্মের মাধ্যমেই জানবে। এ-ই হল সর্বোত্তম তথা একমাত্র পথ।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৯

পূর্ববর্তী: চতুর্থ পর্ব: ঈশ্বর বিভিন্ন মানবপ্রজাতির মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করেন

পরবর্তী: মানবজাতিকে জীবনধারণের একটা স্থিতিশীল পরিবেশ প্রদান করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বর সকলকিছুর পারস্পরিক সম্পর্ককে ভারসাম্য-সমন্বিত করেন

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

প্রথম দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বদান্যতায় মানবজাতির দিন এবং রাতের সূচনা হয় এবং অবিচল থাকে

প্রথম অনুচ্ছেদটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাকঃ: “ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন