প্রথম সন্ধিক্ষণ: জন্ম

একজন মানুষ কোন স্থানে জন্মায়, কোন পরিবারে জন্মায়, তার লিঙ্গ, শারীরিক আকৃতি এবং তার জন্মের সময়—এগুলিই একজনের জীবনের প্রথম সন্ধিক্ষণের বিবরণ।

কেউই এই সন্ধিক্ষণের নির্দিষ্ট বিবরণ বেছে নিতে পারে না; এগুলি সবই স্রষ্টার দ্বারা অনেক আগেই পূর্বনির্ধারিত। এগুলি কোনোভাবেই বাহ্যিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয় না, এবং কোনো মানবসৃষ্ট উপাদানই স্রষ্টার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত এই সত্যকে পরিবর্তন করতে পারে না। কোন ব্যক্তির জন্মের অর্থ হল সৃষ্টিকর্তার ব্যবস্থা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই তার ভাগ্যের প্রথম ধাপটি তিনি পূরণ করেছেন। যেহেতু তিনি এই সব খুঁটিনাটি অনেক আগেই পূর্বনির্ধারিত করে রেখেছেন, তাই সেগুলির কোন পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারোর নেই। কোন ব্যক্তির ভাগ্য পরবর্তীকালে যেমনই হোক না কেন, তার জন্মের শর্তগুলি পূর্বনির্ধারিত, এবং সেগুলি যেমন আছে তেমনই থাকে। সেই শর্তগুলি কখনোই সেই ব্যক্তির জীবিত অবস্থার ভাগ্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না, এবং তা কোনোভাবেই সেই ব্যক্তির ভাগ্যের উপর সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করে না।

১. সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনাতেই নতুন জীবনের জন্ম

প্রথম সন্ধিক্ষণের যে বিশদ বিবরণ—জন্মের স্থান, পরিবার, লিঙ্গ, শারীরিক আকৃতি বা জন্মসময়—এগুলির কোন একটিকেও কি কেউ বেছে নিতে পারে? স্পষ্টতই, যে কোন মানুষের জন্মেই তার নিজের কোনো ভূমিকা থাকে না। যে কোন মানুষের জন্মই অনিচ্ছাকৃত—নির্দিষ্ট স্থানে, কালে, পরিবারে এবং একটি নির্দিষ্ট শারীরিক চেহারায়; অনিচ্ছাকৃতভাবেই সে কোন পরিবারের সদস্য হয়, হয়ে ওঠে কোন বংশপঞ্জীর শাখা। জীবনের এই প্রথম সন্ধিক্ষণে মানুষের কাছে কোনো বিকল্প থাকে না, বরং তার জন্ম হয় এমন পরিবেশে যা স্রষ্টার পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থির হয়, কোন নির্দিষ্ট পরিবারে, নির্দিষ্ট লিঙ্গ এবং চেহারা সহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। এই জটিল সন্ধিক্ষণে মানুষের কী করার আছে? অর্থাৎ, কারোর কাছেই তার জন্ম সংক্রান্ত এই বিবরণগুলির মধ্যে যেকোন একটি বিবরণও বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। স্রষ্টার পূর্বনির্ধারণ এবং তাঁর পথপ্রদর্শন না থাকলে, এই পৃথিবীতে সদ্য জন্ম নেওয়া একটি জীবন কোথায় যাবে বা কোথায় থাকবে তা জানত না, থাকত না কোন আত্মীয়তা, পেত না কোন পরিচয় এবং প্রকৃত কোন গৃহকোণ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনার কারণে, এই নতুন জীবনের থাকার জায়গা আছে, আছে বাবা-মা, পরিচয় এবং আত্মীয়স্বজন এবং তাই সেই জীবন তার যাত্রাপথে চলা শুরু করে। এই সমগ্র প্রক্রিয়ায়, স্রষ্টার পরিকল্পনাতেই এই নতুন জীবনের বাস্তবায়ন নির্ধারিত হয়, এবং সেই জীবন পরবর্তীকালে যা কিছু অর্জন করে তা সবই আসলে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত। পরিচয়হীন একটি মুক্ত-ভাসমান দেহ ধীরে ধীরে রক্তমাংসের অবয়বে পরিণত হয়—দৃশ্যমান, বাস্তব মানুষ—ঈশ্বরের সৃষ্টিগুলির মধ্যে অন্যতম—যে চিন্তা করে, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় এবং উষ্ণতা এবং শীতলতার অনুভূতিসম্পন্ন; বস্তুজগতে সৃষ্ট সত্তার সমস্ত স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের অংশগ্রহণে সক্ষম; এবং তাঁর সৃষ্ট মানুষকে জীবনে যে সব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, তার সবগুলির মধ্য দিয়েই সে যাবে। স্রষ্টার দ্বারা কোন ব্যক্তির জন্ম পূর্বনির্ধারিত হওয়ার অর্থ হল যে তিনি সেই ব্যক্তিকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান প্রদান করবেন। একইভাবে, কোন ব্যক্তির জন্মের অর্থ হল সে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাবে, এবং সেই মুহূর্ত থেকে, তারা স্রষ্টার দ্বারা প্রদত্ত অন্য এক রূপে এবং সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের অধীনে বাস করবে।

২. বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকে জন্মায় কেন

মানুষ প্রায়শই কল্পনা করতে পছন্দ করে যে যদি তাদের পুনর্জন্ম হয় তবে তা যেন কোন বিশিষ্ট পরিবারে হয়; যদি তারা নারী হয় তবে তারা যেন স্নো হোয়াইটের মতো সুন্দরী এবং সবার প্রিয়পাত্রী হয়, আর পুরুষ হলে হবে প্রিন্স চার্মিং-এর মত হবে, যার কোন কিছুরই অভাব নেই এবং সারা বিশ্বই যার ইশারায় সাড়া দিতে প্রস্তুত। এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের জন্ম সম্পর্কে নানা বিভ্রমের মধ্যে থাকে এবং জন্ম নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট—তাদের পরিবার, আকৃতি, লিঙ্গ এমনকি নিজেদের জন্মের সময় নিয়েও বিরক্ত। তবুও মানুষ কখনই বুঝতে পারে না যে কেন তারা কোন নির্দিষ্ট পরিবারে জন্ম নিয়েছে, তাদের এই নির্দিষ্ট বাহ্যিক চেহারার কারণই বা কী। তারা জানে না তাদের জন্ম বা আকৃতি যাই হোক না কেন, ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে হবে, এবং এই উদ্দেশ্য কখনোই পরিবর্তিত হবে না। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে কোন মানুষের জন্মস্থান, তার লিঙ্গ, বাহ্যিক আকৃতি, সবই খুব ক্ষণস্থায়ী। তাঁর সমগ্র মানবজাতির পরিচালনার প্রতিটি পর্বে এর সবগুলিই এক একটি ক্ষুদ্র ক্রমিক বিন্দু ও চিহ্ন। কারো গন্তব্য ও পরিণতি কোনো একটি নির্দিষ্ট পর্বে তাদের জন্ম দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং নির্ধারিত হয় জীবনে তারা যে উদ্দেশ্য পূরণ করে তার উপর, এবং স্রষ্টার পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁর বিচারের উপর।

বলা হয় যে প্রতিটি কার্যের একটি কারণ আছে, এবং কোনো কার্যই কারণ ছাড়া হতে পারে না। সুতরাং কোন মানুষের জন্ম আবশ্যিকভাবে তার বর্তমান এবং পুর্বজন্মের সঙ্গে জড়িত। যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যু তার বর্তমান জীবনের মেয়াদ শেষ করে, তবে কোন ব্যক্তির জন্মে সুচিত হয় এক নতুন চক্র। যদি একটি পুরানো চক্র কোন ব্যক্তির পূর্ববর্তী জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে নতুন চক্র স্বাভাবিকভাবেই তার বর্তমান জীবন। যেহেতু মানুষের জন্ম তার অতীত জীবন এবং তার বর্তমান জীবনের সঙ্গে যুক্ত, তাই তার অবস্থান, পরিবার, লিঙ্গ, চেহারা এবং জন্মের সাথে জড়িত অন্যান্য কারণগুলি অবশ্যই তার অতীত এবং বর্তমান জীবনের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির জন্মের বিষয়গুলি শুধুমাত্র তার পূর্ববর্তী জীবনের দ্বারাই প্রভাবিত নয়, তার বর্তমান জীবনের ভাগ্য অনুযায়ীও নির্ধারিত হয়, এবং এই কারণেই মানুষ বিভিন্ন পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে। কেউ জন্মায় দরিদ্র পরিবারে, কেউ আবার ধনীগৃহে। কেউ সাধারণ কুলে, কেউ আবার বিশিষ্ট বংশে। কারোর জন্ম দক্ষিণে, আবার কেউ উত্তরে। কেউ জন্ম নেয় মরুভূমিতে, আবার কারো জন্ম হয় শ্যামল ভূখন্ডে। কিছু মানুষের জন্মে থাকে উল্লাস, হাসি এবং উদযাপন; অন্যরা নিয়ে আসে অশ্রু, বিপর্যয় এবং দুর্ভোগ। কারো কারো জন্ম হয় জীবনে মূল্য পাওয়ার জন্য, অন্যদের ছুঁড়ে ফেলা হয় আগাছার মতো। কেউ পায় সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য, কেউ আবার কুটিল। কাউকে দেখলেই ভালো লাগে, কেউ বা কুৎসিত। কেউ জন্মায় মধ্যরাতে, কেউবা আবার দ্বিপ্রহরের প্রখর সূর্যতাপে। … বিভিন্ন বৈচিত্রের প্রতিটি মানুষের জন্ম হয় সৃষ্টিকর্তার দ্বারা নির্ধারিত তাদের ভাগ্য অনুসারে। তাদের জন্মই নির্ধারণ করে এই জন্মে তাদের ভাগ্য কী হবে, কোন ভূমিকা তারা পালন করবে, আর কোন উদ্দেশ্য তারা পূর্ণ করবে। এই সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের অধীন এবং তাঁর দ্বারাই পূর্বনির্ধারিত। পূর্বনির্ধারিত জায়গা থেকে কেউ অব্যাহতি পায় না, বদলাতে পারে না তার জন্ম এবং বেছে নিতে পারে না তার ভাগ্য।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৩

পূর্ববর্তী: মানবতার ভাগ্য এবং মহাবিশ্বের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্ব থেকে অবিচ্ছেদ্য

পরবর্তী: দ্বিতীয় সন্ধিক্ষণ: বড়ো হয়ে ওঠা

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

শয়তানকে দেখে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্গুনসম্পন্ন মনে হলেও, শয়তানের সারসত্য নিষ্ঠুর ও অশুভ

মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তার সুনাম নির্মাণ করে, এবং নিজেকে প্রায়শই ন্যায়পরায়ণতার একজন পুরোধা তথা আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।...

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন