কাজ এবং প্রবেশ (২)
তোমাদের কাজ এবং প্রবেশ খুবই নিম্নমানের; কীভাবে কাজ করতে হবে সে বিষয়ে মানুষ গুরুত্ব দেয় না, আর জীবনে প্রবেশের বিষয়ে তারা তো আরোই বিশৃঙ্খল। এগুলোকে মানুষ সেরকম শিক্ষা হিসাবে বিবেচনা করে না যার মধ্যে তার প্রবেশ করা উচিত; তাই তোমার অভিজ্ঞতায়, কার্যত মানুষের প্রত্যক্ষ করা সমস্ত জিনিসই শূন্য মরীচিকা। কাজের দিক থেকে তোমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাওয়া হয় না, কিন্তু যেহেতু তোমাদের ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত করে তোলা হবে, তাই ঈশ্বরের জন্য কাজ করা সম্পর্কে তোমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, যাতে শীঘ্রই তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারো। যুগ যুগ ধরে, যারা কাজ করেছে তারা কর্মী বা প্রেরিত শিষ্য নামে পরিচিত হয়েছে, যে শব্দগুলো ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত খুব সংখ্যক লোকেদেরই বোঝায়। যদিও আজ আমি যে কাজের বিষয়ে বলছি, সেগুলো শুধুমাত্র সেই কর্মী বা প্রেরিত শিষ্যদের প্রতি নয়, বরং ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠবে এমন সমস্ত লোকেদের প্রতি নির্দেশিত। হয়ত অনেকেই আছে যাদের এ বিষয়ে আগ্রহ খুবই কম, কিন্তু প্রবেশের স্বার্থে এই বিষয়ের সত্য সম্পর্কে আলোচনা করাই সবচেয়ে ভালো।
কাজ সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস হল, কাজ হচ্ছে ঈশ্বরের জন্য চারিদিকে ছুটে বেড়ানো, সর্বত্র প্রচার করা, এবং তাঁর স্বার্থে নিজেকে ব্যয় করা। এই বিশ্বাস সঠিক হলেও তা খুবই একপাক্ষিক; ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে শুধু তাঁর জন্য চারিদিকে ছুটে বেড়ানো কামনা করেন না; নিছক এটার বাইরেও, এই কাজ আত্মার অভ্যন্তরে ঈশ্বরের সেবাব্রত ও বিধানের সাথে সম্পর্কিত। এত বছরের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অনেক ভাই ও বোনেরা কখনো ঈশ্বরের জন্য কাজ করার কথা ভেবে দেখে নি, কারণ মানুষ যেটাকে কাজ বলে মনে করে, তা ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষিত কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং, কাজের বিষয়ে মানুষের একেবারেই আগ্রহ নেই, আর ঠিক এই কারণেই মানুষের প্রবেশও খুবই একপাক্ষিক। তোমাদের সকলেরই উচিত ঈশ্বরের জন্য কাজের মাধ্যমে তোমাদের প্রবেশের সূচনা করা, যাতে তোমরা অভিজ্ঞতার প্রতিটা দিক আরো ভালোভাবে অতিবাহিত করতে পারো। এই বিষয়টাতেই তোমাদের প্রবেশ করা উচিত। কাজ বলতে ঈশ্বরের জন্য চারিদিকে ছুটে বেড়ানো বোঝায় না, বরং মানুষের জীবন ও মানুষ জীবনে যা যাপন করে তা ঈশ্বরকে আনন্দ দিতে পারে কি না, সেটাকেই বোঝায়। কাজ বলতে বোঝায়, ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভক্তি ও ঈশ্বরের সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের সাহায্যে ঈশ্বরের বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া, এবং সেইসাথে মানুষের সেবা করা। এটাই মানুষের দায়িত্ব এবং এটা সব মানুষেরই উপলব্ধি করা উচিত। বলা যেতে পারে যে তোমাদের প্রবেশই তোমাদের কাজ, এবং ঈশ্বরের জন্য কাজ করার মাধ্যমে তোমরা এই প্রবেশ করতে চাইছ। কী করে তাঁর বাক্য ভোজন ও পান করতে হয় শুধু সেইটুকু জানার অর্থই ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করা নয়; আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে কীভাবে ঈশ্বরের সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে হয়, কীভাবে ঈশ্বরের সেবা করতে সক্ষম হওয়া যায়, কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়, তাদের সংস্থান দিতে সক্ষম হওয়া যায়। এটাই প্রকৃত কাজ, এবং এটাই তোমাদের প্রবেশও; এটাই প্রত্যেকের সম্পন্ন করা উচিত। অনেকেই শুধুমাত্র ঈশ্বরের জন্য ছুটে বেড়ায় এবং সর্বত্র প্রচারের প্রতি মনোনিবেশ করে, অথচ নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে এবং আধ্যাত্মিক জীবনে তাদের প্রবেশকে অবহেলা করে। যারা ঈশ্বরের সেবা করে, এই বিষয়টাই তাদের ঈশ্বরের প্রতিরোধকারীতে পরিণত করেছে। এইসব লোকেরা, যারা এত বছর ধরে ঈশ্বরের সেবা করে আসছে, মানুষের সেবা করে আসছে, তারা শুধু কাজ করা এবং ধর্ম প্রচারকেই প্রবেশ বলে ধরে নিয়েছে, কেউই তাদের ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ বলে বিবেচনা করে নি। পরিবর্তে, পবিত্র আত্মার কাজ থেকে লব্ধ আলোকপ্রাপ্তিকেই তারা অন্যদের শিক্ষা প্রদানের মূলধন হিসাবে ধরে নিয়েছে। প্রচারের সময়ে তারা প্রচুর ভারগ্রস্ত থাকে এবং পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করে, আর এর মাধ্যমেই তারা পবিত্র আত্মার কণ্ঠস্বর ব্যক্ত করে। এই সময়ে, যারা কাজ করে, তারা আত্মতৃপ্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেন পবিত্র আত্মার কাজ তাদের ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে; তারা অনুভব করে যে তাদের উচ্চারিত সমস্ত কথাগুলো তাদেরই স্বতন্ত্র সত্তার অন্তর্গত, অথচ আবার যেন তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ততটাও স্পষ্ট নয় যতটা তারা বর্ণনা করেছে। তাছাড়াও, বলার আগে তাদের মধ্যে কোনো আভাস থাকে না যে তারা কী বলবে, কিন্তু যখন পবিত্র আত্মা তাদের মধ্যে কাজ করেন, তাদের কথা অবিরাম স্রোতের মতো বেরিয়ে আসে। একবার তুমি এইভাবে প্রচার করে নিলে অনুভব করবে, যে তোমার প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা ততটাও ক্ষুদ্র নয়, যতটা তুমি ভেবেছিলে। আর যখন পবিত্র আত্মা তোমার মধ্যে অনেকবার কাজ করেছেন, সেই পরিস্থিতিতে তুমি নির্ধারণ করে ফেলো যে ইতিমধ্যেই তোমার একটা আত্মিক উচ্চতা রয়েছে, এবং ভুলবশত তুমি বিশ্বাস করে ফেলো যে পবিত্র আত্মার কাজ তোমার নিজেরই প্রবেশ ও নিজেরই সত্তা। তুমি যখন ক্রমাগত এইভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তখন তুমি নিজের প্রবেশে শিথিল হয়ে উঠবে, নিজের অলক্ষ্যেই আলস্যে পতিত হবে, এবং নিজের স্বতন্ত্র প্রবেশের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দেবে। এই কারণে, অন্যান্যদের সেবা করার সময় তোমাকে অবশ্যই নিজের আত্মিক উচ্চতা ও পবিত্র আত্মার কাজের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে। তা তোমার প্রবেশকে আরও সহজতর করতে পারে এবং অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে। মানুষ যখন পবিত্র আত্মার কাজকে নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিসাবে মনে করে, তখন তা হীনতার উৎস হয়ে ওঠে। এই কারণেই আমি বলছি, তোমরা যে দায়িত্বই পালন করো, তোমাদের প্রবেশকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
কেউ যখন কাজ করে, সে তা করে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণের জন্য, ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সকলকে তাঁর সামনে নিয়ে আসার জন্য, মানুষকে ঈশ্বরের সামনে আনার জন্য, এবং পবিত্র আত্মার কাজ ও ঈশ্বরের নির্দেশনাকে মানুষের সাথে পরিচয় করানোর জন্য, এর মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কাজের ফলাফলকে নিখুঁত করে তোলে। অতএব, অপরিহার্যভাবেই কাজের সারমর্ম সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। ঈশ্বরের ব্যবহৃত একজন মানুষ হিসাবে, প্রত্যেকেই ঈশ্বরের জন্য কাজ করার পক্ষে উপযুক্ত, অর্থাৎ প্রত্যেকেরই পবিত্র আত্মার দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে একটা বিষয় তোমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে: মানুষ যখন ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে, তার অর্থ হল যে তাকে ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মানুষ যা বলে ও জানে সেটাই মানুষের সম্পূর্ণ আত্মিক উচ্চতা নয়। তোমরা শুধু নিজেদের কাজ সম্পাদনের সময় নিজেদের ঘাটতিগুলো আরো ভালোভাবে জানতে পারো, এবং পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আরো বেশি আলোকপ্রাপ্তির অধিকারী হতে পারো। এইভাবে, তোমাদের কাজের কর্মসূচিতে আরো ভালো প্রবেশ লাভ করার জন্য তোমাদের সক্ষম করে তোলা হবে। যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত পথনির্দেশকে মানুষ নিজেদের প্রবেশ বলে বিবেচনা করে, নিজেদের অন্তর্নিহিত বিষয় বলে ভাবে, তাহলে তাদের আত্মিক উচ্চতার সমৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। পবিত্র আত্মা মানুষকে যে আলোকপ্রাপ্তি প্রদান করেন, তা তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার সময় ঘটে; এরকম সময়ে, মানুষ যে আলোকপ্রাপ্তি লাভ করে তারা তাকে প্রায়শই তাদের নিজস্ব আত্মিক উচ্চতা বলে ভুল করে, কারণ পবিত্র আত্মা যে উপায়ে মানুষকে আলোকিত করেন তা অত্যন্ত স্বাভাবিক, এবং মানুষের যা অন্তর্নিহিত সেগুলোরই তিনি ব্যবহার করেন। মানুষ যখন কাজ করে ও কথা বলে, বা যখন প্রার্থনা করে ও তাদের আধ্মাত্মিক সাধনায় রত থাকে, একটা সত্যি হঠাৎ তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবশ্য বাস্তবে মানুষ যা প্রত্যক্ষ করে তা শুধুই পবিত্র আত্মার প্রদত্ত আলোকপ্রাপ্তি (স্বাভাবিকভাবেই, এই আলোকপ্রাপ্তি মানুষের সহযোগিতার সাথে যুক্ত), তা মানুষের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতাকে উপস্থাপিত করে না। কিছু কঠিন পরিস্থিতি ও পরীক্ষার কিছু সময়ের অভিজ্ঞতার পর সেইসব পরিস্থিতিতে মানুষের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একমাত্র তখনই মানুষ আবিষ্কার করে যে তার আত্মিক উচ্চতা অতটাও বিশাল নয়, এবং মানুষের স্বার্থপরতা, ব্যক্তিগত বিবেচনা এবং লোভ সবই ফুটে ওঠে। শুধুমাত্র এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বেশ কয়েকবার অতিবাহিত হওয়ার পর, যাদের আত্মা জাগ্রত হয়েছে তাদের অনেকেই বুঝতে পারে যে অতীতে তারা যা অনুভব করেছিল তা তাদের নিজস্ব বাস্তবিকতা নয়, বরং তা ছিল পবিত্র আত্মার থেকে প্রাপ্ত ক্ষণিকের প্রদীপ্তি এবং মানুষ শুধু তার আলোটুকুই লাভ করেছিল। পবিত্র আত্মা যখন সত্য উপলব্ধি করানোর জন্য মানুষকে আলোকিত করেন, তিনি তা প্রায় সবসময়ে স্পষ্ট ও বিশিষ্ট পদ্ধতিতেই করেন, সমস্তকিছু কীভাবে এসেছে বা তারা কোথায় যাচ্ছে, সেসব ব্যাখ্যা করেন না। অর্থাৎ, এই প্রকাশের মধ্যে মানুষের অসুবিধা অন্তর্ভুক্ত না করে তিনি সরাসরি সত্যের প্রকাশ ঘটান। যখন মানুষ প্রবেশ করার প্রক্রিয়ায় অসুবিধার সম্মুখীন হয়, আর তখন পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তিকে সেখানে প্রয়োগ করে, সেটাই মানুষের প্রকৃত অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন অবিবাহিত বোন আলোচনার সময় বলেছিল, “আমরা গৌরব ও ধন-সম্পদ কামনা করি না বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের আনন্দ কামনা করি না; আমরা কেবল ঈশ্বরের প্রতি শুদ্ধ ও একনিষ্ঠ হৃদয় সমর্পণ করতে চাই।” সে আরও বলেছিল: “লোকেরা বিয়ে করে নিলে অনেক কিছুতে জড়িয়ে পরে, এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা আর প্রকৃত থাকে না। তাদের হৃদয় সর্বদা পরিবার ও তাদের জীবনসঙ্গীর ভাবনাতেই ব্যস্ত থাকে এবং তাই তাদের অভ্যন্তরীণ জগৎ আরও জটিল হয়ে ওঠে…।” সে যখন কথাগুলো বলছিল, মনে হচ্ছিল যেন তার হৃদয়ের কথাগুলোই বেরিয়ে আসছে; তার কথাগুলো ছিল জোরালো ও শক্তিশালী, যেন সেগুলো তার হৃদয়ের গভীরতম অন্তঃস্থল থেকে নির্গত হচ্ছে, যেন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত করাই ছিল তার আন্তরিক ইচ্ছা এবং তার মতো অন্যান্য ভাই-বোনেরাও একই সংকল্প গ্রহণ করবে এটাই তার আশা। বলা যেতে পারে যে এরকম মুহূর্তে তোমার যে সংকল্প ও আবেগচালিত হওয়ার অনুভূতি তা সম্পূর্ণভাবে পবিত্র আত্মার কাজ থেকে আসে। ঈশ্বরের কাজের পদ্ধতি যখন পরিবর্তিত হবে, ততদিনে তোমার বয়সও কয়েক বছর বেড়ে যাবে; তুমি দেখবে তোমার বয়সী সকল সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবরা বিবাহ করেছে, অথবা তোমার কানে আসবে অমুকের বিয়ের পর তার স্বামী তাকে শহরে নিয়ে গেছে আর সে সেখানে একটা কাজ পেয়ে গেছে। তোমার সাথে তার দেখা হলে তুমি ঈর্ষা বোধ করতে শুরু করবে, দেখবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সে কত ঝকঝকে ও শান্ত, আর তোমার সাথে কথা বলার সময় তার আচরণ একদম শহুরে, গ্রাম্য স্বভাবের চিহ্নমাত্র আর তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এটা দেখে তোমার মধ্যের অনুভূতিগুলো আলোড়িত হয়ে উঠবে। এতদিন ধরে ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করা সত্ত্বেও তোমার কোনো পরিবার বা কর্মজীবন নেই, এবং তোমাকে প্রচুর পরিমাণে মোকাবিলা সহ্য করতে হয়েছে; কিছুকাল আগেই তুমি মধ্য বয়সে প্রবেশ করেছ, তোমার যৌবন অনেক আগেই নীরবে গত হয়েছে, যেন তুমি একটা স্বপ্নের ঘোরে ছিলে। এখন, এতটা পথ পেরিয়ে এসে, কোথায় স্থায়ী হতে হবে তোমার জানা নেই। এই মুহূর্তে, তুমি চিন্তার ঘূর্ণিতে আটকে পড়েছ, যেন তোমার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। একাকী, বিনিদ্র রজনীতে, জেগে থাকা দীর্ঘ রাতে, নিজের অজান্তেই তুমি তোমার সংকল্প, ঈশ্বরের কাছে তোমার আনুষ্ঠানিক প্রতিজ্ঞার কথা চিন্তা করছ, আর ভাবছ যে তারপরেও কেন তুমি এমন দুঃখজনক অবস্থায় পড়েছ? অজান্তেই তোমার চোখ দিয়ে নীরবে জল পড়ে যায়, তুমি হৃদয় বিদারক বেদনা অনুভব করো। তোমার মনে পড়ে যায় প্রার্থনার জন্য ঈশ্বরের সম্মুখে আসার কথা, ঈশ্বরের সাথে একসাথে থাকার সময় তোমরা কত অন্তরঙ্গ আর অবিচ্ছেদ্যভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলে। তোমার চোখের সামনে একের পর এক দৃশ্য ভাসতে থাকে, আর আরো একবার তোমার কানে সেদিনের প্রতিজ্ঞা বেজে ওঠে, “ঈশ্বরই কি আমার একমাত্র অন্তরঙ্গ জন নয়?” এরই মধ্যে তুমি কান্নায় ভেঙে পড়ো: “হে ঈশ্বর! আমার ভালোবাসার ঈশ্বর! আমি ইতিমধ্যেই আমার হৃদয় সম্পূর্ণরূপে তোমায় সমর্পণ করেছি। আমি তোমার কাছেই