জীবনের জন্য মৌলিক পরিবেশ যা ঈশ্বর মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন: আলো
চতুর্থ বস্তুটি মানুষের চোখ সম্বন্ধীয়: আলো। এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন তুমি কোনো উজ্জ্বল আলো দেখো, আর তার উজ্জ্বলতা একটি নির্দিষ্ট শক্তিতে পৌঁছয়, এটি মানুষের চোখকে অন্ধও করে দিতে সক্ষম। সর্বোপরি, মানুষের চোখ তো রক্তমাংসেরই চোখ। তারা জ্বালা সহন করতে পারে না। কেউ কি সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানোর স্পর্ধা দেখাতে পারে? কেউ কেউ সেই চেষ্টা করে দেখেছে, আর তারা যদি রোদ-চশমা পরে থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হয় না—কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন হয় একটি সরঞ্জাম ব্যবহারের। সরঞ্জাম ছাড়া, মানুষের খালি চোখের কোনো ক্ষমতাই নেই সূর্যের সম্মুখীন হওয়ার ও তার দিকে সরাসরি তাকানোর। তবে, ঈশ্বর সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির কাছে আলো নিয়ে আসতে, এবং এই আলোও এমন একটি বস্তু যা তিনি পরিচালনা করেছিলেন। ঈশ্বর শুধু সূর্যের সৃষ্টি সম্পূর্ণ করে তাকে কোথাও স্থাপন করে তারপর তাকে উপেক্ষা করেননি; ঈশ্বর এইভাবে কার্য সম্পাদন করেন না। তিনি তাঁর কর্মে অত্যন্ত যত্নশীল, এবং সেগুলির বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিন্তাভাবনা করেন। ঈশ্বর মানবজাতির জন্য চোখের আয়োজন করেছেন যাতে তারা দেখতে পায়, আর তিনি আগে থেকেই আলোর পরিমাপও নির্ধারণ করে রেখেছেন যে আলোয় মানুষ সবকিছু দেখতে পারে। আলো যদি অত্যন্ত স্তিমিত হতো, তা কোনো কাজে লাগতো না। অন্ধকার যদি এতটাই গাঢ় হয় যে মানুষ তাদের সামনে নিজের আঙুলগুলি পর্যন্ত দেখতে না পায়, তাহলে তাদের চোখ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে এবং সেগুলি আর কোনো কাজে আসে না। কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল আলোও মানুষের চোখকে সমানভাবে দেখার ক্ষেত্রে অক্ষম করে তোলে, কারণ সেই উজ্জ্বলতা অসহনীয়। তাই, ঈশ্বর মানুষের অস্তিত্বের পরিবেশকে মানুষের চোখের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ আলো দিয়ে সজ্জিত করেছেন—এমন পরিমাণ আলো যা মানুষের চোখকে কষ্ট দেবে না বা চোখের কোনো ক্ষতি করবে না, সেগুলির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা। ঠিক এই কারণেই ঈশ্বর সূর্য ও পৃথিবীর চতুর্দিকে মেঘের আস্তরণ যোগ করেছেন, আর সেই জন্যই বাতাসের ঘনত্ব মানুষের চোখের বা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এরকম ধরণের আলোকে সঠিকভাবে ছেঁকে ফেলতে সক্ষম হয়—এগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ। উপরন্তু, ঈশ্বর-সৃষ্ট পৃথিবীর রঙগুলি সূর্যালোক সহ অন্যান্য সকল প্রকার আলোকে প্রতিফলিত করে, আর যে ধরণের আলোকগুলি মানব-চক্ষুর খাপ খাইয়ে নেওয়ার পক্ষে অত্যধিক উজ্জ্বল সেগুলি নির্মূল করতে সক্ষম। তাই, মানুষ বাইরে চলাফেরা করতে পারে আর সর্বক্ষণ অত্যন্ত গাঢ় রঙের রোদ-চশমা না পরেও তারা নিজ নিজ জীবন যাপন করতে পারে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, মানব-চক্ষু আলোর দ্বারা বিব্রত না হয়েই তাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা বস্তু দেখতে পারে। অর্থাৎ, আলো যদি অত্যধিক তীব্র হতো তাহলেও কোনো কাজে লাগত না, অত্যন্ত ক্ষীণ হলেও না। তা যদি অত্যন্ত ক্ষীণ হতো তাহলে মানব-চক্ষুর ক্ষতি করত, আর স্বল্প ব্যবহারের পরেই চোখ নষ্ট হয়ে যেত; আর যদি অত্যধিক উজ্জ্বল হতো, তাহলে মানুষের চোখ তা সহ্য করতে পারত না। যে আলো মানুষের আছে তাকে মানব-চক্ষুর দৃষ্টির পক্ষে উপযুক্ত হতে হবে, এবং ঈশ্বর বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আলো দ্বারা মানব-চক্ষুর ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করেছেন; আর যদিও এই আলো মানব-চক্ষুর উপকার কিংবা ক্ষতি সাধন করতে পারে, তা সত্বেও চোখের ব্যবহার অব্যাহত রেখে মানুষকে জীবনের উপান্তে পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে এই আলো যথেষ্ট। বিষয়টি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে ঈশ্বর পুঙ্খানুপুঙ্খ ছিলেন না কি? অথচ শয়তান এই ধরনের কোনো বিবেচনাকে কখনও তার মনে স্থান না দিয়েই কাজ করে। শয়তানের কাছে, এই আলো সর্বদাই হয় অত্যধিক উজ্জ্বল অথবা অত্যধিক ক্ষীণ। এইভাবেই শয়তান কাজ করে।
বেঁচে থাকার জন্য মানবজাতির মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ করে তোলার জন্য ঈশ্বর মানুষের দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ, শ্বাসক্রিয়া, অনুভূতি সহ মানব-শরীরের সবকটি ক্ষেত্রেই এই কাজগুলি করেছিলেন, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে আর তা অব্যাহত রাখতে পারে। অন্য ভাষায়, জীবনের জন্য ঈশ্বর-সৃষ্ট বর্তমান পরিবেশই মানবজাতির বেঁচে থাকার পক্ষে সর্বাধিক উপযুক্ত ও উপকারী। কেউ কেউ ভাবতেই পারে যে এ কোনো বিরাট ব্যাপার নয়, খুবই সাধারণ একটি বিষয়। শব্দ, আলো আর বায়ু হলো এমন বস্তু যা মানুষ মনে করে তাদের জন্মগত অধিকার, যা তারা তাদের জন্ম-মুহূর্ত থেকেই উপভোগ করে আসছে। কিন্তু এই যে বস্তুসকল যা তুমি উপভোগ করতে সক্ষম, সেসবের পিছনে ঈশ্বর কর্মরত রয়েছেন; মানুষকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে, জানতে হবে। তুমি এইসকল বিষয় উপলব্ধি করার অথবা জানার প্রয়োজন নেই বলে অনুভব করলেও, সংক্ষেপে বলা যায়, ঈশ্বর যখন এগুলি সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি এগুলির বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেছিলেন, তাঁর একটি পরিকল্পনা ছিল, তাঁর কিছু নির্দিষ্ট ধারণা ছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনোরকম চিন্তাভাবনা না করেই, শুধুমাত্র তুচ্ছভাবে অথবা অকারণেই, জীবন ধারণের জন্য এরকম একটা পরিবেশে মানবজাতিকে স্থাপন করেননি। তোমরা মনে করতেই পারো যে আমি এই ছোট ছোট বস্তুর প্রতিটি সম্পর্কে অত্যধিক আড়ম্বরপূর্ণভাবে কথা বলেছি, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে, মানবজাতির জন্য ঈশ্বর যেসকল বস্তুর সংস্থান করেছেন, তার প্রতিটিই মানবজাতির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে ঈশ্বরের কার্যই নিহিত রয়েছে।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৮