ঈশ্বরের ইয়োবকে শয়তানের হাতে তুলে দেওয়া এবং ঈশ্বরের কাজের লক্ষ্যের মধ্যে সম্পর্ক

যদিও অধিকাংশ মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে ইয়োব ত্রুটিমুক্ত ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিল এবং সে ঈশ্বরে ভীত ছিল ও মন্দকে পরিত্যাগ করে চলত, কিন্তু এই উপলব্ধি ঈশ্বরের অভিপ্রায় সম্পর্কে তাদের কোনো বৃহত্তর ধারণা দেয় না। ইয়োবের মানবিকতা ও সাধনার প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়ার পাশাপাশি তারা ঈশ্বরকে প্রশ্ন করে: ইয়োব এত নিখুঁত ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিল, লোকজন তাকে এত সম্মান করত, তাহলে ঈশ্বর তাকে শয়তানের হাতে তুলে দিয়ে তাকে এত যন্ত্রণার সম্মুখীন করেছিলেন কেন? এই ধরনের প্রশ্ন অনেকের হৃদয়েই থাকতে বাধ্য—অথবা বলা যায়, এই সংশয় অনেকের হৃদয়েরই প্রশ্ন। যেহেতু এই বিষয়টা অনেককেই বিহ্বল করেছে, তাই আমাদের অবশ্যই এই প্রশ্নটা আলোচনা করতে হবে এবং যথাযথভাবে এটার ব্যাখ্যা করতে হবে।

