অধ্যায় ৮৯
অন্ধ! অজ্ঞ! অপদার্থ আবর্জনার পিণ্ড! তোমরা আমার সম্পূর্ণ দেবত্ব থেকে আমার স্বাভাবিক মানবতাকে বিচ্ছিন্ন করো! তোমরা কি এ কাজকে আবার বিরুদ্ধে পাপ হিসেবে দেখো না? উপরন্তু, এ এমন এক কাজ যা ক্ষমা করা কঠিন! বাস্তববাদী ঈশ্বর আজ তোমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়েছেন, অথচ তোমরা শুধু জানো আমার একটি মাত্র দিক — আমার স্বাভাবিক মানবতা — এবং সেই দিকটি তোমরা আদপেই দেখোনি যেটি সম্পূর্ণ ঐশ্বরিক। তোমার কি ধারণা যে, কে আমার পিছনে আমাকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে, তা আমার জানা নেই? আমি তোমার সমালোচনা করছি না; আমি শুধু নজর রেখে চলেছি, দেখার জন্য যে তুমি কোন স্তর পর্যন্ত যেতে পারো, এবং শেষ পর্যন্ত কোন পরিণতিতে তুমি পৌঁছবে। আমার বাক্যগুলি লক্ষ লক্ষ বার বলা হয়েছে, তবু তোমরা অজস্র মন্দ কাজ করেছ। কেন তুমি বারবার আমাকে প্রতারণা করার চেষ্টা করো? সাবধান হও, তোমাকে নিজের জীবন হারাতে হতে পারে! আমার ক্রোধকে যদি তুমি প্ররোচিত করে একটি বিশেষ স্তর পর্যন্ত নিয়ে যাও, তাহলে আমি তোমাকে কোনও রকম ক্ষমা প্রদর্শন করব না, এবং তোমাকে বিতাড়িত করার আগে আমি বিবেচনা করে দেখব না যে, অতীতে তুমি কেমন ছিলে, তুমি অনুগত বা ধর্মপ্রাণ ছিলে কিনা, আমার জন্য তুমি কতদূর পরিশ্রম করেছ, কিংবা নিজেকে কতদূর ব্যয় করেছ; এই সমস্ত বিষয়ের দিকে আমি আদপেই নজর দেব না। এখন তোমার পক্ষে শুধু আমাকে প্ররোচিত করাই যথেষ্ট, এবং আমি তোমাকে নিক্ষেপ করব অতল গহ্বরে। কার এখনও এত দুঃসাহস যে সে আমাকে প্রতারণা করার চেষ্টা করে? একটি কথা মনে রেখো! এখন থেকে আমি যখনই ক্রুদ্ধ হব, তা সে যার কারণেই হোক না কেন, তৎক্ষণাৎ আমি তোমায় বহিষ্কার করব, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও সমস্যা না দেখা দেয়, এবং আমাকে আর তোমার মুখদর্শন করতে না হয়। তুমি যদি আমাকে অমান্য করো, সেক্ষেত্রে আমি তৎক্ষণাৎ তোমাকে শাস্তি দেব। একথা কি তোমাদের মনে থাকবে? তোমাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান, তাদের এই মুহূর্তেই অনুতাপ প্রকাশ করা উচিত।
আজ — অর্থাৎ এখন — আমি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ। তোমাদের সকলেরই আমার প্রতি অনুগত থাকা এবং তোমার সম্পূর্ণ সত্তাকে আমার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা উচিত। তোমার আর বিলম্ব করা একেবারেই উচিত নয়। আমার বাক্যের প্রতি যদি তুমি মনোযোগ না দাও, তাহলে আমি আমার হাত প্রসারিত করব এবং তোমাকে ভূপতিত করব। এ কাজের মাধ্যমে আমি সকলের কাছে নিজের পরিচয় জানিয়ে দেব! আজ আমি সকলের প্রতি ক্রুদ্ধ ও মহিমান্বিত (যা আমার বিচারের থেকেও বেশি গুরুতর)। আমি অজস্র বাক্য উচ্চারণ করেছি, তবু তোমরা কিছুমাত্র প্রতিক্রিয়া জানাওনি; তোমরা কি সত্যিই এত নির্বোধ? আমার ধারণা তা তোমরা নও। এ তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী প্রাচীন শয়তানের কাজ, সে কোনও অপকর্ম করছে। তোমরা কি তা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছ? আমূল পরিবর্তন আনার জন্য দ্রুত প্রস্তুত হও! আজ পবিত্র আত্মার কর্মের এই স্তর পর্যন্ত অগ্রগতি ঘটেছে; তোমরা কি তা দেখতে পাওনি? আমার নাম ছড়িয়ে পড়বে ঘরে ঘরে, সমস্ত জাতিতে এবং সমস্ত দিকে, এবং তা বিশ্বজগৎ জুড়ে বয়স্ক ও শিশুদের মুখে মুখে সজোরে উচ্চারিত হবে; এটি পরম সত্য। আমি স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ও উপরন্তু আমিই ইশ্বরের এক ও একমাত্র ছবি। অধিকন্তু, আমার সমগ্র রক্ত-মাংসে আমিই ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রকাশ। যারা আমাকে সম্মান না করার সাহস দেখাবে, যারা তাদের দৃষ্টিতে প্রতিরোধ প্রদর্শন করার সাহস দেখাবে, এবং যারা আমার বিরুদ্ধে অমান্যকারী কথা বলার সাহস দেখাবে, আমার অভিশাপ ও ক্রোধের ফলে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত (আমার ক্রোধের কারণেই তাদের অভিশাপ দেওয়া হবে)। উপরন্তু, আমার প্রতি অনুগত না থাকার ও সন্তানোচিত আচরণ না করার সাহস যে দেখাবে, এবং আমাকে প্রতারণা করার সাহস যে দেখাবে, আমার ঘৃণার ফলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। আমার ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা ও বিচার চিরকাল স্থায়ী হবে। আদিতে, আমি ছিলাম ক্ষমাশীল ও প্রেমময়, কিন্তু এটি আমার সম্পূর্ণ দেবত্বের প্রকৃতি নয়; আমার অর্থাৎ স্বয়ং সমগ্র ঈশ্বরের প্রকৃতি গঠিত হয়েছে ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা ও বিচারের দ্বারা। অনুগ্রহের যুগে আমি ছিলাম প্রেমময় ও ক্ষমাশীল। যে কাজ আমার সম্পূর্ণ করার ছিল, তার কারণে আমার মধ্যে স্নেহশীল দাক্ষিণ্য ও ক্ষমা ছিল; কিন্তু পরবর্তী কালে এই বস্তুগুলির আর কোনও প্রয়োজন ছিল না (এবং তারপর থেকে আর কখনওই প্রয়োজন হয়ওনি)। বর্তমানে ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা ও বিচারই সব, এবং এটিই আমার সমগ্র দেবত্বের সঙ্গে যুক্ত আমার সম্পূর্ণ মানবতার বৈশিষ্ট্য।
যারা আমার সম্পর্কে অজ্ঞ, তারা অতল গহ্বরে অবলুপ্ত হয়ে যাবে, কিন্তু যারা আমার সম্পর্কে নিশ্চিত তারা চিরকাল জীবিত থাকবে, আমার ভালোবাসা তাদের যত্ন নেবে ও তাদের রক্ষা করবে। যে মুহূর্তে আমি একটি শব্দ মাত্রও উচ্চারণ করি, সেই মুহূর্তেই গোটা বিশ্বজগৎ ও পৃথিবীর প্রান্তগুলি কম্পিত হয়ে ওঠে। এমন কে আছে যে আমার বাক্য শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে না? আমার প্রতি জেগে ওঠা শ্রদ্ধাকে কে নিরস্ত করতে পারে? এবং আমার কর্মের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত আমার ন্যায়পরায়ণতা ও মহিমাকে জানতে কে অসমর্থ! এবং আমার কর্মের মধ্যে আমার সর্বশক্তিমানতা ও প্রজ্ঞাকে কে দেখতে পায় না! যে মনোযোগ দেয় না, তার মৃত্যু নিশ্চিত। তার কারণ যারা মনোযোগ দেয় না, তারা আমাকে প্রতিরোধ করে এবং আমার সম্পর্কে অজ্ঞ; এরা প্রথম সারির দেবদূত এবং সর্বাধিক উশৃঙ্খল। নিজেদের পরীক্ষা করে দেখো: যে উশৃঙ্খল, নিজের নৈতিকতা বিষয়ে উদ্ধত, দাম্ভিক এবং অহঙ্কারী, সে নিঃসন্দেহে আমার ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু এবং তার ধ্বংস নিশ্চিত!
এবার আমি আমার রাজ্যের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ ঘোষণা করতে চলেছি: সমস্ত কিছুই আমার বিচারের অধীন, সমস্ত কিছুই আমার ন্যায়পরায়ণতার অধীন, সমস্ত কিছুই আমার আমার মহিমার অধীন, এবং সকলেই প্রতিই আমি ন্যাপরায়ণ আচরণ করি। যারা বলে যে তারা আমাকে বিশ্বাস করে, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে আমার বিরোধিতা করে, অথবা যাদের হৃদয় আমাকে পরিত্যাগ করেছে, তাদের বিতাড়িত করা হবে — তবে সেসবই হবে আমার নিজস্ব উপযুক্ত সময় এলে। যারা আমার সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলে — কিন্তু তা এমনভাবে যাতে তা অন্য মানুষদের নজরে না পড়ে, তাদের অবিলম্বে মৃত্যু হবে (তাদের আত্মা, শরীর ও সত্তা অবলুপ্ত হবে)। আমার প্রিয়ভাজনদের যারা নিপীড়ন করে বা যারা তাদের প্রতি উদাসীন আচরণ করে, আমার ক্রোধ অবিলম্বে তাদের বিচার করবে। অর্থাৎ, যে সমস্ত মানুষকে আমি ভালোবাসি, তাদের যারা ঈর্ষা করে এবং যারা মনে করে যে আমি ন্যায়পরায়ণ নই, তাদের বিচারের জন্য তাদেরকে আমার প্রিয়ভাজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। যারা শিষ্টাচারী, সরল ও সৎ (যাদের মধ্যে প্রজ্ঞার অভাব আছে তারা সহ), এবং যারা মনে-প্রাণে আমার প্রতি আন্তরিক, তারা সকলেই আমার রাজ্যে বসবাস করবে। যারা প্রশিক্ষণ পায়নি — অর্থাৎ যে সৎ মানুষদের মধ্যে প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টির অভাব আছে — তারাও আমার রাজ্যে শক্তির অধিকারী হবে। তবে তাদের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যেও ভাঙন ঘটানো হয়েছে। তারা যে প্রশিক্ষণ পায়নি তা কোনও চূড়ান্ত বিষয় নয়। বরং এই বিষয়গুলির মধ্যে দিয়েই আমি সকলের কাছে আমার সর্বশক্তিমানতা ও আমার প্রজ্ঞাকে তুলে ধরব। যারা এখনও আমার সম্পর্কে সন্দিহান, তাদের আমি বিতাড়িত করব; তাদের মধ্যে একজনকেও আমি চাই না (এহেন একটি সময়ে যারা এখনও আমার সম্পর্কে সন্দিহান, তাদের আমি ঘৃণা করি)। গোটা বিশ্বজগৎ জুড়ে আমি যে কর্ম করি, তার মাধ্যমে আমি সৎ মানুষদের সামনে আমার কর্মের অলৌকিকত্ব তুলে ধরব, এবং তারপর তাদের প্রজ্ঞা, অন্তর্দৃষ্টি ও বিচারশক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া আমার অলৌকিক কর্মের ফলাফলের মাধ্যমে আমি শঠ ব্যক্তিদের এক লহমায় ধ্বংস করে দেব। সমস্ত প্রথমজাত পুত্ররা, যারা সর্বপ্রথম আমার নাম গ্রহণ করেছিল (অর্থাৎ যারা পবিত্র এবং নিষ্কলঙ্ক ও সৎ মানুষ), তারা সর্বপ্রথম আমার রাজ্যে প্রবেশাধিকার পাবে এবং আমার পাশাপাশি তারাও সমস্ত জাতি ও সমস্ত মানুষকে শাসন করবে, রাজ্যে তারা রাজার মতোই রাজত্ব করবে এবং সমস্ত জাতি ও সমস্ত মানুষের বিচার করবে (এখানে শুধুমাত্র রাজ্যের সমস্ত প্রথমজাত পুত্রদের কথাই উল্লেখ করা হচ্ছে, অন্য কারো কথা নয়)। সমস্ত জাতি ও সমস্ত মানুষের মধ্যে যাদের বিচার হয়েছে এবং যারা অনুতাপ প্রকাশ করেছে, তারা আমার রাজ্যে প্রবেশ করবে এবং আমার রাজ্যের মানুষ হয়ে উঠবে। অপর পক্ষে, যারা অবাধ্য ও অনুতাপহীন, তাদের (চিরকালের মতো অবলুপ্ত হয়ে যাওয়ার জন্য) অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। রাজ্যের বিচারই হবে শেষ বিচার, এবং তার মাধ্যমে আমি জগতকে আদ্যোপান্ত শোধন করব। তারপর থাকবে না আর কোনও অবিচার, দুঃখ, কান্না বা দীর্ঘশ্বাস, এবং তার চেয়েও বড় কথা, অন্য কোনও জগতও আর থাকবে না। সমস্ত বস্তুই হয়ে উঠবে খ্রীষ্টের প্রকাশ, এবং সমস্ত কিছুই হয়ে উঠবে খ্রীষ্টেরই রাজ্য। কী মহিমা! কী মহিমা!