অধ্যায় ৭৭
আমার বাক্যগুলি সম্বন্ধে অনিশ্চিত থাকার অর্থ হল আমার কর্মকে অস্বীকার করার একটা মনোভাব পোষণ করা। অর্থাৎ, আমার বাক্যগুলি আমার পুত্রের অন্তঃস্থল থেকে প্রবাহিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও তোমরা সেগুলির উপর কোনো গুরুত্ব দাও না। তোমরা বড়ই চপলমতি! আমার পুত্রের অন্তঃস্থল থেকে কত বাক্য প্রবাহিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও তোমরা সন্দিহান এবং অনিশ্চিত রয়ে গিয়েছ। তোমরা অন্ধ! যে প্রতিটি কার্য সাধন আমি করেছি তার নেপথ্যের উদ্দেশ্যকে তোমরা উপলব্ধি করো না। আমার পুত্রের মাধ্যমে যে বাক্যগুলি আমি প্রকাশ করি সেগুলি কি আমার নিজের বাক্য নয়? কিছু এমন বিষয় রয়েছে যেগুলি আমি সরাসরি উচ্চারণ করতে চাই না, তাই সেগুলি আমি আমার পুত্রের মাধ্যমে বলি। তারপরও কেন তোমরা অযৌক্তিক ভাবে এই জেদ ধরে বসে থাকো যে আমার সেগুলি সরাসরি বলা উচিত? তোমরা আমাকে উপলব্ধি করো না, এবং আমার কর্ম ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ে তোমাদের সর্বদাই সন্দেহ থাকে! আমি কি আগে বলিনি যে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ও আমার প্রতিটি কর্ম এবং আমার প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ সঠিক? মানুষের সেগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ থেকে বিরত হতেই হবে। তোমার কলুষিত হাত সরিয়ে নাও! এবার আমি তোমাকে কিছু বলি: যে সকল লোককে আমি ব্যবহার করি তারা আমার দ্বারা এই বিশ্বসৃষ্টির আগে থেকেই পূর্বঅভিষিক্ত, তারা আজও আমার দ্বারা অনুমোদিত। তোমরা এই ধরনের বিষয়ে নিরন্তর তোমাদের শ্রম ব্যয় করছ, এবং আমার সত্তাকে পরীক্ষা করে চলেছ এবং আমার কর্মগুলিকে নিরীক্ষণ করছ। তোমাদের সকলের একটা লেনদেনের মানসিকতা রয়েছে। এমনটা যদি পুনরায় ঘটে, তবে তোমরা আমার হস্ত দ্বারা নিশ্চিতভাবেই প্রহৃত হবে। আমি যা বলছি তা হল: আমাকে সন্দেহ কোরো না, এবং যে কাজগুলি আমি সম্পাদন করেছি সেগুলিকে বিচার-বিশ্লেষণ ও সেগুলিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা কোরো না। এগুলির মধ্যে তোমাদের নাক গলানো তো আরোই উচিত নয়, কারণ এগুলি আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা কোনো লঘু বিষয় নয়!
আমার নির্দেশমতো সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে তোমাদের হাতে যে সময় আছে তা কাজে লাগাও। আমি আবার বলছি, এবং সাবধানবাণীর হিসাবেই বলছি: বিদেশিরা বন্যার মতো চিনে ঢুকে পড়তে চলেছে। এটাই চরম সত্য! আমি জানি, বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে সন্দিহান, এবং এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়, তাই তোমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যাতে তোমরা শীঘ্রই জীবনে বিকশিত হওয়ার পথ অন্বেষণ করো এবং শীঘ্রই আমার ইচ্ছাকে তৃপ্ত করতে সক্ষম হও। আজকের পর থেকে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরো বিপন্ন হবে, এবং বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পতন শুরু হবে। চিনের সুখের দিনগুলির অবসান ঘটতে চলেছে। এর অর্থ হল শ্রমিকরা ধর্মঘট থাকবে, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ পরিত্যাগ করবে, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দেবে, সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে এবং সেগুলি আর টিকে থাকতে পারবে না। ঐ পার্টিকর্মীরা পলায়নের জন্য অর্থ যোগাড় শুরু করবে (এটাও আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সাধন ঘটাবে), কেন্দ্রীয় সরকারের সকল স্তরের নেতারাও প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অন্যের ক্ষতি সত্ত্বেও কিছু বিশেষ কাজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেই ব্যস্ত রইবে (এটা আমার পরবর্তী পর্যায় সাধনে সাহায্য করবে)। ভালো করে দৃষ্টিপাত করো! এ হল এমন এক বিষয় যা শুধু চিন নয়, গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গেই সম্পর্কিত, কারণ আমার কর্ম সমগ্র বিশ্বেই নিবদ্ধ। তবে, তা সেই গোষ্ঠীর মানুষদের রাজা হিসাবে প্রস্তুত করার কাজে লাগে যারা হল প্রথমজাত পুত্র। তা কি তোমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাও? ত্বরা করো এবং অন্বেষণ করো! আমি তোমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করব না; আমি তোমাদের হৃদয়ের বাসনা অনুযায়ী আনন্দ অনুভবের অনুমতি দেব।
আমার কর্মগুলি বিস্ময়কর। বিশ্বজুড়ে যখন প্রকাণ্ড বিপর্যয়গুলি নেমে আসছে, এবং যখন সমস্ত অন্যায়কারী ও শাসকরা শাস্তি পাচ্ছে—বা আরো স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে যে অন্যায়কারীরা আমার নামের বাইরে রয়েছে, তারা যন্ত্রণাভোগ করবে—আমি তোমাদের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ শুরু করব। এই বাক্যগুলির এটাই অন্তর্নিহিত অর্থ, “তোমরা নিশ্চিতভাবেই বিপর্যয়গুলির যন্ত্রণা বা ক্ষয়ক্ষতি ভোগ করবে না”, যা আমি অতীতেও বারংবার বলেছি। তোমরা কি তা উপলব্ধি করেছ? আমি যখন বলি “এই সময়” তার অর্থ হল যখন আমার মুখ থেকে বাক্যগুলি নিঃসৃত হয়। পবিত্র আত্মার কর্ম অত্যন্ত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হচ্ছে; আমি এক মিনিট এমনকি, এক সেকেন্ডের কালবিলম্ব বা এই সময়ের অপচয় করব না। বরং, যে মুহূর্তে আমার বাক্যগুলি উচ্চারিত হবে সেই মুহূর্ত থেকেই আমি আমার বাক্যগুলি অনুসারে কাজ করব। আমি যদি আজ বলি যে আমি কাউকে বহিষ্কার করছি, বা আমি কাউকে ঘৃণা করি, তাহলে সেই মুহূর্তেই সেই ব্যক্তির সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। অন্যভাবে বলতে গেলে, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে থাকে আমার পবিত্র আত্মাকে পুনরুদ্ধার করা হবে, এবং তারা হয়ে যাবে চলমান মৃত, পুরোপুরি অকেজো। এই ধরনের মানুষেরা তখনো শ্বাস নিতে, হাঁটতে ও কথা বলতে পারে, এবং তখনও আমার সম্মুখে প্রার্থনা করতে পারে, কিন্তু তারা এমনটা কখনোই উপলব্ধি করবে না যে আমি তাদের পরিত্যাগ করেছি। তারা হবে অকেজো মানুষের চরম নিদর্শন। এমনটা পুরোপুরি সত্য এবং খাঁটি!
আমার বাক্যগুলি আমার মানবিক সত্তারই প্রতিনিধিত্ব করে। এমনটা মনে রেখো! সন্দেহ কোরোনা; তোমাদের পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে। এটা জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন! এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর! যে মুহূর্তে আমার বাক্যগুলি উচ্চারিত হয়, আমি যা করতে চাই তা ইতিমধ্যেই সংঘটিত হয়ে যায়। এই সকল বাক্যকেই আমার পুত্রের মাধ্যমে উচ্চারিত হতে হবে। তোমাদের মধ্যে কে এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছ? আর কীভাবে আমি এর ব্যাখ্যা করতে পারি? সবসময় এত আতঙ্কিত ও ভীরু হয়ে থেকো না। মানুষের অনুভূতির প্রতি আমার সত্যিই কি কোনো বিবেচনা নেই? যাদের আমি অনুমোদন করি তাদের কি আমি অমনোযোগী হয়ে বহিষ্কার করব? আমার প্রতিটি কাজ নীতিনিষ্ঠ। যে চুক্তি আমি নিজে নির্মাণ করেছি তা আমি ছিঁড়ে ফেলব না, বা নিজের পরিকল্পনাতেও আমি ব্যাঘাত ঘটাব না। আমি তোমাদের মতো অতিসরল নই। আমার কার্য একটা মহান বিষয়; এ হল এমন এক বিষয় যা কোনো মানুষ সম্পন্ন করতে পারে না। আমি বলেছি যে আমি ধার্মিক, এবং যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের কাছে আমি প্রেমস্বরূপ। তুমি কি মনে করো না যে এটা সত্যি? তুমি তোমার সংশয়সমূহ বজায় রাখো! সবকিছু সম্বন্ধে তোমার যদি একটা স্বচ্ছ বিবেক থাকে, তাহলে তুমি এখনও এত ভীত কেন? তার কারণ হল তুমি নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছ! আমার পুত্র! আমি তোমাকে অনেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, দুঃখী হয়ো না বা চোখের জল ফেলো না, এবং যে, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করব না। তুমি কি এখনও আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না? আমি তোমাকে ধরে রাখব এবং চলে যেতে দেব না; আমি সর্বদা তোমাকে আমার ভালোবাসার আলিঙ্গনে ধরে রাখব। আমি তোমার দেখভাল করব, তোমাকে রক্ষা করব, এবং সব বিষয়েই তোমায় উদ্ঘাটন ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করব যাতে তুমি এটা দেখতে পাও যে আমি তোমার পিতা, এবং যে, আমিই সেই ব্যক্তি যিনি তোমাকে তোমার ভরণপোষণ করেন। আমি জানি, তুমি সর্বদা এই মর্মে চিন্তা করো যে কীভাবে তোমার পিতার স্কন্ধের ভার লাঘব করা যায়। এই ভার আমি তোমার উপর অর্পণ করেছি। এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না। বর্তমান সময়ে কতজন মানুষ আমার প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারে? আমি আশা রাখি তুমি তোমার প্রশিক্ষণের গতি বাড়াতে পারবে ও দ্রুত বিকশিত হবে এবং আমার হৃদয়কে তৃপ্ত করতে পারবে। পুত্রের জন্য পিতা দিবারাত্র পরিশ্রম করেন, তাই পুত্রেরও উচিত প্রতিটি মিনিট ও প্রতিটি সেকেন্ডে পিতার পরিচালনামূলক পরিকল্পনাকে বিবেচনা করা। এটাই হল আমার সঙ্গে সেই সক্রিয় সহযোগিতা, যে বিষয়ে আমি বলে থাকি।
সব আমারই কর্ম। আজ যে লোকদের আমি ব্যবহার করি তাদের উপর আমি একটা ভার অর্পণ করব এবং তাদের প্রজ্ঞা দেব যাতে তাদের সমস্ত কাজ আমার ইচ্ছার অনুসারী হয়, যাতে আমার রাজ্য বাস্তবায়িত হয়, এবং যাতে একটি নতুন স্বর্গ ও পৃথিবী উদ্ভূত হয়। যে লোকদের আমি ব্যবহার করছি না, তারা সম্পূর্ণ বিপরীত; তারা সর্বদাই একটা ঘোরের মধ্যে থাকে, তারা খাওয়ার পরে ঘুমোয়, আর ঘুমোনোর পর আবার খায়, দায়ভারের অর্থ কী, সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই তাদের নেই। এই ধরনের মানুষের মধ্যে পবিত্র আত্মার কাজ নেই, এবং যত শীঘ্র সম্ভব তাদের আমার গির্জা থেকে বহিষ্কার করা উচিত। এবার আমি কতগুলি বিষয় জানাব যা দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত: গির্জা হল রাজ্যের একটি পূর্বশর্ত; গির্জার নির্মাণ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় সম্পন্ন হলে তবেই মানুষ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। কোনো মানুষই সরাসরি রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না (যদি না আমার দ্বারা প্রতিশ্রুত হয়)। গির্জা হল প্রথম ধাপ, কিন্তু রাজ্যই আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার লক্ষ্য। একবার মানুষ রাজ্যে প্রবেশ করলে সবকিছুই নিজস্ব আকার ধারণ করবে, এবং ভীত হওয়ার মতো আর কিছুই থাকবে না। বর্তমানে, শুধুমাত্র আমার প্রথমজাত পুত্ররা এবং আমিই রাজ্যে প্রবেশ করেছি, এবং সমস্ত দেশ ও মানুষের উপর শাসন শুরু করেছি। অর্থাৎ, আমার রাজ্য সংগঠিত হতে শুরু করেছে, এবং যারা রাজা বা আমার লোক হবে তাদের বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। তোমাদের কাছে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি ধাপে ধাপে এবং পর্যায়ক্রমে বলা হবে; অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত হয়ো না। তোমাকে যে বাক্যগুলি বলেছি তার সবগুলি মনে রেখেছ কি? তুমি যদি আমার প্রতি নিষ্ঠাবান থাকো, তাহলেও আমিও তোমার সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে বাক্যালাপ করব। যারা শঠতা ও কুটিলতার আশ্রয় নেয়, প্রতিদানে আমিও তাদের সঙ্গে উদাসীন আচরণ করব, এবং তাদের এটা স্পষ্টভাবে দেখাব যে, এই ধরনের আচরণ ঠিক কাদের ধ্বংস ডেকে আনে!