ঈশ্বর যা করেন তার সবকিছুই প্রয়োজনীয় এবং অসাধারণ তাত্পর্যময়, কারণ তিনি মানুষের মধ্যে যা করেন তা তাঁর ব্যবস্থাপনা এবং মানবজাতির পরিত্রাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বাভাবিকভাবেই, ঈশ্বর জোবের মধ্যে যে কাজ করেছিলেন তা ভিন্ন নয়, যদিও জোব ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিখুঁত এবং ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন। অন্য কথায়, ঈশ্বর যা করেন বা যে উপায়ে তিনি তা করেন তা নির্বিশেষে, মূল্য নির্বিশেষে, তাঁর উদ্দেশ্য নির্বিশেষে, তাঁর কাজের উদ্দেশ্যের পরিবর্তন হয় না। তাঁর উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের বাক্যগুলি মানুষের মধ্যে কাজ করানো, সেইসঙ্গে মানুষের জন্য ঈশ্বরের চাহিদা এবং ইচ্ছা পূরণ করানো; অন্য কথায়, এটি হল ঈশ্বর তাঁর পদক্ষেপ অনুযায়ী যা ইতিবাচক বলে বিশ্বাস করেন মানুষের মধ্যে সেই কাজ সম্পাদন করা, ঈশ্বরের হৃদয়ের নাগাল পেতে এবং ঈশ্বরের সারসত্য অনুধাবন করতে মানুষকে সক্ষম করে তোলা, এবং মানুষকে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও আয়োজন মেনে চলার অনুমতি দেওয়া, এইভাবে মানুষকে ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ অর্জন করানো—এর সবই হল ঈশ্বরের সমস্ত কাজে তাঁর উদ্দেশ্যের একটি দিক। অন্য দিকটি হল, যেহেতু শয়তান হল ঈশ্বরের কাজের বিপরীত যা তাঁর কাজকে মহিমান্বিত করে, আর ঈশ্বরের কাজের সেবার সামগ্রী, তাই মানুষ প্রায়শই শয়তানকে প্রদত্ত হয়; এই হল সেই উপায় যা ঈশ্বর মানুষকে শয়তানের প্রলোভন দেখার অনুমতি দিতে ব্যবহার করেন, এবং শয়তানের দুষ্টতা, কদর্যতা, ও নীচতাকে আক্রমণ করেন, এইভাবে মানুষ শয়তানকে ঘৃণা করে এবং যা কিছু নেতিবাচক তা জানতে ও চিনতে সক্ষম হয়। এই প্রক্রিয়াটি তাদের সক্ষম করে তোলে ধীরে ধীরে শয়তানের নিয়ন্ত্রণ এবং অভিযোগ, হস্তক্ষেপ, ও আক্রমণ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে—যতক্ষণ না ঈশ্বরের বাক্যসমূহ, তাদের জ্ঞান এবং ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য, এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি ভীতির সৌজন্যে তারা শয়তানের আক্রমণ এবং অভিযোগের উপর জয়লাভ করে; তবেই তারা সম্পূর্ণরূপে শয়তানের আধিপত্য থেকে মুক্তি পাবে। মানুষের মুক্তির অর্থ হল শয়তান পরাজিত হয়েছে, এর অর্থ হল তারা আর শয়তানের মুখের আহার নয়—তাদের গিলে ফেলার পরিবর্তে, শয়তান তাদের পরিত্যাগ করেছে। এর কারণ হল এই ধরনের মানুষ ন্যায়নিষ্ঠ হয়, কারণ তাদের বিশ্বাস, আনুগত্য এবং ঈশ্বরের প্রতি ভয় রয়েছে, এবং তারা শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে। তারা শয়তানকে লজ্জিত করে, তারা শয়তানকে ভীরুতে পরিণত করে, এবং তারা শয়তানকে পুরোপুরি পরাজিত করে। ঈশ্বরের অনুসরণে তাদের প্রত্যয়, এবং ঈশ্বরের আনুগত্য ও ঈশ্বরের প্রতি ভীতি শয়তানকে পরাজিত করে, এবং শয়তানকে বাধ্য করে তাদের সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে। শুধুমাত্র এই ধরনের মানুষই প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হয়েছে, এবং এটিই হল মানুষকে রক্ষা করায় ঈশ্বরের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। যদি তারা পরিত্রাণ পেতে চায়, এবং ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হতে চায়, তবে যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তাদের অবশ্যই শয়তানের কাছ থেকে ছোট ও বড় উভয় ধরনের প্রলোভন ও আক্রমণেরই সম্মুখীন হতে হবে। যারা এই প্রলোভন ও আক্রমণের মধ্যে থেকে উদ্ভূত হয় এবং শয়তানকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে সক্ষম হয় তারাই হল সেই মানুষ যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে। এর অর্থ হল, যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে তারা হল সেইসব মানুষ যারা ঈশ্বরের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে এবং যারা শয়তানের দ্বারা বহুবার প্রলুব্ধ ও আক্রান্ত হয়েছে। যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পেয়েছে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং প্রয়োজনীয়তাগুলি বোঝে, এবং ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও আয়োজনের অনুবর্তী হতে সক্ষম, এবং তারা শয়তানের প্রলোভনের মাঝে পড়ে ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথ থেকে সরে যায় না। যারা ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণ পায় তারা সততার অধিকারী, তারা দয়ালু, তারা প্রেম এবং ঘৃণার মধ্যে পার্থক্য করে, তাদের ন্যায়বিচারের বোধ রয়েছে ও তারা যুক্তিবাদী, এবং তারা ঈশ্বরের যত্ন করতে ও তাঁর সব কিছু মূল্যবান মনে করতে সক্ষম। এই ধরনের মানুষ শয়তানের দ্বারা আবদ্ধ নয়, তারা শয়তানের গুপ্তচরবৃত্তি, অভিযোগ বা অপব্যবহারের শিকার হয় না; তারা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত। জোব ঠিক এমনই একজন স্বাধীন মানুষ ছিলেন, এবং ঈশ্বর কেন তাকে শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য ঠিক এটিই।

ইয়োব শয়তানের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সে চিরন্তন স্বাধীনতা ও মুক্তিও অর্জন করেছিল, এবং সে আর কখনও শয়তানের ভ্রষ্টাচার, নিপীড়ন ও অভিযোগের শিকার না হওয়ার অধিকার অর্জন করেছিল, পরিবর্তে সে ঈশ্বরের মুখমণ্ডলের আলোকে মুক্ত এবং ভারমুক্ত জীবনযাপন করতে এবং ঈশ্বর প্রদত্ত আশীর্বাদের মধ্যে বেঁচে থাকতে পেরেছিল। কেউই তার এই অধিকার ছিনিয়ে নিতে, নষ্ট করতে বা বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি। ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের বিশ্বাস, সংকল্প ও আনুগত্য এবং তার ঈশ্বর ভীতির বিনিময়ে তাকে এটা প্রদান করা হয়েছিল। পৃথিবীতে খুশী ও আনন্দ জিতে নেওয়ার জন্য, স্বর্গের দ্বারা অভিষিক্ত ও পৃথিবীর দ্বারা স্বীকৃত অধিকার ও স্বীকৃতি লাভ করার জন্য, পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রকৃত জীব হিসাবে বাধাহীন ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে উপাসনা করার জন্য ইয়োব নিজের জীবনের মূল্য প্রদান করেছিল। ইয়োব যে প্রলোভন সহ্য করেছিল তার সবচেয়ে বড় ফলাফলও আবার এটাই ছিল।

মানুষের যখন উদ্ধার লাভ করা বাকি থাকে, তখন তাদের জীবনে শয়তান প্রায়ই হস্তক্ষেপ করে, এমনকি তা নিয়ন্ত্রণও করে। অন্য ভাষায়, যাদের উদ্ধার করা হয়নি, তারা শয়তানের কাছে বন্দী, তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই, তারা শয়তানের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়নি, তারা ঈশ্বরের উপাসনা করার যোগ্য বা অধিকারী নয়, এবং তাদের শয়তান ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে ও ভয়ঙ্করভাবে আক্রমণ করে। বলার মতো কোনো সুখ এরকম মানুষদের নেই, বলার মতো স্বাভাবিক অস্তিত্বের অধিকার তাদের নেই, এবং বলার মতো মর্যাদাও তাদের নেই। শুধুমাত্র যদি তুমি উঠে দাঁড়িয়ে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে পারো, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, আনুগত্য এবং ঈশ্বরের ভীতিকে অস্ত্র করে শয়তানের সাথে এমন সুতীব্র জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারো, যাতে শয়তান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয় এবং তোমাকে দেখলেই লেজ গুটিয়ে ফেলে ও ভীত হয়ে ওঠে, যাতে সে যদি সম্পূর্ণভাবে তোমার বিরুদ্ধে আক্রমণ ও অভিযোগ করা বন্ধ করে দেয়—শুধু তখনই তুমি উদ্ধার লাভ করবে ও স্বাধীন হয়ে উঠবে। যদি তুমি শয়তানের শৃঙ্খল সম্পূর্ণ ছিঁড়ে বেরোনোর বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও, অথচ শয়তানকে পরাজিত করার পক্ষে সহায়ক অস্ত্র তোমার কাছে না থাকে, তাহলে তখনও তুমি বিপদের মধ্যেই থাকবে। সময়ের সাথে সাথে, যখন তুমি শয়তানের কাছে এতটাই অত্যাচারিত হয়েছ যে তোমার মধ্যে কণামাত্র শক্তিও অবশিষ্ট নেই, অথচ তখনও তুমি সাক্ষ্য বহনে সমর্থ হওনি, তোমার বিরুদ্ধে শয়তানের অভিযোগ ও আক্রমণের থেকে তখনও সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ করতে পারোনি, তাহলে তোমার পরিত্রাণের খুব সামান্যই আশা থাকবে। পরিশেষে, যখন ঈশ্বরের কাজের উপসংহার ঘোষিত হবে, তখনও তুমি শয়তানের মুঠোতেই থেকে যাবে, নিজেকে মুক্ত করতে অসমর্থ অবস্থায়, এবং এইভাবে তোমার আর কখনোই কোনো সুযোগ বা আশা থাকবে না। অর্থাৎ এর তাৎপর্য হল, এই ধরনের লোকেরা সম্পূর্ণরূপে শয়তানের বন্দীদশাতেই থেকে যাবে।

—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ২

পূর্ববর্তী: ইয়োবের সম্বন্ধে

পরবর্তী: ঈশ্বরের পরীক্ষাগুলি গ্রহণ করো, শয়তানের প্রলোভনগুলি অতিক্রম করো, এবং ঈশ্বরকে তোমার সমগ্র সত্তা অর্জন করতে দাও

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন...

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে...

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন