অধ্যায় ৮০
সমস্ত বিষয়ে, কোনো এক ব্যক্তির আলোকপ্রাপ্ত ও প্রদীপ্ত হওয়ার জন্য আমার সঙ্গে প্রকৃত যোগাযোগ প্রয়োজন; একমাত্র এরই মাধ্যমে আত্মা শান্তিতে থাকতে পারবে। অন্যথায়, আত্মা কোনো শান্তি পাবে না। আমার স্বাভাবিক মানবতাকে আমার সম্পূর্ণ দেবত্ব থেকে পৃথক করাটাই বর্তমানে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সর্বাধিক গুরুতর অসুস্থতা; অধিকন্তু, তোমাদের অধিকাংশই আমার স্বাভাবিক মানবতার উপর উপর গুরুত্ব দাও, যেন তোমরা কোনোদিন জানতেই না যে আমার সম্পূর্ণ দেবত্বও আছে। এটা আমার অবমাননা করে! তোমরা কি সেটা জানো? তোমাদের অসুস্থতা এতই গুরুতর যে তোমরা তোমরা যদি ত্বরা না করো এবং যদি সুস্থ না হও, তাহলে তোমরা আমার হাতে নিহত হবে। আমার সামনে তোমরা এক রকম আচরণ করো (একজন সম্মাননীয়, বিনয়ী এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরো), কিন্তু আমার পশ্চাতে তোমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করো (পুরোপুরি ভণ্ড, অসচ্চরিত্র এবং অসংযমী, নিজের যা ইচ্ছে তাই করো, নিজেদের বিভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি করো, নিজেদের স্বাধীন রাজ্য স্থাপন কর, আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাও)। তোমরা অন্ধ! খোলো নিজের চোখ, যা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে! আমি আসলে কে, তা দেখো! তোমার কোনো লজ্জা নেই! তুমি জানোনা যে আমার কর্মগুলি বিস্ময়কর! তুমি আমার সর্বশক্তিমানতাকে জানো না। এখনও যে উদ্ধার পায়নি, সে কি খ্রীষ্টকে সেবাদান করছে, এমন বলা যায়? কোন ভূমিকা তুমি পালন করছ তা তুমি জানো না! বস্তুত তুমি আমার সামনে ছদ্মবেশ ধারণ করে আসো—নিজের মনোহারিতা জাহির করো—তুমি হতভাগ্য! আমি তোমাকে আমার গৃহ থেকে বিতাড়ন করব; আমি এই ধরনের লোকদের ব্যবহার করি না, কারণ আমি তাদের পূর্বনির্ধারণ বা নির্বাচন করি নি।
আমি যা বলি তাই করি। যারা অন্যায় করে তাদের ভয় পেতে হবে না; আমি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অন্যায় করি না। আমি সর্বদাই আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আচরণ এবং আমার ন্যায়পরায়ণতা অনুসারে কার্য সাধন করি। যেহেতু যারা অন্যায় করে তারা সৃষ্টিকাল থেকে শয়তানের বংশধর, সেহেতু আমি তাদের নির্বাচন করিনি; “পর্বত ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলেও বা সেগুলির রূপান্তর ঘটলেও, মানুষের স্বভাবের পরিবর্তন ঘটে না”—এই প্রবচনটির এটাই প্রকৃত অর্থ। যে বিষয়গুলি মানবজাতি উপলব্ধি করে না, সেগুলি সব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এবং আমার কাছে কিছুই প্রচ্ছন্ন নেই। তুমি অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে থেকে কোনো বিষয় গোপন করে রাখতে পারো, এবং এমনকি অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের বিশ্বাসও জয় করতে পারো, কিন্তু আমার সঙ্গে এমন করা মোটেও সহজ নয়। শেষপর্যন্ত তোমরা আমার বিচার এড়াতে পারবে না। মানবজাতির দৃষ্টি সীমিত, এবং এমনকি যারা বর্তমান পরিস্থিতির একটা ক্ষুদ্র অংশও উপলব্ধি করে তাদেরও কিছুটা দক্ষতা আছে বলে মনে করা হয়। আমার কাছে, সবকিছুই মসৃণভাবে অগ্রসর হয়, কোনোকিছুই আমার পথে সামান্যতম গতিরোধও করে না, কারণ সবকিছুই আমার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার অধীন। আমার নিয়ন্ত্রণের কাছ সমর্পণ না করার সাহস কে দেখাবে! কে আমার ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত ঘটানোর সাহস করবে! কে আমার প্রতি অবিশ্বস্ত ও অসন্তানোচিত হওয়ার সাহস করবে! কে আমার কাছে এমন কিছু বলার সাহস করবে যা সত্য নয়, এবং পরিবর্তে আমার আমাকে একগুচ্ছ মিথ্যা বলবে! তারা কেউ আমার ক্রোধান্বিত হস্ত থেকে রেহাই পাবে না। এমনকি তুমি যদি পরাজয় স্বীকার করেও নাও, এবং শাস্তি গ্রহণে ও অতল গহ্বরে প্রবেশে ইচ্ছুকও হয়ে থাকো, তবুও আমি তোমাকে সহজে রেহাই দেব না। আমি তোমাকে অতল গহ্বর থেকে পুনরুদ্ধার করব যাতে তুমি আরো একবার আমার ক্রোধান্বিত শাস্তির (চরম ঘৃণার) সম্মুখীন হও। তোমার কাছে পালিয়ে যাওয়ার কি কোনো জায়গা আছে? মানুষ যখন আমার সম্পূর্ণ দেবত্ব থেকে আমার স্বাভাবিক মানবতাকে পৃথক করে, সেই বিষয়টাকেই আমি সবচেয়ে ঘৃণা করি।
আমার প্রতি যারা বিশ্বস্ত তারাই আশীর্বাদধন্য; অর্থাৎ, যারা আমাকে চিহ্নিত করে প্রকৃতপক্ষেই মানবহৃদয়ের নিবিড় পরীক্ষক ঈশ্বর হিসেবে, তারাই আশীর্বাধন্য। আমি অবশ্যই তোমার আশীর্বাদ বৃদ্ধি করব, এবং তোমায় আমার রাজ্যে চিরকাল শুভ আশীর্বাদ উপভোগ করে যাওয়ার অনুমতি দেব। শয়তানকে লজ্জিত করতে এটাও সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। তবে, অধৈর্য বা উদ্বিগ্ন হয়োনা; সব কিছুর জন্যই আমার একটা সময় ধার্য রয়েছে। আমি যে সময়টিকে পূর্বনির্ধারণ করে রেখেছি তা যদি এখনও এসে না থাকে, সময়টা যদি তার মাত্র এক সেকেন্ডও পূর্বেরও হয়, আমি কাজ করব না। আমি নির্ভুল ভাবে এবং একটি ছন্দ মেনে কাজ করি, আমি কারণ ছাড়া কাজ করি না। মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি উদ্বেগের দ্বারা বিন্দুমাত্রও ভারাক্রান্ত হই না; আমি তাই পর্বতের মতোই সুস্থিত—কিন্তু তুমি কি জানোনা আমিই স্বয়ং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর? অতি অধৈর্য হয়োনা; সবকিছুই আমার হাতের মধ্যে। সবকিছুই অনেক আগেই প্রস্তুত হয়েছে, এবং আমার সেবার জন্য কোনো কিছুই অপেক্ষা করতে পারে না। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বাইরে থেকে দেখে বিশৃঙ্খল মনে হলেও, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছুই সুশৃঙ্খল। তোমাদের জন্য আমি যা প্রস্তুত করেছি তা শুধুমাত্র তোমাদেরই উপভোগের জন্য। তোমরা কি এটা উপলব্ধি করেছ? আমার ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিজেদের ঢুকিও না। আমি সকল মানুষ ও দেশকে আমার কর্মের মাধ্যমে আমার সর্বশক্তিমানতাকে চাক্ষুষ করতে দেব, এবং আমার বিস্ময়কর কর্মের জন্য তাদের আমার পবিত্র নামের বন্দনা ও স্তুতি করতে দেব। তার কারণ হল, যেমন আমি আগেই বলেছি, ভিত্তি ছাড়া আমি কোনো কাজ করি না; বরং, সবকিছুই আমার প্রজ্ঞায়, এবং আমার শক্তিতে, আমার ন্যায়পরিয়ণতায় এবং মহিমার, এবং সর্বোপরি, আমার ক্রোধে পরিপূর্ণ।
আমার বাক্যসমূহ শুনে যারা তৎক্ষণাৎ জেগে ওঠে তারা অবশ্যই আমার আশীর্বাদ অর্জন করবে এবং নিশ্চিত ভাবেই আমার সুরক্ষা ও পরিচর্যা লাভ করবে। তারা কোনো শাস্তির যন্ত্রণাভোগ করবে না; বরং তারা পরিবারের সুখ উপভোগ করবে। তোমরা কি একথা জানো? যন্ত্রণাভোগ চিরকালীন, এবং আনন্দ এমনকি আরো চিরন্তন; এবার থেকে তারা উভয়েই অনুভূত হবে। নিজের পাপ স্বীকারের সময় তুমি কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ কর তার উপরেই নির্ভর করছে তুমি যন্ত্রণাভোগ করবে নাকি আনন্দ অনুভব করবে। তুমি আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত এবং নির্বাচিতদের একজন নাকি তেমন নও সে বিষয়ে বলতে গেলে, তুমি যা বলেছ তার আলোকে তোমার এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকা উচিত। তুমি মানুষকে বোকা বানাতে পারো, কিন্তু তুমি আমাকে বোকা বানাতে পারবে না। আমি যাদের পূর্বনির্ধারণ ও নির্বাচন করেছি তারা এবার থেকে প্রভূত ভাবে আশীর্বাদধন্য হবে; আর যাদের আমি পূর্বনির্ধারণ ও নির্বাচন করিনি তাদের আমি এবার থেকে কঠোরভাবে শাস্তি দেব। এটাই হবে তোমাদের কাছে আমার প্রমাণ। এখন যারা আশীর্বাদধন্য তারা সন্দেহাতীত ভাবেই আমার প্রিয়; আর যারা শাস্তিপ্রাপ্ত, তারা যে আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত ও নির্বাচিত নয়, তা বলাই বাহুল্য। তোমাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত! অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে, বর্তমানে তুমি যদি আমার দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকো, এবং তুমি যদি আমার কঠোর বিচারের বাক্য লাভ করো, তাহলে তুমি আমার হৃদয়ে ঘৃণিত এবং আমার বিরাগভাজন, তুমি হয়ে পড়বে তাদেরই একজন যাদের আমি বহিষ্কার করি। তুমি যদি আমার সান্ত্বনা ও আমার জীবনের রসদ লাভ করো, তাহলে তুমি আমার অধিকারে রয়েছ, তুমি আমার প্রিয়দের একজন। তুমি আমার বাইরের চেহারার ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করতে পারো না। এই বিষয়ে নিজের কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ো না!
আমার বাক্যসমূহ প্রত্যেক ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থাকে নির্দেশ করে। তোমরা কি বিশ্বাস করো যে আমি এলোমেলো বিষয় নিয়ে চর্চা করি, বা আমার যা ইচ্ছা তাই বলি? তা একেবারেই নয়! আমার প্রতিটি বাক্যের মধ্যে আমার প্রজ্ঞা প্রচ্ছন্ন রয়েছে। আমার বাক্যগুলিকেই তোমাদের সত্য বলে ভাবা উচিত। যে বিদেশিরা সত্য পথের সন্ধান করছে তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঢুকে পড়বে। সেটা যখন ঘটবে, তখন তোমরা সব হতভম্ব হয়ে পড়বে, এবং সামান্যতম অসুবিধা ছাড়াই সমস্ত কিছুই সম্পন্ন হবে। তোমরা কি জানো না যে আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর? আমার এই বাক্যগুলি শুনে তোমরা সেগুলি স্থিরভাবে বিশ্বাস করবে, তাই নয় কি? আমি ভুল করি না, ভুল বিবৃতি দেওয়া তো দূরের কথা। তোমরা কি জানো? তাই, আমি বারংবার এটা জোর দিয়েছি যে তোমরা দ্রুত আমার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করো যাতে তাদের নেতৃত্ব দেওয়া যায় ও তাদের পরিচালনা করা যায়। তোমরা কি এটা জানো? তোমাদের মাধ্যমে আমি তাদের নিখুঁত করব। এমনকি যেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল তোমাদের মাধ্যমে আমি আমি প্রভূত সংকেত ও চমৎকারিত্বগুলিকে প্রতীয়মান করব, অর্থাৎ, মানবজাতি যাদের অবজ্ঞা করে তাদের মধ্যে আমার নামকে মহিমান্বিত করা, আমার হয়ে সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করা, এবং আমার সঙ্গে রাজা হয়ে রাজত্ব করার জন্য আমি এক মনুষ্যগোষ্ঠীকে বেছে নিয়েছি। এইভাবেই, তোমাদের জন্য আমার বর্তমান প্রশিক্ষণ এই বিশ্বের সবচেয়ে মহান ব্যবস্থাপনা; এটা এমন একটা চমকপ্রদ বিষয় যা মানবজাতি সম্পন্ন করতে পারে না। তোমাদের নিখুঁত করার মাধ্যমে আমি শয়তানকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ এবং অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করব, অতিকায় লাল ড্রাগনকে এমনকে ভাবে হত্যা করব যাতে সে আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে না পারতে। তাই, যারা অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তারা সকলে অতিকায় লাল ড্রাগনের বংশধর। তাদের তাদের চূড়ান্ত ভাবে ঘৃণা করি। এই কাজ আমি সংঘটিত করেছি। তোমরা কি তা দেখতে পাও না? যারা অবিশ্বস্ত, যারা কুটিলতা ও ছলনার আশ্রয় নিয়েছে, তারা সকলেই অনাবৃত হয়েছে। দাম্ভিক, আত্মম্ভরী, নিজের নৈতিকতা বিষয়ে উদ্ধত, এবং অপরিণামদর্শীরা প্রধান দেবদূতের বংশধর, এবং তারা শয়তানের সাধারণতম নমুনা—তারা সকলে আমার ঘোষিত শত্রু, আমার প্রতিপক্ষ। আমার হৃদয়ের ঘৃণাকে প্রশমিত করার জন্য আমি তাদের একে একে শাস্তি দেব। আমি একটা একটা করে এই পুরো কাজটাই সম্পন্ন করব, পর্যায়ক্রমে একেকটি বিষয়ের নিষ্পত্তি করব।
এবার, জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ ও অতল গহ্বর বলতে কী বোঝায়? মানুষের কল্পনায়, জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ হল একটি জাগতিক বস্তু; কিন্তু মানবজাতি জানে না যে এটা এক অত্যন্ত ভুল ব্যাখ্যা। তা সত্ত্বেও এটা মানুষের মনে একটা বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছে। জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ হল আমার হস্ত দ্বারা মানব জাতিকে শাস্তিপ্রদান; যারা জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে নিক্ষিপ্ত হয় তারাই আমার হস্ত দ্বারা নিহত হয়েছে। এই ধরনের মানুষের চেতনা, আত্মা ও দেহ চিরকাল যন্ত্রণা ভোগ করে। আমি যখন বলি যে সবকিছু আমার হাতের মধ্যে তখন এটাই আমার বাক্যগুলির প্রকৃত অর্থ। তাহলে, অতল গহ্বরের অর্থ কী? মানুষ মনে করে এটা এমন এক বিশাল গহ্বর যা অনন্ত এবং যা অতলস্পর্শী ভাবে গভীর। প্রকৃত অতল গহ্বর হল শয়তানের প্রভাব। কোনো মানুষ যদি যদি শয়তানের কবলে পড়ে তা হলে সেই ব্যক্তি অতল গহ্বরের মধ্যে রয়েছে; এমনকি তাদের যদি ডানাও গজাত তাহলেও তারা উড়ে যেতে পারত না। এই কারণেই একে বলা হয় অতল গহ্বর। এই ধরনের মানুষদের অনন্তজকাল শাস্তিভোগ করতে হয়; এই ভাবেই আমি এর ব্যবস্থাপনা করেছি।