অধ্যায় ৭৮
আমি আগে বলেছি যে আমি সেই সত্তা যিনি কর্ম সম্পাদন করছেন, কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়। আমার কাছে, সবকিছুই নিরুদ্বেগ ও সুখী, কিন্তু তোমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলি প্রবলভাবে ভিন্ন; তোমরা যা-ই করো, তার সবকিছুতেই তোমরা প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হও। আমি যা অনুমোদন করি, তা আমি অবশ্যই সম্পন্ন করব; যাকে আমি অনুমোদন করি, তাকে আমি নিখুঁত করব। মনুষ্যগণ: আমার কার্যে হস্তক্ষেপ কোরো না! তোমাদের শুধুই আমার নেতৃত্ব অনুসরণ করে কাজ করে যেতে হবে, আমি যা ভালোবাসি তা করতে হবে, যা কিছু আমি ঘৃণা করি সে সকল পরিহার করতে হবে, নিজেদের পাপমুক্ত করতে হবে, এবং নিজেদের আমার প্রেমপূর্ণ আলিঙ্গনে সমর্পণ করতে হবে। আমি তোমাদের কাছে দম্ভ করছিনা, বা আমি অতিরঞ্জনও করছি না; এটাই প্রকৃত সত্য। আমি যদি বলি যে আমি এই বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে চলেছি, তাহলে তোমাদের চোখের পলকটুকু পড়ার মধ্যেই এই বিশ্ব ভস্মে পরিণত হবে। তোমরা প্রায়শই অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন, এবং নিজেদের ভারকে বাড়িয়ে তোলো, ভীষণ ভাবে ভীত থাকো যে আমার বাক্যগুলি শূন্যগর্ভ। এইভাবেই তোমরা আমার জন্য একটা “বহির্গমনের পথ খোঁজা”-র উদ্দেশ্যে ছোটাছুটি কর। অন্ধ! নির্বোধ! তোমরা এমনকি নিজেদের মূল্য জানো না, তবু আমার পরামর্শদাতা হওয়ার চেষ্টা করো। তুমি কি যোগ্য? আয়নায় একবার ভালো করে দেখো!
আমি তোমাকে একটা কথা বলি! ভীরুকে তার ভীরুতার জন্য শাস্তি দিতেই হবে, আর পরম বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসের জন্য আশীর্বাদ লাভ করবে। পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে, এই মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বাস। যে আশীর্বাদ তোমাদের উপর নেমে আসবে তা প্রকাশিত হওয়ার আগে, তোমাদের, এই মুহূর্তেই, আমার জন্য ব্যয় করার উদ্দেশ্যে সমস্ত কিছু উৎসর্গ করতে হবে। এটাই হল ঠিক সেই বিষয় যাকে “আশীর্বাদ লাভ” ও “বিপর্যয় ভোগ” বলা হয়। আমার পুত্রগণ! আমার বাক্যগুলি কি এখনও তোমাদের হৃদয়ে খোদিত হয়ে রয়েছে? “যারা আমার জন্য আন্তরিকভাবে ব্যয় করবে, তাকে আমি অবশ্যই অনেক আশীর্বাদ দেব”। আজ তুমি কি প্রকৃতই এর অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করো? আমি কোনো শূন্যগর্ভ বাক্য উচ্চারণ করি না; এখন থেকে, কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। অর্থাৎ, আমার বাক্যে যে বিষয়গুলি প্রচ্ছন্ন থাকত এবার কোনো রকম গোপনীয়তা ছাড়াই তোমাদের একে একে তা বলা হবে। উপরন্তু, প্রতিটি বাক্যই হবে আমার প্রকৃত অর্থ, এটা বলাই বাহুল্য যে সমস্ত মানুষ, ঘটনাবলি ও বস্তুসমূহ আমার সম্মুখে প্রচ্ছন্ন, সেগুলিরপ্রকাশ সহজসাধ্য হবে এবং তা আমার পক্ষে একেবারেই কঠিন হবে না। আমি যা করি তার প্রতিটিই আমার স্বাভাবিক মানবতার একটি দিক এবং সেইসঙ্গে আমার সম্পূর্ণ দেবত্বের একটি দিককে ধারণ করে। তোমাদের কি এই বাক্যগুলির একটা স্পষ্ট উপলব্ধি আছে? এই কারণেই আমি বার বার এ কথা বলি যে তোমার খুব বেশি শশব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই। কোনো ব্যক্তির বা বস্তুর প্রকাশ ঘটানো আমার পক্ষে কঠিন নয়, এবং এর জন্য সর্বদাই সময় রয়েছে। তাই নয় কি? কত মানুষের প্রকৃত স্বরূপ আমার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তারা শৃগাল-আত্মা, কুকুর, অথবা নেকড়ে, যাই হোক না কেন, আমার নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ে তারা সকলেই তাদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করবে, কারণ আমার প্রতিটি কাজই আমার পরিকল্পনার অঙ্গ। এই বিষয়ে তোমাদের অত্যন্ত স্পষ্ট একটা উপলব্ধি থাকতেই হবে!
“এই সময় আর বেশি দূরে নেই” বলতে কী বোঝায় তুমি কি সত্যিই তা উপলব্ধি করো? অতীতে, তোমরা সবসময় ভেবেছ যে এটা বলতে আমার দিনকে বোঝায়, কিন্তু তোমরা সবাই নিজেদের পূর্বধারণার ভিত্তিকে আমার বাক্যগুলিকে বাখ্যা করে এসেছ। আমি তোমাকে বলি! এবার থেকে যে আমার বাক্যগুলির ভুল ব্যাখ্যা করবে সে নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক! যে বাক্যগুলি আমি উচ্চারণ করেছি, “এই সময় আর বেশি দূরে নেই”.-বলতে তোমাদের আশীর্বাদ উপভোগের দিনগুলিকে বোঝাচ্ছে; অর্থাৎ যে দিনগুলিতে সমস্ত দুষ্ট আত্মা বিনষ্ট হবে এবং আমার গির্জা থেকে বিতাড়িত হবে এবং কার্যসাধনের সমস্ত মনুষ্যসুলভ পন্থাগুলিকে নাকচ করা হবে। সর্বোপরি, এই অভিব্যক্তির দ্বারা সেই দিনগুলিকে বোঝায় যেদিন সমস্ত প্রবল বিপর্যয় নেমে আসবে। এমনটা মনে রেখো! সকলই প্রবল বিপর্যয়গ্রস্ত হবে; একে আর ভুল ব্যাখ্যা কোরো না। আমার প্রবল বিপর্যয়গুলি একই সাথে আমার হাত থেকে সমগ্র পৃথিবীর উপর নেমে আসবে। যারা আমার নাম অর্জন করেছে তারা আশীর্বাদধন্য হবে, এবং তাদের অবশ্যই এই ধরনের যন্ত্রণাভোগ করতে হবে না। তোমরা কি এমনটা এখনো মনে রেখেছ? আমি কী বিষয়ে কথা বলছি তা কি তোমরা উপলব্ধি করো? যে সময়ের বিষয়ে আমি বলি, সেটা হল ঠিক সেই সময় যখন আমি আমার কার্য শুরু করি (এটা ঠিক সেই সময়, যখন প্রবল বিপর্যয়গুলি নেমে আসে)। তোমরা আমার অভিপ্রায়গুলির প্রকৃত উপলব্ধি করো না। তোমরা কি জানো যে, আমি কেন তোমাদের কাছ থেকে এত কঠোর দাবি করি, তোমাদের প্রতি কোনো ক্ষমাশীলতা না দেখিয়ে? যখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এত উত্তেজনাপূর্ণ, এবং চিনে যারা ক্ষমতার (তথাকথিতভাবে) রয়েছে, তারা সমস্ত রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় একটি টাইম বোমার বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে। সাতটি দেশে প্রকৃত পথের অন্বেষী যারা রয়েছে, তারা মরিয়া হলে বাঁধভাঙা বন্যার উত্তাল জলরাশির মতো চিনের ভেতর যে কোনো মূল্যে ঢুকে পড়বে। কয়েকজন আমার দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, এবং অন্যরা আমাকে সেবা প্রদানের জন্য নির্ধারিত, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো প্রথমজাত পুত্র নেই। এটা আমারই কর্ম! আমি যখন এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছি, তখন ইতিমধ্যেই এমনটা সুনির্দিষ্টহয়ে গিয়েছিল। নিজেদের মনুষ্যোচিত পূর্বধারণা থেকে মুক্ত হও। ভেবো না যে আমি অর্থহীন কথা বলছি! যা নিয়ে আমি ভাবনাচিন্তা করছি সেই কাজ আমি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছি, এবং আমার পরিকল্পনাও এমন একটা বিষয় যা আমি ইতিমধ্যেই সম্পাদন করেছি। এই বিষয়টা কি তোমাদের কাছে পরিষ্কার?
প্রতিটি বিষয়ের সমস্ত কিছুই আমার ভাবনা ও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। আমার পুত্র! আমি তোমার স্বার্থেই তোমাকে নির্বাচন করি, উপরন্তু, আমি তা করি তোমাকে ভালোবাসি বলে। ভাবনায় যে অমান্য করার সাহস দেখায়, বা ঈর্ষার জন্ম দেয়, আমার অভিশাপে দগ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু ঘটবে। এটা আমার রাজ্যের প্রশাসনিক ফরমানসমূহের সঙ্গে জড়িত, কারণ বর্তমানের রাজ্য ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে। যাই হোক, আমার পুত্র, তোমাকে সতর্ক থাকতেই হবে এবং একে এক ধরণের পুঁজি হিসাবে গণ্য করা তোমার উচিত নয়। পিতার হৃদয়ের প্রতি তোমার বিবেচনাশীল থাকা উচিত, এবং, এর মাধ্যমে, তোমার পিতার শ্রমসাধ্য প্রয়াসকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এর থেকে, আমার পুত্রকে এটা বুঝতে হবে যে, কোন ধরনের ব্যক্তিকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি, এবং কোনো ধরনের ব্যক্তি আমার ভালোবাসায় দ্বিতীয় স্থানে আসে, কোন ধরনের ব্যক্তিকে আমি সবচেয়ে ঘৃণা করি, এবং কোন ধরনের ব্যক্তিকে আমি অপছন্দ করি। নিজেকে ভারাক্রান্ত করে যেও না। তোমার স্বভাব যাই হোক না কেন, তা আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত, এবং তা আমার দৈবিক প্রকৃতির একটা দিকের উদ্ঘাটন। নিজের ভ্রান্ত ধারণা দূর করো! আমি তোমার প্রতি কোনো ঘৃণার মনোভাব পোষণ করি না। আমি কীভাবে এমনটা বলতে পারি? তুমি কি এখনও উপলব্ধি করতে পারছ না? তুমি কি এখনও তোমার ভয়ের দ্বারা সংকুচিত? কে বিশ্বস্ত, কে অনুরাগী, কে সৎ, কে শঠ—আমি সব জানি, কারণ, যেমনটা আমি আগেই বলেছি, আমি সন্তদের অবস্থা নিজের হাতের তালুর মতো জানি।
আমার চোখে সবকিছুই আনেক আগেই সম্পাদিত ও প্রকাশিত। (আমিই সেই ঈশ্বর যিনি মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল পরীক্ষা করেন; আমার উদ্দেশ্য হল নিছকই আমার স্বাভাবিক মানবতার দিকটিকে তোমাদের দেখানো)। তবে, তোমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, সবকিছু এখনও প্রচ্ছন্ন রয়েছে এবং কোনোকিছুই সম্পন্ন হয়নি। এর একমাত্র কারণ হল যে তোমরা আমাকে জানো না। সবকিছুই আমার করায়ত্ত, সকলকিছুই আমার পদতলে, এবং সবকিছুকেই আমার চোখ পরীক্ষা করে দেখে; কে আমার বিচার এড়িয়ে যেতে পারে? যারা কলুষিত, যাদের গোপন করার মতো বিষয় রয়েছে, যারা আমার পশ্চাতে আমায় বিচার করে, যারা তাদের হৃদয়ে বিরোধিতা পোষণ করে, ইত্যবিধ—এই সমস্ত মানুষ, আমার নজরে যারা মূল্যবান নয়, তাদের আমার সম্মুখে নতজানু হয়ে নিজেদের ভারমুক্ত করতে হবে। এটা শোনার পর কেউ কেউ হয়তো কিছুটা অনুপ্রাণিত হবে, অন্যদিকে বাকিরা একে ততটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করবে না। আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি! জ্ঞানীরা যেন সত্বর অনুতাপ করে! তুমি যদি নির্বোধ হয়ে থাকো, তাহলে তুমি শুধু অপেক্ষা করো! যখন সময় আসবে, তখন শুধু দেখো কে বিপর্যয় ভোগ করে!
স্বর্গ এখনও সেই আদি স্বর্গ, এবং পৃথিবী এখনও সেই আদি পৃথিবী, কিন্তু আমার নজরে, উভয়ে ইতিমধ্যেই পরিবর্তিত হয়েছে, এবং সেই স্বর্গ আর পৃথিবী আর নেই যা আগে ছিল। স্বর্গ বলতে কী বোঝায়? তোমরা কি জানো? এবং আজ স্বর্গ বলতে কী বোঝায়? অতীতে স্বর্গ বলতে কী বোঝাত? তোমাদের এ কথা এবার আমি বলি: অতীতে স্বর্গ বলতে সেই ঈশ্বরকে বোঝাত যাঁকে তোমরা বিশ্বাস করতে, কিন্তু তাঁকে কেউ চোখে দেখেনি, এবং তিনি ছিলেন সেই ঈশ্বর যাঁকে মানুষ ঐকান্তিকভাবে বিশ্বাস করত (কারণ তারা তাঁকে চোখে দেখতে পেত না)। অন্যদিকে, আজকের স্বর্গ বলতে আমার স্বাভাবিক মানবতা এবং আমার সম্পূর্ণ দেবত্ব উভয়ই বোঝায়; অর্থাৎ, তা বোঝায় স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে। উভয়ে একই ঈশ্বর, তবু কেন আমি বলি যে আমি নতুন স্বর্গ। কারণ এগুলি সকলই মানুষের পূর্বধারণার প্রতি উদ্দিষ্ট। আজকের পৃথিবী বলতে সেই স্থানকে বোঝায় যেখানে তোমরা অবস্থিত রয়েছ। অতীতের স্বর্গে এমন কোনো স্থান ছিল না যা পবিত্র, অন্যদিকে যে স্থানগুলিতে আজ তোমরা যাতায়াত করো সেগুলি সবই পবিত্র বলে চিহ্নিত। এই কারণেই আমি বলি যে এটা হল একটা নতুন পৃথিবী। এখানে “নতুন” শব্দটির অর্থ হল “পবিত্র”। এখন নতুন স্বর্গ ও পৃথিবী পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। তোমরা কি এখন তা বুঝেছ? আমি তোমাদের সামনে সমস্ত রহস্য, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ধরে, উন্মোচিত করব। শশব্যস্ত হয়ো না, এবং তোমাদের কাছে আরো নিগূঢ় রহস্য প্রকাশিত হবে!