চিরকালের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই, আমি আমার সারা জীবন ধরে তোমাকেই অবিচলভাবে ভালবাসব…।” যখন তুমি এরকম তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাবে, শুধুমাত্র তখনই প্রকৃতপক্ষে উপলব্ধি করবে যে ঈশ্বর কত মনোরম, এবং শুধুমাত্র তখনই তুমি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারবে: আমি অনেক আগেই আমার সবকিছু ঈশ্বরকে দিয়ে দিয়েছি। এরকম একটা আঘাত সহ্য করে নেওয়ার পরে এইসব বিষয়ে তুমি অনেক বেশি পরিণত হয়ে উঠবে, এবং দেখতে পাবে যে সেই সময়ে পবিত্র আত্মার কাজ মানুষের অধিকারে ছিল না। এই পর্যায়ের পরে তোমার অভিজ্ঞতায় তুমি আর প্রবেশের এই দিকটাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; যেন তোমার পুরানো ক্ষতের দাগগুলোই তোমার প্রবেশে অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। যখনই এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, সেই অশ্রুসিক্ত দিনের কথা অবিলম্বে তোমার মনে পড়বে, যেন বিচ্ছেদের পরে ঈশ্বরের সাথে তুমি পুনরায় মিলিত হয়েছ, এবং ঈশ্বরের সাথে তোমার সম্পর্ক আরও একবার ছিন্ন হওয়ার ভয়ে এবং তোমার ও ঈশ্বরের মধ্যের মানসিক যোগাযোগ (স্বাভাবিক সম্পর্ক) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে তুমি সর্বদা ভীত। এটাই তোমার কাজ ও তোমার প্রবেশ। সুতরাং, তোমরা যখন পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করবে, তোমাদের নিজের প্রবেশের বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, দেখতে হবে যে পবিত্র আত্মার কাজ ঠিক কী আর তোমাদের প্রবেশই বা কী, সেইসাথে পবিত্র আত্মার কাজকে তোমাদের প্রবেশে প্রয়োগ করতে হবে, যাতে পবিত্র আত্মা আরো অনেক উপায়ে তোমাদের নিখুঁত করে তুলতে পারেন, ও যাতে পবিত্র আত্মার কাজের নির্যাস তোমাদের মধ্যে কাজ করে। তোমাদের পবিত্র আত্মার কাজের অভিজ্ঞতা লাভের সময়কালের মধ্যে, তোমরা পবিত্র আত্মাকে জানতে পারবে, সেইসাথে নিজেদেরও জানতে পারবে, এবং তাছাড়াও, কে জানে কত পর্যায়ের তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তোমাদের সাথে ঈশ্বরের স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে, এবং তোমাদের ও ঈশ্বরের সম্পর্ক দিনে দিনে আরও ঘনিষ্ঠ হবে। অগণিতবার অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তন এবং পরিমার্জনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে, তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা গড়ে উঠবে। এই কারণেই তোমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে দুঃখকষ্ট, আঘাত, এবং ক্লেশকে ভয় করা উচিত নয়; যা ভীতিজনক তা হচ্ছে শুধুমাত্র পবিত্র আত্মার কাজ লাভ করা, অথচ তোমাদের প্রবেশ লাভ না করা। সেই দিন যখন আসবে যেদিন ঈশ্বরের কাজ সমাপ্ত হয়েছে, তোমাদের এতদিনের সমস্ত পরিশ্রমই ব্যর্থ হবে; এমনকি যদিও তোমরা ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মাকে জানতে পারোনি, বা তোমাদের প্রবেশও অর্জন করতে পারোনি। পবিত্র আত্মা মানুষের মধ্যে যে আলোকপ্রদানের কাজ করেন, তা মানুষের আবেগকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নয়, বরং মানুষের প্রবেশের একটা পথ উন্মুক্ত করার জন্য, সেইসাথে মানুষকে পবিত্র আত্মার সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, এবং সেখান থেকেই মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি সম্মান ও ভক্তির অনুভূতি গড়ে ওঠে।