জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: শব্দ

তৃতীয় বস্তুটি কী? এটিও এমন একটি বস্তু যা মানব-অস্তিত্বের স্বাভাবিক পরিবেশের একটা অত্যাবশ্যক অংশ, এমন কিছু যার আয়োজন ঈশ্বরকে সবকিছু সৃষ্টি করার সময় করতে হয়েছিল। ঈশ্বর এবং প্রতিটি মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর যদি এই বস্তুটির যত্ন না নিতেন, তাহলে তা মানবজাতির বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করত, অর্থাৎ মানুষের জীবন ও তার শরীরের উপর এতটাই উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলত যে মানবজাতি সেরকম একটি পরিবেশে বেঁচে থাকতে সক্ষম হত না। বলা যেতে পারে যে কোনো জীবন্ত প্রাণীই এরকম পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারত না। তাহলে, আমি কোন বস্তুটির কথা বলছি? আমি বলছি শব্দের কথা। ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, এবং সবকিছু ঈশ্বরের হাতেই জীবনধারণ করে। ঈশ্বরের সৃষ্টি করা সবকিছুই তাঁর দৃষ্টির মধ্যে জীবনযাপন করে ও অবিরাম গতিতে ঘুরতে থাকে। এর দ্বারা আমি যেটা বোঝাতে চাইছি তা হল যে ঈশ্বরের সৃষ্টি করা প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্বের মধ্যেই তার মূল্য ও অর্থ রয়েছে; অর্থাৎ, প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্ত্বেরই কিছু না কিছু অপরিহার্যতা রয়েছে। ঈশ্বরের চোখে, প্রতিটি বস্তুই জীবন্ত, এবং, যেহেতু সকল বস্তুই জীবন্ত, তাদের প্রতিটিই শব্দ উৎপন্ন করে। যেমন, পৃথিবী অবিরাম ঘূর্ণায়মান, সূর্য অবিরাম ঘূর্ণায়মান, চন্দ্রও সেরকমই অবিরাম ঘুরে চলেছে। সকল বস্তুই যেহেতু বিস্তারিত, বিকশিত, এবং আন্দোলিত হচ্ছে, তাই সেগুলি সবই অবিরাম শব্দ নির্গত করছে। পৃথিবীতে অস্তিত্ব থাকা ঈশ্বর-সৃষ্ট সকল বস্তুই অবিরত বিস্তার, বিকাশ, ও গতির মধ্যে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পর্বতের ভিতগুলি আন্দোলিত হচ্ছে ও স্থানপরিবর্তন করছে, এবং সমুদ্রের গভীরে থাকা সকল জীবই সাঁতরে চলেছে আর চলাফেরা করছে। এর অর্থ হল যে এই সকল জীব, ঈশ্বরের দৃষ্টিগোচরে থাকা সকল বস্তু, প্রতিষ্ঠিত নকশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অবিরাম, নিয়মিত গতির মধ্যে রয়েছে। তাহলে, এই সকল বস্তু থেকে কী উদ্ভূত হয় যা অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ে ও বিকশিত হয় এবং গোপনে স্থানান্তরিত হয়? শব্দ—মহান, শক্তিশালী শব্দ। পৃথিবী নামক গ্রহের বাইরে, সমস্ত রকমের গ্রহই অবিরাম গতিশীল, এবং সেই সকল গ্রহের জীবন্ত বস্তু এবং সজীব বস্তু সর্বক্ষণ সংখ্যাবৃদ্ধি করছে, বিকশিত হচ্ছে, এবং আন্দোলিত হচ্ছে। অর্থাৎ, ঈশ্বরের দৃষ্টির গোচরে প্রাণযুক্ত আর প্রাণহীন সকল বস্তুই সর্বদা সমুখপানে এগিয়ে চলেছে, এবং এই এগিয়ে চলার সময় তাদের প্রত্যেকে শব্দ নির্গত করছে। ঈশ্বর এইসব শব্দের জন্যও আয়োজন করেছেন, এবং আমার বিশ্বাস তোমরা ইতিমধ্যেই এর পিছনে তাঁর যে কারণ রয়েছে তা জানো, তাই নয় কি? তুমি যখন একটি উড়োজাহাজের কাছে যাও, সেটির ইঞ্জিনের গর্জন তোমার উপর কী প্রভাব ফেলে? তুমি যদি সেটির কাছে দীর্ঘ সময় ধরে থাক, তাহলে তুমি বধির হয়ে যাবে। তোমার হৃদযন্ত্রের কী হবে—সেটি কি এই নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করতে সক্ষম হবে? যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল তারা তা সহ্য করতে পারবে না। অবশ্যই, যাদের হৃদযন্ত্র মজবুত তারাও খুব বেশিক্ষণ তা সহ্য করতে সক্ষম হবে না। অর্থাৎ, মানব শরীরের শব্দের প্রভাব, তা সে কানেই হোক কিংবা হৃদযন্ত্রে, মানুষের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর অত্যন্ত উচ্চগ্রামের শব্দ মানুষের ক্ষতি করে। সুতরাং, ঈশ্বর যখন সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছিলেন এবং সেসমস্ত স্বাভাবিকভাবে কাজ করা শুরু করার পর, ঈশ্বর এইসকল শব্দের, গতিশীল সকল বস্তু থেকে নির্গত শব্দের, যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করেন। মানবজাতির জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বরকে যে বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হয়েছিল এটিও তার মধ্যে একটি।

প্রথমত, ভূপৃষ্ঠের উপরে থাকা বায়ুমণ্ডলের উচ্চতার শব্দের উপর একটা প্রভাব রয়েছে। উপরন্তু, মাটিতে থাকা ফাঁক-ফোকরগুলির আকারও শব্দকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শব্দের উপর প্রভাব ফেলে। তারপর রয়েছে বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশ যেগুলি মিলিতভাবে শব্দের উপর প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ বলা যায়, ঈশ্বর কিছু কিছু শব্দকে অপসারিত করতে বিশেষ কতকগুলি পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যাতে মানুষ এমন একটা পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে যা তাদের কান ও হৃদপিণ্ড সহ্য করতে সক্ষম। না হলে, শব্দ মানুষের অস্তিত্ত্বরক্ষার পথে বিরাট বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের জীবনের পক্ষে হয়ে উঠবে একটি বড় রকমের উপদ্রব আর তাদের পক্ষে হয়ে উঠবে গুরুতর এক সমস্যা। এর অর্থ হল যে ঈশ্বর স্থলভূমি, বায়ুমণ্ডল, আর বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অত্যন্ত যথাযথ ছিলেন, এবং এগুলির প্রতিটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা। এই বিষয়ে মানুষের উপলব্ধি খুব বেশি বিশদ হওয়ার প্রয়োজন নেই—মানুষের পক্ষে এটা জানাই যথেষ্ট যে এর মধ্যে ঈশ্বরের কার্য নিহিত রয়েছে। এখন তোমরা আমাকে বল, ঈশ্বরের সম্পাদিত এই কার্য—মানবজাতির বসবাসের যোগ্য পরিবেশ ও তাদের স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত রাখতে যথাযথ ভাবে শব্দের পরিমাপ নির্ধারণ করা—এটা কি জরুরী ছিল? (হ্যাঁ।) যেহেতু এই কার্য জরুরী ছিল, তাহলে এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এটা কি বলা যায় যে ঈশ্বর তাঁর এই কাজকে সমস্ত কিছুর সংস্থানের একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করেছেন? ঈশ্বর মানবজাতিকে প্রদানের জন্য এমন শান্ত এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন যাতে মানব শরীর তার মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারে, কোনোরকম কষ্ট অথবা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই, এবং যাতে মানবজাতি স্বাভাবিক ভাবে বিদ্যমান থাকতে ও জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। তাহলে, এটি কি ঈশ্বরের মানবজাতির জন্য সংস্থান প্রদানের উপায়গুলির একটি নয়? এটি কি ঈশ্বরের সম্পাদিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্য নয়? (হ্যাঁ।) এর অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তাহলে তোমরা কীভাবে এর সমাদর করবে? যদিও তোমরা একে ঈশ্বরের কার্য হিসেবে অনুভব করতে পারো না, তোমরা এটাও জানো না যে ঈশ্বর সেই সময়ে এই কার্য কীভাবে সম্পাদিত করেছিলেন, তোমরা কি তবুও ঈশ্বরের এই কাজটি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারো? তোমরা কি এর মধ্যে নিহিত ঈশ্বরের প্রজ্ঞা আর যত্ন এবং তাঁর চিন্তা অনুভব করতে পারো? (হ্যাঁ, পারি।) তোমরা যদি তা অনুভব করতে সক্ষম হও, তাহলে সেটাই যথেষ্ট। ঈশ্বরের সৃষ্ট বস্তুদের মধ্যে তাঁর সম্পাদিত এমন অনেক কার্য আছে যা মানুষ অনুভব করতে পারে না বা দেখতে পায় না। আমি এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি শুধুমাত্র তোমাদের ঈশ্বরের কার্য সম্পর্কে অবহিত করতে, যাতে তোমরা ঈশ্বরকে জানতে পারো। এইগুলি হল সেই সূত্র যা তোমাদের ঈশ্বরকে জানতে ও উপলব্ধি করতে আরও ভালোভাবে সক্ষম করে তুলতে পারে।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৮

পূর্ববর্তী: জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: তাপমাত্রা

পরবর্তী: জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: আলো

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

শয়তানকে দেখে মানবিক, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্গুনসম্পন্ন মনে হলেও, শয়তানের সারসত্য নিষ্ঠুর ও অশুভ

মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তার সুনাম নির্মাণ করে, এবং নিজেকে প্রায়শই ন্যায়পরায়ণতার একজন পুরোধা তথা আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।...

ঈশ্বর হবাকে সৃষ্টি করলেন

আদিপুস্তক ২:১৮-২০ তারপর প্রভু পরমেশ্বর বললেন, মানুষের একা থাকা ভাল নয়, আমি তাকে তার যোগ্য এক সঙ্গিনী দেব। প্রভু পরমেশ্বর মৃত্তিকা থেকে...

আদমের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ

আদিপুস্তক ২:১৫-১৭ প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এদন উদ্যানে কৃষিকর্ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন,...

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন