দ্বিতীয় পর্ব: ঈশ্বর প্রতিটি প্রকারের প্রাণীর জন্য সীমানা নির্ধারণ করেন
ঈশ্বরের দ্বারা চিহ্নিত এই সীমানাগুলির কারণে, বিভিন্ন ভূমিরূপ জীবনধারণের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ সৃজন করেছে, এবং জীবনধারণের এই পরিবেশগুলি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও জীবজন্তুর পক্ষে উপযুক্ত হয়ে উঠেছে এবং তাদের উদ্বর্তনের পরিসরও দিয়েছে। এখান থেকেই বিভিন্ন জীবন্ত সত্তার জীবনধারণের পরিবেশের সীমারেখা গড়ে উঠেছে। এ-ই হল দ্বিতীয় অংশ, এর পরে যার বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে চলেছি। প্রথমত, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ কোথায় বাস করে? তারা কি জঙ্গল ও ঝোপেঝাড়ে বাস করে? এগুলিই তাদের বাসগৃহ। তাই, বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের সীমানা নির্ধারণ করা ছাড়াও, ঈশ্বর বিবিধ পাখি ও জীবজন্তু, মাছ, পতঙ্গ ও যাবতীয় উদ্ভিদের জন্য সীমানা চিহ্নিত ও বিধান প্রবর্তন করেছিলেন। বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশের মধ্যে পার্থক্যের কারণে, এবং বিবিধ ভৌগোলিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকার কারণে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও জীবজন্তু, মাছ, পতঙ্গ ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেশ রয়েছে। পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ নানাবিধ গাছপালার মাঝে বসবাস করে, মাছ বাস করে জলে, আর উদ্ভিদ স্থলভূমিতে বর্ধিত হয়। স্থলভূমির মধ্যে পর্বত, সমতল, পাহাড় ইত্যাদি বিবিধ অঞ্চল রয়েছে। পশুপাখিরা একবার তাদের নিজস্ব সুনির্দিষ্ট বাসভূমি পেয়ে গেলে তারা আর উদ্দেশ্যহীনভাবে ইতঃস্তত বিচরণশীল হয় না। অরণ্য ও পর্বত হল তাদের বাসভূমি। কোনোদিন তাদের বাসভূমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেলে, এই শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যেতো। শৃঙ্খলা লণ্ডভণ্ড হওয়ামাত্র, তার পরিণাম কী হয়? প্রথম কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়? প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানবজাতি। ঈশ্বর-প্রবর্তিত এইসকল বিধান ও সীমারেখার মধ্যে তোমরা কি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা লক্ষ্য করেছো? যেমন ধরো, মরুভূমির মধ্যে হাতির বিচরণ। এমনতর কিছু কি তোমরা দেখেছো? এমনটি যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তবে তা হবে এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা, কারণ হাতি বাসস্থান হল অরণ্য, এবং অরণ্যই হল তাদের জন্য ঈশ্বর-প্রনীত জীবনধারণের পরিবেশ। তাদের জীবনধারণের জন্য নিজস্ব পরিমণ্ডল এবং নিজস্ব সুনির্দিষ্ট বাসভূমি আছে, তাহলে কেন তারা ইতস্তত ছুটে বেড়াতে যাবে? কেউ কি বাঘ-সিংহকে সমুদ্রসৈকতে বিচরণ করতে দেখেছ? না, তোমরা তা দেখনি। বাঘ-সিংহের বাসগৃহ হল অরণ্য ও পর্বত। সমুদ্রবাসী তিমি বা হাঙ্গরকে কি কেউ মরুভূমির মধ্য দিয়ে সন্তরণরত হতে দেখেছ? না, তোমরা তেমন কখনো দেখনি। তিমি ও হাঙ্গর সমুদ্রের মধ্যে তাদের আবাস নির্মান করে। মানুষের যাপন-পরিবেশে, বাদামি ভালুকের সঙ্গে সহাবস্থান করে এমন মানুষ কি রয়েছে? এমন মানুষ কি রয়েছে যারা তাদের ঘরে ও বাইরে সর্বদা ময়ূর বা অন্য পাখিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে? কেউ কি ঈগল বা বুনো হাঁসকে বানরের সাথে খেলতে দেখেছে? (দেখেনি।) এই সমস্তকিছুই অস্বাভাবিক সংঘটন হতো। আমি যে এমন সব বিষয়ের অবতারণা করছি যা তোমাদের কানে এত অদ্ভুত ঠেকছে এর উদ্দেশ্য হল তোমাদের এই মর্মে উপলব্ধি করানো যে, ঈশ্বর-সৃষ্ট সকলকিছুর—তা স্থাবর হোক অথবা জঙ্গম, বা তারা নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করতে পারুক কি না পারুক—তাদের উদ্বর্তনের নিজস্ব বিধি আছে। এই সজীব সত্তাগুলি সৃষ্টি করার বহু পূর্বেই ঈশ্বর তাদের জন্য নিজস্ব বাসভূমি ও জীবনধারণের উদ্দেশ্যে তাদের নিজস্ব পরিবেশ নির্মাণ করেছিলেন। তাদের জীবনধারণের উদ্দেশ্যে এই জীবিত সত্তাগুলির নিজস্ব পরিমণ্ডল, তাদের নিজস্ব খাদ্য ও তাদের নিজস্ব সুনির্দিষ্ট বাসভূমি ছিল, এবং তাদের বেঁচে থাকার উপযোগী নিজস্ব সুনির্দিষ্ট স্থান, তাদের জীবনধারণের পক্ষে উপযুক্ত উষ্ণতাবিশিষ্ট স্থান ছিল। তাই তারা যেদিকে ইচ্ছা ইতস্তত ঘুরে বেড়াতো না, বা মানবজাতির উদ্বর্তনকে বিপদগ্রস্ত করতো না, বা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতো না। এইভাবেই, ঈশ্বর সকলকিছু পরিচালনা করেন, মানবজাতির জীবনধারণের নিমিত্ত সর্বোৎকৃষ্ট পরিবেশের সংস্থান করেন। তার জীবনধারণের নিজস্ব পরিবেশের মধ্যেই প্রত্যেক জীবন্ত সত্তা তার নিজস্ব জীবন-পরিপোষক খাদ্য আহরণ করে। এই খাদ্যের মাধ্যমে তারা তাদের জীবনধারণের মূলীভূত পরিবেশের সঙ্গে সংসক্ত থাকে। সেই ধরনের প্রতিবেশের মধ্যে তাদের জন্য ঈশ্বর-প্রবর্তিত বিধান অনুযায়ী তারা তাদের উদ্বর্তন, বংশবৃদ্ধি, এবং অগ্রগমন অব্যাহত রাখে। এইরূপ বিধানসমূহের কারণে, ঈশ্বরকৃত পূর্বনির্ধারণের কারণে, মানবজাতির সঙ্গে সকলকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসবাস করে, এবং মানবজাতি সকলকিছুর সঙ্গে পারস্পরিক নির্ভরতার ভিত্তিতে একত্রে সহাবস্থান করে।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ৯