কাজ এবং প্রবেশ (৯)

বদ্ধমূল জাতিগত ঐতিহ্য এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বহুকাল আগেই মানুষের শুদ্ধ ও শিশুসুলভ মনকে ভারাক্রান্ত করেছে, এবং এগুলো সামান্যতম মানবতা ছাড়াই মানুষের আত্মাকে আক্রমণ করেছে, যেন আবেগ বা নিজের সম্পর্কে বোধের ছিটেফোঁটাও এদের নেই। এই শয়তানদের কার্যপদ্ধতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং যেন “শিক্ষা” ও “প্রতিপালন”-ই মনুষ্য নিধনের জন্য শয়তানের রাজার চিরাচরিত কার্যপদ্ধতি হয়ে উঠেছে। সে তার “গভীর তালিম” ব্যবহার করে নিজের কদর্য অন্তরাত্মাকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে, নিরীহ মেষের বেশে সজ্জিত হয়ে সে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে এবং মানুষকে সম্পূর্ণ গ্রাস করার জন্য তাদের অলস নিদ্রাযাপনের সুযোগকে কাজে লাগায়। বেচারা মানবজাতি—তারা কীভাবেই বা জানবে, যে ভূমিতে তারা প্রতিপালিত হয়েছে তা শয়তানের ভূমি, যে তাদের প্রতিপালন করেছে সে-ই আসলে তাদের ক্ষতিসাধনকারী এক শত্রু। তা সত্ত্বেও মানুষ একেবারেই জাগ্রত হয় না; তার নিজের ক্ষুধা-তৃষ্ণা তৃপ্ত করার পর সে তাকে বড় করে তোলার করার জন্য তার “পিতামাতার” “বদান্যতা” পরিশোধ করতে প্রস্তুত হয়। মানুষ এমনই। আজ, সে এখনও জানে না, যে রাজা তাকে প্রতিপালন করেছে, সেই তার শত্রু। পৃথিবী মৃতদেহের অস্থি-র জঞ্জালে ভরে গেছে, শয়তান নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্মত্ত উল্লাস করছে এবং “নরকে” মানুষের মাংস গ্রাস করে চলেছে, মানুষের কঙ্কালের সাথে কবরে সহাবস্থান করছে এবং মানুষের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহের শেষ অবশিষ্টাংশও গ্রাস করার বৃথা চেষ্টা করছে। তবুও মানুষ চিরকাল অজ্ঞ, এবং সে কখনোই শয়তানকে নিজের শত্রু বলে মনে করেনি, বরং তার পরিবর্তে নিজের সমগ্র হৃদয় দিয়ে তার সেবা করেছে। এই ধরনের হীনচরিত্রের মানুষ ঈশ্বরকে জানতে নিছকই অক্ষম। ঈশ্বরের পক্ষে কি দেহধারণ করে মানুষের মধ্যে অবতীর্ণ হওয়া এবং পরিত্রাণ সম্পর্কিত তাঁর সমস্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া সহজ? মানুষ, যে ইতিমধ্যেই মৃতস্থানে নিমজ্জিত রয়েছে, সে কীভাবে ঈশ্বরের চাহিদা পূরণে সক্ষম হতে পারে? মানবজাতির কর্মসম্পাদনের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর বহু বিনিদ্র রজনীর কষ্ট সহ্য করেছেন। সুদীর্ঘ উচ্চতা থেকে নিম্নতম গভীরে, তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন সেই জীবন্ত নরকে যেখানে মানুষ বাস করে, যাতে মানুষের সাথে তিনি দিনযাপন করতে পারেন, মানুষের মধ্যে যে মলিনতা রয়েছে সে বিষয়ে তিনি কখনোই অভিযোগ করেননি, এবং মানুষের আনুগত্যহীনতার জন্য তিনি কখনো তাদের তিরস্কার করেননি, বরং ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কর্ম সম্পাদনের সময় চূড়ান্ত অপমান সহ্য করেছেন। ঈশ্বরের স্থান নরকে কীভাবে হতে পারে? তিনি নরকে কীভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারেন? কিন্তু সমগ্র মানবজাতির স্বার্থে, যাতে সমগ্র মানবজাতি শীঘ্রই বিশ্রাম লাভ করতে পারে, পৃথিবীতে আসার জন্য তিনি অপমান সহ্য করেছেন ও অন্যায়ের কষ্টভোগ করেছেন, এবং মানুষকে উদ্ধারের জন্য ব্যক্তিগতভাবে “নরকে” ও “মৃতস্থানে” প্রবিষ্ট হয়েছেন, বাঘের গুহায় প্রবেশ করেছেন। মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণের যোগ্য হতে পারে? ঈশ্বরের বিষয়ে অভিযোগ করার কী কারণ রয়েছে তার? ঈশ্বরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর ধৃষ্টতা তার কীভাবে থাকতে পারে? স্বর্গের ঈশ্বর এই সর্বনিকৃষ্ট ভূমিতে অবতীর্ণ হয়েছেন, এবং তিনি কখনোই তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেননি অথবা মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি, বরং নীরবে মানুষের ক্ষতিসাধন[১] ও নিপীড়ন মেনে নিয়েছেন। তিনি কখনোই মানুষের অযৌক্তিক দাবির প্রতি প্রত্যাঘাত করেননি, কখনো মানুষের কাছে অত্যধিক দাবি করেননি, এবং কখনো অযৌক্তিক চাহিদাও প্রকাশ করেননি; তিনি কোনো অভিযোগ না করেই শুধু মানুষের চাহিদামতো সমস্ত কাজ করেন: শিক্ষাদান, আলোকপ্রদান, তিরস্কার, বাক্যের পরিমার্জনা, স্মরণ করিয়ে দেওয়া, পরামর্শ দেওয়া, সান্ত্বনা দেওয়া, বিচার করা, এবং প্রকাশ করা। এগুলোর মধ্যে কোন পদক্ষেপটা মানুষের জীবনের জন্য নয়? যদিও তিনি মানুষের ভবিষ্যৎ ও নিয়তি অপসারিত করেছেন, কিন্তু ঈশ্বরের সম্পাদিত কোন ধাপটা মানুষের নিয়তির জন্য নয়? এগুলোর কোনটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য করা হয়নি? এগুলোর কোনটা মানুষকে কষ্টভোগের থেকে এবং অন্ধকারের শক্তির নিপীড়ন যা রাত্রির মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন, সেগুলোর হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সম্পাদিত হয়নি? এগুলোর কোনটা মানুষের স্বার্থের জন্য নয়? ঈশ্বরের হৃদয়, যা স্নেহময়ী মায়ের মতো, সেই হৃদয় কে-ই বা উপলব্ধি করতে পারে? ঈশ্বরের আকুল হৃদয়ের মর্ম কে-ই বা উপলব্ধি করতে পারে? ঈশ্বরের আবেগপূর্ণ হৃদয় এবং প্রবল প্রত্যাশার প্রতিদান দেওয়া হয়েছে শীতল হৃদয় দিয়ে, উদাসীন, নিস্পৃহ দৃষ্টি দিয়ে এবং মানুষের বারংবার তিরস্কার ও অপমান দিয়ে; সেগুলোর প্রতিদান দেওয়া হয়েছে তীক্ষ্ণ কটূক্তি, ব্যঙ্গ, ও অবজ্ঞা দিয়ে; সেগুলোর প্রতিদান দেওয়া হয়েছে মানুষের উপহাস দিয়ে, পদদলন ও প্রত্যাখ্যান দিয়ে, তার ভ্রান্ত ধারণা, হাহাকার, বিচ্ছিন্নতা, ও উপেক্ষা দিয়ে, এবং শুধুমাত্র প্রতারণা, আক্রমণ, ও তিক্ততা দিয়ে। তাঁর উষ্ণ বাক্য সম্মুখীন হয়েছে ক্রুদ্ধ ভ্রু-কুঞ্চনের এবং হাজার হাতের শীতল প্রতিরোধের। ঈশ্বর শুধুই সহ্য করতে পারেন, মাথা নত করে ইচ্ছুক ষাঁড়ের মতো মানুষের সেবা করতে পারেন[২]। এতবার তিনি সম্মুখীন হয়েছেন এত এত সূর্য ও চন্দ্রের, এবং নক্ষত্রের, এতবার তিনি প্রত্যূষে প্রস্থান করে সন্ধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেছেন, নিদ্রাহীন অস্থির রাত্রিযাপন করেছেন, তাঁর পিতার কাছ থেকে তাঁর প্রস্থানের চেয়ে হাজার গুণ যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, সহ্য করেছেন মানুষের আক্রমণ ও ভাঙন, এবং মানুষের মোকাবিলা ও ছাঁটাই। ঈশ্বরের নম্রতা ও প্রচ্ছন্নতার প্রতিদান দেওয়া হয়েছে মানুষের পূর্বধারণা[৩] দিয়ে, মানুষের অন্যায্য দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যায় আচরণ দিয়ে, এবং যে নীরব দুর্বোধ্যতায় ঈশ্বর কাজ করেন, তাঁর সহনশীলতা, ও তাঁর সহিষ্ণুতার প্রতিদান দেওয়া হয়েছে মানুষের লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে; মানুষ বিনা পরিতাপে ঈশ্বরকে শ্বাসরুদ্ধ করে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে, তাঁকে ভূমিতে পদদলিত করার চেষ্টা করে। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের আচরণের এই মনোভাব একটা “বিরল চাতুরি”, এবং ঈশ্বর, যিনি মানুষের পীড়ন ও অবজ্ঞার শিকার, তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের পায়ের নিচে দলিত হন, যেখানে মানুষ নিজে উচ্চে অবস্থান করে, যেন সে-ই পর্বতের রাজা হবে, যেন সে-ই সম্পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায়[৪], যাতে একটা পর্দার আড়াল থেকে মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা যায়, যাতে ঈশ্বরকে পর্দার আড়ালে বিবেকবান এবং নিয়ম-পালনকারী পরিচালক হিসাবে গড়ে তোলা যায়, যিনি প্রত্যাঘাত করতে বা সমস্যা সৃষ্টি করতে অপারগ। ঈশ্বরকে অবশ্যই শেষ সম্রাটের ভূমিকা পালন করতে হবে, তাঁকে সমস্ত স্বাধীনতা বর্জিত একজন হাতের পুতুলে[৫] পরিণত হতেই হবে। মানুষের কর্ম অকথ্য, তাহলে সে কীভাবে ঈশ্বরের কাছে এটা-ওটা দাবি জানানোর যোগ্য? সে ঈশ্বরকে পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য কীভাবে হতে পারে? ঈশ্বর তার দুর্বলতার প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, এমন দাবি করার যোগ্যতা তার কীভাবে থাকতে পারে? সে কীভাবে ঈশ্বরের করুণা পাওয়ার যোগ্য হতে পারে? সে বারংবার ঈশ্বরের মহানুভবতা লাভের উপযুক্ত কীভাবে হতে পারে? বারংবার ঈশ্বরের ক্ষমা লাভের যোগ্যই বা কীভাবে হতে পারে? তার বিবেকবোধ কোথায়? সে বহুকাল আগেই ঈশ্বরের মন ভেঙে দিয়েছে, অনেক আগে থেকেই ঈশ্বরের হৃদয়কে ভগ্ন অবস্থাতেই ফেলে রেখে দিয়েছে। ঈশ্বর আনন্দিত ও প্রাণবন্তভাবে মানুষের মাঝে এসেছিলেন, আশা করেছিলেন মানুষ তাঁর প্রতি বদান্যতা দেখাবে, এমনকি যদি তা সামান্য উষ্ণও হয়। তবুও ঈশ্বরের হৃদয় মানুষের কাছ থেকে খুব সামান্যই সান্ত্বনা লাভ করেছে, তিনি যা পেয়েছেন তা শুধুই ক্রমবর্ধমান[৬] আক্রমণ এবং নিপীড়ন। মানুষের মন অত্যন্ত লোভী, তার আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত উচ্চ, সে কখনোই পরিতৃপ্ত হয় না, সে সর্বদাই ক্ষতিকর ও হঠকারী, সে ঈশ্বরকে কখনোই স্বাধীনতা দেয় না বা কথা বলার অধিকার দেয় না, ঈশ্বরের কাছে শুধু অপমানিত হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প রাখে না, এবং মানুষকে নিজের ইচ্ছামতো তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেয়।

সৃষ্টির লগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত ঈশ্বর কতই না যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, কতই না আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও এমনকি আজও, এখনও মানুষ ঈশ্বরের কাছে তার দাবি খর্ব করে না, সে এখনও ঈশ্বরকে বিচার করে, এখনও তাঁর প্রতি মানুষের সহিষ্ণুতা নেই, এবং সে শুধুমাত্র ঈশ্বরকে পরামর্শ দেয়, তাঁর সমালোচনা করে, ও তাঁকে অনুশাসন করে, যেন সে গভীরভাবে ভীত যে ঈশ্বর ভুল পথ গ্রহণ করবেন, পৃথিবীতে যে ঈশ্বর আছেন তিনি বর্বর ও যুক্তিবোধহীন, বা তিনি দাঙ্গা লাগাচ্ছেন, অথবা তাঁর কোনো মূল্যই নেই। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের মনোভাব সর্বদা এরকমই থেকেছে। ঈশ্বর কি এতে দুঃখিত না হয়ে পারেন? দেহধারণ করে ঈশ্বর প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও অপমান সহ্য করেছেন; তাহলে ঈশ্বরকে মানুষের শিক্ষা গ্রহণ করতে বাধ্য করা আরো কতই না খারাপ? মানুষের মাঝে তাঁর আগমন তাঁর সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, যেন তিনি মৃতস্থানে বন্দী হয়ে রয়েছেন এবং তিনি সামান্যতম প্রতিরোধ ছাড়াই মানুষের ব্যবচ্ছেদ স্বীকার করে নিয়েছেন। এটা কি লজ্জাজনক নয়? একজন স্বাভাবিক মানুষের পরিবারে অবতীর্ণ হয়ে “যীশু” সর্বাধিক অবিচার ভোগ করেছেন। তার থেকেও অপমানজনক বিষয় হল, তিনি এই ধূলিময় দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়েছেন ও নিজেকে সামান্যতম পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন, এবং এক অতি-সাধারণ দেহ পরিগ্রহ করেছেন। যে ঈশ্বর সর্বাধিক উচ্চতাসম্পন্ন, এক সামান্য মানুষে পরিণত হয়ে তিনি কি কষ্টভোগ করেন না? আর তিনি কি মানবজাতির জন্যই তা করেন না? একবারও কি এমন হয়েছে যে তিনি নিজের জন্য ভেবেছেন? যখন ইহুদিরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল, এবং তিনি লোকেদের ব্যঙ্গ ও উপহাসের শিকার হয়েছিলেন, তারপরেও তিনি কখনোই স্বর্গের কাছে অভিযোগ জানাননি বা পৃথিবীর কাছে প্রতিবাদ জানাননি। বর্তমানে, এই সহস্রবর্ষপ্রাচীন বিয়োগান্তক ঘটনা এই ইহুদিসম লোকেদের মধ্যে আবারও হাজির হয়েছে। তারা কি সেই একই পাপ করছে না? কোন বিষয়টা মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি লাভের যোগ্য করে তোলে? সে কি ঈশ্বরের বিরোধিতা করে তারপর তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণ করে না? মানুষ কখনো ন্যায়ের মুখোমুখি হয় না বা সত্যের অনুসন্ধান করে না কেন? ঈশ্বর যা করেন তাতে সে কখনোই আগ্রহী হয় না কেন? তার ধার্মিকতা কোথায়? কোথায় তার ন্যায্যতাবোধ? তার কি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা আছে? কোথায় তার বিচারবোধ? মানুষের কাছে যা প্রিয় তার কতটুকু ঈশ্বরের কাছে প্রিয়? মানুষ সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তুকেও আলাদা করে চিনতে পারে না,[৭] সে সবসময় কালোকে সাদার সাথে গুলিয়ে ফেলে,[৮] সে ন্যায় ও সত্যকে দমন করে, এবং অন্যায্যতা ও অধার্মিকতাকে সুউচ্চে স্থান দেয়। সে আলোকে দূরে সরিয়ে দেয়, এবং অন্ধকারের মধ্যে লম্ফঝম্প করে। যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসন্ধান করে তারাই আলোকে দূরে সরিয়ে রাখে, যারা ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে তারাই তাঁকে পায়ের তলায় দলিত করে এবং নিজেদের সুউচ্চে স্থাপন করে। মানুষ দস্যুর[৯] থেকে আলাদা নয়। তার চেতনা কোথায়? ঠিক ভুলের পার্থক্য কে-ই বা করতে পারে? ন্যায়কে কে উচ্চে স্থান দিতে পারে? সত্যের জন্য কে-ই বা কষ্ট স্বীকারে ইচ্ছুক? মানুষ নির্মম ও শয়তানসুলভ! ঈশ্বরকে ক্রুশবিদ্ধ করে তারা হাততালি দেয় ও উৎসাহ প্রকাশ করে, তাদের উন্মত্ত চিৎকার কখনও স্তব্ধ হয় না। তারা ঠিক কুকুর ও মুরগির মতোই, তারা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে, তারা নিজস্ব রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের হস্তক্ষেপের হাত থেকে কোনো স্থানই রেহাই পায়নি, তারা সবাই একসাথে দলবদ্ধভাবে তাদের চোখ বন্ধ করে পাগলের মতো অবিরাম চিৎকার করে, এবং এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে, কোলাহলপূর্ণ ও মুখর, এবং যারা অন্ধভাবে নিজেদেরকে অন্যদের সাথে সংযুক্ত করে তাদের উত্থান হতে থাকে, সকলেই তাদের পূর্বপুরুষদের “প্রসিদ্ধ” নাম উঁচুতে তুলে ধরে। এই কুকুর ও মুরগিরা অনেক আগেই ঈশ্বরকে তাদের মনের কোণায় রেখেছিল এবং কখনও ঈশ্বরের হৃদয়ের অবস্থার প্রতি কোনো মনোযোগই দেয়নি। তাই আশ্চর্যের কিছু নেই যে ঈশ্বর মানুষদের কুকুর ও মুরগি বলে অভিহিত করেন, এমন এক চিৎকাররত কুকুর যার চিৎকারে আরও একশো কুকুর সাড়া দেয়; এইভাবেই অনেক শোরগোল করে সে ঈশ্বরের কাজকে বর্তমান দিনে এনেছে, এসব বিষয়ে মনোযোগ দেয়নি যে ঈশ্বরের সেই কাজ কেমন, তাতে ন্যায় আছে কি না, সেখানে ঈশ্বরের পদার্পণের জন্য কোনও স্থান আছে কি না, আগামী দিন কেমন হবে, তার নিজস্ব নীচতা ও নিজস্ব কলুষতা কেমন। মানুষ কখনো বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তা করেনি, আগামীর কথা ভেবে সে কখনোই উদ্বিগ্ন হয়নি; সে নিজের পক্ষে উপকারী বা মূল্যবান সমস্ত কিছু একত্রিত করে কুক্ষিগত করে রেখেছে, ঈশ্বরের জন্য বর্জিত ও অবশিষ্টাংশ[১০] ছাড়া আর কিছুই রাখেনি। মানবজাতি কতই না নিষ্ঠুর! ঈশ্বরের জন্য সে কোনও অনুভূতিই ব্যয় করে না, এবং ঈশ্বরের সমস্ত কিছু গোপনে আত্মসাৎ করে নেওয়ার পর সে তাঁকে অনেক পিছনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তাঁর অস্তিত্বের প্রতি আর কোনো মনোযোগই দেয় না। সে ঈশ্বরকে উপভোগ করে, অথচ তাঁর বিরোধিতা করে, এবং পায়ের নিচে তাঁকে দলিত করে, এদিকে সে মুখে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় ও তাঁর প্রশংসা করে; সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তাঁর উপর নির্ভর করে, আবার একইসাথে তাঁকে প্রতারণাও করে; সে ঈশ্বরের নামকে “উন্নীত” করে, এবং ঈশ্বরের মুখের দিকে মুখ তুলে তাকায়, তবুও সে নির্লজ্জ ও সঙ্কোচহীনভাবে ঈশ্বরের সিংহাসনে আসীন হয়ে ঈশ্বরেরই “অধার্মিকতা”-র বিচার করে; সে মুখে বলে যে ঈশ্বরের কাছে সে ঋণী এবং সে ঈশ্বরের বাক্য লক্ষ্য করে, অথচ তার অন্তরে সে ঈশ্বরের প্রতি কটুবাক্য বলে; সে ঈশ্বরের প্রতি “সহিষ্ণু”, অথচ তাঁকে নিপীড়ন করে, এবং মুখে বলে যে তা সে ঈশ্বরের স্বার্থেই করছে; তার হাতে যেসব জিনিস ধরা থাকে সেসবই ঈশ্বরের, মুখে যে খাবার সে চিবোয় তা ঈশ্বরই তাকে দিয়েছেন, তবুও তার চোখ ঈশ্বরের প্রতি শীতল, আবেগবর্জিত দৃষ্টিপাত করে, যেন তাঁকে সম্পূর্ণই গিলে নিতে চায়; সে সত্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করে কিন্তু জোর করে বলে সেটা শয়তানের কারসাজি, সে ন্যায়ের প্রতি লক্ষ্য করে কিন্তু জোর করে নিজেই নিজেকে প্রত্যাখ্যান করে, সে মানুষের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে এবং সেগুলোকেই ঈশ্বর বলে জোর দেয়; সে মানুষের স্বাভাবিক প্রতিভা দেখে জোর করে বলে যে সত্য হচ্ছে সেগুলোই; সে ঈশ্বরের কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং সেগুলোকে ঔদ্ধত্য, অহংকার, শূন্য গর্জন, ও উদ্ধত স্ব-নৈতিকতা বলে দাগিয়ে দেয়; মানুষ যখন ঈশ্বরকে পর্যবেক্ষণ করে, সে তাঁকে একজন মানুষ বলে চিহ্নিত করে দেওয়ার উপরেই জোর দেয়, এবং তাঁকে সৃষ্ট সত্তার আসনে বসানোর খুবই চেষ্টা করে, যে সত্তা শয়তানের অংশীদার; সে ভালোভাবেই জানে যে এগুলো ঈশ্বরের কথন, তা সত্ত্বেও সেগুলোকে শুধু মানুষের দ্বারা লিখিত বলেই অভিহিত করে; সে সম্পূর্ণরূপেই জ্ঞাত যে আত্মাই দেহে আবির্ভূত হয়েছেন, ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন, কিন্তু মুখে শুধু বলে যে সেই দেহ শয়তানের বংশধর; সে ভালোভাবেই জানে যে ঈশ্বর বিনম্র ও প্রচ্ছন্ন, তবুও শুধু বলে যে শয়তান অপমানিত হয়েছে এবং ঈশ্বর জয়লাভ করেছেন। কী অপদার্থ! মানুষ এমনকি পাহারাদার কুকুর হিসাবে সেবা করারও যোগ্য নয়! সে কালো ও সাদার মধ্যে পার্থক্য করে না, এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে কালোকে কৌশলে সাদা বানিয়ে দেয়। মানুষের শক্তি ও প্রতিরোধ কি ঈশ্বরের মুক্তির দিনটাকে সহ্য করতে পারে? সুচিন্তিতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করার পরে, মানুষ তাঁর বিষয়ে আর একেবারেই চিন্তা করে না, এমনকি তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো এতদূর তারা এগিয়ে যায়, ঈশ্বরের নিজেকে প্রদর্শন করার অবসরটুকুও দেয় না। ধার্মিকতা কোথায়? ভালোবাসা কোথায়? সে ঈশ্বরের পাশে বসে ঈশ্বরকে বাধ্য করে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমাভিক্ষা করতে, তার সমস্ত আয়োজন মান্য করতে, তার সমস্ত কৌশলে বিনা প্রতিরোধে সম্মতি প্রদান করতে, এবং ঈশ্বর যা করেন তার সমস্ত কিছুতে তার নির্দেশ গ্রহণ করতে, অন্যথায় সে ক্রোধান্বিত[১১] হয় এবং রাগে লাফ দিয়ে ওঠে। যে অন্ধকার কালোকে কৌশলে সাদা বানিয়ে দেয়, তার প্রভাবের অধীনে ঈশ্বর বেদনাহত না হয়ে কীভাবে থাকতে পারেন? উদ্বিগ্ন না হয়ে কীভাবে থাকতে পারেন? এ কথা কেন বলা হয় যে ঈশ্বর যখন নিজের সাম্প্রতিকতম কাজ শুরু করেছিলেন, তা স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার সমতুল্য? মানুষের কাজকর্ম এতোই “সমৃদ্ধ” যে “সঞ্জীবনী জলের চির-প্রবাহিত ধারা” অবিরত মানুষের হৃদয়ের ক্ষেত্র “পুনরায় ভরে দেয়”, আবার অপরদিকে মানুষের “সঞ্জীবনী জলের ধারা” ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিঃসঙ্কোচে[১২] প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়; এই দুটো সঙ্গতিপূর্ণ নয়, ঈশ্বরের পরিবর্তে এটা বিনা বিবেচনায় মানুষের জন্য সংস্থান যোগায়, এদিকে মানুষ এর সাথে জড়িত বিপদ বিবেচনা না করেই এতে সহযোগিতা করে। এবং এর ফলে কী হয়? ঈশ্বর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এবং ঈশ্বরের সঞ্জীবনী জলের ধারা মানুষকে প্রলুব্ধ করবে ও মানুষকে অর্জন করবে, এই ভয়ে সে শীতলভাবে ঈশ্বরকে একপাশে সরিয়ে রাখে, অনেক দূরে তাঁকে স্থাপন করে, যেখানে জনগণ তাঁর প্রতি মনোযোগ দেবে না। এইভাবে, বহু বছরের জাগতিক উদ্বেগের অভিজ্ঞতা লাভের পর, সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে, এমনকি ঈশ্বরকে তার ভর্ৎসনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। যেন ঈশ্বর তার চোখের বালি হয়ে উঠেছেন এবং সে ঈশ্বরকে জাপটে ধরে তাঁকে পরিমার্জিত ও শুদ্ধ করার জন্য আগুনে নিক্ষেপ করতে মরিয়া। ঈশ্বরের অস্বস্তি দেখে, মানুষ তার বুকে চাপড় মেরে হাসে, আনন্দে নাচে এবং বলে যে ঈশ্বরও পরিমার্জনে নিমজ্জিত হয়েছেন এবং বলে সে ঈশ্বরের কলুষতাপূর্ণ অপবিত্রতাকে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে দেবে, যেন কেবল এটাই যুক্তিযুক্ত ও বিচক্ষণ উপায়, যেন শুধুমাত্র এটাই স্বর্গের ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতি। মানুষের এই নৃশংস আচরণ একইসাথে সুচিন্তিত ও চেতনারহিত বলে মনে হয়। মানুষ তার কদাকার চেহারা ও জঘন্য, কদর্য আত্মার সাথে সাথে নিজের ভিক্ষুকের করুণ চেহারাও প্রকাশ করে। দূর-দূরান্তে তাণ্ডব চালানোর পরে, সে করুণ চেহারা গ্রহণ করে ও স্বর্গের কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা করে, তাকে তখন অত্যন্ত করুণ পাগ কুকুরের মতোই লাগে। মানুষ সর্বদা অপ্রত্যাশিত উপায়ে কাজ করে, সে সর্বদা “অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের পিঠে চড়ে”[ক], সে সবসময় একটা ভূমিকায় অভিনয় করে, ঈশ্বরের হৃদয়ে কী রয়েছে সে বিষয়ে সামান্যতম বিবেচনাও সে করে না, আবার নিজের অবস্থার সাথেও কোনও তুলনা করে না। সে কেবল নীরবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, যেন ঈশ্বর তার সাথে অন্যায় করেছেন, এবং তার সাথে এরকম আচরণ করা উচিত ছিল না, এবং যেন স্বর্গ দৃষ্টিহীন, আর ইচ্ছাকৃতভাবে তার পক্ষে সব জিনিসগুলো কঠিন করে তুলছে। এইভাবে মানুষ সর্বদা গোপনে দুষ্ট চক্রান্ত সম্পাদন করে, সে ঈশ্বরের কাছে তার দাবিগুলো সামান্যতমও কমায় না, সে যে ঈশ্বরের শত্রু এ কথা কখনো চিন্তা না করেই সে তাঁর দিকে শিকারীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ঈশ্বরের প্রতিটা পদক্ষেপের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, আশা করে যে এমন এক দিন আসবে যখন ঈশ্বর কুয়াশাকে সরিয়ে দেবেন, বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেবেন, তাকে “বাঘের মুখ” থেকে রক্ষা করবেন, ও তার অভিযোগের প্রতিকার করবেন। আজও, মানুষ এখনও ভাবে না যে তারা ঈশ্বরের বিরোধীর ভূমিকা পালন করছে, যে ভূমিকা যুগে যুগে অনেকে পালন করে আসছে; তারা কীভাবে জানবে যে, তারা যা করে, তার ফলে অনেক আগেই তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তারা যা কিছু উপলব্ধি করেছিল তা অনেক আগেই সমুদ্রে তলিয়ে গেছে।

সত্য কে-ই বা কখনও গ্রহণ করেছে? ঈশ্বরকে হাত বাড়িয়ে কে-ই বা কখনও স্বাগত জানিয়েছে? কে-ই বা কখনও সানন্দে ঈশ্বরের আগমনের প্রার্থনা করেছে? মানুষের আচরণ বহু আগেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং অপবিত্রতা অনেক আগেই ঈশ্বরের মন্দিরকে চেনার অযোগ্য করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে, মানুষ এখনও তার নিজের কাজ চালিয়ে যায়, সর্বদাই ঈশ্বরের প্রতি হীনদৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যেন ঈশ্বরের প্রতি তার বিরোধিতা প্রস্তরাকীর্ণ হয়ে গেছে, যেন তা অপরিবর্তনীয় এবং এর ফলস্বরূপ, নিজের কথা ও কাজের প্রতি আর কোনো দুর্ব্যবহারের যন্ত্রণা লাভ করার থেকে সে বরং অভিশাপ স্বীকার করে নেবে। এই ধরনের মানুষ কীভাবে ঈশ্বরকে জানতে পারে? কীভাবে তারা ঈশ্বরের সাথে বিশ্রাম লাভ করতে পারে? এবং কীভাবে তারা ঈশ্বরের সম্মুখে আসার উপযুক্ত হতে পারে? নিঃসন্দেহে, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনায় নিজেকে নিবেদিত করার মধ্যে কোনো ভুল নেই—কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে নিজের রক্ত ও অশ্রু উৎসর্গ করার সময় মানুষ সর্বদা ঈশ্বরের কাজ এবং ঈশ্বরের সমগ্রতাকে তাদের মনের পিছনে স্থান দেয় কেন? মানুষের নিঃস্বার্থ ভক্তির চেতনা নিঃসন্দেহেই মূল্যবান—কিন্তু তারা কীভাবে বুঝবে যে, তারা যে “রেশম” বুনছে ঈশ্বর কী সেটাকে উপস্থাপিত করতে একেবারেই অক্ষম? মানুষের সু-উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহেই মূল্যবান এবং বিরল—কিন্তু তারা “অমূল্য ধন”[১৩] কীভাবে আত্মসাৎ করতে পারে? তোমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিজেদের অতীতের কথা ভাবা: তোমরা নির্দয় শাস্তি ও অভিশাপ থেকে কখনো মুক্ত হতে পারোনি কেন? মহিমান্বিত বাক্য ও ধার্মিক বিচারের সাথে মানুষের সর্বদা এতো “ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক” কেন? ঈশ্বর কি সত্যিই তাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন? ঈশ্বর কি সুচিন্তিতভাবে তাদের পরিমার্জন করছেন? আর মানুষ এই পরিমার্জনের মধ্যে কীভাবে প্রবেশ করে? তারা কি সত্যিই ঈশ্বরের কাজ উপলব্ধি করে? ঈশ্বরের কাজ ও তাদের নিজেদের প্রবেশের বিষয়ে মানুষ কী শিক্ষালাভ করেছে? মানুষ যেন ঈশ্বরের উপদেশ না ভোলে, ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে যেন তাদের অন্তর্দৃষ্টি থাকে, সেটা যেন তারা স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারে, এবং নিজেদের প্রবেশ যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারে।

পাদটীকা:

১. “ক্ষতিসাধন” শব্দটা ব্যবহার করে মানবজাতির আনুগত্যহীনতা উন্মোচিত করা হয়েছে।

২. “ক্রুদ্ধ ভ্রু-কুঞ্চনের এবং হাজার হাতের শীতল প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়া, মাথা নত করে ইচ্ছুক ষাঁড়ের মতো মানুষের সেবা করে যাওয়া”—এটা আসলে একটাই বাক্য ছিল, কিন্তু বিষয়টা ভালোভাবে বোঝানোর জন্য সেটা দুভাগ করা হয়েছে। বাক্যের প্রথম অংশটা মানুষের কাজকে বোঝায়, আর দ্বিতীয় অংশ নির্দেশ করে ঈশ্বরের কষ্টভোগকে এবং ঈশ্বর যে বিনম্র ও প্রচ্ছন্ন, সেটাকে।

৩. “পূর্বধারণা” বলতে মানুষের অবাধ্য আচরণ বোঝানো হয়েছে।

৪. “সম্পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায়” বলতে মানুষের আনুগত্যহীন মনোভাব বোঝানো হয়েছে। তারা নিজেদেরকে উচ্চে স্থাপন করে, অন্যদের শৃঙ্খলিত করে, তাদের অনুসরণ করতে ও তাদের জন্য কষ্ট পেতে অন্যদের বাধ্য করে। তারা ঈশ্বরের প্রতিকূল শক্তি।

৫. যারা ঈশ্বরকে জানে না, তাদের উপহাস করার জন্য “হাতের পুতুল” কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে।

৬. মানুষের নীচ আচরণকে প্রকাশ করতে “ক্রমবর্ধমান” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।

৭. মানুষ যখন ঈশ্বরের ইচ্ছাকে শয়তানসুলভ কোনোকিছুতে পরিণত করে সেটার ইঙ্গিত দিতে “সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তুকেও আলাদা করে চিনতে পারে না” কথাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, বৃহত্তরভাবে নির্দেশ করা হয়েছে সেই আচরণের প্রতি যার ফলে মানুষ ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করে।

৮. “কালোকে সাদার সাথে গুলিয়ে ফেলে” বলতে সত্য ও বিভ্রমকে মিশিয়ে ফেলা এবং ন্যায়পরায়ণতাকে মন্দের সাথে মিশিয়ে ফেলাকে বোঝানো হয়েছে।

৯. “দস্যুর” বলতে বোঝানো হয়েছে যে মানুষ চেতনাহীন, এবং তাদের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টির অভাব রয়েছে।

১০. “বর্জিত ও অবশিষ্টাংশ” বলতে মানুষের ঈশ্বর নিপীড়নকারী মনোভাবকে বোঝানো হচ্ছে।

১১. “ক্রোধান্বিত” বলতে মানুষের সেই কুৎসিত চেহারাকে নির্দেশ করা হয়েছে যা ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত।

১২. “নিঃসঙ্কোচে” নির্দেশ করছে সেই অবস্থাকে মানুষ যখন বেপরোয়া এবং ঈশ্বরের প্রতি সামান্যতম সম্মানও তার মধ্যে নেই।

১৩. “অমূল্য ধন” বলতে ঈশ্বরের সমগ্রতাকে বোঝানো হয়েছে।

ক. মূল পাঠ্য, একটা চৈনিক প্রবাদ “hú jiǎ hǔ wēi” থেকে এটা অনুবাদ করা হয়েছে। এটা একটা কাহিনী উল্লেখ করছে যেখানে একটা শেয়াল বাঘের সঙ্গে চলাফেরা করে অন্য পশুদের ভয় দেখায়, এইভাবে সে বাঘের প্রতি অন্যদের ভীতি ও সম্মান “ধার” করে। এটা একটা রূপক, অন্য লোকেদের ভয় দেখানো বা নিপীড়ন করার জন্য অন্য কারো প্রতিপত্তি “ধার করা” লোকেদের উল্লেখ করার জন্য এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।

পূর্ববর্তী: কাজ এবং প্রবেশ (৮)

পরবর্তী: কাজ এবং প্রবেশ (১০)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন