তোমরা অবশ্যই কার্যকে উপলব্ধি করবে – বিভ্রান্তির মধ্যে অনুসরণ কোরো না!

বর্তমানে অনেক মানুষ আছে যারা বিভ্রান্ত ভাবে বিশ্বাস করে। তোমাদের প্রচুর কৌতুহল আছে, আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রভূত বাসনা রয়েছে, এবং জীবন-অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষা খুবই কম। আজকাল মানুষজন যীশুতে তাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে খুব উৎসাহী। যীশু তাদের স্বর্গীয় গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, তাহলে কীভাবেই বা তারা বিশ্বাস না করে পারে? কিছু মানুষ তাদের সারাটা জীবন ব্যাপীই বিশ্বাসী; চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে বিশ্বাসের পরেও তারা এখনও বাইবেল পড়তে কখনো ক্লান্তি অনুভব করে না। এর কারণ তারা মনে করে[ক] যে যা-ই ঘটুক না কেন, যতদিন তাদের বিশ্বাস থাকবে, তারা স্বর্গে প্রবেশ করবেই। এই পথ ধরে মাত্র কয়েক বৎসর যাবৎ তোমরা ঈশ্বরের অনুসরণ করেছো, তবু ইতিমধ্যেই তোমরা হোঁচট খেয়েছো; তোমরা তোমাদের সহ্যশক্তি হারিয়েছ, কারণ তোমাদের আশীর্বাদ লাভের বাসনা অত্যন্ত তীব্র। এই যথার্থ পথ ধরে তোমাদের যাত্রা তোমাদের আশীর্বাদ লাভের আকাঙ্ক্ষা ও কৌতূহলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই পর্যায়ের কার্যের সম্পর্কে তোমাদের আদৌ বিশেষ উপলব্ধি নেই। আজ আমি যা বলছি তার অনেকাংশ যীশুতে বিশ্বাসকারী ব্যক্তিদের প্রতি উদ্দিষ্ট নয়, বা তাদের ধারণাকে খণ্ডন করার উদ্দেশ্যেই শুধু এসব বলছি–তা-ও নয়। বস্তুত, যে ধারণাগুলি অনাবৃত করা হচ্ছে এগুলি সেই একই ধারণাসমূহ যা তোমাদের মধ্যেও বিদ্যমান, কারণ তোমরা বোঝো না যে, বাইবেলকে কেন একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে, কেন আমি বলি যে যিহোবার কার্য পুরাতন হয়ে গেছে, বা কেন আমি বলি যে যীশুর কার্য পুরাতন হয়ে গেছে। আসল ঘটনাটা হল, তোমরা অনেক ধারণা পোষণ করে চলেছো যা তোমরা মুখে উচ্চারণ কর নি, একই সাথে তোমাদের হৃদয়ের গভীরেও বহু অভিমত অবরুদ্ধ হয়ে আছে, আর তোমরা কেবল ভিড়কে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাও। তোমরা কি সত্যিই মনে কর যে তোমরা বিবিধ পূর্বধারণা পোষণ কর না? তোমরা কেবল ওগুলি মুখে প্রকাশ কর না! প্রকৃতপক্ষে, তোমরা কেবল দায়সারা ভাবেই ঈশ্বরের অনুসরণ কর, তোমরা আদৌ প্রকৃত পথের অন্বেষণ কর না, এবং জীবন অর্জনের অভিপ্রায় নিয়ে তোমরা আসো নি। তোমাদের মনোভাব হল শুধু যা ঘটবে তা দেখতে চাওয়ার মনোভাব। যেহেতু তোমরা তোমাদের বহু পুরানো ধারণা পরিত্যাগ করনি, তাই তোমাদের মধ্যে এমন একজনও নেই যে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করতে পেরেছে। এই বিন্দুতে উপনীত হয়ে, তোমরা তোমাদের নিয়তি নিয়ে উদ্বেগ করতে থাকো, তোমাদের ভাবনা দিন-রাত শুধু মন্থিত হতে থাকে, কখনো একে ঝেড়ে ফেলতে পারো না। তুমি কি মনে কর আমি যখন ফারিশীদের কথা বলি, আমি শুধু ধর্মের “প্রবীণ মানুষ”-দের প্রতি নির্দেশ করছি? তোমরা নিজেরাও কি বর্তমান যুগের সবচেয়ে অগ্রসর ফারিশীদের প্রতিনিধি নও? বাইবেলের প্রেক্ষীতে যারা আমাকে পরিমাপ করে আমি যখন তাদের কথা উল্লেখ করি, তুমি কি মনে কর যে তখন আমি কেবল ধর্মীয় পরিমণ্ডলের ওই বাইবেল-বিশেষজ্ঞদের প্রতি নির্দেশ করছি? আমি যখন তাদের কথা বলি যারা ঈশ্বরকে আরেকবার ক্রুশকাষ্ঠে পেরেকবিদ্ধ করছে, তুমি কি বিশ্বাস কর যে আমি ধর্মীয় পরিমণ্ডলের নেতাদের বিষয়ে বলছি? তোমরা কি এই ভূমিকায় অভিনয় করার পক্ষে সুচারুতম অভিনেতা নও? তুমি কি মনে কর যে মানুষের পূর্বধারণাকে খণ্ডন করার জন্য যে সকল বাক্য আমি উচ্চারণ করি তা যাজক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি নিছক পরিহাস মাত্র? তোমরাও কি এই সমস্ত ব্যাপারে তোমাদের ভূমিকা পালন করনি? তুমি কি স্থিরনিশ্চিত যে, তোমরা অল্প কিছু ধারণাই পোষণ কর? সহজ কথাটা হল, তোমরা সবাই এখন বেশ চালাকি শিখে গিয়েছ। যে জিনিসগুলি তোমরা উপলব্ধি কর না সেই ব্যাপারে তোমরা কথা বল না, বা তাদের সম্বন্ধে তোমাদের অনুভূতি প্রকাশ কর না, কিন্তু তোমাদের অভ্যন্তরে সম্ভ্রম ও সমর্পণপূর্ণ হৃদয়ের অস্তিত্ব একেবারেই নেই। তোমাদের বিবেচনায়, বর্তমান সময়ে অনুশীলনের শ্রেষ্ঠ পথ হল অধ্যয়ন করা, পর্যবেক্ষণ করা ও অপেক্ষা করা। তোমরা চাতুরি বেশ ভালোই রপ্ত করে ফেলেছ। কিন্তু তোমরা কি উপলব্ধি করেছ যে এটা এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক ধূর্তামি? তোমরা কি মনে কর তোমাদের এক মুহূর্তের চাতুর্য শাশ্বত শাস্তির হাত এড়াতে তোমাদের সাহায্য করবে? তোমরা খুব “প্রাজ্ঞ” হতে শিখে গিয়েছ! উপরন্তু কিছু মানুষ আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে: “কোনোদিন ধর্মীয় মণ্ডলীতে লোকজন যখন আমাকে প্রশ্ন করে ‘তোমাদের ঈশ্বর কেন একটি অলৌকিক কর্মও সম্পাদন করেননি?’ আমার কীভাবে তা ব্যাখ্যা করা উচিৎ?” আজকের দিনে ধর্মীয় মণ্ডলীর লোকেরা শুধু যে এরকম কোনো প্রশ্ন করবে না তা-ই নয়; উপরন্তু তুমি আজকের কার্যের অর্থ উপলব্ধি কর না, এবং প্রচুর পূর্বধারণার বশবর্তী হয়ে পরিশ্রম করছো। আমি যখন ধর্মীয় আধিকারিকদের কথা বলি তখন আমি কাদের উদ্দেশ্য করি তা তুমি কি এখনো জানো না? তুমি কি জানো না কাদের জন্য আমি বাইবেলের ব্যাখ্যা করছি? আমি যখন ঈশ্বরের কার্যের তিনটি পর্যায় বিশদভাবে বিবৃত করি, তখন কাদের উদ্দেশ করে আমি কথা বলছি, তা কি তুমি জানো না? আমি যদি ওই বিষয়গুলি না বলতাম তাহলে কি তোমরা এত সহজে প্রত্যয়িত হতে? এত সহজে কি তোমরা মাথা অবনত করতে? এত তৎপরতার সাথে কি তোমরা ওই পুরাতন ধারণাগুলি দূরে সরিয়ে রাখতে? বিশেষ করে সেই “পুরুষসিংহরা”, যারা কোনোদিন কারো কাছে আত্মসমর্পণ করেনি – তারা কি এত সহজে আনুগত্য স্বীকার করত? আমি জানি, যদিও তোমাদের মানবতা নিকৃষ্ট মানের এবং তোমরা নিতান্ত কম ক্ষমতা-সম্পন্ন, তোমাদের মস্তিষ্ক স্বল্প-বিকশিত, এবং তোমাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের খুব দীর্ঘ কোনো ইতিহাস নেই, কিন্তু তোমাদের বস্তুতই প্রচুর পূর্বধারণা আছে, এবং তোমাদের স্বভাবজ প্রকৃতি হল সহজে কারো বশ্যতা স্বীকার না করা। আজ অবশ্য তোমরা আত্মসমর্পণে সক্ষম কারণ তোমরা বাধ্য হয়েছো এবং নিরুপায়; তোমরা লোহার খাঁচায় বন্দী বাঘ, তোমাদের দক্ষতার অবাধ বিচরণক্ষেত্র প্রদানে অক্ষম। এমনকি তোমাদের যদি ডানাও থাকত, তা-ও তোমাদের পক্ষে ওড়া দুরূহ হত। কোনো আশীর্বাদ প্রদত্ত না হওয়া সত্ত্বেও তোমরা এখনো অনুসরণ করে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু এটা “ভালো মানুষ” হিসেবে তোমাদের স্বাভাবিক চারিত্রিক দৃঢ়তা নয়; বরং, সত্যিটা হল যে, তোমরা বেদম ধাক্কা খেয়েছ এবং ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছো না। সত্যিটা হল, এই পুরো কার্যটা তোমাদের মাটিতে আছড়ে ফেলেছে। যদি তোমাদের অর্জন করার মতো কিছু থাকত, তাহলে আজ তোমরা যতটা সুবাধ্য ততটা হতে না, কারণ পূর্বে তোমরা সকলেই ছিলে জনহীন প্রান্তরের বন্য গর্দভ। তাই, আজ যা বলা হচ্ছে তা কেবল বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়কে উদ্দিষ্ট করে নয়, এটা যে শুধুমাত্র তাদের পূর্বধারণাগুলিকে খণ্ডন করার জন্য তা-ও নয়; এটা তোমাদের পূর্বধারণাসমূহকে খণ্ডন করার জন্য।

ন্যায়পরায়ণতার বিচার শুরু হয়েছে। ঈশ্বর কি এখনও মানুষের জন্য পাপস্খালনের বলি হিসেবে কাজ করবেন? তিনি কি আরেকবার তাদের জন্য মহান চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করবেন? ঈশ্বরের কি এর থেকে মহত্তর কোনো কর্তৃত্ব নেই? একদল মানুষকে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে, এবং সিংহাসনের সম্মুখে তাদের উন্নীত করা হয়েছে; তিনি কি এখনও অপদেবতাদের বিতাড়ন ও অসুস্থদের নিরাময় করবেন? সেটা কি বেশ খানিকটা সেকেলে নয়? যদি এটাই চলতে থাকে তাহলে সাক্ষ্যদান কি সম্ভব হবে? একবার ক্রুশকাষ্ঠে পেরেকবিদ্ধ করে ফেললেই কি ঈশ্বরকে চিরকালের জন্য ক্রুশবিদ্ধ করা যাবে? একবার অপদেবতাদের বিতাড়ন করেছেন বলে তিনি কি চিরটাকাল তাদের বিতাড়ন করে যেতে পারেন? এটা কি অবমাননা বলে পরিগণিত হয় না? যুগ কেবল তখনই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে যখন চলতি পর্যায়ের কাজ পূর্ববর্তী পর্যায়ের তুলনায় উচ্চতর হবে, এবং তখন অন্তিম সময় সন্নিকটবর্তী হবে ও বর্তমান যুগের সমাপ্তির সময় হয়ে আসবে। সত্যের অন্বেষণকারী মানুষকে তাই দর্শন করার অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে; এটাই হল বুনিয়াদ। যতবার আমি তোমাদের সাথে দর্শন করার বিষয়ে সহকারিতা করি, প্রতিবার আমি শ্রবণে অনিচ্ছুক কিছু মানুষকে আনত নেত্রপল্লবে ঘুমিয়ে পড়তে দেখি। অন্যেরা জিজ্ঞেস করে, “তুমি শুনছ না কেন?” তারা জবাব দেয়, “এটা আমার জীবনে বা আমার বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা করে না। আমরা যা চাই তা হল অনুশীলনের পথ।” যখনই আমি অনুশীলনের পথের পরিবর্তে কার্যের কথা বলি, তারা বলে, “যেই মাত্র আপনি কার্যের বিষয়ে কথা বলেন, আমার ঘুম পেয়ে যায়।” যখন আমি অনুশীলনের পথের বিষয়ে কথা আরম্ভ করি, তারা লিখতে শুরু করে, আর আমি যখন কার্যের বিশদ ব্যাখ্যায় ফিরে যাই, আবার তারা শোনা থামিয়ে দেয়। এই মুহূর্তে তোমাদের কীসে সজ্জিত হওয়া উচিৎ তোমরা কি জানো? এর একটা দিক কার্য বিষয়ক দর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আর অন্য দিকটি হল তোমার অনুশীলন। তুমি অবশ্যই এই অভিমুখগুলির উভয়কে-ই আয়ত্ত করবে। জীবনে অগ্রগতিসাধনের লক্ষ্যে তোমার অনুসন্ধানে যদি দর্শন না থাকে, তাহলে তোমার কোনো ভিত্তিভূমি থাকবে না। তোমার যদি কেবল অনুশীলনের পথটুকুই থাকে, সামান্যতম দর্শনও না থাকে, এবং সামগ্রিক পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কার্য সম্বন্ধে কিছুমাত্র উপলব্ধি না থাকে, তাহলে তুমি অকর্মণ্য। দর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সত্যসমূহকে তুমি অবশ্যই প্রণিধান করবে, আর অনুশীলনের সঙ্গে সম্পর্কিত সত্যের ক্ষেত্রে, তাদের উপলব্ধি করার পর তোমাকে যথাযথ অনুশীলনের পথটা খুঁজে নিতে হবে; তুমি অবশ্যই বাক্য অনুসারে অনুশীলন করবে, এবং তোমার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রবেশ করবে। দর্শন হল ভিত্তি, আর তুমি যদি এই সত্যের প্রতি কোনো মনোযোগ না দাও, তাহলে তুমি একদম শেষ পর্যন্ত অনুসরণ চালিয়ে যেতে অসমর্থ হবে; এই পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতা লাভ হয় তোমাকে বিপথে চালিত করবে নয়তো তোমার অধঃপতন ও ব্যর্থতার কারণস্বরূপ হবে। তোমার সাফল্য লাভের কোনো পথ থাকবে না! যে মানুষদের ভিত্তিস্বরূপ মহান কোনো দর্শন নেই তারা কেবল ব্যর্থই হতে পারে; তারা সফল হতে পারে না। তুমি দৃঢ় অবস্থানে দাঁড়াতে পার না! তুমি কি জানো যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কীসের সঙ্গে বিজড়িত? তুমি কি জানো ঈশ্বরের অনুসরণ করার অর্থ কী? দর্শনের অবর্তমানে কোন পথে তুমি চলবে? আজকের কার্যে তোমার যদি দর্শন না থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে তুমি আদৌ সমর্থ হবে না। তুমি কাকে বিশ্বাস কর? কেন তুমি তাঁকে বিশ্বাস কর? কেন তুমি তাঁর অনুসরণ কর? তোমার বিশ্বাসকে তুমি কি এক ধরণের খেলা বলে গণ্য কর? তুমি কি তোমার জীবনকে একটা খেলার সামগ্রীর মতো করে পরিচালিত করছ? আজকের ঈশ্বর মহত্তম দর্শন। তাঁর কতটা তুমি জানো? তাঁর কতটা তুমি দেখেছ? আজকের ঈশ্বরকে দেখে ফেলার পর, তোমার ঈশ্বর-বিশ্বাসের বুনিয়াদ কি সুদৃঢ় হল? তুমি কি মনে কর যে, এইরূপ বিমূঢ় অনুসরণ অব্যাহত রেখে তুমি পরিত্রাণ অর্জন করবে? তুমি কি মনে কর যে তুমি ঘোলা জলে মাছ ধরতে পার? তা কি এতই সহজ? ঈশ্বর আজ যে বাক্যগুলি উচ্চারণ করেন তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত কতগুলি ধারণা তুমি সরিয়ে রেখেছ? আজকের ঈশ্বরের বিষয়ে তোমার কি একটি দর্শন আছে? আজকের ঈশ্বর সম্বন্ধে তোমার উপলব্ধি কীসের মধ্যে (কোথায়) অবস্থান করে (শায়িত)? তুমি সতত বিশ্বাস কর যে শুধুমাত্র তাঁকে অনুসরণ করে, অথবা তাঁকে দর্শন করে, তুমি তাঁকে[খ] অর্জন করতে পার, এবং কেউ তোমাকে বিতাড়িত করতে পারবে না। এমন ধরে নিও না যে ঈশ্বরকে অনুসরণ করা এত সহজ ব্যাপার। চাবিকাঠিটি হল, তুমি অবশ্যই তাঁকে জানবে, তাঁর কার্যকে জানবে, এবং তোমার অবশ্যই তাঁর নিমিত্ত কষ্ট সহ্য করার, তাঁর জন্য জীবন উৎসর্গ করার, এবং তাঁর দ্বারা নিখুঁত হয়ে ওঠার সংকল্প থাকবে। এই দর্শনটিই তোমার থাকা উচিৎ। তোমার চিন্তা যদি সর্বদা মহিমা উপভোগ-প্রবণ হয় তাহলে কোনো কাজ হবে না। এটা মনে কোরো না, ঈশ্বর এখানে আছেন শুধু মানুষের উপভোগের জন্য, বা কেবল তাদের উপর মহিমা অর্পণ করার নিমিত্ত। তুমি ভুল করবে! তাঁকে অনুসরণ করার জন্য কেউ যদি তার জীবনের ঝুঁকি নিতে না পারে, এবং অনুসরণের খাতিরে প্রতিটি পার্থিব সম্পদ পরিত্যাগ করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা শেষ অবধি তাঁকে অনুসরণ করে যেতে অসমর্থ হবে! তোমার ভিত্তি হিসেবে তোমার দর্শন থাকতেই হবে। একদিন তুমি যদি দুর্ভাগ্যের শিকার হও, তাহলে তোমার কী করা উচিৎ? তখনও কি তাঁকে অনুসরণ করতে সমর্থ হবে? তুমি শেষ অবধি অনুসরণ করতে সক্ষম হবে কিনা এ বিষয়ে লঘুচিত্তে কিছু বোলো না। তোমার পক্ষে বরং ভালো হত প্রথমে চোখ বড়-বড় করে এখন সময়টা ঠিক কত তা দেখে নেওয়া। যদিও তোমরা বর্তমানে মন্দিরের স্তম্ভস্বরূপ হতে পার, কিন্তু এমন একটা সময় আসবে যখন এরকম সকল স্তম্ভ পোকারা কুরে-কুরে খেয়ে ফেলবে, ফলস্বরূপ মন্দির ধসে পড়বে, কারণ অধুনা বহু দর্শন আছে যা তোমাদের অনায়ত্ত। তোমরা শুধু তোমাদের নিজ-নিজ ক্ষুদ্র জগতগুলির দিকেই মনোযোগ দাও, এবং অন্বেষণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও যথাযথ পদ্ধতি কী তা তোমরা জানো না। তোমরা আজকের কার্যের দর্শনের প্রতি ভ্রূক্ষেপ কর না, বা সেই বিষয়গুলিকে তোমরা তোমাদের অন্তরে ধারণও কর না। এমন কি তোমরা বিবেচনা করেছ যে একদিন তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের অপরিচিততম একটা স্থানে স্থাপন করবেন? তোমরা কি কল্পনা করতে পার যে একদিন যদি আমি তোমাদের থেকে সবকিছু কেড়ে নিই, তাহলে তোমাদের কী অবস্থা হবে? সেদিন তোমাদের তেজ কি আজকের মতোই থাকবে? তোমাদের বিশ্বাস কি পুনরাবির্ভূত হবে? ঈশ্বরকে অনুসরণের মাধ্যমে তুমি অবশ্যই “ঈশ্বর” বলে আখ্যাত এই মহত্তম দর্শনকে জানবে: এই-ই হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উপরন্তু, এটা ধরে নিও না যে, পরিশুদ্ধ হবার জন্য পার্থিব মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে, তুমি অবধারিতভাবে ঈশ্বরের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমান সময়ে ঈশ্বর স্বয়ং সৃষ্টির মাঝে কার্যরত; তাঁর নিজের কার্য সম্পাদন করতে তিনিই স্বয়ং মানুষের মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন – প্রচারাভিযান সম্পন্ন করতে নয়। তোমাদের মধ্যে এমনকি মুষ্টিমেয় কয়েকজনের চেয়েও স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি একথা জানতে সক্ষম যে, আজকের কার্য স্বর্গের ঈশ্বর, যিনি দেহে রূপান্তরিত হয়েছেন, তাঁরই কার্য। এটা তোমাদের প্রতিভাধর অনন্যসাধারণ মানুষে পরিণত করার সংক্রান্ত কোনো কার্য নয়; এর উদ্দেশ্য মানব-জীবনের তাৎপর্যকে জানতে, মানবিক সত্তার গন্তব্যকে জানতে এবং ঈশ্বর ও তাঁর সমগ্রতাকে জানতে তোমাদের সহায়তা করা। তোমার জানা উচিৎ যে তুমি স্রষ্টার হাতে ধৃত একটি সৃজিত বস্তু। তোমার কী প্রণিধান করা উচিৎ, তোমার কী সম্পাদন করা উচিৎ, এবং কেমন করে তোমার ঈশ্বরকে অনুসরণ করা উচিৎ – এগুলিই কি সেই সত্যসমূহ নয়, যা তোমাদের অবশ্যই হৃদয়ঙ্গম করতে হবে? এগুলিই কি সেই দর্শন নয়, যা তোমার অবলোকন করা উচিৎ?

মানুষ একবার দর্শন পেয়ে গেলে, তারা একটা বুনিয়াদের অধিকারী হয়। তুমি যখন এই বুনিয়াদের ভিত্তিতে অনুসরণ কর, তখন প্রবেশ করা অনেক সহজতর হবে। সেই অর্থে, প্রবেশ করার জন্য তোমার একবার একটা বুনিয়াদ থাকলে, তোমার কোনো আশঙ্কা রইবে না, এবং তোমার পক্ষে ভিতরে প্রবেশ করা খুব সহজ হয়ে যাবে। দর্শনসমূহের উপলব্ধি ও ঈশ্বরের কার্যকে জানার এই দিকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ; তোমাদের অস্ত্রভাণ্ডারে তোমরা অবশ্যই এটি যুক্ত করবে। তুমি যদি সত্যের এই দিকটির দ্বারা সজ্জিত না হও, এবং কীভাবে অনুশীলনের পথ বিষয়ে কথা বলতে হয় শুধু এটুকুই মাত্র জানো, তাহলে তুমি ভীষণভাবে ত্রুটিপূর্ণ হবে। আমি আবিষ্কার করেছি যে তোমাদের অনেকে সত্যের এই দিকটির উপর জোর দাও না, এবং যখন এর বিষয়ে শ্রবণ কর, মনে হয় তোমরা যেন শুধু বাক্য ও মতবাদসমূহ শ্রবণ করছো। একদিন তুমি পরাভূত হবে। বর্তমান সময়ের কিছু উচ্চারণ আছে যেগুলি তুমি ঠিকমতো উপলব্ধি কর না ও স্বীকার কর না; সেক্ষেত্রে, তোমার ধৈর্যসহকারে অন্বেষণ করা উচিৎ, এবং একটা দিন আসবে যখন তুমি ঠিকই উপলব্ধি করবে। নিজেকে ক্রমাগত আরো বেশি দর্শনের দ্বারা সজ্জিত করো। এমনকি যদি তুমি মাত্র কয়েকটা আধ্যাত্মিক মতবাদ অনুধাবন করে থাকো, দর্শনের প্রতি কোনো মনোযোগ না দেওয়ার থেকে সেটাও শ্রেয়তর, এবং আদৌ কিছু না-বোঝার থেকে ভালো তো বটেই। তোমার প্রবেশের জন্য এই সবকিছু সহায়ক, এবং এগুলিই তোমার সেই সংশয়গুলিকে বিদূরিত করবে। তোমার পূর্বধারণার দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার চেয়ে এই-ই শ্রেয়তর। বুনিয়াদ হিসেবে তোমার যদি এই দর্শনগুলি থাকে, তাহলে তুমি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। তোমার কোনো ধরণেরই কোনো সংশয় থাকবে না, এবং সাহস ও প্রত্যয়ের সঙ্গে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। সবসময় এরকম বিভ্রান্ত, সংশয়াপন্ন ভাবে ঈশ্বরের অনুসরণ করার দরকারটা কী? এটা কি বালিতে তোমার মাথা গুঁজে রাখার অনুরূপ নয়? সদর্প পদক্ষেপে ও কেতাদুরস্ত চালে রাজ্যে প্রবেশ করাটা কী চমৎকার হবে! এত সংশয়াকীর্ণ কেন? তুমি কি কেবল নিজেকে ডাহা নরকের মধ্যে স্থাপন করছো না? একবার তুমি যিহোবার কার্য সম্বন্ধে, যীশুর কার্য সম্বন্ধে, এবং এই পর্যায়ের কার্য সম্বন্ধে উপলদ্ধি অর্জন করে ফেললে, তুমি একটা ভিত্তি পাবে। এই মুহূর্তে তুমি ব্যাপারটা অত্যন্ত সহজ হবে বলে কল্পনা করতে পারো। কিছু লোক বলে, “যখন সময় আসবে এবং পবিত্র আত্মা মহান কার্যটি শুরু করবেন, আমি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে সক্ষম হবো। আমি যে এই মুহূর্তে প্রকৃতই কিছু বুঝি না এই সত্যিটার কারণ হল পবিত্র আত্মা আমাকে সেভাবে আলোকিত করেননি।” ব্যাপারটা এত সহজ নয়। ব্যাপারটা এরকম নয় যে, তুমি যদি এখন সত্যটি[গ] স্বীকার করতে ইচ্ছুক হও, তাহলে যখন সময় আসবে তখন তুমি এটা দক্ষতার সাথে ব্যবহার করবে। ব্যাপারটা আবশ্যিকভাবেই এরকম নয়! তুমি বিশ্বাস কর যে তুমি বর্তমানে খুব ভালোভাবে প্রস্তুত, এবং ওই ধর্মীয় লোকজন ও শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিকদের উত্তর দিতে, এবং এমনকি তাদের খণ্ডন করতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না। সত্যিই কি তুমি তা করতে সক্ষম হবে? তোমার কেবল ওই ভাসা-ভাসা অভিজ্ঞতা নিয়ে কোন উপলব্ধির কথা তুমি বলতে পার? তুমি যেমন ভাবছ যে, যতদিন ঈশ্বর কার্যরত আছেন, সত্যের দ্বারা সজ্জিত হলে, সত্যের যুদ্ধে লড়াই করলে ও ঈশ্বরের নামে সাক্ষ্য দিলেই সবকিছু নিষ্পন্ন হয়ে যাবে – বিষয়টি সেরকম নয়। সেই মুহূর্তে কোনো প্রশ্নের দ্বারা তুমি বিমূঢ় হয়ে যেতে পার, আর তখন তুমি নির্বাক হয়ে যাবে। চাবিকাঠিটি হল, বর্তমান পর্যায়ের কার্য বিষয়ে তোমার স্বচ্ছ উপলব্ধি আছে কি নেই, এবং এর সম্বন্ধে তুমি প্রকৃতপক্ষে কতটা জানো। তুমি যদি শত্রুবাহিনীকে দমন করতে না পার বা ধর্মীয় বাহিনীকে পরাজিত করতে না পার, তাহলে তখন কি তুমি মূল্যহীন হয়ে যাবে না? তুমি বর্তমানের কার্যের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, তোমার নিজের চোখে তা প্রত্যক্ষ করেছ, এবং তোমার নিজের কর্ণে তা শ্রবণ করেছো, কিন্তু, অন্তিমে যদি তুমি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম হও, তাহলে তখনও কি তোমার জীবন ধারণ করে যাওয়ার ধৃষ্টতা থাকবে? কার কাছে তুমি মুখ দেখাতে সমর্থ হবে? এখন কল্পনা কোরো না যে ব্যাপারটা এত সহজ হবে। ভবিষ্যতের কার্য তুমি যত সহজ হবে বলে কল্পনা কর, তা ততটা সহজ হবে না; সত্যের যুদ্ধে লড়াই করাটা এতটাই মুখের কথা নয়, এমন অনায়াসসাধ্যও নয়। এই মুহূর্তে, তোমাদের প্রস্তুত হওয়া দরকার; যদি তুমি সত্যের দ্বারা প্রস্তুত না-হও, তাহলে যখন সময় আসবে এবং পবিত্র আত্মা অতিপ্রাকৃতিক ভাবে কার্য করবেন না, তখন তুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে।

পাদটীকাসমূহ:

ক. মূল পাঠে “তারা মনে করে” বাক্যাংশটি অনুপস্থিত।

খ. মূল পাঠে “তাঁকে” শব্দটি অনুপস্থিত।

গ. মুল পাঠে “সত্যটি” শব্দটি অনুপস্থিত।

পূর্ববর্তী: পিতরের অভিজ্ঞতা: শাস্তি ও বিচার সম্পর্কে তার জ্ঞান

পরবর্তী: পথের অন্তিম বিস্তারটি তোমার কীভাবে চলা উচিৎ

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন