পথের অন্তিম বিস্তারটি তোমার কীভাবে চলা উচিৎ

এখন তোমরা পথের চূড়ান্ত বিস্তারে এসে উপনীত হয়েছো, এবং এটি পথের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তুমি সম্ভবত অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করেছো, প্রচুর কাজ করেছো, অনেক রাস্তা পরিভ্রমণ করেছো, এবং প্রভূত ধর্মোপদেশ শ্রবণ করেছো; সম্ভবত তোমার বর্তমান স্থিতিতে পৌঁছানোটা সহজ হয়নি। সম্প্রতি যে যন্ত্রণার তুমি সম্মুখীন হচ্ছো তা যদি সহ্য করতে না পারো এবং অতীতে যেমন করেছিলে তা-ই যদি তুমি চালিয়ে যাও, তাহলে তোমাকে নিখুঁত করা যাবে না। এই বাক্যগুলি তোমায় আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে নয়–এগুলি বাস্তব সত্য। ঈশ্বরের প্রভূত কার্যের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর পিতর কিছু বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি এবং অনেকখানি বিচারক্ষমতাও লাভ করেছিল। সেবাদানের নীতি সম্পর্কে সে অনেক বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছিল, এবং পরবর্তীকালে যীশু তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দিতে সমর্থ হয়েছিল। যে ব্যাপক পরিমার্জন সে লাভ করেছিল তার প্রধান কারণ ছিল, তার নিজের দ্বারা সম্পাদিত বিষয়গুলির জন্যও সে ঈশ্বরের কাছে অত্যন্ত ঋণী বোধ করতো, এবং মনে করতো তাঁর ঋণ সে কখনো পরিশোধ করতে পারবে না। পিতর এটাও উপলব্ধি করেছিল যে মানুষ অত্যন্ত ভ্রষ্ট, এবং এই কারণে সে তার বিবেকে অপরাধবোধ অনুভব করতো। যীশু পিতরকে অনেককিছু বলেছিলেন, কিন্তু সেগুলি যখন বলা হয়েছিল তখন সে তার খুব সামান্য অংশই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং মাঝে মাঝে সে তখনও কিছু পরিমাণ প্রতিরোধ ও বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করতো। যীশু ক্রুশকাঠে পেরেকবিদ্ধ হওয়ার পর অবশেষে সে একধরনের উদ্বোধনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, এবং তার অন্তরে সে নিজের প্রতি তীব্র ভর্ৎসনাবোধ অনুভব করেছিল। অন্তিমে, এমন একটা পর্যায় এসেছিল যখন ভ্রান্ত কোনো মতামত থাকাটা তার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হতো। তার নিজের পরিস্থিতি সে খুব ভালোভাবে জানতো, এবং প্রভুর পবিত্রতাও সে ভালো রকমই বুঝতো। ফলস্বরূপ, তার মধ্যে আরো বেশি করে প্রভুর প্রতি প্রেমপূর্ণ এক হৃদয় বিকাশ লাভ করেছিল, এবং তার নিজের জীবনের বিষয়ে সে আরো নিবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে সে প্রভূত কষ্ট ভোগ করেছিল, এবং যদিও মাঝে মাঝে মনে হতো তার মারাত্মক কোনো অসুস্থতা আছে এবং এমনকি তাকে মৃত বলেও মনে হতো, কিন্তু এইভাবে বারবার পরিমার্জিত হওয়ার পর সে নিজের সম্বন্ধে গভীরতর উপলব্ধি লাভ করে, এবং তার মধ্যে প্রভুর প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসা বিকশিত হয়ে ওঠে। বলা যেতে পারে তার সমগ্র জীবনটা পরিমার্জন, এবং আরো বেশি করে, শাস্তির মধ্যেই ব্যয়িত হয়েছিল। অন্য যেকোনো মানুষের তুলনায় তার অভিজ্ঞতা ছিল স্বতন্ত্র, এবং তার ভালোবাসা নিখুঁত হয়নি এমন যেকোনো মানুষকে অতিক্রম করে গিয়েছিল। তাকে যে একটা নমুনা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল তার কারণ সে তার জীবৎকালে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করেছিল, এবং তার অভিজ্ঞতাগুলি সবচেয়ে বেশি সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল। যদি তোমরা প্রকৃতই ঠিক পিতরের মতো করে পথের অন্তিম বিস্তারটি হেঁটে যেতে সক্ষম হও, তাহলে এমন একটিও কোনো জীবিত সত্তা নেই যে তোমাদের আশীর্বাদ কেড়ে নিতে পারে।

পিতর একজন বিবেকবান মানুষ ছিল, কিন্তু তার মধ্যে এমন মানবিকতা থাকা সত্ত্বেও, সে প্রথম যখন যীশুকে অনুসরণ করতে শুরু করে, তখন অনিবার্যভাবেই তখন তার অনেক প্রতিরোধধর্মী ও বিদ্রোহাত্মক ধারণা ছিল। কিন্তু যীশুকে অনুসরণ করা কালীন সে এই বিষয়গুলি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেনি, ভেবেছিল মানুষের এমনই হওয়া উচিৎ। তাই, প্রথমে সে কোনো অনুতাপ বোধ করেনি, এবং তার বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপও করা হয়নি। যীশু পিতরের প্রতিক্রিয়াগুলিকে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেননি, বা এই বিষয়ে তিনি মনোযোগও দেননি, বরং তাঁর যা করার কথা শুধু সেই কাজই তিনি করে গিয়েছিলেন। তিনি কখনো পিতর বা অন্য কারো ভুল ধরতে যাননি। তুমি বলতে পারো: “তাদের এই সমস্ত ধারণার বিষয়ে যীশু জানতেন না, তা কি হতে পারে?” আদৌ পারে না! তিনি পিতরকে সম্যক জানতেন বলেই–বস্তুতই, বলা যেতে পারে পিতরের সম্বন্ধে তাঁর খুব ভালো উপলব্ধি ছিল–যীশু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। তিনি মানবজাতিকে ঘৃণা করতেন, কিন্তু তাদের করুণাও করতেন। তোমাদের মধ্যে কি বর্তমানে এমন অনেক মানুষ নেই যারা পৌল যেমন ছিল ঠিক তেমন-ই প্রতিরোধী এবং যাদের প্রভু যীশুর প্রতি সে-সময়ে পিতরের যেমন অনেক পূর্বধারণা ছিল ঠিক তেমনই রয়েছে? আমি বলি, সবথেকে ভালো হতো যদি তুমি তোমার তৃতীয় চেতনা, তোমার কল্পমূর্ত চেতনা, যা নির্ভরযোগ্য নয় এবং যা বহুপূর্বেই শয়তানের ভ্রষ্টতার দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়েছে–সেই চেতনাকে খুব বেশি বিশ্বাস না করতে। তুমি কি মনে করো তোমার বোধশক্তি নিখুঁত ও ত্রুটিহীন? পৌল অনেকবার প্রভু যীশুকে যে প্রতিরোধ করেছিল, কিন্তু যীশুর কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। এমন কি হতে পারে, যীশু অসুস্থকে নিরাময় এবং দানবদের বিতাড়ন করতে পারতেন, তবু পৌলের মধ্যের “দানব”-কে বহিষ্কার করতে তিনি অক্ষম ছিলেন? এমন কীভাবে হয় যে, যীশুর পুনরুত্থান ও স্বর্গারোহনের পরে পৌল যখন যীশুর শিষ্যদের যথেচ্ছভাবে গ্রেফতার করে চলেছে, কেবল তখনই অবশেষে যীশু দামাস্কাসের রাস্তায় তার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে আঘাত হানেন? এমন কি হতে পারে যে প্রভু যীশু অত্যন্ত মন্থর গতিতে ক্রিয়াশীল হয়েছেন? নাকি কারণটা এই যে দেহরূপী থাকাকালীন তাঁর কোনো কর্তৃত্ব ছিল না? আমার অজ্ঞাতসারে তুমি যখন গোপনে ধ্বংসাত্মক ও প্রতিরোধী হয়ে ওঠো, তুমি কি মনে করো আমি জানতে পারি না? তুমি কি ভাবো যে, পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আলোকপ্রাপ্তির যে ছিটেফোঁটা তুমি আহরণ করেছো, আমাকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করা যাবে? পিতর যখন অপরিণত ছিল, যীশুর সম্বন্ধে সে তখন নানান ধারণা পোষণ করতো, তাহলে তাকে কেন দোষী সাব্যস্ত করা হয় না? এই মুহূর্তে, কোনো দোষারোপ ব্যতিরেকেই অনেক মানুষ অনেক কিছু করছে, এবং এমনকি যখন তাদের পরিষ্কার করে জানানো হয় যে তারা যা করছে তা ঠিক নয়, তারপরেও তারা শোনে না। এটা কি সম্পূর্ণত মানুষের বিদ্রোহপ্রবণতার ফলশ্রুতি নয়? অধুনা আমি অনেক কিছু বলেছি, কিন্তু এখনও তোমাদের মধ্যে বিবেক বিষয়ে উপলব্ধির লেশমাত্র নেই, তাহলে কেমন করে তুমি পথের অন্তিম বিস্তারটুকু চলতে ও পথ শেষ না হওয়া অবধি হেঁটে যেতে সক্ষম হবে? এ-প্রশ্নের গুরুত্ব অপরিসীম বলে কি তোমার মনে হয় না?

বিজিত হওয়ার পর মানুষ ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনকে মান্য করতে সক্ষম হয়; ঈশ্বরকে ভালোবাসার জন্য তাদের বিশ্বাস ও সঙ্কল্প উভয়ই থাকে, এবং তাঁর অনুসরণ করতে তারা এগুলির উপর নির্ভর করে। তাহলে পথের অন্তিম বিস্তারটুকু কীভাবে চলা যায়? তোমার ক্লেশভোগের অভিজ্ঞতার দিনগুলিতে, সকল দুঃখকষ্ট তোমায় সহ্য করতেই হবে, এবং তোমার অবশ্যই যন্ত্রণাস্বীকারের সঙ্কল্প থাকতে হবে; একমাত্র এই উপায়েই তুমি পথের এই বিস্তারটুকু ভালোভাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। তুমি কি মনে করো পথের এই বিস্তারটুকু অতিক্রম করা এতই সহজ? যে ক্রিয়াকলাপগুলি তোমায় নির্বাহ করতে হবে সেটা তোমার জেনে রাখা উচিৎ; অবশ্যই তোমরা তোমাদের ক্ষমতাকে উন্নীত করবে এবং নিজেদের পর্যাপ্ত সত্যের দ্বারা সজ্জিত করবে। এটা এক-দুই দিনের কাজ নয়, আর তুমি যেমন ভাবছো ততটা সহজও নয়! পথের শেষ বিস্তারটুকু চলার বিষয়টা নির্ভর করে তোমার প্রকৃতই কী ধরনের বিশ্বাস ও সঙ্কল্প আছে তার উপর। পবিত্র আত্মা যে তোমার মধ্যে কার্য করে চলেছেন সম্ভবত তুমি তা দেখতে পাও না, কিম্বা হয়তো তুমি গির্জায় পবিত্র আত্মার কার্যকে সনাক্ত করতে অক্ষম, আর সেই কারণেই তুমি নিরাশাবাদী ও ভগ্নমনোরথ এবং সম্মুখের পথের বিষয়ে হতাশাগ্রস্ত। বিশেষত, অতীতের সকল মহারথীর পতন ঘটেছে–এই সবকিছুই কি তোমার কাছে একটা আঘাত নয়? এই বিষয়গুলি তোমার কীভাবে দেখা উচিৎ? তোমার বিশ্বাস আছে, নাকি নেই? বর্তমানের কার্যকে তুমি কি সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করো, না কি করো না? এই বিষয়গুলিই নিরূপণ করতে পারে অন্তিমের পথটুকু তুমি সফলভাবে হাঁটতে সক্ষম কিনা।

কেন বলা হয় যে তোমরা এখন পথের অন্তিম বিস্তারে উপনীত? বলা হয় কারণ তোমাদের যা উপলব্ধি করা উচিৎ তার সবই তোমরা উপলব্ধি করেছো, এবং মানুষের যা অর্জন করা উচিৎ তার সবই আমি তোমাদের বলেছি। তোমাদের উপর যে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে সে বিষয়েও সবকিছু আমি তোমাদের বলেছি। তাই, বর্তমানে তোমরা যে পথে হাঁটছো তা হল যে পথে আমি মানুষকে চালিত করি তার অন্তিম অংশ। আমার কেবলমাত্র চাহিদা হল যে তোমরা স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের সামর্থ্য অর্জন করো; সর্বদা ও সকল মুহূর্তে তোমার চলার একটা পথ থাকবেই, আগের মতই তুমি তোমার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, স্বাভাবিক ভাবেই ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করবে, এবং একটা স্বাভাবিক মানবিক জীবন যাপন করবে। বর্তমানে আমি তোমায় এই ভাবে জীবন যাপন করার পথে চালিত করছি, কিন্তু ভবিষ্যতে যখন আমি আর তোমাদের পরিচালিত করবো না, তখনও কি তোমরা সক্ষম হবে? তখনও কি তোমরা এগিয়ে চলতে সমর্থ হবে? পিতরের অভিজ্ঞতাটি এই রকম: যীশু যখন তাকে পরিচালিত করছিলেন, তার কোনো উপলব্ধি ছিল না; সবসময় সে শিশুর মতো নিরুদ্বিগ্ন ও ভাবনাহীন ছিল, এবং তার কাজকর্মে সে ছিল লঘুচিত্ত। কেবল যীশু বিদায় নেওয়ার পরেই সে তার স্বাভাবিক মানবিক জীবন শুরু করে। কেবল যীশুর প্রস্থানের পরেই তার অর্থপূর্ণ জীবনের সূচনা হয়। তার মধ্যে স্বাভাবিক মানবিকতার কিছু বোধ ও স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে যে বিষয়গুলি থাকা উচিৎ তার কিছুটা বিদ্যমান ছিল ঠিকই, তবু যীশুর প্রস্থানের আগে তার প্রকৃত অনুভব ও অন্বেষণের নবসূচনা ঘটে নি। তোমাদের বর্তমান পরিস্থিতিটা কী? তোমায় আমি এখন এই পথে চালিত করছি এবং তুমি ভাবছো এই পথ অতি চমৎকার। এখানে এমন কোনো প্রতিবেশ বা পরীক্ষা নেই তোমায় যার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু এই প্রণালীতে তুমি প্রকৃতই কী ধরনের নৈতিক চরিত্রের অধিকারী তা জানার কোনো উপায় নেই, তুমি যথার্থই সত্যের অন্বেষণকারী কিনা তা-ও জানার কোনো উপায় নেই। তুমি মুখে বলো যে তুমি তোমার নিজের উপাদানকে উপলব্ধি করো, কিন্তু এগুলো ফাঁকা বুলি মাত্র। ভবিষ্যতে, যখন তুমি বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হবে, একমাত্র তখনই তোমার উপলব্ধি পরীক্ষিত হবে। বর্তমানে, তোমার উপলব্ধি এমনতর: “আমি জানি যে আমার দেহ অতি ভ্রষ্ট, এবং মানুষের দেহের উপাদান হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ও তাঁকে প্রতিরোধ করা। ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তি গ্রহণ করতে সক্ষম করে তোলার মাধ্যমেই তিনি মানুষকে গড়ে তোলেন। এখন আমি তা উপলব্ধি করেছি এবং, ঈশ্বরের ভালোবাসা পরিশোধ করতে আমি ইচ্ছুক।” কিন্তু এটা বলা সহজ। পরবর্তীকালে তোমায় যখন দুঃখকষ্ট, বিচার ও যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হবে, এগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়া তখন সহজ হবে না। তোমরা প্রতিদিন এই পথ অনুসরণ করো, কিন্তু তারপরেও তোমরা এখনো তোমাদের অভিজ্ঞতাগুলি অব্যাহত রাখতে অক্ষম। পরিস্থিতিটা আরো খারাপ হবে যদি আমি তোমাদের অব্যাহতি দিই এবং তোমাদের প্রতি আর কোনো মনোযোগ না দিই; অধিকাংশ মানুষ ব্যর্থ হবে এবং লবণ-নির্মীত স্তম্ভে, লজ্জার একটি প্রতীকে, পরিণত হবে। এমনতর পরিণাম খুবই সম্ভাব্য। তুমি কি এ-বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন নও? পিতর এই ধরনের পরিবেশের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল এবং এরকম যন্ত্রণা সহন করেছিল, কিন্তু তবু সে তার অবস্থানে সুদৃঢ় ছিল। তুমি যদি এই ধরনের প্রতিবেশের সম্মুখীন হও, তোমার অবস্থানে তুমি অটল থাকতে পারবে তো? পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু যা-কিছু বলেছিলেন ও যে-সমস্ত কার্য সম্পাদন করেছিলেন সেগুলি পিতরকে একটা ভিত্তি প্রদান করে, এবং এই ভিত্তি থেকেই সে তার পরবর্তী পথে হেঁটে যায়। তোমরা কি সেই স্তরে পৌঁছাতে পার? যে সকল পথে তুমি হেঁটেছো এবং যে সকল সত্য তুমি উপলব্ধি করেছো–সেগুলি কি তোমার ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে যার উপর ভবিষ্যতে তুমি সুদৃঢ় অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে? পরবর্তী কালে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলি কি তোমার দর্শন হয়ে উঠতে পারে? সত্যিটা তোমাদের আমি বলবো–কেউ এমন বলতেই পারতো যে মানুষ অধুনা যা উপলব্ধি করে তা শুধুই মতবাদ। এর কারণ, যে বিষয়গুলি তারা উপলব্ধি করে সেগুলির সম্বন্ধে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তুমি যে এখনও পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পেরেছো তার একমাত্র কারণ হল তুমি নতুন এক আলোর দ্বারা চালিত হয়েছো। তোমার নৈতিক মূল্যবোধ একটা বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বলে যে এমন সম্ভব হয়েছে তা নয়, বরং কারণটা হল এই যে আমার বাক্য পথ দেখিয়ে তোমায় বর্তমান দিনে উপনীত করেছে; তোমার প্রভূত বিশ্বাস আছে বলেই যে এমনটা ঘটেছে তা-ও নয়, বরং ঘটেছে আমার বাক্যের প্রজ্ঞার কারণে, যা আজ অবধি অনুসরণ করে চলা ব্যতীত অন্যকিছু করতে তোমায় অসমর্থ করে তুলেছে। এই মুহূর্তে আমি যদি কথনে ক্ষান্তি দিই, আমার বক্তব্য যদি উচ্চারণ না করি, তাহলে তুমি তোমার পথ-চলা অব্যাহত রাখতে পারবে না, এবং অচিরেই তোমার অগ্রগতি রুদ্ধ হবে। এটাই কি তোমাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা নয়? কোন কোন বিষয়ে প্রবেশ করতে হয় এবং কোন কোন বিষয়ে তোমার ঘাটতিগুলি পূরণ করতে হয় সে বিষয়ে তোমাদের কোনো ধারণাই নেই। কেমন করে একটা অর্থপূর্ণ মানবজীবন যাপন করতে হয়, কীভাবে ঈশ্বরের ভালোবাসা প্রত্যর্পণ করতে হয়, বা কীভাবে একটা বলিষ্ঠ ও জোরালো সাক্ষ্য দেওয়া যায়, সে বিষয়েও তোমাদের কোনো উপলব্ধি নেই। এই বিষয়গুলি অর্জনে তোমরা সম্পূর্ণ অক্ষম। তোমরা একই সাথে অলস ও নির্বোধ! তোমরা কেবল অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে দাঁড়াতে পারো, আর যার উপর তোমরা নির্ভর করো তা হল এই নতুন আলো, এবং যিনি সম্মুখে থেকে তোমাদের পরিচালনা করছেন। তুমি যে আজ অবধি লেগে থাকতে পেরেছো তার কারণ তুমি সর্বতোভাবে নতুন আলো ও সাম্প্রতিকতম উচ্চারণের উপর নির্ভরশীল থেকেছো। তোমরা একেবারেই পিতরের মতো নও, সত্য পন্থা অন্বেষণে যার নৈপুণ্য ছিলো, বা ইয়োবের মতোও নও, যে একনিষ্ঠভাবে যিহোবার আরাধনা করতে এবং এই বিশ্বাস রাখতে পেরেছিল যে, যিহোবা যেভাবেই তার পরীক্ষা নিন না কেন, এবং তিনি তাকে আশীর্বাদ করুন বা না-করুন, যিহোবাই ঈশ্বর। তুমি কি এমন করতে সক্ষম? তোমরা কীভাবে বিজিত হয়েছো? একটা দিক হল বিচার, শাস্তি ও অভিশাপ বর্ষণ, এবং অন্য দিকটি হল সেইসব রহস্য যা তোমাদের জয় করে। তোমরা সবাই গর্দভের মতো। যে বিষয়ে আমি বক্তব্য রেখেছি তা যদি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট সুউচ্চ স্তরের না হয়, যদি কোনো রহস্য না থাকে, তাহলে তোমরা বিজিত হতে পারো না। যদি এমন হতো যে এক ব্যক্তি ধর্মোপদেশ দান করছে, এবং তারা সবসময় অনেক দিন ধরে একই বিষয়ে উপদেশ দেয়, তাহলে তোমরা সবাই দুই বছরের মধ্যে বিদায় নিয়ে এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে পড়তে; লেগে থাকতে সক্ষম হতে না। কীভাবে গভীরে যেতে হয় তোমরা জানো না, এটাও জানো না কীভাবে সত্যের বা জীবন-পথের অন্বেষণ করতে হয়। তোমরা একমাত্র যা বোঝো তা হল, সেই রকম কিছুকে গ্রহণ করা যা তোমাদের কাছে যা অভিনব মনে হয়, যেমন রহস্য ও দর্শনের বিষয়ে, বা পিতরের অভিজ্ঞতার বিষয়ে, বা যীশুর ক্রুশারোহণের পটভূমির বিষয়ে শ্রবণ করা… তোমরা কেবল এই সব বিষয়ে শ্রবণ করতে আগ্রহী, আর যত শোনো ততই তোমরা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠো। তোমরা এসব কেবল শুনছো তোমাদের দুঃখ ও একঘেয়েমি দূর করার জন্য। সম্পূর্ণভাবে এই অভিনব বিষয়গুলির দ্বারাই তোমাদের জীবন অব্যাহত থাকে। তুমি কি মনে করো যে তোমার নিজস্ব বিশ্বাসের দ্বারাই তুমি আজ যেখানে সেখানে পৌঁছেছো? তোমরা যে নগণ্য ও যৎসামান্য আত্মিক উচ্চতার অধিকারী, এ কি তা-ই নয়? কোথায় তোমাদের চারিত্রিক অখণ্ডতা? কোথায় তোমাদের মানবতা? তোমরা কি মনুষ্য জীবনের অধিকারী? নিখুঁত হওয়ার কয়টি উপাদান তোমাদের মধ্যে আছে? আমি যা বলছি তা কি বাস্তব সত্য নয়? এইভাবে আমি বাক্য উচ্চারণ ও কার্য সম্পাদন করি, কিন্তু তারপরেও তোমরা নামমাত্র মনোযোগ দাও। অনুসরণ করার সময় তোমরা পর্যবেক্ষণও করো। তোমরা সবসময় একটা নৈর্ব্যক্তিক অভিব্যক্তি বজায় রাখো, এবং তোমরা সর্বদা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হও। এইভাবেই তোমরা সকলে অগ্রসর হয়েছো; কেবলমাত্র শাস্তি, পরিমার্জন ও শোধন তোমাদেরকে তোমাদের আজকের অবস্থানে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। জীবনে প্রবেশের বিষয়ে শুধুমাত্র কিছু ধর্মীয় উপদেশ প্রদান করা হলে তোমরা সকলে কি অনেক পূর্বেই চুপিসারে পালিয়ে যেতে না? তোমাদের প্রত্যেকে আগের জনের চেয়ে বেশি উন্নাসিক, কিন্তু বাস্তবে তোমাদের উদর কেবলমাত্র নোংরা জলে পরিপূর্ণ। তোমরা আজ অবধি যে লেগে থাকতে পেরেছো তার একমাত্র কারণ হল তোমরা কয়েকটি রহস্য উপলব্ধি করতে পেরেছো, এমন কিছু বিষয় যা মানুষ পূর্বে উপলব্ধি করেনি। অনুসরণ না করার কোনো কারণ তোমাদের নেই, তাই তোমরা কোনো প্রকারে নিজেদের শক্ত করে ভিড়কে অনুসরণ করতে সক্ষম হয়েছো। এটা এমন একটা ফলাফল যা শুধুমাত্র আমার বাক্যের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, এবং এটা অবশ্যই এমন কোনো কৃতিত্ব নয় যা তোমরা নিজেরাই সুসম্পন্ন করেছো। তোমাদের বড়াই করার কিছু নেই। তাই, এই পর্যায়ের কাজে তোমাদের বর্তমান সময়ে পথ দেখিয়ে আনা হয়েছে মূলত বাক্যের দ্বারা। তা না হলে, তোমাদের মধ্যে কে মান্য করতে সমর্থ হতো? আজ অবধি লেগে থাকতে কে সক্ষম হতো? শুরু থেকেই, তোমরা প্রথম সম্ভাব্য মুহূর্তেই প্রস্থান করতে চেয়েছিলে, কিন্তু সেই স্পর্ধা তোমরা দেখাওনি; তোমাদের সাহসের অভাব ছিলো। আজ অবধি তোমরা দায়সারা ভাবে অনুসরণ করে এসেছো।

কেবলমাত্র যীশু ক্রুশকাঠে পেরেকবিদ্ধ হয়ে বিদায় নেওয়ার পরেই পিতর তার নিজের পথে যাত্রা শুরু করে এবং যে পথে তার চলা উচিৎ সেই পথে চলা আরম্ভ করে; কেবল তার নিজের অপর্যাপ্ততা ও ঘাটতিগুলি আবিষ্কার করার পরেই সে নিজেকে সজ্জিত করতে শুরু করে। সে লক্ষ্য করে ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসা নগণ্য এবং কষ্টভোগ করার সঙ্কল্প তার অপ্রতুল, তার কোনো অন্তর্দৃষ্টি নেই, এবং তার বিচারবুদ্ধির ঘাটতি আছে। সে দেখলো যে তার মধ্যে অনেক জিনিস আছে যা যীশুর অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এবং অনেককিছু আছে যেগুলি বিদ্রোহাত্মক, প্রতিরোধী ও মানবিক ইচ্ছার দ্বারা কলঙ্কিত। কেবলমাত্র এর পরেই সে প্রত্যেক অভিমুখে প্রবেশাধিকার লাভ করে। যীশু তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়, যীশু তার অবস্থাকে অনাবৃত করেন এবং পিতর তা স্বীকার করে নেয় ও যীশুর বাক্যের সঙ্গে একমত হয়, তবু এরপরেও পরবর্তীকাল পর্যন্ত তার প্রকৃত উপলব্ধির অভাব ছিল। কারণ, সেই সময়ে তার নিজের আত্মিক উচ্চতা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কিছুই ছিল না। অর্থাৎ, তোমাদের পরিচালিত করতে আমি এখন কেবল বাক্যকে ব্যবহার করছি, এবং অল্প কিছু সময়ের মধ্যে তোমাদের নিখুঁত করা অসম্ভব, এবং তোমাদের সামর্থ্য কেবল সত্যকে উপলব্ধি করতে ও জানতে সক্ষম হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এর কারণ তোমায় জয় করা ও তোমায় অন্তর থেকে প্রত্যয়িত করাটাই হল সাম্প্রতিক কার্য, এবং কেবলমাত্র মানুষ বিজিত হওয়ার পরেই তাদের মধ্যে কিছুজনকে নিখুঁত করা হবে। এই মুহূর্তে, তোমার দ্বারা উপলদ্ধ দর্শন ও সত্যগুলি তোমার ভবিষ্যৎ অভিজ্ঞতার জন্য বুনিয়াদ পত্তন করছে; ভবিষ্যৎ ক্লেশভোগের সময় তোমাদের সকলের এই বাক্যগুলির বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা থাকবে। পরবর্তীকালে, তোমার উপর যখন বিচার নেমে আসবে ও তুমি কষ্টভোগের ভিতর দিয়ে যাবে, তখন তুমি আজ যে-কথা বলো তা তোমার স্মরণে আসবে, যেমন: “যেমনই কষ্টভোগ, বিচার ও ভয়ানক বিপর্যয়ের আমি সম্মুখীন হই না কেন, আমি অবশ্যই ঈশ্বরকে পরিতুষ্ট করবো।” প্রথমে পিতরের ও তারপর ইয়োবের অভিজ্ঞতাগুলির কথা স্মরণ করো–আজকের কথাগুলি তোমায় মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করবে। একমাত্র এই ভাবেই তোমার বিশ্বাসকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। সেই সময়ে, পিতর বলেছিল যে, সে ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তি গ্রহণের উপযুক্ত নয়, এবং যখন সময় আসবে তুমিও ইচ্ছুক হবে যাতে সকল মানুষ তোমার মাধ্যমে ঈশ্বরের ধার্মিক প্রকৃতি অবলোকন করতে পারে। তুমি তৎক্ষণাৎ তাঁর বিচার ও শাস্তি গ্রহণ করবে, এবং তাঁর বিচার, শাস্তি ও অভিসম্পাত তোমার কাছে এক সান্ত্বনা হয়ে উঠবে। এখন, তোমার সত্যের দ্বারা সজ্জিত না হওয়াটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ব্যতিরেকে তুমি যে কেবল ভবিষ্যতে নিজের অবস্থানে সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে অক্ষম হবে তা-ই নয়, উপরন্তু তুমি চলতি কার্যের অভিজ্ঞতা লাভেও অসমর্থ হতে পারো। তা-ই যদি হয়, তুমি কি বিতাড়িত ও দণ্ডিত মানুষদের একজন হবে না? এই মুহূর্তে তোমায় কোনো বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না, এবং যে বিষয়গুলিতে তোমার ঘাটতি রয়েছে, সেগুলি আমি তোমায় সরবরাহ করেছি; আমি সকল অভিমুখ থেকে কথা বলি। তোমরা খুব বেশি কষ্ট সহ্য করো নি; কোনো রকম মূল্য না চুকিয়ে যা প্রাপণীয় তা-ই শুধু তোমরা গ্রহণ করো, এবং, তার চেয়েও বড়ো কথা, তোমাদের নিজস্ব কোনো যথার্থ অভিজ্ঞতা বা অন্তর্দৃষ্টি নেই। তাই, তোমরা যা উপলব্ধি করো তা তোমাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা নয়। তোমরা উপলব্ধি, জ্ঞান ও অবলোকনেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু তোমরা খুব বেশি ফসল কেটে ঘরে তোলো নি। আমি যদি তোমাদের প্রতি কখনো কোনো মনোযোগ না দিয়ে তোমাদের নিজের গৃহে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে দিতাম, অনেক আগেই তোমরা ত্বরিত বেগে ছুটে এই বিশাল উন্মুক্ত পৃথিবীতে পালিয়ে যেতে। যে পথে ভবিষ্যতে তোমরা চলবে তা হবে এক যন্ত্রণাকীর্ণ গমনপথ, এবং তোমরা যদি সাফল্যের সঙ্গে পথের চলতি বিস্তারটুকু হেঁটে যাও, তাহলে ভবিষ্যতে তোমরা যখন আরো বড়ো শাস্তিভোগের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন তোমাদের সাক্ষ্য থাকবে। তুমি যদি মানব জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি করো এবং মানব জীবনের সঠিক পথ অবলম্বন করে থাকো, এবং ঈশ্বর তোমার সাথে যেমনই আচরণ করুন না কেন, ভবিষ্যতে তুমি যদি তাঁর পরিকল্পনার অধীনে কোনো নালিশ বা বিকল্প অনুসন্ধান ছাড়াই আত্মসমর্পণ করো, এবং তুমি যদি ঈশ্বরের কাছে কোনো দাবি না রাখো, তাহলে এই ভাবে তুমি একজন মূল্যবান ব্যক্তি হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে, তুমি কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে যাও নি, তাই কোনোরকম পার্থক্যকরণ ছাড়াই তুমি যা-খুশি মান্য করে যেতে পারো। তুমি বলো যে, ঈশ্বর যেভাবেই পরিচালিত করুন সেই পথ যথার্থ, এবং, তুমি তাঁর সকল সমন্বয়সাধনের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ঈশ্বর তোমায় শাস্তিই দিন কি অভিশাপই দিন, তাঁকে সন্তুষ্ট করতে তুমি ইচ্ছুক থাকবে। এই সবকিছু বলার পরেও, তুমি এখন যা বলছো তা আবশ্যিকভাবে তোমার আত্মিক উচ্চতার প্রতিনিধিত্ব করে না। এখন তুমি যা-যা করতে ইচ্ছুক তা প্রমাণ করে না যে তুমি শেষ অবধি অনুসরণ করে যেতে সক্ষম। যখন তোমার উপর ভয়ানক কষ্টভোগ নেমে আসবে, বা যখন তুমি কোনো নিপীড়ন বা নিগ্রহ বা আরো বড়ো কোনো বিচারের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন তুমি ওই কথাগুলি বলতে সমর্থ হবে না। তখনো তুমি যদি ওই ধরনের উপলব্ধি বজায় রাখতে পারো এবং তোমার অবস্থানে অটল থাকতে পারো, তখন তা-ই হবে তোমার আত্মিক উচ্চতা। পিতর সেই সময়্টায় কেমন ছিল? পিতর বলেছিল: “প্রভু, তোমার জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করবো। তুমি যদি আমার মৃত্যু চাও, আমি মৃত্যু বরণ করবো!” সেই সময়ে সে এ-ভাবেই প্রার্থনা করেছিল। সে এ-ও বলেছিল: “অন্যেরা যদি তোমায় ভালো না-ও বাসে, আমি অবশ্যই শেষ অবধি তোমায় ভালোবাসবো। সর্ব সময়ে আমি তোমার অনুসরণ করবো।” সেই সময়ে সে এ-কথাই বলেছিল, কিন্তু তার উপর যখনি বিচার নেমে আসে, সে ভেঙে পড়ে ও কেঁদে ফেলে। তোমরা সকলেই জানো যে পিতর প্রভুকে তিনবার অস্বীকার করেছিল, জানো না কি? এমন অনেক মানুষ আছে যারা, যখন তাদের উপর বিচার নেমে আসে, কেঁদে ফেলে ও মনুষ্যোচিত দুর্বলতা প্রদর্শন করে। তুমি তোমার নিজের মালিক নও। সেই হিসাবে, তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না। হয়তো আজ তুমি সত্যিই বেশ ভালো ভাবেই আছো, কিন্তু তার কারণ হল তুমি একটা উপযোগী পরিবেশ পেয়েছো। কাল যদি পরিবেশটা পাল্টে যায়, তুমি তোমার ভীরুতা ও অপটুতা, তোমার ঘৃণ্যতা ও অযোগ্যতা প্রদর্শন করবে। তোমার “পুরুষকার” অনেক আগেই কার্যকারিতা হারাবে, এবং মাঝে-মাঝে এমনকি হয়তো তুমি তোমার কর্মভার একপাশে নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাবে। এটা প্রমাণ করে যে, সেই সময় তুমি যা উপলব্ধি করেছিলে তা তোমার প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা ছিল না। কোনো ব্যক্তি ঈশ্বরকে প্রকৃতই ভালোবাসে কিনা, ঈশ্বরের পরিকল্পনার কাছে যথার্থ আত্মসমর্পণে সে সক্ষম কিনা, ঈশ্বরের যা প্রয়োজন তা অর্জন করতে সে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করতে সমর্থ কিনা, এবং প্রয়োজন হলে নিজের জীবন বিসর্জন করেও সে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থেকে সবকিছুর সেরাটা ঈশ্বরকে প্রদান করে কিনা–এসব জানতে হলে অবশ্যই মানুষটির যথার্থ আত্মিক উচ্চতার দিকে তাকাতে হবে।

তোমায় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই বাক্যগুলি এখন উচ্চারিত হয়ে গিয়েছে: পরবর্তীকালে, তুমি কঠিনতর কষ্টভোগ ও তীব্রতর যন্ত্রণার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে! নিখুঁত হওয়াটা কোনো সরল বা সহজ বিষয় নয়। খুব কম করে হলেও তোমায় অবশ্যই ইয়োবের মতো বিশ্বাসের অধিকারী হতে হবে, কিম্বা হয়তো বা তার থেকেও বেশি। তোমার জানা উচিৎ যে ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলি ইয়োবের পরীক্ষাগুলির অপেক্ষা বেশি কষ্টসাধ্য হবে, এবং এখনও তোমায় দীর্ঘমেয়াদী শাস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটা কি সহজ বিষয়? তোমার ক্ষমতার যদি উন্নতিসাধন করা না যায়, তোমার উপলব্ধির সামর্থ্যে যদি ঘাটতি থাকে, এবং তোমার জ্ঞান যদি যৎসামান্য হয়, তাহলে সেই সময়ে তোমার কোনো সাক্ষ্য থাকবে না, পরিবর্তে তা পরিণত হবে একটি কৌতুকে, শয়তানের একটি খেলনায়। বর্তমানে তুমি যদি তোমার দর্শনগুলিকে ধরে থাকতে না পারো, তাহলে তোমার আদৌ কোনো বুনিয়াদ থাকবে না, এবং ভবিষ্যতে তুমি বাতিল হয়ে যাবে! পথের কোনো অংশেই চলাটা সহজ নয়, তাই তা লঘুভাবে নিও না। বিষয়টাকে এখন সযত্নে বিবেচনা করে দেখো এবং এই পথের অন্তিম বিস্তারটুকু যাতে যথাযথভাবে চলতে পারো তার প্রস্তুতি নাও। এ-ই হল সেই পথ, যে পথে ভবিষ্যতে হাঁটতে হবে, সকল মানুষ অবশ্যই যে পথে হাঁটবে। এই জ্ঞানটিতে কর্ণপাত না করে উড়িয়ে দিও না; ভেবো না আমি তোমায় যা বলছি তা শুধু শ্বাসবায়ুর অপচয়। এমন একটা দিন আসবে যখন এই সবকিছুকে তুমি কাজে লাগাতে পারবে–আমার বাক্য বৃথাই উচ্চারিত হতে পারে না। এখন তোমার নিজেকে সজ্জিত করার সময়, ভবিষ্যতের জন্য পথ নির্মাণের সময়। তোমার সেই পথ প্রস্তুত করা উচিৎ যে পথে পরবর্তীকালে তোমার হাঁটা বিধেয়; ভবিষ্যতে কীভাবে সুদৃঢ় অবস্থান নিতে সমর্থ হবে সে বিষয়ে তোমার উদ্বিগ্ন ও উতলা হওয়া উচিৎ, এবং ভবিষ্যতের পথের জন্য নিজেকে উত্তমরূপে প্রস্তুত করা উচিৎ। পেটুক ও অলস হয়ো না। তোমার সময়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করার জন্য যা করা যায় তুমি অবশ্যই তার সবকিছু করবে, যাতে তোমার যা-কিছু প্রয়োজন তুমি তা অর্জন করতে পারো। আমি তোমায় সবকিছু দিচ্ছি যাতে তুমি উপলব্ধি করতে পারো। তোমরা স্বচক্ষে দেখেছো তিন বছরের কম সময়ে আমি কতকিছু বলেছি এবং কত কার্য সম্পাদন করেছি। আমি যে এই ভাবে কাজ করে যাচ্ছি তার একটা কারণ হল মানুষের প্রচুর ঘাটতি, এবং অন্য কারণ হল সময় বড়ো কম; আর দেরি করা যায় না। তুমি কল্পনা করো যে সাক্ষ্য দেওয়ার ও ব্যবহৃত হওয়ার আগে মানুষকে অবশ্যই সর্বপ্রথম নির্ভুল অভ্যন্তরীন প্রাঞ্জলতা অর্জন করতে হবে–কিন্তু সেটা কি খুব মন্থর প্রক্রিয়া হবে না? তাহলে, কতদিন ধরে আমাকে তোমার সঙ্গ দিতে হবে? তুমি যদি চাও যতদিন না আমি বৃদ্ধ ও পলিতকেশ হয়ে যাই ততদিন আমি তোমায় সঙ্গ দিয়ে যাবো, তাহলে সেই দাবি হবে অসম্ভব! কঠোরতর শাস্তিভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, সকল মানুষের মধ্যে প্রকৃত উপলব্ধি অর্জিত হবে। এগুলি-ই কার্যের ধাপ। তুমি একবার যখন আজকের আলোচিত দর্শন সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে ফেলবে এবং তোমার প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা অর্জন করবে, তখন ভবিষ্যতে তুমি যেমনই দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে যাও, তা তোমায় আচ্ছন্ন করবে না, এবং তুমি সেগুলি সহন করতে সক্ষম হবে। আমি যখন এই অন্তিম পর্যায়ের কাজটুকু সম্পূর্ণ করে ফেলবো এবং আমার সর্বশেষ বাক্যগুলির উচ্চারণ সমাপ্ত করবো, ভবিষ্যতে মানুষকে তাদের নিজের পথে চলতে হবে। এতে পূর্বে উচ্চারিত বাক্যগুলি চরিতার্থতা পাবে: প্রত্যেকটি মানুষের উপর পবিত্র আত্মার অর্পিত দায়িত্ব আছে, এবং প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে রয়েছে তাঁর করণীয় কার্য। ভবিষ্যতে, পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রত্যেকে তাদের যে পথে চলা উচিৎ সেই পথে চলবে। শাস্তিভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া কালীন কে অন্যদের তত্ত্বাবধান করতে সমর্থ হবে? প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব যন্ত্রণা আছে, এবং প্রত্যেকের নিজস্ব আত্মিক উচ্চতা আছে। কারো আত্মিক উচ্চতা অন্য কারোর অনুরূপ নয়। পতি তাদের পত্নীর যত্ন নিতে সক্ষম হবে না, বা পিতা-মাতা তাদের সন্তানের; কেউ-ই অন্য কারো পরিচর্যা করতে সমর্থ হবে না। তা বর্তমান সময়ের মতো হবে না, যখন পারস্পরিক পরিচর্যা ও পরিপোষণ এখনো সম্ভব। সেটা হবে এমন একটা সময় যখন প্রতিটি ধাঁচের মানুষ হবে উন্মোচিত। অর্থাৎ, ঈশ্বর যখন মেষপালককে প্রহার করবেন, তখন মেষের পাল বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, এবং তখন তোমাদের কোনো প্রকৃত নেতা থাকবে না। মানুষ খণ্ডিত হয়ে থাকবে–এখনকার মতো হবে না যখন তোমরা একটা সমাবেশ আকারে একত্রে আসতে পারো। ভবিষ্যতে, যাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার কার্যের প্রভাব থাকবে না, তারা তাদের সত্যিকারের বর্ণ প্রদর্শন করবে। স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে আর স্ত্রীরা তাদের স্বামীদেরকে বেচে দেবে, সন্তানগণ তাদের পিতা-মাতাদেরকে বেচে দেবে, এবং পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদেরকে নির্যাতন করবে–মানব-হৃদয়ের তল পাওয়া ভার! একমাত্র যা করা যায় তা হল, কোনো একজনের যা আছে তাকে ধরে থাকা, এবং পথের অন্তিম বিস্তারটুকু যথাযথভাবে চলা। এই মুহূর্তে, তোমরা বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাও না, তোমরা সবাই অদূরদর্শী। কার্যের এই পর্যায়টি সাফল্যের সঙ্গে অনুভব করা কোনো সহজ বিষয় নয়।

শাস্তিভোগের কাল খুব বেশি দীর্ঘায়িত হবে না; বস্তুত, এটা এক বছরেরও কম সময় ব্যাপী স্থায়ী হবে। এটা যদি এক বছর ধরে চলতো, তাহলে কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপটি বিলম্বিত হতো, এবং মানুষের আত্মিক উচ্চতা অপর্যাপ্ত হতো। যদি এটি খুব দীর্ঘ হতো, তাহলে মানুষ এটিকে সহ্য করে টিকে থাকতে পারতো না। যতই হোক, মানুষের আত্মিক উচ্চতার নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে। আমার নিজের কার্য সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ হবে মানুষের সেই পথে চলা যে পথে তাদের হাঁটা উচিৎ। প্রত্যেকের অবশ্যই উপলব্ধি থাকতে হবে কোন পথে তাদের চলা উচিৎ–তা হল যন্ত্রণাভোগের একটি পথ ও প্রক্রিয়া, এবং একই সঙ্গে তা হল তোমার ঈশ্বরপ্রেমের সঙ্কল্পকে পরিমার্জিত করার এক পথ। কোন সত্যে তোমার প্রবেশ করা উচিৎ, কোন সত্যকে তোমার সম্পূরণ করা উচিৎ, কীভাবে তোমার অনুভব করা উচিৎ, এবং কোন অভিমুখ থেকে তোমার প্রবেশ করা উচিৎ–এই সমস্ত বিষয় তোমায় অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। এখন তুমি অবশ্যই নিজেকে প্রস্তুত করবে। যখন শাস্তিভোগ তোমার উপর নেমে আসবে, তখন অনেক বিলম্ব হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই তাদের নিজের জীবনের ভার বহন করতে হবে, এবং সবসময় অন্যের সাবধানবাণীর জন্য বা অন্য কেঊ কান ধরে টেনে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করলে চলবে না। আমি এত কিছু বলেছি, কিন্তু তুমি এখনও জানো না কোন সত্যে তোমার প্রবেশ করা উচিৎ বা কোন সত্যের দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করা উচিৎ। এটা প্রমাণ করে যে ঈশ্বরের বাক্যকে অধ্যয়ন করার বিষয়ে তুমি কোনো উদ্যোগ নাও নি। তুমি তোমার নিজের জীবনের কোনো দায়ভারই বহন করো না–এমনটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? কোথায় তোমার প্রবেশ করা উচিৎ সে বিষয়ে তোমার কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই, তোমার কী উপলব্ধি করা উচিৎ তা তুমি বোঝো না, এবং কোন ভবিষ্যৎ পথ তোমার গ্রহণ করা উচিৎ সে বিষয়ে এখনও তুমি বিভ্রান্ত। তুমি কি সম্পূর্ণরূপে অপদার্থ নও? তোমার কী কার্যকারিতা আছে? এখন তোমরা যা করছো তা তোমাদের নিজের পথ নির্মাণ ও তাকে পাকা করে বাঁধানো। মানুষের কী অর্জন করা উচিৎ এবং মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের চাহিদার মানদণ্ড কী–সে বিষয়ে তোমাকে অবশ্যই অবগত হতে হবে। নিম্নলিখিত উপলব্ধিগুলি তোমার থাকতেই হবে: যদিও আমি গভীরভাবে ভ্রষ্ট, তবু যা-ই ঘটুক না কেন আমি অবশ্যই ঈশ্বরের সম্মুখে এই ত্রুটিগুলি পরিপূরণ করবো। ঈশ্বর আমায় বলার পূর্বে আমি উপলব্ধি করিনি, কিন্তু এখন, যখন তিনি আমায় বলেছেন এবং আমি উপলব্ধি করেছি, আমি অবশ্যই অতি সত্ত্বর ঘাটতিগুলি পূরণ করবো, একটি স্বাভাবিক মানবিকতা যাপন করবো, এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায়কে পূরণ করতে পারে এমন একটি প্রতিমূর্তি যাপন করবো। পিতর যা করেছিল আমি যদি তার সমকক্ষ কিছু না-ও করতে পারি, ন্যূনতম ভাবে আমার একটি স্বাভাবিক মানবিকতা যাপন করা উচিৎ। এই ভাবে, আমি ঈশ্বরের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করতে পারি।

পথের এই অন্তিম বিস্তার আজ থেকে ভবিষ্যৎ দুঃখ-যাতনার অবসান অবধি প্রসারিত হবে। পথের এই বিস্তারে মানুষের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা উন্মোচিত হবে, এবং একই সাথে তা প্রদর্শন করবে যে তাদের যথার্থ বিশ্বাস আছে কিনা। পূর্বে মানুষ যে সব পথ দিয়ে চালিত হয়েছে তাদের তুলনায় পথের এই বিস্তারটি অপেক্ষাকৃত বেশি দুরূহ ও প্রস্তরাকীর্ণ হবে বলে এটিকে “পথের অন্তিম বিস্তার” বলা হয়েছে। সত্যটা হল এটি পথের একদম সর্বশেষ অংশ নয়; কারণ এই কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, তুমি অতঃপর সুসমাচার প্রচারের কার্যের মধ্য দিয়ে যাবে এবং মানুষের একটি অংশ থাকবে যারা ব্যবহৃত হওয়ার কাজের মধ্য দিয়ে যাবে। তাই শুধুমাত্র মানুষের পরিমার্জন-জনিত ক্লেশ ও কঠোর পরিবেশ প্রসঙ্গেই “পথের অন্তিম বিস্তার” কথাটি বলা হয়েছে। অতীতে পথের যে খণ্ডাংশটিতে হাঁটা হয়েছিল, সেখানে ব্যক্তিগতভাবে আমি তোমায় সেই আনন্দপূর্ণ যাত্রায় পথপ্রদর্শন করেছিলাম, তোমার হাত ধরে তোমায় শিক্ষা দিয়েছিলাম, এবং আমার নিজের মুখে তোমার জ্ঞানের রসদ জুগিয়েছিলাম। যদিও তুমি শাস্তি ও বিচারের মধ্য দিয়ে অনেকবার গিয়েছো, তবুও তোমার কাছে সেগুলি ধারাবাহিক কিছু মৃদু আঘাতের অতিরিক্ত আর কিছু ছিল না। অবশ্যই, তা ঈশ্বর-বিশ্বাসের বিষয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে পরিবর্তিত করেছে; তোমার স্বভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য এনেছে, এবং তোমাকে আমার বিষয়ে অল্প কিছুটা উপলব্ধি লাভ করতে দিয়েছে। কিন্তু আমি যা বলছি তা হল, মানুষ যখন পথের সেই বিস্তার ধরে চলছিল, তখন যে মূল্য বা কষ্টকর প্রচেষ্টা মানুষকে পরিশোধ করতে হয়েছিল তা ছিল বেশ কম–আমিই তোমাকে তোমার বর্তমান অবস্থিতির দিকে পরিচালিত করেছি। এর কারণ আমি তোমায় কোনোকিছু করার জন্য ফরমায়েশ করি না; বস্তুত, তোমার কাছে আমার চাহিদা মোটেই উচ্চ নয়–যা প্রাপণীয় সেটুকুই গ্রহণ করতে তোমায় আমি অনুমোদন করি। এই সময়কালে আমি অবিরাম তোমাদের প্রয়োজন মিটিয়েছি, এবং আমি কখনো কোনো অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করি নি। বারংবার তোমরা শাস্তি ভোগ করেছো, তবু তোমরা আমার আদি চাহিদা অর্জন করোনি। তোমরা পশ্চাদপসরণ করো ও বিমর্ষ হয়ে পড়ো, কিন্তু আমি তা ধর্তব্যের মধ্যে আনি না, কারণ এখন আমার ব্যক্তিগত কার্যের সময়, এবং আমার প্রতি তোমার “আত্মনিবেদন”-কে আমি ততটা গুরুত্বসহকারে নিই না। কিন্তু এখান থেকে পরবর্তী পথ্টুকুতে, আমি আর কার্য বা কথন করবো না, এবং যখন সময় হবে তখন আমি আর তোমাদের এরকম অলসভাবে চলতে থাকাটাও বরদাস্ত করবো না। আমি তোমাদের শিক্ষার জন্য প্রভূত পাঠ গ্রহণ অনুমোদন করবো, এবং যা পাওয়া যাচ্ছে তা-ই গ্রহণ করে নিতে দেবো না। আজ তোমাদের যে প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা রয়েছে, তা অবশ্যই উদ্ঘাটিত হতে হবে। পথের অন্তিম বিস্তারটি তুমি কীভাবে চলো তা থেকেই বোঝা যাবে তোমাদের বৎসর-ব্যাপী প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে কি না। অতীতে, তোমরা ভেবেছিলে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করাটা খুব সরল বিষয়, এবং এরকম ভাবনার কারণ ছিল ঈশ্বর তোমাদের সাথে কঠোর আচরণ না করা। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টা কেমন? তোমরা কি মনে করো যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করাটা সরল ব্যাপার? তোমরা কি এখনও অনুভব করো যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করাটা তোমাদের রাস্তায় ক্রীড়ারত শিশুদের মতো খুশি ও চিন্তামুক্ত করে তোলে? একথা সত্যি যে তোমরা মেষ মাত্র; কিন্তু, ঈশ্বরের অনুগ্রহ পরিশোধ করার জন্য, এবং যে ঈশ্বরে তোমরা বিশ্বাস করো তাঁকে সামগ্রিকভাবে লাভ করার জন্য, যে পথে তোমাদের চলা উচিৎ, তোমাদেরকে অবশ্যই সেই পথে চলতে সক্ষম হতে হবে। নিজের সাথে কৌতুক কোরো না এবং নিজেকে প্রতারিত কোরো না! পথের এই বিস্তারে তুমি যদি লেগে থাকতে পারো, তাহলে তুমি এই অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করতে সক্ষম হবে যে আমার সুসমাচার কার্য সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, এবং তুমি আমার অন্তরঙ্গ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে, এবং সারা মহাবিশ্ব জুড়ে আমার কার্যকে প্রসারিত করার কাজে তোমার ভূমিকা পালন করতে পারবে। সেই সময়, অতি সানন্দে তুমি যে পথে তোমার চলা উচিৎ সেই পথে চলা অব্যাহত রাখবে। ভবিষ্যৎ হবে অপরিসীম উজ্জ্বল, কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক কাজ হল পথের এই অন্তিম বিস্তারটুকু যথাযথভাবে চলা। তোমাকে অবশ্যই অন্বেষণ করতে হবে, এবং কীভাবে তা করা যায় সেই বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এটাই হল সেই কাজ যা তোমায় অবশ্যই এই মুহুর্তে করতে হবে; বর্তমানে এ হল এক আশু প্রয়োজনীয় বিষয়!

পূর্ববর্তী: তোমরা অবশ্যই কার্যকে উপলব্ধি করবে – বিভ্রান্তির মধ্যে অনুসরণ কোরো না!

পরবর্তী: ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের প্রতি তোমার কীভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত?

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন