কাজ এবং প্রবেশ (৪)

মানুষ যদি পবিত্র আত্মার কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত প্রবেশ করতে পারে, তবে তার জীবন দ্রুত অঙ্কুরিত হবে, ঠিক যেমন বসন্তের বৃষ্টির পরে বাঁশের চারা দ্রুত অঙ্কুরিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বর্তমান আত্মিক উচ্চতার বিচার করলে দেখা যায়, মানুষ জীবনের প্রতি কোনো গুরুত্বই আরোপ করে না, পরিবর্তে এমন কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে যেগুলোর কোনো পরিণতি আছে বলে মনে হয় না। অন্যথায়, তারা এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়, লক্ষ্যহীনভাবে এবং এলোমেলো ও অমনোযোগী হয়ে কাজ করে যায়, কোন দিকে তাদের যাওয়া উচিত তা তারা জানে না, আর কার জন্যে তা তো আরোই কম জানে। তারা কেবল “বিনম্রভাবে নিজেদের আড়াল করছে।” সত্যি কথাটা হল, তোমাদের মধ্যে স্বল্প কয়েকজনই ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের অভিপ্রায়ের বিষয়ে অবগত। ঈশ্বরের পদচিহ্নের বিষয়ে তোমাদের মধ্যে অত্যন্ত কমজনই অবগত, আর তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ঈশ্বরের চূড়ান্ত কর্ম সম্পাদন কী হবে সে বিষয়ে কারোরই জানা নেই। তবুও সকলে অসীম সহ্যশক্তি ও সহিষ্ণুতার সাথে অনুশাসন ও অন্যদের মোকাবিলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেন বিজয়ের মুহূর্তের প্রত্যাশায় পেশী ফুলিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে[১]। আমি মানবজাতির মধ্যে এই সমস্ত “অদ্ভুত দৃশ্যের” বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না, কিন্তু একটা বিষয় আছে যা তোমাদের সকলকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই অস্বাভাবিকতার[২] দিকে এগোচ্ছে, আর প্রবেশের প্রতি তাদের অগ্রগতি এক রুদ্ধ প্রান্তের[৩] দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকেই এমন থাকতে পারে যারা মনে করে যে মানুষ যেজন্য আকাঙ্ক্ষা করে তা মানব জগতের বাইরের এক নিখুঁত কল্পরাজ্য, বিশ্বাস করে তা এক স্বাধীনতার জগৎ, কিন্তু আসলে বিষয়টা সেরকম নয়। অথবা হয়ত বলা যেতে পারে, মানুষ ইতিমধ্যেই বিপথগামী হয়েছে। কিন্তু মানুষ কী করছে তা নির্বিশেষেই, মানুষের কোথায় প্রবেশ করা উচিত, এখনও আমি সে বিষয়ে বলতে চাই। বৃহত্তর জনসংখ্যার যোগ্যতা ও ত্রুটি এই কথোপকথনের প্রাথমিক বিষয়বস্তু নয়। আমি আশা করি, তোমরা সকল ভাই ও বোনেরা আমার বাক্য সঠিক ভাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে এবং আমার অভিপ্রায়কে ভুল বুঝবে না।

ঈশ্বর এই চীনের মূল ভূখণ্ডে, অথবা হংকং ও তাইওয়ানের দেশীয় ভাষায় “দেশের অভ্যন্তরে” অবতাররূপ পরিগ্রহ করেছেন। স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে যখন ঈশ্বরের আগমন হয়েছিল, স্বর্গ বা পৃথিবীর কেউই তখন এই বিষয়ে অবগত ছিল না, কারণ এটাই হল ঈশ্বরের গোপনে প্রত্যাগমনের প্রকৃত অর্থ। তিনি দীর্ঘকাল দেহরূপে কর্ম সম্পাদন ও জীবনযাপন করে চলেছেন, কিন্তু তবুও কেউই এই বিষয়ে সচেতন ছিল না। এমনকি আজকের দিন পর্যন্ত তা কেউ জানে না। হয়ত এ এক চিরকালীন প্রহেলিকা হয়েই রয়ে যাবে। এইবারে ঈশ্বরের দেহরূপে আগমন এমন এক বিষয় যা হয়তো কোনো মানুষই অবগত হতে পারে না। আত্মার কাজের প্রভাব যতই বৃহৎ পরিসরের ও শক্তিশালী হোক না কেন, ঈশ্বর সর্বদাই নির্বিকার থাকেন, কখনোই কোনো গোপন কথা প্রকাশ করেন না। বলা যেতে পারে যে তাঁর কাজের এই পর্যায় ঠিক তেমনই যেন তা স্বর্গীয় ক্ষেত্রে সংঘটিত হচ্ছিল। যাদের দেখার মতো চোখ আছে তাদের সকলের কাছে যদিও এটা প্রতীয়মান, কিন্তু কেউ তা চিনতে পারে না। যখন ঈশ্বর তাঁর কাজের এই পর্যায় সম্পন্ন করবেন, তখন সমগ্র মানবজাতি তাদের স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করবে[৪], এবং দীর্ঘ স্বপ্নাবস্থা থেকে জাগ্রত হবে। আমার মনে আছে ঈশ্বর একবার বলেছিলেন, “এইবারে দেহধারণ করাটা বাঘের ডেরায় পড়ে যাওয়ার মতো।” এর অর্থ হল, যেহেতু ঈশ্বরের কাজের এই পর্বে ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তদুপরি অতিকায় লাল ড্রাগনের বাসস্থানে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাই এইবার পৃথিবীতে আসার ফলে আগের থেকেও বেশি করে তিনি চূড়ান্ত বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি সম্মুখীন হচ্ছেন ছুরি ও বন্দুকের, মুগুর ও লাঠির; তিনি সম্মুখীন হচ্ছেন প্রলোভনের; তিনি সম্মুখীন হচ্ছেন এমন জনতার, যাদের মুখমণ্ডল খুন করার অভিপ্রায়ে পূর্ণ। তিনি যেকোনো মুহূর্তে খুন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেন। ঈশ্বর তাঁর সাথে নিয়ে এসেছেন ক্রোধ। তবে, তিনি এসেছেন নিখুঁত করে তোলার কাজ সম্পাদন করতে, অর্থাৎ তিনি তিনি এসেছেন তাঁর কাজের দ্বিতীয় অংশ অংশ সম্পাদন করতে, মুক্তির কার্যের পর থেকে যা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর কাজের এই পর্যায়ের স্বার্থে, ঈশ্বর চূড়ান্ত চিন্তাভাবনা ও মনোযোগ দিয়েছেন এবং প্রলোভনের আক্রমণ এড়াতে সমস্ত ধারণাযোগ্য উপায় ব্যবহার করছেন, বিনম্রভাবে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন, এবং কখনও তাঁর পরিচয় জাহির করেননি। ক্রুশ থেকে মানুষকে উদ্ধার করার সময়, যীশু কেবল মুক্তির কাজ সম্পূর্ণ করছিলেন; মানুষকে নিখুঁত করে তোলার কাজ তিনি করছিলেন না। সুতরাং ঈশ্বরের কাজের মাত্র অর্ধেক সম্পন্ন হচ্ছিল, এবং মুক্তির কার্যের সমাপ্তি ছিল তাঁর সম্পূর্ণ পরিকল্পনার মাত্র অর্ধেক অংশ। যেহেতু নতুন যুগ আরম্ভ হতে যাচ্ছিল এবং পুরোনো যুগ অপসৃত হচ্ছিল, তাই পিতা ঈশ্বর তাঁর কাজের দ্বিতীয় অংশ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছিলেন এবং তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। অন্তিম সময়ের এই অবতারের বিষয়ে অতীতে কোনো স্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণী করা হয়নি, ফলে এই সময়ে ঈশ্বরের দেহরূপে আগমনকে ঘিরে বর্ধিত গোপনীয়তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। ঊষালগ্নে, মানবজাতির ভিড়ের সকলের অজান্তে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের আগমন হয়েছিল এবং তিনি দেহরূপে জীবনযাপন শুরু করেছিলেন। এই মুহূর্তের আগমনের বিষয়ে মানুষ অনবগত ছিল। হয়ত তারা সকলেই গভীর নিদ্রায়, হয়ত সজাগ অনেকে অপেক্ষা করছিল, এবং অনেকে হয়ত স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে নীরবে প্রার্থনা করছিল। তবুও এই এত সংখ্যক মানুষের মধ্যে একজনও জানত না যে ঈশ্বর ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। ঈশ্বর তাঁর কাজ আরো সুচারুভাবে সম্পাদনের জন্য এবং আরো ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য, আর প্রলোভন প্রতিরোধের জন্যও এইরকম ভাবে কাজ করেছিলেন। যখন মানুষের বসন্তকালীন নিদ্রা ভঙ্গ হবে, তার অনেক আগেই ঈশ্বরের কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে এবং তিনি প্রস্থান করবেন, পৃথিবীতে তাঁর ভ্রাম্যমাণ সাময়িক বসবাসের জীবনের অবসান ঘটাবেন। যেহেতু ঈশ্বরের কার্যের প্রয়োজন যে ঈশ্বর তাঁর নিজের ছবি রূপেই কাজ করুন ও কথা বলুন, এবং যেহেতু মানুষের সেখানে হস্তক্ষেপের কোনো উপায় নেই, তাই ঈশ্বর পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য এবং স্বয়ং তাঁর কাজ করার জন্য চূড়ান্ত যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। ঈশ্বরের হয়ে তাঁর কাজ মানুষ করে দিতে পারে না। এই কারণেই, যে ভূমিতে অতিকায় লাল ড্রাগনের বাস, সেখানে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ও নিজের কর্ম সম্পাদনের জন্য ঈশ্বর অনুগ্রহের যুগের থেকেও কয়েক হাজার গুণ বিপদের ঝুঁকি নিয়েছেন, এই অভাগা মানুষের দল, গোবরের স্তূপে নিমজ্জিত দলকে মুক্তিদানের জন্য তাঁর সমস্ত চিন্তাভাবনা এবং যত্ন ব্যয় করেছেন। এমনকি যদিও কেউই ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না, কিন্তু ঈশ্বর তাতে বিচলিত নন, কারণ তাঁর কাজের পক্ষে এটা অত্যন্ত সহায়ক। যেহেতু প্রত্যেকেই চূড়ান্ত ঘৃণ্য ও দুষ্ট, তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব কীভাবে বরদাস্ত করতে পারে? এই কারণেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার পর ঈশ্বর নীরবতা বজায় রাখেন। মানুষ যতই নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত আতিশয্যে নিমজ্জিত হোক, ঈশ্বর তার কিছুই হৃদয়ে গ্রহণ করেন না, পরিবর্তে স্বর্গস্থ পিতা তাঁর উপর যে বৃহত্তর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করে চলেন। তোমাদের মধ্যে কারা ঈশ্বরের মাধুর্যকে স্বীকৃতি দিয়েছ? পিতা ঈশ্বরের প্রদত্ত দায়িত্বের প্রতি তাঁর পুত্রের চেয়ে অধিক বিবেচনা কে প্রদর্শন করে? পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছা কেউ কি উপলব্ধি করতে সক্ষম? স্বর্গে পিতা ঈশ্বরের আত্মা প্রায়ই বিচলিত হন, এবং পৃথিবীতে তাঁর পুত্র পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছার স্বার্থে ক্রমাগত প্রার্থনা করেন, তাঁর হৃদয় দুশ্চিন্তায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এমন কেউ কি আছে, যে পুত্রের প্রতি পিতা ঈশ্বরের ভালোবাসার কথা জানে? এমন কেউ কি আছে যে সেই হৃদয়কে জানে যে হৃদয় দিয়ে প্রিয়তম পুত্র পিতা ঈশ্বরের অভাব অনুভব করেন? স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝে বিচ্ছিন্ন দুজন ক্রমাগত দূর থেকে একে অপরের প্রতি তাকিয়ে রয়েছেন, আত্মায় একে অপরকে অনুসরণ করছেন। হে মানবজাতি! তোমরা ঈশ্বরের হৃদয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল কবে হবে? ঈশ্বরের অভিপ্রায় তোমরা কবে উপলব্ধি করবে? পিতা ও পুত্র সর্বদা একে অপরের উপর নির্ভর করেছেন। তাহলে তাঁদের পৃথক হয়ে কেন একজন উপরে স্বর্গে এবং অপরজনকে নিচের পৃথিবীতে থাকতে হবে? পিতা তাঁর পুত্রকে ভালোবাসেন, আর পুত্র ভালোবাসেন তাঁর পিতাকে। তাহলে পিতাকে পুত্রের জন্য এহেন গভীর যন্ত্রণাময় আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে কেন? তাঁরা হয়ত বেশি সময় একে অপরের থেকে আলাদা হননি, তবুও পিতা কত দিবস ও রজনী ধরে যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছেন, কত কাল তিনি তাঁর প্রিয় পুত্রের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করে রয়েছেন, তা কেই বা জানে? তিনি লক্ষ্য করছেন, নীরবে বসে আছেন, এবং অপেক্ষা করছেন; তিনি যা করছেন তা সমস্তই শুধু তাঁর প্রিয় পুত্রের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের স্বার্থে। যে পুত্র পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিচরণ করেছেন: তাঁরা কখন আবার মিলিত হবেন? যদিও, পুনরায় মিলিত হওয়ার পরে তাঁরা অনন্তকাল ধরে একসাথে থাকবেন, কিন্তু এখন এই হাজার হাজার দিন ও রাতের বিচ্ছেদ তিনি কীভাবে সহ্য করবেন, যেখানে একজন রয়েছেন উপরে স্বর্গে এবং অন্যজন নীচে পৃথিবীতে? পৃথিবীতে কয়েক দশক স্বর্গে সহস্রাব্দের মতো মনে হয়। পিতা ঈশ্বর চিন্তিত হবেন না, তা কীভাবে হতে পারে? ঈশ্বর যখন পৃথিবীতে আসেন, তিনি মানুষের মতোই মনুষ্য জগতের অগণিত উত্থানপতন অনুভব করেন। ঈশ্বর অপাপবিদ্ধ, তাহলে তাঁকে মানুষের মতো একই কষ্ট ভোগ করতে বাধ্য করা হবে কেন? আশ্চর্যের কিছু নেই যে পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রের জন্য ব্যাকুল হয়ে আকাঙ্ক্ষা করবেন; ঈশ্বরের হৃদয় কে উপলব্ধি করতে পারে? ঈশ্বর মানুষকে অনেক বেশি দেন; মানুষ কী করে পর্যাপ্তভাবে ঈশ্বরের হৃদয়ের ঋণ পরিশোধ করতে পারে? মানুষ ঈশ্বরকে যৎসামান্যই দেয়, এই হিসাবে ঈশ্বর উদ্বিগ্ন না হয়ে কীভাবে থাকবেন?

মানুষের মধ্যে অত্যন্ত অল্প কয়েকজনই ঈশ্বরের মনের জরুরী অবস্থা উপলব্ধি করতে পারে, কারণ মানুষের যোগ্যতা খুবই নিকৃষ্ট এবং আত্মাও বেশ নিস্তেজ, আর তাই ঈশ্বর কী করছেন সে বিষয়ে তারা কেউই লক্ষ্য করে না বা মনোযোগ দেয় না। এই কারণে, ঈশ্বর মানুষের বিষয়ে ক্রমাগত অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যেন মানুষের পাশবিক চরিত্র যেকোনো মুহূর্তে বেরিয়ে আসতে পারে। এটা থেকেই যে কেউ আরো স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারে যে ঈশ্বরের পৃথিবীতে আগমনের সঙ্গী হয়ে এসেছে প্রভূত প্রলোভন যা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু এক দল মানুষকে সম্পূর্ণ করার জন্য, ঈশ্বর মহিমায় পরিপূর্ণ হয়ে মানুষকে তাঁর প্রত্যেকটি অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন, কিছুই তাদের থেকে আড়াল করেননি। এই দলের লোকেদের সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, আর তাই, যতই কঠিন পরিস্থিতি বা প্রলোভন আসুক, তিনি সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, সেগুলো সমস্তই উপেক্ষা করেন। তিনি শুধু শান্তভাবে তাঁর নিজের কাজ করেন, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে যেদিন ঈশ্বর তাঁর নিজের গৌরবের অধিকার লাভ করবেন, মানুষ তাঁকে জানবে, এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের দ্বারা মানুষ একবার সম্পূর্ণ হয়ে উঠলে সে ঈশ্বরের হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করবে। এই মুহূর্তে হয়ত অনেকেই আছে যারা ঈশ্বরকে প্রলুব্ধ করছে, তাঁকে ভুল বুঝছে, বা দোষারোপ করছে; কিন্তু ঈশ্বর এর কোনোকিছুকেই গুরুত্ব দেন না। ঈশ্বর যখন গৌরব সহকারে অবতীর্ণ হবেন, তখন মানুষ উপলব্ধি করবে যে ঈশ্বর মানবজাতির সুখের জন্যই সমস্তকিছু করেন, এবং তারা সকলেই উপলব্ধি করবে যে ঈশ্বর যাকিছু করেন তা এইজন্যই যাতে মানবজাতি আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। ঈশ্বর তাঁর সাথে নিয়ে আসেন প্রলোভন, এবং তাঁর আগমনের সাথে সাথে মহিমা এবং ক্রোধেরও আগমন হয়। ঈশ্বর যখন মানুষের কাছ থেকে প্রস্থান করবেন, তার অনেক আগেই তিনি নিজের গৌরবের অধিকারী হয়ে যাবেন, এবং প্রস্থানের সময় তিনি মহিমা ও প্রত্যাবর্তনের আনন্দে পরিপূর্ণ থাকবেন। যে ঈশ্বর পৃথিবীতে কাজ করেন, মানুষ যেভাবেই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করুক, তিনি সেগুলোকে গুরুত্ব দেন না। তিনি শুধু নিজের কাজ করতে থাকেন। ঈশ্বর হাজার হাজার বছর আগে এই বিশ্বের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি পৃথিবীতে এসেছেন অপরিমেয় পরিমাণ কাজ সম্পাদনের জন্য, এবং তিনি মনুষ্য জগতের প্রত্যাখ্যান ও অপবাদের অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণভাবে লাভ করেছেন। কেউই ঈশ্বরের আগমনকে স্বাগত জানায়নি; তিনি শীতল অভ্যর্থনা লাভ করেছেন। কয়েক হাজার বছরের এই রুক্ষ যাত্রাপথে, মানুষের আচরণ বহুদিন আর মানুষের বিদ্রোহী মনোভাবের প্রতি মনোযোগ দেন না, পরিবর্তে মানুষের পরিবর্তন ও পরিশোধনের জন্য তিনি অন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন। উপহাস, অপবাদ, অত্যাচার, ক্লেশ, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা, মানুষের দ্বারা বঞ্চনা, ঈশ্বর দেহধারণের পর এরকম যাকিছুর সম্মুখীন হয়েছেন: তিনি সেসবের যথেষ্ট আস্বাদ নিয়েছেন, এবং মানব জগতের কষ্টের ক্ষেত্রে, যে ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি এই সমস্ত কিছুই পরিপূর্ণভাবে ভোগ করেছেন। স্বর্গস্থ পিতা ঈশ্বরের আত্মার কাছে অনেক আগে থেকেই এই ধরনের দৃশ্য অসহনীয়, এবং তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে, চোখ বন্ধ করে তাঁর প্রিয় পুত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি শুধু চান যে মানবজাতি শুনবে ও মান্য করবে, এবং তাঁর দেহরূপের সামনে চরম লজ্জা অনুভব করবে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বন্ধ করতে সক্ষম হবে। তিনি শুধু চান যে মানবজাতি যেন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে সক্ষম হয়। তিনি অনেক আগেই মানুষের কাছে বৃহত্তর দাবি করা বন্ধ করেছেন, কারণ ঈশ্বর অনেক বেশি মূল্য দেওয়া সত্ত্বেও মানুষ স্বচ্ছন্দে বিশ্রাম নিচ্ছে[৫] এবং তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের কাজের ন্যূনতম স্থানও নেই।

যদিও আমি আজকে ঈশ্বরের কাজের ব্যাপারে যা বলছি, তার মধ্যে কিছু “ভিত্তিহীন অযৌক্তিকতা”[৬] থাকতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের প্রবেশের বিষয়ে এর গভীর প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। আমি শুধু কাজের বিষয়ে কিছু বলছি, আর তারপর প্রবেশের বিষয়ে কিছু বলছি, কিন্তু উভয়েই সমান অপরিহার্য, আর তারা যুগ্মভাবে মানুষের জীবনের পক্ষে আরোই উপকারী। এই দুটি আঙ্গিক একে অপরের পরিপূরক[৭] এবং খুবই উপকারী, তা মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং মানুষ ও ঈশ্বরের মাঝে যোগাযোগকে সম্ভব করে তোলে। কাজের বিষয়ে আজকের আলোচনা র মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে মানবজাতির সম্পর্ক আরো উন্নত হয়েছে, পারস্পরিক বোঝাপড়া গভীর হয়েছে, এবং মানুষ ঈশ্বরের দায়িত্ব সম্পর্কে আরো বেশি সহানুভূতিশীল ও মনোযোগী হতে পেরেছে; ঈশ্বর যা অনুভব করেন, তা মানুষকে অনুভব করানো হয়েছে, ঈশ্বর তার পরিবর্তন ঘটাবেন, যাতে সে আত্মবিশ্বাসী হয় যে সে ঈশ্বরের দ্বারা পরিবর্তিত হবে, এবং ঈশ্বরের পুনরাবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করে। বর্তমানে মানুষের কাছ থেকে ঈশ্বরের এটাই একমাত্র দাবি—ঈশ্বরকে ভালোবাসে এমন একজন মানুষের প্রতিমূর্তি হিসাবে জীবন যাপন করা, এমনভাবে তা করা, যাতে ঈশ্বরের প্রজ্ঞার স্ফটিকীকৃত আলোক অন্ধকারের যুগে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে, এবং যাতে মানুষের জীবনযাপন ঈশ্বরের কাজে এক দ্যুতিময় অধ্যায় রেখে যায়, বিশ্বের পূর্ব ভাগে চিরদিন সমুজ্জ্বল হয়ে থাকে, বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করে এবং সকলের প্রশংসার বিষয় হয়ে ওঠে। বর্তমান যুগে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, সবচেয়ে নিশ্চিতভাবে এটাই তাদের জন্য অধিকতর উন্নত প্রবেশ।

পাদটীকা:

১.“পেশী ফুলিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে” ব্যঙ্গাত্মক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

২. “অস্বাভাবিকতা” বলতে জনগণের প্রবেশ কতটা বিচ্যুত এবং অভিজ্ঞতা কতটা একতরফা, তা বোঝানো হয়েছে।

৩. “রুদ্ধ প্রান্ত” বলতে বোঝাচ্ছে জনগণ যে পন্থা অবলম্বন করছে, তা ঈশ্বরের ইচ্ছার পরিপন্থী।

৪. “স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করা” বলতে বোঝায়, ঈশ্বরকে জানার পর মানুষের ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে পরিবর্তিত হয়।

৫. “স্বচ্ছন্দে বিশ্রাম নেওয়া” বলতে বোঝাচ্ছে, মানুষ ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে উদাসীন এবং এটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে না।

৬. “ভিত্তিহীন অযৌক্তিকতা” বলতে বোঝায় মানুষ ঈশ্বরের কথিত বাক্যের নিহিত অর্থ বুঝতে মৌলিকভাবেই অপারগ, এবং তিনি কী বলছেন সে বিষয়েও তাদের কোনো ধারণা নেই। এই শব্দবন্ধটি বিদ্রূপাত্মক রূপে ব্যবহার করা হয়েছে।

৭. “একে অপরের পরিপূরক” বলতে বোঝাচ্ছে, আলোচনায় “কাজ” এবং “বেশ” উভয়ের সংযুক্তি আমাদের ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশি সহায়ক হতে পারে।

পূর্ববর্তী: কাজ এবং প্রবেশ (৩)

পরবর্তী: কাজ এবং প্রবেশ (৫)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন