সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব স্থান, কাল, বা ভৌগোলিক পরিসরের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব গণনার অতীত
আদিপুস্তক ২২:১৭-১৮ শ্লোকদুটির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। এটি যিহোবা ঈশ্বরের কথিত আরেকটি অনুচ্ছেদ, যেখানে তিনি অব্রাহামকে বলেছিলেন, “আমি নিশ্চয়ই তোমাকে প্রচুর বর দান করব। আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব। তোমার বংশধরেরা শত্রুদের পুরী অধিকার করবে। তোমার বংশের মত আশীর্বাদ লাভের জন্য পৃথিবীর সকল জাতি বিনতি জানাবে। কারণ তুমি আমার আদেশ পালন করেছ।” অব্রাহামকে যিহোবা ঈশ্বর অনেকবারই আশীর্বাদ প্রদান করেছেন যে তার সন্তান-সন্ততিরা বংশবিস্তার করবে—কিন্তু তারা কী পরিমাণ বংশবৃদ্ধি করবে? তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে শাস্ত্রে উল্লেখিত মাত্রায়: “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত”। অর্থাৎ, ঈশ্বর অব্রাহামকে আকাশের তারকারাজির মতো বিপুল সংখ্যক, এবং সমুদ্রসৈকতের বালুরাশির মতো অঢেল সংখ্যক অপত্যাদি প্রদান করতে চেয়েছিলেন। ঈশ্বর তাঁর বাক্যোচ্চারণে চিত্রকল্পের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এই চিত্রকল্প থেকে এটি বুঝে ওঠা কষ্টকর কিছু নয় যে, ঈশ্বর অব্রাহামকে কেবল একটি, দুটি, বা এমনকি কয়েক হাজার মাত্রও নয়, বরং এমন এক অগণন সংখ্যক সন্তানসন্ততি প্রদান করবেন, যাতে তাদের মধ্য থেকে অজস্র জনগোষ্ঠী উঠে আসার পক্ষে তা পর্যাপ্ত হয়, এর কারণ ঈশ্বর অব্রাহামকে অসংখ্য জাতির জনকে পরিণত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। এখন, এই সংখ্যাটি কি মানুষের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়েছিল, না কি ঈশ্বরের দ্বারা? মানুষ কি তার অপত্যাদির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? তা কি মানুষের হাতে? এমনকি গুটিকয়েক বংশধর থাকবে কি না সেটি ঠিক করার হকও মানুষের নেই, “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত” অগণিত সংখ্যক উত্তরপুরুষের কথা তো না তোলাই ভালো। আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের মতো অগণিত সংখ্যক বংশধর থাকুক তা কে না চায়? দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা যেমন চাই সবসময় তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যতোই দক্ষ বা সমর্থ হোক না কেন, এই বিষয়টি তার আয়ত্তে নেই; ঈশ্বর যা পূর্বনির্ধারণ করে দিয়েছেন কেউই নিজেকে তার পরিসীমার বাইরে স্থাপন করতে পারে না। তিনি যতটুকু তোমায় অনুমোদন করবেন, ততটুকুই তুমি লাভ করবে: ঈশ্বর তোমায় যদি অল্প একটুখানি প্রদান করেন, তাহলে তার বেশি তুমি কখনোই পাবে না, আর ঈশ্বর যদি তোমায় প্রভূত পরিমাণে দেন, তাহলে তোমার কতটা আছে ভেবে তিক্ততা বোধ করে কোনো লাভ নেই। বিষয়টি এমনই নয় কি? এই সবকিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন, মানুষের নয়! মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত হয়, এবং কেউই এর ব্যতিক্রম নয়!
ঈশ্বর যখন বলেছিলেন “আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব”, তখন তা ছিল অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের স্থাপিত এক সন্ধিচুক্তি, এবং মেঘধনু সন্ধিচুক্তির মতোই, এটি অনন্তকালের জন্য সম্পন্ন হবে, এবং সেই সাথে এটি অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর-কৃত এক অঙ্গীকারও ছিল। একমাত্র ঈশ্বরই এই অঙ্গীকারকে বাস্তবায়িত করার যোগ্যতাসম্পন্ন ও সামর্থ্যের অধিকারী। মানুষ তা বিশ্বাস করুক বা না করুক, মানুষ তা স্বীকার করুক বা না করুক, এবং মানুষ যেভাবেই একে দেখুক বা বিবেচনা করুক না কেন, এর সবটাই ঈশ্বর কথিত বাক্য অনুসারে অক্ষরে অক্ষরে কার্যায়িত হবে। মানুষের ইচ্ছা বা পূর্বধারণা পাল্টে যাওয়ার দরুন ঈশ্বরের বাক্যাবলীর কোনো পরিবর্তন ঘটবে না, এবং কোনো ব্যক্তি, ঘটনা বা বস্তুর রূপান্তরের কারণে তার রদবদল ঘটবে না। সমস্ত বস্তুই অবলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যসকল অনন্তকাল রয়ে যাবে। বস্তুত, যেই দিন সমস্ত বস্তু অন্তর্হিত হবে ঠিক সেই দিনই ঈশ্বরের বাক্য সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হবে, কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধিকারী, সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার অধিকারী, এবং তিনি যাবতীয় বস্তু ও সকল জীবনীশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন; তিনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বের উদ্ভব ঘটাতে, ও অস্তিত্বকে অনস্তিত্বে পর্যবসিত করতে সক্ষম, এবং জীবিত থেকে মৃত সকল বস্তুর রূপান্তরকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন; সেই ঈশ্বরের পক্ষে, কারো বংশবৃদ্ধি করার থেকে অনায়াসসাধ্য কাজ আর কিছু হতে পারতো না। মানুষের কাছে এটি কল্পনার মতো শোনায়, কোনো রূপকথার গল্পের মতো, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে, তিনি যা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন তা কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়, এবং কোনো রূপকথাও নয়। বরং, তা এমন এক ঘটনা যা ঈশ্বর ইতিমধ্যেই মানসচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং যা অবশ্যই নিষ্পন্ন হবে। তোমরা কি বিষয়টি উপলব্ধি করছো? এই বাস্তব সত্যগুলি কি প্রতিপন্ন করে যে অব্রাহামের বংশধরগণ সংখ্যায় সুপ্রচুর ছিল? সংখ্যায় তারা কী পরিমাণ সুপ্রচুর ছিল? তারা কি ঈশ্বর-কথিত “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত” সুপ্রচুর ছিল? তারা কি সকল রাষ্ট্র ও সমস্ত অঞ্চল ব্যাপী, পৃথিবীর সকল স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল? কীসের মাধ্যমে এই ঘটনাটি সম্পন্ন হয়েছিল? এটি কি ঈশ্বরের বাক্যের কর্তৃত্বের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল? ঈশ্বরের বাক্যগুলি উচ্চারিত হওয়ার বেশ কয়েক শত বা সহস্র বছর পরেও, ঈশ্বরের বাক্যগুলি পূর্ণ হয়ে চলেছিল, এবং ক্রমাগত বাস্তবে পরিণত হচ্ছিল; এটিই ঈশ্বরের বাক্যের শক্তিমত্তা, এবং এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রমাণ। শুরুতে ঈশ্বর যখন সকলকিছুর সৃজন ঘটিয়েছিলেন, তখন ঈশ্বর বললেন “আলোর অভ্যুদয় হোক”, এবং আলো আবির্ভূত হল। এটি খুব দ্রুত সংঘটিত হয়েছিল, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সাধিত হয়েছিল, এবং এর সম্পাদন ও পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব ঘটেনি; ঈশ্বরের বাক্যসমূহের ফলাফলগুলি ছিল তাৎক্ষণিক। উভয়ই ছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এক প্রদর্শন, কিন্তু ঈশ্বর যখন অব্রাহামকে আশীর্বাদ প্রদান করেছিলেন, মানুষকে তিনি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সারসত্যের আরেকটি দিক দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন, এবং এই সত্যও জানিয়েছিলেন যে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব গণনার অতীত, উপরন্তু, মানুষকে তিনি সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের বাস্তবতর, আরো অপরূপ এক দিক প্রত্যক্ষ করার সুযোগও দিয়েছিলেন।
ঈশ্বরের বাক্যগুলি একবার উচ্চারিত হয়ে গেলে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এই কার্যের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয়, এবং ঈশ্বরের মুখ থেকে যে সত্য প্রতিশ্রুত হয়েছিল ধীরে ধীরে তা বাস্তবে পরিণত হতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ, সকলকিছুর মধ্যে পরিবর্তনসমূহ প্রতীয়মান হয়ে উঠতে আরম্ভ করে, অনেকটা যেরকম ভাবে বসন্তের আগমনের সাথে সাথে তৃণগুল্ম শ্যামল হয়ে ওঠে, পুষ্পাদি প্রস্ফুটিত হয়, গাছপালা থেকে মুকুল উদ্গত হয়, পাখিরা গান গাইতে শুরু করে, বুনো হাঁসেরা প্রত্যাবর্তন করে, এবং কৃষিক্ষেত্রগুলি মানুষে মানুষে ছয়লাপ হয়ে ওঠে…। বসন্তের আগমনের সাথে সাথে সমস্ত কিছু নবযৌবন লাভ করে, এবং এটাই হল সৃষ্টিকর্তার অত্যদ্ভূত ক্রিয়াকর্ম। ঈশ্বর যখন তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেন, তখন স্বর্গ ও মর্ত্যের সকলকিছু ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী পুনঃনবায়িত ও রূপান্তরিত হয়—কেউই এর ব্যতিক্রম নয়। ঈশ্বরের মুখ থেকে যখন কোনো অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়, তখন সকল বস্তু এর পরিপূরণের কাজে ব্রতী হয়, এবং এর সিদ্ধির স্বার্থে এদের দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা হয়; ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে সকল সৃষ্টবস্তু সুসমন্বিত ও বিন্যস্ত হয়ে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে এবং নিজ নিজ ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করে যায়। এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্যে তুমি কী দেখতে পাও? ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে তুমি কীভাবে জানতে পারো? ঈশ্বরের কর্তৃত্বের কি কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা আছে? এর কি কোনো সময়সীমা রয়েছে? একে কি একটি বিশেষ উচ্চতাবিশিষ্ট, বা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বলে চিহ্নিত করা যায়? একে কি কোনো নির্দিষ্ট আকারের বা নির্দিষ্ট শক্তিসম্পন্ন বলে উল্লেখ করা যায়? মানুষের মাত্রার ধারণা দিয়ে কি এর পরিমাপ করা যায়? ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সময়ের সাথে হ্রাস-বৃদ্ধি পায় না, আসা-যাওয়া করে না, এবং এমন কেউ নেই যে তাঁর কর্তৃত্বের সঠিক বিরাটত্ব পরিমাপ করতে পারে। কোনো মানুষকে যখন ঈশ্বর আশীর্বাদ করেন, তারপর যত দিনই অতিবাহিত হোক না কেন, এই আশীর্বাদের ক্রিয়া বহাল থাকবে, এবং এই নিরবচ্ছিন্নতাই ঈশ্বরের অমেয় কর্তৃত্বের সাক্ষ্য বহন করবে, এবং বারংবার, মানবজাতিকে তা সৃষ্টিকর্তার অনির্বাণ প্রাণশক্তির পুনরাবির্ভাবকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেবে। তাঁর কর্তৃত্বের প্রতিটি প্রদর্শন তাঁর মুখনিঃসৃত বাক্যের নিখুঁত বহিঃপ্রকাশ, যা সকল বস্তু ও মানবজাতির সামনে প্রদর্শিত হয়। তদুপরি, তাঁর কর্তৃত্বের দ্বারা নিষ্পন্ন সমস্ত কিছু তুলনাতীত পর্যায়ের সৌন্দর্যসম্পন্ন, এবং চূড়ান্ত রকমের নিখুঁত। বলা যায়, তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর বাক্য, তাঁর কর্তৃত্ব, এবং তাঁর দ্বারা সাধিত সকল কার্য—এদের সবকিছুই এক অতুলনীয় রকমের অভিরাম চিত্র, এবং সৃজিত প্রাণীদের জন্য, মানবজাতির ভাষা এর তাৎপর্য ও মূল্যকে সুস্পটভাবে ব্যক্ত করতে অক্ষম। ঈশ্বর যখন কোনো মানুষের কাছে কোনো অঙ্গীকার করেন, তখন সেই মানুষটির সম্পর্কিত সকলকিছুর বিষয়ে তিনি তাঁর নিজের হাতের তালুর মতো সুবিদিত, সে কোথায় বাস করে, বা কী কাজ করে, প্রতিশ্রুতি লাভের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কালে তার পশ্চাৎপট, কিম্বা তার বসবাসের পরিবেশ কত বড়ো ভাঙচুরের সম্মুখীন হয়েছে—সবই ঈশ্বরের জানা। ঈশ্বরের বাক্য উক্ত হওয়ার পর যত সময়ই অতিবাহিত হোক না কেন, তাঁর কাছে, মনে হয় যেন বাক্যগুলি সবেমাত্র উচ্চারিত হয়েছে। এর অর্থ, ঈশ্বরের ক্ষমতা রয়েছে, এবং সেই জাতীয় কর্তৃত্ব রয়েছে যার সাহায্যে মানবজাতির কাছে তাঁর প্রতিশ্রুত প্রতিটি অঙ্গীকারের বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল থাকেন, সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, এবং সেগুলির পরিপূরণ ঘটান, এবং অঙ্গীকারটি যাই হোক না কেন, এটির সামগ্রিক পরিপূরণ ঘটাতে যত সময়ই লাগুক না কেন, এবং, উপরন্তু, এর নিষ্পাদন যত প্রশস্ত পরিসর জুড়েই ব্যাপ্ত থাকুক না কেন—উদাহরণস্বরূপ, সময়, ভূগোল, জাতি, এবং এরকম আরো কিছু—এই অঙ্গীকারের সম্পাদন ও পরিপূরণ হবেই, এবং, তদুপরি, এর সম্পাদন ও পরিপূরণের জন্য তাঁর সামান্যতম প্রচেষ্টা প্রয়োগের প্রয়োজনও পড়বে না। এর থেকে কী প্রমাণ হয়? এতে প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বিস্তার সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে, এবং সমগ্র মানবজাতিকে, নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে যথেষ্ট। ঈশ্বর আলোর সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বর শুধুমাত্র আলোকেই পরিচালনা করেন, বা তিনি জল সৃষ্টি করেছিলেন বলে কেবল জলকেই পরিচালনা করেন, এবং এমন নয় যে বাকি সমস্ত কিছু ঈশ্বরের সঙ্গে অসম্পর্কিত। এমন ভাবলে তা কি এক ভ্রান্ত উপলব্ধি হতো না? অব্রাহামের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষণের ঘটনাটি কয়েক শত বৎসর পর যদিও মানুষের স্মৃতিতে ধীরে ধীরে আবছা হয়ে এসেছিল, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে, ঐ অঙ্গীকার তখনো একই রকম রয়ে গিয়েছিল। তখনো তা সম্পাদনের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, এবং কখনো স্থগিত হয়নি। ঈশ্বর কীভাবে তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, কীভাবে সকল বস্তুকে সুসমন্বিত ও বিন্যস্ত করা হয়েছিল, এবং সেই সময় ঈশ্বরের সৃষ্টির সকল বস্তুর মধ্যে কত বিস্ময়কর কাহিনী সংঘটিত হয়েছিল সেসব কথা মানুষ কখনো জানেও নি এবং শোনেও নি, কিন্তু ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রদর্শন ও তাঁর কৃতকর্মের উদ্ঘাটনের প্রতিটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত সকল বস্তুর মধ্যে সঞ্চালিত ও বন্দিত হয়েছিল, সকল বস্তু সৃষ্টিকর্তার অত্যদ্ভূত ক্রিয়াকলাপগুলি পরস্পরকে দেখিয়েছিল ও সে বিষয়ে কথা বলাবলি করেছিল, এবং সকল বস্তুর উপর সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের প্রতিটি বহু-কথিত কাহিনী আরো অনন্তকাল ব্যাপী সকল বস্তুর দ্বারা উৎকীর্তিত হবে। যে কর্তৃত্বের সাথে ঈশ্বর সকল বস্তুর উপর আধিপত্য করেন, এবং ঈশ্বরের ক্ষমতা, সকল বস্তুকে দেখায় যে ঈশ্বর সর্বস্থানে ও সর্বকালে বিরাজমান। একবার যখন তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সর্বব্যাপিতা প্রত্যক্ষ করে ফেলবে, তখন তুমি দেখতে পাবে যে ঈশ্বর সর্বত্র ও সর্বকালে বিরাজমান। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কাল, দেশ, পরিসর, বা কোনো মানুষ, ঘটনা বা বস্তুর দ্বারা আরোপিত সীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রসার মানুষের কল্পনার সীমাকে অতিক্রম করে যায়; মানুষের কাছে তা দুর্জ্ঞেয়, মানুষের কাছে তা কল্পনাতীত, এবং মানুষ কোনোদিনই তা সম্পূর্ণরূপে জেনে উঠতে সক্ষম হবে না।
কিছু মানুষ অনুমান ও কল্পনা করতে পছন্দ করে, কিন্তু মানুষের কল্পনা কত দূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে? তা কি এই বিশ্বকে অতিক্রম করে যেতে পারে? মানুষ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রামাণিকতা ও ভ্রমশূন্যতাকে অনুমান ও কল্পনা করতে সক্ষম? মানুষের অনুমান ও কল্পনা কি তাকে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ দান করতে সক্ষম? তারা কি মানুষকে ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করাতে ও সেই কর্তৃত্বের কাছে সমর্পণ করাতে সক্ষম? বাস্তব তথ্য প্রমাণিত করে যে মানুষের অনুমান ও কল্পনা কেবল মানুষের ধীশক্তি থেকে সঞ্জাত এক উপাদান, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রে তা তিলমাত্র সহায়তা বা উপযোগিতা প্রদান করে না। কল্পবিজ্ঞানের গল্প পাঠ করার পর, কেউ কেউ চাঁদকে কল্পনা করতে, বা নক্ষত্ররা কীরকম তা কল্পনা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে মানুষের কোনো উপলব্ধি আছে। মানুষের কল্পনা কেবল কল্পনাই। এই জিনিসগুলির সম্পর্কিত তথ্যের বিষয়ে, অর্থাৎ, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সঙ্গে তাদের সংযোগের বিষয়ে, মানুষের বিন্দুমাত্র কোনো উপলব্ধি নেই। তুমি যদি চাঁদেই গিয়ে থাকো তাতে কী এসে যায়? এতে কি প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিষয়ে তোমার এক বহুমাত্রিক উপলব্ধি আছে? এতে কি প্রতিপন্ন হয় যে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ব্যাপ্তি কল্পনা করতে সক্ষম? মানুষের অনুমান ও কল্পনা যেহেতু মানুষকে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জানার সুযোগ দিতে অক্ষম, তাহলে মানুষের কী করা উচিত? সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে অনুমান বা কল্পনা আদৌ না করা, অর্থাৎ ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার ক্ষেত্রে মানুষ অবশ্যই কখনো কল্পনার উপর ভরসা এবং অনুমানের উপর নির্ভর করবে না। এখানে তোমাদের আমি ঠিক কী বলতে চাইছি? বলতে চাইছি যে, তোমার কল্পনার উপর নির্ভর করে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, ঈশ্বরের ক্ষমতা, ঈশ্বরের আপন স্বরূপ, এবং ঈশ্বরের সারসত্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যাবে না। যেহেতু ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার ক্ষেত্রে তুমি কল্পনার উপর ভরসা করতে পারো না, তাহলে কোন উপায়ে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে এক প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারো? এই জ্ঞান অর্জনের পথ হল ঈশ্বরের বাক্যকে ভোজন ও পান করার মাধ্যমে, সহকারিতার মাধ্যমে, এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে অনুভব করার মাধ্যমে। এইভাবে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে তুমি এক ক্রমিক অভিজ্ঞতা ও নিশ্চয়তা লাভ করবে এবং এ বিষয়ে তুমি এক ক্রমিক উপলব্ধি ও ক্রমবর্ধমান জ্ঞান অর্জন করবে। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের এটিই একমাত্র উপায়; আর কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই। তোমাদের কল্পনা না করতে বলার অর্থ তোমাদের নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে বিনাশের জন্য অপেক্ষা করানো নয়, বা কোনো কাজ করা থেকে তোমাদের নিবৃত্ত করা নয়। চিন্তাভাবনা ও কল্পনা করার জন্য তোমার মস্তিষ্ককে ব্যবহার না করার অর্থ হল সিদ্ধান্তে আসার জন্য যুক্তির প্রয়োগ না করা, বিশ্লেষণ করার জন্য জ্ঞানের ব্যবহার না করা, ভিত্তি হিসাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার না করা, তার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে, সত্যের মাধ্যমে, জীবনে যাকিছুর তুমি সম্মুখীন হও সেই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে উপলব্ধি, যাচাই, ও প্রতিপন্ন করা যে, যে ঈশ্বরে তুমি বিশ্বাস করো তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে, প্রতিপন্ন করা যে তোমার নিয়তির উপর তিনি সার্বভৌমত্ব ধারণ করেন, এবং প্রতিপন্ন করা যে তাঁর ক্ষমতা সর্বক্ষণ তাঁকে স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বর বলে প্রমাণিত করে। একমাত্র এই উপায়েই কেউ ঈশ্বরের সম্পর্কে এক উপলব্ধি অর্জন করতে সক্ষম। কেউ কেউ বলে থাকে যে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা এক সহজ পদ্ধতি খুঁজে পেতে চায়, কিন্তু তোমরা কি এরকম কোনো পন্থা ভাবনাচিন্তা করে বের করতে পারো? আমি তোমায় বলছি, চিন্তা করার কোনো দরকার নেই: অন্য কোনো পন্থা নেই! একমাত্র পন্থা হল তাঁর কথিত প্রতিটি বাক্য ও তাঁর সম্পাদিত সকল কার্যের মাধ্যমে বিবেকনিষ্ঠ ও অবিচল ভাবে ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা সেই বিষয়ে অবহিত হওয়া ও তাকে প্রতিপন্ন করা। ঈশ্বরকে জানার এটিই একমাত্র পথ। কারণ ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা, এবং ঈশ্বরের সমস্তকিছুই, অন্তঃসারশূন্য ও শূন্যগর্ভ নয়, বরং বাস্তব।
—বাক্য, খণ্ড ২, ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গে, স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১