মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু (পর্ব ১)

১. বিশ্রামবারে আহারের উদ্দেশ্যে যীশু কর্তৃক ভুট্টার আবরণ উৎপাটন

মথি ১২:১ সেই সময়ে যীশু এক সাব্বাথ দিনে শস্যক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাই তাঁরা শস্যের শীষ ছিঁড়ে খেতে লাগলেন।

২. মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু

মথি ১২:৬-৮ আমি তোমাদের বলছি, মন্দিরের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে উপস্থিত। ‘দয়াতেই আমার প্রীতি, বলিদানে নয়,’ এ কথার মর্ম যদি বুঝতে তাহলে তোমরা নির্দোষকে দোষী সাব্যস্ত করতে না। মানবপুত্রই সাব্বাথ দিনের অধিপতি।

প্রথমে এই অনুচ্ছেদটি পর্যালোচনা করে দেখা যাক: “সেই সময়ে যীশু এক সাব্বাথ দিনে শস্যক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাই তাঁরা শস্যের শীষ ছিঁড়ে খেতে লাগলেন।”

আমি এই অনুচ্ছেদটি কেন বেছে নিয়েছি? এর সঙ্গে ঈশ্বরের স্বভাবের কী সম্পর্ক আছে? এই পাঠ্যাংশে, প্রথম যে বিষয়টি আমরা জানতে পারি তা হল যে, দিনটি ছিল বিশ্রামবার, কিন্তু প্রভু যীশু ঘরের বাইরে বেরিয়ে তাঁর শিষ্যদের ভুট্টার খেতের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার চেয়েও বেশি “গর্হিত” বিষয়টা হল তারা এমনকি “শস্যের শীষ ছিঁড়ে খেতে লাগলেন।” বিধানের যুগে, যিহোবা ঈশ্বরের বিধান নির্দেশারোপ করেছিল যে, বিশ্রামবারে মানুষ ইচ্ছে মতো বাড়ির বাইরে বেরোতে বা কর্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে না—বিশ্রামবারে অনেককিছুই করা যেতো না। দীর্ঘদিন যাবৎ যারা বিধানের অধীনে জীবনযাপন করেছিল, প্রভু যীশুর তরফে এই কাজ তাদের কাছে ছিল বিহ্বলকর, এবং এমনকি তা সমালোচনার উদ্রেকও করেছিল। তাদের বিভ্রান্তি এবং যীশুর এই কার্য বিষয়ে তারা কী কথাবার্তা বলেছিল, সে প্রসঙ্গটি আপাতত সরিয়ে রেখে প্রথমে আমরা আলোচনা করবো, এতো দিন থাকতে, প্রভু যীশু এই কাজের জন্য বিশ্রামবারটিকেই কেন বেছে নিয়েছিলেন, এবং এই কাজের মাধ্যমে বিধানের অধীনে জীবনযাপনরত মানুষদের তিনি কোন বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। এই অনুচ্ছেদ ও ঈশ্বরের স্বভাবের মধ্যে সম্পর্কটির বিষয়েই আমি আলোচনা করতে চাই।

প্রভু যীশুর যখন আবির্ভাব হয়েছিল, তখন তিনি তাঁর ব্যবহারিক কাজকর্মের মাধ্যমেই মানুষকে জানিয়েছিলেন যে ঈশ্বর বিধানের যুগ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে নতুন কার্য শুরু করেছেন, এবং এই নতুন কার্যে বিশ্রামবার উদযাপনের প্রয়োজন নেই। বিশ্রামবারের বাধ্যবাধকতা থেকে ঈশ্বরের এই বের হয়ে আসাটা ছিল তাঁর নতুন কাজের পূর্বাস্বাদন মাত্র; প্রকৃত ও মহান কার্য তখনো শুরু হয়নি। প্রভু যীশু যখন তাঁর কার্য আরম্ভ করেন, তখন ইতিমধ্যেই তিনি বিধানের যুগের “নিগড়”-কে পিছনে ফেলে এসেছেন, এবং ঐ যুগের বিধিনিষেধ ও নীতিনিয়ম ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁর মধ্যে বিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনোকিছুর চিহ্নমাত্র ছিল না; তিনি একে সামগ্রিকভাবে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তা আর মেনে চলতেন না, এবং মানবজাতিরও আর তা পালন করা আবশ্যক মনে করতেন না। সেই কারণেই, প্রভু যীশুকে এখানে বিশ্রামবারে ভুট্টা খেতের মধ্য দিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল, এবং তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করেননি; তিনি ঘরের বাইরে কাজ করছিলেন, এবং বিশ্রামরত ছিলেন না। মানুষের পূর্বধারণায় তাঁর এই কাজ ছিল এক ধাক্কা, এবং তা তাদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি বিধানের অধীনে জীবনধারণ করেন না আর, এবং যে, তিনি বিশ্রামবারের বিধিনিষেধ পরিত্যাগ করেছেন এবং মানবজাতির সামনে ও তাদের মাঝে এক নতুন প্রতিমূর্তিতে, এক নতুন কার্যপদ্ধতিসহ অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁর এই কাজ মানুষকে জানিয়েছিল যে, তিনি সাথে করে নতুন কার্য নিয়ে এসেছেন, যে কার্যের সূচনা হয়েছিল বিধানের অধীনস্থতা থেকে বেরিয়ে আসার, এবং বিশ্রামবার থেকে প্রস্থান করার মধ্য দিয়ে। ঈশ্বর যখন তাঁর নতুন কার্য সম্পন্ন করেছিলেন, তিনি আর অতীতকে আঁকড়ে থাকেন নি, এবং তিনি আর বিধানের যুগের নিয়মকানুন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। পূর্ববর্তী যুগে তাঁর কৃত কার্যের দ্বারা তিনি প্রভাবিতও হন নি, পরিবর্তে বরং আর পাঁচটা দিনের মতো বিশ্রামবারেও কাজ করেছিলেন, এবং বিশ্রামবারে তাঁর শিষ্যরা যখন ক্ষুধার্ত হয়েছিল, ভুট্টার শিষ তুলে খেতে তাদের কোনো বারণ ছিল না। ঈশ্বরের চোখে তা খুবই স্বাভাবিক ছিল। ঈশ্বরের কাছে, যে নতুন কার্য তিনি শুরু করতে চান ও যে নতুন বাক্য তিনি উচ্চারণ করতে চান, সেগুলির অধিকাংশের ক্ষেত্রে এক নতুন সূচনা থাকা অনুমোদনযোগ্য। যখন তিনি নতুন কিছু আরম্ভ করেন, তিনি তাঁর পূর্ববর্তী কার্যের উল্লেখমাত্র করেন না, বা তা-র সম্পাদন অব্যাহতও রাখেন না। তাঁর কার্যে ঈশ্বরের যেহেতু নিজস্ব নীতি রয়েছে, সেহেতু তিনি কেবল তখনই নতুন কার্যের সূচনা করতে চান, যখন মানবজাতিকে তিনি তাঁর কার্যের এক নতুন পর্যায়ের মধ্যে আনতে চান, এবং তাঁর কার্য যখন এক উচ্চতর স্তরে প্রবেশ করবে। মানুষ যদি পুরাতন বাণী বা নিয়মকানুন অনুযায়ী কর্মসাধন চালিয়ে যায়, অথবা সেগুলি আঁকড়ে ধরে থাকে, তিনি তা মনে রাখবেন না বা অনুমোদন করবেন না। এর কারণ তিনি ইতিমধ্যেই নতুন কার্য নিয়ে এসেছেন, এবং তাঁর কার্যের এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছেন। যখন তিনি নতুন কার্যের সূত্রপাত করেন, মানুষের কাছে তিনি তখন এক সম্পূর্ণ নতুন প্রতিমূর্তিতে, এক সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এবং এক সম্পূর্ণ নতুন রীতিতে আবির্ভূত হন, যাতে মানুষ তাঁর স্বভাবের এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা-র ভিন্নতর দিকগুলি চাক্ষুষ করতে পারে। তাঁর নতুন কার্যে এটি তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। ঈশ্বর পুরানো বস্তুসমূহ আঁকড়ে থাকেন না অথবা প্রথামাফিক পথে চলেন না; যখন তিনি কর্ম করেন অথবা বক্তব্য রাখেন, তখন তিনি ততটাও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন না যতটা মানুষ ভাবে। ঈশ্বরের মধ্যে সকলই মুক্ত ও স্বাধীন, এবং কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কোনও সীমাবদ্ধতা নেই—তিনি মানবজাতির জন্য যা নিয়ে আসেন তা হল মুক্তি এবং স্বাধীনতা। তিনি হলেন এক জীবন্ত ঈশ্বর, এক ঈশ্বর যাঁর যথার্থ এবং প্রকৃত অর্থেই অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি কোনো পুতুল অথবা মাটির প্রতিমা নন, যে সকল বিগ্রহ মানুষ উপাসনালয়ে প্রতিষ্ঠা করে আরাধনা করে তার থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন। তিনি জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত, এবং তাঁর বাক্য মানুষের কাছে যা নিয়ে আসে তা হল সকল প্রাণ ও আলোক, সকল মুক্তি ও স্বাধীনতা, কারণ তিনিই ধারণ করেছেন সত্য, জীবন এবং পথ—তিনি তাঁর কর্মে কোনও কিছুর দ্বারাই প্রতিহত হন না। লোকে যা-ই বলুক বা যেভাবেই তারা তাঁর নতুন কার্যকে দেখুক বা মূল্যায়ন করুক, তিনি কোনো মানসিক দ্বন্দ্ব ছাড়াই তাঁর কার্য সম্পন্ন করবেন। তাঁর কার্য ও বাক্যের বিষয়ে কারো পূর্বধারণা বা অঙ্গুলিনির্দেশে, অথবা এমনকি তাঁর নতুন কার্যের প্রতি তাদের কঠোর বিরোধিতা ও প্রতিরোধের কারণেও, তিনি উদ্বেগপীড়িত হবেন না। ঈশ্বর যা করেন তা পরিমাপ করতে বা তাকে সংজ্ঞায়িত করতে, তাঁর কার্যের সম্মানহানি, বিঘ্নসাধন বা অন্তর্ঘাত ঘটাতে, সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে কেউ মানবিক যুক্তিবোধ, বা মানবিক কল্পনা, জ্ঞান, বা নৈতিকতা ব্যবহার করতে পারে না। তাঁর কার্য ও তিনি যা করেন তাতে কোনো নিষেধ নেই; কোনো মানুষ, ঘটনাবলী, বা বস্তুসমূহের দ্বারা তা সীমায়িত হবে না, অথবা কোনো বৈরীশক্তির দ্বারা তা বিঘ্নিতও হবে না। তাঁর নতুন কার্যের ক্ষেত্রে, তিনি হলেন এক সদা-জয়যুক্ত নৃপতি, এবং যেকোনো বৈরীশক্তি এবং মানবজাতির সকল ধর্মবিরোধিতা ও ভ্রান্ত বিশ্বাস তাঁর পাদপীঠের নীচে পদদলিত হয়। তাঁর কার্যের যে নতুন পর্যায়ই তিনি নিষ্পন্ন করুন না কেন, তা নিশ্চিতভাবেই মানবজাতির মাঝে বিকশিত ও সম্প্রসারিত হবে, এবং তাঁর মহান কার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই তা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে অপ্রতিহত গতিতে সম্পাদিত হবে। এ-ই হল ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানতা ও প্রজ্ঞা, তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা। তাই, প্রভু যীশু বিশ্রামবারে প্রকাশ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে কাজ করতে পারলেন, কারণ তাঁর হৃদয়ে মানবজাতি-সঞ্জাত কোনো নিয়ম, কোনো জ্ঞান বা মতবাদ ছিল না। তাঁর যা ছিল তা হল ঈশ্বরের নতুন কার্য ও ঈশ্বরের পথ। তাঁর কার্য ছিল মানবজাতিকে মুক্ত করার, নিষ্কৃতি প্রদানের, তাদের আলোর মধ্যে থাকতে ও জীবনযাপন করতে দেওয়ার পথ। ইতিমধ্যে, যারা মূর্তিপূজা এবং ভণ্ড ঈশ্বরের আরাধনা করে, তারা প্রতিদিন শয়তানের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে কালপাত করে, সমস্ত ধরনের নিষিদ্ধ বস্তু এবং নিষেধাজ্ঞার দ্বারা তারা প্রতিহত হয়—আজ একটা কিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় তো কাল অন্য কিছুর উপর—তাদের জীবনে কোনো স্বাধীনতা নেই। তারা বন্দীদের মতো শৃঙ্খলে বাঁধা জীবন যাপন করেন, তাদের জীবন বলার মতো কোনো আনন্দ নেই। “নিষেধাজ্ঞা” বলতে কী বোঝানো হয়? বোঝানো হয় প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতা, এবং অন্যায়। মানুষ যখনই মূর্তিপূজা শুরু করে, তখনই সে আরম্ভ করে এক ভণ্ড ঈশ্বরের, এক দুষ্ট আত্মার আরাধনা। এই সমস্ত কাজকর্মের সঙ্গেই নিষেধাজ্ঞার প্রশ্ন জড়িত। কী খেতে পারবে বা পারবে না, আজ তুমি বেরোতে পারবে না পারবে না, কাল তুমি রান্না করতে পারবে না, তার পরের দিন নতুন গৃহে প্রবেশ করতে পারবে না, বিবাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এমনকি সন্তানের জন্ম দেওয়ারও আলাদা করে দিন বেছে রাখতে হবে। এসবের অর্থ কী? এর অর্থ হল নিষেধাজ্ঞা; মানবজাতির জন্য দাসত্ব, শয়তান ও যে সকল দুষ্ট আত্মা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, মানুষের হৃদয় এবং শরীরের উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করতে চায়, এ সকল হল তাদেরই শৃঙ্খল। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি কি ঈশ্বরের মধ্যে বিদ্যমান? যখন ঈশ্বরের পবিত্রতার বিষয়ে বলা হয়, সর্বপ্রথম তোমার যা চিন্তা করা উচিত তা হল: ঈশ্বরের মধ্যে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাঁর বাক্যে ও কার্যে ঈশ্বরের নীতিসমূহ রয়েছে, কিন্তু কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কারণ স্বয়ং ঈশ্বরই হলেন সত্য, পথ, ও জীবন।

এবার শাস্ত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদটির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক: “আমি তোমাদের বলছি, মন্দিরের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে উপস্থিত। ‘দয়াতেই আমার প্রীতি, বলিদানে নয়,’ এ কথার মর্ম যদি বুঝতে তাহলে তোমরা নির্দোষকে দোষী সাব্যস্ত করতে না। মানবপুত্রই সাব্বাথ দিনের অধিপতি” (মথি ১২:৬-৮)। এখানে “মন্দির” শব্দটি কী নির্দেশ করে? সহজ কথায়, শব্দটি এক চমকপ্রদ, উঁচু ইমারতকে নির্দেশ করে, এবং বিধানের যুগে, যাজকরা এই মন্দিরেই ঈশ্বরের আরাধনা করতো। প্রভু যীশু যখন বলেছিলেন “মন্দিরের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে উপস্থিত,” এই “কিছু” বলতে কার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল? স্পষ্টতই, এই “কিছু” হলেন দেহরূপী প্রভু যীশু, কারণ একমাত্র তিনিই ছিলেন মন্দিরের থেকে মহত্তর। এই বাক্যগুলি মানুষকে কী বলেছিল? এগুলি মানুষকে মন্দির থেকে নিষ্ক্রান্ত হতে বলেছিল—ঈশ্বর ইতিপূর্বেই মন্দির ত্যাগ করেছিলেন এবং সেখানে আর কার্য করছিলেন না, তাই মানুষের উচিত মন্দিরের বাইরে ঈশ্বরের পদচিহ্নের সন্ধান করা, এবং তাঁর নতুন কার্যে তাঁর পদক্ষেপ অনুসরণ করা। প্রভু যীশু যখন এমনটি বলেছিলেন, তখন তাঁর বাক্যের পিছনে এক ভিত্তিপ্রস্তাবনা ছিল, যা হল, বিধানের অধীনে, মন্দিরকে মানুষ স্বয়ং ঈশ্বরের থেকেও মহত্তর কিছু বলে বিবেচনা করেছিল। অর্থাৎ, ঈশ্বরের আরাধনা করার বদলে মানুষ মন্দিরের আরাধনা করেছিল, তাই প্রভু যীশু তাদের সতর্ক করেছিলেন যাতে তারা মূর্তির আরাধনা না করে বরং পরিবর্তে ঈশ্বরের আরাধনা করে, কারণ তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই, তিনি বলেছিলেন: “দয়াতেই আমার প্রীতি, বলিদানে নয়।” এটি স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে প্রভু যীশুর দৃষ্টিতে, বিধানের অধীনে যাপনরত অধিকাংশ মানুষ আর যিহোবার আরাধনা করতো না, বরং, নিছকই আন্তরিকতাশূন্যভাবে তারা উৎসর্গ প্রদানের বিধি পালন করে যাচ্ছিল, এবং প্রভু যীশু নির্ণয় করেছিলেন যে, তা মূর্তিপূজারই নামান্তর। মন্দিরকে এই মূর্তি-উপাসকরা ঈশ্বর অপেক্ষাও মহত্তর ও উচ্চতর কিছু বলে জ্ঞান করেছিল। তাদের অন্তরে শুধু মন্দিরই ছিল, ঈশ্বর ছিলেন না, এবং তাদের যদি মন্দিরকে খোয়াতে হতো, তাহলে তারা তাদের বাসস্থানই হারিয়ে ফেলতো। মন্দিরের অবর্তমানে তাদের পূজার্চনার কোনো স্থান থাকতো না, এবং তারা তাদের উৎসর্গদান সম্পন্ন করতে পারতো না। মন্দিরে অবস্থানরতভাবে স্বীয় বিষয়কর্মাদি নির্বাহ করার উদ্দেশ্যে যেখানে তারা যিহোবা ঈশ্বরের অর্চনা করার মিথ্যা ছলনাকে ব্যবহার করতো, তা-ই হল তাদের তথাকথিত “বাসস্থান”। তাদের তথাকথিত “উৎসর্গ নিবেদন” ছিল নিতান্তই মন্দিরে সেবাকার্য পরিচালনার ছদ্মবেশে স্বীয় ব্যক্তিগত লজ্জাজনক কারবারগুলি নির্বাহ করা। এই কারণেই সেই সময়ের লোকজন মন্দিরকে ঈশ্বরের থেকে মহত্তর মনে করতো। মানুষের প্রতি এক সতর্কবার্তা হিসাবে প্রভু যীশু এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করেছিলেন, কারণ মানুষকে এবং ঈশ্বরকে প্রতারণা করার জন্য মন্দিরকে তারা এক ছদ্ম বাহ্যরূপ, এবং উৎসর্গ নিবেদনকে এক মিথ্যা অন্তরাল হিসাবে ব্যবহার করছিল। এই বাক্যগুলিকে তোমরা যদি বর্তমান সময়ের উদ্দেশে প্রয়োগ করো, তবে তা এখনো একই রকম কার্যকর ও সমান প্রাসঙ্গিক। যদিও আজকের দিনের মানুষ বিধানের যুগের মানুষ অপেক্ষা ঈশ্বরের কার্যের বিচিত্রতর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কিন্তু তাদের প্রকৃতির সারমর্ম অভিন্ন। আজকের কার্যের পরিপ্রেক্ষিতে, মানুষ এখনও “মন্দির ঈশ্বর অপেক্ষা মহত্তর” শব্দগুলির মাধ্যমে যা উপস্থাপিত হয়েছে, সেই একই ধরনের কাজই করবে। উদাহরণস্বরূপ, নিজেদের দায়িত্ব পালন করাকে মানুষ তাদের কাজ হিসাবে দেখে; ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করা ও অতিকায় লাল ড্রাগনের সঙ্গে লড়াই করাকে তারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সমর্থনে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে দেখে; নিজেদের দক্ষতার সদ্ব্যবহার করার কর্তব্যকে তারা তাদের পেশাগত বৃত্তিতে পরিণত করে, কিন্তু ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের মতো বিষয়কে তারা এক পালনীয় ধর্মীয় মতবাদের অতিরিক্ত কোনোকিছু বলে গণ্য করে না; এবং ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। এই আচরণগুলি মূলগতভাবে “মন্দির ঈশ্বর অপেক্ষা মহত্তর”-র সাথে অভিন্ন নয় কি? পার্থক্যটি হল, দু’হাজার বছর আগে, বাস্তব ইঁট-কাঠের মন্দিরে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত কারবারগুলি নিষ্পন্ন করছিল, কিন্তু আজকাল, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন মন্দিরে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসায় নির্বাহ করে থাকে। যেসব মানুষ নিয়মকানুনকে মূল্যবান জ্ঞান করে, তারা নিয়মকে ঈশ্বরের থেকে মহান বলে মনে করে, যেসব মানুষ পদমর্যাদা পছন্দ করে, তারা পদমর্যাদাকে ঈশ্বরের থেকে মহান বলে মনে করে, যারা নিজেদের পেশাগত বৃত্তিকে কে ভালোবাসে তারা তাদের পেশাগত বৃত্তিকে ঈশ্বরের থেকে মহান বলে মনে করে, ইত্যাদি—তাদের এইসব অভিব্যক্তি আমাকে বলতে প্ররোচিত করে: “মানুষ মুখের কথায় ঈশ্বরকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বন্দনা করে, কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে সবকিছুই ঈশ্বর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” এর কারণ হল, যেইমাত্র মানুষ নিজ-নিজ ঈশ্বরানুসরণের পথে স্বীয় প্রতিভা প্রদর্শনের, অথবা তাদের নিজস্ব ব্যবসায় বা বৃত্তি নির্বাহের কোনো সুযোগ দেখতে পায়, তখনই তারা নিজেদের ঈশ্বর থেকে দূরবর্তী করে ফেলে, এবং তাদের অতিপ্রিয় পেশাদারী জীবনে তারা নিজেদের নিক্ষিপ্ত করে। ঈশ্বর তাদের যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, এবং তাঁর অভিপ্রায়ের ন্যায় বিষয়গুলি বহু পূর্বেই পরিত্যক্ত হয়েছে। এই মানুষগুলির সঙ্গে দু’হাজার বছর আগে যারা মন্দিরে তাদের নিজস্ব ব্যবসায় পরিচালনা করতো সেই মানুষগুলির অবস্থার তফাৎটা কী?

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ৩

পূর্ববর্তী: পরীক্ষা-পরবর্তী সময়ে ইয়োব

পরবর্তী: মনুষ্যপুত্র হলেন বিশ্রামবারের প্রভু (পর্ব ২)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!”...

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

প্রথম দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বদান্যতায় মানবজাতির দিন এবং রাতের সূচনা হয় এবং অবিচল থাকে

প্রথম অনুচ্ছেদটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাকঃ: “ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন