অধ্যায় ২
ফিলাডেলফিয়ার গির্জা রূপ নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও করুণার জন্যই সম্ভবপর হয়েছে। অসংখ্য সন্তের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য ভালোবাসা জেগে উঠেছে, তারা আধ্যাত্মিক যাত্রাপথে বিন্দুমাত্রও বিচলিত হয় না। একমাত্র প্রকৃত ঈশ্বরই যে দেহধারণ করেছেন, তিনিই যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রভু এবং তিনিই যে সমস্ত কিছুকে শাসন করেন এই বিশ্বাসে তারা দৃঢ় থাকে: পবিত্র আত্মার দ্বারা নিশ্চিত হয়েছে যে এটি পর্বতের মতোই অনড়! কখনোই এর পরিবর্তন হবে না।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! আজ আপনিই আমাদের আধ্যাত্মিক চোখ খুলে দিয়েছেন, অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছেন, পঙ্গুকে হাঁটার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং কুষ্ঠরুগির রোগ নিরাময় করেছেন। আপনি স্বর্গের জানালা খুলে দিয়েছেন, আধ্যাত্মিক জগতের রহস্যগুলি উপলব্ধি করতে আমাদের সাহায্য করেছেন। আপনার পবিত্র বাক্যের দ্বারা আমরা সম্পৃক্ত হয়েছি, আমাদের যে মনুষ্যত্ব শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়েছি—এমনই আপনার অপরিমেয় মহান কার্য এবং এমনই আপনার অপার মহান করুণা। আমরা আপনার সাক্ষী!
দীর্ঘসময় ধরে সবিনয়ে ও নীরবে আপনি নিজেকে প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। আপনি মৃত্যু থেকে পুনর্জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, ক্রুশবিদ্ধকরণের কষ্ট ভোগ করেছেন, মানব-জীবনের আনন্দ-দুঃখের আস্বাদ নিয়েছেন, নিপীড়ন ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন; আপনি মানবজগতের যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ও আস্বাদ লাভ করেছেন, এবং যুগের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছেন। ঈশ্বরের অবতাররূপ তিনি নিজেই স্বয়ং ঈশ্বর। ঈশ্বরের ইচ্ছার জন্যই আপনি আমাদের গোবরের স্তুপ থেকে রক্ষা করেছেন, নিজের ডানহাতে আমাদের শক্ত করে ধরে রেখেছেন, এবং আমাদের মধ্যে অকাতরে নিজের অনুগ্রহ বিতরণ করেছেন। সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করে আপনি আমাদের ভেতরে নিজের জীবনকে রূপ দিয়েছেন; নিজের রক্ত, ঘাম ও অশ্রু দিয়ে যে মূল্য আপনি পরিশোধ করেছেন, তা সন্তদের উপর স্ফটিকাকৃতি ধারণ করেছে। আমরাই আপনার অক্লান্ত চেষ্টার ফসল[ক]; আপনাকে যে মূল্য চোকাতে হয়েছে সে মূল্য আমরাই।
হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! আপনার দয়া-ভালোবাসা এবং করুণা, আপনার ন্যায়পরায়ণতা ও মহিমা, আপনার পবিত্রতা ও বিনয়ের জন্যই সমস্ত মানুষ আপনার সামনে মাথা নত করবে এবং চিরকাল আপনার পূজা করবে।
আজ আপনি সমস্ত গির্জাকে সম্পূর্ণ করেছেন—ফিলাডেলফিয়ার গির্জা এভাবেই আপনার ছয় সহস্র বর্ষব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হয়েছে। আধ্যাত্মিকভাবে ভাবে বিজড়িত হয়ে, ভালোবাসার পথ অনুসরণ করে, ঝর্ণার উৎসমুখে সংযুক্ত হয়ে সন্তরা আপনার সামনে সবিনয়ে নিজেদের নিবেদন করতে পারেন। জীবনের বহতা জলরাশি নিরন্তর প্রবাহিত হয়, গির্জার অভ্যন্তরের ধুলোকাদা ও দূষিত জলকে ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়, আপনার মন্দিরকে আবার পরিশুদ্ধ করে। বাস্তববাদী প্রকৃত ঈশ্বরকে আমরা জানতে পেরেছি, তাঁর বাক্যকে অনুসরণ করে চলেছি, নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যকে চিনেছি এবং গির্জার জন্য নিজেদের ব্যয়িত করার জন্য যা কিছু সম্ভব সবই করেছি। আপনার সামনে প্রশান্তি অর্জন করে পবিত্র আত্মার কর্মের প্রতি আমাদের মনোযোগী হতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে আপনার ইচ্ছার গতিরোধ না হয়। সন্তদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা রয়েছে, কয়েকজনের শক্তি বাকিদের ব্যর্থতা পূরণ করে দেবে। তারা চিরকাল পবিত্র আত্মার দ্বারা আলোকিত ও প্রদীপ্ত হয়ে আত্মার মধ্যে বিচরণ করতে পারে। সত্যের উপলব্ধি হওয়া মাত্রই সেই সত্যকে তারা অনুশীলন করে। তারা নতুন আলোর সঙ্গে গতি রেখে চলে, এবং ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
ঈশ্বরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা কর; তাঁর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার অর্থই হল তাঁর সাথে পথ চলা। আমাদের সমস্ত ধ্যানধারণা, বিশ্বাস, মতামত এবং সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ জটিলতা ধোঁয়ার মতো বাতাসে মিলিয়ে যায়। নিজেদের আত্মায় আমরা ঈশ্বরকে পরিপূর্ণ ভাবে রাজত্ব করতে দিই, তাঁর সঙ্গে পথ হাঁটি এবং এইভাবেই জগৎ-সংসারকে অতিক্রম করে আমরা মহত্তর হতে পারি, এবং আমাদের আত্মা বন্ধনহীন হয়ে মুক্তিলাভ করে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন রাজাধিরাজ হন তখন এমনটাই ঘটে থাকে। আমরা কীভাবে প্রশংসার নৃত্য ও গীতে না মেতে থাকতে পারি, কী করে আমরা আমাদের স্তুতি ও নতুন স্তোত্রগীত নিবেদন না করে থাকতে পারি?
ঈশ্বরকে বন্দনা করার প্রকৃত পক্ষেই অনেক পথ রয়েছে: তাঁর নামগান করা, তাঁর কাছে যাওয়া, তাঁর কথা ভাবা, প্রার্থনা-বাক্য পাঠ, তাঁর সঙ্গে সহকারিতায় আবদ্ধ হওয়া, অনুধ্যান ও চিন্তন, প্রার্থনা এবং তাঁর বন্দনাগান গাওয়া। এই বন্দনাগানে আনন্দ রয়েছে, পবিত্রকরণ রয়েছে; স্তুতির মধ্যে শক্তি রয়েছে, এবং সেইসঙ্গে একটা ভারও রয়েছে। স্তুতির মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে, আর সেই সঙ্গে রয়েছে নতুন অন্তর্দৃষ্টি।
ঈশ্বরের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা কর, তাঁর সেবায় নিজেদের নিয়োগ করে এক হয়ে যাও, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অভিপ্রায় পূর্ণ করো, পবিত্র আধ্যাত্মিক দেহ ধারণে তৎপর হও, শয়তানকে পদদলিত করো, শয়তানের নিয়তিকে শেষ করে দাও। ঈশ্বরের উপস্থিতিতে ফিলাডেলফিয়ার গির্জাকে উন্নীত করা হয়েছে এবং তাঁর মহিমায় উদ্ভাসিত করা হয়েছে।
পাদটীকা:
ক. মূল রচনায় “ফসল” কথাটি নেই।