ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: ঈশ্বরের স্বভাব এবং তিনি কে ও তাঁর কী আছে | উদ্ধৃতি 245
22-09-2023
ঈশ্বরের স্বভাব এমন একটা বিষয় যা সবাই অতিশয় দুর্বোধ্য মনে করে। উপরন্তু, তা কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া সহজ নয়, কারণ তাঁর স্বভাব মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের থেকে আলাদা। ঈশ্বরের নিজেরও আছে আনন্দ, ক্রোধ, দুঃখ এবং সুখের মতো আবেগ। কিন্তু এসব আবেগ মানুষের আবেগ থেকে ভিন্ন। ঈশ্বর যা, ঈশ্বর একান্তভাবে তা-ই, তাঁর যা আছে, তা একান্ত তাঁরই। যা তিনি প্রকাশ করেন, অভিব্যক্ত করেন তা-ই তাঁর সত্তার সারসত্য, তাঁর পরিচয়ের প্রতিরূপ। তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, তাঁর সারসত্য এবং পরিচয় হল এমন জিনিস যার জায়গা কোনও মানুষ নিতে পারে না। তাঁর স্বভাবের মধ্যে আছে মানবজাতির প্রতি তাঁর প্রেম, মানবজাতির প্রতি তাঁর সান্ত্বনা, মানবজাতির প্রতি তাঁর ঘৃণা, এবং আরও বড়ো কথা, মানবজাতিকে সম্পূর্ণভাবে বোঝা। চরিত্রগতভাবে মানুষ অবশ্য আশাবাদী হতে পারে, হতে পারে প্রাণবন্ত অথবা অনুভূতিহীন। ঈশ্বরের স্বভাব হচ্ছে সকল বস্তু আর প্রাণীর শাসকের স্বভাব, যিনি সমগ্র সৃষ্টির প্রভু, তাঁর স্বভাব। ঈশ্বরের স্বভাবে প্রকাশিত হয় মর্যাদা, নিয়ন্ত্রণ-শক্তি, মহত্ত্ব, বিরাটত্ব, এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব। তাঁর স্বভাব হল কর্তৃত্বের প্রতীক, যা-কিছু ন্যায়, যা-কিছু সুন্দর ও শুভ তার প্রতীক। তার চেয়ে বড়ো কথা, এ হল তাঁরই প্রতীক যাঁকে অন্ধকার এবং কোনও শত্রুশক্তি পরাস্ত করতে অথবা আক্রমণ করতে পারে না, তাঁর প্রতীক যাঁকে কোনও সৃষ্ট জীব রুষ্ট করতে পারে না (রুষ্ট হওয়া তিনি সহ্যও করবেন না)। তাঁর স্বভাব হল সর্বোচ্চ শক্তির প্রতীক। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাঁর কাজে অথবা তাঁর স্বভাবে বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না বা করবেও না। তবে মানুষের ব্যক্তিত্ব পশুর তুলনায় সামান্য শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক ছাড়া আর কিছু নয়। অন্তর্গত এবং স্বকীয়ভাবে মানুষের কোনও কর্তৃত্বশক্তি নেই, স্বায়ত্তশক্তি নেই, নেই নিজেকে অতিক্রম করার সামর্থ্য। মানুষের ব্যক্তিত্বের মূলগত বৈশিষ্ট হল তা সবরকমের মানুষ, ঘটনাবলী এবং বস্তুর নিয়ন্ত্রণাধীন। ঈশ্বরের আনন্দের ভিত্তি হল ন্যায়পরায়ণতা আর আলোর অস্তিত্ব এবং উদ্ভাসন, অন্ধকার এবং অশুভর বিনাশ। তিনি আনন্দিত হন মানবজাতির জন্য আলোক এবং এক মঙ্গলময় জীবন নিয়ে এসে। তাঁর আনন্দ হল ন্যায়পরায়ণতার আনন্দ, ইতিবাচক সবকিছুর অস্তিত্বের প্রতীক, এবং তার চেয়ে বড়ো কথা, মঙ্গলময়তার প্রতীক। অন্যায়ের অস্তিত্ব এবং তার হস্তক্ষেপের ফলে মানবজাতির যে ক্ষতিসাধন হয়, সেসবই ঈশ্বরের ক্রোধের কারণ। তাঁর ক্রোধের কারণ অশুভ আর অন্ধকারের অস্তিত্ব, যা সত্যকে বিতাড়িত করে তার অস্তিত্ব, বিশেষত শুভ আর সুন্দরের প্রতিস্পর্ধী বিষয়ের অস্তিত্ব। তাঁর ক্রোধ চিহ্নিত করে যে যা-কিছু নেতিবাচক তার আর অস্তিত্ব নেই। তার চেয়েও বেশি করে, এই ক্রোধ তাঁর পবিত্রতার প্রতীক। তাঁর দুঃখ মানবজাতির জন্যে—কারণ তাদের নিয়ে তাঁর অনেক আশা, কিন্তু অন্ধকারের গহ্বরে পতন ঘটেছে তাদের, কারণ মানুষকে নিয়ে যে-কাজ তিনি করেন তা তাঁর আশানুরূপ নয়, কারণ যে মানবজাতিকে তিনি ভালবাসেন, তারা সবাই আলোর জগতে বাস করতে পারে না। তিনি দুঃখ পান নির্দোষ মানবজাতির জন্য, সৎ অথচ অজ্ঞ মানুষের জন্য, এবং নিজস্ব মতামতহীন ভালো মানুষদের জন্য। তাঁর দুঃখ হল তাঁর মঙ্গলময়তা ও করুণার সঙ্কেত, সৌন্দর্য ও সদাশয়তার প্রতীক। অবশ্যই, তিনি আনন্দিত হন তাঁর শত্রুদের পরাজিত করে, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে। আরও বড়ো কথা, তা উদ্ভূত হয় সকল শত্রুশক্তির বিতাড়ন আর বিনাশের ফলে, কারণ তার ফলে মানুষ লাভ করে একটা ভালো, শান্তিপূর্ণ জীবন। ঈশ্বরের সুখ মানুষের আনন্দের থেকে আলাদা। বরং বলা যায়, এ হল ভালো ফলের ভাণ্ডার সংগ্রহের অনুভূতি। এই অনুভূতি আনন্দের চেয়েও বড়ো। মানুষ এখন থেকে সব দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তিলাভ করছে, মানুষ আলোর জগতে প্রবেশ করছে—ঈশ্বরের সুখ তারই সঙ্কেত। অন্য দিকে, মানুষের সব আবেগের জন্ম আপন স্বার্থে। ন্যায়পরায়ণতার জন্য নয়, আলোর জন্য নয় অথবা সুন্দরের জন্য নয়, স্বর্গের অনুগ্রহের জন্য তো নয়ই। মানুষের আবেগ স্বার্থপর, তা অন্ধকারের জগতের আবেগ। সেই আবেগের অস্তিত্ব ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারী নয়, তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী তো নয়ই। তাই মানুষ আর ঈশ্বর সম্পর্কে কখনও একই সঙ্গে আলোচনা করা যায় না। ঈশ্বর চিরকালই সর্বশ্রেষ্ঠ, চিরকালই শ্রদ্ধেয়, আর মানুষ চিরকালই নিকৃষ্ট, চিরকালই গুণহীন। এর কারণ, ঈশ্বর চিরকাল আত্মত্যাগ করেন, মানবজাতির জন্য নিজেকে নিবেদন করেন। অথচ মানুষ সবসময় নিজের কথাই ভাবে, নিজের জন্যই তার সব প্রয়াস। ঈশ্বর সর্বদা সর্ব প্রকার কষ্ট সহ্য করেও চেষ্টা করেন মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষার জন্য, তথাপি মানুষ আলোর অথবা ন্যায়পরায়ণতার জন্য কোনো অবদানই রাখে না। যদি কখনও একবারের জন্যে কোনো চেষ্টা করেও, সে চেষ্টা একটা আঘাতও সহ্য করতে পারে না, কারণ তার সব প্রচেষ্টাই সবসময় নিজের জন্য, অপরের জন্য নয়। মানুষ সর্বদা স্বার্থপর, আর ঈশ্বর চিরকালই নিঃস্বার্থ। যা-কিছু ন্যায়, মঙ্গলজনক এবং সুন্দর, ঈশ্বর তার উৎস। অপরপক্ষে, মানুষের সাফল্য শুধুমাত্র সমস্ত অসুন্দর আর অশুভর প্রকাশে। ঈশ্বর কখনও তাঁর ন্যায়পরায়ণতা ও সুন্দরের সারসত্যকে পরিবর্তন করবেন না, কিন্তু মানুষ যে-কোনও সময়, যে-কোনও পরিস্থিতিতে ন্যায়পরায়ণতার পথ পরিত্যাগ করতে, ঈশ্বরের থেকে অনেক দূরে সরে যেতে পুরোপুরি সক্ষম।
—বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বরের স্বভাব বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।
অন্যান্য ধরণের ভিডিও