অধ্যায় ৭২
তুমি যদি নিজের মধ্যে কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতা খুঁজে পাও, তাহলে সেগুলির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তোমাকে অবিলম্বে আমার উপর নির্ভর করতে হবে। বিলম্ব কোরো না; না-হলে পবিত্র আত্মার কর্ম তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাবে, এবং তুমি অনেক পিছনে পড়ে থাকবে। বারংবার কাছে আসা, প্রার্থনা, এবং আমার উপস্থিতিতে সহকারিতার মাধ্যমে তোমার উপর যে কর্মভার আমি অর্পণ করেছি তা সাধন করতে হবে। এগুলো যদি না করো, তাহলে কোনো ফল মিলবে না, এবং যা করা হবে সে সব কিছুই হবে বৃথা। আমার আজকের কাজ আর অতীতের কাজ এক নয়; যে মানুষদের আমি ভালোবাসি তাদের মধ্যে জীবনের পরিব্যাপ্তি আগে যা ছিল আজ তার চেয়ে অনেক আলাদা। আমার বাক্যগুলি সম্বন্ধে স্পষ্ট উপলব্ধি তাদের সকলের রয়েছে, সেগুলির বিষয়ে এক তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি তাদের রয়েছে। এটা সবচেয়ে স্পষ্ট দিক, যা সবচেয়ে ভালো করে আমার কর্মের চমৎকারিত্বকে প্রতিফলিত করতে পারে। আমার কর্মের গতি ত্বরাণ্বিত হয়েছে, এবং এই কাজ নিশ্চিতভাবেই অতীতের কাজের তুলনায় ভিন্ন। মানুষের পক্ষে এর কল্পনা করা কঠিন, অধিকন্তু তাদের পক্ষে এর তল পাওয়া অসম্ভব। তোমাদের কাছে আর কিছুই রহস্যাবৃত নয়; বরং সকল কিছু জ্ঞাত ও প্রকাশিত হয়েছে। তা স্বচ্ছ, তা মুক্ত, এবং, সর্বোপরি, তা সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমি যাদের ভালোবাসি তারা অবশ্যই কোনো ব্যক্তি, ঘটনা বা বস্তুর দ্বারা, অথবা স্থানিক তথা ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ রইবে না; সকল প্রকার পরিবেশের দ্বারা আরোপিত নিয়ন্ত্রণকে তারা অতিক্রম করবে এবং দেহ থেকে উত্থিত হবে। এই হল আমার মহান কার্যের সমাপন। এর পরে আর কিছুই করার থাকবে না; এই কাজ সম্পূর্ণরূপে সমাধা হবে।
প্রথমজাত সকল পুত্র এবং যে মনুষ্যগণকে আমি ভালোবাসি তাদের পরিপ্রেক্ষিতেই মহান কার্য সমাধার কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর, কোনো ব্যক্তি, ঘটনা বা বস্তুর দ্বারা তোমরা নিয়ন্ত্রিত হবে না। তোমরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাত্রা করবে, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে অতিক্রম করবে এবং সর্বত্র নিজেদের পদচিহ্ন রেখে যাবে। এমন ভেবো-না যে এর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে; খুব শীঘ্রই তোমার চোখের সামনে তা বাস্তবায়িত হবে। আমি যা করি তা তোমাদের উপর অর্পিত হবে, এবং এবং যে স্থানগুলিতে আমি পদচারণা করি সেখানে তোমাদের পদচিহ্ন পড়বে। অধিকন্তু, এটাই আমাদের – তোমাদের এবং আমার – রাজা হিসাবে রাজত্ব করার প্রকৃত অর্থ। যে উদ্ঘাটনের অনুমোদন আমি দিয়েছি, তা কেন স্বচ্ছতর হয়ে উঠছে, কেন স্পষ্টতর হয়ে উঠছে, কেন আর তার লেশমাত্রও প্রচ্ছন্ন থাকছে না তা কি তোমরা ভেবে দেখেছ? কেন আমি সর্বোচ্চ সাক্ষ্য দিয়েছি, এবং তোমাদের এই সকল রহস্যের কথা এবং এই সকল বাক্য বলেছি? পূর্বোল্লেখিত কার্য ব্যতীত এর কারণ আর কিছুই নয়। তবে, বর্তমানে, তোমাদের কাজের অগ্রগতি খুবই শ্লথ। তোমরা আমার পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অক্ষম, তোমরা সুষ্ঠুভাবে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারো না, এবং বর্তমানে, তোমরা এখনও আমার ইচ্ছা পূরণে অক্ষম। আমি তোমাদের আরো নিবিড় প্রশিক্ষণ দেব এবং তোমাদের নিয়ে আমার কার্য আরো দ্রুত সমাধা করব, যাতে যত দ্রুত সম্ভব তোমরা আমার হৃদয়ের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারো।
বর্তমানে, যা স্পষ্টতম বিষয় তা হল এই যে প্রথমজাত পুত্রদের গোষ্ঠীটি সম্পূর্ণ রূপে গঠিত হয়েছে। সকলেই আমার দ্বারা অনুমোদিত, এই পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত এবং নির্বাচিত হয়েছে। প্রত্যেকে আমার হস্ত দ্বারা উন্নীত। এখানে মানুষের বিচার-বিবেচনার কোনো স্থান নেই। এটা তোমার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। অহংকারী হয়ো না; এ সবই আমার দয়া এবং সহমর্মিতা। আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সকলকিছু ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র তোমাদের চোখই বড় বেশি ঝাপসা, এমনকি, এখনও, তোমরা আমার কর্মের চমৎকারিত্বকে স্পষ্ট ভাবে চাক্ষুষ করতে অক্ষম। তোমাদের কারো মধ্যেই আমার সর্বশক্তিমত্তা, আমার প্রজ্ঞা, আমার প্রতিটি পদক্ষেপ, বা আমার প্রতিটি বাক্য ও কর্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ রূপে স্পষ্ট ও প্রকৃত উপলব্ধি নেই। এই কারণেই, আমি স্পষ্ট কথা বলি। আমার পুত্রদের, আমার প্রিয়জনদের জন্য আমি সমস্ত মূল্য দিতে, কষ্ট স্বীকার করতে, নিজেকে ব্যয়িত করতে রাজি। আমার বাক্যের মাধ্যমে তুমি কি আমাকে জানো? তোমার কি এমন প্রয়োজন যে সেগুলি আমি আরো স্পষ্ট ভাবে বলি? আর উচ্ছৃঙ্খল হয়ো না; আমার হৃদয়ের প্রতি সহানুভূতি দেখাও! এখন তোমাদের কাছে এত বড় একটা রহস্যের কথা বলা হয়েছে, তোমাদের আর কী বলার রয়েছে? তোমাদের এখনো কি কোনো অভিযোগ রয়েছে? তোমরা যদি মূল্য পরিশোধ এবং কঠোর পরিশ্রম না করো, তা হলে আমি যে সযত্ন প্রয়াস করেছি তোমরা কি তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে?
আজকাল মানুষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আমি যাদের পছন্দ করি না, তাদের মনে আমার প্রতি ভালোবাসা জাগতে পারে না, এমনকি তারা চাইলেও তা জাগতে পারে না। তবে, যে ব্যক্তিদের আমি পূর্বনির্ধারণ ও নির্বাচন করেছি, চাইলেও তারা পলায়ন করতে পারবে না; যেখানেই যেখানেই যাক না কেন, আমার হাত থেকে তারা রেহাই পাবে না। এমনই আমার মহিমা, তার চেয়েও বড় কথা, আমার বিচার। আমার পরিকল্পনা ও আমার ইচ্ছা অনুসারে সমস্ত মানুষকে তাদের বিষয়আশয় পরিচালনা করতে হবে। এই দিন থেকে, সমস্ত কিছুই আমার হাতে ফিরে আসবে এবং সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রইবে। সবকিছুই আমার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। মানুষ যদি তাতে অল্প হলেও অংশগ্রহণ করে, তবুও আমি তাদের কোনো রকম ছাড় দেব না। আজ থেকে শুরু করে, আমি সমস্ত মানুষকে আমায় – অর্থাৎ, একমাত্র প্রকৃত ঈশ্বর, যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষের মাঝে এসে তাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও কলঙ্কিত হয়েছেন, এবং যিনি সামগ্রিক ভাবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন; সেই রাজা যিনি এই রাজ্যের দায়িত্বে রয়েছেন; স্বয়ং সেই ঈশ্বর যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পরিচালনা করেন এবং, উপরন্তু, সেই ঈশ্বর যিনি মানুষের জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং যিনি মৃতস্থানের চাবিকাঠি ধারণ করেছেন – সেই আমায় জানা শুরু করতে দেব। আমি সমস্ত মানুষকে (প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু, তাদের আত্মা থাকুক বা নাই থাকুক, তারা মূর্খ হোক বা না হোক, তাদের অক্ষমতা ইত্যাদি থাকুক বা না থাকুক) আমাকে জানার অনুমতি দেব। এই কাজ থেকে আমি কাউকে ছাড় দেব না; এই কাজ কঠোরতম, এই কাজ আমার সুপরিকল্পিত, এবং, এই মুহূর্ত থেকে তা পালন করা হচ্ছে। আমি যা বলি তা করতে হবে। তোমার আধ্যাত্মিক চক্ষু উন্মীলিত করো, ব্যক্তিগত পূর্বধারণাকে বিসর্জন দাও, এবং এমন স্বীকার করে নাও যে আমিই একমাত্র প্রকৃত ঈশ্বর যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পরিচালনা করেন! আমি কারোর থেকেই প্রচ্ছন্ন নই, এবং আমি সবার উপরেই আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহ জারি করি।
নিজের সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে রাখো। আমার কাছ থেকে যে সকল বস্তু তোমরা অর্জন করেছ তা কি মহার্ঘতর ও অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ নয়? সেগুলি আর তোমার আবর্জনার মধ্যে কি এক-আকাশ ব্যবধান নেই? ত্বরা করো, যে সকল জিনিসের কোনো অর্থ নেই সেগুলি ফেলে দাও! তোমরা আশীর্বাদ লাভ করবে না দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন হবে তা এখনই নির্ধারিত হচ্ছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত; এমনকি এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তুমি কি সত্যিই তা দেখতে পাচ্ছ?